#মুগ্ধতায়_তুমি
#পর্বঃ১১
#Saiyara_Hossain_Kayanat
শুভ্র ভাইয়ের প্রশ্নের উত্তরে আমি কিছু বলবো তার আগেই উনি মাথা তুলে আমার চোখে চোখ রেখে শান্ত কন্ঠে বললেন-
—”তোমাকে কিছু বলতে হবে না অনন্যময়ি। তোমার উপর পুরো বিশ্বাস আছে আমার। আমি জানি তুমি যা করবে ভালোর জন্যই করবে। এই শুভ্র তোমাকে তোমার নিজের থেকেও বেশি বুঝে অনন্য।”
এই কথা বলে একটু থেমে আমার কানের কাছে এসে ফিসফিস করে আবারও বললেন-
—”আমার পুরো বিশ্বাস আমি ছাড়া অন্য কেউ তোমার মুগ্ধতায় মুগ্ধ হয়ে নিজেকে পুরে ঝলসাতে পারবে না ঘুমন্তপরি।”
কথা শেষ করেই উনি ওয়েটারকে ডাক দিয়ে বললেন আইসক্রিম দিয়ে যেতে। আর আমি!!! হ্যাঁ আমি বরাবরের মতোই ওনার কথা শুনে নির্বাকের মতো বসে ছিলাম। শুভ্র ভাইয়ের এসব কথা আমার কাছে খুব ভয়ংকর মনে হয়। আমি এতটাই হতবাক হয়েছিলাম যে এই প্রথম আমার সামনে আমার প্রিয় আইসক্রিম থাকা শর্তে ও আমি তা খেতে পারিনি।
———————
দু’দিন ধরে বাসায় বসে আছি বাহিরে কোথাও যাচ্ছি না। এই মুহূর্তে আহনাফের মুখোমুখি হওয়ার ইচ্ছে আমার নেই। আমার কিছুটা সময় দরকার ছিল ভাবার জন্য। তবে এই দু’দিনে আমি যথেষ্ট বুঝে গেছি আমি কি চাই, আমার কি করতে হবে।
এই দু’দিন শুভ্র ভাইয়ের সামনে আমি বেশি একটা যাইনি। ওনার সামনে গেলেই আমি সব গুলিয়ে ফেলি। মাঝে মনে হয় ওনার এই রকম অদ্ভুত আচরণ সবই আমার মনের ভ্রম বা কল্পনা। আচ্ছা শুভ্র ভাইয়ের এইসব অদ্ভুত আচরণ যদি সত্যি হয়ে থাকে তাহলে এসবের মানে কি?? কেন এমন ব্যবহার করে আমার সাথে!!! মুহুর্তের মধ্যেই কিভাবে ওনার কথা বলার ধরন পালটে যায়???
শুভ্র ভাই অদ্ভুত ভয়ংকর রকমের এক মানুষ আগে তো এমন ছিলেন না। সব সময় আমাকে বকা দিতেন তবে এমন হুটহাট করেই কেয়ার করা আর আমাকে তুমি করে বলা এসব করতেন না। ওনাকে নিয়ে আমার মনে হাজার খানেক প্রশ্ন ঘুরছে কিন্তু কোনো উত্তর পাচ্ছি না।
———————
ঘুমের মধ্যে হঠাৎ করেই ফোনের রিংটোন বেজে উঠলো তা-ও আবার রাত ১টায়। অসময়ে ফোনের রিংটোন বেজে ওঠার থেকে বিরক্তিকর কিছু আর এই দুনিয়াতে নেই। পর পর তিনবার ফোন বেজে ওঠার পর বাধ্য হয়ে না দেখেই ফোন রিসিভ করে ঘুম জরানো কন্ঠে বললাম-
—” কে আপনি ভাই এই মধ্যরাতে একটা মেয়েকে বার বার ফোন দিয়ে বিরক্ত করছেন??”
—”এই বেয়াদব এতো এতোক্ষন লাগে ফোন রিসিভ করতে?? আর এই সব কি আজে বাজে বকছিস ঘুমের মধ্যে।”
ফোনের অপরপ্রান্ত থেকে খুবই চমৎকার এই রামধমক ভেসে আসলো আমার কানে যার ফলাফল সরূপ আমার ঘুম উড়ুউড়ু করে চলে গেলো। এই অসভ্য শুভ্র ভাই আমাকে কখনো একটু শান্তিও দিবে না। এই মধ্যরাতে কি ওনার আমাকে ধমকানোর ইচ্ছে জাগলো নাকি অদ্ভুত!!!
