সাইকো বর পর্ব ১

#সাইকো_বর
#Writer:Tabassum_Tajnim
আমি অথৈ,,, বউ সেজে বাসর ঘরে বসে আছি। আজ আমার বিয়ে হয়েছে,একটা অজানা অচেনা লোকের সাথে বিয়ে। শুধু তার নামটা জানি……কিন্তু তাকে কোনোদিন দেখিনি। বাবা অবশ্য বিয়ের আগে দেখা করতে বলেছিলো কিন্তু আমি দেখা করতে চাই নি। আমি বিয়ে করতে চাই নি,আারও পড়ালেখা করতে চেয়েছিলাম কিন্তু হলো না। আমি সেই মানুষটার জন্য অপেক্ষা করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে গেলাম জানি না। হঠাৎ আমি অনুভব করলাম কে যেন আমার ঠোটে ঠোট দিয়ে চেপে ধরেছে। আমার ঘুম ভেঙ্গে গেলো। আমি তাকে সরাতে চাইছি। নাহ পারছি না,, অবশেষে জোরে ধাক্কা দেওয়াতে সে ছিটকে পড়ে বিছানার এক পাশে। আমি উঠে বসে হাপাতে লাগলাম।
অথৈ- পাগল নাকি, আপনি।
সে কিছুই বললো না। শুধু এসে আমাকে আবার জোর করে শুইয়ে দিলো, আমার গলায় ঠোটে পাগলের মতো চুমু দিচ্ছে, চুমু না কামড় বসাচ্ছে বুঝতে পারলাম, আর আমি তাকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছি, অসহ্য ব্যাথা, আর আমার চাপা গোঙ্গানী। নাহ্ সে আমার কেনো বাধায় মানলো না। অবশেষে আমি তার শক্তির কাছে হেরে গেলাম, সে বিজয়ী হলো। সে উঠে বেলকুনিতে চলে গেলো। আগুনের মতো কি যেনো জলচ্ছে। বুঝতে পারলাম সিগারেট খাচ্ছে। রুমটা অন্ধকার,আমি তার মুখটা দেখতে পারছি না, আর খুব জানতে ইচ্ছে হচ্ছিলো কেনো আমার সাথে এরকম করলো?আমি ওনার কি ক্ষতি করেছিলাম? আমি এতক্ষণ শুয়েই ছিলাম, বিছানা থেকে উঠতে গেলেই মাথাটা ঘুরে গেলো। আমি ফ্লোরে পড়ে গেলাম।। তারপর আর কিছু মনে নেই। যখন চোখ খুললাম তখন দেখি সকাল হয়ে গেছে। আমি চারপাশে চোখ বুলিয়ে দেখলাম কেউ নেই। কিন্তু আমি তো ফ্লোরে পড়ে গেছিলাম তাহলে বিছানায় উঠলাম কখন? হয়ত সেই জানোয়ারটা বিছানায় তুলেছে। ছিঃ,,বিয়ের বাবার মুখে যে ধরণের বর্ণনা শুনেছিলাম, আজ কেনো জানি তা মিথ্যা মনে হচ্ছে। কালকের এই ঘটনার পর আমি তাকে কোনো দিনও স্বামী হিসাবে মেনে নিবো না। আচ্ছা মানুষটা কি একটা রাত ও অপেক্ষা করতে পারলো না।। কাদতে কাদতে রুমের চারপাশটাই আবার চোখ বুলালাম। রুমটা দেখে বুঝাচ্ছে মানুষটা খুব সৌখিন।খুব গোছালো একটা রুম। এই রুমের সব জিনিস গোছানো, শুধু আমিই অগোছালো হয়ে পড়ে আছি। বিছানা থেকে উঠে নিজেকে গুছিয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে লম্বা শাওয়ার নিলাম। শরীরের কাল রাতে জানোয়ারের দেওয়া দাগ গুলো তুলতে বৃথা চেষ্টা চালালাম অনেকক্ষন। কড়া নীল রঙয়ের শাড়ি পড়ে বেরিয়ে এলাম।। আবার রুমে চোখ বুলিয়ে নিলাম, নাহ্ কেউ নেই। ভেজা চুলগুলো ছেড়ে দিলাম। কোমড় পর্যন্ত চুলগুলো ছড়িয়ে পড়লো।
“বাহ্, তোমার চুল গুলো তো তোমার থেকেও সুন্দর।এই জন্যেই কি হিজাব পড়তে নাকি!!”
আমার এই কন্ঠ স্বরটা খুব চেনা। আমি আগেও বহুবার এই কন্ঠস্বরটা শুনেছি। কিন্তু কার?? আমি ঘুরে দাড়ালাম। কিন্তু কন্ঠস্বরের মালিককে দেখে আমি চমকে গেলাম। আরে এতো মেঘ। যে আমাকে পাবার জন্য আট আটটা বছর আমাকে প্রপোজ করে আসছে, আর আমি বারবার না করছি। সেই স্কুল লাইফ থেকে ও আমাকে ভালোবাসে। কিন্তু আমি আমার পরিবারকে কস্ট দিতে পারবো না বলে ওকে বারবার না করেছিলাম। ও আমার ভাইয়ার হাতে মাইর ও খাইছে, তারপরেও আমাকে ভূলে নি।
অথৈ– এ, একি তুমি?? তুমি এখানে কি করছো?
মেঘ মুচকি হেসে আমার কাছে এসে মুখে পড়ে থাকা চুলগুলো কানের পাশে গুজে দিয়ে বললো,
মেঘ– কেনো এখানে কি অন্য কারো থাকার কথা ছিলো নাকি???
অথৈ– না মানে,,,,
আমাকে ও কোনো কথায় বলতে দিলো না। ও বলতে শুরু করলো,

