রোদ বৃষ্টির প্রেম পর্ব -০৮

#রোদ_বৃষ্টির_প্রেম
#Nishi_khatun
#part_08

রিনি হুট করে তার শ্রেণী কক্ষে প্রবেশ কারী এক ব্যক্তির গালে চুম্বন করে।
সাথে সাথে সেই ব্যক্তি তার দাম্ভিকতা বজায় রেখে ভরা ক্লাসরুমে সবার সামনে রিনির গালে সজোরে থাপ্পড় দেয়।

আকস্মিকভাবে এমন কান্ড ঘটাতে ক্লাসের সবাই একদম নির্বাক হয়ে যায়।

রিনি গালে হাত দিয়ে সামনে উপস্থিত ব্যক্তির মুখের দিকে তাকিয়ে চমকে ওঠে। ঐ ব্যক্তির চোখ জোড়া রাগে লাল টকটকে হয়ে আছে। মনে হচ্ছে এখুনি রিনিকে আস্তা গিলে ফেলবে।

রিনি কিছু বলবে তার আগেই ঐ ব্যক্তি জোড়ে চিৎকার করে ওঠে,”তোমার সাহস হয় কি করে আমাকে চুম্বন করার? আমি কি তোমার প্রেমিক না স্বামী কোনটা বলো?”

রিনির কলিজা কেঁপে ওঠে। সে দ্রূত মাথা নাড়িয়ে উওর দেয় কোনোটাই না।

সাথে সাথে লোকটা আরো জোরে ধমক দিয়ে বলে,”তাহলে পরপুরুষ কে স্পর্শ করতে রুচিতে বাধে না? এই সব বেহায়া মেয়েদের জন্য আজ আমাদের সমাজের এই করুণ দশা। নিজেদের একটু লজ্জা করে না পরপুরুষ কে এভাবে সবার সামনে স্পর্শ করতে। এদের চোখের পর্দা নেই।”

রিনি ছলছল নয়নে তার দিকে তাকিয়ে বলে,”আপনি আমাকে ভুল ভাবছেন। আপনি যেমনটা মনে করছেন তেমন কোনো কিছুই না। আমাকে ভুল বুঝছেন আপনি।”

লোকটা বলে,”বেয়াদব মেয়ে! বেহায়াপনা করেও আবার মুখে মুখে তর্ক করতে লজ্জা করে না? বাড়ির মানুষেরা এসব শিখিয়ে পড়িয়ে বুঝি ভার্সিটিতে পাঠাই? ”

রিনি- দেখুন ভুল আমি করেছি আমাকে যা বলার বলেন। এসবের মাঝে আমার পরিবার কে টেনে আনবেন না। তাদের শিক্ষা নিয়ে কোনো কথা আমি আপনার কাছে শুনতে চাইছি না। আমার শিক্ষা নিয়ে কথা বলার অধিকার আপনার নেই।”

ছেলেটা বলে,”চোরের মায়ের বড় গলা।”

তখন ক্লাস রুমে ভার্সিটির প্রিন্সিপ্যাল স্যার প্রবেশ করেন। সব স্টুডেন্ট দ্রুত স্যার কে সম্মান জানাতে উঠে দাঁড়িয়ে পড়ে।

প্রিন্সিপ্যাল স্যার সবার উদ্দেশ্যে বলে, “স্টুডেন্ট উনি হচ্ছেন তোমাদের নতুন প্রফেসর বিহান আহসান। ”

সকল স্টুডেন্ট অবাক চোখে ওদের দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে। তখন হঠাৎ করে প্রিন্সিপ্যাল স্যার বিহান কে জিজ্ঞাস করে। কোনো সমস্যা মিস্টার বিহান?

তখন বিহান প্রিন্সিপ্যাল স্যারের দিকে তাকিয়ে রিনিকে ইশারা করে বলে, “আমি ক্লাস রুমে প্রবেশ করার সাথে সাথে মেয়েটা ছুটে এসে আমাকে চুম্বন করেছে। এখন আবার আমার মুখে মুখে তর্ক করছে। আপনি বলুন আমার এই মেয়েটার সাথে কি করা উচিৎ? ”

প্রিন্সিপ্যাল স্যার বুঝতে পারছে রিনির এমন কান্ডে বিহান রেগে বোমা হয়ে আছে। তাই স্যার রিনির সামনে এসে গম্ভীর কন্ঠে বলে,”রিনি তোমার মতো ভাল স্টুডেন্টের থেকে এমন কিছু আশা করি নাই। কেনো এভাবে প্রফেসর কে অপমান করলে?”

