সাত সমুদ্রের তিমির পর্ব ৫+৬

#সাত_সমুদ্রের_তিমির
পর্বঃ০৫
#সুমাইয়া_আফরিন

অনুর কথায় হুশ আসে রিয়ার। নিজের দিকে তাকাতেই এক চিৎকার দিয়ে উঠল সে। রাগী কন্ঠে বলে উঠল,

‘ওএমজি,এইটা তুমি কি করলে লারা?’

‘আই এম সিনসিয়ারলি এপোলোজাই রিয়া। আসলে ভুল করে আমার হাত থেকে…….

লারাকে কঠাটি শেষ না করতে দিয়েই রিয়া বজ্রকন্ঠে বললে,

‘ওহ জাস্ট সাট আপ। তুমি জানো এই ড্রেসের প্রাইস কত?’

অনু রিয়াকে শান্তনা দিয়ে বলল,

‘রিয়া যা হয়েছে তা তো আর ইচ্ছা করে হয়নি বলো? তুমি এক কাজ করো, তুমি বাড়ি চলে যাও।’

রিয়া রহস্যময় হাসি দিয়ে বলল,

‘ওহ, এবার আমি বুঝতে পেরেছি, এইসবকিছু তোমাদের প্ল্যান ছিল। রাইট?তোমরা বাড়িতে আসো আজকে, তোমাদের দেখাচ্ছি মজা।’

অনুর চোখের দিকে চোখ রেখে থ্রেড দিয়ে চলে গেল রিয়া। মেলার মধ্যে এক দৃষ্টি আকর্ষন করেছে রিয়ার চিৎকার। অধিকাংশ মানুষজন তাদের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। রিয়া হনহন করে মেলা থেকে বেরিয়ে গেল। অনু নিষ্পলক দৃষ্টিতে রিয়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। মেলার বাকি সবার মতো রাফাত আর তার ছোট বোনও এইসব কান্ড দেখে অবাক হয়ে গেছে। রাফাত এক দৃষ্টিতে অনুর দিকে তাকিয়ে আছে। এমন এক ঘটনাতে প্রচুর আশ্চর্য হয়েছে সে। রাফাতের ছোট বোন সবার ভাবনার মধ্যে ছেদ ঘটিয়ে ফুচকাওয়ালার দিকে তাকিয়ে বলল,

‘দুই প্লেট ফুচকা দেন তো?’

অনু রাফাতের দিকে তাকাতেই রাফাত নিজের চোখ সরিয়ে নিল তার থেকে। অনু ব্যাগ থেকে টাকা বের করে ফুচকাওয়ালাকে দিয়ে দিল। তারপর সেখানে আর এক মুহূর্তও দাড়িয়ে না থেকে বড়বড় করে পা ফেলে মেলা থেকে বেরিয়ে গেল সে। রাফাত অনু যাওয়ার পানে নিষ্পলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। রাফাত কখনো কোনো মেয়ের দিকে এইভাবে তাকায় না কিন্তু এই অনু নামের মেয়েটির দিকে অসম্ভবভাবে তাকিয়ে রয়েছে সে। যা তার ছোট বোনকে খুব ভাবাচ্ছে। এতক্ষনে মেলার সবাই নিজেদের কাজে ব্যস্ত হয়ে গেছে। অনুর বন্ধবীরা অনুর চলে যাওয়া দেখে বুঝে গেল যা হয়েছে অনু এতে প্রচুর রেগে গেছে। ইরা আর মিমি চোখ গরম করে লারা দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর মিমি লারার হাত শক্ত করে চেপে ধরে মেলা থেকে বেরিয়ে এলো তারা তিনজন।

রিয়া বাড়িতে গিয়েই চিৎকার চেচামেচি শুরু করে দিয়েছে। রিয়া প্রায় কান্না করে দেওয়ার মতো অবস্থা। সোফায় বসে বসে দাত কিটমিট করছে সে। অনুর মা সবকিছু শুনে অসম্ভব রেগে গেছেন। রিয়ার মা খুব ভালোই বুঝতে পারছেন তার মেয়ে যা বলেছে তার আংশিক কিছু ঘটেছে। আর তার মেয়ে কিছু মশলা মিশিয়ে তাদের কাছে এসে বলছে।

দরজা ঠেস দিয়ে অনু বাড়ির ভেতরে ঢুকে পড়ল। অনু ঘরে ঢুকতেই অনুর পা অনুকে একটা থাপ্পর বসিয়ে দিল।রিয়ার মা এমন কাজে অনেকটা অবাক হয়ে গেলেন। অনুরমায়ের হাত ধরে টেনে নিয়ে বললেন,

‘এ কি করছেন আপনি?এত বড় মেয়েকে কেউ মারে নাকি?’

