#শরতের_শুভ্র_মেঘের_ভেলায়
#থ্রিলার_রোম্যান্টিক
#পর্ব_৭
#Sadia_afrin_nishi
হাসি, মজা আনন্দ,দুঃখ মিলে মিশে এক বিন্যস্ত রুপ আমার জীবন।সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে চলেছে সে।কেটে গেছে আরও ছয়টি বছর।এখন আমি অনার্স থার্ড ইয়ারের ছাত্রী।
আমার আর রোবটম্যানের সম্পর্ক আগের থেকে অনেকটা খারাপ হয়ে গেছে।একদিন তার এই অদ্ভুত ব্যবহারের জন্য অনেক কথা শুনিয়ে দিয়েছিলাম, সাথে সাথে এ ও বলে দিয়েছিলাম, “উনি যাতে কখনো আমাকে বিরক্ত না করে”।তার পর থেকে সে আমার উপর দুর থেকে নজরদারি করে কিন্তু কখনো কাছে আসে না।আমার ইদানীং কেমন জানি চারপাশটা ফাঁকা ফাঁকা মনে হয়। হয়তো রোবটম্যানের ওসব মেন্টাললি টর্চারগুলো আমার অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। মাঝে মাঝে নিজের ওপরই কারণে-অকারণে প্রচন্ড রাগ ওঠে।
কলেজের সেই হাবাগোবা ছেলেটির এই দু’বছর হলো কোনো দেখা নেই।কোথায় গেছে কী হয়েছে কেউ কিছুই বলতে পারেনা।এমন কী স্যার-
ম্যাডামরাও জানে না তার খোঁজ। এমন একটা ছেলের এভাবে লাপাত্তা হওয়ার কারণটা সবারই অজানা।ছেলেটির তো পড়াশোনায় প্রবল আগ্রহ ছিল তাহলে এভাবে মাঝপথে কোথায় হারিয়ে গেল? অন্য কোথাও চলে গেল নাকি তার সাথে খারাপ কিছু ঘটেছে? এসব প্রশ্ন আমার এই ছোট মস্তিষ্কে প্রায়শই নাড়াচাড়া দিয়ে ওঠে। কিন্তু এসব তদন্ত করে বের করা হয়তো আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
_ _ _ _ _
বাবার বয়স হয়েছে। শরীরটা এখন আর আগের মতো সাথ দিতে চাইছে না।বৃদ্ধ বয়সের নানারকম বার্ধক্য রোগে আক্রান্ত সে।বাবাকে নিয়ে প্রচন্ড চিন্তা হয়। এই নিষ্ঠুর দুনিয়ায় সে ছাড়া আমার আপন বলতে তো আর কেউই নেই। বাবার কিছু হয়ে গেলে আমি কী নিয়ে বাঁচব?এই তো সেদিন কী ভয়ানক কান্ডটাই না ঘটেছিল,”খাটের পাশে টেবিল থেকে পানি ঢালতে গিয়ে পরে যেতে গিয়েছিল ভাগ্যিস আমি সময় মতো চলে এসেছিলাম নয়তো অনেক বড় বিপদ হতে পারত।”তারপর থেকে বাবাকে সবসময় নজরে নজরে রাখি।
_ _ _ _ _
এতো কেয়ার,ভালবাসা দিয়েও শেষ-মেষ আর বাবাকে বেঁধে রাখতে পারলাম না।এই দুনিয়ার মায়া কাটিয়ে, আমাকে পুরোপুরিভাবে এতিম করে দিয়ে তিনিও চলে গেলেন পরপারে।যাওয়ার আগে আমাকে পাকাপাকিভাবে তুলে দিয়ে গেলেন রোবটম্যানের হাতে।
“কলেজ থেকে ফিরে বাবাকে ডাকতে গিয়ে দেখি, বাবা কেমন জানি করছে।হয়তো শ্বাস কষ্ট হচ্ছে। আমি কী করবো কিচ্ছু বুঝতে পারছিলাম না। বাবার অসুস্থতা বৃদ্ধির পর থেকে রোবটম্যান প্রায়ই আমাদের বাড়িতে আসত বাবাকে দেখতে।ভাগ্যক্রমে সেদিনও এসেছিল।আর এসেই এই পরিস্থিতি দেখে তাড়াতাড়ি বাবাকে কোলে তুলে নিয়ে সিএনজি করে হসপিটালে নিয়ে যায়। আমিও যাই ওনাদের সাথে। ডক্টর অনেক চেষ্টা করেও কোনো প্রকার লাভ হয়নি।নাকে,মুখে গ্যাস লাগানোর পরেও বাবার শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেনের অভাব পুরণ না হওয়ায় বাবার মৃত্যু ঘটে। হয়তো এটাই বিধাতার ইচ্ছে।বাবা মারা যাওয়ার ঠিক পনের মিনিট আগে ডক্টর আমাদের বাবার কেবিনে এলাউ করেন।