রিনি এবার কন্ঠের জড়তা কম করে বলে,”স্যার আমি বিহান স্যার কে চুম্বন করতে চাই নি। উনি হঠাৎ করে সামনে চলে আসাতে এমন একটা কান্ড হয়ে গেছে। আমি তো উনার পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা মৃত্তিকাকে চুম্বন করতে এগিয়ে আসছিলাম। হুট করে মৃত্তিকার আগে উনি চলে আশাতে এমন একটা আপত্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। আমি আমার ভুলের জন্য মাফ চাইছি।মাথা নিচু করে বলে।

বিহান এবার রেগে বলে,”ভার্সিটি তে কি এসব করতে আসো না কি?”

রিনি মাথা নিচু করে বলে,”না স্যার! ট্রুথ এন্ড ডেয়ার গেম খেলছিলাম। সেখানে ডেয়ার নিয়েছিলাম। তাতে এই চ্যালেঞ্জ পেয়েছিলাম যে রুমের মধ্যে প্রবেশ কারী ব্যক্তিকে চুম্বন করতে হবে। জানালার বাহিরে মৃত্তিকা কে দেখে দৌড়ে চলে আসি। তবে বুঝতে পারি নাই অপর পাশ থেকে সেই সময় আপনি চলে আসবেন। আপনি চলে আসাতে ভুলটা হয়ে গেছে।”

প্রিন্সিপ্যাল স্যার বলে,”এমন গেম খেলার কি দরকার যেখানে মান সম্মান নিয়ে টানাটানি হতে পারে?”

রিনি মাথা নিচু করে বলে,”দুঃখিত স্যার। আর নেক্সট টাইম এমন গেম খেলবো না।”

প্রিন্সিপ্যাল স্যার রিনি কে শিটে যেয়ে বসতে বলে। আর বিহান কে বলে,”মিস্টার বিহান স্টুডেন্ট মানুষ ভুল করেছে মাফ করে দিন। নেক্সট টাইম এমন কাজ আর করবে না। আপনি এবার তাহলে আপনার ক্লাস শুরু করতে পারেন।”

বিহান বলে,”স্যার আজ সে মেয়ে বলে এতোটা ছাড় দিচ্ছেন।যদি কোনো ছেলে কোনো মেয়ের সাথে এমন কাজ করত তাহলে তার তো মান-সম্মান ধুয়ে মুছে দিতো সবাই।”

প্রিন্সিপ্যাল স্যার- দেখুন মিস্টার বিহান এখন এই কাহিনীটা এখানে শেষ করা উচিৎ। তাছাড়া আপনার ক্লাসের সময় নষ্ট হচ্ছে।বলে স্যার চলে যায়।

বিহান একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ক্লাসের কার্যক্রম শুরু করে। বিহানের এই এটিটিউড দেখে ক্লাসের সকল স্টুডেন্ট বুঝে গেছে স্যার একজন রাগী প্লাস বেপরোয়া টাইপের। এনার ক্লাসে এলোমেলো কিছু করা যাবে না।
বিহানের পুরো ক্লাস টাইমে রিনি মাথা নিচু করে বসে থাকে। তার কোনো ইচ্ছা নেই ঐ বিহানের চেহারা দেখার। আর সারাজীবনের শিক্ষা হয়েগেছে। কোনোদিন ও ট্রুথ আর ডেয়ার গেম খেলতে যাবো না।



নার্স একটা ফুটফুটে বাবু কোলে করে অটির বাহিরে বেড়িয়ে আসে। বাহিরে এসে বলে,”আপনাদে ঘর আলো করে বংশধর এসেছে। আপনাদের নাতি হয়েছে।”

শিকদার মির্জা দ্রুত বাচ্চাকে কোলে নিয়ে আজান দেয়। তারপর সে বাচ্চার কপালে গভীর ভাবে চুম্বন দিয়ে বাচ্চাটা কে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়।

বৃষ্টি জানে শিকদার মির্জার এই ক্রন্দন খুশির। এর মাঝে কোনো ভেজাল নেই। ডায়না মির্জা ও তার নাতি কে কোলে নিয়ে আদর করতে থাকে।

তার কিছু সময় পর অটি থেকে ডাক্তার বেড়িয়ে আসে।
শিকদার মির্জা ডাক্তার কে উদ্দেশ্য করে বলে,”ডাক্তার আমার বৌমা কেমন আছে?”

