রৌদ্র কুয়াশা পর্ব ২৩+২৪

#রৌদ্র_কুয়াশা
Suvhan Årag(ছদ্মনাম)
পর্ব ২৩

আরিয়ানের কথা শুনে হেসে উঠলো মাহির আর নীল।মাহির অফিসের কেবিনে বসে আছে।মাহিরের মুখোমুখি দুটো চেয়ারে বসে আছে নীল আর আরিয়ান।

হাসি থামিয়ে মাহির বললো,

-কি শুরু করেছিস তোরা?
-স্যার আপনি তো আমাকে এখনো অবধি কতো কিছুই দিয়েছেন।কিন্তু আরিয়ান স্যার একদম হার কিপ্টে লোক।স্যারের এতো কাজ করে দেই তবুও কিছু দেয়না।সর্বোচ্চ গেলে পাঁচ টাকা দামের মামা ওয়েফার কিনে দেয়।

নীলের কথা শুনে আরো জোড়ে হেসে উঠলো মাহির।

আরিয়ান নীলের কানটা ধরে মুলে দিল একটু।

-আআ স্যার।লাগে তো।
-খুব পাকা হয়েছো না?আমাকে কিপ্টে বলা!লকাপে ভরে দেব একদম।
-মাহির স্যার দেখলেন তো।সত্যি কথা কিভাবে গায়ে লাগে।
-তবেরে?

আরিয়ান দুষ্টুমি করে আরো জোরে নীলের কান মুলে দিল।

-এই তোরা থাম তো এবার।
-আমি কি থামবো !তোর এই বজ্জাত পিএ কে ঠিক কর।
-আচ্ছা বাদ দে।আরিয়ান অনেক দিন পর অফিসে এলি।কি খাবি বল?
-ভাবির হাতের রান্না খাব।
-এখন!
-হ্যা।
-আরেকটু আগে বলবি তো।আমি তো ওকে কিছুই বলিনি।চল বরং আজ আমার বাসায় চল।
-এই না।আমি যেতে পারব না।
-কেন?
-বাসায় তুলি একা আছে।একা আছে বললে ভুল হবে।ঐ মেয়ে টাও আছে।

আরিয়ানের কথা শুনে মাহির আর নীল দুজনেই একসাথে প্রশ্ন করে বসলো,

-কোন মেয়েটা?

আরিয়ান বলতে শুরু করলো,

-আর বলিস না।কোথ থেকে যে কি হলো?

মাহির নীল খুব মনোযোগ সহকারে আরিয়ানের কথা শুনছে।

৬৯

-মা মা আমি মামোনির কাছে যাব।মা মা।

মিলার পাশে বসে আলিশা কেঁদেই যাচ্ছে।আর মুখে এক বুলি সে ইলার কাছে যাবে।বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে মিলা।

-আলিশা!চুপ কর বলছি।
-আমি মামোনির কাছে যাব।কতোদিন মামোনিকে দেখিনা।মামোনি কেন আমাকে খাইয়ে দেয়না।ও মা মা বলো না।মামোনি কোথায়?
-তোর মামোনি মরে গেছে।বুঝেছিস?আকাশের তারা হয়ে গেছে।মাথায় ঢুকেছে।
-না।মামোনিকে এনে দেও না।

আলিশা কেঁদেই যাচ্ছে অনবরত।এর মধ্যে শায়লা বেগম আলিশার কান্না শুনে খুন্তি হাতে রান্নাঘর থেকে ছুটে আসলেন।হন্তদন্ত হয়ে ঘরের ভেতর ঢুকলেন তিনি।

-কি হয়েছে নানু?কাদছো কেন?

আলিশা শায়লা বেগমের কথার উওর না দিয়ে কেঁদেই চলেছে।

-এই মিলা।কি হয়েছে রে?তুই আবার ওকে বকেছিস?
-না মা।আমি কিছুই বলিনি।কেঁদেই যাচ্ছে ও।
-কেন?কি হয়েছে?
-ওকে এখন ওর মামোনির কাছে নিয়ে চলো।সারাদিন যে পরিমাণ মামোনি মামোনি করে আমি যে ওর মা আমাকেও মনে হয় এতো বার ডাকে না।

মিলা প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে কথা গুলো বললো।ইলার কথা শুনতেই শায়লা বেগমের মুখটা কেমন ফ্যাকাশে হয়ে গেল।শত হলেও তিনি মা।ইলা যাই করুক তার নিজের ও চিন্তা হয় ইলার জন্য।

-তুমি আমার কি ভাবতে শুরু করলে দাড়িয়ে দাড়িয়ে?