ডক্টর বলেন, “বাবার হাতে সময় নেই যা কথা আছে তাড়াতাড়ি বলে নিতে “। আমি তখন কথা বলবো কী বারবার কান্নায় ভেঙে পরছিলাম। রোবটম্যান সেদিন আমাকে ধরে বাবার কাছে নিয়ে যায়।অনেকদিন পর তার ছোঁয়া পাই আমি কিন্তু তখন আমার এসব ভাবার মতো মানসিকতা ছিল না।বাবা আমাকে আর রোবটম্যানকে পাশাপাশি পেয়ে আমার হাতটা নিয়ে রোবটম্যানের হাতে তুলে দিয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। শ্বাস কষ্টের কারণে মুখ দিয়ে কোনো কথাই বলতে পারেনি শুধু চোখের ভাষায় বুঝিয়ে দিয়েছিলেন,” সে আমাকে আর রোবটম্যানকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ দেখতে চান।”আমার আর কিছুই করার ছিল না, নানা রকম দ্বিধা-দ্বন্দ নিয়ে বিয়ে করতে রাজি হতে বাধ্য হলাম।মৃত্যু বাবার শেষ ইচ্ছেকে তো আর আমি অবগ্যা করতে পারি না।আমার বাবা কখনোই আমার খারাপ চাইবে না তিনি হয়তো আমার সুখের কথা চিন্তা করেই এমনটা করেছেন।”
_ _ _ _ _
বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে আমি প্রচন্ড ডেস্পারেট হয়ে গিয়েছিলাম কিন্তু রোবটম্যান আমাকে সবসময় আগলে রেখেছেন। আমার সাথে তেমন একটা কথা বলে না কিন্তু আমার কখন কোনটা প্রয়োজন-অপ্রয়োজন,আমার ভালো লাগা,খারাপ লাগা সবকিছু ছায়ার মতো পর্যবেক্ষণ করেছে।বাবা মারা যাওয়ার আজ ছয় মাস পূর্ণ হলো।আমি এখন অনেকটাই স্বাভাবিক।নিজের মনকে অনেকটা শক্ত করে নিয়েছি।আমাকে থেমে থাকলে চলবে না। আমার জীবনটাই এমন তাই এই জীবনের সাথে সর্বদা যুদ্ধ করে বাঁচতে হবে।আমাকে স্বাভাবিক দেখে কিছুদিন যাবত রোবটম্যান আমাকে কিছু বলার চেষ্টা করছেন কিন্তু হয়তো সাহস করে বলতে পারছেন না। আমি নিজে থেকেই তার অব্যক্ত ভাষাগুলো বুঝে নিতে সক্ষম হলাম। নিজেই আগ বাড়িয়ে বলে দিলাম, “এখন আমি প্রস্তুত “। আমার কথার পরিপেক্ষিতেই আজ আমাদের বিবাহ সম্পন্ন হলো।ঘরোয়াভাবেই বিয়েটা করেছি আমরা।খুব অল্প সংখ্যক লোক নিমন্ত্রিত ছিল।আর যাই হোক ধুমধাম করে বিয়ে করার পরিস্থিতিতে আমরা এখন নেই।বিয়ের রাতে নিজের স্বামী অর্থাৎ রোবটম্যানের মুখ দেখার সৌভাগ্য হলো আমার।কিন্তু আমার এখন সবকিছু গোলকধাঁধা মনে হচ্ছে। এই রোবটম্যানের সাথে কলেজের হাবাগোবা ছেলেটির চেহারার এতো মিল কেন?কলেজের সেই ছেলেটি তো আরও কয়েকবছর আগেই নিখোঁজ হয়েছে তাহলে ইনি কে আমার সামনে?কিছুই বুঝতে পারছি না। তবে আমার বরের চেহারা তো মাশাল্লাহ। এতোদিনের মনের ইচ্ছে আজ পূর্ণ হলো আমার।রোবটম্যানকে নিজের থেকে দুরে সরিয়ে দিয়ে আমি ধীরে ধীরে উপলব্ধি করতে পেরেছি যে, আমি তাকে কতটা ভালবাসি কিন্তু কখনো তা প্রকাশ করার সাহস হয়নি।এখন শুধু তার নাম,পেশা এবং তার ভেতরের রহস্য জানার বাকি।আমি নিশ্চিত রোবটম্যানের মধ্যে কোনো গোপন রহস্য লুকিয়ে আছে।
_ _ _ _ _
এই ছিল আমার জীবনের অতীত। খুব সংক্ষিপ্তভাবেই পুরোটা বোঝানোর চেষ্টা করেছি আপনাদেরকে।দেখি নিয়তির খাতায় পরবর্তীতে আমার ভাগ্যে কী লেখা আছে, সুখ নাকি দুঃখ?
হয়তো এক কালবৈশাখী ঝড় যেমন আমার জীবনটা তছনছ করে দিয়েছে সেভাবেই কোনো এক #শরতের_শুভ্র_মেঘের_ভেলায় ভেসে আবার আমার জীবনের সুখ ফিরতে সক্ষম হবে।নয়তো ঢেকে যাবে কোনো বর্ষাভেজা দিনের কালো মেঘের অতলে।
চলবে,
(