#সমাধি ❤️
#পর্ব –১৯
#সেলিনা_আক্তার_শাহারা
________________________________
অনু আর পারছিলো না।
শেফার মুখ দিয়ে যা বার হচ্ছিলো তাতে অনুর প্রান পুরিয়ে দিচ্ছে।
রাইমাকে নিয়ে এক রকম শেফার প্রশ্নের উওর দেয়া থেকে এরিয়েই পালিয়ে গেলো অনু।
—–
সন্ধা নেমে এসেছে। বাহিরের অন্ধকারের চেয়ে অনুর জীবন অন্ধকার বেশি।তাই এখন বাহিরে অন্ধকার থাকলে ও ভয় হয় না।
ভয় কে জয় করে নিয়েছে।
সবাই সবার ঘরে।
রাসেদ ফিরেনি, এখনও দোকানেই বসে।
রাসেদের মা রাসেদের বাবার জন্যে পান সাজাতে ব্যাস্ত।আর বসে বসে ছেলের জীবন নিয়ে চিন্তা করে মরছে। ছেলেটার কপালে কি আছে কে জানে।
শেফা অনুকে সব তো বলে দিলো। এখন ওর মনে কি ঝড় সে তো আর বলতে পারলো না। একবার ইচ্ছে করছিলো অনুকে বলে দিই আমার আর রাসেদের জীবন থেকে সরে যাও। তবে এতে সমস্যার সমাধান হবে না। রাসেদ কোন দিন আমার হবে না। উল্টো হয়তো ভালোবাসা চাইতে গিয়ে ঘিন্নার পাত্র না হই।
— রাসেদ অনুর দু’ জোরা হাত এক হলে আমি এই বাড়ি ছেরে চলে যাবো। তাদের সংসার পাততে দেখে আমার চোখ সইবে না। রোজ রোজ মরন যন্ত্রণা পাবার চেয়ে এটাই ভালো হবে।
” রাইমাকে আকলিমা বেগমের কোলে রেখে একটু আসছি বলে অনু রুম থেকে বের হয়।
কোথায় আর রাসেদের রুমেই হয়তো ঢুকবে।
চুরের মত ওর ডায়রিরা ঘাটবে।
“— হ্যা ঠিক তাই রাসেদের রুমে ঢুকে আলমারিটা খুলে নিলো অনু।
কাপরের ভাজ থেকে অনেক খুজে ডায়রিটা বার করেছে।
ডায়রির নিচে একটা শাড়ি।ব্যাচেলারের রুমে বা আলমারিতে শাড়ি থাকার কথা নয়।তবে শাড়িটা যার জন্যে কিনেছে সে আজ তা হাতে তো নিলো।
আর জানারও বাকি নেই, এই সেই শাড়ি যা রাসেদ ভাই আমার জন্যে তার প্রথম বেতনের টাকায় কিনেছিলো।
শাড়িটায় চুমু খেয়ে দু’ফোটা জল গরিয়ে এলো। এতে যেনো রাসেদের ভালোবাসায় মাখা একটা সুগন্ধের শাড়ি।বার বার চুমুই খেতে ইচ্ছে করছে।
এই শাড়ি হাতে নিয়েই রাসেদ ভাই রোজ তার চোখ ভেজায়!!!
“- ডায়রিটা চুপি সারে নিজের উরনা দিয়ে ঢেকে নিলো আর সব আগের জায়গায় রেখে চলে এলো ওর ঘরে।
—— সবাই শুয়ে পরার পর ডায়রিটা খুলবে।
কয়দিন যাবদ রাসেদ ডায়রিতে কিছু লেখেনা। কি লিখবে,? যাকে নিয়ে লিখবে সে তো পাশেই আছে।ডায়রিতে চোখ না রেখে সেই ভালোবাসার মানুষটার মুখই দেখা যাক।
“- রাতের খাবার সেরে। সবাই চলে গেলো। রাসেদের মা অনুকে কিছু বলতে গিয়েও পারল না। মিহা অনুকে সজৎ করতে পারছেনা এমন নয়। তবে যখনই আকলিমা বেগমকে দেখে তখনই তার ভাইয়ের প্রতি অনদরতার প্রতিছবি ভাসে।কি করে কত ভাবে আমার ভাইকে অপমান করতো এই মহিলা।
তাই সামনে আসতেই চায়না। রাগের মাথায় কিছু বলে দেবো তখন ভাই আমায় আস্ত রাখবে না।
__________________________♥
“- —– চল…
কোথায়??
চলনা আমার সাথে।
— অনু ভেবেছিলো এবার ডায়রির পাতা গুলো ঘাটবে, ।তবে এই রাসেদ ভাই এখন কোথায় যেতে বলছে…
” আচ্ছা বলোতো কোথায়?
— অনু বার বার এত প্রশ্ন করে ইশশ।
একটু রোমান্টিক ভাব নিয়ে অনুর হাত ধরে বিছানা থেকে টেনে তুলে নিজের পাশে দার করিয়েছে।
আর অনুর প্রশ্নের উওরটাও দিচ্ছে।
—- যদি বলি তোকে পাহার থেকে ফেলে দিতে যাচ্ছি যাবিনা!!
