সাত সমুদ্রের তিমির পর্ব ৩+৪

#সাত_সমুদ্রের_তিমির
পর্বঃ০৩
#সুমাইয়া_আফরিন

অনুর ঘরে বসে খুব বোরিং লাগছিল তাই তার বন্ধুদের নিয়ে ছাদে চলে গেল।ছাদে গিয়ে দেখল তার বাবা ছাড়া বাড়ির সবাই সেখানে আড্ডা দিচ্ছে। অনুর বাবা একজন কৃষক তাই মাঠে কাজে বেরিয়েছে সে। অনু একজন ডক্টর হলেও তার বাবা এখনো কাজ করেন কারন সে তার মেয়ের কাছে থেকে হাত পেতে টাকা নিতে চান না। অনুর খুবজযখন সে দেখে রোদ বৃষ্টির মধ্যে তানর কাজ করছে। কিন্তু তার বাবাকে অনেক বোঝানোর পরেও সে মানতে চাইনি।

অনু আর তার বন্ধুরা বাড়ির সবার থেকে একটু দুরত্ব বজায় রেখে ছাদের এক কোণায় বসে পড়ল। রিয়া অনুকে দেখেই মুখ গোমড়া করে ফেলল। রিয়া যে অনুকে বেশি একটা সহ্য করতে পারে না তা অনু বেশ ভালো করেই জানে। রিয়া ন্যকা কন্ঠে তার মাকে ডেকে বলল,

‘মম, কালকে অনু বলছিল এখানে নাকি মেলা হয়। আমি মেলায় যেতে চাই।’

অনেক কষ্ট করে রিয়া কথাটা তার মাকে বলল।
রিয়া দীর্ঘদিন ধরে সুইজারল্যান্ডে আছে। তাই বাংলাটা সে ভালো করে পারে না। লারা রিয়ার কথা শুনে ফিক করে হেসে দিল।অনু লারার মাথায় একটা টোকা মেরে চুপ করতে বলল। লারা কোনো রকমে নিজের হাসি দমিয়ে রাখল। রিয়া বজ্র চোক্ষে লারার দিকে তাকিয়ে আছে। রিয়ার মা রিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলল,

‘হুমম, তোমার যদি যেতে ইচ্ছা করে তাহলে যাও মামনি।’

রিয়ার মা অনুর দিকে নিজের দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,

‘অনু মা, তুমি একটু রিয়াকে মেলায় নিয়ে যেও তো। তোমারও ঘুরা হয়ে যাবে আর আমার মেয়েরও মেলা দেখা হয়ে যাবে।’

অনু আর তার বান্ধবীরা অনেক আগেই ঠিক করে রেখেছিল যে তারা মেলায় যাবে। কিন্তু রিয়াকে নিয়ে যেতে হবে এটা তাদের মাথায় ছিল না। অবশ্য অনু রিয়াকে নিয়ে যেতে চায়নি কারন রিয়া সবকিছুতেই একটু বাড়াবাড়ি করে। অনু রিয়ার মায়ের কথা শুনে জোরপূর্বক একটা হাসি দিয়ে বলল,

‘ঠিক আছে আন্টি।’

ইরা, লারা, মিমি সবাই অনুর দিকে রাগান্বিত চোখ করে তাকিয়ে আছে। কারন তারা মোটেও চায়নি রিয়াকে নিয়ে যেতে। অনু তাদের দিকে তাকিয়ে আস্তে করে বলল,

‘এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন রে তোরা?আমি কি করবো বলতো?তার মুখের উপর আমি কীভাবে না বলে দিতাম?’

‘তা অবশ্য ঠিক। কিন্তু এই ইরিডিটিং মেয়েটাকে আমাদের সাথে নিয়ে যেতে হবে। বিরক্তিকর।'(মিমি)

বিকালের দিকে মেলাটি শুরু হবে। এই মেলাটি এক মাস ধরে রয়েছে। খুবই চমৎকার একটা মেলা। প্রতি বছরই এটা হয় অনুদের গ্রামে। কিন্তু কি বিষয়ে হয় এই মেলাটি তা অনু আজও জানতে পারেনি। অনু দুপুরের খাওয়ার পরে জানালার সাথে লাগানো টেবিলে বসে কিছু একটা লেখছে।

