রোদ বৃষ্টির প্রেম পর্ব -১৩

#রোদ_বৃষ্টির_প্রেম
#Nishi_khatun
#part_13

রোদের বাড়ির সবাই হঠাৎ করে একটা বিষয়ে একটু চিন্তিত! তাদের ছেলে-মেয়েরা কেমন জানি অন্যরকম ব্যবহার করে। তাদের ব্যবহার বদলে গেছে। কোথায় একটা হারিয়ে গেছে। এসব নিয়ে রোদের বাবা-মা, সাদিকের বাবা-মা, এমনকি রিয়ানার বাবা-মা সবাই নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করতে থাকে। সকলে তাদের সন্তানদের নিয়ে খুব চিন্তিত। আলোচনা করে সবাই ঠিক করে রোদ- আর রিয়ানার বিয়েটা দ্রূত দিয়ে দিবে।

রোদের বাব বলে,”হ্যাঁ আমরা আম্মাজানের সাথে কথা বলে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করবো। ওরা দুজনে তো আগে থেকে রাজি। তাহলে সেখানে তো আর কোনো সমস্যা নেই। ওদের না হয় বিয়ের দিনতারিখ ঠিক করার পর জানিয়ে দেওয়া হবে।”

রিয়ানার মা বলে,”রোদ ব্যস্ত ছেলে! ওর বিয়ের দিন-তারিখ ঠিক করার আগে প্লিজ তোমরা রোদের সাথে কথা বলো। নয়তো দেখা যাবে বিয়ের আসরে সবাই উপস্থিত বর বেচারা নিখোঁজ। তখন মান-সম্মান সব ধুলোয় মিশে যাবে। এমনিতে রোদ কাজ পাগল ছেলে। নিজের ডিউটির সাথে সে কম্প্রোমাইজ কখনো করবে না।”

মিসেস খান বলে,”হ্যাঁ, রুনি (রিয়ানার মা) তুমি ঠিক কথা বলছো! রোদকে বিশ্বাস নেই। ওর জীবনের সিদ্ধান্ত নিতে গেছে হাজার বার ভাবেত হয়।”

রুনি- হ্যাঁ! রোদ আমাদের সবার থেকে একদম আলাদা চিন্তা ভাবনার। তাই রোদের উপর হুট করে কোনো কিছুই চাপিয়ে দেওয়া যায় না।

মিস্টার খান- আমার ছেলেটা যে এমন কেনো আমিও জানি না।

তখন সাদিকের বাবা বলে,”ভাই আমারো কিছু বলার আছে!”

মিস্টার খান বলে,” কি বলবি বল সমস্যা নেই।”

সাদিকের বাবা- আমি বলছিলাম যে,আমার অনেক দিনের ইচ্ছা সাদিকের সাথে রিনির বিয়ে দেওয়ার।এখানে যেহেতু বিয়ের আলোচনা হচ্ছে তখন না বলে থাকতে পারলাম না এখন তোমাদের ইচ্ছা।

মিস্টার খান বলে,”আমার মেয়ে তোর ছেলের বউ হবে এতো ভালো কথা। এতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। নিজেদের বাড়ির মধ্যেই থাকবে। এর থেকে ভালো আর কিছু হতে পারে না। তাছাড়া সাদিক অনেক ভালো। আমার রিনি মা কে অনেক ভালো রাখবে।”

এদিকে সবাই তো খুশি যাক নিজেদের সন্তানদের বিয়ে নিয়ে চিন্তা মুক্ত তো হতে পারছি আমরা।

তবে বাবা-মা তো সন্তানদের বিয়ে ঠিক করে সকল চিন্তা থেকে মুক্তি পেয়েছে। সন্তানেরা কী এই সিদ্ধান্ত মেনে নিবে?


আজকাল রিনি ভার্সিটিতে যেতে চাই না। নানারকম অজুহাত দিতে থাকে।

এইতো সেদিন সকালে রোদ তার বাবা-মা রিয়ানা একসাথে বসে ব্রেকফাস্ট করছিল।

তখন মিসেস খান বলে,”কী রে রিনি আজকে কি ভার্সিটি যাবি না? তোর ভাব-সাব দেখে তো মনে হয় না যাওয়ার ধান্দা করেছিস? ”

রোদ ভ্রু কুঁচকে বলে,”মা রিনি কি বাচ্চা মেয়ে না কি? সে স্কলে যাবে না দেখে রোজ রোজ বাহানা দিবে।”

মিসেস খান- তোর ছোট বোন বাচ্চাদের থেকেও বেশি বাচ্চা হয়ে গেছে তার ঘাড়েভূত চাপছে। আজকাল সে আর রেগুলার ভার্সিটি তে যায় না। সেখানে না যেতে পারলেই বাঁচে এমন ভাব করছে। মনে হয় সেখানে কেনো বাঘ-ভাল্লুক আছে। রিনি ভার্সিটিতে গেলে ওরে আস্তা গিলে খাবে!”

