শেষ বিকেলে এলে তুমি পর্ব -১৫+১৬

#শেষ_বিকেলে_এলে_তুমি
#সিজন_২
#Tahmina_Akther

(১৫)

-আসলে,সেই মেয়েটি হচ্ছে নাজ। আপনার একমাত্র মেয়ে।

রওনক নাজমুল হোসেনের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে।

নাজমুল হোসেন বিস্মিত হলেন। নাজ তার বাবার মুখের দিকে বোঝার চেষ্টা করছে, সত্যিই তার বাবার মনে এখন কি চলছে?

রুশা আর আদিলেরও বেশ চিন্তা হচ্ছে। রওনকের হার্টবিট বেড়ে গিয়েছে, নিজেকে যথাসম্ভব শান্ত রাখার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না।

-রওনক,কতবছর আগে তুমি নাজকে দেখেছো?

-দু’বছর, চারমাস, তিনদিন আগে।

রওনকের হিসেব দেখে নাজ অবাক হলো সাথে নাজমুল হোসেন।

-এখন, তুমি কি করতে চাইছো?

-আমি কি চাই আপনি বুঝতে পেরেছেন?তবুও বলছি, আমি চাই নাজকে আপনি আমার কাছে দিয়ে দিন। হয়তো,আপনি ভাবতে পারেন অচেনা একটি ছেলে আপনাকে মনগড়া ইতিহাস বলছে।কিন্তু, আমি ঠিক ততটাই সত্য যতটা আমার নাজের প্রতি অনুভূতি সত্য ।

রওনকের দূর্বল কন্ঠে বলা প্রতিটি শব্দ যে কাউকে কনভিন্স করবে যে, সে সত্য বলছে। নাজমুল হোসেন সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন।

উনাকে উঠে দাঁড়াতে দেখে সবাই উঠে দাঁড়ালো। নাজ অসহায় কন্ঠে তার বাবাকে বলে,

-বাবা কিছু বলবে না?

-আমি কি বলবো? শুনেছি তোমরা চট্টগ্রামে গোপনে বিয়ে করেছো। তাহলে,এখন আমার সিদ্ধান্ত তোমাদের দুজনের প্রয়োজন আছে?

নাজ মাথা নিচু করে ফেললো, রওনক আদিলের দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে রইলো।

-কিন্তু, নাজ ;আমি ভীষণ খুশিরে মা। আমার পরে কেউ তো এলো যে আমার পাগল মেয়েটাকে দেখেশুনে রাখবে।

নাজমুল হোসেনের কথা শুনে নাজ, রওনক, রুশা আদিলের মুখে আনন্দে রেখা ভেসে উঠে। নাজ তার বাবাকে জড়িয়ে ধরলো। নাজের বাবাও মেয়েকে পরম আদরে বুকে আগলে নেন।

বাবা মেয়ের এত সুন্দর একটি দৃশ্য দেখে উপস্থিত সকলে অভিভূত হলো।

আদিল যেয়ে রওনককে জড়িয়ে ধরে অভিনন্দন জানালো।

রুশা অদূরে দাঁড়িয়ে দেখছে তার বেস্ট ফ্রেন্ড আজ কত খুশি! সবার জীবনে বুঝি ভালোবাসার বসন্ত এলে আনন্দে মাতোয়ারা হয়।

******************

-হ্যালো,কে বলছেন?

-বাবা,আমি রুশার মামী বলছি।

আদিল বিস্ময়ে অবাক প্রায়। আজ এতগুলো বছর পর কি মনে করে রুশার মামি কল করেছে!

-জি মামি?

