#শ্যামারঙা
লেখিকাঃ বৃষ্টি সরকার অধরা
পর্বঃ ৩৫
খাবার শেষ করে নবু পাশে সোফায় বসলাম।
ও টিভি দেখছে আর আমাকে খোচাচ্ছে।আমি চুপচাপ বসে আছি কারণ আমার এখন ওর সাথে ঝগড়া করতে ইচ্ছে করছে না।
তাই রান্নাঘরে গেলাম বড়মাকে রান্নায় সাহায্য করতে….
রান্না যখন শেষের দিকে তখন নীলাদ্রি দার কথার আওয়াজ এলো।
— মা,মা,একটু এদিকে আসো।
ওনার ডাক শুনে আমি বড়মাকে বললাম…
— ও বড়মা নীলাদ্রি দা তোমাকে ডাকছেন।
আমার কথায় বড়োমা আমাকে ধমক দিলেন,,,
— এই গাধি,দাদা কাকে বলছিস?
কাল না তোদের বিয়ে হয়েছে।
— আসলে….
— কোন কথা নেই আর যেন এই ভাষা না শুনি….
এখন যা নিল ডাকছে।
— আমি কেন যাবো? তোমাকে ডাকছে তো..
—যেতে বলেছি যা….
হাত ধুয়ে রুমে এসে আমি অবাক।
এটাকে রুম না বলে ছোট খাটো একটি শপিং মল বললে ভুল হবে না।
লোকটা কি পাগল?
এত শপিং কেউ করে।
কিন্তু উনি কোথায়?ওনাকে খুজতে বারান্দায় গেলাম।
কিন্তু তিনি সেখানে নেই।
তাই রুমে এসে আবার দাড়ালাম।
একটু পর উনি ওয়াসরুম থেকে বের হলেন।
তার পরনে ট্রাউজার আর সাদা টি-শার্ট, চুল গুলো ভেজা।
চুলের জল গুলো কপাল আর গাল বেয়ে পড়ছে।
আমি চোখ নামিয়ে নিলাম।
— মা এলো না?
— আমাকে পাঠিয়েছেন।
— ও,
সমস্যা নেই।এই ব্যাগ গুলো একটু সাইড কর।
বড্ড ক্লান্ত লাগছে।
সবগুলো ব্যাগ সরিয়ে বিছানা পরিষ্কার করে দিলাম
তিনি শুয়ে বললেন..
— নুপুর পড়ে আস্তে আস্তে হাটবি।
তাহলে আওয়াজ বেশি হবে।এই আওয়াজে আমার নেশা হয়।যে নেশা কাটতে চায় না।আজ কাল এই নেশাটা বড্ড টানছে আমায়…
ওনার কথা শুনে একবার তাকালেম আমি।
দেখলাম উনি শুয়ে চোখ বন্ধ করে হাসছেন।
সেই হাসিতে অনেক না বলা কথা লুকিয়ে আছে।
গতকালের আগে এই ব্যক্তির সাথে আজকের এই ব্যক্তির মোটেই মানাচ্ছে না।
খুব অবাক লাগছে আমার ওনাকে দেখে।
বড্ড অচেনা লাগছে এই নিলাদ্র সেন কে আমার কাছে।
গতকাল এই ব্যক্তির ওপর আমার খুব অভিমান হয়েছিলো কিন্তু আজ তার রহস্য ভরা বদন আমাকে চিন্তিত করছে।
দুপুরে খাবার সময় বড়মা আমাকে জিজ্ঞেস করলেন..
— নিল কোথায়?
— তিনি তো ঘুমাচ্ছেন।
— এখন কেন ঘুমাচ্ছে সে?
যা ডেকে নিয়ে আয় খাবার টাইম হয়েছে।
অনিচ্চা স্বত্তেও তাকে ডাকতে গেলাম।
গিয়ে দেখি তিনি শুয়ে আছেন।
আমি তার পাশে গিয়ে দাড়ালাম।
তার মুখের দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছি তিনি সজাগ না ঘুমিয়ে আছেন।কিন্তু কিছুই বুঝতে পারছি না। আর আরেকটা সমস্যা হচ্ছে আগেতো নীলাদ্রি দা বলে ডাকতাম কিন্তু তাকে কি বলে ডাকবো?
