রঙহীন জীবনের রঙ,পর্ব:১৭+১৮

0
388

গল্প: #রঙহীন_জীবনের_রঙ
পর্ব ১৭
লেখনীতে: #স্বর্ণা_সাহা (রাত)

দিশানী এসব বলে নিজের রুমে চলে গেলো।

দিশানী রুমে যাওয়ার পর পরই সুজাতা নির্ঝর কে বললো,
—দেখলি কি তেজ!কি বেয়াদব মেয়ে।ওই মেয়ে বলে কিনা আমাকে থাপ্পড় মারবে?ওর সাহস দেখে আমি অবাক হচ্ছি। নির্ঝর তুই একটা ব্যবস্থা কর।

নিরাও সুজাতার কথার সাথে তাল মিলিয়ে নির্ঝরকে বললো,
—মা ঠিক কথা বলেছে দাদা। তুই একটা ব্যবস্থা কর। এরপর না জানি আমাদের সাথে কি করে বসবে বৌদি

নির্ঝর রাগে ফুসতে ফুসতে বললো,
—আমি ওর বাড়িতে ফোন করছি, দেখি ওনারা কি বলে।

নিরা বললো,
—ওদের বলে কি আদৌ কোনো লাভ হবে, ডিভোর্স এর কথা তো ফোন দিয়ে জানিয়েছিলি কোনো আগ্রহই তো দেখায়নি।

সুজাতা মুখ বেঁকিয়ে বললো,
—পরিবারটাই যেখানে এরকম মেয়ে আর কেমন হবে!হুঁহ!

—————-
দিশানী বিছানায় বসে চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। আসলে প্রতিবাদ করার পরে যেমন আনন্দ পাওয়া যায়, তেমনি খারাপও লাগে। নিঃশাস ভারী হয়ে আসে। দিশানীরও ঠিক তেমনি হচ্ছে। এই প্রতিবাদটা দরকার ছিলো। যখন কোনো নারীকে কোনো কারণ ছাড়াই “নষ্টা মেয়ে” উপাধি দেওয়া হয়, তখন যদি সে মেয়ে প্রতিবাদ না করে তাহলে সে নিজেই নিজের কাছে অপরাধী।আজকাল যে নিজে নিজের জন্য প্রতিবাদ করতে পারে না,তার কোনো মূল্যই থাকেনা।দিশানী মনে মনে নিজেই নিজেকে অভিবাদন জানাচ্ছে। কারণ সে পেরেছে, সে আজ তার প্রতি হওয়া অন্যায়ের যোগ্য জবাব দিয়েছে।আজ দিশানীর জন্য সবচেয়ে আনন্দের দিন, আবার সেরকমই বেদনারও দিন।নিজের স্বামীর কাছে এসব শুনে কি কোনো নারী আনন্দ পায়?

দিশানীর ফোন বেজে উঠতেই ও চোখ খুলে।ফোন হাতে নিয়ে দেখে মেঘা কল করেছে। দিশানী কল ধরতেই ওপাশ থেকে মেঘা বলে,
—কিরে বাড়িতে পৌঁছে গেছিস?

—হুম!একটু আগেই পৌঁছালাম।

—ওহ!শোন একটা কথা বলবো তোকে।

—বল!

—ডিভোর্স এর পরে তুই আমাদের বাড়িতে এসে উঠবি আর এখান থেকেই ভার্সিটিতে যাতায়াত করবি বুঝতে পেরেছিস?

—না রে!আমি হোস্টেলে উঠবো। অযথা তোদের ঝামেলা বাড়াতে চাইনা আমি!

—এক থাপ্পড়ে তোমার গাল লাল করে দেবো আমি।তুমি নিজেকে আমাদের ঝামেলা মনে করছো? তোমার খুব সাহস বেড়ে গেছে তাইনা? আমরা তো তোমার পর। তুমি তো আমাদেরকে নিজের লোক মনেই করোনা তাই তো এসব বলছো।

—তুই আমাকে ভুল বুঝছিস আমি ওভাবে বলতে চাইনি।

—তো ঠিক কিভাবে বলতে চেয়েছো তুমি? দেখ দিশু বান্ধবী হয়ে যদি বান্ধবীর কোনো উপকারেই না লাগতে পারি তাহলে কিসের বান্ধবী হলাম বলতো?আমাকে এভাবে পর করে দিস না।

—তোদের মতো বন্ধু পেতে ভাগ্য লাগে।সত্যি আর কিছু না হোক অন্তত আমি বন্ধু পাওয়ার দিক দিয়ে অনেক ভাগ্যবতী। কিন্তু তবুও তোর বাড়িতে থাকবো কেমন একটা দেখায় না?