-আসলে, বাবা রুশার রাফির সঙ্গে বিয়ে হবার রুশার মামা কয়েকমাস পর অসুস্থ হয়ে পড়েন। ছয়মাসের অসুস্থ কাটিয়ে দুনিয়ার মায়া ছেড়ে চলে যায় আমাদের সবাইকে ছেড়ে। আমি দুই সন্তান নিয়ে কূল-কিনারা না পেয়ে আমার বাবার বাড়িতে চলে যাই। এরইমাঝে, রুশার জীবনে এতকিছু ঘটে যায় আমি জানতে অব্দি পারিনি। যখন সবকিছু জানতে পারি ততদিনে অনেক দেরি হয়ে যায়। রুশার কোনো খোঁজখবর পায়নি। হাল ছেড়ে দিয়েছি হয়তো কোনোদিন রুশাকে পাবো ভাবতেও পারিনি।হুট করে গতকাল আমার বাবারবাড়ি থেকে আমাদের গ্রামে চলে আসি। তারপর তোমার নানুর সাথে কথা বলার ছলে জানতে পারি, আমার রুশা তোমার স্ত্রী। কথা কি সত্য বাবা?

-জি মামি, সত্যি। রুশা আপনাদের উপর অনেক অভিমান করে আছে। কিন্তু, আপনাদের সাথে এতকিছু ঘটে গেলো একটিবারও রুশাকে জানান নি কেন? যদি জানাতেন আজ হয়তো পরিস্থিতি অন্যরকম হতো।

-হ্যা, বাবা। তোমার নানু বলেছে কিভাবে রুশাকে তোমার বাবা আশ্রয় দিয়েছে।তোমার মোবাইল নাম্বার নিয়েছি তোমার মামাতো ভাইয়ে কাছ থেকে। তোমাদের অনেক অনেক ধন্যবাদ বাবা। আমার মেয়েটাকে আগলে রাখার জন্য।

-মামি, রুশা সাতমাসের অন্তঃসত্ত্বা,আপনি নানু হবেন। চলে আসুন না ঢাকায় আপনাকে দেখলে রুশা অনেক খুশি হবে। কতদিন হলো রুশা তার আপনজনদের থেকে দূরে।

-হ্যা,বাবা আমি আসবো। আগামীকাল আসবো আমি। রুশাকে দেখো রেখো, আল্লাহ হাফেজ।

-জি, আসসালামু আলাইকুম।

আদিল কল কেটে দিলো, টেবিলের উপরে থাকা ফটোফ্রেমের মধ্যে থাকা রুশার হাসোজ্জল মুখটির দিকে তাকিয়ে রইলো আদিল।

-এই হাসিতে আমার মরন হোক মাধুর্য। শত কষ্ট করেও যে তোমায় পেয়েছি আমি, এটাই আমার পুরো জীবনের স্বার্থকতা। অজান্তে হোক তোমাকে যত কষ্ট দিয়েছি এরচেয়ে বেশি তোমায় ভালোবেসে আগলে রাখবো তোমায় আমার বুকের মাঝে।

—————————–

আজ শুক্রবার দিন। সকাল থেকে ফাহিমা খালা সহ আরও একজন গৃহকর্মী ভীষণ রকমের ব্যস্ত। কারণ, আজ কাজলের শ্বশুর-শ্বাশুড়ি, কাজল, আয়াত আর আরশি কুঞ্জবাড়িতে আসবে।

তাই এত আয়োজন, সকাল থেকে রায়হান সাহেব ড্রইংরুমে বসে আদিলের সঙ্গে বসে নানান রকমের কথা বলছেন।

রুশা তখন ঘরে শুয়ে আছে, শরীরটা আজ ভালো যাচ্ছে না। তাই অবেলায় শুয়ে আছে, শুনেছে আজ নাকি আয়াত ভাইয়ের আব্বু-আম্মু, আর পুঁচকি আরশিও আসবে।

দুপুরের পরে আয়াতের পরিবার চলে এলো কুঞ্জ বাড়িতে। রুশা তখন সোফায় বসেছিল, পাশে আদিল বসে আছে, রুশার নাকি আজ অনেক বমি বমি পাচ্ছে। রায়হান সাহেব মসজিদে চলে গিয়েছেন যোহরের নামাজ আদায় করতো।

বাড়িতে প্রবেশ করার রুশাকে ওমন অবস্থায় দেখে আয়াতের আম্মু দৌঁড়ে এসে রুশার সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন। আদিল উনাকে দেখে উঠে দাঁড়ালো।রুশার পাশে বসে আয়াতের আম্মু বলেন,

-কি হয়েছে, তোমার?

