#শেষ_বিকেলে_এলে_তুমি
#সিজন_২
#Tahmina_Akther
(১১)
-রুশা,আমি মানছি সেদিন আমার ভুল ছিল। কিন্তু, ওইসব কিছু যা আমার চোখের সামনে ছিল, ওগুলোকে বিশ্বাস করা ছাড়া আমার উপায় ছিল না। কিন্তু, হ্যা আমার সবচেয়ে বড়ো ভুল ছিল আমি কেন সত্যতা প্রমাণিত করতে চাইনি।
রুশা তাদের রুমের খাটের উপর মাথা নিচু করে বসে বসে আদিলের কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনছে।
আদিলের সব কথা বলা শেষ হবার পর রুশা আদিলকে উদ্দেশ্য করে বললো,
-সবই বুঝলাম। তবে কোনদিন থেকে মনে হলো যে আমি সঠিক?
-রুশা, তুমি আমাকে ভালোবাসো হাতেগোনা কয়েক বছর ধরে।অথচ আমি তোমায় ভালোবাসি তুমি আমাকে চেনার বহু আগে। তোমার সাথে চলাফেরা করে এতটুকু বুঝেছি, তুমি অন্তত এমন ঘৃন্য মনোভাবাপন্ন কাজ করবে না।
আদিল রুশার চোখের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো সম্পন্ন করতে পারেনি৷ নিজের করা কাজে ভীষণ লজ্জিত সে। নিজের প্রতি নিজের প্রচন্ড রাগ জমেছে আদিলের সে কিভাবে পারলো,নিজের ভালোবাসাকে এতটা অবিশ্বাস করতে! ভারী অদ্ভুত লাগে এই বিষয়টা আদিলের কাছে।
-এখন আপনি কি চাচ্ছেন?
রুশার এমন প্রশ্ন শুনে আদিল চোখে তুলে তাকালো। সে কি চায় আসলেই কি রুশা বুঝতে পারছে না, না-কি বোঝার চেষ্টা করতে চাইছে না?
-রুশা, আমি চাই তুমি আমার কাছে ফিরে এসো, আমার অনাগত সন্তানকে নিয়ে। আমরা ঠিক আগের দিনগুলোতে ফিরে যেতে যাই। যেখানে শুধু সুখ-শান্তি,হাসি এবং ভালোবাসা থাকবে। সন্দেহ একটি সুখের সংসারকে নষ্ট করে দিতে পারে। আমি এই কয়মাসে উপলব্ধি করেছি।
আদিলের সব কথা শুনে রুশা মেকি হাসি বলল,
-আদিল,সব স্মৃতি ভোলা যায় না। আমি প্রতিরাতে এখনও সেদিনের কথা মনে করে মন খারাপ করি। সেই মন খারাপের রেষ ধরে চোখের পানিতে আমার বালিশ ভিজে। কেন, এমনটা হলো আপনার কাছে এর উত্তর আছে? নেই হয়তো। কিন্তু, আদিল একটিবার আমাকে জিজ্ঞেস করতেন, আসল ঘটনার সত্যতা কতখানি?
রুশা কথাগুলো বলার সময় ওর গলা বারবার কেঁপে কেঁপে উঠছিল। আদিল রুশার মুখের দিকে তাকিয়ে ছিল, যখন দেখলো রুশা কাঁদছে।
তখন ধীরপায়ে এগিয়ে গিয়ে রুশার পাশে বসলো আদিল। রুশার ডানহাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে, দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
-রুশা, পুরনো সব কিছু ভুলে গিয়ে আমরা কি পারি না নতুনভাবে সব কিছু শুরু করতে?
রুশা কান্না বন্ধ করে আদিলের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। এই যে আদিলের এই চোখের চাহনিতে ঠিক আগের মতো ভালোবাসা দেখা যাচ্ছে।যেই ভালোবাসা পেয়ে রুশা তার পুরোনো স্মৃতি ভুলে নতুন সুখকর স্মৃতি কুড়িয়ে রাখতে চেয়েছিল। কিন্তু, সে সুখ বেশি টিকলো কই?অজানা ঝড় এসে সব তছনছ করে চলে গিয়েছে। যার রোষানল পরে আজ কতদিন এই মানুষটার কাছ থেকে দূরে সরে আছে?
