রঙহীন জীবনের রঙ,পর্ব:১৩

0
358

গল্প: #রঙহীন_জীবনের_রঙ
পর্ব ১৩
লেখনীতে: #স্বর্ণা_সাহা (রাত)

সুজাতা ঘর পরিষ্কার করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গেছে,আসলে কোনো কাজ না করে সারাদিন বসে বসে খেলে যা হয় আরকি।ইনি নিজে কাজ না করলেও অন্যকে দিয়ে কাজ করিয়ে নিতে বেশ পটু।

দিশানী নিরা কে কথাগুলো বলে আবার রান্নাঘরে চলে এলো।

নিরা সুজাতা কে খুঁজছে। সুজাতা কে কোথাও না পেয়ে রান্নাঘরে এসে দিশানী কে বললো,,
— বৌদি!মা কোথায়? মা কে দেখেছো?

—হুম, তোমার মা ঘর পরিষ্কার করছে।

নিরা অবাক হয়ে বললো,,
—মা ঘর পরিষ্কার করছে?

দিশানী উত্তর দিলো,
—হ্যাঁ গো করছে, আসলে আমিই করতে বলেছি।উনি যত কাজ করবেন, ততই সুস্থ থাকবেন। বরং কাজ না করলেই তাড়াতাড়ি বুড়িয়ে যাবেন। তাই কাজ করতে বলেছি, ভালো করিনি বলো?

নিরা দাঁতে দাঁত চেপে উত্তর দিলো,,
—তুমি আবার কখনো খারাপ করতে পারো নাকি? ভালোই করেছো!

—বুঝেছো যখন তখন তুমিও নিজের কাজ নিজে করো, আমি জানি তুমি গ্রিন-টি বানিয়ে দেওয়ার জন্যই মাকে খুঁজছো। যেহেতু উনি কাজ করছেন তাই ওনাকে ডিস্টার্ব না করে নিজে বানিয়ে নাও। সামান্য গ্রিন-টিই তো এইটুকু বানানোর যোগ্যতাও তোমার নেই?

দিশানীর শেষ কথা টা নিরার ইগো তে লাগলো, তাই দিশানী কে বললো,,
—আমি নিজেই বানাচ্ছি আমার গ্রিন-টি, ওয়েট।

নিরা গিয়ে গ্রিন-টি বানালো, কাপে ঢেলে চুমুক দিতেই নিরার মুখটা দেখার মতো হয়ে গেলো। দিশানী জিজ্ঞেস করলো,,
—কিগো ননদিনী!গ্রিন-টির টেস্ট ভালো হয়নি বুঝি? খুব বেশি তেতো হয়ে গেছে, সমস্যা নেই, খেয়ে নাও। একদিন টেস্ট খারাপ হলে কিছু হয়না!খেয়ে নাও।

—————–
নিরা কোনোরকমে গ্রিন-টি শেষ করে কাপ রাখতে রান্নাঘরে এলো, তখনি দিশানী বললো,
—নিরা!বাথরুমে কাপড় রাখা আছে, চটপট করে গিয়ে কেচে ফেলো, যাও।

নিরা দিশানীর দিকে চমকে তাকিয়ে বললো,,
—আ-আমি? আমি কাপড় কাঁচবো, মানে সত্যিই আমি কাপড় ধোবো??

দিশানী যেনো নিরার এই কথায় প্রচুর আনন্দ পেলো,ও হেসে বললো,
—কেনো গো নিজেকে ধোয়ার প্ল্যান আছে নাকি? এই তোমার এরকম কোনো প্ল্যান থাকলে আমাকে বলতে পারো, আমি তোমাকে সাবান-জল ছাড়াই ধুয়ে দেবো, লাগলে বোলো কিন্তু!তোমার জন্য আমি আছি।

—হোয়াট ননসেন্স!আচ্ছা বৌদি তুমি আজ তোমার মধ্যে আছো? কি থেকে কি বলছো বলোতো?

—এতদিনই বরং আমি নিজের মধ্যে ছিলাম না, আজই নিজের মধ্যে আছি তার জন্যই তো যার যার যে শিক্ষা প্রয়োজন, সেই শিক্ষাই দিচ্ছি।আর কথা বলে সময় নষ্ট কোরো না তো, যাও কাপড়গুলো ধুয়ে নিয়ে এসো।

—আমি পারবো না!

—দেখো একদম না করবে না বলে দিচ্ছি, যদি কাপড়গুলো না ধোও, তাহলে তোমাকে আজকে না খাইয়ে রাখবো, ভেবে দেখো না খেয়ে থাকবে নাকি? কালকে রাত্রেও কিন্তু কিচ্ছু খাওনি, না খেয়ে থাকতে হয়েছে কালকে, আজকেও কি সেটা চাও?