-আসলে,আন্টি সকাল থেকে কেমন বমি বমি পাচ্ছে! কোনো খাবারের গন্ধ সহ্য করতে পারছি না।

-আদিল,

-জি আন্টি।

-এক টুকরো লেবু নিয়ে এসো।

-জি আন্টি, নিয়ে আসছি।

আদিল দ্রুতপায়ে কিচেন চলে গেলো। ততক্ষণে একে একে সবাই বাড়িতে এসে পড়েছে। কাজল এসে রুশার মাথায় হাত রেখে বললো,

-ভাবি, কষ্ট হচ্ছে?

-না, আপু। ঠিক আছি আমি। রুশা মুচকি হেসে বললো।

আদিল একটুকরো লেবু এনে আয়াতের আম্মুর হাতে দিলো। আয়াতের আম্মু লেবুর টুকরো রুশার হাতের মুঠোয় দিয়ে বললো,

-একটু একটু করে লেবু খাও দেখবে বমির ভাব কমে যাবে।

রুশা লেবুর টুকরো হাতে নিয়ে আয়াতের আম্মুর দিকে তাকিয়ে রইলো। আজ যদি তার আম্মু তার পাশে থাকতো তাহলে হয়তো ঠিক এরকম ভাবে তার খেয়াল রাখতো, কিন্তু আফসোস তার মাও নেই শ্বাশুড়িও নেই।

রুশা একটু স্বাভাবিক হতেই সবাই দুপুরের খাবার একসাথে খেয়ে নিলো। দুপুরের খাবার শেষ হতেই আদিল একপ্রকার রুশাকে জোড় করে রুমে নিয়ে গেলো। রুশা যেতে চাচ্ছিলো না কিন্তু আদিলের উপরে কিছু বলতেও পারছে না। তাই উপায়ন্তর না পেয়ে আদিলের কথা মেনে ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়লো।

রুশা ঘুমিয়ে পড়তেই আদিল ঘর ছেড়ে বের হয়ে এলো।

ড্রইংরুমে আসতেই দেখলো আয়াতের আম্মু জোর গলায় কাঁদছেন। কাজল,আয়াত, আয়াতের আব্বু, রায়হান সাহেব সকলেই বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে রইলেন আয়াতের আম্মুর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা নারীর দিকে।

কারণ, এই নারী হচ্ছেন রুশার মামী আর সবচেয়ে বড়ো কথা আয়াতের আম্মুই হচ্ছেন রুশার জন্মদায়িনী মা।
#শেষ_বিকেলে_এলে_তুমি
#সিজন_২
#Tahmina_Akther

(১৬)

দূর থেকে কারো চাপা আর্তনাদ ভেসে আসছে। সবে চোখটা লেগেছিল,এত করুন সুরের কান্না শুনে চোখ বন্ধ করে রাখা বড় দায়।

গায়ের থেকে কাঁথা সরিয়ে ধীরগতিতে খাট থেকে নেমে পড়লাম। এলোমেলো চুলগুলো ক্লিপ দিয়ে আঁটকে, মাথায় ওড়না দিয়ে ঘোমটা দিলাম। এরপর,মোবাইল হাতে নিয়ে ঘর ছেড়ে বের হয়ে গেলাম।

ঘর থেকে বের হবার পর কান্নার শব্দ যেন আরও প্রকটভাবে শোনা যাচ্ছে। হুট করে আমার টনক নড়লো,কারণ এই কান্নার শব্দ ড্রইংরুম থেকে আসছে।

অজানা আতংক নিয়ে দ্রুত পায়ে হেঁটে নিচে চলে গেলাম। ড্রইংরুমে উপস্থিত হবার পর দেখলাম, আয়াত ভাইয়ের আম্মু কারো কাঁধে মাথা রেখে কাঁদছেন। অবাক হলাম কি এমন কারন হতে পারে যার জন্য তিনি এভাবে কাঁদছেন!