আমি একটু বিরক্তিমিশ্রিত কণ্ঠে বললাম-
—”রাতের এই সময় কি আপনি আমাকে ধমকানোর জন্য ফোন করেছেন না-কি অসভ্য ভাই না মানে শুভ্র ভাই।”
শুভ্র ভাই এবার বাঘের মতো হুংকার দিয়ে বললেন-
—”মুখে মুখে তর্ক করা শিখে গেছিস দেখছি। তর্ক না করে জলদি ছাদে আয় পাঁচ মিনিট সময় দিলাম। এক মিনিট দেরি হলেই তোর অবস্থা খুব খারাপ হবে বুঝে নিস।”
শুভ্র ভাই এইকথা বলেই ফোন কেটে দিলেন। আমাকে কিছুই বলার সুযোগ দিলেন না। এতো রাতে ছাদে যাবো যদি কেউ দেখে ফেলে তখন কি হবে!! উফফফফ এই শুভ্র ভাই আস্ত এক ঝামেলা….
বিছানা থেকে উঠে মাথায় ওড়না টা কোনো রকম পেচিয়ে মনে মনে সাহস জাগিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে পরলাম। আস্তে আস্তে পা ফেলে চোরর মতো করে পা বারালাম ছাদের দিকে। ছাদের মাঝে গিয়ে দাঁড়িয়ে আশেপাশে চোখ বুলিয়ে দেখে নিলাম। কিন্তু শুভ্র ভাইকে তো দেখতে পাচ্ছি না উনি কি এই রাতের বেলা আমার সাথে মজা করছেন না-কি!!!
হঠাৎ করেই পিছন থেকে কানে কারও নিশ্বাসের শব্দ শোনা যাচ্ছে ভয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখলাম শুভ্র ভাই একদম আমার কাছাকাছি দাঁড়িয়ে আছে। আমি ভয়ে কিছুটা পিছিয়ে গেলাম তখনই শুভ্র ভাই হেসে হেসে বললেন-
—”আমি জানতাম তুই ভয় পেয়ে যাবি অনন্য।”
আমি রেগেমেগে বললাম-
—”ভূতের মতো না হেসে বলেন কিসের জন্য ডেকেছেন আমাকে।”
—”আমার থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছিস কেন অনন্য?”
—”কই না তো শুভ্র ভাই। পালিয়ে বেড়ালে কি আর এখানে আসতাম না-কি।”
—”এখানে এসেছিস তো আমার ধমকের ভয়ে।”
আমি আর কিছু বললাম না চুপ করে দাঁড়িয়ে আছি। শুভ্র ভাই আমার কিছুটা কাছে এগিয়ে এসে হাতে কয়েকটা সাদা গোলাপ দিয়ে একটু ঝুকে আমার মুখোমুখি হয়ে বললেন-
—”সরি ঘুম নষ্ট করে এতো রাতে তোমাকে ছাদে ডেকে আনার জন্য। কিন্তু কি করবো বলো.. আসার সময় এই ফুল গুলো দেখে তোমাকে দিতে খুব ইচ্ছে করছিলো তাই বাধ্য হয়ে এমনটা করতে হলো। এখন যাও রুমে গিয়ে চুপচাপ ঘুমিয়ে পর।”
আমি চুপচাপ রুমে এসে পরলাম। বিছানায় বসে আছি হাতে ফুল গুলো নিয়ে দেখছি। সাদা গোলাপ গুলো অনেক বেশিই সুন্দর। শুভ্র ভাইয়ের প্রতি আমার বিরক্তি আর সকল অভিযোগ যেন নিমিষেই শেষ হয়ে গেছে…. আছে শুধু এক অদ্ভুত অনুভূতি। ফুল গুলো যত্ন করে পাশের টেবিলে রেখে শুয়ে পরলাম।
————————
আহনাফের সামনে দাঁড়িয়ে আছি অস্বস্তি লাগছে খুব তবুও একটা বড় নিশ্বাস নিয়ে বলা শুরু করলাম-
—”দেখুন আহনাফ প্রতি দিন এভাবে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকার কোনো মানে হয় না। আমাদের মধ্যে একটা সম্পর্ক ছিল সেটা একদিনের হোক বা দুই এক মাসেরই হোক না কেন আমি তা অস্বীকার করছি না। তবে এখন আপনি শুধুই আমার অতীত। আর আমি চাই না আমার অতীত বার বার আমার সামনে আসুক। হ্যাঁ এতোদিন আমি ভাবতাম আমি আপনাকে ভালোবসি তবে এটা আমার ভুল ধারণা ছিল তা আমি এখন ভালো করেই বুঝতে পারছি। আমি যদি আপনাকে ভালোই বাসতাম তাহলে ওইদিন আপনার মুখে ভালোবাসার কথা শুনে আমার খুশিতে আত্মহারা হয়ে যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু না একথা শুনে আমার তেমন কোনো খুশি হয়নি। শুধু খারাপ লেগেছিলো আপনার কথা গুলো শুনে এইটুকুই এর বেশি কিছু না। তাই প্লিজ আপনাকে কষ্ট করে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না আর আমাকেও এভাবে অস্বস্তিতে ফেলবেন না।”
এক নাগাড়ে বিরতিহীনভাবে কথা গুলো বলে আবার চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম। আহনাফ চুপচাপ মনোযোগ দিয়ে আমার কথা গুলো শুনে একটু ভাবলেশহীন ভাবেই বললেন-
—”ওই লোকটাকে ভালোবাসো তাই না অনন্যা??”
