শ্যামারঙা,পর্ব:৩৮+৩৯+৪০

#শ্যামারঙা
লেখিকাঃ বৃষ্টি সরকার অধরা
পর্বঃ ৩৮

বলেই একটি চোখ টিপ্পনী দিয়ে ঠোঁটে মুচকি হাসি ঝুলিয়ে তিনি পাশ কাটিয়ে চলে গেলেন।
আর আমি অবাক আর রাগ নিয়ে সেখানেই ঠায় দাঁড়িয়ে আছি….

রাতে শুয়ে আছি।কিছুই।ভালো লাগছেনা।
মনে শুধু একটা কথাই ঘুড়পাক করছে।
তিনি ইদানীং আমার সাথে এমন উদ্ভট আচরণ কেন করছেন?
তার যদি আমাকে পছন্দই নাই থাকে তাহলে বিয়ে কেন করলেন আমাকে?
আমি না হয় জানতাম না বিয়ের ব্যাপারে কোন কথা কিন্তু তিনি তো বলেছিলেন তিনি জানতেন তাহলে কেন বিয়ে করেছিলেন আমাকে?
নাকি চাপে পড়ে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছিলেন।
তবে আমার জানামতে তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে কেউ কোন কিছু করতে পারে না।
তাহলে যদি সে নিজের ইচ্ছেতে এই বিয়ে করে থাকেন তাহলে আমার সাথে এমন ব্যবহার কেন করছেন??

তখনই রুমের দরোজায় শব্দ হলো।
আমি শব্দ পেয়ে বুঝে গেলাম নীলাদ্রি রুমে এসেছেন।
তাই না ঘুমিয়ে থেকেও সেখানেই ঘুমের ভান ধরে শুয়ে রইলাম।
তিনি রুমে এসে আলমারি থেকে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলেন।
কিছু সময় পর সেখান থেকে বেরিয়ে বারান্দায় গেলেন তারপর সোফায় কিছু সময় বসলেন।
সেখানে বসে একমনে কি যেন ভাবছিলেন।

তারপর আবার রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন।
তার কর্মকাণ্ডে আমি হতাশ। রুম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কারনটা আমি বুঝতে পারলাম না।

একটু পর রুম খোলার শব্দ হলো তার মানে তিনি রুমে এসেছেন।
তিনি রুমে এসে টি- টেবিলে কিছু রাখলেন।
তারপর খাটের ওপর এসে বসলেন আমার পাশে।
ওনার মুখটা বেশ গম্ভীর আর রাগী লাগছে।

আমি চোখ সামান্য খোলা রেখে ওনার দিকে তাকিয়ে আছি আর তিনি সামনের দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে আছেন।

হঠাৎই তিনি ডেকে উঠলেন….

—- মেঘা….

ওনার ডাক শুনে আমি কেপে উঠলাম।তিনি কি বুঝে গিয়েছেন আমি ঘুমিয়ে নেই।
জেগে আছি…..

একটু পর তিনি আবার ডাক দিলেন খুব নরম সুরে…

— মেঘা…
আমি জানি তুমি অভিমান করেছো।
তোমার যত রাগ, অভিমান আছে তুমি।আমার সাথে দেখাও।কিন্তু এভাবে না খেয়ে নিজেকে কষ্ট দেওয়ার কোন মানে হয় না।
মেঘা আমি কিন্তু জানি তুমি ঘুমাওনি।
জেগে আছো।
তাই তাড়াতাড়ি উঠে পরো।
বলেই তিনি থামলেন।
আমার আমি তখনও চোখ বুজে ঘুমের ভান ধরে শুয়ে আছি আর ভাবছি কি করবো আমি এখন?
উঠবো নাকি এভাবেই শুয়ে থাকবো।
হয়তো উনি না জেনেই আন্দাজে ঢিল মারছেন যে আমি জেগে আছি….

