শরতের শুভ্র মেঘের ভেলায় পর্ব- ০৫

#শরতের_শুভ্র_মেঘের_ভেলায়
#থ্রিলার_রোম্যান্টিক
#পর্ব_৫
#Sadia_afrin_nishi

“এভাবে ধরে রাখার মানে কী?”…

টলমলে চোখে তাকিয়ে কথাটি বললাম আমি রোবটম্যানকে।রোবটম্যান আমার দিকে স্বাভাবিক ভাবে তাকিয়ে আছে যেন কিছুই হয়নি।আমি ওনার উত্তর না পেয়ে বিরক্তবোধ করলাম। কপাল কুঁচকে এক ঝটকায় হাতটা ছাড়িয়ে নিতে চাইলাম কিন্তু তাতে কোনো লাভ হলো না।এমন একটা দানবীয় শরীরের অধিকারী মানুষের সঙ্গে আমার মতো চুনোপুঁটির পাঙ্গা নেওয়াটা নেহাতই বোকামির শামিল।ওনার এই চুপ থাকাটা আমার মনে চরম বিরক্তির সৃষ্টি করছে।আমি আবারও মিনমিন স্বরে বলে উঠলাম,,

__উত্তর দিচ্ছেন না কেন?

উনি এবার আমার দিকে সামান্য অগ্রসর হয়ে বললেন,,

__ইচ্ছে হয়েছে তাই ধরেছি

ওনার এমন লাগাম ছাড়া জবাব শুনে আমার মধ্যে এবার অতীব রাগের সৃষ্টি হলো যার ফলে আমি অগ্নিমূর্তির ন্যায় মুখশ্রীর আকার ধারণ করে বলে উঠলাম,,

__ইচ্ছে হয়েছে বলেই ধরে ফেললেন? আমি কী কোনো বস্তু নাকি যে ইচ্ছে হলেই ধরা যায়?আমি একটা মানুষ। আমার অনুমতি না নিয়ে আপনি আমার গাঁয়ে টাচ করতে পারেন না।

আমার বলা কথাগুলো শুনে উনি চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে পরলেন।কিছুক্ষণের জন্য আমি ভাবলাম,”উনি হয়তো আমার কথায় ঘাবড়ে গেছেন”। কিন্তু আমাকে মিথ্যে প্রমাণ করে দিয়ে মুহূর্তেই ওনার চোখমুখের আকৃতি পাল্টে গিয়ে অট্টহাসিতে মেতে উঠলেন।আমি এবার নিজেই হতভম্ব হয়ে পরলাম। এ আবার কেমন লোক? নিশ্চিত পাগল-টাগল হয়ে গেছে।হাসি থামিয়ে উনি আমার দিকে স্থির দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বললেন,,

__কলেজে উঠে মনে হচ্ছে একটু বেশিই বুঝতে শিখে গেছ তবে এতো বোঝা ভালো নয়। একটু কম কম বুঝতে চেষ্টা করো তাতে তোমারই ভালো।আর হ্যাঁ আমার যখন যা ইচ্ছে আমি তখন তাই করি সো আমার থেকে কোনো রুপ কৈফিয়ত আশা করো না।
ফারদার যদি আমি আমার সাথে বেয়াদবি করো তার ফল খুব খারাপ হবে,”মাইন্ড ইট”।

ওনার বলা এই বাক্যগুলো আমার শরীরে যেন আগুনে ঘিঁ ঢালার ন্যায়। আমি আর চুপ থাকতে পারলাম না।তীক্ষ্ণ কন্ঠে বললাম,,

__আপনার সমস্যা কী হ্যাঁ?আমার ওপর কীসের এতো অধিকার আপনার? কে হন আপনি আমার?
কেউ না তো তাহলে এমন কেন করছেন।শুনুন আমাদের জন্য অনেক করেছেন আপনি তারজন্য আপনার কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। তাই বলে এই নয় যে আপনার সব রকমের অন্যায় আমরা মেনে নেবো।আপনি কোন সাহসে আমার শরীর স্পর্শ করেন।

উনি এবার আমাকে হেঁচকা টানে নিজের একদম কাছে টেনে আনলেন।আমাদের মধ্যে এখন একবিন্দু সম দূরত্ব। আমার গলা দিয়ে কথা বলা অটোমেটিকলি বন্ধ হয়ে গেছে।হাত পা কেমন জানি কাঁপা-কাঁপি করছে।আগে কখনো কোনো ছেলের এতো কাছে আমি যাইনি।কেমন একটা অন্যরকম অনুভুতি টানা ঝাপটে উড়ছে মন-আকাশে।হঠাৎ ওনার কথায় আমার ধ্যান ফিরল।আমি ওনার দিকে চোখ তুলে তাকাতেই দেখতে পেলাম ওনার রাগী মুখশ্রী। রক্তবর্ণ চোখ দুটো দিয়ে যেন এখুনি ভস্ম করে দেবে আমাকে।আনমনে একটা শুকনো ডোক গিলে নিজের আঁখিযুগল নত করলাম আমি।উনি আমার দিকে চেয়ে বলতে লাগলেন,,

__কী যেন বলছিলে এবার বলো।তোমাকে স্পর্শ করেছি কোন সাহসে? নেও এবার তো পুরোপুরি কাছে টেনে নিয়েছি দেখি তুমি কী করতে পারো।আমার থেকে পলায়ন করে বেড়ানোর শাস্তি তো তোমাকে পেতেই হবে মিস. নীহারিকা।