অনুর মা তার হাত রিয়ার মায়ের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললেন,

‘ছাড়ুন আমাকে? আমি আর পারছি না ওকে নিয়ে? চাকরী করে বলে এত দেমাগ কেন ওর? আর কত বছর এই বাড়িতে পড়ে পড়ে থাকে ও?’

মায়ের এমন কথায় অবাকের চুড়ান্ত সীমায় পৌছে গেল অনু। কারন সে কখনো চাকরী নিয়ে দেমাগ দেখায়নি। আর আজ তো এখানে তার কোনো দোষ ছিল না তাহলে কেন তার মা তাকে থাপ্পর দিল?কিছু না জেনেই সব দোষ দিয়ে দিল তার ঘাড়ে?

অনুর চোখের কার্ণিশ বেয়ে গড়িয়ে পড়ল এক ফোটা নোনা জল। বুকের মধ্যে এক অজানা তুফান বয়ে যাচ্ছে তার। অনু চোখ মুছতে মুছতে উপরে চলে গেল। নিজের রুমে গিয়েই দরজা শব্দ করে লাগিয়ে দিল সে। দরজার গা ঘেষে নিচে বসে পড়ল সে। চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে অঝস্র চাপা কান্না। আর সহ্য করতে পারছে না সে এই ব্যাথা।

দরজা দিয়ে বাড়িতে ঢুকে পড়ল ইরা,মিমি আর লারা। অনুর মা সোফায় মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন
লারা কি বলবে বা করবে বুঝতে পারছে না। তার একটা ভুলের কারনে সবকিছু ওলোট পালোট হয়ে গেল। ইরা অনুর মায়ের পাশে গিয়ে বসে সবটা খুলে বলল তাকে। অনুর মা সবটা জেনেও যেন তার রাগটা কমাতে পারলেন না। কারন তার রাগ অন্য জায়গায় বিরাজ করছে। অনু মা সোফা থেকে উঠে নিজের রুমে চলে গেলেন।ইরা লারার মাথার জোড়ে করে একটা টোকা মেরে বলল,

‘জীবনে ছেলে দেখিসনি তুই? সবার মুডের বারোটা বাজিয়ে ছাড়লি তুই?’

‘আরে না রে আমি ওই দিকে তাকাতে গিয়ে হাত থেকে ফুচকার প্লেট ছুটে গিয়েছে।'(লারা)

‘তোর দ্বারা তো সামান্য কাজটাও হয় না, তুই আবার একসাথে দুইটা কাজ করতে গেছিস?'(মিমি)

ইরা, লারা আর মিমি অনুর রুমের সামনে গিয়ে নক করল। অনু কিছুক্ষন পর দরজা খুলে৷ দিল।অনুর চোখ সামান্য লাল হয়ে আছে। লারা অনুকে জড়িয়ে ধরে সরি বলল।অনু একটা হাসি দিয়ে বলল,

‘আরে ঠিক আছে। ভুল হতেই পারে মানুষের।’

অনু লারা পেছনে তাকিয়ে দেখল রিয়া একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে। তার চোখে মুখে রাগ আর হিংসার ছাপ স্পষ্ট। অনু রিয়াকে উদ্দেশ্য করে লারাকে বলল,

‘কিছু কিছু মানুষের বোঝার মতো জ্ঞান থাকা দরকার যে ভুল হতেই পারে। একজন ভালো মানুষ কখনো ইচ্ছা করে কারো গায়ে ফুচকা ফেলে দেবে না।’

অনু তিনজন ফ্রেন্ডই বুঝে গেল অনু কি বোঝাতে চাইছে। সবাই একটু মিটিমিটি করে হেসে রুমের ভেতরে ঢুকে পড়ল। ফ্রেশ হয়ে সবাই আড্ডায় মেতে উঠল।