আমাকে দেখতে পেয়ে আয়াত ভাই এগিয়ে এলেন আমার সামনে। আমার হাত ধরে নিয়ে গেলেন উনার আম্মুর সামনে। আমি ভয়ে শেষ হয়ে যাচ্ছিলাম, না জানি কি হয়েছে? আশেপাশে আদিলকে দেখছি না। সবাই তো এখানে আছে তবে আদিল কোথায় আছে?

আয়াত ভাইয়ের আম্মুর দিকে তাকাতেই উনার পাশে বসা থাকা নারীকে দেখে মনে হলো উনি আমার অনেক পরিচিত। আর একটু ভালো করে খেয়াল করে দেখতেই চিনতে পারলাম কারণ তিনি আমার মামি।

মামি আমাকে দেখে উঠে দাঁড়ালেন, উঠে এসে আমাকে উনার বুকে জড়িয়ে নিলেন। আমি কাঁদতে কাঁদতে মামির বুকে আশ্রয় নিলাম।মা যখন কাছে ছিল না তখন মামির বুকে মাথা রেখে মায়ের গায়ের গন্ধ খোঁজার চেষ্টা করতাম মামির শরীর থেকে।

মামি আমার মাথায় চুমু দিয়ে বললেন,

-কত্ত বড় হয়ে গেছিস, টুনি?কেমন আছিস মা?

-আমি ভালো ছিলাম না তোমাদের ছাড়া।কিভাবে পারলে মামি আমার খোঁজ খবর না থাকতে? আমি কি বেঁচে আছি নাকি মরে গেছি একটিবার জানতেও চাইলে না?

-টুনি, তোর মামা তোর বিয়ের পর অনেক অসুস্থ হয়ে মারা যায়।আমি তোর দু’টো ভাইবোন নিয়ে কি করবো তাই তোর নানুবাড়ি ছেড়ে আমার বাবার বাড়িতে চলে যাই। তোর শ্বশুরবাড়িতে কল করেও তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেনি। তারা কল রিসিভ করতো না তাছাড়া তোকে কোথায় বিয়ে দিয়েছিল তোর মামা কখনোই আমাকে নিয়েও যায়নি, বলেও যায়নি।
বেশ কিছুদিন হলো আবারও তোর নানুবাড়িতে এসেছি। এরপর,আমার দেখা হয় আদিলের নানুর সাথে। উনি আমাকে সব কথা বলে রাফির কথা, তোর বাচ্চা,এরপর কিভাবে রায়হান সাহেব তোকে খুঁজে পায় সর্বশেষ আদিলের সাথে তোর বিয়ে। মা’রে আমি যদি ঘুণাক্ষরেও টের পেতাম তবে আমি তোকে আমার কাছে নিয়ে আসতাম।

রুশার কোনো কথাতে খেয়াল নেই, দুচোখ ভিজে আছে, ও শুধু একটি কথা ভাবছে, ওর মামা আর বেঁচে নেই! অথচ, তার কত রাগ জমেছিল তার মামা-মামির প্রতি!

এরইমাঝে, আদিলকে দেখা গেলো ও সদর দরজা দিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করছে।

আদিল দেখলো রুশা তার মামির বুকে মাথা রেখে অঝোরে কাঁদছে। আদিল রুশার সামনে গিয়ে ওর মাথায় হাত রেখে বললো,

-আর কত কাঁদবে বলো?এমনিতেই সকাল থেকে শরীর খারাপ হয়ে আছে।

রুশা ওর বুক থেকে মাথা উঁচিয়ে দাঁড়ালো এরপর আদিলের দিকে তাকিয়ে বললো,

-আপনি কই ছিলেন এতসময় ধরে?