প্রায় দেড় বছর হয়েছে অনু ডিএমসি তে চাকরী করছে। দেড় বছরের মধ্যেই সে অনেক সাফল্য অর্জন করেছে। এমবিবিএস পাশ করার পর তার মা বাবা বলেছিলেন এখন পড়াশোনা বাদ দিয়ে সংসার করতে কিন্তু অনু সবার বিপক্ষে গিয়ে লুকিয়ে বিসিএস পরীক্ষা দেয়। বিসিএস এ খুব সহজেই অনু টিকে যায়। বর্তমানে অনু একজন বিসিএস ক্যাডার করা ডক্টর। বিসিএস ক্যাডার হওয়ায় খুব তাড়াতাড়িই অনু সরকারী চাকরী পেয়ে যায়।

আচমকা অনুর কেউ হাত রাখতেই অনু একটু চমকে যায়। অনু পেছনে তাকিয়ে দেখে তার মা দাঁড়িয়ে আছে। অনুর একটা সস্তির নিশ্বাস ফেলে বলল,

‘ওহ মা তুমি!’

অনুর মা ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইলেন অনুর দিকে। তারপর অবাক কন্ঠে জিজ্ঞাসা করলেন,

‘হুমমম,আমি, কেন?কি হয়েছে?’

‘না আসলে আজকাল হঠাৎ কারো স্পর্শ পেলেই কেমন যেন চমকে উঠি।’

‘কি বলিছিস? চল তোকে গরম পানি দিয়ে গোসল করিয়ে দেই।’

‘উফফফ মা। এই কুসংস্কার কবে তোমাদের মন থেকে যাবে বলো তো? এইসবের কারনেই ওই ক্রিপ লোকটাকে তোমরা পুলিশে না দিয়ে তার বাবার কাছে নিয়ে গেছিলে।’

‘অনু পরিস্থিতিটা এমন ছিল না ওই সম…….

‘প্লিজ মা, পরিস্থিতির দোহাই দিও না। ওই সময় আমি কি পরিস্থিতিতে গেছি সেইটা আমি কাওকে বোঝাতে পারবো না।’

অনুর চোখে ইতিমধ্যে পানি চলে এসেছে। সূর্যের কিরনে অনুর চোখের পানি চিকচিক করছে। এখনি হয়তো টুপ করে গড়িয়ে পড়বে তার চোখ থেকে। অনু বড় বড় পা ফেলে হনহন করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। তারভপক্ষে আর তার মায়ের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব ছিল না। অনু ডাইনিং রুমে এসে টিফিন বাটিতে খাবার ভরতে থাকল। দুপুরে তার বাবা খেতে আসেনি তাই টিফিন বাটিতে করে খাবার দিয়ে আসবে অনু।

খাবার ভরে মেইন দরজার দিকে পা বাড়ালো অনু। আচমকা পেছন থেকে ইরা আর মিমি ডাক দিল। অনু পেছন ফিরে তাকাতেই ইরা আর মিমি দৌড়ে অনুর কাছে চলে এল।তারপর একটা জোড়ে করে নিশ্বাস ফেলে ইরা বলল,

‘কোথায় যাচ্ছিস তুই?’

‘বাবাকে খাবার দিতে।'(অনু)

‘ওহ তাই?তাহলে চল আমরাও যাব।(মিমি)

‘ঠিক আছে কিন্তু লারা কোথায়? (অনু)

লারার নাম নিতে না নিতেই লারা ওড়না গলায় পেচাতে পেচাতে উপস্থিত হয়ে গেল। তারপর তারা চারজন মিলে বের হয়ে গেল ক্ষেতের উদ্দেশ্যে। ইরা, মিমি আর লারা মাটির রাস্তায় কোনোদিন হাটেনি তাই খুব সাবধানে হাঁটছে তারা। রাস্তার বেশিরভাগ জায়গায় বৃষ্টি পড়ায় কাদা হয়ে গেছে। হঠাৎ ইরার পা কাদায় পড়ে গেল। ইরা ভয় পেয়ে চিৎকার করে উঠল। অনুর হাত ধরে ইরা খুব সাবধানে কাদা থেকে নিজের পা উঠিয়ে ফেলল। অনু একটা পুকুরে নিয়ে গেল তাকে। ইরা পুকুর দেখে বলল,

‘ওহ মাই গড, গ্রিন সুইমিংপুল।’

অনু ইরার কথা শুনে অটঠাসিতে মেতে উঠল। ইরার কথা শুনে মিমি আর লারাও হাসা শুরু করে দিয়েছে। ইরা অনেক ধনী পরিবারের মেয়ে এবং বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে। নিজের জীবনের সব মুহূর্ত ইরা শহরেই কাটিয়েছে। যার কারনে পুকুর কখনো দেখেনি সে। বই খাতায় পুকুরের বিষয়ে অনেক পড়েছে সে কিন্তু এইটাই যে সেই পুকুর তার বুঝতে পারেনি সে।