এই প্রশ্ন শুনে আমি খুব অপ্রস্তুত হয়ে পরলাম। এমনটা আমি কল্পনায়ও ভেবে দেখিনি। আমি নিজেকে সামলিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই বললাম-
—”আমি কাওকে ভালোবাসি না আহনাফ।”
—”যদি ভালোই না বাসো তাহলে কেন ওইদিন বাধা দিলে না যখন ওই লোকটা তোমার হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন। উনি নিশ্চয়ই তোমার খুব কাছের মানুষ তা-ই তো এতো অধিকার খাটিয়ে তোমাকে নিয়ে গেছিলো কোনো কথা না বলেই। আর তুমিও ওনাকে অনেক বেশি বিশ্বাস করো বলেই তো কোনো দ্বিধাবোধ ছাড়াই তার সাথে চলে গিয়েছিলে।”
আহনাফের কথায় আমি বেশ অনেকটাই চিন্তিত হয়ে পরলাম। আহনাফের সব কথাই তো ঠিক কিন্তু আমি তো কখনো এভাবে ভেবে দেখিনি। আমি একটু চুপ থেকে বললাম-
—”শুভ্র ভাই আমাদের পরিবারের মানুষ তার উপর বিশ্বাস থাকাটাই স্বাভাবিক আহনাফ। আর শুভ্র ভাই ছোট থেকেই আমার উপর এরকম অধিকার খাটায় তাই এটা তেমন কোনো বিষয় না।”
আহনাফকে কোনো রকম এইসব বুঝিয়ে সুঝিয়ে বাসায় আসার জন্য পা বারালাম। আহনাফকে এটা ওটা বলে বুঝিয়ে চুপ করে দিতে পারলেও আমার মাথায় এখনও আহনাফের বলা কথা গুলোই ঘুরছে। শুভ্র ভাই কেন আমার উপর এতো অধিকার দেখায় আর আমিও কেন শুভ্র ভাইকে বাধা দিতে পারি না!! কিসের এতো বিশ্বাস যে কাল এতো রাতেও শুভ্র ভাইয়ের কথা মতো ছাদে চলে গেলাম!!
এইসব ভাবতে ভাবতে আনমনে রাস্তায় দিয়ে হাটছি হঠাৎ করেই গাড়ির হর্নের আওয়াজে সামনের দিকে তাকাতেই দেখলাম একটা গাড়ি আমার দিকে আসছে। আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে নিলাম পরক্ষণেই মনে হলো কেউ আমাকে হেচকা টান দিয়ে দূরে নিয়ে গেল। চোখ মেলে কিছু দেখার আগেই গালে সজোরে এক থাপ্পড় পরলো।
চলবে……
(বিঃদ্রঃ- আপনাদেরকে কষ্ট করে নেক্সট, নাইছ এই টাইপের কমেন্ট করতে হবে না। কমেন্ট করার ইচ্ছে থাকলে গগঠনমূলক কমেন্ট করবেন আর না হয় শুধু রিয়েক্ট দিবেন। আপনাদের কাছ থেকে ভালো রেসপন্স না পেলে আমি বুঝতে পারবো না গল্পটা ভালো হচ্ছে না-কি বাজে। তাই রেসপন্স করবেন সবাই গল্প এগিয়ে নিতে চাইলে। ধন্যবাদ আর ভালোবাসা সবাইকে।❤️)