-হসপিটাল থেকে ইমার্জেন্সি কল এসেছিল।

আদিল রুশার সাথে কথা বলার সময় খেয়াল করলো আয়াতের আম্মুর দিকে, উনার ভেঁজা চোখ দেখে আদিলের মনে পড়ে গেলো সেই কথাটি।মনে মনে বেশ শংকিত আদিল যদি রুশা সব সত্যি জানতে পারে তবে ওর প্রতিক্রিয়া কি হবে?

রুশা চোখ মুছে আয়াতের আম্মুর দিকে বললো,

-আন্টি এতক্ষণ কি তবে আপনি কাঁদছিলেন?আমি কান্নার শব্দে ঘুম থেকে জেগে উঠেছি।

আয়াতের আম্মু রুশার জবাবে কি বলবেন জানেন না। কি বলা যায় এই প্রশ্নের উত্তরে?

-টুনি?

-হ্যা মামি।

-তোর মা’কে কখনো দেখতে ইচ্ছে হয়নি তোর?

মামির প্রশ্নে আমি অনেক অবাক হলাম কারণ মামির কাছে বহুবার জিজ্ঞেস করেছিলাম আমার মায়ের কোনো ছবি আছে কি না? প্রতিবার মামির উত্তর ছিল, নেই৷ অথচ, আজ মামি আমাকে জিজ্ঞেস করছে,আমার কখনো মা’কে দেখতে ইচ্ছে হয়েছে কি না?

আয়াতের আম্মু অনেক ভয় পাচ্ছেন, যদি উনার ভাবি রুশাকে এখন সব সত্যি বলে দেয় তবে উনার মেয়ে এইসব সহ্য করতে পারবে তো! এমনিতেই মেয়েটা অসুস্থতায় কাতর হয়ে আছে।

আয়াত তার মায়ের হাত চেপে ধরতেই আয়াতের দিকে তাকালো ওর মা, আয়াত চোখ ইশারায় তার মা’কে অভয় দিলো।

-তোর বাবা যখন মারা গেলো তখন তোর দাদার বাড়ির কেউ তোদের মা-মেয়েকে রাখতে চায়নি। অথচ, তোর বাবা যখন বেঁচে ছিল তখন তোর দাদার বাড়ির প্রত্যেকটি সদস্যের কি লাগবে তোর বাবার কাছে বলতো। তোর মামা তোকে আর তোর মা’কে নিয়ে এলো আমাদের বাড়িতে। তোর মা ছিল ঠিক তোর মতো সুন্দরী। তোর বাবার মৃত্যুর খবর পেয়ে এলাকার অনেক লোক তখন তোর মায়ের জন্য বিয়ে প্রস্তাব আমাদের কাছে পাঠাতে লাগলো।দিন দিন অতিষ্ঠ হয়ে যাচ্ছিলাম, কারণ বিয়ের অর্ধেক প্রস্তাব আসছিলো এলাকার বখাটে ছেলেদের কাছ থেকে। এদিকে তোর মা কাউকে বিয়ে করতে রাজি নয়।
হুট করে একদিন তোর মায়ের জন্য একটি বিয়ের প্রস্তাব এলো। লোকটি ছিল বিপত্নিক, বৌ মারা গিয়েছে তবে একটি ছেলে ছিল ১১ বছরের।ঢাকায় নাকি তাদের গাড়ির শো-রুম ছিল। সে ছেলেকে দেখাশোনা করতে একজন মায়ের দরকার।
তোর মায়ের জন্য এরচেয়ে ভালো বিয়ের প্রস্তাব আর হতেই পারে না।তাই তোর মামা আর আমি একপ্রকার তোর মা’কে জোরজবরদস্তি করে ওই লোকটির সাথে বিয়ে দিয়ে দেই।
তোর মা’র বিয়ে হয়ে যাবার পরও তুই আমাদের কাছে ছিলি। কারণ,সেই লোকটা আমাদের বিয়ের আগে শর্ত দিয়েছিল তোকে সে কখনোই তাদের বাড়িতে নিয়ে যাবে না। যদি তোকে নিয়ে যায় তাহলে ন্ তোর মা নাকি উনার ছেলেকে আদর করবে না।
আমরা মেনে নিলাম উনার কথা, তাও সুখি হোক তোর মা এটাই আমাদের চাওয়া ছিল।আস্তে আস্তে করে আমাদের সাথে যোগাযোগ কমিয়ে দিলো তোর মা। পরে একেবারে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়।কয়েকমাস পর তোর মা আমার কাছে চিঠি দেয়, সেখানে লেখা থাকে, ওর স্বামী ওকে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে বারণ করেছে। যদি যোগাযোগ করে তবে ওকে নাকি তালাক দিবে। চিঠির সবশেষ প্রান্তে তোর মায়ের একটি অনুরোধ থাকে যেন আমি তোকে আমার মতো আগলে রাখি। তার কোনো ছবি তোকে না দেখাই।