তবে উনি কি করে জানলেন আমি না খেয়ে আছি?
কে বললো ওনাকে এই কথা?
তাহলে কি বড়োমা বলেছেন।
কিন্তু কখন বললেন আর মা জানলেনই বা কি করে।
তিনি তো আজ বিকেলেই যশোর গিয়েছেন।
সকালে আসবেন

এসব ভাবতে ভাবতে তিনি আবার আমাকে ডাক দিলেন।
এবারেও আমি কোন সারা না দিয়েই আগের মতো শুয়ে রইলাম…

হঠাৎই তিনি আমার হাত ধরে হ্যাচকা টান দিয়ে শোয়া থেকে উঠিয়ে আমাকে বসিয়ে দিলেন।
ঘটনা দ্রুত হওয়ায় আমি ভয় পেয়ে অবাক চোখে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
তার চোখ রক্তের মতো লাল হয়ে আছে কিন্তু মুখের ভাব স্বাভাবিক।

আমার দিকে তাকিয়ে তিনি স্বাভাবিক ভাবে বললেন….

— সারাদিন খাওনি কেন?

—….

— চুপকরে থেকো না প্লিজ…

— এমনই

— এটা কোন উত্তর না

— ইচ্ছে করে নি।

— কেন করেনি?

আমি ওনার দিকে তাকালাম।
তিনি আমাকে তার দিকে তাকাতে দেখে বললেন…..

— এত অভিমান কেন তোর?
তুমি জানিস তোর সামান্য কষ্ট আমাকে কত কষ্ট দেয়।
কবে বুঝবি তুই।
আমার ভালো লাগে তোর সামান্য রাগ আর অভিমান মাখা মুখ। তাই তো মজা করি তোর সাথে।
আর তুই কিনা অবুঝ বাচ্চাদের মতো কঠোর হয়ে রাগ করিস…..
জানিস এতে আমার কতো কষ্ট হয়.??

—- এসব ঢংয়ের কথা আমার সাথে মোটেও বলবেন না।
আমি রাগ করি বা অভিমান করি এতে আপনার কি?
আপনি যান না আপনার ওই জড়িয়ে ধরা ডাক্তারনীর কাছে।
তারপর আবার জান না ডেটে যার সাথে খুশি তার সাথে……

—- এত সন্দেহ করিস আমাকে?

— আমি কে যে আপনাকে সন্দেহ করবো?

— কেন তুই জানিস না তুই আমার কে?
নাকি ভুলে গেছিস।
যাই হোক তোর আর কষ্ট করে মনে করতে হবে না।
আমিই বলে দিচ্ছি তুই আমার কে….

বলেই তিনি আমার দিকে এগিয়ে এসে কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বললেন….

—- তুই আমার ভালোবাসার # শ্যামারঙা বৌ…..

ওনার কথা শুনে আমার শরীর মন কেপে উঠলো।
ওনার চোখ- মুখে দুষ্টুমির হাসি।
আমি হাসবো নাকি রাগ হবো বুঝতে না পেরে বিছানা থেকে নেমে বারান্দায় চলে গেলাম।
ওনার এই কাজ আমাকে খুব ভাবাচ্ছে।
উনি কি সত্যিই আমাকে মন থেকে বৌ বললেন নাকি সবটা আমার মন রক্ষার জন্য।

তখনই পিছন থেকে তিনি বলে উঠলেন…

— তুই আমার মনের কোনে থাকা সেই সুপ্ত বাসনা।
যে বাসনাকে আমি একান্ত নিজের করে রেখেছি।
জানিস এই মনের কোনে তোর স্থানটা কিন্তু আজ থেকে তৈরি হয় নি।
সেই।দিন থেকে তৈরি হয়ে ছিলো।
যখন তুই রাগ করে অপমানিত হয়ে আমার বাড়ি থেকে চলে গিয়েছিলি পিসিমনির জন্য।
সত্যি তখনও আমি জানতাম না তুই আমার কে?

তবে তোর অনুপস্থিতির ওই একবছর আমাকে খুব পিড়া দিয়েছিলো।
তারপর যখন তুই পরের বছর পিসিমনির অপমানের জবাব দিতে এবাড়িতে এসেছিলি আমি খুব খুশি হয়েছিলাম।
তখন কেন জানি না তোকে সামান্য চোখের দেখা দেখেই আমি শান্তি পেতাম।

কিন্তু আমার ভালোলাগা সেদিন শেষ হতে বসে ছিল যেদিন সবার সামনে মুগ্ধ তোকে তার ভালোবাসার প্রস্তাব দিয়েছিলো।
আমি পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম তোর চিন্তায়।
যদি তুই ওর প্রস্তাব মেনে নিস…..

