শেষ বিকালের আলো
তানিশা আহমেদ
পর্ব ৯
রুমাইসার মুখে অভি নাম শুনে সবাই ওর দিকে তাকিয়ে রইল। তার চেয়েও বেশি অবাক হল অভির মুখে এই নাম শুনে। কারন অভি মাত্র ই এখানে আসল তবে ওর নাম জানল কি করে। আর মুখের ভাব দেখে তো মনে হচ্ছে পূর্ব পরিচিত। তৃষা এবার দ্রুত যেয়ে সাহিল এর হাত শক্ত করে ধরল। সাহিলের মাথা যেন কাজ ই করছে না রুমাইসা কে এই অবস্থায় দেখে।
তৃষা উচ্চস্বরে বলল “এই মেয়ে তোমায় অভি বলল কেন? আর তুমি ই বা ওর নাম ধরে বললা কেন? চিনো ওরে? ”
সাহিল স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে আছে। সেই মুহুর্তেই ইহান বলল “ভাইয়া আমার বউ কে কেমন লাগল? বিয়ে করে এনেছি। আব্বু আম্মু কে একটু বুঝা তো তুই, রুমাইসা মেয়ে টা অনেক ভালো।” এটা বলে ইহান মুচকি হাসি দিল। সাহিল এর মুখ এর উপর ঘাম জমতে লাগল আসতে আসতে।
রুমাইসা হেটে হেটে সবার সামনে দিয়ে যেয়ে অভির সামনে দাড়ালো। তৃষা ওর দিকে ভূত দেখার মত করে চেয়ে আছে। রুমাইসা ওর হাত দিয়ে অভির হাত ধরল। বারবার চেপে চেপে দেখছিল ও কি ভুল দেখছে কিনা। তৃষার সারা গা জ্বলে যাচ্ছে এগুলা দেখে। ও রাগ থামাতে না পেরেই হঠাৎ করে রুমাইসা কে ধাক্কা দিল। কিন্তু অভি ওর হাত ধরে ফেলল পড়ে যাওয়ার আগেই। সারা রুমের সবাই স্তব্ধ। একমাত্র ইহান যেন এগুলো দেখে বেশ মজা পাচ্ছিল। রুমাইসা থমকে গেছে। এসবের অনুভূতি নেই এখন। সেই মানুষ টা ওর হাত ধরেছে। সেই পুরোনো ছোঁয়া।
ইহান চুপচাপ সোফায় যেয়ে বসে পড়ল ইহিতা কে নিয়ে। সোফার উপর আলতো করে ইহিতা কে শুইয়ে দিয়ে ও পাশে বসে রইল মুখে হাত দিয়ে।যেন মঞ্চ অভিনয় চলছে আর ও কেবল মাত্র একজন দর্শক।
তৃষা রেগে বলল “সাহিল তুমি ও কে ধরলে কেন? তুমি ও কে চিনো? জবাব দিচ্ছ না কেন? ”
রুমাইসা কাপা কাপা ঠোঁটে বলল “অভি তোমার না এক্সিডেন্ট হয়েছিল? তাহলে তুমি এখানে কেন? তোমার আম্মু আব্বু না সিলেট থাকে। তাহলে তুমি মিরপুরে কেন? ”
এবার রুমাইসার শ্বাশুড়ি চেচিয়ে উঠল “এই শয়তান মেয়ে কি সব যা তা বলছিস? আমাদের চৌদ্দ গুষ্টির কেউ সিলেট থাকে না। আর ও কেন অভি হতে যাবে ও আমার ছেলে সাহিল। ”
রুমাইসা ওনার দিকে ফ্যাকাশে মুখে তাকিয়ে বলল “না না, ওর নাম অভি। ও ইহিতার বাবা। ”
এইটুক শুনে রুমে উপস্তিত সবার মুখ যেন কালো হয়ে গেল। তৃষার পায়ের জমিন সরে গেল এ কথা শুনে। অভি আর ইহান বাদে সবাই হতবাক হয়ে গেল এ কথায়।ইহান মুচকি হেসে মিলি কে ডাক দিল। “মিলি আপা ও মিলি আপা এদিকে আসো। ”
মিলির এই মুহূর্তে জায়গা ছেড়ে আসতে ইচ্ছা করছিল না। তবুও আসল দ্রুত পায়ে হেটে। “হ ভাইজান বলেন।”
“সাইয়ারা কে ডেকে আনো। ও এত বড় কাহিনি কেন মিস করবে। দৌড়ায় যাও যেখানে আসে সেখান থেকে ডেকে আনো।”