—আচ্ছা তুই কি সৌম্যকে নিয়ে টেনশন করছিস? সৌম্য কি বলবে সেটা নিয়ে? আরে টেনশন করিস না,সৌম্যর তোর আমাদের বাড়িতে থাকা নিয়ে কোনো আপত্তি নেই।আমি আজকে আমাদের বাড়িতেই তোকে এই কথা বলতে পারতাম কিন্তু তুই সামনাসামনি আরো রাগারাগি করতিস তাই ফোন দিয়েই বললাম।শোন তুই সিদ্ধান্ত নে, তবে উত্তর যেনো হ্যাঁ হয়। এখন রাখছি আমি।

মেঘা ফোন কেটে দিলো।দিশানী ফ্রেশ হতে গেলো।

————-
সকালবেলা নির্ঝর দিশানীর বড় ভাই দিব্যকে ফোন করলো।সাথে নিরা আর সুজাতাও ছিলো।ওরা দুজন দিব্য আর নির্ঝরের কথা শোনার জন্য নির্ঝরের ফোন লাউড স্পিকারে দেয়।দিব্য ফোন ধরতেই নির্ঝর বললো,
—আপনার বোনের ব্যবহার অতি নিম্নমানের হয়ে গেছে। দিশানী আমাদের অতিষ্ট করে দিচ্ছে। কালকে আমাকে থাপ্পড়ও মেরেছে।

—কি করেছিলে দিশুর সাথে যে তোমাকে থাপ্পড় মেরেছে?

—সেটা আপনার জানার দরকার নেই। আপনি আপনার বোনকে এসে নিয়ে যান।

—শোনো বিয়ে করেছো তুমি!আর ডিভোর্স হতেও এখনো দুই মাস বাকি আছে তাই আমার বোনের সব দায়িত্ব তোমার।আমি ওকে নিয়ে আসতে পারবো না, রাখছি!

দিব্য এসব বলেই ফোন কেটে দিলো।

পেছন থেকে দিশানী বললো,
—কি আমার দাদাকে ফোন করে কোনো লাভ হলো না তো?

দিশানীর কথা শুনে নির্ঝর, সুজাতা আর নিরা পেছনে তাকালো।দিশানী এতক্ষন পেছনে দাঁড়িয়ে থেকে নির্ঝর আর দিব্যর কথা শুনছিলো। ফোন লাউড স্পিকারে দেওয়ার জন্যই দিশানী দুজনের কথোপকথন শুনতে পায়। দিশানী আবার বললো,

—দাদা কে ফোন দিয়ে কোনো লাভ হবে না। আমার দাদাও তোমাদের সবার মতোই স্বার্থপর। যার আমার জন্য কোনো মায়া নেই।তুমি ভাবলে কি করে দাদা আমাকে ওর বাড়ি নিয়ে যাবে? যে আমাকে নিজের বোঝা মনে করে তোমার সাথে বিয়ে দিলো সে কখনো আবার সেই বোঝাকে ঘরে তুলবে?আমাকে আবার পালতে গেলে তো ওর খরচ বাড়বে, যে আগেই আমাকে পালতে পারলো না সে এখন আমাকে পালবে তোমার মনে হয়?আমার আপনজনগুলোই কেমন যেনো আমার পর হয়ে গেছে আর পররাই আপন হচ্ছে।

নিরা বললো,
—এই আবার শুরু করলে তুমি বৌদি?

—আচ্ছা নাও বাদ দিলাম। আগে বলো কালকে মেয়ে কেমন দেখলে? পছন্দ হলো?

নিরা উত্তর দিলো,
—তোমার থেকে অনেক ভালো। শান্ত-শিষ্ট, মিষ্টি মেয়ে। তোমার মতো মুখে মুখে তর্ক করে না।

দিশানী উত্তর দিলো,,
—ভুল বললে নিরা।আমি তো তর্ক করিনা আমি তো প্রতিবাদ করি। তর্ক আর প্রতিবাদের মধ্যে যে একটা পার্থক্য আছে সেটা বুঝতে শেখো।

সুজাতা বললো,
—এলিনা অনেক ভালো মেয়ে, দেখেই বোঝা যায়। ভদ্রও বটে।আর বড়লোক বাবার একমাত্র মেয়ে।

দিশানী জিজ্ঞেস করলো,
—বাবাহ!বড়লোক বাবার একমাত্র মেয়ে অথচ মেয়েকে একটা ডিভোর্সি ছেলের সাথে বিয়ে দিচ্ছে?ভাবার বিষয়!