আমি দিন দিন অসুস্থ হয়ে যাচ্ছিলাম তোর কারণে কিন্তু কেন এমন হচ্ছে বুঝতে পারছিলাম না।
তোর নেশায় কেন আমি এত আকৃষ্ট হচ্ছি বুঝতে পারছি না।

তবে আমার ভালোলাগা পুরোপুরি বোঝার আগেই পিসিমনির কারণে তোর প্রতি আমার রাগ হতে লাগলো।
যে রাগের কারনে আমি তোর নামটা শুনতে পারতাম না।।।

চলবে…..

#শ্যামারঙা
লেখিকাঃ বৃষ্টি সরকার অধরা
পর্বঃ ৩৯

তবে আমার ভালোলাগা পুরোপুরি বোঝার আগেই পিসিমনির কারণে তোর প্রতি আমার রাগ হতে লাগলো।
যে রাগের কারনে আমি তোর নামটা শুনতে পারতাম না।।।

আমি অবাক হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি।
এ লোকতো আমাকেও হার মানালো।
তিনি আমাকে এত আগের থেকে পছন্দ করেন কই আমিতো কখনও টের পাইনি।
কখনো তো তার চোখে আমার জন্য অন্যকিছু দেখিনি।
কি সাংঘাতিক লোকরে বাবা।

আচ্ছা উনি যে বললেন আমার প্রতি রাগ হতো কিন্তু কেন?
আর তিনি এখন কোন কথা বলছেন না কেন?
চুপ করে আছেন কেন এমন ভাবে।
তিনি কি আমার ওপর রাগ করেছেন?
কিন্তু কেন রাগ করবেন?
আমি কি ওনাকে জিজ্ঞেস করবো কেন আমার প্রতি রাগ করেছিলেন।

অনেক দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিলাম যাই হয়ে যাক না কেন কারণটা জিজ্ঞেস করবো.….
তাই আকাশের থেকে চোখ সরিয়ে ওনার দিকে তাকালাম…।
কিন্তু তাকিয়ে আমি টাস্কি খেয়ে গেলাম।
তিনি চুপ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।
তার তাকানোতে গভীর কিছু রয়েছে।
তার চোখে পলক পড়ছে না,
একমনে, একনজরে গভীরভাবে তিনি আমাকে দর্শন করছেন।
তার ওই চাহনি অনেক গভীর। যার গভীরতা নির্নয় করতে গেলে আমি সেখানেই হারিয়ে যাবো।
সেটা এখন এই মুহূর্তে আমি চাই না।
তাই ওনাকে ধাক্কা দিয়ে সজ্ঞানে ফিরিয়ে আনলাম।
ধাক্কা খেয়ে তিনি মুচকি হেসে তাকিয়ে বললেন…..

—- কিছু বলবে….

—- হুম… বলবো

—- শোনার জন্য তো আমি ব্যাকুল হয়ে আছি।

—- রাগ হয়েছিল কেন আমার প্রতি?

—- এসব কথা এখন না বলি।

—- বলতে হবে।
আমি শুনবো

—- যদি না বলি।

—- বেশি কথা বলবেন না কিন্তু বলে দিচ্ছি।
যা বলছি তার উত্তর দিন।

—- বাহ…
বৌ তো।দেখি আমার তার আগের ফর্মে চলে এসেছে।

—- কথা ঘুরাবেন না কিন্তু।

— আচ্ছা বলছি,
তখন একেই আমার মন মেজাজ ভালো থাকতো না তার ওপর পিসিমনি বারবার আমার কাছে এসে তোর নামে বদনাম করতো।
এক পর্যায়ে তোর প্রতি মন বিষাক্ত হয়ে উঠেছিল। তোর নাম শুনলেই রাগ হতো খুব।
তবে তুই যখন মুগ্ধকে না করে দিয়েছিলি সেদিন পিসিমনির থেকেও আমি বেশি,অনেক বেশি খুশি হয়ে ছিলাম।
সেদিন সারারাত আনন্দতে আমার ঘুম হয়নি।
আর তারপর তো আরো সুন্দর একটা প্রস্তাব পেলাম।তোকে পড়ানোর।

— সুন্দর প্রস্তাব…
কিন্তু আমিতো শুনেছিলাম। আপনি নাকি আমাকে পড়াতে চান নি।
আমার মা,বাবা,বড়মা- বাবা আর দাদুভাইয়ের চাপে পড়াতে রাজি হয়েছিলেন।কারণ আপনি নাকি গাধীদের পড়ান না।

— পড়াই না তো।
আর তুই তো সত্যিই গাধী।

— কি….