আমি এবার আশ্চর্য হয়ে বললাম,,

__আপনার থেকে পলায়ন করেছি আমি? কখন কীভাবে করলাম একটু বলবেন প্লিজ?

উনি ভ্রুঁ কুঁচকে বললেন,,

__এই মাত্রই তো পালিয়ে যাচ্ছিলে সেজন্যই তো তোমাকে আটকাতে হলো

আমি এবার চোখ সরিয়ে নিলাম ওনার থেকে।তারপর মাথা নিচু করে বললাম,,

__পালাতে চাই নি। রান্না চুলায়, সেটাই দেখতে যাচ্ছিলাম।

উনি আরও কিছু বলতে নেওয়ার আগ মুহুর্তে এমন সময় বাবার কন্ঠস্বর টের পেয়ে উনি আমার থেকে যথাযথ দুরত্ব বজায় রেখে সরে দাঁড়ালেন।

__”কী রে মা নীহা বাহিরের লাইটটা বন্ধ কেন?অন্ধকারে তো চলতে সমস্যা হবে ”

__হ্যাঁ বাবা আমি এখনি জ্বালিয়ে দিচ্ছি

বাবা কথা শেষ করে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করলেন।আমি আড়চোখে একবার রোবটম্যানকে পর্যবেক্ষণ করে রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ালাম।বাব্বাহ লোকটা এখনো রক্তচক্ষু নিক্ষেপ করে তাকিয়ে আছে আমার পানে।

রাতের খাওয়া শেষে রোবটম্যান নিজের বাড়িতে চলে গেল।ওনার হয়তো আমার মতো ছোট মাছে প্রবলেম। খাওয়ার সময় আমি লক্ষ্য করেছি সেটা।কষ্ট হলেও উনি মুখে কিছু বলেননি তৃপ্তি করেই খাবারটা শেষ করেছেন।যাওয়ার আগে আমাকে চোখের ইশারায় ওয়ার্নিং দিয়ে গেছেন যে,”পরে দেখে নেবে”

_ _ _ _ _

কলেজের মাঠটা সুদীর্ঘ জায়গা জুড়ে।আমাদের গ্রামের উঠোনের মতোই।সুদীর্ঘ মাঠের এক প্রান্তে ইটের তৈরি দালান যেটা ক্লাসরুম নামে পরিচিত।তার পেছন সাইডে বিশাল বড় একটি সিরিজ গাছ।এই তপ্ত দুপুরে সিরিজ গাছের ছায়ায় বসে দক্ষিণা হাওয়া গাঁয়ে মাখার আনন্দেই অন্যরকম।ব্যাগটা কোলের ওপর রেখে দুচোখ বন্ধ করে এই মনোরম পরিবেশ উপভোগ করতে ব্যস্ত আমি।সব ছাত্র-ছাত্রীরা হয়তো এতক্ষণে বাড়ি চলে গেছে। আজ মিতালী আসেনি তাই আমি একাই এখানে বসে মনের সাথে আনন্দ উল্লাস করছি।চোখে র ওপর কিছু একটা পরতেই আমি সাথে সাথে চোখ মেলে তাকালাম। ও মা এটা তো সিরিজ ফুল। এই ফুলটা আমার কাছে খুব সুন্দর লাগে দেখতে।হালকা গোলাপি গড়নের ফুলটা খুবই কোমলীয়।আলতো হাতে ছুলেও ছিঁড়ে পরার ভয় থাকে।আমি কয়েকটা ফুল সেখান থেকে তুলে নিলাম। তারপর সেগুলো পেঁচিয়ে একটা ছোট্ট তোড়া তৈরি করে কানের কাছ থেকে চুলের অর্ধাংশে লাগিয়ে নিলাম। হাতের আন্দাজে লাগালেও হয়তো ঠিকভাবেই লাগাতে পেরেছি।মনটা আজকে বেশ ফুড়ফুড়ে লাগছে।মাঝে মাঝে এভাবে প্রকৃতির আস্তরণে মিশে যেতে বেশ লাগে। মনে হয় অন্য কোনো জগতে বিচরণ করছি।কিন্তু এই জগৎ থেকে বেরলেই আবার সেই মরিচীকার দুনিয়া।

কলেজের গেট বন্ধ করার সময় হয়ে গেছে। এখন আমাকে উঠতে হবে নয়তো এখানেই আটকা পরে যাবো।তাড়াতাড়ি করে উঠে গেটের কাছে অগ্রসর হলাম।গেট পেরনোর সময় খেয়াল করলাম আমার মতো আরও একজন এখনো কলেজে আছে। তবে সে প্রকৃতি প্রেমে আসক্ত নয় সে আসক্ত কিছু মোটা মোটা বইয়ের ফ্রেমে।দারোয়ানের ডাকে ছেলেটি তাড়াতাড়ি তার হাতের ওপর মেলে থাকা বইটি কাঁধে ঝোলানো ব্যাগে ঢুকিয়ে নিল।তারপর দারোয়ানের সাথে সৌজন্যমুলক হাসি দিয়ে কলেজ ছাড়ল।ছেলেটে চলে যেতেই আমিও নিজের মনে বাড়ির পথে পা বাড়ালাম।

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here