অনু, লারা আর মিমি অনেক কষ্টে নিজেদের হাসি থামালো। ইরা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে। লারা মিটমিট করে কিছুক্ষন হেসে বলল,

‘এই প্রথম এক অসাধারন সুইমিংপুলের নাম শুনলাম আর সেইটা হলো গ্রিন সুইমিংপুল। যেইটা কি না গ্রামে পুকুর হিসেবে পরিচিত।’

লারার কথা শুনে আরো হেসে দিল সবাই। ইরা বিরক্তি ভরা চোখে সবার দিকে তাকিয়ে আছে। সবাই হাসতে হাসতে আবার রাস্তায় হাটা শুরু করল। ক্ষেতের অনেক কাছাকাছি আসতেই হঠাৎ এক গাড়ি অনুর সামনে দিয়ে চলে গেল। শুধু চলে গেল বললে ভুল হবে, গাড়িটা খুব দ্রুত গতিতে চলছিল যার কারনে রাস্তায় পড়ে থাকা পানি ছিটকে অনুর পাজামায় গিয়ে পড়ল। অনু রেগে গিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই ইরা অনুর মুখ চেপে ধরে। অনু অবাক দৃষ্টিতে ইরার দিকে তাকিয়ে আছে। অনু ইরার হাত নিজের মুখের থেকে সরানোর চেষ্টা করছে কিন্তু ইরা বেশ জোড়ে সড়েই ধরে আছে অনুর মুখ। গাড়িটা দূরে যেতেই ইরার হাত নরম হয়ে আসে। ইরা অনুর মুখ থেকে নিজের হাত সরিয়ে ফেলে। অনু রাগে চিৎকার করে বলে ওঠে,
#সাত_সমুদ্র_তিমির
পর্বঃ০৪
#সুমাইয়া_আফরিন

ইরা অনুর মুখ থেকে নিজের হাত সরিয়ে নিল।অনু রাগে চিৎকার করে বলল,

‘ওই শয়তান,তুই আমার মুখ চেওএ ধরলি কেন?দেখেছিস কি হাল করেছে আমার?’

‘তুই জানিস, ওই গাড়িতে কে ছিল?’

‘কে ছিল রে?তোর হবু শশুড়?যত্তসব।’

‘তার থেকেও বড় কিছু। ওই গাড়িতে রাফাত চৌধুরি ছিল।মাই ক্রাশ ছিল বুঝেছিস।’

রাফাতের নাম অনুর কানে যেতেই অনু নিশ্চুপ হয়ে যায়।রাফাতের নামটা আর অনু সহ্য করতে পারে না। ভীতরটা দুমরে মুচরে শেষ হয়ে যায় তার। অতীতের ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক ঘটনাগুলো সহজে ভুলতে পারেনি সে। সেদিন রাফাতের চারটা লাইন অনুর হৃদয়কে ভেঙে চার হাজার টুকরো করে দিয়েছে।অনুর চোখের কোণে সামান্য পানি জমে গেছে। অনু এমন চুপ হয়ে যাওয়ায় সবাই অবাক হয়ে যায়। কারন অনুর যখন রাগ হয়, কোনো কিছুতেই থামানো যায় না তাকে। তাই আজ অনুর চুপ হয়ে যাওয়াটাকে কেউ মেনে নিতে পারলো না।অনুর কাধে মিমি হাত রেখে চোখগুলো ছোট ছোট করে বলল,

‘কি রে, কি হয়েছে তোর?’

‘কিছু না। কি হবে আবার?’

‘না আসলে তোর যখন রাগ হয় তখন তুই তো…..

মিমিকে কথাটা শেষ করতে দিল না অনু। তার আগেই ভাবান্তুক কন্ঠস্বরে বলল,

‘আচ্ছা তোরা ওনাকে এত চিনিস কি করে বলতো? পড়াশোনাই করেছিস নাকি এইসব বিজনেসম্যানদের খুজে বেড়াইছিস।’

‘আরে দোস্তো, খালি তুমিই ওনাকে চেনো না। রাফাত চৌধুরি কয়েকটা গান গেয়েছেন। বলতে গেলে ক্ষুদে সিঙ্গার উনি। আর আমি ওনাকে চিনেছি ওনার ফিজিক্স আর ক্যামিস্ট্রি ক্লাস দেখে। ক্লাস নাইন আর টেনের ফিজিক্স,ক্যামিস্ট্রি ক্লাস নেয় সে। খুব সুন্দর করে পড়ায়। কেন রে তুই ওনার ক্লাস কোনোদিনও করিসনি?’