আদিলের হাতের মুঠোয় থাকা নিজের হাত ছাড়িয়ে রুশা চোখের পানি মুছে বললো,
-আমি কিছুদিন সময় নিতে চাই। আমিও আপনাকে ভালোবাসি, আদিল। আমার কাছে ভালোবাসার চেয়েও সম্মান বড়ো। আমিও চাই আপনাকে ভালোবাসার চেয়ে বেশি সম্মান দিতে। আশা করছি, আপনি আমার ব্যাপারটা বুঝতে পারবেন।
রুশার সবকথা শুনে আদিলের মুখে এক চিলতে হাসির ঝলক দেখা গেলো। আদিল খুশি হয়ে রুশাকে জড়িয়ে ধরলো। রুশা খুশি হলো কি না বোঝা গেলো না। আদিল রুশাকে জড়িয়ে রেখেই বললো,
-তুমি যতদিন ইচ্ছা সময় নাও কিন্তু তুমি আমার হয়ে থেকো, মাধুর্য।
রুশা আদিলের কাছ থেকে নিজেকো ছাড়িয়ে বললো,
-আমি কাজল আপুদের বাড়িতে যাবো।
-চলো, আমি তোমাকে পৌঁছে দিয়ে আসি।
রুশা উঠে দাঁড়ালো, এরপর ওয়াশরুমে গিয়ে চোখমুখ ধুয়ে এলো। এদিকে আদিল পড়নের ড্রেস চেঞ্জ করে নিলো।রুশা আদিলের কাছে আসতেই ওর হাত ধরে বাড়ি থেকে বের গেলো।
আদিল কার ড্রাইভ করছে আর রুশা কারের উইন্ডো দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। রুশাকে বাইরে থেকে ঠিক যতটা স্বাভাবিক দেখাচ্ছে ভেতর থেকে রুশা ঠিক ততটা ভেঙে পড়েছে৷ আদিল ওর সাথে স্বাভাবিকভাবে কথা বললেও, ওর সব পুরোনো স্মৃতি মনে পড়ে যাচ্ছে চাইলে পারছে না, সেই স্মৃতি গুলো দৃশ্যপট থেকে সরিয়ে ফেলতে।
রুশা যখন ভাবাভাবিতে ব্যস্ত এমন সময় ওর মোবাইলে কল এলো। রুশা স্বাভাবিক হয়ে ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করে দেখলো, নাজ কল করেছে। কল রিসিভ করে স্বাভাবিক কন্ঠে বললো,
-কি রে কেমন আছিস?
-আমি ভালো আছি, রুশা। তুই কেমন আছিস?
-এই তো ভালো আছি। কোথাও যাচ্ছিস না কি?
-হ্যা, চট্টগ্রাম যাচ্ছি।
-চট্টগ্রামে কেন? তোর আত্মীয় স্বজন কেউই তো চট্টগ্রাম থাকে না।
-একটা কাজে যাচ্ছি, দোয়া করিস আমি যেন আমার উদ্দেশ্য সফল হই। ভালো থাকিস রুশা। আদিল স্যার ভীষণ কষ্ট পেয়েছেন উনার কাজে। উনাকে মাফ করে দিস। তোরা দু’জন দু’জনকে কত ভালোবাসিস সেই যদি তোরাই সন্দেহ করে একে অপরের কাছ থেকে দূরে সরে থাকিস মানা যায়? মান-অভিমানের ওজন কমিয়ে ভালোবাসার ওজন বাড়িয়ে একসাথে জোড়া শালিকের মতো থাকিস। আমি রাখছি, আল্লাহ হাফেজ।
নাজ সেই কখন কল কেটে দিয়েছে কিন্তু রুশা এখনও মোবাইল কানে ধরে রেখেছে। নাজের প্রত্যেকটি কথা ওর মস্তিষ্কে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
আদিল ড্রাইভ করার ফাঁকে রুশার দিকে বারবার তাকাচ্ছিল। খেয়াল করে দেখলো নাজের সাথে কথা হবার পর থেকে যেন রুশা আরও চুপচাপ হয়ে আছে।
আদিলের কার এসে কাজলদের বাড়ির সামনে থেমে গেলো।আদিল কার থেকে নেমে রুশার পাশের ডোর খুলে দিলো।রুশা কার থেকে নেমে বাড়ির পথ ধরে হাঁটতে শুরু করলো।পেছন থেকে আদিল এসে রুশার হাত ধরে পাশাপাশি হাঁটছে। রুশা আদিলের দিকে একপলক তাকিয়ে বললো,
-আমাকে ছাড়া এতদিন থাকতে আপনার কষ্ট হয়নি?