মিলা কথা শুনে ভাবনা থেকে বের হয়ে গেলেন শায়লা বেগম।

-কিছু না।ও মামোনি করবে নাই বা কেন বল।ছোটো থেকে বলতে গেলে মায়ের পেটে পড়া থেকেই তো ইলার কাছে থাকে।কতোদিন তুই ওকে রেখেছিস বলতো?নিজে ও অসুস্থ হয়ে পড়লি।দুধ টুকু খেতেই যা তোর কাছে আনতে হতো।বাকি সময় টা জুড়ে ওর প্রসাব এর কাথা ধোয়া বল,গোসল বল সব তো ইলাই করতো।এজন্যই তো এ তো মামোনি মামোনি করে।

শায়লা বেগমের কথা শুনে যেন তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো মিলা।

-ও এখন তুমিও তোমার ঐ বেশ্যা মেয়েটার পক্ষ নেবে তাই তো?তাই ছাড়া কি বা পারো তুমি।
-মিলা!কথা ঠিক করে বল।তোর জন্য যা করি আমি ইলার জন্য ও আজ অবধি এতো কিছু করিনি।
-পারোতো ঐ এক খোটা দিতে।আজ যদি সুস্থ থাকতাম তখন ও দেখতে তোমার ঐ বেশ্যা মেয়ে ঐ কাজ ই করে বেড়াতো।চরিত্রহীন মেয়ে একটা।নিজের বোনের সংসার ভাঙে তুমি তার হয়ে কথা বলছো।
-তোর সংসার তো এমনিতেই ভেঙে গেছিল মিলা।
-কখনো না।
-অবশ্যই।তুই নিজে যতদিন সুস্থ ছিলি ততোদিন ও তো নিজেই দেখেছিস তোর বরের গুন কীর্তি।
-শোনো মা।তোমার মেয়ে যদি নিজের জামাই বাবুর সামনে ঘন ঘন ঘোরা ফেরা করে গায়ের ওড়না ঠিক করে বেড়ায় সে দোষ তো কামরুলের না।
-হ্যাঁ।এখন তো এটাও ইলার দোষ।বাপের বাড়ি এসে পায়ের ওপর পা তুলে বসে থাকতিস।মেয়েটা অসুস্থ মায়ের সেবা করবে নাকি বোন ভগ্নিপতি কে আপ্যায়ন করবে।কখনো তো এসে দু নজর তাকিয়ে দেখতিস না মা কি করছে।কিভাবে চলছে?এসেই তো নিজের মতো অর্ডার করে যেতিস।
-আজ আমি অসুস্থ বলে তুমি এতো কথা শোনাচ্ছো মা।আজ শুনে রেখো তোমার ঐ ইলার জন্য অভিশাপ দিলাম ও জীবনে সুখী হবে না।জীবনে না।
-মিলা!তুই এতো,,,,।

রান্নাঘর থেকে পোড়া গন্ধ নাকে আসতেই শায়লা বেগম আবার খুন্তি হাতে রান্নাঘরে ছুটলেন।তরকারি কড়াই এর সাথে লেগে লেগে গেছে।যার জন্য পোড়া গন্ধ বের হচ্ছিল।শায়লা বেগম তাড়াতাড়ি করে একটু পানি নিয়ে ঢেলে দিলেন তরকারির মধ্যে।অনবরত নাড়তে লাগলেন।কড়াই এর সাথে লাগা অংশটা ছাড়িয়ে যেতেই ঢাকনা দিয়ে কড়াই টা ঢেকে দিয়ে চুলার আচটা কমিয়ে এক কোনায় গিয়ে দাঁড়ালেন তিনি।

চিন্তার পাহাড় যেন এসে ভর করেছে শায়লা বেগমের কাধে।প্রতিদিন সময় মতো অনলাইনেই কেউ হোম ডেলিভারি করে শায়লা বেগমের দরজায়।প্রয়োজনীয় সবজি হোক বা অন্য কিছু কোনো কিছুর জন্যেই তাকে বাইরে যেতে হয়না।কোথ থেকে এসব আসে কিছুই জানেন না তিনি।তবুও আন্দাজ করেন ইলার স্বামী ই হয়তো এসবের ব্যবস্থা করেছে।মিলার জন্য বাড়িতে একজন ডাক্তার ও আসেন চেকাপ করতে।সব ই ঠিক আছে।শায়লা বেগম বেশ সুখেই আছেন।মাঝে মাঝে মনে পড়ে ইলার কথা।কিন্ত আবার একটা চিন্তাই সব কিছু এলোমেলো করে দেয়।

-মানুষ তো আর মিথ্যা বলে না।মজিদ বুড়ো তো না জেনে কিছু বলেননি।আর তুই ও বা এতো বড় গাঙে নাও কিভাবে বাধালি?কখনো ভাবিনি ইলা তুই এ তো নিচে নামবি।ছিহ!আমার মান সম্মান এভাবে নষ্ট করলি তুই!মিলা ঠিকই বলেছে।তুই জীবনে সুখ পাবি না ইলা জীবনে ও না।

একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে শায়লা বেগম আবার রান্নায় মনোযোগ দিলেন।

৭০

-আপনাকে বেশিই সুবিধা দেওয়া হয়েছে মি,নিবিড়।যার জন্য বেশিই মাথার ওপরে উঠেছেন আপনি।আপনার কলিগদের সাথেও খারাপ ব্যবহার করেন।অফিসে সময় মতো আসেন না।প্রতিদিন একেকটা অজুহাত।একি এলাকার লোক বলে আপনার সবকিছু মাফ করেছি।কিন্তু আর না।
-স্যার।আই এম রিয়েলি সরি।আর এমন হবে না।

ম্যানেজারের সামনে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে নিবিড়।একের পর এক কথা শোনাচ্ছেন তাকে ম্যানেজার।

-আর সরি!আর নয়।সামনের মাসেই আপনাকে ঢাকা ট্রান্সফার করে দেব আমি।বাড়িতে বসে গরম গরম ভাত খেয়ে আরামে অফিসে আসেন তো এজন্য গায়ে চর্বি জমে গেছে আপনার।এই চর্বি ঝড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
-না স্যার প্লিজ।এমন করবেন না।
-আপনাকে তো বান্দরবান পোস্টিং দেওয়া উচিত ছিল।আমি তো তাও ঢাকায় দিচ্ছি।যান নিজের কাজে যান।
-স্যার প্লিজ।
-আপনার মুখে আর একটা কথাও শুনতে চাই না আমি।বেরিয়ে যান বলছি।

নিবিড় আর দাঁড়ালো না।মাথা নিচু করে কেবিন থেকে বেরিয়ে নিজের কেবিনে এসে বসলো।

আজ কেন যেন নিবিড়ের রাগ লাগছে না।সকাল থেকেই মনটা ভালো নেই তার।অনুর কথা বার বার মনে পড়ছে তার।

-তুই কোথায় হারিয়ে গেলি অনু?তোর একটুও কলিজা কাপলো না আমাকে ছেড়ে যেতে।তাও আবার আমাকে মেরে পালিয়েছিস!তুই নিজেও জানিস না অনু তোকে পেলে তোর কি হাল করব আমি।

হঠাৎ করেই ডুকরে কেঁদে উঠলো নিবিড়।

-ফিরে আসো না অনু।তুমি কেন আমাকে ছেড়ে গেলে।আমাকেও ছেড়ে কি তুমি নিজে ভালো আছো?

দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম বোঝে না।এক দিনেই
যেন নিবিড় সেটা হাড়েহাড়ে টের পাচ্ছে।

৭১

বাড়ি ফিরেই সোফায় গা এলিয়ে বসে আছে মাহির।একটু পরেই ইলা এসে সামনে শরবতের গ্লাস বাড়িয়ে দিল।

-শরবত টা খেয়ে নিন।

ইলার কথা শুনে মলিন হেসে মাহির হাত বাড়িয়ে গ্লাসটা ধরলো।

-কিসের শরবত এটা?
-তেতুলের।
-কিহ!এই তোমরা মেয়ে মানুষরা তেতুল খেতে পারো।আমি পারব না।অসম্ভব।কি টক বাবারে।
-এতো বাবা চাচাকে ডাকার দরকার নেই।খেয়েই দেখুন।তেতুল গরম কাটাতে অনেক সাহায্য করে।গরমকালে টক খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
-আমি এতো টক খেতে পারি না।
-আচ্ছা বলেছি তো খেয়েই দেখুন।আমার কথা শুনে একবার খেলে কি হবে শুনি।আমি তো আপনাকে বিষ দিচ্ছি।
-আমি কখন বললাম তুমি বিষ দিচ্ছো!
-তাহলে এমন করছেন কেন?
-এটার রঙ দেখো।মদের মতো লাগছে।
-আজব!আমি অ্যালকোহল কেন দেব আপনাকে!
-আচ্ছা খাচ্ছি।

ইলার দিকে একবার তাকিয়ে মাহির চোখ বুজে গ্লাসে চুমুক দিল।দু চুমুকেই বড্ড ভালো লাগলো তার।