-আজ এতগুলো দিন পর হটাৎ করে কেন এই কথাগুলো বলছো মামি?

রুশার প্রশ্ন শুনে রুশার মামি উনার ননদের মুখের দিকে তাকালেন, দেখলেন উনি অশ্রু চোখে তাকিয়ে বারবার বারণ করছে রুশাকে সত্যি না জানাতে।

-কারণ, আজ বহুদিন পর তোর মা চাইছে তোর সাথে দেখা করতে। দেখা করবি তোর মায়ের সঙ্গে?

রুশা নিজের কানকে বিশ্বাস করাতে পারছে না, সত্যিই কি তার মা তার সঙ্গে দেখা করতে চাইছে?

-আমার মা আমার সঙ্গে দেখা করবে কেন মামি? উনার স্বামী উনাকে বাঁধা দিবে না। আমরা বাঙালি নারী তো সবসময় স্বামীদের কাছে সবচেয়ে বেশি বাধাপ্রাপ্ত হই।

রুশার কথা শুনে লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললো আয়াতের বাবা। আয়াত তার বাবার দিকে মাথা নিচু করে ফেললো। কাজল আর রায়হান সাহেব অবাকের চূড়ান্ত পর্যায়ে।

আর রইলো আদিল সে আজ অত্যন্ত খুশি, কারণ আজ থেকে তার মাধুর্যের সব আপন মানুষ তার আশেপাশে থাকবে। আর কখনো রুশাকে বলতে হবে না যে সে এতিম, কেউ নেই ওর। হয়তো রুশা সত্যি জানলে কিছুটা মনোমালিন্য করবে কিন্তু মেনে নিবে সে জানে। কারণ, তার মাধুর্যের কোনো রাগ নেই যা আছে সবই ভালোবাসা।

-তোর মা দাঁড়িয়ে আছে ঠিক তোর ডানদিক থেকে একহাত দূরত্বে। যদি মা’কে দেখতে চাস তবে ঘুরে দেখ.

রুশা কাঁপা শরীরে পাশে তাকিয়ে দেখলো তার থেকে একহাত দূরত্বে দাঁড়িয়ে আছে, আয়াত ভাই আর উনার আম্মু। তারমানে কি আয়াত ভাইয়ের আম্মু আমার মা! তাই বলেই কি উনি এভাবে কাঁদছেন ?

রুশা ভেজা চোখে ওর মামির চোখের দিকে তাকাতেই ওর মামি আশ্বাস দেয়। রুশা কোনোদিকে না তাকিয়ে দ্রুতপায়ে হেঁটে ওর মাকে জড়িয়ে ধরলো। নিজের মেয়েকে আজ এতকাল পর নিজের কাছে টেনে নিলো রুশার মা।

দুই মা-মেয়ের সুখের কান্নায় চারদিকে যেন আজ আনন্দের জোয়ার বইছে। সকলের চোখ ভেজা অথচ মুখে এক চিলতে হাসি।

#চলবে
#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here