—-তাছাড়া আর কি।
কোন প্রস্তাবে সহজে রাজি হলে যে দাম থাকে না। এটা জানিস না।
যদিও তারা আমাকে এতবার না বললেও আমি তোকে বলাতাম।

— ও

— হ্যা,,,
এখন কি ঘুমাবেন না কি সারারাত চন্দ্রবিলাস করবেন।
যদি বলেন তো এখানেই বিছানা করে শুয়ে পড়ি।
তাহলে কিন্তু চন্দ্রশয্যা হয়ে যাবে।

ওনার কথার উত্তর না দিয়ে আমি রুমে চলে এলাম।

সকাল থেকেই বাড়িতে কাজের ধুম পড়ে গেছে।দুপুর নাগাদ সবাই কে সব কাজ শেষ করতে হবে কারণ বিকেলে অর্পন দা দের বাড়ির লোক আসবে পাকা কথা বলতে।

সারাদিন কাজের চাপে রুমে যাবার সময় পাইনি একবারও। নীলাদ্রি আমাকে দুবার রুমে ডেকেছিলেন।
“আসছি” বলে আর যেতে পারেনি।
তুই একটু চিন্তা হচ্ছে। রুমে গেলে না আবার ঝাড়ি দেয় তো আজ আমিও ঝাড়ি দেব।
রুমেগিয়ে দেখি মহাশয় সোফায় বসে ঝিমুচ্ছেন।

— কি হলো আপনি ঝিমুচ্ছেন কেন?
সারারাত ঘুমাননি নাকি জেগেছিলেন।

উনি চোখ মেলে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন

— সারারাত জেগে থাকার কোন কারণ হয়নি।

— আমাকে ডেকেছিলেন কেন?

— যখন ডেকেছিলাম তখন আসিসনি কেন?

— কাজ করছিলাম

— কি কাজ করিস যে আমি ডাকলে আসতে পারিস না।

— কি কাজ মানে?
আজ নবুর বিয়ের পাকা কথা হবে।বাড়িতে কি কাজ কম নাকি।

— খেয়েছিলি।

— হু।
বড়মা খাইয়ে দিয়েছিলো।

— কী?
এত বড় মেয়ে কে আমার মা খাইয়ে দিয়েছে।কই আমাদের তো কখনো খাইয়ে দেয় না।

— আপনাদের কেন দেবে।আপনারা কি কাজ করেন নাকি।আপনারা বোন সারাদিন ফোন দিয়ে পরে থাকে আর আপনি কি যে এক চাকরি করেন বুঝিনা।
এত ছুটি কই থেকে আসে আপনার।

— সেটা তোর না জানলেও চলবে।
এটা নে..

—- কি?

— এত কথা বলিস কেন?
আগে না হয় কিছু দিলে প্রশ্ন করলে মানতাম কিন্তু এখন তো আমি তোর স্বামী কিছু দেওয়ার অধিকার তো আছে আমার।

— আহা,রাগ করেন কেন।
দিন…

একটু পর অর্পন দা এর বাড়ির লোকজন চলে আসবে আর তাদেত আনতে গেছেন নীলাদ্রি, দাদাভাই আর মিরাজ ভাই।মনিরা আসেন নি ওকে অনেক মিস করছি। যদিও ওর না আসার মস্ত বড় একটা কারণ আছে আর সেটা হলো ও মা হতে চলেছে।

নবুকে তৈরি করিয়ে রুমে এলাম যদিও পুরোটা সাজিয়ে আসিনি।বাকিটা দিদিভাই আর কনাদি করবে।আর আমাকে জোর করে রুমে পাঠিয়ে দিয়েছে তৈরি হয়ে নেবার জন্য।না হলে নাকি নীলাদ্রি আমাকে বকবে।

দুপুরে তার দেওয়া নীল শাড়ি টা পরে সিথিতে সিদুর, কপালে টিপ আর চুল খোপা করে তাতে গাজরা লাগিয়ে নিয়েছি।
নিজেকে গুছিয়ে পিছনে ফিরে তাকিয়ে দেখি নীলাদ্রি দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।

আমাকে তাকাতে দেখে বললেন..