মিলি মুখ কালো করে বলল “আপায় তো রুম বন্ধ কইরা শুইয়া আসে। মাতা ব্যথা বলে। ”
ইহান এবার গম্ভীরমুখে বলল “যেটা বলেছি সেটা কর। বল ইহান ভাই ডেকেছে নিচে। এক মিনিট দেরি করলে কষে থাপ্পড় লাগাবে এসে।”
এটাই শুনেই মিলি এক দৌড়ে সাইয়ারার রুমে গেল। দরজা ধুমধাম করে ধাক্কাতে লাগল। ইহান আর অভির একমাত্র ছোট বোন। সবেমাত্র অনার্সে পড়ে। বয়ফ্রেন্ড এর সাথে দরজা আটকে কথা বলছিল মাথা ব্যথার বাহানায়। এমন ধুমধাম আওয়াজ শুনে চেচিয়ে জিজ্ঞেস করল “কে? কি হয়েছে? ”
“আমি মিলি, আপা জলদি দরজা খুলেন।”
“মিলি আপা যাও তো। আমার মাথা ব্যথা করছে অনেক।ঘুমাবো।”
মিলি আবার চেচিয়ে বলল “ইহান ভাইয়ের অর্ডার জলদি বাইরে আইতে। এক মিনিট দেরী করলে আইসা থাপ্পড় মারব।”
এটা শুনেই সাইয়ারা কাথা বালিশ ফেলে দরজা খুলে দিল। আতঙ্কিত মুখে বলল “মিলি আপা কি হইসে? ভাই ডাকে কেন? ”
“বাইরে আইসা দেখেন। কেয়ামত হইয়া যাইতাসে বাসায়। আপনে আহেন আমি গেলাম। ”
মিলি আবার দৌড় লাগাল। এক মুহুর্তের আপডেট ও মিস করতে চায় না। যখন পৌঁছাল তখন সবকিছু নীরব।ও ঠিক বুঝতে পারছে না ও কি আসল ঘটনা মিস করল কিনা। বারবার দোয়া করছে ঘটনা যেন পুরাটা জানতে পারে।
সাইয়ারাও মিলির পেছন পেছন ড্রইং রুমে আসল। রুমাইসা কে লাল শাড়ি পড়া অবস্থায় দেখে কিছুই বুঝতে পারছে না। ইহান কে খুজতে গিয়ে চোখ পড়ল ইহান সোফায় বসে আছে মুখে হাত দিয়ে আর তার পাশে ছোট একটা বাচ্চা শুয়ে আছে। সাইয়ারা ইহানের সামনে যেয়ে বলল “ভাই কি হয়েছে? এই মেয়ে আর বাচ্চা কে?”
“তোর ভাতিজি। নে কোলে নিয়ে বস এখানে আর কাহিনি দেখ। ”
“মানে? তুমি বিয়ে করছ? আর বাচ্চা হল কখন? তোমার কবে থেকে রিলেশন ছিল এত সিরিয়াসলি ? ”
“প্রশ্ন অফ করে ইহিতা কে কোলে নে। আর সামনের কাহিনি দেখ সব বুঝবি। ”
সাইয়ারা বসে আলতো করে ইহিতা কে কোলে নিল। ঘুমিয়ে আছে মেয়েটা। ইশ কি সুন্দর লাগছে। ছোট ছোট আঙুল আর হাত পা। দেখতে অনেকটা সাহিল ভাই আর ইহান ভাইয়ের মত লাগছে। এমন সময় ওর কানে গেল ওর মা চেচিয়ে বলছে সাহিল ভাইকে –
“বাবা এই মেয়ে এগুলা কি বলছে? তুই কিছু বলছিস না কেন? ”
অভির মুখের জবান যেন বন্ধ হয়ে গেছে। জবাবের জন্য কোন উত্তর নেই। সবাই ওর মুখের দিকে চেয়ে আছে। এমন সময় অভির বাবা হুংকার ছেড়ে বলল
“এই মুহুর্তে সত্যি জানতে চাই আমি। আর যাতে প্রশ্ন করতে না হয়। এই মেয়ে যেই অভিযোগ করছে তা কি সত্যি? তুমি ইহিতার বাবা? এই মেয়েকে বিয়ে করেছ তুমি? ”
তৃষার হাত পা কাপছে থরথর করে। আর রুমাইসা তো স্তব্ধ হয়ে আছে অভিকে এভাবে দেখে। সাইয়ারার মাথায় কিছু ঢুকছেই না কি বলছে ওর বাবা এগুলা। ইহিতার দিকে তাকাল একবার আর একবার ইহানের দিকে।
