#সুপ্ত_ভালোবাসা
#পর্ব_১৫
#Tahmina_Akther
-তো বল তোদের দুজনের মাঝে মিল মোহাব্বত আছে তো?
আমি এই কথা শুনে নানুর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি। উনি তাহলে এই কথা বলার জন্য আমাকে টেনে নিয়ে এসেছে এই রুমে।
-কি রে চুপ করে কি ভাবিস? নাকি এখনো আমার নাতিকে ভালোবাসতে পারসি নি হিয়া?
আমি আর চোখ তুলে চেয়ে নানুর দিকে তাকাতে পারলাম না। কিভাবে বলব আমি এখনো যে অভিককে ভালোবাসতে পারিনি?
-নানু, আসলে তুমি তো সব জানো তাই না? আমি চেষ্টা করছি যেন অভিককে ভালোবাসতে পারি কিন্তু আমি পারছি না।
বেশ হতাশের সুরে বললো হিয়া।
নানু শোয়া থেকে উঠে বসলেন। তারপর আমার হাত ধরে বললেন,
-আরে পাগলি ভালোবাসা কখনো চেষ্টা করে হয় না। ওটা ব্যস এমনিতেই হয়ে যায়।
যখন ভালোবাসা হবে তখন টেরও পাবি না কিভাবে হলো? কিন্তু, তোদের দুজনের এখন বিয়ে হবে সারাজীবনের জন্য দুজন এক হয়ে যাবি ভালো-মন্দ, সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না জীবনের সকল উত্থান-পাত্থান একসাথে তোদের দুজনকে জয় করতে হবে।
তবে কি জানিস ভালোবাসায় শুধু একজনের ভালোবাসা দিয়ে কিছুই হয় না দুজন দু’জনকে সমানভাবে ভালোবাসলে জীবনের সব তিক্ততা একসময় মধুতে পরিণত হয়।
হয়তো ভাবছিস আমি কেন তোকে এইসব বলছি? আমি জানি আমার অভিককে কখনো এইসব বলে দিতে হবে না। কারণ, সে যখন বুঝেছে তোকে ভালোবাসে ঠিক তখনি সে তার পরিবারকে বলেছে। এই কাজটাই বা ক’জন করে? তুই বুদ্ধিমতি মেয়ে আশা করি তুই অভিকের ভালোবাসাকে সম্মান করবি।
আমি বেশ মনোযোগ দিয়ে নানুর কথা গুলো শুনছি। আসলেই তো অভিক তার জায়গা তার ভালোবাসাকে প্রাপ্য স্থানে রেখেছে আর আমি সামান্য ওর ভালোবাসাকে গ্রহন করতেও ভয় পাচ্ছি। কিন্তু, কেন এর উত্তর আমার জানা নেই?আর উত্তর থাকলেও আমার জানতে ইচ্ছে করে না।
—————-
ছাদ থেকে নেমে অভিক বাড়ির বাগানে চলে এলো যেখানে হলুদের অনুষ্ঠানের জন্য ফুল দিয়ে সাজানো হচ্ছে। অভিক সব খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে সব ঠিক মতো হচ্ছে কি না। সবকিছুই হিয়ার পছন্দসই সাজনো হচ্ছে।
অভিকের পেটে বেশ খুদা অনুভব হচ্ছে তাই বাড়ির ভিতরে ঢুকে রান্নাঘরে উঁকি দিলো। তার মা আর হিয়ার মা আরো কয়েকজন মিলে রান্নাবান্না করছে, কেউ সবজি কাটছে তো কেউ মসলা ব্লেন্ড করছে। অভিক আস্তে করে ওর মা’কে ডাক দিলো। ছেলের ডাক শুনতে পেয়ে জায়ের কাছে রান্নার দায়িত্ব দিয়ে ছেলের কাছে এসে দাড়ালো।
-কি হয়েছে বাবা? ডাকছিস কেন? কিছু লাগবে?
