শেষ_বিকেলের_মায়া (১৭)

#শেষ_বিকেলের_মায়া (১৭)

ভালো মতন ই ফারিহার পরীক্ষাটা শেষ হলো। সে বেশ অনেকদিন পরিশ্রম করেছে। জীবনের সংগ্রামের জন্য তার পড়াশোনায় আ ঘা ত তো এসেছে তবে সে দমে যায় নি। নিজের সবটুকু দিয়ে এগিয়ে গিয়েছে। আর তাই পরীক্ষাটা ভালো হলো। রিহান ওর জন্য বাইরে অপেক্ষা করছিল। এত এত মানুষের মাঝে পুরুষটি তার জন্য অপেক্ষা করছে! এ কথা যেমন স্বস্তির, আবার এ কথাটাই বিতৃষ্ণার। অভিনয়ের এই খেলায় যদি মায়ায় পড়ে যায়? ফারিহা জানে না। তবে নিজের অনুভূতির লাগাম দিতে জানে সে। নতুবা এত দিনেও অদ্ভুত সুন্দর পুরুষটির জন্য কেন প্রেম জাগল না? ফারিহার অন্তরে কোনো ময়লা নেই। সে একদম পরিষ্কার। রিহান তাকে কখন ভীড় থেকে বের করে আনল সে জানে না। ছেলেটা তাকে বার বার বলছে,”এই পরীক্ষা কেমন হয়েছে? খারাপ হয়েছে? চিন্তা কোরো না। প্রাইভেটে এডমিট করিয়ে দিব। পাবলিকে পড়তে হবে এমন কোনো কথা নেই।”

সব গুলো বাক্য মনোযোগ দিয়ে শুনে নিয়ে ফারিহা বল‍ল,”চিন্তার কিছু নেই রিহান স্যার। পরীক্ষা ভালো হয়েছে।”

“আচ্ছা। ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে। ফুচকা খাবে?”

ফারিহা একটু নিচু চোখে চাইল। রিহান হাসি রাঙিয়ে বলল,”মেয়েরা তো ফুচকা ছাড়া কিছু বুঝে না।”

রিহান তাকে ফুচকার স্টলে নিয়ে এল। সেখান থেকে ফুচকা কিনে দিল। যদিও সে খেল না। আশে পাশের সুন্দরী মেয়েটি রিহান নামের পুরুষটির দিকে তাকিয়ে। এমন সুন্দর ছেলেরা সাধারণ ভাবেই মেয়েদের স্বপ্ন পুরুষ হয়ে থাকে। ফারিহা সবটা দেখে মিটিমিটি হাসল। রিহান কখনো এভাবে ফুচকার স্টলের কাছে দাঁড়ায় নি। তাই কেমন অনুভূতি হচ্ছে।

“আরো খাবে?”

“উহু।”

বিল মিটিয়ে দিল রিহান। এক সেকেন্ড সময় নষ্ট করে নি সে। তার এই দশায় ফারিহা ফিক করে হেসে ওঠল। রিহানের মুখের ভঙ্গিমা শক্ত।

“মজা নিবে না প্লিজ।”

ফারিহা হাসি থামাল। যদিও তার অধর কোণের হাসিটা রয়েই গেল। একটু দূরে দাঁড়িয়ে আদীব দেখল সবটা। রিহানের সাথে অবাধে চলা ফেরা। একই বাড়িতে থাকা। এসব কিছু অনেক কিছুই বলে দেয়। যদিও তার মনে ভালো চিন্তাটাই এল। সে মনে প্রাণে চাইল কোনোভাবে ফারিহা যেন রিহানের রক্ষিতা হয়ে না রয়। অন্তত শুদ্ধ ভালোবাসা জুটুক মেয়েটির কপালে।।