-কি কেমন?
-অনেক টেস্টি।কিভাবে বানালে?
-একটু তেঁতুল পানিতে ভিজিয়ে রেখেছিলাম।তেতুলটা গলে যেতেই পানির মধ্যে তেতুল টুকু সুন্দর ভাবে কচলে পুরো পানির সাথে মিশিয়ে ছেকে নিয়েছি।তারপর তার সাথে চিনি,একটু লবণ আর বিট লবম একটু লেবুপাতা দিয়ে আরো পানি মিশিয়ে বানিয়েছি।এর মধ্যে একটু মরিচ দিলে ভালো লাগতো।আপনি তো আবার ঝাল কম খান এজন্য আর দেইনি।
-আসলেই অনেক ভালো লেগেছে।প্রতিদিন এমন শরবত দিলে তো আমি খেয়েই নেব।
-আমি ভাবলাম কি বলেন আবার।যাক ভালো হয়েছে।

মাহির এক চুমুকে পুরো গ্লাস শেষ করে ফেললো।তার পর উঠে দাঁড়ালো।

-আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।
-আচ্ছা।
-তুমি নামাজ পড়েছো?
-হ্যাঁ।আজানের পর পরই পড়েছি।
-আমি ঈশার নামাজ আদায় করতে পারিনি।ফ্রেশ হয়ে করে তবেই এসে খাব।
-আচ্ছা।

ইলা চুপচাপ দাড়িয়ে আছে।মাহির ইলার পাশ কেটে যাওয়ার সময় ইলার কাছে এসেই দাড়িয়ে গেল।

-পানি জল।
-কিছু বলবেন?
-হুম।
-বলুন ।
-তুমি তো রোজ ই আমাকে অ্যালকোহল দেও।
– আমি!
-হ্যাঁ তুমি।
-আমি কখন দিলাম!
-তোমার তো আলাদা করে দেওয়া লাগে না।
-মানে?
-তুমি নিজেই তো অ্যালকোহলের বোতল।সরি।অ্যালকোহলের গোডাউন।আমার নেশার জন্য এই অ্যালকোহলের একটু ফোটাই যথেষ্ট।

মাহিরের কথা শুনে ইলা যেন পুরো বরফ হয়ে যাচ্ছে।ইলা পুরো কাঁপতে শুরু করলো।মাহির ইলার কাঁপুনি দেখে দুষ্টু হাসি দিয়ে ইলার গালে চট করে নিজের ঠোট ছুইয়েই দ্রুত পা চালিয়ে ওপরে চলে গেল।ইলা নিজের গালে হাত রেখে হা করে মাহিরের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দাড়িয়ে আছে।

-এটা কি ছিল!

ইলা পুরো ইলেকট্রিক শক খাওয়ার মতো দাড়িয়ে আছে।

৭২

-তুই তো এমন ই চেয়েছিলি।বিধ্বস্ত।যে ক্ষয়ে গেছে।তুই তো তাকে আবার গড়তে চাস।

বিছানায় শুয়ে কপালের ওপর হাত রেখে সকালে মাহিরের বলা কথাগুলো ভাবছে আরিয়ান।আসলেই কি তাই?তবে কি মাহির সত্যি বলছে?নীল ও তো তাকে বলেছিল মাহির আর তার জীবনের বিশেষ ঘটনাগুলো সব যেন একি দিনেই ঘটে।নাহ।আর ভাবতে পারছে না আরিয়ান।উঠে বসলো সে।

-কি ভাবছি আমি?মেয়েটি বিবাহিত।বিপদে পড়ে এখানে আছে।আর আমি কিনা,,,নাহ।এরা দুটো আমার মাথা খেয়ে নিয়েছে।আসলেই।

নিজের মন কে আবার সান্ত্বনা দিল আরিয়ান।একটু পরেই আনমনে আবার বলে উঠলো,

-কিন্তু তার সেই চোখ গুলো।মায়াবী মুখ।শান্ত চাহনি!

চলবে———-
#রৌদ্র_কুয়াশা
Suvhan Årag(ছদ্মনাম)
পর্ব ২৪

আরিয়ানের বড্ড টানছে কোথাও।অনুর নিষ্পাপ চাহনি,শান্তশিষ্ট স্বভাব সবকিছুই যেন আরিয়ানকে টানছে।

-উহ।এটা কি হচ্ছে আমার সাথে?মেয়েটা বিবাহিত।

আরিয়ান শোয়া থেকে উঠেই বসলো।ঘেমেই গেছে বেচারা।

-গরম লাগছে ভীষণ।একটু ছাদ থেকে ঘুরে আসি।কিন্তু এতো রাত।

রাতের কথা ভেবে দমে গেলেও আবার দাড়িয়ে পড়লো আরিয়ান।শরীরটাকে শীতল করা প্রয়োজন।আরিয়ান ছাদের দিকে পা বাড়ালো।

৭৩

-মানুষটাকে যতোটা শান্তশিষ্ট ভেবেছিলাম এ মোটেও তেমন নয়।কি সব উল্টা পাল্টা কথা বলে।