ডাক্তার – উনি ভালো আছেন। তবে অনেক খারাপ কিছু হতে পারতো তার সাথে। যদি ডাক্তার রোদ তাকে সঠিক সময় হসপিটাল না নিয়ে আসতেন এবং অপারেশনের ব্যবস্থা খুব দ্রুত না করে দিতেন। এখন উনি অজ্ঞান আছে। কিছু সময় পর তাকে কেবিনে শিফট করা হবে। তখন আপনারা রোগীর সাথে দেখা করতে পারবেন। বলে ডাক্তার স্থান ত্যাগ করে।

শিকদার মির্জা হঠাৎ করে রোদ কে জড়িয়ে ধরে।
তার এমন কাজে রোদ খুব অবাক হয়ে যায়।
আসলে সে এমন কোনো কিছুই আশা করে নাই।

মির্জা সাহেব – তুমি জানো না আমাদের কতো বড় উপকার করছো তুমি। জীবনেও তোমার এই ঋণ শোধ করতে পারবো না।

রোদ বলে,”দেখুন স্যার এটা আমার কর্তব্য ছিলো। আর মানুষ হয়ে কোনো মানুষের বিপদে যদি সাহায্য করতে না পারি তাহলে কেমন মানুষ হলাম বলেন।”

রোদের কথা শুনে মির্জা সাহেব হেসে বলে,”তুমি আমার ছেলের মতো। প্লিজ এসব স্যার বলে সম্বোধন করবে না। আমি তোমার বাবার বয়সি লোক।

রোদ বলে,”জ্বি আঙ্কল! তবে এখন আপনারা আনন্দ উপভোগ করুণ। আমার ডিউটি আছে আমি আসছি ভালো থাকবেন। ”

মির্জা সাহেব বলে,”আচ্ছা যাও তুমি, এখন তো মাঝেমধ্যে তোমার সাথে দেখা হবে আমাদের। ”

রোদ যাবার সময় বৃষ্টির সামনে এসে আপনার বিশ্রাম করা উচিত বলে দ্রুত স্থানে ত্যাগ করে।

শিকদার মির্জা বৃষ্টিকে কে বলে,”যাও তুমি বিশ্রাম করো। এদিকে সবকিছু সামলে নেওয়ার জন্য আমরা আছি।”

বৃষ্টি আবারো সেই কেবিনে ফিরে আসে। এরপর বেডে শুয়ে পড়ে। একটু পর একটা নার্স এসে বৃষ্টি হাতে ক্যানেলা লাগিয়ে দেয়। একটা সেলাইন দিচ্ছে। এতে শরীরের দুর্বলতা কম হবে।

এদিকে শিকদার মির্জার নাতি হবার কথা শুনে তার শুভাকাঙ্ক্ষীরা তাদের সাথে দেখা করে অভিনন্দন জানিয়ে যায়।

শিকদার মির্জার বড় ছেলে ছয়মাস ধরে বিদেশে আছে তাদের কিছু কাজের জন্য। বেচারা নিজের ছেলেটাকে একটু কোলে নিতে পারছে না কতোটা হতভাগ্য পিতা সে। সে তার পুত্র কে ভিডিও কলের মাধ্যমে দেখছে।

রোদ নিজের কাজে এতোটা বিভোর হয়ে গেছে সারাদিনে যে সকালের কাহিনী মাথায় থেকে বেড়িয়ে গেছে।

(গল্পটা কি ভালো লাগছে না? যদি গল্পটা বিরক্তিকর লাগে তাহলে বলবেন দ্রুত শেষ করে দিবো।)



চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here