সুজাতা বললো,
—সে নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না।

নিরা সুজাতাকে বললো,
—আরে মা বুঝতে পারছো না কেনো!বৌদির হিংসা হচ্ছে। নতুন বৌদি যে বৌদির থেকে সব দিক দিয়ে ভালো এটা বৌদি সহ্য করতে পারছে না।

দিশানী তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,
—বেশি ভালো ভালো না।আপনারা যা ডেসক্রিপশন দিলেন তাতেই বুঝে গেছি আপনাদের কপালে দুঃখ আছে, কিন্তু আপসোস এটা বোঝবার ক্ষমতা আপনাদের মধ্যে নেই। এই মেয়েই আপনাদের সোজা করে দেবে। কথায় আছে না লোভে পাপ পাপে মৃত্যু।

গল্প: #রঙহীন_জীবনের_রঙ
পর্ব ১৮
লেখনীতে: #স্বর্ণা_সাহা (রাত)

দিশানী তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,
—বেশি ভালো ভালো না।আপনারা যা ডেসক্রিপশন দিলেন তাতেই বুঝে গেছি আপনাদের কপালে দুঃখ আছে, কিন্তু আপসোস এটা বোঝবার ক্ষমতা আপনাদের মধ্যে নেই। এই মেয়েই আপনাদের সোজা করে দেবে। কথায় আছে না লোভে পাপ পাপে মৃত্যু।

সুজাতা বিরক্ত হয়ে বললো,
—শোনো তোমার চ্যাটাং চ্যাটাং কথা তোমার কাছেই রাখো। আমাদেরকে নিয়ে তোমার ভাবতে হবেনা আর শকুনের দোয়ায় গরু মরে না।

দিশানী চুল ঠিক করতে করতে বললো,
—সেম টু ইউ শাশুড়িমা।এখন যান রান্নাঘরে গিয়ে আমার জন্য কড়া করে এক-কাপ চা করে নিয়ে আসুন,যান।

সুজাতা রাগে ফুসতে ফুসতে বললো,
—চা করবো মানেটা কি?বাড়ির সব কাজ তো আমাদের দিয়ে করাও নিজে শুধু রান্না করো। এটাও এখন আমাদের দিয়ে করাতে চাইছো?

—হুম করবেন!আমি আপনাকে দিয়ে কাজ করিয়ে আপনারই ভালো করছি।সারাদিন বসে থাকলে আপনারই সমস্যা হবে।তাই একটু খাটাখাটনি করুন শরীর ভালো থাকবে।

—এটা যখন বোঝোই তাহলে নিজে চুপ করে বসে থাকবে কেনো? নিজেও কাজ করো।

—এমন ভাবে বলছে যেনো উনিই এতদিন সব কাজ করে উল্টে দিয়েছেন।এতদিন আমি অনেক কাজ করেছি এখন সময় একটু অবসর নেওয়ার।এতদিন আমি সব কাজ করেছি এখন আপনারা কাজ করবেন আর আমি দেখবো। এতদিন আপনারা আমাকে অর্ডার করেছেন এখন আমি আপনাদের অর্ডার করবো। যদিও এই কাজটা আমি এক মাস আগে থেকেই শুরু করে দিয়েছি কিন্তু বানরকে মাঝে মাঝে থাপ্পড় না মারলে আবার বানর মাথায় চড়ে বসে তাই আরেকবার মনে করিয়ে দিলাম।

সুজাতা রেগে গিয়ে বললো,
—তুমি আমাকে বানর বললে?

সুজাতার কথায় দিশানীর প্রচুর হাসি পাচ্ছে।কিন্তু দিশানী কোনোরকমে হাসি চেপে রেখে বললো,
—আমি তো উপমা দিলাম। আপনি যদি নিজেই নিজেকে বানর বলেন তাহলে আমি কি বলতে পারি বলুন?

—অসহ্য!

—সে আপনার সহ্য হোক আর না হোক তাতে আমার কি? আপনি শুধু তাড়াতাড়ি আমাকে এক-কাপ চা বানিয়ে দিন ঝটপট করে।

সুজাতা রাগে ফুসতে ফুসতে রান্নাঘরে চলে গেলো।

নিরা নিজের ঘরে যেতে নিতেই দিশানী নিরাকে ডাক দেয়। নিরা বিরক্তি নিয়ে জিজ্ঞেস করে,
—আবার কি হয়েছে? এতক্ষন মাকে এতো কথা শুনিয়ে শান্তি হয়নি? এখন কি আমাকেও কথা শোনানোর ইচ্ছা আছে নাকি?