এবার যেন অভির মুখের জবান খুলল। ও আসতে করে বলল “সব ই সত্যি। ”
তৃষার কান কে তৃষা বিশ্বাস করতে পারছিল না। কিছু বলতে পারল না মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হল। কিন্তু এ বার রুমাইসা ও কে ধরে ফেলল। তৃষা ও কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে উঠে গেল। শরীরে যেন প্রচন্ড শক্তি চলে এসেছে। ও চিৎকার করে বলল “এ সব মিথ্যা। সাহিল তোমাকে এই মেয়ে ব্লাকমেইল করছে তাই না। এই মেয়ে কি করেছিস আমার সাহিল কে?এই নস্টা মেয়ে, কার পাপ আমার সাহিলের গলায় ঝুলাচ্ছিস। ”
তৃষা এটা বলেই রুমাইসাকে ধাক্কা দিল। মারতে যাবে তখন সাহিল ধরে ফেলল। রুমাইসার কান্না পাচ্ছে। আজ ওর এত বছরের ভালোবাসা ভেঙে চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে গেছে। অভি তৃষাকে আটকিয়ে বলল
“রুমাইসার দোষ নেই। সব শাস্তি আমাকে দেও। তুমি শান্ত হও তৃষা, তোমার শরীর খারাপ।এমন করলে আমাদের বেবির ক্ষতি হবে তৃষা। প্লিজ আমাকে টাইম দেও একটু। ”
রুমাইসা তৃষার প্রেগন্যান্সির কথা শুনে আরো শকড হয়ে গেল। তৃষা কে টেনে সোফায় নিয়ে বসালো অভি। রুমাইসা তখনও স্থির হয়ে দাড়িয়ে আছে। দুনিয়াটা ওর মাথার উপর চক্রাকার এ ঘুরছে। তবে কি নিয়তি ওর জন্য এই উপহার রেখে দিয়েছিল।
“তোমাদের দুজন কেই বলছি। তৃষার সাথে আমার বিয়ের এখন ৪ বছর। রুমাইসার সাথে আমার প্রেম হয় তৃষার সাথে বিয়ের ঠিক এক মাস আগে। বাসা থেকে আব্বুর কথা রাখতেই তৃষা কে বিয়ে করি। আর রুমাইসার সাথে প্রেম টা হয়েছিল আমার এক বন্ধুর সাথে মজার ছলে চ্যালেঞ্জ করে।রুমাইসা ছিক যথেষ্ট ভদ্র আর শান্ত স্বভাবের। তৃষার সাথে আমার দিন গুলো যেমন ভালো চলছিল রুমাইসার সাথেও ঠিক তেমন। অথচ আমি কাউকেই ছাড়তে পারি নি সে সময়। রুমাইসা থাকত মিরপুর ১০ এ।সপ্তাহে একদিন ওর সাথে দেখা করতাম আর ফোনে কথা হত। মনে আছে রুমাইসা আমি সারাদিন খুব কম কথা বলতাম। আর আমি জব করতাম না। আমাদের কোম্পানি আছে বলতে পারো গার্মেন্টস। সেটায় সময় দিতাম।দুজনের ভালোবাসার মোহে আসলে কাউকে ছাড়তে চাই নি।এর মাঝে আমার কেন যেন মনে হল যে রুমাইসার সাথে ফিজিক্যাল করব আমি। আমার বন্ধুর ফ্লাট কে আমি অলওয়েজ নিজের বাড়ি বলে পরিচয় দিতাম রুমাইসার কাছে। ও ছিল যথেষ্ট বোকা। যার কারনে সব বিশ্বাস করত। আমাকে তীব্র বিশ্বাস করেই রুমাইসা আমার কথার ফাদে পড়ে শারীরিক সম্পর্ক করে। তখন তৃষা বাপের বাড়িতে ছিল। আর আমি সেই সুযোগে রুমাইসার সাথে ব্যস্ত থাকতাম। সব ঠিক যাচ্ছিল, বাট হুট করে রুমাইসা জানাল ও প্রেগন্যান্ট। এবার আমি পড়লাম বিপত্তি তে। ততদিনে আমাদের বিয়ের বয়স ৩ বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু তৃষার বাচ্চা হচ্ছিল না। আমি ঠিক করলাম রুমাইসার বাচ্চা কে এনে দিব তৃষা কে এডপশনের উছিলায়। আর রুমাইসার যা খুশি হোক। তারপর আমি অভিনয় চালিয়ে গেলাম। রুমাইসা কে এবর্শন করতে দেই নি। সময় গড়াচ্ছিল দ্রুত ই। তৃষা ইন্ডিয়া গেল ওর মায়ের সাথে ট্রিটমেন্ট করাতে। আমিও সেই সময় বাসায় বন্ধুর কথা বলে রুমাইসার সাথে থাকতাম। কারন রুমাইসা কে বাসা থেকে বের করে দিয়েছে ওর ফুপু। ও রুমাইসা ফুপু ফুপার সংসারে বড় হয়েছে ওর বাবা মা নেই। কিন্তু রুমাইসার যখন সাত মাস তখন ই তৃষা ইন্ডিয়া থেকে ব্যাক করে। আমি প্রায় সময় তৃষার সাথেই সারাদিন থাকতাম। ও কে সময় দিতাম কারণ মায়ের আদেশ ছিল। আর রুমাইসা কে সপ্তাহে একদিন টাইম দিতাম। রুমাইসা আমি কোন ওভারটাইম করি নি। এমন সময় রুমাইসা আমাকে বারবার বিয়ের জন্য জোর করে। বিয়েটা আগে করার কথা থাকলেও বারবার মিথ্যা উছিলায় আমি পাড় পেয়ে গেছি। কিন্তু রুমাইসার সাথে বিয়ের ডেট ফিক্সড হওয়ার আগেত দিন জানতে পারলাম তৃষা প্রেগন্যান্ট । এবার পড়লাম ঝামেলায়। রুমাইসা আর বাচ্চাকে কি করব আমি এখন। তারপর সেই চ্যালেঞ্জ লাগানো বন্ধুর সাথে আলোচনা করে রুমাইসা কে বিয়ের দিন সকালে জানালাম যে আমার মা অসুস্থ। আর আমাকে টাকা নিয়ে যেতে হবে। সব নিয়ে আমি এক রকম পালিয়ে আসলাম। এক মাস রুমাইসার সাথে যোগাযোগ করি নি। আমার ভয় ছিক রুমাইসা পুলিশের কাছেই না যায়। তাই বাইক এক্সিডেন্ট এর অভিনয় করি। আর ও কে জানানো হয় আমি মারা গেছি আর লাশ দেশে পাঠানো হয়েছে। রুমাইসা আমার পার্সোনাল ব্যাপার গুলা তেমন জানত না। জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন মনে করত না। সেই হিসাবে ও জানেও না আমার বাসা সিলেটে কই। আমার বাবার নাম কি। তারপর আমি আর খোজ নেই নি ওদের। আমি তৃষা কে নিয়েই ব্যস্ত হয়ে যাই।রুমাইসার কথা আমার মাথা থেকে বের হয়েই গিয়েছিল এক রকম। ”
এতটুকো বলে অভি থেমে গেল। উপস্থিত সবাই যেন কারেন্টের শক খেল এমন স্তব্ধ হয়ে আছে। রুমাইসা আর তৃষা ই যেন পাথর হয়ে আছে। কান্না করতেও ভুলে গেছে। অভির মুখ দিয়ে আর শব্দ বের হচ্ছে না। অভির বাবা মা লজ্জায় মরে যাচ্ছে এই মুহুর্তে। এই ছেলে ছিল ওনাদের ভরসা। মানুষের কাছে গর্ব করে বলত সবাই খারাপ হলেও এই ছেলের মত ফেরেশতা বোধ হয় আর নেই। আর আজ মনে হচ্ছে এ কোন পাপের শাস্তি দিল তাদের বড় ছেলে। অভির বাবা ধপ করে সোফায় বসে গেল। গা দিয়ে ঘাম ছুটছে যেন। পাঞ্জাবি টার বোতাম খুলে আলগা করে নিল।সাইয়ারা যেন নিজের কান কেই বিশ্বাস করতে পারছে না। এগুলো কি শুনল। এই ওর বড় ভাই যাকে নিয়ে সবাই গর্ব করত। এ কি শুনল ও এইমাত্র। ওর চোখ পড়ল রুমাইসার দিকে। মেয়েটার কি দোষ ছিল। অকারণে ভাইয়া এই মেয়েটা কে এত বড় শাস্তি দিয়ে দিল।