রোদ খাবার খেতে খেতে বলে,” মা তোমার মেয়ে যখন এতো নেকামি শুরু করছে। তখন ওরে জিজ্ঞাস করো লেখাপড়া করার ইচ্ছা আছে কি না!”

রিনি- আসলে আমার রেগুলার ভার্সিটি তে যেতে ভালো লাগে না। তাছাড়া সামনে এক্সাম তাই বাড়িতে থেকে পড়া কমপ্লিট করছি।

রিয়ানা ফোঁড়ান কেটে বলে,”মামানি ভুতের মুখে গুণের বানি। যে মেয়ের কাছে ফোন দিলে সারাক্ষণ ভার্সিটির কথা বলতো,ভার্সিটি তার জীবনের সব! সে মেয়ে না কি আজকাল লেখাপড়া বাড়িতে বসে করতে চাইছে!”

রোদ- দেখ রিনি তোর যদি কোনো সমস্যা থাকে তাহলে বলতে পারিস। আমি বেপারটা না হয় দেখবো।তবে এভাবে চুপচাপ নিজেকে হুট করে গুছিয়ে নিতে যাস না।

রিনি মাথা নিচু করে বলে,” ভাইয়া তেমন কোনো সমস্যা নেই। এমনিতে যেতে ইচ্ছা করছে না তাই।”

রিয়ানা বলে,”আমি যতোদূর জানি! সারাবছর ক্লাস না করলেও সবাই পরিক্ষার আগে ক্লাস রেগুলার করে।আর তুমি কি না পরিক্ষার আগে নানারকম তালবাহানা শুরু করেছ।”

রোদ বলে,”দেখো মা! তোমার মেয়র মনে হয় লেখাপড়া করার কোনো ইচ্ছা নেই। এতো জোর করে লেখাপড়া করানোর দরকার নেই। তার থেকে বরঞ্চ ভালো ছেলে খুঁজে রিনির বিয়ে দিয়ে দাও। তোমার মেয়েটাকে আগে এ বাড়ি থেকে বিদায় করবো তারপর না হয় আমি তোমার বাগিতে বউ আনবো।”

রিনি রোদের কথা শুনে চোক মুখ কালো করে বসে থাকে।

মিসেস খান বলে,” হ্যাঁ তাই ভাবছি! রিনির বিয়েটা দিয়ে দিবো এবার।যে মেয়ে মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া করবে না। তাকে ঘাঁড়ে বসিয়ে খাওয়ানোর কোনো মানে হয় না। আজকেই তোর বাবা কে বলবো একটা কোনোরকম ভালো দেখে ছেলে খুঁজতে। তার গুণবতী মেয়ের জন্য।”

রিনি- চিল্লানী দিয়ে বলে,”মা ভাইয়া তোমরা এসব কি শুরু করলে সাত সকালে? এতো বিয়ে বিয়ে কেন করছো?”

রিয়ানা বলে,”তুমি আগের মতো মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া করো! ভার্সিটিতে যেতে শুরু করো তাহলে কেউ আর বিয়ের কথা বলবে না।”

মিসেস খান বলে,”হ্যাঁ রে রিনি! তুই ভেবে দেখ এখন তুই কি করবি? যদি লেখাপড়া করতে চাস তাহলে কোনো বাহানা শুনবো না। আর যদি লেখাপড়া আকাশে তুলতে চাইস তাহলে সোজা আমাদের বলবি তুই বিয়ে করতে রাজি।আমরা তোর দ্রুত বিয়ের ব্যবস্থা করবো।”

রিনি রেগে-মেগে বলে,”ধুর তোমরা আমার আপনজন না কি পাড়াপড়শি? তোমাদের থেকে এতো লেকচার শোনার থেকে তো ভার্সিটিতে যাওয়াই ভালো। তাই বলো গটগট করে নিজের রুমে চলে যায়।”‘

এদিকে রোদ রিয়ানা কে বলে,”কি রিয়ানা? তোমাকেও কি ভার্সিটিতে যাবার জন্য দাওয়াত দিতে।হবে?”

রিয়ানা থতমত খেয়ে বলে,”মানে?”

রোদ- তুমিও যে রেগুগার ভার্সিটিতে যাও না সে খবর আমি জানি। এখন তোমার জন্য কি পাএ খুঁজতে হবে?”

রিয়ানা বলে,”আমার জন্য পাএ খোঁজ আছে।তোমার এতো চিন্তা করে মাথার চুল কম করতে হবেনা।”

রোদ- উঁহু আমি যদি চিন্তা না করি তাহলে কে করবে? তোমার জামাইয়ে?

রিয়ানা – জামাইয়ের কপাল করলে সেই করো।

রোদ আর কোনো কথা না বাড়িয়ে নিজের কাজে চলে যায়।

এদিকে রিনি একরাশ বিরক্তি নিয়ে রেডি হতে থাকে ভার্সিটি তে যাবার জন্য।

(
চলবে।।।।।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here