—না গো!তোমার মতো ফালতু মেয়েকে কথা শুনিয়ে যে কোনো লাভই হবেনা তা আমি জানি। তাই তোমাকে কথা শোনালে শুধু আমার সময়ই নষ্ট হবে কোনো লাভ হবে না। যাকে বলে অপাত্রে ঘি ঢালা। তোমার ক্ষেত্রেও ঠিক সেরকম। যাই হোক বলছিলাম যে কালকে রাতে তো ভালো ভাবেই খেয়েছো তাহলে বাসনগুলো কেনো ধোওনি শুনি?

—মা টায়ার্ড হয়ে গেছিলো। এমনিতেই কালকে মেয়ে দেখতে যাওয়া হয়েছিলো, তাই টায়ার্ড হয়ে যাওয়ার কারণে আর বাসন ধোয়নি।

—মা না-হয় টায়ার্ড ছিলো তাহলে তুমি কি করছিলে হ্যাঁ? তুমি নিজেও তো ওগুলো ধুতে পারতে!

—পাগল নাকি? আমি ওসব করতে পারবোনা। বাসন মাজতে গেলে আমার হাতের নখ নষ্ট হয়ে যাবে, হাত অসুন্দর হয়ে যাবে। তাই আমি ওগুলো করবোনা।

দিশানী মুখ ভেংচিয়ে বললো,
—কি এলেন রে আমার ননীর পুতুল!বাসন মাজলে নখ নষ্ট হয়ে যাবে হাত অসুন্দর হয়ে যাবে আর কেউ যেনো বাসন মাজেই না। বলি রূপ ধুয়ে কি জল খাবে নাকি?তোমাকে একটা শিক্ষা দেওয়া দরকার!এখন থেকে বাড়ির সব বাসন তুমি মাজবে, বুঝেছো?

—পারবোনা!আমার নখ ভেঙে যাবে।

দিশানী এই কথা শুনে নিরার হাত ধরে জোর করে একটা নখ ভেঙে দিলো।তারপর বললো,
—নাও একটা নখ ভেঙে দিয়েছি। এমনিতেই নখ অসুন্দর হয়ে গেছে। এখন যাও বাসনগুলো মেজে ফেলো। আর হ্যাঁ আমি যখন একবার বলেছি তুমি এখন থেকে বাসন মাজবে তাহলে তুমিই এখন থেকে বাসন মাজবে।আর যদি আমার কথা না শোনো তাহলে আমি তখন তখনি অ্যাকশন নেবো আগে খাওয়া বন্ধ করতাম এখন হাতাহাতি করবো।এখন যাও ভালোই ভালোই বাসনগুলো মেজে ফেলো।

নিরাও রাগে ফুসতে ফুসতে বাসন মাজতে গেলো।

নির্ঝর চুপচাপ এসব দেখে গেলো।

নীলাদ্রির ফোন আসতেই দিশানী ফোন নিয়ে রুমে গেলো।

দিশানী ফোন ধরে বললো,
—হুম বলুন

—কালকে ফ্রি আছি আমি ফর্ম টা কালকে জমা দিতে যাবো বুঝেছো?

—হুম বুঝলাম।

—হুম!

নীলাদ্রির সাথে কথা বলতে বলতেই নিরা চা দিয়ে গেলো দিশানীকে।দিশানী হেসে হেসে নীলাদ্রির সাথে টুকটাক কথা বলছে। নিরা চা দিতে এসে দিশানীর মুখে নীলাদ্রির নাম শুনে আর দিশানীকে হেসে হেসে কথা বলতে দেখে রাগে ফুসতে ফুসতে বের হয়ে গেলো।

নির্ঝর ঘরে আসতেই দিশানী ফোন রেখে দিলো।নির্ঝর আসাতে বললে ভুল হবে দুজনের কথা শেষ হয়ে গেছিলো তাই ফোন কেটে দিয়েছে আর নির্ঝরও ঠিক ওই সময়ই ঘরে ঢোকে।

নির্ঝর দিশানীকে বললো,
—কার সাথে কথা বলছিলে আর আমায় দেখে ফোনটা কাটলে কেনো?

দিশানী ভ্রু কুঁচকে বললো,,
—কে তুমি? কোনো মহান ব্যক্তি যে তোমায় দেখে ফোন কাটবো? কথা শেষ হয়ে গেছিলো তাই ফোন কেটে দিয়েছি।

—কার সাথে কথা বলছিলে?