কোন উপায়ান্তর না পেয়ে বললাম…
— শুনছেন আপনাকে বড়মা খাবার খেতে ডাকছেন।
দুই-তিনবার ডাকবার পর যখন তিনি কোন সাড়া দিলেন না তাই ভাবলাম এবার গায়ে হাত দিয়ে ধাক্কা দিয়ে তুলবো।কিন্তু কাজটা ঠিক হবে কি না ভাববার আগেই বড়মার ডাক আবার কানে এলো। তাই হাতটা তার দিকে বাড়ালাম।যেই না হাতটা তার গায়ে স্পর্শ করবো।
ঠিক তখনই তিনি আমার হাতটা ধরে ফেললেন আর আমার দিকে তাকিয়ে বললেন…
— একা একটি ঘরে এই অবলা পুরুষটাকে পেয়ে তার সম্মানে হাত দিচ্ছিস?
হাত ধরায় এমনিতেই আমি অবাক হয়ে গেছি তার ওপর ওনার এমন কথায় আমি পুরো জমে গেছি।
আমার তাকানোর ভাব দেখেই তিনি ফিক করে হেসে দিলেন।ওনার এই হেয়ালিতে আমার খুব রাগ হলো।
তার হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি কিন্তু পারছিনা।
আমার চেষ্টা দেখে তিনি বললেন….
— বেশি কসরত করে লাভ নেই।
তবে মনে হচ্ছে পায়ের নুপুরের মতো তোর হাতের চুরিতেই ঝুনঝুনি লাগিয়ে দেবার ব্যবস্থা করতে হবে যাতে পায়ের সাথে সাথে হাতের কর্মকাণ্ডও টের পাই।
কি বলিস?
— বড়মা খেতে ডেকেছে।
সবাই একসাথে খাবার খেতে বসেছে।আমি আর বড়মা পরিবেশন করছি।
পরিবেশনের পর বড়মা বললেন..
— আর কাজ করতে হবে না,এবার খেতে বস..
— না বড়মা এখন খাবো না,একটু আগেই তো খেলাম।
— তাতে কি বসে পর।
কি আর করার সবার সাথে আবার খাবার খেতে হলো।
বিকেলে আমি রুমে বসে কাজ করছিলাম।
হঠাৎ কানে এলো তিনি আমাকে ডাকছেন…
— এই মেঘা শিগগিরই এদিকে আয়।
ওনার কথা শুনে নিচে গেলাম।আমাকে দেখেই তিনি বললেন….
— এই আজ না তোদের রেজাল্ট দেবার কথা না?
ওনার পাশেই নবু বসা ছিলো। আমরা দুজনেই দুজনার দিকে একবার তাকালাম।
তিনি আবার বললেন…
— এখন সার্ভার বিজি আছে একটু পর দেখে দেবো নে…
তখনই বড়মা তার রুম থেকে বেড়িয়ে এসেই নীলাদ্রির কান মলে দিলেন….
— মা,এটা কি করলে।ব্যথা পাইতো।
— কি করলাম মানে?
তোর আক্কেল কবে হবে শুনি।
— কেন?