‘এত ভালো ভালো টিচার থাকতে আমি ওনার ক্লাস করতে যাব কেন রে?আর ক্লাস নাইন টেনে থাকতে আমার হাতে ফোন ছিল না।’

লারা আরো কিছু বলতে যাবে তার আগেই অনু থামিয়ে দিল তাকে। তারপর চারজনে মিলে ক্ষেতের দিকে পা বাড়ালো। কিছুক্ষন হাঁটার পর অনু তার বাবার ক্ষেতের কাছে পৌছে গেল। বাবার হাতে খাবার দিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো তারা।

অনু বাড়িতে ঢুকেই ওয়াশরুমে চলে গেল। ওয়াশরুমে গিয়ে ভালো করে হাত পা ধুয়ে নিল সে। ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিল অনু।অতীতের পাতা গুলো অনুর কাছে আজও ভাসমান হয়ে আছে। প্রতিমুহূর্তে সে ভেবে যায় কি করে বাবার কাছে থেকে সেই ভিডিও রিকর্ডিংটা নেবে। এই সাত বছরে অনেক চেষ্টা করেছে রেকর্ডিংটা নেওয়ার কিন্তু কোনো ভাবে নিতে পারেনি সে। রাফাতের বাবাকে যে এত সহজে ছেড়ে দেবে না তা অনু অনেক আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছে।আইন যদি শাস্তি দিতে না পারে তাহলে তাকে প্রাকৃতিকভাবে শাস্তি দেবে অনু।

কথাগুলো চোখ বন্ধ করে ভাবছিল অনু। রিয়ার ডাকে চোখ মিলে তাকায় সে। অনু তাকিয়ে দেখল রিয়া একটা শর্ট টপস আর জিন্সের প্যান্ট পড়ে আছে। রিয়া সবসময় ওয়াস্টার্ন ড্রেস পড়ে। জীবনের অধিকাংশ সময় সুইজারল্যান্ডে কাটানোর জন্য রিয়ার কালচার অনুর কালচারের সাথে ম্যাচ করে না। যার জন্য তাদের মধ্যে আরো বেশি ঝগড়া লাগে। অনু চোখ অর্ধ খুলে রিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। রিয়া ন্যাকা কন্ঠে বলল,

‘কখন যাব আমরা?’

‘সন্ধ্যায়।’

‘কিহ? সন্ধ্যায়? আমাকে তো পার্লারে যেতে হবে।’

অনু রিয়ার কথা শুনে ফিক করে হেসে দিল। রিয়া অনুর হাসি দেখে রাগে ফুসছে। সে আসলে বুঝতে পারছে না অনু কেন হাসছে। রিয়া অনুর দিকে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,

‘What’s the matter Anu? Why are you laughing?’

‘এই গ্রামের মধ্যে এক পাগল পার্লার খুজছে সেইটা দেখে হাসছি।হাহাহা’

‘কিহ? আমি পাগল। How dare you?’

‘তা নয়তো কি? এই গ্রামের মধ্যে পার্লার আছে নাকি যে তুমি পার্লারে যেতে চাইছো?পার্লারে যেতে চাইলে এখান থেকে এক ঘন্টা যাওয়ার পর শহর পাবে সেখানে পার্লার আছে।’

রিয়া অবাক হয়ে অনুকে জিজ্ঞাসা করল,

‘এক ঘন্টা মানে one hour?’

‘ইয়েস। এখন তুমিই ভাবো, এক ঘন্টা ধরে তুমি যাবে, মেক আপ করে আরো এক ঘন্টা আর ফিরে আসতে আরো এক ঘন্টা। টোটাল তিন ঘন্টা। আর তিন ঘন্টা সময় তো আমরা অপেক্ষা করতে পারবো না। আর একটু পরেই বিক্সলের আযান দিয়ে দেবে।’

রিয়া মন খারাপ করে চলে গেল। অনুর একটু রিয়ার জন্য খারাপই লাগল। কিছুক্ষন পর চারপাশ দিয়ে মুয়াজ্জিনের মিষ্টি কন্ঠস্বর শোনা গেল। অনু ওয়াশরুমে গিয়ে অযু করে আসলো। তারপর নামাজ পরে মেলায় যাওয়ার জন্য তৈরি হওয়া শুরু করল।