— কাজল দিলি না।

— কেন

— এই সাজে সুন্দর লাগছে তবে কাজলের অভাবটা বড্ড লাগছে।
দারা আমি দিয়ে দিচ্ছি।
বলেই তিনি কাজল দিয়ে দিলেন আমার চোখে।
এই প্রথম তিনি আমার এত কাছে এলেন।
বড্ড অন্যরকম লাগছে।

আমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি আর তিনি সামনে দাঁড়িয়ে আছেন।

— কি রে কথা বলছিস না কেন?
এবার আয়নাতে দেখ কেমন লাগছে।

আমি কোনমতে মুখ তুলে আয়নাতে তাকাতেই তিনি আমাকে তার দিকে ঘুড়িয়ে সাথে সাথেই আমার কপালে উষ্ণ স্পর্শ দিলেন….

চলবে….

#শ্যামারঙা
লেখিকাঃ বৃষ্টি সরকার অধরা
পর্বঃ ৪০

আমি কোনমতে মুখ তুলে আয়নাতে তাকাতেই তিনি আমাকে তার দিকে ঘুড়িয়ে সাথে সাথেই আমার কপালে উষ্ণ স্পর্শ দিলেন….

আমি অবাক হয়ে সেখানেই দাড়িয়ে আছি আর তিনি হাসছেন।
কি বলবো বুঝতে পারছি না ।
আমি রাগ করে রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম।
সবাই কথা বলছেন।
অর্পন দার পরিবারের সবাই খুব ভালো।
তারাও চান বিয়েটা যেন তাড়াতাড়ি হয়ে যায়।

বিয়ের কথা পাকা হবার পর সবাই মিলে আড্ডা দিচ্ছি।
আড্ডার সবটুকু সময় নীলাদ্রি আমাকে খুব ভালো বেসে তুমি করে সম্বোধন করেছেন।

আজ রাতে অর্পন দা রা এই বাড়িতে থাকবেন।
আর বিয়ের আগে ছেলে- মেয়েদের একই বাড়িতে থাকতে হয় না বলে ঠিক হলো। আমি, নীলাদ্রি আর নবু আমাদের বাড়িতে গিয়ে থাকবো।

রাতে আমারা তিনজন আমাদের বাড়িতে চলে এলাম।
সবার সাথে কথা বলার পর খাওয়া দাওয়া সেরে রাতে ঘুমানোর জন্য রুমে গেলাম।
অনেক দিন পর নিজের রুমে গিয়ে মনটা খুব ভালো হয়ে গেল।
সেই চিরচেনা স্থান, চিরচেনা ঘ্রাণ, চিরচেনা সবকিছু।
সবকিছু ছুয়ে আনেক আনন্দ হচ্ছে।
খুব কান্না পাচ্ছে। তবে কেন জানিনা……

চোখ মুছে পিছনে ফিরতেই ধাক্কা খেলাম নীলাদ্রির সাথে।
আমার চোখে জল দেখে তিনি বললেন……

— কি হয়েছে কাদছিস কেন?

ওনার কথায় আমি ওনার দিকে তাকালাম।

— কি হলো বল..

— কিছু না।

—- আমাকে বিয়ে করে কি তুই ভুল করেছিস?

—- আমি তো বিয়ে করি নি।

— তাহলে

— আমাকে বিয়ে দেওয়া হয়েছে আর বিয়ে করা হয়েছে।

—- তাহলে কী বলতে চাইছিস তুই আমাকে ভালোবাসিস না?