__________

সকালে অনুর ঘুম ভাঙল বাইরের চেচামেচিতে। অনু বিছানা থেকে নেমে নিচে গিয়ে দেখল তার ফুফাতো বোনের ফ্যামিলির সবাই চলে যাচ্ছে। অনু একটু মনে মনে খুশিই হলো। কারন রিয়া নামক ইডিয়েটটা চলে যাচ্ছে। অনু নিচে নেমে সবাইকে বিদায় জানাতে গেল।কিন্তু অনু রিয়াকে দেখে চরম আকারে একটা ধাক্কা খেল। কারন রিয়া এখনো নাইট ড্রেসেই আছে। অনু বিষ্ময় নিয়ে জিজ্ঞাসা করল,

‘তুমি এই পোশাকে কেন রিয়া?তুমি যাবে না?’

‘কেন? আমি চলে গেলে তো তোমার খুব লাভ হয় তাই না? আমি যাচ্ছি না কারন আমার লাভার এখানে আছে। কালকে তো ভেবেছিলাম তার সাথে কথা বলবো আমি কিন্তু তোমার আদরে ফ্রেন্ড তা হতেই দিল না।’

অনুর মন নিমিষেই খারাপ হয়ে গেল। রাক্ষসিটাকে যত পেছন ছাড়াতে চাচ্ছে সে ততই জড়িয়ে পড়ছে।অসম্ভব মন খারাপ নিয়ে অনু সবাইকে বিদায় জানিয়ে উপিরে চলে আসলো।

বিকালের দিকে অনু আর তার বান্ধবীরা মিলে ছাদে আড্ডা দিচ্ছিল।হঠাৎ গাড়ির হর্নের শব্দ কানে এলো তাদের। অনু ছাদ থেকে নিচে তাকিয়ে দেখল,একটা নীল গাড়ি এসে ঢুকেছে তাদের বাড়িতে। গাড়ি থেকে তারা নামতেই অনু উল্লাসে লাফিয়ে ওঠে। নিচে নামার জন্য এক দৌড় দেয় সে। অনুকে এত উত্তেজিত দেখে ইরা, লারা আর মিমি প্রচুর অবাক হয়ে যায়। ছাদ থেকে নিচে তাকাতেই দেখল,
#সাত_সমুদ্রের_তিমির
পর্বঃ০৬
#সুমাইয়া_আফরিন

ইরা,লারা আর মিমি অনুকে এতটা উত্তেজিত দেখে প্রচুর অবাক হয়ে যায়। তারা ছাদ থেকে নিচে তাকাতেই দেখল, একজন বয়ষ্ক ভদ্র মহিলা আর ভদ্র লোক গাড়ি থেকে নামছেন। গাড়ির পেছন সিট থেকে একজন ইয়াং মেয়ে বের হয়ে আসলো। ইরা,লারা আর মিমি দেখেই চিনতে পেরে গেল তাদের। এরা অনুর দুঃসম্পর্কের চাচা, চাচী। অনুকে তারা অনেক আদর করে। বলতে গেলে মেয়ের মতো স্নেহ করে তাকে। অনু ইরা,মিমি আর লারাকে তাদের ফ্যামিলি ফোটো দেখিয়েছিল। সেখান থেকেই ইরা, লারা আর মিমি তাদের চেনে।

অনু নিচে নেমেই জড়িয়ে ধরল তার চাচীকে। তারপর তার চাচাতো বোন আরশিকে। আরশি অনুর খুব ভক্ত বলতে গেলে। আরশি তার মায়ের কথা যতটা শোনে তার থেকে অধিক বেশি অনুর কথা শোনে। অনুর চাচার আর্থিক অবস্থা অনুর পরিবারের থেকে অনেকটা ভালো। চাচা চাচী আর আরশিকে দেখে অনুর হাসি যেন থামতেই চাইছে না। অনুর চিৎকার চেচামেচি শুনে অনুর মা আর বাবা ভেতর থেকে বেরিয়ে এলেন। তারা হঠাৎ অনুর চাচা আব্দুল মোতালেবের আসা দেখে প্রচুর অবাক হলেন। অবাক হওয়াটা অবশ্য অনেক স্বাভাবিক কারন কাওকে কিছু না জানিয়ে তারা চলে এসেছেন।