ইলা শাড়ির আঁচল কোমড়ে গুঁজে এক হাতে খুন্তি ধরে রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে গভীর চিন্তায় মগ্ন।

-অ্যালকোহল!আচ্ছা মানুষ কিভাবে অ্যালকোহল হয়?এই লোকটার মাথা ঠিকাছে তো?
-সব ই ঠিকাছে।
-কেমনে ঠিক থাকে?মানুষ কিভাবে অ্যালকোহল হয়!মানুষ বোতলে থাকে নাকি।এই লোকটার মধ্যে ঘাপলা আছে।আমি নিশ্চিত।এ আস্তো ঘাপলার গামলা।কখন কি বলে কি করে কিছুই ঠিক নেই।
-দুই ডোজ বোধ হয় তোমাকে দেওয়া প্রয়োজন।তাহলে বুঝবে অ্যালকোহল কি!
-আসলে,,,,।

ইলা থেমে গেল।নিজেই নিজেকে বলতে লাগলো,

-আচ্ছা রান্নাঘরে তো আমি একা আছি।আমার কথার উওর দিচ্ছে কে?দেখি তো কোনো ভূত টুত নয়তো!নাহহহহ।
-পাগলামি বন্ধ করবে?নাকি তোমার জন্য পাবনার তিন নম্বর তলার ছয়শ নম্বর সিট বুক করব।

বুকে থুথু দিয়ে ইলা পেছনে ঘুরলো।মাহির কোমড়ে হাত দিয়ে ভ্রু কুচকে ইলার দিকে তাকিয়ে আছে।ইলার আর বুঝতে বাকি নেই মাহির তার সব কথা শুনেছে।

ইলা কাপা কাপা কন্ঠে বললো,

-আআআপনি?
-ঘাপলার গামলা?তাই না?
-ইয়ে মানে,,কি সব বলছেন।এটা আবার কি?
-তুমি জানো কি।মদ তো কাল খেয়েছিলে।কিন্তু মনে হচ্ছে মাথাটা এখনো ঠিক হয়নি।

মাহিরের কথা শুনে ইলার মুখটা একদম বেলুনের মতো চুপসে গেল।মাহির ধীরে ধীরে এগিয়ে গিয়ে ইলার সামনে দাড়ালো।ইলা একটু পিছিয়ে যেতেই মাহির ইলার হাত ধরে বসলো।

-হাত ছাড়ুন।আমি রান্না করছি।
-তা তো দেখতেই পাচ্ছি।কি রান্না করছো?আমাকে গরম তেলে ছেড়ে কৈ মাছের মতো এপিঠ ওপিঠ ভাজছো।

ইলা অপরাধীর মতো মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে।ঠোট কামড়ে একটু পর পর মাথা তুলে মাহিরের দিকে তাকাচ্ছে।আবার মাথা নামিয়ে ফেলছে।ইলার কাজ দেখে মাহিরের মুখে দুষ্টু হাসির রেখা ফুটে উঠলো।

-পানি জল।
-হুম।
-মহাশয়া আজ কি আপনি আমাকে না খাইয়ে রাখার পণ করেছেন?
-কিহ!কেন?আপনার জন্য তো রান্না করছি।
-তাতো দেখতেই পাচ্ছি।

মাহিরের কথা শুনে ইলার মনে একটু সন্দেহ জাগলো।পেছনে ঘুরেই ইলার চক্ষু চড়কগাছ।তরকারি পুড়ে পোড়া গন্ধ বের হচ্ছে।আর ইলা এতোটাই চিন্তায় মগ্ন কিছুই তার নজরে পড়েনি।

-এই রে।

ইলা দৌড়ে গিয়ে গ্যাস অফ করে দিল।

-আমার লাউ!

ইলা কথাটা বলে ভয়ে ভয়ে পেছনে মাহিরের দিকে তাকালো।

-আসলে,,,।
-আমাকে ভাজা ভাজা করছিলে।তাই লাউ আর লাউ নেই।
-আমি এক্ষুনি অন্য কিছু বানিয়ে দিচ্ছি।আমি সত্যি বুঝতে পারিনি এমন হবে।

ইলার ভীষণ কান্না পাচ্ছে।সারাদিন পর মাহির এখন একটু খেতে বসবে তার জন্য সেটাও হলো না।

-আপনি একটু বসুন।আলুভাজি করেছিলাম।ভাত ও আছে।শুধু তরকারি টা।আমি নতুন করে রান্না করে দিচ্ছি।
-কিছু করতে হবে না।আমি খাব না।

মাহিরের কথা শুনে ইলা ছলছল চোখে মাহিরের দিকে তাকালো।

-না।প্লিজ।আমার জন্য না খেয়ে থাকবেন না।আমি আর এমন করব না।
-আরে তুমি তো দেখছি কেঁদেই দেবে।আমি সত্যি খাব না।মানে তুমিও খাবে না।