মেঘ– বাবু, আট আটটা বছর তুমি শুধু আমাকে কষ্টই দিয়ে গেছো। তোমার কারনে আমি না ভালো করে খেতে পারতাম না ঘুমুতে পারতাম। তোমাকে ভূলার জন্য আমি সব ধরনের নেশা করেছি। কিন্তু কি বলতো, তোমার নেশাটাই প্রখর ছিলো। অন্যসব নেশা কেটে যেত তোমার কথা ভাবতেই। তোমার জন্য আমার বাবা মাও অনেক কষ্ট পেয়েছে। তোমার ভাইয়ের হাতে মাইর ও খেলাম শুধু তোমার জন্য। সেদিন যদি আমি একবার বলতাম তাহলে তোমার ভাইয়ের লাশ পড়ে যেতো। কিন্তু আমি তোমার ভাইয়ের উপর নয় আমি তোমার উপর সব প্রতিশোধ নিবো বলে ঠিক করেছিলাম। এবার প্রতিশোধের পালা, তুমি তৈরি হও, মাই ডিয়ার বউ। কাল রাত থেকেই শুরু হয়ে গেছে। বুঝতে পারবে কষ্ট কাকে বলে।।।

অথৈ–বউ!!!!
মেঘ— হুম,, বউ। তোমার যার সাথে বিয়ে হয়েছে সে আর অন্য কেউ নয়,, সেই মানুষটা আমি। আমি তেমাকে শুধু ভালোবাসি বলে বিয়ে করি নি, আমার প্রত্যেকটা কষ্টের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্যও বিয়ে করেছি। ভালোবাসা আর প্রতিশোধ দুটোই পাবে আমার কাছ থেকে।।

কিছুই বুঝতে পারছি না, সব কিছু আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। যে আমাকে পাগলের মতো ভালোবাসতো, আজ সে আমাকে কষ্ট দেবার জন্য করেছে।।আমি কান্না জড়িত গলায় বললাম
অথৈ– তার মানে তুমি আমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্যই বিয়ে করেছো??

মেঘ– হুমম,,শুধুই কষ্ট দিবার জন্য।

ওর কথাগুলো শুনে আমি কেদে দিলাম। ও আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো,,,
মেঘ– আরেহ, এখনো তো কিছুই করলাম না তার আগেই কেঁদে দিলা। কান্না থামাও বাবু।। প্লিজ।।
কিন্তু আমার কান্না তো থামছেই না।
এবার মনে হয় ও রেগে গেলো।
মেঘ– এই কান্না থামাতে বলছি না তোকে,, কান্না থামা,
একটু জোরে ধমক দিলো। আমিও কান্না থামিয়ে ফেললাম। মেঘ আমাকে দেখে হেসে দিলো।
মেঘ– ভালো ভাবে বললে কাজ করে না,, ।। ,,
হঠাৎ করেই ও আমাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো, আমার হাতগুলো দেয়ালের সাথে চেপে ধরাতে আমি আমি হাতে ব্যাথা পাচ্ছি। কিন্তু ও আমাকে ছাড়ছে না।। ও আমার ঠোট ওর ঠোট দিয়ে চেপে ধরলো, আমি ওর থেকে মুক্তি পাবার জন্য হাত গুলো ছাড়ানোর চেষ্টা করছি লাভ হচ্ছে উল্টে হাতে চুড়ি থাকায় হাত কেটে যাচ্ছে। অনেক্ষণ পর ছেড়ে দিলো।
মেঘ– দেখ সব সময় এমন ছটফট করবি না। তুই আমার বউ। তাই আমার সম্পূর্ণ অধীকার আছে, তোকে আদর করার। আমি যখন ইচ্ছা তখন তোকে মারতে পারবো, আবার ইচ্ছা হলে আদর ও করতে পারবো। তোর এই শরীরটা এখন আমার বুঝলি।।
কথাগুলো বলেই ও আমাকে জোরে ধাক্কা মারলো। আমি নিজের উপর ব্যালেন্স না রাখতে পেরে পরে গেলাম এবং ড্রেসিং টেবিলের কোণায় ধাক্কা খেলাম। কপালে হাত দিয়ে দেখি কপাল থেকে রক্ত বের হচ্ছে। মেঘ হনহন করে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।তার আগে ফাস্ট এইড বক্সটা কোথায় আছে তা বলে গেলো।
আমি বসে বসে কাদতে লাগলাম। এই মেঘ কি সেই মেঘ যে আমাকে পাগলের মতো ভালোবাসতো। মেঘকে আর কি দোষ দিবো। আমি ওর সাথে যে ধরণের বিহেভ করেছি, তাতে আমার সাথে ওর ভালো বিহেভ করার প্রশ্নই আসে না। ভালোবাসাও একটা সময় ঘৃণায় পরিণত হয়। আর আমি তো মেঘকে সবসময় অবহেলা করে এসেছি, তার ভালোবাসাকে সবসময় প্রত্যাখান করে এসেছি।

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here