,
,
,
,
,
,
,
সন্ধ্যার একটু পরেই অনু,রিয়া, ইরা, লারা আর মিমি বেরিয়ে পড়ল। আজ অনুকে বেশ সুন্দর লাগছে। ঘেয়া কালারের উপরে পিংক ও সবুজ কালারের কারুকাজ করা একটা থ্রিপিছ পড়েছে সে। ফরসা গায়ের রঙের সাথে কালারটা বেশ মানিয়েছে তাকে। মাথায় মেজেন্টা রঙের স্কার্ফও পড়েছে সে যা তার সৌন্দর্যটাকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। মেলাটি অনুর বাড়ির থেকে বেশি দূরে নয়। হেঁটেই চলে যাওয়া যেত কিন্তু রিয়া নাকি হেঁটে যেতে পারবে না তাই দুটো রিক্সায় করে যেতে হলো তাদের।

মেলায় খুব তাড়াতাড়িই পৌছে গেল তারা। রিয়া মেলা দেখেই এক চিৎকার দিয়ে উঠল। খুবই উত্তেজিত লাগছে তাকে। অনু একটা বিরক্তির নিশ্বাস ছেড়ে মেলায় ঢোকার জন্য পা বাড়ালো। হঠাৎ এক পরিচিত কন্ঠ ভেসে আসলো তার কানে। অনেকদিন আগে শুনেছে সে এই কন্ঠস্বর। কার কন্ঠস্বর উপলব্ধি করতে না পেরে পেছনে তাকালো সে।

পেছনে তাকাতেই চমকে উঠল অনু। মুহূর্তের মধ্যে চোখ নোনা জলে ভরে উঠল তার। শরীরে এক অজানা শিহরন বয়ে গেল তার। অনু সামনে ব্যাক শার্ট আর ব্যাক ব্যাবার্ডিন প্যান্ট পরিহিত এক সুদর্শন পুরুষ দাড়িয়ে আছে। সেই সুদর্শন পুরুষটি আর কেউ নয় রাফাত চৌধুরি।একটা গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রাফাতের সামনে আরেকটা ছেলে আর মেয়ে আছে। মেয়েটাকে অনু চেনে, মেয়েটা রাফাতের ছোট বোন। প্রায় ছয় বছরের ছোট রাফাতের থেকে। অনু বজ্রদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে। রাফাত অনুর দিকে তাকাতেই অনু মাথা ঘুরিয়ে নিল। ইরা, মিমি, লারা আর রিয়া অনুর থেজে অনেকটা দূরে চলে গেছে। মিমি অনুকে খুজে না পেয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখল অনু মুখ গোমরা করে দাঁড়িয়ে আছে। তারা চারজন আবার পেছনে এসে অনুকে ধাক্কা দিয়ে বলল,

‘কি রে এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?যাবি না মেলায়?'(মিমি)

‘হুমম, চল।'(অনু)

অনু তাদের সাথে মেলায় ঢুকে পড়ল। অনুর কেন যেন মনে হচ্ছে রাফাত তার দিকে তাকিয়ে আছে।যখন কোনো মানুষকে কেউ ফলো করে তখন তার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলে দেয়। অনুর ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় এখন তাই বলছে। অনু রাফাতের ব্যাপারে আর মাথা না ঘামিয়ে মেলায় ঘুরাতে মন দিল। কিন্তু হাজার চেষ্টা করেও মেলায় মন দিতে পারছে না সে। ইরা আর মিমি ফুচকা খেতে চাওয়ায় সবাই ফুচকার দোকানের কাছে চলে গেল। অনু রিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখল রিয়া সেলফি নিতে ব্যস্ত। অনু একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে রিয়ার থেকে নিজের চোখ সরিয়ে নিল।

আচমকা রাফাতের বোন রাফাতের হাত ধরে ফুচকা দোকানের কাছে নিয়ে এলো। লারা ঠিক তখনই ফুচকা ওয়ালার কাছ থেকে ফুচকা নিচ্ছিল। রাফাতকে দেখে ফুচকার প্লেটটা অসাবধানতার জন্য পড়ে গেল তার হাত থেকে। কিন্তু বিপদ হলো অন্য জায়গায়, ফুচকার টক ছিটকে গিয়ে পড়ল রিয়ার গায়ে। কিন্তু রিয়ার কোনো হোলদোল নেই। রাফাতের দিকে নিষ্পলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সে। রাফাত আর রাফাতের বোন দুইজনই এমন কান্ড দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে রিয়া আর লারার দিকে। অনু রিয়াকে ঝাকিয়ে বলল,

‘Riya look at your dress.’

অনুর কথা শুনে হুশ আসলো রিয়ার। নিজের দিকে তাকাতেই এক চিৎকআর দিয়ে উঠল সে। রাগী কন্ঠে বলল,

চলবে,

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here