-আসলে, মা বেশ খুদা লেগেছে। রান্না হয়েছে কিছু হয়ে থাকলে খেতে দাও তো। আবার একটু পরেই মার্কেটে যেতে হবে।
-তুই যেয়ে গোসল করে ফেল ততক্ষণে রান্না হয়ে যাবে।আর শোন তোর নানুকে, হিয়াকে আর তোর বন্ধুদের সাথে করে নিয়ে আসিস খাবার টেবিলে।
-নানু আবার কখন এসেছে মা? আমাকে বললে না যে?নানু কই?
-এইতো একটু আগেই এসেছে। হিয়ার সাথে কি যেন কথা আছে তাই ওকে নিয়ে উপরের ঘরে চলে গেলো।হয়তো আমার রুমে আছে দেখ গিয়ে। আমার কাজ আছে আমি যাই তুই চলে আসিস সবাইকে নিয়ে।
বলেই মা চলে গেলো আর আমি চললাম গোসল করতে এরপরে যাবো নানুর খোঁজে।
————-
আমি আর নানু কথা বলছিলাম আর হাসছিলাম। আমাদের হাসির কারণ হলো অভিক। ওর বন্ধুরা যে ওকে নিয়ে মজা করেছিলো ছবি নিয়ে তাই বলছিলাম নানুর সঙ্গে। এরই মাঝে কে যেন দরজা ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করলো?
অভিক এসেছে বেশ ভালোভাবে লক্ষ্য করতে দেখলাম ও হয়তো মাত্রই শাওয়ার নিয়ে এসেছে। সামনের ছোট চুল গুলো ভিজে লেপ্টে আছে সারা কপাল জুড়ে। গায়ের সাদা পাঞ্জাবিও দেখছি হালকা ভিজে আছে। বেশ স্নিগ্ধ দেখাচ্ছিলো ওকে।
হটাৎ আমার কাধে কারো ধাক্কা পেতেই সম্বিত ফিরে পেলাম। তাকিয়ে দেখি নানু আমার দিকে চেয়ে মিটমিটিয়ে হাসছে এতক্ষণে খেয়াল এলো আমার কি করছিলাম আমি!
অভিক এগিয়ে এসে ওর নানুর কোলে মাথা পেতে শুয়ে পড়লো। আর ওর নানুও নাতিকে দেখে অনেক খুশি হলেন বোধহয়।
-কি রে ভাই তোর তো খবরই নাই। নাকি তোর ফুলরে পেয়ে আমাকে ভুলে গেছিস?
-কি যে বলো না নানু তোমাকে কি ভুলা যায়। তবে আমার যে একখান মিষ্টি বৌ তাকে দেখলে কি আর দুনিয়া দারির খবর থাকে বলো তুমি?
বেশ ইনোসেন্ট মার্কা লুক নিয়ে কথাগুলো বললো অভিক। আর আমি ওর কথা শুনে লজ্জায় মরে যাচ্ছিলাম।
আমি উঠে চলে যেতে চাইলাম কিন্তু আমার ওড়না ধরে আঁটকে ফেললো অভিক।
আমি বেশ কয়েকবার ওর হাত থেকে ওড়না ছাড়াতে চেয়েছিলাম। কিন্তু, ও যেন আরোও জোরে
ওড়না হাতের মুঠোয় নিয়ে রেখে দেয়।
-এত জোড়াজুড়ি করে লাভ নেই,ফুল। এখানে এসে বসো। আমরা সবাই একসঙ্গে দুপুরের খাবার খাবো।
কি আর করার অগত্যা নানুর পাশে এসে বসলাম। নানু আমাদের কান্ড দেখে হাসছে আর বলছে,
-কে বলে আমার নাতি তোর চেয়ে বয়সে ছোট? তুই তো দেখি ওর কথায় এই রুম থেকে বের হতি পারিস না হিয়া।
-নানু বয়সে বড় হল হয় না বুঝলে একটু জ্ঞানীও হতে হয়। আর আমাদের ফুলের সেই জ্ঞান নেই। তবে আমি ফুলকে দিয়ে যতকিছু করাতে পারিনা কেন? শুধু একটি জায়াগায় পারিনা, আর তা হলো ওকে আমি জোর করতে পারিনা আমাকে ভালবাসার জন্য।
ওকে আমি বলতে পারিনা, যে ফুল তুমি আমায় ভালোবাসো।
আমি অভিকের কথাগুলো শুনে মাথা নিচু করে ফেললাম। আসলেই ওর আমার প্রতি ভালোবাসা দেখলে নিজের কাছেই ছোট হয়ে যাই, লজ্জিত হই।
-হয়েছে এত কাব্যিক কথার দরকার নেই। তোরা বস আমি গোসল করে আসি। নামাজের সময় চলে যাচ্ছে।
বলে উঠে চলে গেলেন অভিকের নানু। অভিক এবার শোয়া থেকে উঠে বসলো। এরপর, হিয়াকে ডাকলো,
-ফুল, এই ফুল।
-বলো, শুনতে পাচ্ছি।
-তুমি তো মুখ নিচু করে রেখেছো এভাবে কি আর কথা বলা যায়?