নিরা মনে মনে ভাবলো,,
“না না, এটা একদম করা যাবে না। সামান্য ক’টা কাপড়ই তো ধুয়ে দেই ”
নিরা একটু ভেবে উত্তর দিলো,
—আচ্ছা আমি কাপড় ধুয়ে দিচ্ছি, কোনো ব্যাপার না।

——————–
নির্ঝর সেই কখন থেকে দিশানী কে ডেকে চলেছে কিন্তু দিশানী রুমেই আসছে না, অনেক্ষন পর দিশানী রুমে এসে বললো,,
—কি হয়েছে, ডাকছো কেনো?

—ডাকছি কেনো বুঝতে পারছো না?আমার জামা-কাপড় বের করে রাখোনি কেনো,তুমি জানোনা আমি বের হবো?

দিশানী মুচকি হেসে বললো,,
—এই তিনমাসে না হয় অভ্যাস টা পাল্টে ফেলো,এই কয়দিন নিজে জামা-কাপড় বের করে নাও। তোমার নতুন বউ আসলে তারপর থেকে সেই তোমার সব কাজ করে দেবে।আলমারিতে সব গুছিয়ে রাখা আছে, যেটা ইচ্ছা হয় বের করে পড়ে ফেলো।রেডি হয়ে ব্রেকফাস্ট টেবিলে এসো।

দিশানী ঘর বের হতে নেবে, তখনি পেছন থেকে নির্ঝর দিশানীর হাত টেনে ধরলো, তারপর শান্ত কণ্ঠে ডাকলো,,
—দিশা!

দিশানী একপ্রকার চমকে নির্ঝরের দিকে তাকালো, কারণ আজ অনেক দিন পর নির্ঝর দিশানী কে দিশা বলে ডাকলো। দিশানী জড়ানো কণ্ঠে বললো,,
—ক্ কিছু বলবে?

নির্ঝর হাত ধরে টেনে দিশানীকে কাছে নিয়ে আসলো, তারপর বললো,,
—এরকম পাল্টে গেলে কেনো দিশা?

দিশানী নির্ঝরের চোখের দিকে তাকিয়ে উত্তর দিলো,,

—আমি তো পাল্টাতে চাইনি নির্ঝর, তোমরাই তো আমাকে বাধ্য করলে পাল্টে যেতে। একটু ভালোবাসা চেয়েছিলাম তোমার কাছে, কিন্তু তুমি তো সেটাও দিলে না, ভালোবাসা তো দূরেই থাকলো আমি তো তোমার কাছে সম্মানটুকুও পেলাম না।

নির্ঝর দিশানীর দু-গালে হাত রেখে বললো,,
—কোনোদিনই কি সম্মান দেইনি তোমাকে?

—দিয়েছো, কিন্তু যখন আমার সম্মানের সবচেয়ে বেশি দরকার ছিলো তখন দাওনি।

দিশানী কথাটা বলে নিজেকে নির্ঝরের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিলো তারপর বললো,,
—আরেকটা কথা নির্ঝর, এতোটা কাছে নিয়ে এসোনা আমায়, আমার এতোটা কাছে আসার অধিকার তুমি হারিয়ে ফেলেছো, আমাদের ডিভোর্স হতে চলেছে,এখন তোমার তোমার কাছে আসলে আমার পাপ হবে, আর আমি পাপের ভাগিদার হতে চাইনা। এখন তোমার ছোঁয়া আমার কাছে বিষের মতন।আমি চাইনা বিষের প্রভাবে শেষ হয়ে যেতে, এখনো অনেক লড়াই বাকি আছে।

কথাগুলো বলে দিশানী ঘর থেকে বের হয়ে গেলো। আর নির্ঝর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের কাজে মনোযোগ দিলো।

——————-
দিশানী বাথরুমে গিয়ে দেখে নিরা কাপড় ধুচ্ছে। আর কিছুক্ষন পর পর নিজের হাত দেখছে, নিরার হাতগুলো জলের জন্য পুরো সাদা হয়ে গেছে,দিশানী নিরা কে বললো,,
—এই ক’টা তো কাপড়, তবুও ধুতে এতো সময় লাগছে তোমার? নিরা তোমার টাইম সেন্স বড্ড খারাপ, কতক্ষন সময় লাগাবে আর?

নিরা ক্লান্ত হয়ে বললো,,
—আর কিছুক্ষন, প্রায় হয়েই এসেছে।

দিশানী নিরাকে পিঞ্চ মেরে ফেললো,,
—তোমার কপালে দুঃখ আছে, শশুরবাড়িতে গিয়ে তোমাকে প্রচুর ভুগতে হবে দেখছি, কোনো কাজেরই ছিরি নেই তোমার। প্রচুর কষ্ট আছে তোমার কপালে, আসল কথা হচ্ছে প্রতিদান। অন্যকে কথা শুনিয়েছো, কষ্ট দিয়েছো তার প্রতিদান তোমাকে পেতে হবে তো তাইনা?

চলবে

হ্যাপি রিডিং

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here