আদিল ওর হাঁটা থামিয়ে দিলো রুশার প্রশ্ন শুনে। রুশা আদিলের উওরের অপেক্ষায় চেয়ে রইলো। আদিল রুশার হাত ছেড়ে দিয়ে ওর মুখোমুখি দাঁড়ালো এরপরে নিজের দুহাতে রুশার মুখ আজলে নিয়ে বললো,
-রুশা, তোমাকে ছাড়া আমার একটি রাত-দিন ভালো যায়নি। তোমাকে ভালোবাসার পর থেকে আমি তোমার বিরহে কাতর ছিলাম কিন্তু তোমাকে নিজের করে পাওয়ার পর আবার হারিয়ে এবার যেন নিঃস্ব হয়ে পরেছি।
-আমিও আপনাকে ছাড়া ভালো ছিলাম না আদিল। এত ভালোবাসা পাবার পর হুট করে ভালোবাসার মানুষটির কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লে, নিজেকে ভালোবাসার কাঙাল মনে হয়।
আপন মনে কথাগুলো বলছে রুশা। ইশশ্ একটিবার যদি রুশার মুখ এই কথাগুলো আদিল শুনতে পেতো!
রুশার কাছ থেকে কোনো উত্তরের আশা না করে রুশার কপালে চুমু দিয়ে হাত ধরে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলো আদিল।
সবাই তখন ড্রইংরুমে বসে আলাপ করছিল। এমন সময় একসাথে আদিল আর রুশাকে একসাথে বাড়িতে প্রবেশ করতে দেখে সবাই অবাক হলো ভীষণ।
আদিল এগিয়ে এসে সবাইকে সালাম দিয়ে ভালোমন্দ ইত্যাদি জিজ্ঞেস করলো। হুট করে কোত্থেকে আরশি এসে আদিলের কোমড় জরিয়ে ধরলো। আদিল আরশিকে কোলে নিয়ে আদরে আগলে নিলো বুকের মাঝে। আরশি তার মামার কাঁধে মাথা রেখে শুয়ে রইলো।
সবাই আরশির কান্ড দেখে অভিভূত হয়ে গেলো। কাজল আদিলকে বললো,
-ভাইয়া, তুমি খাওয়াদাওয়া করেছো দুপুরের?
-কোত্থেকে করবো আমার কি বৌ আছে না-কি?
রুশার দিকে আঁড়চোখে তাকিয়ে বললো আদিল।
রুশা আদিলের এই কথায় রেগে গিয়েছে হয়তো সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-আমার ভালো লাগছে না। আমি রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে থাকবো কেউ যেন আমায় বিরক্ত না করে।
বলে ওর রুমে চলে গেলো। রুশা যেতেই একে একে আয়াতের আব্বু-আম্মু আর আদিলের বাবা রায়হান সাহেব নিজেদের রুমে চলে গেলেন।উনারা চলে যেতেই কাজল আর আয়াত হেঁসে ফেললো।
আদিল সকলের হাসিতে লজ্জা পেয়ে বললো,
-এতে হাসির কি আছে?
-হাসির কিছু নেই বলছো!বৌকে মিথ্যে হুমকি দিয়ে বাড়িতে নিয়ে গেছো। এরপর, একসাথে এলে আমাদের বাড়িতে। আবার খাবারের কথা জিজ্ঞেস করতে বলছো, বৌ নেই।সামনে বৌকে দাঁড় করিয়ে যদি বলো বৌ নেই তখন বৌ রাগ করে রুমে যাবে না তো কি করবে? এখন তো বেশ ভালোই হয়েছে ওর রুমে কাউকে যেতে মানা করছে।
-ওর রুমে কাউকে বলতে তোদের বারণ করেছে আমাকে না। বুঝতে পেরেছিস?
-হ্যা,বুঝেছি। এখন এসো খাবার খেয়ে নাও।
কাজল উঠে চলে গেলো কিচেনে। ড্রইংরুমে এখন শুধু বসে আছে আয়াত আর আদিল।
-অবশেষে নিজের মাধুর্যের রাগ ভাঙাতে পেরেছেন, ভাইয়া?