মাহিরের কথা শুনে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে মাহিরের দিকে তাকালো।

-কেন?
-আমরা আজ বাইরে খাব।আমি তো রেডি হয়েই এসেছি।আসলে তোমাকে বলতে ভুলে গেছি।খেয়াল নেই আমার।

ইলা মাহিরের দিকে তাকিয়ে মাহিরকে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করলো।মাহির সাদা রঙের একটা পানজাবি নিচে সাদা রঙের গ্যাবাডি পড়েছে।

-আপনি আগে বলবেন না?
-ভুল হয়ে গেছে।
-এতো রাতে যাওয়ার কি দরকার।দিনের বেলা গেলে হয়না।
-রাতে যেতে কি সমস্যা?
-দেখুন দিনকাল ভালো না।মেয়ে মানুষের তো না শৈশব,না কৈশোর,না যৌবন না বৃদ্ধ।না বিবাহিত না অবিবাহিত।পদে পদে বিপদ।
-সব ই বুঝি ইলা।আমি এমন অপদার্থ স্বামী নই যে নিজের স্ত্রীকে রক্ষা করতে পারব না।বিপদ যদি আসে নিজের শেষ টা দিয়ে লড়ব তবুও ততক্ষণ তোমার গায়ে আচ লাগতে দেব না।

ইলা ছলছল চোখে মাহিরের দিকে তাকালো।মাহির কে সে যতোই দেখে শুধু অবাক হতেই থাকে।

-চলো।
-তরকারি টা পুড়ে গেছে।এর একটা ব্যবস্থা করতে হবে না।
-দেখছি।

মাহির একটা কাপড় দিয়ে ধরে চুলা থেকে তরকারি টা নামালো ।ডাস্টবিনে পুরোটা ফেলে দিল।কড়াইতে পানি ঢেলে দিয়ে একটু লবণ দিলো পানিতে।

-আপনি কি করছেন এটা!
-ইলা ফ্রিজে কি কাগজি লেবু আছে?
-ছিল তো।
-একটু কেটে আনো।
-আচ্ছা।

ইলা লেবু কেটে দিতেই মাহির অর্ধেক টার মতো লেবুর রস ঐ পানিতে মিশিয়ে দিল।

-নেও কাজ শেষ।সকালে পরিষ্কার করার সময় কষ্ট হবে না তোমার।
-আপনি এতো কিছু কিভাবে জানেন বলুন তো?
-ইলা পুরুষ মানুষ হয়েছি বলে শুধু কি অফিস অবধি সীমাবদ্ধ থাকলে হবে?সব কিছুই একটু জেনে রাখতে হয়।কখন কি লাগে?
-কেন?বাড়িতে বউ থাকতে কার খেয়ে কাজ আছে এসব জানবে।
-বউ আজ আছে কাল নেই।
-মানে!
-ঝগড়া বাধিয়ে বাপের বাড়ি চলে গেলে কদিন হোটেলের খাবার এ চলা যায়।

মাহিরের কথা শুনে ইলা খিলখিল করে হেসে দিল।

-আপনি পারেন বটে।সব কিছুর প্রস্তুতি আগে থেকেই নিয়ে রাখছেন।
-নিয়ে রাখা উচিত।
-আপনি এমন ভাবে বলেন যেন আপনার আগের অভিজ্ঞতা আছে।
-কিসের অভিজ্ঞতা?
-মনে হয় যেন আগেও বিয়ে করে দেখেছেন।

ইলার হাসির ছলে কথা গুলো বললেও মাহিরের মুখটা দম করে অন্ধকার হয়ে গেল।

-কি হলো?
-তোমাকে এসব কে বলেছে ইলা?
-কোন সব?
-এই যে বললে বিয়ের অভিজ্ঞতা।
-ওটা তো মজা করে বলেছি।
-ওহ।
-আপনি এমন করে রেখেছেন কেন মুখটা?সত্যি সত্যি অভিজ্ঞতা আছে নাকি?
-যদি বলি আছে।

মাহিরের কথা শুনে ইলা হাসি থামিয়ে মাহিরের দিকে তাকালো।

-মানে?
-মানে বলছিলাম যে যদি সত্যি সত্যি অভিজ্ঞতা থাকে।তখন কি করবে?
-কি করব মানে?
-বলছি মেনে নেবে তো?
-অসম্ভব।

ইলা বেশ সিরিয়াস মুডেই কথাটা বললো।মাহির যেন বড় সড় ধাক্কা খেলে ইলার কথাতে।মাহির চুপ করে আছে।