— কেন আবার জিজ্ঞেস করছিস।কাল তোদের বিয়ে হয়েছে আর আজ এক একজন বৌকে তুই করে বলছে আর একজন স্বামী কে দাদা বলছে।
ফের যদি এমন ডাক শুনেছি না।
দুটোকেই পিটিয়ে বোবা বানিয়ে দেব।
বলেই বড়মা আবার রুমে চলে গেলেন।
আর আমরা একে অন্যের দিকে তাকিয়ে আবার নিজেদের কাজে মন দিলাম।
রাতে খাবারের সময় বড়বাবা বললেন…
— নবু আর বৌমার রেজাল্ট যেহেতু ভালোই হয়েছে তাই এবার আর কোন চিন্তা নেই।
তবে আমার একটা প্রস্তাব আছে বাবা( দাদুভাই)
— হ্যা বলেই ফেলো( দাদুভাই)
— আমি নিল আর মেঘার জন্য কুয়াকাটার টিকিট বুক করেছি।যাতে ওরা সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারে।
— হ্যা ভালো করেছো।এই প্রথম বার তুমি আমার ছেলের মতো কাজ করেছো তবে আমি এটাও জানি এটা তোমার বুদ্ধি না। এটা আমার বৌমার বুদ্ধি।
দাদুভাইয়ের কথায় বড়বাবার মুখটা চুপসে গেল।
এদিকে আমার আর ভালো লাগছে না।
বেড়াতে যাবার কোন ইচ্ছে এই মুহুর্তে আমার নেই।
কিন্তু শেষ মেশ ঠিক হলো আগামি কাল রাতে আমরা রওনা হবো।
রুমে এসে আমি চুপচাপ বসে আছি আর ভাবছি কিভাবে এই বেড়াতে যাবার হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়।।
নীলাদ্রি রুমে এসে আমার পাশে বসলেন।
—- কি চিন্তা করছিস এতো।
— কিছু না।।
— তুই কুয়াকাটা যেতে চাস না তাই তো।আমারও ইচ্ছে নেই তবে যেতে হবে। কারণ,
— কারণ….
— মুগ্ধ আর বৌমনি যাবে।আর ওরা কাল সকালেই এখানে আসবে।
— ও….
—- আর একটা কথা। মায়ের কথা কি ভাবলি.?
— কোন কথা?
— তুমি,তুমি কথা…..
ওনার কথায় আমি কপাল কুচকে তাকালাম।
— ওগো শুনছো…..
আমার না বড্ড ঘুম পেয়েছে।
বলেই তিনি হেসে দিলেন।
ঘুমের মধ্যেই মনে হলো কেউ খুব গম্ভীর কন্ঠে ভালোবেসে কানের কাছে মুখ এনে কিছু বলছে….
যার কথা বলার ফিসফিস বাতাসে আমি ক্রমশ কেপে উঠছি।আর শুনতে পারছি…
—- এই বোকা মেয়ে তুমি কেন বোঝো না,তোমাকে রাগাতে আমি খুব ভালোবাসি।রেগে যখন তুমি নাক,মুখ ফুলিয়ে আমার দিকে তাকাও আমার খুব ভালো লাগে।
তোমার আপনি বলায় আমার ভালো লাগে না।কবে তুমি আমাকে “তুমি” করে বলবে।
আচ্ছা তুমি জানো তুমি আমার মনের ভালোবাসার রাজ্যে # শ্যামারঙা রানী।
আর আমি সেই মহলের পিপাসু রাজা।
তোমার নেশায় প্রতি নিয়ত আমি ভয়ংকর ভাবে আসক্ত হচ্ছি।
বড্ড ভালো……
চলবে….