-হয়তো। ওর রাগের পাহাড় কবে কমবে জানি না। কিন্তু, আমি আমার সর্বাত্মক চেষ্টা করবো। আমার ভুলে যেহেতু এতকিছু তবে চেষ্টা আমিই করবো। আয়াত,তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। তুমি আজ বুদ্ধিটা না দিলে হয়তো রুশা?
-ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবেন না ভাইয়া৷আপনি যেভাবে কষ্ট পেয়েছেন রুশাও ঠিক একই কষ্ট পেয়েছে। আর কত কষ্টে থাকবেন দু’জন এবার নাহয় মান-অভিমানের পাঠ চুকিয়ে নিন।
আদিল আয়াতের কথায় হেঁসে মাথা নাড়িয়ে সায় দিলো। কাজল ডাক দিতেই আদিল ড্রইংরুমে ছেড়ে ডাইনিং রুমে চলে গেলো।
আদিল গিয়ে দেখলো রুশা ট্রেতে দু’জন মানুষের খাবার সাজিয়ে রেখেছে। আদিল প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে কাজলের দিকে তাকাতেই কাজল বললো,
-তোমার মাধুর্য তোমার কল পেয়ে না খেয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে গিয়েছিল। এখন যাও তোমার মাধুর্যকে নিয়ে খাবার শেষ করো।
আদিল কাজলকে ধন্যবাদ দিয়ে খাবার নিয়ে চললো রুশার ঘরের দিকে।
#শেষ_বিকেলে_এলে_তুমি
#সিজন_২
#Tahmina_Akther
(১২)
আদিল খাবারের ট্রে নিয়ে রুশার ঘরের সামনে এসে দেখলো দরজা খোলা আছে। আদিল মুচকি হেসে মনে মনে বললো,
-পাগলি একটা এই বললো,কেউ যাতে ওকে বিরক্ত না করে সেই উনি দরজা খুলে বসে আছে।
ঘরে প্রবেশ করতেই দেখলো রুশা রুমে নেই। ওয়াশরুম থেকে পানির শব্দ আসছে হয়তো শাওয়ার নিচ্ছে।আদিল খাবারের ট্রে খাটের উপর রেখে দিলো।
ওয়াশরুমের দরজা খুলে রুশা বের হয়ে ড্রেসিংটেবিলের সম্মুখে দাঁড়িয়ে চুল তোয়ালে দিয়ে মুছতে লাগলো।কেউ যে ওর ঘরে বসে ওর দিকে তাকিয়ে আছে সেদিকে রুশার কোনো হেলদোল নেই।
আদিল তার মাধুর্যের দিকে তাকিয়ে আছে। কিশোরী রুশা হুট করে নারীতে পরিণত হয়েছে।হলুদ মেক্সি পড়নে, ভেজা এলোমেলো চুল আয়নার প্রতিবিম্ভের মাঝে তাকিয়ে নেশাক্ত হয়ে পড়লো আদিল।
খাট থেকে উঠে দাঁড়ালো আদিল এরপর ধীরে পায়ে হেঁটে রুশার পিছনে গিয়ে দাঁড়ালো।
নিজের পিছনে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে রুশা আয়নার মাঝে তাকিয়ে দেখলো, আদিল ওর দিকে নেশাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। রুশা চুল মোছা বাদ দিয়ে আদিলের দিকে ঘুরে তাকালো।
আদিল আর রুশা তখন অনেকটাই কাছাকাছি,আদিলের শ্বাস আছড়ে পড়ছে রুশার কপালে। রুশা আদিলের চোখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
-কিছু বলবেন?
-বলতে তো অনেক কিছুই চাই কিন্তু সব কি বলা যায়?
এতটুকু বলেই রুশার কোমড় জরিয়ে ধরিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো আদিল।রুশা অনেকটা অপ্রস্তুত হয়ে গেলো আদিলের এহেন কান্ডে।রুশা কিছু বলতে যাবে তার আগেই আদিল রুশার মুখে আঙুল দিয়ে চুপ করিয়ে দিলো।
-রুশা?