অনুর বাবা মা অনেক কথা বার্তা বললেন তাদের সাথে। অনুর চাচার এখানেই একটা পুরোনো বাড়ি আছে। সেখানেই উঠেছেন তারা। কয়দিন পর আরশির বিয়ে তাই তারা এসেছেন নিমন্ত্রন করতে। অনু আরশির বিয়ে জানতে পেরে খুশিতে গদগদ করতে থাকল। আরশি লজ্জা লজ্জা মুখ করে অনুর পাশে দাঁড়িয়ে আছে। আরশি একটু এমনই বিয়ের কথা উঠলেই প্রচুর লজ্জা পায় সে। ছোটবেলায় টিভিতে কোনো স্মার্ট নায়ক দেখলেই তার সাথে বিয়ে করতে চাইতো সে। তবে এখন আর এমন কোনো পাগলামী করে না আরশি।

আরশির মা অনুর মায়ের হাতে বিয়ের কার্ড দিয়ে অনুকে একটু আদর করে চলে গেলেন। অনু অনেক জোড়াজুড়ি করল আরো কিছুক্ষন থাকার জন্য কিন্তু বিয়ের হাজারো কাজের জন্য তারা থাকতে পারলো না। অনুর একটু মন খারাপ হলেও তা প্রকাশ করলো না সে।

অনু নাচতে নাচতে উপরে চলে গেল। অনু নিজের ফোনের সাথে হেডফোন কানেক্ট করে মাথায় হেডফোনটি পড়ে নিল। তারপর গান ছেড়ে দিয়ে নাচা শুরু করে দিল সে। ইরা, লারা আর মিমি অনুর এমন কান্ডে হা করে তাকিয়ে আছে তার দিকে। ইরা নিজেকে আর সামলাতে না পেরে অনুকে উদ্দেশ্য করে বলল,

‘অনু রে, তোকে দেখে মনে হচ্ছে আরশির নয় তোর বিয়ে হচ্ছে।’

অনু হেডফোনটা ঠিক করে লাগিয়ে ইরার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইল। তারপর কান থেকে হেডফোন সরিয়ে বলল,

‘দোস্তো, বিয়ে করবো, ডিভোর্সটা দিয়ে নেই,তারপরই বিয়ে করে নেবো আমি।’

লারা বিরবির করে বলল,

‘ওর মাথা খারাপ হয়ে গেছে। চল আমরা ছাদে যাই।’

_____________

দেখতে দেখতে আরশির বিয়ে চলে এসেছে। আজকে আরশির গায়ে হলুদ। রিয়া এখনো অনুদের বাড়িতে আছে। এই কয়দিনে রিয়া অনেক চেষ্টা করেছে রাফাতের সাথে যোগাযোগ করার কিন্তু কোনোভাবেই সফল হয়নি সে। রাফাতকে ফেসবুকে ফ্রেন্ড রইকুয়েস্ট পাঠিয়েছে কিন্তু এক্সেপ্ট করেনি সে। তাই রিয়া ঠিক করে রাফাতের বাড়ির সামনে তার জন্য ফুল রেখে দিয়ে আসবে। অনু রিয়ার এমন পাগলামী দেখে শুধু মিটিমিটি করে হাসে।

দুপুরে গায়ে হলুদ আরশির। অনু অনেক আগে থেকেই রেডি হওয়া শুরু করে দিয়েছে। আরশির বিয়ে তাই অনুর ছোট বোন আর ভাইও এসেছে বাড়িতে। অনুর বোন আয়শা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্সের তৃতীয় বর্ষের স্টুডেন্ট। আর ভাই বুয়েটের প্রথম বর্ষের স্টুডেন্ট।অনুসহ অনুর ভাইবোনও পড়ালেখায় ভীষন ভালো। পড়ালেখার পাশাপাশি প্রাইভেট পড়িয়ে নিজেদের পড়ালেখার খরচ অনেকটা সামলিয়ে নিতে পারে তারা। অনু মাঝে মাঝে টাকা পাঠায় তাদের। তবে অনুকে তারা একটু ভয় পায়।