বাড়ি ফিরে এসে রুনার সম্মুখীন হলো ফারিহা। মেয়েটিকে জড়িয়ে ধরলেন ভদ্রমহিলা। ওমন সময় ফারিহার দু চোখ ভে ঙে কান্না এল। এক মায়ের জান রক্ষার্থে আরেক মায়ের সাথে ছলনা করছে সে। এই পাপের কোনো ক্ষমা হয় কি? হয় না। এ জনমে অন্তত এ পাপটির ক্ষমা মিলবে না। সর্বোচ্চ চেষ্টায় চোখের জল আটকাল সে।

“একি মা, চোখ মুখ এমন কেন? পরীক্ষা খারাপ হয়েছে? রিহান যে বলল ভালো হয়েছে। ভয় পেয়ে ওকে বলো নি?”

ফারিহা কথা বলতে পারছে না। ভদ্রমহিলা মর্ডান। অথচ তার আচরণে মায়ের ভাবটা পরিপূর্ণ।

“কথা বলো। কিছু হয়েছে?”

ফারিহা এবার উত্তর দিল।

“না আন্টি।”

“তাহলে?”

“আপনার ভালোবাসা দেখে বাক শক্তি হারিয়ে ফেলেছি। কতটা যোগ্য বুঝতে পারছি না।”

রুনা হেসে মেয়েটির গালে হাত রাখলেন। সে স্পর্শেও কেমন মা মা অনুভূতি। ফারিহার বুক ভে ঙে কান্না আসতে চায়। সে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে। ঘরে এসে একচোট কেঁদে নেয়। কেন এত মিথ্যে তার জীবনে? মেয়েটির দুপুরের খাবার খাওয়া হলো না। এরই মাঝে সে অসুস্থ বোধ করল। বিকেলের দিকে এল জ্বর। রুনা ছেলেকে ডেকে নিলেন। তার কণ্ঠে চিন্তা।

“দেখো তো কি হলো ওর।”

রিহান কপালে হাত রেখে বুঝল জ্বর এসেছে। সে ডাক্তার ডেকে নিল। চেকাপ, ঔষধ পত্র সব কিছু মিলিয়ে বেশ রাত হয়ে গেল। এর মধ্যে কিয়া কয়েকবার কল করল। অথচ সে বুঝতেও পারে নি। ধ্যান ছিল না। রাতে শোয়ার পূর্বে দেখল মিসড কল। তৎক্ষণাৎ কল করতেই কিয়ার ভা ঙা গলা শোনা গেল।

“আঠারো বার কল করেছি।”

“সরি, বেবি। আমি আসলে একটু ব্যস্ত ছিলাম।”

“সেটা তো বুঝেছি রিহান। একটা কথা বলবে, আমি কি তোমায় হারিয়ে ফেলছি ক্রমশ?”

রিহান থম মে রে রইল। হুট করে ঐ কথা কেন বলছে মেয়েটা?

“বলো রিহান।”

“এমন কেন হবে কিয়া? তুমি আমায় ভালোবাসো। আমি তোমায় ভালোবাসি। এই সর্বোচ্চ ভালোবাসার বিচ্ছেদ কেন ঘটবে? আমরা সব ঠিক রাখতে কত কিছু করে চলেছি। তারপর ও কেন এমন হবে?”

“তুমি আমার হয়ে থেকো রিহান।”

“আমি তোমার ই কিয়া।”

পিনপতন নীরবতা ধেয়ে এল। ফারিহার জ্বর পুনরায় বেড়েছে। রুনা ডাকতেই রিহান বলল,”আসছি মম।”

তারপর কিয়াকে বলল,”আমি একটু পরে কল দিচ্ছি।”

কিয়া কিছু বলল না। রিহান চলে যেতেই সে একটা দীঘল নিশ্বাস ফেলল। তার এলোমেলো জীবনটা আরো এলোমেলো হয়ে গেল। সে যে নেশায় মেতেছে তা কি রিহানকে হারিয়ে দিবে? নাকি মেঘ সরিয়ে এনে দিবে রোদ্দুর। অথবা গল্পটা হবে আরেকটু অন্যরকম।