যদি বলি তোকে মেরে ফেলার নিয়তে নিয়ে যাচ্ছি যাবিনা।?
যদি বলি জাহান্নামের রাস্তায় তোকে ছেরে আসতে যাচ্ছি যাবিনা!!!!
— রাসেদের চোখে কি উজ্জল হাসি। ঠিক মত মসকরাও করতে জানেনা।কি সব পাহার পর্বত নিয়ে বসেছে।
” অনুর উওরের আশায় রাসেদ ওর পানে তাকিয়ে।
অনু কোন শব্দ না করে আলমারি থেকে অন্য একটা ভালো উরনা নিয়ে সোজা হাটা শুরু করল বাহিরে।
তোমার সাথে তো সাগরের মধ্যেও ঝাপ দিতে পারি।
” (-আরেহ বাহ অনু কি উওরই না দিলো, বেশ ভালো লাগলো। অন্তর জুড়িয়ে এলো।এটাই তো চাই। তুই আমার সাথে দুনিয়ার সমস্ত কোনায় ঘুরবি।-)
রাসেদ বাহিরের দিকে চলছে সদর দরজার দিকে।
আর অনু সিরির দিকে। ওমা রাসেদ ভাই ছাদে না গিয়ে বাহিরে বের হচ্ছে কেন?
অনুর দিকে রাসেদ বাকা করে চেয়ে হাতের ইশারায় দেখালো বাহিরে বের হতে।
অনুও চুপ চাপ এদিক সেদিক চেয়ে ওর পিছু নিলো।
রাইমা কে আকলিমা বেগম কুলে নিয়ে দাড়িয়ে আছে।
রাসেদ তো চাইছিলো ওকেও নিয়ে যাক তবে
আকলিমা তো দিলোনা। উনিও হয়তো চায় রাসেদ আর অনু কিছুটা সময় একসাথে থাকুক।
যদি অনু মন খুলে কথা বলে রাসেদের সাথে সেই আশায়।
“- গাড়ি বার করতে গিয়েও বার করল না।
অনুর দিকে তাকিয়ে বাকা হাসি দিয়ে গ্যারাজ থেকে বাইক টা বার করল। অনেক দিন চালানো হয় না। বেশ ধুলো জমে আছে।
– অনু মাথাটা হালকা বাকিয়ে রাসেদের দিকে হাসি হাসি ভাব।
রাসেদ ভাই বাইকে করে নিয়ে ঘুরাবে! এই রাসেদ ভাইয়ের মাথায় এসব বুদ্ধি আসে কোথা থেকে। বেরসিক খিটখিটে মেজাজের মানুষটাকে আজ জেনো অচেনা লাগছে।মনে হয় ভালো করে চিনতেই পারিনি মানুষটাকে।
— রাতের অন্ধকারে বাইকে করে ঘুরেছিস কখনো!!
” অনু মাথা নাড়িয়ে না সূচক জবাব দিতেই রাসেদ একটু গম্ভীর ভাব ধরল।
যাহ তর স্বামী একদিন ও তোকে নিয়ে ঘুরেনি??
— রাসেদের পিঠে হালকা চর কষে অনু রাসেদের পিছনে বসেছে। না ঘুরায়নি এবার তুমি ঘুরিয়ে আনো।
” বাইক স্টার্ট দিয়ে চলতে চলতে রাসেদ নানান কথায় অনুকে হাঁসাচ্ছে। অনুর জন্যে হাসাটা জরুরি।
কেঁদে কেঁদে মেয়েটা চোখের নিচে ছানি ফেলে দিয়েছে যে।
“- একটানা অনেকক্ষন বাইক চালিয়েছে। অনু রাসেদের পিছন বসে ওর পিঠে মাথা ঠেকিয়ে রাতের দৃশ্য দেখছে। রং বেরংঙের লাইট।
কত গাড়ি নানান ধরনের মানুষ। কেউ রাস্তার ধারে কেরাম বা লুডু খেলছে। সাথেই কিছু ঝুপরি দেখা মিলছে। হয়তো এটাই ওদের বসস্থল।
আল্লাহ মানুষকে কত রকমে বাঁচিয়ে রাখে।
তার লিলা খেলা.. কেউ জানেনা।
সব দিয়েও মানুষকে খালি করে আবার খালি মানুষের দু’হাত ভরিয়ে দেয়।
— অনেক পর একটা ফুচকার দোকানের সামনে হাজির হল।
অনুকে ফুচকা খাওয়াতেই তো নিয়ে এসেছে।
” অনুর মুখে আরেকটু হাসি। ফুচকা!!
ওহহ রাসেদ ভাই এত ভালো হল কবে থেকে।আগে বললে তো সাস্থ্য নিয়ে দু’চার লাইন শুনাতো।আর আজ নিজে থেকেই নিয়ে এসেছে!!