#শ্যামারঙা
লেখিকাঃ বৃষ্টি সরকার অধরা
পর্বঃ ৩৬
—- এই বোকা মেয়ে তুমি কেন বোঝো না,তোমাকে রাগাতে আমি খুব ভালোবাসি।রেগে যখন তুমি নাক,মুখ ফুলিয়ে আমার দিকে তাকাও আমার খুব ভালো লাগে।
তোমার আপনি বলায় আমার ভালো লাগে না।কবে তুমি আমাকে “তুমি” করে বলবে।
আচ্ছা তুমি জানো তুমি আমার মনের ভালোবাসার রাজ্যে # শ্যামারঙা রানী।
আর আমি সেই মহলের পিপাসু রাজা।
তোমার নেশায় প্রতি নিয়ত আমি ভয়ংকর ভাবে আসক্ত হচ্ছি।
বড্ড ভালো……
সকালে ঘুম ভাংলো দরজায় আঘাতের শব্দে।
শব্দ শুনে মনে হচ্ছে যেন ডাকাত পড়েছে বাড়িতে।
বিরক্ত নিয়ে চোখ খুললাম।
কিন্তু চোখ খোলার পর পাশ ফিরতেই দেখি আমার পাশে নীলাদ্রি ঘুমিয়ে আছেন।
তাকে দেখে লাফ দিয়ে বিছানা ছেড়ে নিজেকে কোন মতে পরিপাটি করে দরজা খুললাম।
সাথে সাথেই রুমের দরজায় হামলাকারিরা আমাকে আক্রমণ করে রুমে প্রবেশ করে ফেলেছে।
হামলাকারিদের দেখে চোখ আমার কপালে। এত সকালে যশোর থেকে তারা খুলনা অব্দি চলে এসেছে।
ভাবা যায় এগুলো।।।।।
আমার সামনে কনাদি আর মহিমা বৌমনি মানে দিদিভাই দাঁড়িয়ে আছে মুখে দুষ্টু ভাব নিয়ে আর ওদিকে বিছানায় মুগ্ধ দা মানে দাদাভাই আর অয়ন দা মানে জিজু
নীলাদ্রি কে নিয়ে মজা করছেন।
নীলাদ্রি যদিও তাদের সাথে সমান তালে মজা করছেন কিন্তু আমার অস্বস্তি হচ্ছে।
তাদের মজার ছলে বলা কথা গুলো আমার কান ক্রমশ গরম করে দিচ্ছে।
কিন্তু ভদ্রতার খাতিরে চলে যেতেও পারছি না।
তখন ঘরে আগমন ঘটলো বড়মার…..
—- এই তোরা এখনও এই ঘরে কী করিস হ্যা??
তোদের না বিশ্রাম নিতে বললাম।
—- না গো মামনি এখন তো রেষ্ট করলে হবে না।
এখন তো এদের ক্লাস নিতে হবে।(দিদিভাই)
—ওই সব ক্লাস নেওয়ার অনেক টাইম পাবি যা এখন। মেঘা ফ্রেশ হয়ে নিচে আয়।
বড়োমার কথা মতো সবাই চলে গেল।
আমিও আলমারি থেকে কাপড় বের করে ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে যাচ্ছি। তখনই শুনতে পেলাম।
— আমি বুঝতে পেরেছিলাম তোমার ওদের কথায়, অস্বস্তি হচ্ছে তাই মাকে মেসেজ করেছিলাম।
ওনার কথায় আমি যেমন অবাক হয়েছি তেমন “তুমি”
ডাকটা শুনে এক অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করছিলো।।
ফ্রেশ হয়ে নিচে গিয়ে দেখি সবাই মিলে আড্ডা দিচ্ছে
আর পলা মাসি ( এবাড়িতে কাজ করে) খাবার টেবিলে সাজাচ্ছেন।
আমাকে দেখে বড়মা বললেন..
— এদিকে আয়
বড়মা আমাকে আর নীলাদ্রি একসাথে পাশাপাশি বসিয়ে কিছু উপহার দিলেন।
আর বললেন…
— মেঘা এগুলো তোর বাবা,মায়ের মানে ওবাড়িতে যারা আছেন তাদের সবার জন্য।
একটু পর তোরা দুজন ওবাড়িতে যাবি আর বিকেলে শপিং য়ে যাবি কারণ রাতে তোদের কুয়াকাটা যেতে হবে।।
কুয়াকাটা যাবার কথা শুনে আমার মনটা আবার খারাপ হয়ে গেল।তাই বললাম…
— এখন কুয়াকাটা না গেলে হয় না।
— না হয় না,
যেতে বলেছি যেতে হবে।
তোরা ফিরে আসার পর অর্পন এর পরিবার কে আসতে বলবো।
যদি তারা রাজি থাকে তাহলে এই বন্ধের মধ্যেই ওদের বিয়েটাও দিয়ে দিবো।
অনিচ্ছা সত্ত্বেও নিজের বাড়িতে গেলাম সেখানেও সবাই আমাদের অনেক আদর করলো।
সারাদিন সেখানে থাকার পর বিকেলে যখন নিজের রুম থেকে আমার কাপড় গুলো প্যাকিং করে নিয়ে বের হলাম।
তখন নিলাদ্রি বললো….