আজকে অনু হলুদ রঙের একটা শাড়ি আট পৌড়ে করে পড়েছে। গলায় একটা সিম্পল হাড় পড়েছে। অনু বেশি একটা সাজগোজ পছন্দ করে না কিন্তু আজকে যেহেতু তার বোন আরশির বিয়ে তাই একটু বেশি করে সাজবে সে। মুখে হালকা মেক আপ আর ঠোটে গাঢ় করে লাল লিপস্টিক নিল সে। হাতে কিছু লাল চুরিও পড়ে নিল। চুলটা সামনের দিকে হালকা ফুলিয়ে পেছনে একটা খোপা করল সে। খোপায় গোলাপ আর গাদাফুল মিশ্রিত মালা গেথে দিল সে। অনুদের গ্রামে সবাই বিছা পড়ে তাই অনুও কোমড়ে বিছা পড়ে নিল।

আয়নায় নিজেকে একবার পরখ করে নিল সে। নাহ,, তাকে বেশ সুন্দর লাগছে। অনু একটা মুচকি হাসি দিয়ে নিচে নেমে গেল। অনুর সাথে তার তিন বান্ধবীও যাবে। কারন আরশির বাবা মা তাদেরকেউ নিমন্ত্রন দিয়ে গেছে। ভাগ্য বশত সবাই একটা করে শাড়ি নিয়ে এসেছিল। যার জন্য কারোরই কোনো সমস্যা হয়নি। অনু নিচে নেমে দেখল সবাই রেডি হয়ে অনুর জন্য অপেক্ষা করছে। আজকে রিয়াও শাড়ি পড়েছে। রিয়াকেও বেশ সুন্দর লাগছে বলতে গেলে।

বাড়ি থেকে বেরিয়ে কিছুক্ষন হাঁটলেই অনুর চাচার বাড়ি। তাই সবাই হেটেই চলে গেল বাড়িতে। সবাই অনুকে একটু ঘুরে ঘুরে দেখছে। অনু বুঝতে পারল না সবাই এভাবে কেন দেখছে তাকে। এমন আহামরীও সুন্দর লাগছে না তাকে যে এভাবে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতে হবে তাকে। সবার এমন তাকানো প্রচুর ভাবাচ্ছে অনুকে। অনুর বাড়ির ভেতরে ঢুকে আরশিকে খুজতে লাগল। অনুর পেছন পেছন লারা, ইরা, মিমি আর রিয়া ঘুরছে। অনুর বাবা মা একটু কাজে ব্যস্ত হয়ে গেছেন।

অনু আরশিকে খুজতে খুজতে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে পড়ল। নিজের চারপাশ ভালো করে পরখ করে নিল সে। নাহ,, এখানেও আরশি নেই। বাড়ির এই জায়গায় কোনো মানুষজন নেই। থাকার কথাও না কারন এই জায়গাটা বাড়ির পেছনের দিকে। তারপর আবার হাটা ধরল সে। কিন্তু হঠাৎ কেউ তাকে ধাক্কা দিয়ে সামনে চলে যেতে নিল। ধাক্কাটা বেশ জোড়েসোড়েই ছিল যার কারনে অনু মাটিতে পড়ে যেতে নিল। কিন্তু হঠাৎ কেউ তার কোমড় জড়িয়ে আকড়ে ধরল তাকে। অনু পড়ে যাওয়ার ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলেছে। চোখ খুলে নিজেকে রাফাতের কোলে আবিষ্কার করল সে।

রাফাতের এমন কাজে রাগে ফোসফোস করছে অনু। রাফাত নেশাভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অনুর দিকে।নিজের এত কাছে রাফাতকে দেখে অনুর খুব বিরক্ত লাগছে। অনু নিজেকে সামলিয়ে রাফাতকে এক ধাক্কায় দূরে সরিয়ে দিল নিজের থেকে। রফাত অনুর এমন কাজে একটু অবাক হলো কিন্তু তা প্রকাশ করল না। ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইল তার দিকে। অনু দাঁত কিটমিট করতে করতে বলল,

‘দেখে চলতে পারেন না? চোখে কি কাপড় বেধে ঘোরাফেরা করেন নাকি?’