-কেন?
-আমি শুরু আমিই শেষ হতে চাই।কোনো দ্বিতীয় বা প্রাক্তন নয়।বুঝেছেন আপনি?
-ইলা আমি মজা করেই বলেছি।
-আর কখনো এসব বলবেন আপনি বলে দিলাম।আমাকে নিয়ে সমস্যা হলে বলেই দেবেন আমি যেদিকে দু চোখ যায় চলে যাবে।আর কোথাও থাকার জায়গা না থাকলেও নদীর গভীরে গাড়ির সামনে ট্রেন লাইনে এতোটা জায়গার অভাব পড়েনি যে কারোর বোঝা হয়ে থাকতে হবে।

মাহিরের সাথে কথা শেষ করে ইলা রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে গেল।এদিকে মাহিরের বুকটা ফেটে যাচ্ছে।পারলে যদি সে দেখাতে পারত তার বুকের ভিতর কি চলছে।তাহলেই হয়তো মানুষ বুঝতোনা ভেতরের যন্ত্রণা কতোটা।

-আমি কি অপরাধ করেছিলাম আল্লাহ!আজ ইলাকে মিথ্যা বললাম।যদি কোন দিন সত্যি টা জানতে পারে ইলা ও কি সত্যি সত্যি আমাকে ছেড়ে চলে যাবে!কেন এমন হয় আমার সাথে!নিজের স্ত্রীকে অন্য কিছু দিয়ে খুশি রাখব সেই ক্ষমতা টাও আমার নেই।

মাহির কেঁদেই ফেলেছে।কান্নাটা এক তরফা।চার দেয়ালের মাঝেই সীমাবদ্ধ।হারানোর আশঙ্কা আরো ঘিরে ফেলেছে মাহির কে।কি হবে তার পরিণতি?তার জীবনটা কি কুয়াশার চাদরেই ঢাকা থাকবে!মাহিরের কাছে ইলা ও ভুল নয়।তার দিক থেকে সে ঠিক।

৭৪

-আপনি?

আরিয়ানের গলা শুনে চমকে উঠলো অনু।পেছনে ঘুরে তাকালো।

-আপনি!
-আপনি না ঘুমিয়ে এ তো রাতে ছাদে কেন?
-আসলে আমার ঘুম আসছিল না।তাই?
-তাই এ তো রাতে ছাদে এসেছেন?আপনার ভয় ডর কিছু কি আছে?
-কিসের ভয়?যার নিজের পরিবার নেই নেই ঠিকানা।অজানা জায়গায় পড়ে আছি।জীবনের কোনো নিশ্চয়তা নেই তার আর কিসের ভয়!

অনুর কথা শুনে আরিয়ানের নিজের কাছে খারাপ লাগছে।সে কি প্রশ্ন টা করে অনুকে বিব্রত করে ফেললো!

-দেখুন আমি ওসব বলিনি।
-বুঝেছি।ভূতের কথা বলছেন তাই তো?
-হুম।

অনু আর কিছু না বলে নিচে নামতে গেলে আরিয়ান পিছু ডাক দেয়,

-শুনুন।

অনু থেমে গিয়ে পেছনে ঘুরলো।

-জি।
-আপনার পড়াশোনা কতদূর?
-এসএসসি দিয়েছিলাম।রেজাল্ট ও পাইনি তার আগেই বিয়ে।
-পড়াশোনা করতে চান?
-ইচ্ছে তো থাকেই।সৎ মায়ের কাছে থেকে এই অবধি টেনেটুনে অনেক কষ্টে পার করেছিলাম।ভেবেছিলাম বিয়ের পর যদি স্বামীর সাপোর্ট পাই।পোড়া কপাল হলে যা হয় আরকি।একুল ওকুল দুকুল ই ভাঙা আমার।
-নিজের পায়ে দাঁড়ান।নিজের আত্মপরিচয় নিজেই তৈরি করুন।যাতে ঠিকানার সংশয়ে না পড়তে হয়।
-কিভাবে করব!
-আপনি চাইলে আমি আপনাকে কলেজে ভর্তি করব।আপনি যতদূর যেতে চান সাহায্য করব।
-অচেনা একটা মেয়ের জন্য নিজের টাকা খরচ করবেন না।
-কে বলেছে শুধু শুধু খরচ করব?
-মানে?
-বিনিময় বলে তো একটা জিনিস আছে।আমি আপনাকে আপনার লক্ষ্যে পৌঁছানোর সব সহযোগীতা করব।তার বদলে,,,,।
-পুরুষ মানুষ সব একই হয়।আপনারা এমন কেন বলুন তো?