— এগুলো কিয়াএর ব্যাগ?
— আমার কাপড়ের মানে যে কাপড় গুলো এখানে ছিলো আর মা কিছু নতুন উপহার দিয়েছে।
— উপহার গুলো নিলে নিতে পারো বাকি গুলো নেক্যা যাবে না।
— কেন?
—- কারণ যখন তুমি।এখানে এসে থাকবে তখন তো এগুলো লাগবে…
ওনার কথা মতো কোন কাপড় না নিয়েই সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে শপিংয়ে গেলাম।
রাতে তৈরি হয়ে আমরা যারা মানে দাদাভাই,দিদিভাই,কনাদি,জিজু আর উনি এবং আমি সবাই বাস স্টপে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছি।
এমনিতেই যেতে ইচ্ছে করছে না তারওপর বাস জার্নি…..
যেখানে বাস দেখলেই আমার গা গোলায়।
সবাই যখন বাসে উঠতে যাবো পাশে তাকিয়ে দেখি নীলাদ্রি পাশে নেই।
আশেপাশে তাকিয়ে খুজলাম কিন্তু তার দেখা পেলাম না।
এদিকে বাকিরা বাসে উঠে গেছে শুধু আমি একা বাইরে দাঁড়িয়ে আছি।
বেশ কিছু সময় পর যখন বাস ছেড়ে দেওয়ার টাইম হোলো আমি গিয়ে সিটে গিয়ে বসলাম আর জানালা দিয়ে তাকে দেখার চেষ্টা করছি ঠিক তখনই পাশে কেউ এসে বসলেন।
পাশে না তাকিয়েই বুঝতে পারছি তিনি কে?
চলবে…
#শ্যামারঙা
লেখিকাঃ বৃষ্টি সরকার অধরা
পর্বঃ ৩৭
বেশ কিছু সময় পর যখন বাস ছেড়ে দেওয়ার টাইম হোলো আমি গিয়ে সিটে গিয়ে বসলাম আর জানালা দিয়ে তাকে দেখার চেষ্টা করছি ঠিক তখনই পাশে কেউ এসে বসলেন।
পাশে না তাকিয়েই বুঝতে পারছি তিনি কে?
তিনি বসার সাথে সাথেই বাস ছেড়ে দিল।
তিনি যে খুব ব্যস্ত ভাবে দেরি করে এসেছেন সেটা তার হাপানো দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
একটু পর তিনি আমাকে ডেকে বললেন…
— এগুলো নাও
আমি রাগান্বিত ভাবে তার দিকে তাকিয়ে বললাম..
—লাগবেনা আমার কিছু। আমি কি চেয়েছি আপনার কাছে.?
— এভাবে রাগ করছো কেন?
— আমি কারোর ওপর রাগ করি না আর করবো না।
— রাগ করলেও সমস্যা নেই। তোমার ওই রাগী চেহারা কিন্তু…..
— কি….(যদিও আমার রাতের কথা মনে পড়ে গিয়েছে..)
— কিছু না।
এগুলো নাও,কিছু শুকনো খাবার আছে তোমার পছন্দের।
তখন কনাদি বলে উঠলো…
— খাবার দিস আর অন্যকিছু দিস সমস্যা নেই। কিন্তু বেচারিকে আগের বারের মতো ঘুমের মেডিসিন দিস না।
তাহলে আগের বারের মতো এবারেও মেয়েটার জার্নিটাই মাটি হয়ে যাবে…..