‘I,m sorry. দেখতে পায়নি আমি।’

‘তা পাবেন কেন? অসহ্যকর!’

অনু আর কোনো কথা না বাড়িয়ে হনহন করে চলে গেল। রাফাত নির্বিকারভাবে তাকিয়ে আছে তার যাওয়ার দিকে। রাফাত অনুর ব্যবহারে অনেকটা অবাক হয়েছে। কারন প্রত্যেকটা মেয়ে তাকে দেখে ক্রাশ খায় অথচ এই মেয়ে তাকে রাগ দেখিয়ে চলে গেল। অনুর দিক থেকে রাফাত চোখ সরিয়ে নিল কারন তার জোবনে অন্য কেউ আছে। যার সাথে তার সাত বছর আগে বিয়ে হয়েছে। রাফাত চাইলেও অস্বীকার করতে পারবে না বিষয়টাকে। রাফাতের তো অন্য মেয়ের দিকে তাকানোও নিষেধ। তবে প্রায় সাত বছর আগে দেখেছিল সেই মেয়েটিকে আর এখনো পর্যন্ত দেখেনি তাকে রাফাত।
#সাত_সমুদ্রের_তিমির
পর্বঃ০৬
#সুমাইয়া_আফরিন

ইরা,লারা আর মিমি অনুকে এতটা উত্তেজিত দেখে প্রচুর অবাক হয়ে যায়। তারা ছাদ থেকে নিচে তাকাতেই দেখল, একজন বয়ষ্ক ভদ্র মহিলা আর ভদ্র লোক গাড়ি থেকে নামছেন। গাড়ির পেছন সিট থেকে একজন ইয়াং মেয়ে বের হয়ে আসলো। ইরা,লারা আর মিমি দেখেই চিনতে পেরে গেল তাদের। এরা অনুর দুঃসম্পর্কের চাচা, চাচী। অনুকে তারা অনেক আদর করে। বলতে গেলে মেয়ের মতো স্নেহ করে তাকে। অনু ইরা,মিমি আর লারাকে তাদের ফ্যামিলি ফোটো দেখিয়েছিল। সেখান থেকেই ইরা, লারা আর মিমি তাদের চেনে।

অনু নিচে নেমেই জড়িয়ে ধরল তার চাচীকে। তারপর তার চাচাতো বোন আরশিকে। আরশি অনুর খুব ভক্ত বলতে গেলে। আরশি তার মায়ের কথা যতটা শোনে তার থেকে অধিক বেশি অনুর কথা শোনে। অনুর চাচার আর্থিক অবস্থা অনুর পরিবারের থেকে অনেকটা ভালো। চাচা চাচী আর আরশিকে দেখে অনুর হাসি যেন থামতেই চাইছে না। অনুর চিৎকার চেচামেচি শুনে অনুর মা আর বাবা ভেতর থেকে বেরিয়ে এলেন। তারা হঠাৎ অনুর চাচা আব্দুল মোতালেবের আসা দেখে প্রচুর অবাক হলেন। অবাক হওয়াটা অবশ্য অনেক স্বাভাবিক কারন কাওকে কিছু না জানিয়ে তারা চলে এসেছেন।

অনুর বাবা মা অনেক কথা বার্তা বললেন তাদের সাথে। অনুর চাচার এখানেই একটা পুরোনো বাড়ি আছে। সেখানেই উঠেছেন তারা। কয়দিন পর আরশির বিয়ে তাই তারা এসেছেন নিমন্ত্রন করতে। অনু আরশির বিয়ে জানতে পেরে খুশিতে গদগদ করতে থাকল। আরশি লজ্জা লজ্জা মুখ করে অনুর পাশে দাঁড়িয়ে আছে। আরশি একটু এমনই বিয়ের কথা উঠলেই প্রচুর লজ্জা পায় সে। ছোটবেলায় টিভিতে কোনো স্মার্ট নায়ক দেখলেই তার সাথে বিয়ে করতে চাইতো সে। তবে এখন আর এমন কোনো পাগলামী করে না আরশি।