অনুর ক্রোধ দেখে আরিয়ান ভড়কে গেল।

-আপনি কথা তো শেষ করতে দেবেন?আগ বাড়িয়ে কিছু না বলাটাই কি শ্রেয় নয়?
-বলুন।
-আমার খারাপ উদ্দেশ্য নেই।থাকলে সেদিন রাতে আপনাকে আমার বাড়ি নিয়ে আসতাম না।তাও বোনকে ডেকে এনে।আপনি অজ্ঞান ছিলেন।আমিও একা ছিলাম।সুযোগ নেওয়ার সব কিছুই ছিল।

আরিয়ানের কথা শুনে চুপ হয়ে গেল অনু।নিজের কাছেই খারাপ লাগছে তার।

-আমি খারাপ কিছু চাইব না।এমন কিছু চাইব যেটা আপনি দিতে পারবেন।আপনার সুখের জন্য হোক এমন কিছুই চাইব।তবে আজ না।যেদিন আপনি নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবেন সেদিন।
-আমি দুঃখিত।
-কাল সকালে তৈরী থাকবেন।
-কেন?
-আপনাকে কলেজে ভর্তি করতে যাব।এখন ঘুমোতে যান।

অনু নিচে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো।আরিয়ান দাড়িয়ে আছে।

-এমন কিছুই চাইব আপনি না করতে পারবেন না।চাওয়াটা যদি আপনি হয় তবুও না।

আরিয়ান ও মুচকি হেসে নিচে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো।

৭৫

-এই যে।শুনুন না।

মাহির গাড়ি থামিয়ে ইলার দিকে তাকালো।

-কি হয়েছে?
-ফুচকা খাব।
-কিহ!তুমি সিরিয়াসলি খাবে এখন!তোমার পেটে জায়গা আছে?কেবল এতো কিছু খেয়ে বের হলাম।

মাহিরের কথা শুনে ইলা মুখ গোমড়া করে রইলো।

-আচ্ছা ঠিকাছে।কিন্তু এতো রাতে ফুচকা কোথায় পাব?
-না থাক।লাগবে না।
-অবশ্যই লাগবে।আমার বিবিজান খেতে চেয়েছেন।সেটা তো না করতে পারিনা আমি।কিন্ত কোথায় পাব?

ইলা গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকাতে ইশারা করলো।মাহির তাকিয়ে দেখে একজন ফুচকা ওয়ালা নিজের সব জিনিস গুছিয়ে নিচ্ছে।হয়তো বাড়ি যাবে।মাহির আর দেরি করলো না।গাড়িটা এক পাশে দাঁড় করিয়ে নিজে নেমে গেল।ইলাকেও নামতে বললো।একপ্রকার দৌড়েই মাহির ফুচকাওয়ালার কাছে গেল।

-এই মামা।দাঁড়ান দাঁড়ান।
-কি হয়েছে মামা?
-ফুচকা আছে?
-এখনো কিছু আছে।সব তো বেচা হয় না।
-মামা এক প্লেট বানিয়ে দিন তো।
-না মামা।আজ আর হবে না।রাত হয়েছে।বাড়ি যাব।
-মামা আপনাকে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে আসব আমি।আপনার সারাদিনের সব আয়ের টাকাও দেব।বানিয়ে দিন প্লিজ।
-মামা এতো টাকা খরচ করবেন?
-বউ খেতে চেয়েছে মামা।আমার কাছে ছাড়া কার কাছে আবদার করবে।
-বউকে খুব ভালোবাসো?
-হুম।
-আমি ও বাসি।বাড়ি গিয়ে দেখব খাবার নিয়ে এই রাত অবধি জেগে আছে।জানো নিজেও ঠিকমতো খায়না।না খেয়ে থাকে।তবুও মুখ ফুটে বলেনা।তোমার বউ কোথায়?
-ঐ তো।

ইলা শাড়ি পড়েছে।তার ওপর বোরখা। বেচারী ধীরে ধীরে আসছে।ফুচকা ওয়ালা এক প্লেট ফুচকা বানাতে শুরু করলো।এর মধ্যে ইলা চলে এসেছে।

-মামা ঝাল বেশি দিবেন।
-আচ্ছা মা।

ফুচকা দিতেই ইলা একের পর এক মুখে পুরতে লাগলো।ইলার খাওয়া দেখে মাহির ফুচকাওয়ালাকে আরো বানাতে বললো।ইলা খাচ্ছে মুখেও মাখিয়ে ফেলছে।মাহির পকেট থেকে টিস্যু বের করে মুছে দিচ্ছে।ইলার সেদিকে নজর নেই।নিজের খাওয়াতে সে ব্যস্ত।

হঠাৎ করেই মাহিরের নজর গেল একটু দূরে রাস্তার পাশে।অজানা ভয়ে মাহিরের বুকটা কেঁপে উঠলো।

-মাইশা!

চলবে——–

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here