অভি তৃষার হাত ধরে বলল “আই এম সরি। বিলিভ মি এখন আমি আর কাউকে পছন্দ করি না। আমার লাইফে কেবল একটাই মেয়ে মানুষ সেটা তুমি তৃষা।”
রুমাইসার যেন রাগ চেপে বসল হঠাৎ। ও অভির কলার ধরে বলল “হাউ ডেয়ার ইউ অভি। আমি তোমার কি ক্ষতি করেছিলাম যে আমার এত বড় ক্ষতি করলে। আমি এতিম তাই আমাকে এভাবে পন্যের মত ব্যবহার করে ছেড়ে দিলে অভি? আমার ভুল কই আমার মেয়ের ভুল কই ছিল? কত কষ্ট করে আমি ইহিতা কে নিয়ে এতদূর এসেছি তুমি জানো? কেন করলে এমন অভি? আমি তোমাকে ভালোই তো বেসেছিলাম একটু। যদি আমাকে ভালোই না বাসলে তবে এতকিছু কেন করলে বল অভি বল। আমি তোমার জন্য বাসায় যুদ্ধ করে পালিয়েছি। আমি তোমার আমার বাচ্চা কে নতুন জীবন দিতে প্রতিনিয়ত লড়াই করছি। আর তুমি এমন অভিনয় টা কেন করলে অভি জবাব দেও।।। ”
রুমাইসা কান্নায় ভেঙে পড়ছে সকলের সামনে। তৃষার চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। ও ৫ মাসের প্রেগন্যান্ট । এই সময়ে কোন নারীর জীবনের এমন কঠিন সময় আসলে কি করা উচিত ও জানে না। ওর ইচ্ছে করছে এই মুহুর্তে মরে যেতে। কি দোষ ছিল ওর যে আজকে ও কেও এক প্রতারণার শিকার হতে হল। অভির মায়ের মুখ যেন আর নেই।মেয়েটাকে যাচ্ছেতাই বলেছে এতক্ষন। অথচ মেয়েটা ওনার ছেলের প্রতারণার শিকার মাত্র।কাকে উনি কি বলবে আজকে।মি.তালুকদার সাহেব কান্না করে দিল সবার সামনেই।
“আল্লাহ তুমি আমাকে নিয়ে যাও এবার।আমি এসব কিছু আর দেখতে চাই না আল্লাহ।কোন পাপের ফল আমার এগুলা। দুইটা ছেলেই আমার এমন নষ্ট হয়ে গেল।”
রাত ২ টা বাজে। সবাই সেখানেই তখনো বসে আছে। কারো মুখে কোন কথা নেই শব্দ নেই।ইহিতা হঠাৎ মোচর দিয়ে কান্না করে উঠল। ওর কান্নার আওয়াজ দেওয়ালে দেওয়ালে বাড়ি খাচ্ছিল। সবাই ওর দিকে তাকাল। রুমাইসার চোখের পানি শুকিয়ে মুখ থমথমে হয়ে গেছে। বাচ্চার কান্নার আওয়াজ কানে আসতেই তৃষার কান মাথা ঝালাপালা করতে লাগল। রাগে মাথা চেপে ও সেখান থেকে উঠে চলে গেল।
অভি ওর যাওয়ার দিকে চেয়ে রইল শূন্য দৃষ্টিতে । ইহান সাইয়ারের কোল থেকে ইহিতা কে নিয়ে দাড়িয়ে গেল।
“রুমাইসা অনেক মেলোড্রামা হয়েছে। উঠে আসো বাবু কান্না করছে। রুমে চল আমার সাথে। ”
রুমাইসা ভাঙা গলায় বলল “ইহান সাহেব আপনি সবকিছু জানতেন তাই না? ”
ইহান দাতের চোয়াল শক্ত করে বলল “তা জেনে তোমার কি কাজ? ”
“ইচ্ছে করেই আমাকে আপনি বিয়ে করেছেন এই সত্যের সামনে আনার জন্য? ”
“ভাবতে পারো যেটা খুশি। রাইট নাউ, রুমে চল। আমার স্ত্রী তুমি আজকে থেকে। সো আমার আদেশের বাইরে কিছু করার রাইট তোমার নেই। ”