আরশির মা অনুর মায়ের হাতে বিয়ের কার্ড দিয়ে অনুকে একটু আদর করে চলে গেলেন। অনু অনেক জোড়াজুড়ি করল আরো কিছুক্ষন থাকার জন্য কিন্তু বিয়ের হাজারো কাজের জন্য তারা থাকতে পারলো না। অনুর একটু মন খারাপ হলেও তা প্রকাশ করলো না সে।

অনু নাচতে নাচতে উপরে চলে গেল। অনু নিজের ফোনের সাথে হেডফোন কানেক্ট করে মাথায় হেডফোনটি পড়ে নিল। তারপর গান ছেড়ে দিয়ে নাচা শুরু করে দিল সে। ইরা, লারা আর মিমি অনুর এমন কান্ডে হা করে তাকিয়ে আছে তার দিকে। ইরা নিজেকে আর সামলাতে না পেরে অনুকে উদ্দেশ্য করে বলল,

‘অনু রে, তোকে দেখে মনে হচ্ছে আরশির নয় তোর বিয়ে হচ্ছে।’

অনু হেডফোনটা ঠিক করে লাগিয়ে ইরার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইল। তারপর কান থেকে হেডফোন সরিয়ে বলল,

‘দোস্তো, বিয়ে করবো, ডিভোর্সটা দিয়ে নেই,তারপরই বিয়ে করে নেবো আমি।’

লারা বিরবির করে বলল,

‘ওর মাথা খারাপ হয়ে গেছে। চল আমরা ছাদে যাই।’

_____________

দেখতে দেখতে আরশির বিয়ে চলে এসেছে। আজকে আরশির গায়ে হলুদ। রিয়া এখনো অনুদের বাড়িতে আছে। এই কয়দিনে রিয়া অনেক চেষ্টা করেছে রাফাতের সাথে যোগাযোগ করার কিন্তু কোনোভাবেই সফল হয়নি সে। রাফাতকে ফেসবুকে ফ্রেন্ড রইকুয়েস্ট পাঠিয়েছে কিন্তু এক্সেপ্ট করেনি সে। তাই রিয়া ঠিক করে রাফাতের বাড়ির সামনে তার জন্য ফুল রেখে দিয়ে আসবে। অনু রিয়ার এমন পাগলামী দেখে শুধু মিটিমিটি করে হাসে।

দুপুরে গায়ে হলুদ আরশির। অনু অনেক আগে থেকেই রেডি হওয়া শুরু করে দিয়েছে। আরশির বিয়ে তাই অনুর ছোট বোন আর ভাইও এসেছে বাড়িতে। অনুর বোন আয়শা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্সের তৃতীয় বর্ষের স্টুডেন্ট। আর ভাই বুয়েটের প্রথম বর্ষের স্টুডেন্ট।অনুসহ অনুর ভাইবোনও পড়ালেখায় ভীষন ভালো। পড়ালেখার পাশাপাশি প্রাইভেট পড়িয়ে নিজেদের পড়ালেখার খরচ অনেকটা সামলিয়ে নিতে পারে তারা। অনু মাঝে মাঝে টাকা পাঠায় তাদের। তবে অনুকে তারা একটু ভয় পায়।

আজকে অনু হলুদ রঙের একটা শাড়ি আট পৌড়ে করে পড়েছে। গলায় একটা সিম্পল হাড় পড়েছে। অনু বেশি একটা সাজগোজ পছন্দ করে না কিন্তু আজকে যেহেতু তার বোন আরশির বিয়ে তাই একটু বেশি করে সাজবে সে। মুখে হালকা মেক আপ আর ঠোটে গাঢ় করে লাল লিপস্টিক নিল সে। হাতে কিছু লাল চুরিও পড়ে নিল। চুলটা সামনের দিকে হালকা ফুলিয়ে পেছনে একটা খোপা করল সে। খোপায় গোলাপ আর গাদাফুল মিশ্রিত মালা গেথে দিল সে। অনুদের গ্রামে সবাই বিছা পড়ে তাই অনুও কোমড়ে বিছা পড়ে নিল।