-হুম
-তুমি অনেক জেদি। আমি মরে গেলে তুমি একটুও কষ্ট পাবে না অন্তত এ ক’মাসে আমি উপলব্ধি করতে পেরেছি।তুমি শুধু আমার রাগ দেখলে, আমার রাগের অন্তরালে তোমার জন্য ভালোবাসা,তোমার জন্য অস্থিরতা, তোমার জন্য আমার হৃদয়ে যে হৃদস্পন্দিত হয়ে। তুমি তা কখনোই বুঝতে চাওনি, রুশা।
রুশা একদৃষ্টিতে আদিলের দিকে চেয়ে আছে।এই কথাগুলো শুধু আদিলের কাছ থেকে শুনতেই ভালো লাগে,শরীর কাঁপা অনুভূতি জাগে,প্রতিনিয়ত একজনকে বারবার নতুন করে ভালোবাসতে ইচ্ছে করে। কেন, এমন হয়?
-রুশা, আমি জানি না সেদিন আমার আড়ালে কি ঘটেছিল আর এখন আমি জানতেও চাই না। শুধু এতটুকু বলতে চাই তুমি শুধু আমার হয়ে থেকো। রুশা,আ..মি তোমাকে ছাড়া আর একমুহূর্ত থাকতে পারছিলাম না তাই মিথ্যে কথা বলে তোমাকে একপলক দেখতে চেয়েছি। রুশা ভালোবাসা আর যুদ্ধে নাকি সব জায়েজ। তোমাকে ভালোবাসার পর থেকে আমি নিজের সাথে দিনের পর দিন নিজের সাথে যুদ্ধ করে যাচ্ছি। নিজের অনুভূতিকে দমিয়ে রাখতে দিনের পর দিন যুদ্ধ করে গিয়েছি। তোমাকে জয় করার পর থেকে ভেবেছিলাম এই বুঝি যুদ্ধ জয়ী হলাম। কিন্তু,আমি আমার একটি ভুলের জন্য আমার রাজ্যকে, আমার রানিকে হারাতে বসেছিলাম। সব হারানোর পর তোমার অস্তিত্ব আমার জীবনের জন্য কতখানি মূল্যবান আমি তখন থেকে বুঝতে পেরেছি।
এখন, যদি তোমাকে জয় করতে আমাকে আবারও ভালোবাসার যুদ্ধ করতে হয় তবে তাই হোক। তবুও তুমি আমার হয়ে থেকো।
আদিলের দু’চোখ ভিজে গিয়েছে কথাগুলো বলার সময়। রুশার বুক কেঁপে উঠলো আদিলের ভেজা চোখ দেখে।মানুষটা কেন কাঁদে!তার একটি ডাকের আশায় তো এতদিন পথের দিকে চেয়েছিল।আজ সেদিন এলো বলে।
রুশা আদিলের বুকে মাথা রাখলো। আদিলের যেন রুশার থেকে পাওয়া এই স্পর্শের খুব প্রয়োজন ছিল। ঝাপসা দুচোখ, মুখে এক ঝলক হাসির রেখা যেন আদিলকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখির মানুষের কাতারে দাঁড় করিয়ে দিলো।
-আপনি কেন কান্না করছেন,আদিল?আ’ম সরি। আমার উচিত ছিল আপনাকে সব সত্য ঘটনা বলে দেয়া। কিন্তু, আমি আপনার কাছ থেকে গোপন করেছিলাম দেখে আপনি আমাকে সন্দেহ করেছেন। সব দোষ আমার আদিল, আপনি আমাকে মাফ করে দিন।
আদিলের বুকে মাথা রেখে কথাগুলো বলছে রুশা।
আদিল রুশাকে নিজের বুকের মাঝে আরো গভীরভাবে জড়িয়ে রাখলো।রুশার মাথায় চুমু দিয়ে আদিল বলে,
-তুমি একটিবারও আমাকে সরি বলবে না। সব আমার দোষ। আমি জানি আমি কি অপরাধ করেছি?
রুশা আদিলের বুক থেকে মাথা উঁচিয়ে কিছু বলবে তার আগে রুশার মোবাইল বেজে উঠলো। রুশা একপলক আদিলের দিকে তাকাতেই আদিল রুশাকে নিজের বাঁধন থেকে মুক্ত করতেই রুশা খাটের উপর থেকে মোবাইল নিয়ে কল রিসিভ করলো।
-হ্যালো?