“- অনুর চোখ কেমন নিভু নিভু হয়ে আসছে তবুও চোখ দুটো টেনে মেলে রেখেছে রাসেদের পানে।
— মামা এক প্লেট ফুচকা ঝাল দিয়ে। অর্ডার দিয়ে অনুর জন্য একটা চেয়ারের ব্যাবস্থা করল।আর নিজেও একটা টুলে বসে পরল।
দুজনই পাশা পাশি বসে।রাসেদ হাত মলছে।
– তুমি খাবেনা রাসেদ ভাই!!
” কি খাবেনা?
– ঐ ফুচকা এক প্লেট অর্ডার করলে যে,তুমি খাবেনা??
” ওমা আমি খাবো বলেই তো এক প্লেট অর্ডার দিলাম।
তুইও খাবি নাকি???
— বিরক্ত হয়ে অনু রাসেদের থেকে দুহাত সরে বসেছে।খচ্চর বেটা শীতের মধ্যে এত দূর নিয়ে এলো আর একা একা ফুচকা খাবে।
” রাসেদ মুহুর্তের মধ্যে ফুচকা নিয়ে অনুর সামনে ধরেছে।
নে খা।
— উহুম তুমিই গিলো আমি খাবোনা।
” চুপ! আমি এসব খাইনা জানিস না? নে চুপ চাপ খা।
অনু দু’হাত গুজে অন্য পাশ ফিরে একটু রাগ রাগ ভাব নিয়ে বসে রয়েছে।
— অনু খা না। আচ্ছা সরি।তোকে ফুচকা খাওয়াবো বলেই তো এনেছি, আমি মজা করছিলাম আর তুই ।
“রাসেদের মনটা খারাপ হয়ে গেলো ইশ কেন যে মজা করতে গেলাম। আমার নাটকও ধরতে পারিস না?
রাসেদের হাত থেকে ফুচকার প্লেটটা ছু মেরে নিয়ে মুখে দেয়া শুরু করল আর রাসেদের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি তা তো চলছে।
আরেহ মজা কি শুধু তুমিই করতে পারো আমি পারিনা!! আমিও রাগ হবার নাটক করেছি।
রাসেদ অসহায় চাহনিতে অনুর দিকে তাকিয়ে।
— দেখলে কেমন নাটক করে তোমায় ভয় পাইয়ে দিলাম।
” রাসেদ দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে অনুকে জানালো তুই সত্যি ভালো নাটক জানিস। না হলে আমার সামনে ভালো থাকার নাটক টা এত ভালোভাবে করতে পারতি!!
“– অনু রাসেদের কথায় বিচলিত।
এখন কথা কাটাবে কি করে?
— চুপ চাপ অনু ফুচকাটা শেষ করল,এর মধ্যে রাসেদের আরেক প্রশ্ন।
তুই এখনও থ্রিপিস পরিস??
বিয়ের পরে শাড়ি পরিস নি?
” না আসলে শাড়ি পড়তে জানতাম না তো।আর আয়ান ও তেমন শাড়ি নিয়ে কোন আপত্তি করত না।তাই কখনো পড়িনি।
—— হুমম.. আমার সঙ্গে থ্রিপিস চলবে না।শাড়ি পরে থাকতে হবে সব সময়। বাঙালি নারীর শোভাইতো শাড়ি
” কি??
— কথাটা বলেও রাসেদ জিব্বায় কামর দিয়ে বসেছে।মুখটা আজকাল বড় ফসকে যায়।
” তুই আরো খাবি??
— না। আর না। কি বললে বলোনা আবার।
” আচ্ছা শোন আমি তোকে শাড়ি পরানো শিখাবো আর এর পর যখন আবার বাহিরে বের হব শাড়ি পরেই বের হবি।
— বুঝলাম তবে তুমি শাড়ি পরানো জানলে কি করে? ঘরে কয় গাদা বৌ যে তাদের থেকে শিখেছো???
” হাহ তাচ্ছিল্যের মত অনুর কথা উরিয়ে দিলো রাসেদ।
তুই ভুলে যাস না আমার পেশা.আমি একজন শাড়ি বিক্রেতা তাই শাড়ি পরা তো আমার এক হাতের কাজ।
— অনু হাসতে হাসতেই হঠাৎ করে মাথায় হাত দিয়ে দিলো।
কেমন জানি মাথাটা ভু ভু করছে।
চোখ গুলো আর টেনে মেলে রাখতে পারছেনা।
কেমন ক্লান্তি কর স্বরে রাসেদকে ডেকে উঠলো রাসেএএএএ রাসেদ ভাই, আমায় বাড়িতে নিয়ে চলো।
” রাসেদ তো ভাবলো এটাও অনুর নাটক।তবে নাহ। অনুর শরিল বেশ খারাপ দেখাচ্ছে।আর হবেই তো, না খেয়ে খেয়ে শরিলটা দুর্বল করে তুলেছে যে…
এখন এই অবস্থায় ওকে নিয়ে বাইকে যাওয়া যাবেনা একটা গাড়ির ব্যাবস্থা করতে হবে। আর বাড়ি যাবার আগে ডাক্তারের থেকে ঔষধ নিয়েই জেতে হবে।
চলবে..★.★…