আয়নায় নিজেকে একবার পরখ করে নিল সে। নাহ,, তাকে বেশ সুন্দর লাগছে। অনু একটা মুচকি হাসি দিয়ে নিচে নেমে গেল। অনুর সাথে তার তিন বান্ধবীও যাবে। কারন আরশির বাবা মা তাদেরকেউ নিমন্ত্রন দিয়ে গেছে। ভাগ্য বশত সবাই একটা করে শাড়ি নিয়ে এসেছিল। যার জন্য কারোরই কোনো সমস্যা হয়নি। অনু নিচে নেমে দেখল সবাই রেডি হয়ে অনুর জন্য অপেক্ষা করছে। আজকে রিয়াও শাড়ি পড়েছে। রিয়াকেও বেশ সুন্দর লাগছে বলতে গেলে।

বাড়ি থেকে বেরিয়ে কিছুক্ষন হাঁটলেই অনুর চাচার বাড়ি। তাই সবাই হেটেই চলে গেল বাড়িতে। সবাই অনুকে একটু ঘুরে ঘুরে দেখছে। অনু বুঝতে পারল না সবাই এভাবে কেন দেখছে তাকে। এমন আহামরীও সুন্দর লাগছে না তাকে যে এভাবে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতে হবে তাকে। সবার এমন তাকানো প্রচুর ভাবাচ্ছে অনুকে। অনুর বাড়ির ভেতরে ঢুকে আরশিকে খুজতে লাগল। অনুর পেছন পেছন লারা, ইরা, মিমি আর রিয়া ঘুরছে। অনুর বাবা মা একটু কাজে ব্যস্ত হয়ে গেছেন।

অনু আরশিকে খুজতে খুজতে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে পড়ল। নিজের চারপাশ ভালো করে পরখ করে নিল সে। নাহ,, এখানেও আরশি নেই। বাড়ির এই জায়গায় কোনো মানুষজন নেই। থাকার কথাও না কারন এই জায়গাটা বাড়ির পেছনের দিকে। তারপর আবার হাটা ধরল সে। কিন্তু হঠাৎ কেউ তাকে ধাক্কা দিয়ে সামনে চলে যেতে নিল। ধাক্কাটা বেশ জোড়েসোড়েই ছিল যার কারনে অনু মাটিতে পড়ে যেতে নিল। কিন্তু হঠাৎ কেউ তার কোমড় জড়িয়ে আকড়ে ধরল তাকে। অনু পড়ে যাওয়ার ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলেছে। চোখ খুলে নিজেকে রাফাতের কোলে আবিষ্কার করল সে।

রাফাতের এমন কাজে রাগে ফোসফোস করছে অনু। রাফাত নেশাভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অনুর দিকে।নিজের এত কাছে রাফাতকে দেখে অনুর খুব বিরক্ত লাগছে। অনু নিজেকে সামলিয়ে রাফাতকে এক ধাক্কায় দূরে সরিয়ে দিল নিজের থেকে। রফাত অনুর এমন কাজে একটু অবাক হলো কিন্তু তা প্রকাশ করল না। ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইল তার দিকে। অনু দাঁত কিটমিট করতে করতে বলল,

‘দেখে চলতে পারেন না? চোখে কি কাপড় বেধে ঘোরাফেরা করেন নাকি?’

‘I,m sorry. দেখতে পায়নি আমি।’

‘তা পাবেন কেন? অসহ্যকর!’

অনু আর কোনো কথা না বাড়িয়ে হনহন করে চলে গেল। রাফাত নির্বিকারভাবে তাকিয়ে আছে তার যাওয়ার দিকে। রাফাত অনুর ব্যবহারে অনেকটা অবাক হয়েছে। কারন প্রত্যেকটা মেয়ে তাকে দেখে ক্রাশ খায় অথচ এই মেয়ে তাকে রাগ দেখিয়ে চলে গেল। অনুর দিক থেকে রাফাত চোখ সরিয়ে নিল কারন তার জোবনে অন্য কেউ আছে। যার সাথে তার সাত বছর আগে বিয়ে হয়েছে। রাফাত চাইলেও অস্বীকার করতে পারবে না বিষয়টাকে। রাফাতের তো অন্য মেয়ের দিকে তাকানোও নিষেধ। তবে প্রায় সাত বছর আগে দেখেছিল সেই মেয়েটিকে আর এখনো পর্যন্ত দেখেনি তাকে রাফাত।

চলবে,

(ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)
চলবে,

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here