“আমি আমার বাড়িতে ফিরে যাব। আপনাদের এই জাহান্নামে থাকার আমার কোন ইচ্ছা নেই। আমার মেয়েকে নিয়ে আমি চলতে পারব। আমার মেয়েকে আমার কোলে দেন। আমরা এ বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছি। ”
তালুকদার সাহেব আর তার স্ত্রী একজন আরেকজন এর মুখের দিকে চেয়ে রইল। রাত ২ টা বাজে এই মেয়ে কই যাবে।আর শত হোক, ও এ বাড়ির বউ আর ইহিতা এই বাড়ির মেয়ে। তাই দুজনেই জোর গলায় বলল “রুমে যাও তোমার । কথা বাড়াবে না এখন রাত হয়েছে অনেক। যে যার রুমে যাও ফিরে। ”
“আর মিলি, আজকে যা হল তার একটা কথা যেন রুমের বাইরে না যায়। যদি যায় তবে বুঝিস কি হবে। ” ইহানের মা রক্তচক্ষু নিয়ে কথা টা বলল।
মহিলার আদেশ শুনে রুমাইসা তার উপর প্রতিবাদ করতে পারল না। ভাবল কাল সকালে ই চলে যাবে বাসায়। ওর বস্তি ই ভালো এই নরক থেকে। অভির চেহারা রোজ রোজ দেখার চাইতে মরন ভালো।
“সাইয়ারা বাবু কে নিয়ে রুমে যাও। আর ভাবী কে দেখিয়ে দেও রুম কোনটা। ”
এতটুক বলেই তালুকদার দম্পতি চলে গেল হলরুম ছেড়ে। রুমাইসা অভির দিকে তাকাল। অভি করুন চোখে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। আজ রুমাইসা ওর ভাইয়ের বউ। এমন সম্পর্কের কথা কল্পনায় ও ভাবে নি কোন দিন।
সাইয়ারা বাবুকে রুমে শুইয়ে দিয়ে চলে গেল। ইহান দরজা আটকে দিল। ফ্রেশ হওয়ার জন্য চলে যেতেই রুমাইসা ইহিতা কে বসে খাওয়াতে লাগল। খুব কান্না পাচ্ছে মেয়ের দিকে তাকিয়ে। আজকে ইহিতার আসল বাবা ই ও কে গ্রহনে অস্বীকার জানাচ্ছে। মেয়েটা ওর মত ই এতিম হয়ে গেল। ইচ্ছে করছে মা মেয়ে বিষ খেয়ে মরতে। ইহিতা খেতে খেতে ঘুমিয়ে গেল আবার। রুমাইসা খাটের মাঝে শুইয়ে দিয়ে বসে রইল।
ইহান ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে হাত মুখ মুছতে লাগল। রুমাইসার দিকে না তাকিয়েই বলল “যাও ফ্রেশ হয়ে নাও। সকালে আম্মুর থেকে কাপড় চেয়ে নিব কোন। আপাদত রাত টা এটা পড়েই কাটাও। ”
রুমাইসা বিছানা ছেড়ে ইহানের কাছে গিয়ে দাড়াল।
ইহান কোন ভ্রুক্ষেপই করল৷ না।
“আপনি জানার পর এ কাজ টা কেন করলেন ইহান? আপনিও কি শাস্তি দিতে চান আমাকে নতুন করে আবার। ”
ইহান জবাব দিল না।চুল গুলো আচড়াতে লাগল। রুমাইসার রাগ হল প্রচন্ড। ও ইহান এর পাঞ্জাবির কলার ধরে বলল “জবাব দিচ্ছেন না কেন? ”
ইহান রেগে গেল এমন ব্যবহার দেখে। ও রুমাইসার হাত কলার থেকে নামিয়ে ওর কোমড় জড়িয়ে কাছে আনল।
“ইহান তালুকদার স্বার্থ ছাড়া কিছু করে না রুমাইসা।সারাজীবন মনে রাখবে এটা। তোমাকে বিয়েতে আমার স্বার্থ ছিল। তাই তুমি এখানে। আমার মনে চাইলে জবাব দিব ততক্ষন চুপ থাক। আমার মোটিভ দ্রুত ই জানবে তুমি।”