—- আরে না না।
সেবার তো ও বোকার মতো একটার জায়গায় দুটো মেডিসিন খেয়েছিলো।
এতে আমার কী দোষ ছিলো বলো???
বলেই তারা সবাই একত্রে হেসে উঠলো আর আমি অবাক হয়ে ওদের কথা শুনে তার হাসি মাখামুখের দিকে তাকিয়ে আছি।
চোখে চোখ পড়তেই তিনি আস্তে করে বললেন…..
—- সেবার সম্পর্ক অন্য ছিলো এবারও কিন্তু আলাদা।তাই জার্নিটা এনজয় করো।
খারাপ লাগলে চাটনি,আচার সব পাবে খাবার জন প্যাকেটে।
কেন জানি না ওনার কথায় রাগ গলে জল হয়ে গেলো। তিনি আবার বললেন….
—- ঘুম পেলে কাধে মাথা রেখো না হলে ব্যথা পাবে…
সকালে বাস থেকে নেমে হোটেলে গেলাম।
তবে এটা আগের বারের হোটেল নয়।
অন আরেকটি।
ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে সবাই মিলে মজা করতে করতে সাগর পাড়ে গেলাম।
সবাই এক সাথে হাটছি আর গল্প করছি।
হঠাৎ ই কেউ একজন “নীল ” বলে চেচিয়ে উঠলো…
প্রথমে ভাবলাম অন্যকাউকে হয়তো ডাকছে তাই পাত্তা না দিয়ে মজা করতে করতে হেটে চলে যাচ্ছিলাম আমরা।
তখনই কেউ খুব দ্রুত এসে নীলাদ্রি কে সবার সামনে কোন ভনিতা ছাড়াই জড়িয়ে ধরলো…..
তাদের মিলনাভাব দেখে মনে হচ্ছে তারা একে অপরের খুব পরিচিত।
আমি সেখান থেকে হোটেলে চলে এলাম।মনটা খুব খারাপ হয়ে আছে। খুব রাগ হচ্ছে।
কে এই মেয়েটি?
আর ওনাকেই বা এভাবে জড়িয়ে ধরলেন কেন?
তাও আবার পাবলিক প্লেসে।
আর তিনিও কেন কিছু বললেন না?
তাকে ওভাবে ধরার জন্য….
খুব মাথা ব্যথা করছে তাই চুপচাপ শুয়ে আছি।
যতই ভাবছি ওনার আর মেয়েটির কথা ভাববো না কিন্তু ততোই তাদের ছবি আমার চোখের সামনে ভেসে উঠছে…
নিজেকে আজ খুব একা লাগছে।
না চাইতেও এই কয়টা দিনে আমার সাথে কত কি হয়ে গেল কিন্তু সব কিছুকে হার মানালো আজকেরতার ব্যবহার।
সমুদ্র পাড়ে যখন তিনি মেয়েটির সাথে সবার পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিলেন কই তিনি তো তখন আমার সাথে তার বা তার সাথে আমার পরিচয়টা করিয়ে দিলেন না।
কিন্তু কেন?
চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ে বালিশ ভিজে যাচ্ছে আর সেই সাথে মাথা ব্যথাও বাড়ছে প্রচন্ড গতিতে।
চোখ-মুখ – কপাল সব কিছু খুব ভার লাগছে। চোখ দুটো খুব জ্বালা করছে।
তখনই মনে হলো কপালে ভেজা কিছুর স্পর্শ পেলাম।চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি নীলাদ্রি আমার কপালে জল-পট্টি দিচ্ছেন।
আমাকে তাকাতে দেখে তিনি কাকে যেন ফোন করলেন।আমি চুপচাপ শুয়ে আছি।
ভালো লাগছে না কিছু মাথাটা খুব ব্যথা করছে।
উনি কপাল থেকে কাপড়টা নিয়ে আবার ভিজিয়ে কপালে দিলেন।তারপর রুমের দরোজা ওপেন করলেন।
তখনই সবাই একসাথে রুমে প্রবেশ করলেন আর তাদের সাথে সেই মেয়েটিও।
মেয়েটি রুমে ঢুকেই নীলাদ্রির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন নীলাদ্রি ও তার হাসি দেখে হাসি দিলেন।
তাদের মুখে হাসি কিন্তু আমার অন্তরটা পুড়ে যাচ্ছে।
মেয়েটি এসে আমার পাশে বসে জ্বর পরিমাপ করলেন এবং সেই সাথে ঘরোয়া কিছু পরিক্ষা করে বললেন ঠান্ডা জনিত সমস্যার কারণে আমার মনে হচ্ছে এবং সে কিছু মেডিসিনও দিলো।
তার সকল ব্যবহার দেখে বুঝলাম তিনি একজন ডাক্তার।
এরপর সবাই একে একে আস্তে আস্তে রুম থেকে চলে গেল।
অসুস্থতা নিয়েই কুয়াকাটাতে তিন দিন কাটিয়ে খুলনা ফিরছি।
এই কয়দিনে না তিনি আমার সাথে একবার কথা বলার চেষ্টা করেছেন না আমি বলেছি।
বাড়ি ফিরে সকালে জানতে পারলাম।
আগামীকাল নাকি অর্পনদা দের বাড়ির থেকে লোকজন আসবে।
সবাই খুব খুশি।তবে সবার মতো আমাদের দুজনের খুশিটা অন্তরের কোন ছূতে পারছে না।
আর সেই ছুতে না পারাটা আমারা ছাড়া কারোর বোঝার ক্ষমতা নেই।
সবার সামনে আমরা আগের মতো হলেও আমাদের ভেতরের খবরটের পাবার সাধ্য কারোর নেই।
কিন্তু আমি এটা বুঝতে পারছি না।আমিতো ওই মেয়েটিকে নিয়ে তার সাথে আভিমান করেছি তাই কথা বলছি না।
উনি কি নিয়ে অভিমান করেছেন যে কথা বললেন না।
বিকেলে বাড়ির সবাই ব্যস্ত। আমি কোন কাজ না পেয়ে রুমে গেলাম।গিয়ে দেখি মশাই খুব সুন্দর কতে সাজছেন।
গায়ে কালো শার্ট, কালো জিন্স প্যান্ট, হাতে কালো চেইনের ঘড়ি।চুল গুলো সুন্দর কতে উল্টে রাখা।
ওনাকে এই ভাবে দেখে আমার সেই প্রথম দিনের কথা মনে পড়ে গেল।আজও ওনাকে ঠিক সেই একই রকম লাগছে দেখতে।
সেদিনের মতো আজও চোখ ফেরাতে পারছি না।
হঠাৎ তার হাতের তুড়ির শব্দে আমার ঘোর কাটলো। আমি তাকাতেই উনি বললেন…
— এতভাবা ভাবি করতে হলে সারাবাড়িতে অনেক জায়গা আছে।আএখানে গেলে ভালো হয়।
—- কেন যাবো,রুমটা কি আপনার একার।
— রুমটা একার না ঠিক আছে।কিন্তু দরজা টাও তো কারোর একার নয়।
— এভাবে সেজে কোথায় যাচ্ছেন?
— আমি কাওকে বলতে বাধ্য নই।
— অবশ্যই বাধ্য…
—- কেন?
— আমি আপনার স্ত্রী তাই….
— ও আচ্ছা,,,
তাহলে স্ত্রী তাই বলে যাচ্ছি…
আমি ডেটে যাচ্ছি..
সুন্দর লাগছে না আমায়?
থাক বলতে হবে না আমি জানি…
বলেই একটি চোখ টিপ্পনী দিয়ে ঠোঁটে মুচকি হাসি ঝুলিয়ে তিনি পাশ কাটিয়ে চলে গেলেন।
আর আমি অবাক আর রাগ নিয়ে সেখানেই ঠায় দাঁড়িয়ে আছি….
চলবে…