সে রাত্রিতে রিহান আর কল করতে পারল না। কিয়া অবশ্য অপেক্ষায় ছিল। তবে ফারিহার জ্বর খুব বেড়েছিল। রাতে বমি করেছে কয়েকবার। চট্টগ্রাম থেকে কল করেছেন ইরফান জোয়ার্দার ও। মূলত একটি কন্যার শখ ছিল তাদের। অথচ বিধাতা এক সন্তানেই তৃপ্ত হতে বললেন। দ্বিতীয় সন্তান আর হলো না। এই নিয়ে তাদের ভেতরে অবশ্য একটা দুঃখ রয়েছে। সেই জন্যেই চেয়েছিলেন
বন্ধুর মেয়ে ইলাকে পুত্র বধু করে আনতে। তবে ছেলের পছন্দের উপর কথা হয় না। শেষ রাতে রিহান যখন নিজ ঘরে আসবে তখন ফারিহা জ্বরের ঘোরে নানান কথা বলতে লাগল। তার কথা গুলো এমন,”আমি,চাই না। আমি চাই না ঠকাতে। আমি রিহান স্যারের কেউ নই। আমি আমার মায়ের চিকিৎসা করাতে চাই।”

এসব শুনে আতঙ্ক ছেয়ে গেল রিহানের মুখশ্রীতে। রুনা নিচে গিয়েছিলেন। তিনি ফিরে আসতেই রিহান বল‍ল,”মম তুমি ঘুমাও। আমি আছি।”

ভদ্রমহিলার কিছু সমস্যা রয়েছে। সেই জন্যেই তাকে ঘুমাতে যেতে হচ্ছে। রিহান ফারিহার পাশে বসল। রুগ্ন মুখশ্রী দেখে হতাশার নিশ্বাস ফেলল। যত্ন নেওয়ার দিক থেকে রিহান যেন একেবারেই অজ্ঞ। ফারিহা অসুস্থতায় কাঁপছে অথচ সে মাথায় জল পট্টি দেওয়ার মতো কাজটিও করতে পারছে না। সে একটা পর্যায়ে বিরক্তই হলো। মেয়েটিকে এনেছিল নিজের কাজ হাসিল করতে। অথচ ঘটনা ঘটছে উল্টো। সকাল সকাল ফারিহার জ্বর নামল। রিহান সিপাহীর মতো দাঁড়িয়ে। ফারিহা ধরমরিয়ে উঠল।

“আস্তে।”

“এখানে আপনি?”

“পুরো রাত দাঁড়িয়ে আছি।”

খানিক বাদে বুঝতে পারল ঘটনা। সেটা অনুভব হতেই অপরাধে দগ্ধ হলো ফারিহা।

“দুঃখিত। আপনি এভাবে কষ্ট করলেন।”

“জ্বর গিয়েছে?”

“হ্যাঁ।”

“তাহলে রেস্ট করো। আমি রুমে যাচ্ছি। মম কে বলবে আমি নিজ থেকেই উঠব। আমাকে যেন না ডাকা হয়।”

ফারিহা মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি জানাল। তারপর ই দেখতে পেল ঘুমে দু চোখ বন্ধ হতে যাওয়া পুরুষটির মুখশ্রী। যেন কতকাল ঘুমায় নি!

| আমি একটা কথা বলি। আমি কখনো গল্পের এন্ডিং বদলাই না। যেভাবে শুরুতে ভেবেছি সেভাবেই দেই। তাই এন্ডিং নিয়ে কেউ ব্যস্ত হবেন না। টুইস্ট গুলো উপভোগ করুন। সামনে আরো কিছু আসবে ইনশাআল্লাহ। |

চলবে…..
কলমে~ফাতেমা তুজ নৌশি

“বিয়ে থা” নিয়ে আপডেট
https://www.facebook.com/100076527090739/posts/323207963573438/?app=fbl

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here