—- আমার টা যখন আগে জানতে চাননি তাই এখন না জানলেও চলবে।

— তুই না বাসলেও আমি।কিন্তু বাসি।

— তার নমুনা তো দেখতেই পাচ্ছি

— মানে

— মানে টা তো।পরিস্কার

— হেয়ালি করিস না

— আমি হেয়ালি করি না।

—তাহলে…

— তাহলে আবার কী।
সবার সামনে “তুমি” আর অন্দরমহলে” তুই “…

আমার কথায় তিনি অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালেন।
তারপর হো হো করে জোরে হেসে উঠলেন।
আর আমি কপাল কুচকে ওনার দিকে তাকালাম…

— এই জন্য মহারানীর এতো রাগ।

— আমি রাগ করি না..

— তোকে রাগ করার চান্স দিলে তো করবি…

— সরুন তো বারান্দায় যাবো।

— কেন?

— সেখানে আমার কাজ আছে।

বারান্দায় এসে মন আরও ভালো হয়ে গেল আর আনন্দতে ভরে গেল।
আমার সাদা গোলাপ গাছে দুটো ফুল ফুটেছে আর বেশ কিছু কলি এসেছে।

সকালে ঘুম থেকে উঠে মায়ের হাতে হাতে খাবার বানালাম। মা ও আজ।অনেক খুশি।
কারণ তার অলস, অকর্মঠো মেয়ে এখন সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে ঘরের কাজ করছে।

মায়ের সাথে কাজ শেষ করে আমি কফি বানিয়ে রুমে গেলাম।
বিয়ের পর তাকে আজ প্রথম কফি বানিয়ে খাওয়াবো।
এতদিন তো ওই বাড়িতে সেই সুযোগটা পাইনি।
তাই আজ কাজে লাগাবো।

রুমে গিয়ে দেখি মহাশয় ঘুমাচ্ছেন।
বেড সাইড টেবিলে কফি মগটা রেখে বিছানায় তার পাশে গিয়ে বসলাম।
তার ঘুমন্ত মুখটা আজ প্রথমবার দেখছি।
এতদিন দেখার সাধ্য আমার হয়নি।
কারণ ওই বাড়িতে প্রতিদিন তিনি আমার আগেই ঘুম থেকে উঠে যেতেন।

তার ঘুমন্ত মুখটায় অজস্র মায়া বাসা বেধেছে।
খুব সুন্দর লাগছে তাকে।
সত্যিই তাও ভাবতেই অবাক লাগে তার সাথে আমার বিয়ে হয়ে গেছে।
সে আমার স্বামী। যাকে ভালোবেসে না পাওয়ার ভয় ছিলো সেই আমাকে কোটি গুণ ভালোবেসে নিজের করে নিলো।
#শ্যামারঙা হওয়ার কারণে, যে আমাকে সব সময় কথা শুনতে হতো অন্যদের কাছ থেকে আজ সব বন্ধ।
হয়তো ভালোবাসা পবিত্র হলে এমনই হয়।

— কি দেখছিস…

— আপনাকে..

— আমার কি রূপ বেড়েছে…

ভাবনার অবসান ঘটলো ওনার কথায়।
তাই মাথা নিচু করে বললাম।

— না মানে…

— কি

— আপনার জন্য কফি এনেছি।
খেয়ে নিন

— আজ এতো ভালোবাসা।
জামাই আদর করছিস নাকি।

— আজব তো।আমি।কেন জামাই আদর করবো?
জামাই আদর তো আমার বাবা মা করবে…

— তাহলে তুই কি করবি?

— সেটা আপনার না জানলেও চলবে।
এখন কফি খেয়ে ফ্রেশ হয়ে নিন।
মা রান্না করেছেন খেয়ে ওই বাড়িতে যেতে হবে।

— হ্যা,তাই তো।
আমার কপালই ভালো না।শ্বশুর বাড়িতে এসে এই প্রথম রাত কাটালাম কিন্তু বেড়াতে পারলাম না।

— আফসোস হচ্ছে

— না হবে কেন?
মানুষ কেন দূর বিয়ে করে তা আজ বুঝলাম।আর তা হারে হারে টের পাচ্ছি….

—- ভালো হয়েছে…..
আপনার যা ইচ্ছে তাই করুন আমি যাচ্ছি…

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here