********************
সারি সারি গাছ,অদূরে শহরের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে পাহাড়। রুশা আর আদিল এখন দাঁড়িয়ে আছে রওনকদের বাড়ির ছাঁদে। রুশার প্রেগনেন্সির তখন সাতমাস। মর্নিং সিকনেসের জন্য সকাল থেকে রুশা কিছুই খেতে পারছে না। তাই আদিল রুশাকে নিয়ে রওনকদের ছাঁদে এসে বসে আছে।
আজ দুদিন ধরে চট্টগ্রাম এসেছে ওরা দুজন।হুট করে সেদিন নাজের কল পেয়ে রুশা আর আদিল রওনা হয় চট্টগ্রামের উদ্দেশ্য।
-এখন কেমন লাগছে, রুশা?
রুশার মাথায় হাত রেখে জিজ্ঞেস করলো আদিল।
রুশা ইশারায় আদিলকে দেখলো ওর এখন ভালো লাগছে।এরইমাঝে আদিলের মোবাইলে কল এলো,আদিল কল রিসিভ করে সালাম দিতেই ওপাশ থেকে বলে উঠলো,
-আদিল,তুমি এভাবে ছুটি কাটালে হবে? তুমি একজন ডক্টর এটা কি তুমি ভুলে গিয়েছো?
-সো সরি শিউলি ম্যাম।আসলে খুব জরুরি কাজে চট্রগ্রামে আসতে হয়েছে। আমি আগামীকালের ফ্লাইটের ঢাকায় আসবো।
-ঠিক আছে।তা রুশা কেমন আছে?
-আছে ভালো।মর্নিং সিকনেস এখনও কমেনি।
-আর কিছুদিন গেলে ঠিক হয়ে যাবে। রাখছি তবে।
-জি, আল্লাহ হাফেজ।
কল কেটে দিলো আদিল।রুশা প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আদিলের দিকে। আদিল রুশাকে বলে,
-শিউলি ম্যাম কল করেছিল, কবে ঢাকায় ফিরে যাবো জানার জন্য।
-ওহ্,আচ্ছা। আমাদের কেন এখানে তলব করে নিয়ে এলো নাজ, সেটাই তো এখনও বুঝতে পারছি না।
-দেখি কি বলে?এখন চলো নিচে যাই।
রুশার হাত ধরে ধীরে ধীরে ছাঁদ থেকে নেমে এলো আদিল।নিচে ড্রইংরুমে আসতেই দেখলো রওনক, নাজ আর রাফসান বসে আছে।
আদিল আর রুশাকে দেখতে পেয়ে নাজ এগিয়ে এসে রুশার হাত ধরে সোফায় বসিয়ে দিলো।আদিল রুশার পাশে বসে পড়লো।
নাজ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
-রুশা তোকে একটা কথা জানানো হয়নি, দোস্ত?
রুশা খানিকটা অবাক হলো নাজের কাছ থেকে এমন কথা শুনে।
-কি কথা?
-আসলে, আমি আর নাজ দু’দিন আগে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছি।
রওনক আদিলের দিকে তাকিয়ে বললো।রুশা অবাক হয়ে গেলো। আদিল অবাক হয়ে বললো,
-তবে,রুশাকে আপনি চিঠিতে যে কথাগুলো লিখেছেন, গিফটগুলো দিয়েছেন সেগুলো কি ছিল?
-আমি কখনোই রুশাকে খারাপ উদ্দেশ্য চিঠি দেইনি।
-আমি তাহলে এবার কথাগুলো বলি।
নাজ বললো,আদিল আর রুশা নাজের দিকে তাকিয়ে আছে।
নাজ সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললো,
-সেদিন, রুশাকে রওনক যে চিঠিটা দিয়েছিল সেই চিঠি কখনোই রুশার কাছে পৌঁছায়নি। বরং,রুশার কাছে অন্য কারো চিঠি পৌঁছেছিল।
রুশা আর আদিল যেন অবাকের চূড়ান্ত পর্যায়ে।রওনক মাথা নিচু করে রেখেছে।
রাফসানও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে নাজের দিকে। নাজ সবার মুখের দিকে তাকিয়ে, বড়ো করে শ্বাস ছেড়ে বললো,
-সেদিন রুশার কাছে রওনকের নামে যেই চিঠিখানা গিয়েছিল। সেই চিঠি সত্যিকার অর্থে রাফসান রুশাকে দিয়েছিল।আ’ম আই রাইট, রাফসান?
সকলের দৃষ্টি এবার রাফসানের দিকে। আসলেই কি রাফসান সবকিছুর পেছনে সংযুক্ত!
#চলবে
#চলবে
(