—তোমার জেনে কোনো লাভ নেই।

—নীলাদ্রির সাথে কথা বলছিলে তাইনা? যখন তোমার ফোন আসে তখন আমি তোমার ফোনের স্ক্রিনে নীলাদ্রি নাম লেখা ওঠা দেখেছি।

—জানোই যখন নীলাদ্রি ফোন করেছিলো তখন আবার ঘটা করে জিজ্ঞাসা করতে আসার মানে কি?

—লজ্জা করে না বিবাহিত মেয়ে হয়ে পরপুরুষের সাথে এতোটা মেলামেশা করতে?

—কাল রাতের থাপ্পড়টা মনে নেই তাইনা? আরো খাওয়ার শখ হয়েছে? দেবো আর কটা? সিরিয়াসলি বলছি এবার গাল লাল না করা অবধি কিন্তু চড় দেওয়া থামবে না।খেতে চাও আরো?আর আরেকটা কথা নিজের সীমার মধ্যে থাকার চেষ্টা করো। আর বিবাহিত ছেলে হয়েও দ্বিতীয় বিয়ের জন্য মেয়ে দেখতে যাওয়ার জন্য তোমার যদি লজ্জা না করে তাহলে আমার কোনো ছেলের সাথে কথা বলতে লজ্জা কেনো করবে? আমিও মানুষ তুমিও মানুষ ওহ না তুমিতো অমানুষ!আমারো কি বুদ্ধি আমি তোমার সাথে মানে তোমার মতো কুরুচিপূর্ন মানুষের সাথে নিজের তুলনা করছি।ধুর আমারি ভুল!

—জাস্ট শাট আপ!তুমি মেয়ে আর আমি ছেলে তোমার সাথে আমার তুলনা চলে না। আমি বিবাহিত হয়েও বিয়ের জন্য মেয়ে দেখতে যেতে পারি এতে সমাজ আমাকে কিচ্ছু বলবে না কিন্তু তুমি বিবাহিত হয়েও একটা ছেলের সাথে মিশলে সমাজ তোমাকে কটু কথা বলবে। চরিত্রহীন বলবে।

দিশানী এই কথা শুনে নির্ঝরের গালে এলোপাথারি চড় মারতে থাকে একের পর এক একের এক চড় মেরেই যাচ্ছে।ঐদিন শুধু চারটা থাপ্পড় মারলেও আজকে হিসাব ছাড়া থাপ্পড় দেয় দিশানী নির্ঝরকে। একদম গাল লাল করে দেয়।নির্ঝর অনেক কষ্টে দিশানীকে আটকায়।

দিশানী উত্তেজিত হয়ে ওঠে তারপর বলে,
—ধিক্কার জানাই তোমার এমন সমাজকে। যে সমাজে নারীকে সম্মান দেওয়া হয়না। নারীকে মানুষ বলে গণ্য করা হয়না।যে সমাজে তোমাদের মতো মানুষরুপী শয়তানের বসবাস চলে সে সমাজকে আমি চরম ধিক্কার জানাই।আমার তোমাকে মারা প্রত্যেকটি চড় তোমার এই কলুষিত সমাজের জন্য।আমার তোমাকে মারা প্রত্যেকটি চড় সেই মানুষগুলোর জন্য যারা নারীকে অবহেলা করে,আমার তোমাকে মারা প্রত্যেকটি চড় সেই পরিবারগুলোর জন্য যারা নিজেরাই নিজেদের ছেলে আর মেয়ে সন্তানের প্রতি ভেদাভেদ করে,আমার তোমাকে মারা প্রত্যেকটি চড় সেই পরিবারগুলোর জন্য যারা নিজের মেয়েকে রাজরানী করে রাখে অথচ ছেলের বউকে চাকরানী বানিয়ে দেয়,আমার তোমাকে মারা প্রত্যেকটি চড় সেই সমাজের জন্য যারা নিজের ছেলের অক্ষমতাগুলোকে স্বীকার না করে অযথা একটা মেয়েকে অক্ষম বানিয়ে দেয়, আমার তোমাকে মারা প্রত্যেকটি চড় তোমার মতো কাপুরুষের জন্য,আমার তোমাকে মারা প্রত্যেকটি চড় সেই সমাজের জন্য যারা মেয়েদের দুর্বল ভাবে।এমনকি আমার তোমাকে মারা প্রত্যেকটি চড় সেই নারীদের জন্যও যারা কোনো প্রতিবাদ না করে তার প্রতি করা অন্যায়গুলোকে চুপচাপ সহ্য করে।মেয়েরা কখনোই দুর্বল না!মেয়েরা যেমন শান্তশিষ্ট হতে পারে তেমনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে অশান্ত হয়ে ঝড় তুলতে পারে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here