-এবার হয়েছে বলো কি বলবে?
অভিকের চোখে চোখ রেখে বললো হিয়া।
-সকাল থেকে একবার তোমার মুখটি কাছ থেকে দেখতে পারিনি তাই একটু দেখলাম।
শুনো, খাওয়াদাওয়ার একটু পর আমরা সবাই মার্কেটে যাবো। তৈরি হয়ে থেকো।
-আমি মার্কেটে যেয়ে কি করবো?
-কি করবে মানে? তোমার বিয়ের কেনাকাটা তুমি করবে না তো কে করবে? তাছাড়া আবির, সাঈদ, মিরা আর তিয়ানাও সাথে যাবে।
-আচ্ছা, যাবো।
-একটা কথা জিজ্ঞেস করি ফুল? সত্যি করে বলবে কিন্তু?
-হু সত্য বলবো। আগে শুনি তুমি কি বলবে?
-আমাকে এখনও ভালোবাসতে পারোনি তাই না?
অভিকের কথা শুনে একটু অস্বস্তিতে পড়ে গেলাম। কি জবাব দিবো আমি ওকে? যখন ও আমাকে বলেছিলো, এই বিয়ে ভেঙে দিবে আমিই তখন ওকে বলেছিলাম আমি ওকে বিয়ে করতে রাজি আছি। তবে কেন যে আজও ওকে ভালোবাসতে পারিনি?
-ফুল তুমি আজও চুপ করে থাকবে? তবে চিন্তা করো না। আমি তোমায় আর ব্যাপারে কিছু বলবো না। শুধু আমার বিয়ে করা বৌ হলেই চলবে। অন্তত হাশরে যেন আল্লাহর কাছে তোমায় স্ত্রী হিসেবে পাই। এরচেয়ে, বড় চাওয়া আমার নেই।
-কি চাওয়ার নেই অভিক?
অভিক আর হিয়া তাকিয়ে দেখে ওদের নানু ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে ওদের দিকে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অভিক কথা ঘুরিয়ে বললো,
-বলছিলাম কিছু একটা। তোমার কি আরও দেরি হবে?
-হ্যা নামাজ শেষ করে নেই। তোরা যেয়ে খেয়ে নে। আমি আসছি।
অভিক হু বলে হিয়ার হাত ধরে রুম থেকে বেরিয়ে। পড়লো। দুজনের হাত পরস্পরের স্পর্শে দুজনের ভাবনা ভীষণ রকমের আলাদা।
কেউ ভাবছে, ফুলের এই হাত ধরে রাখারও আমার যোগ্যতা নেই তবুও আল্লাহ চেয়েছেন বলে পেরেছি।
আরেকজন ভাবছে,এই হাত ছুয়ে আজ তোমাকে কথা দিলাম অভিক তোমাকে পৃথিবীর সেরা সুখি মানুষের তালিকায় রাখবো। কারণ, তুমি যে আমার বড্ড স্নেহের!
#সুপ্ত_ভালোবাসা
#পর্ব_১৬
#Tahmina_Akther
হিয়ার হাত ধরে অভিক চলে এলো নিচে ডাইনিং টেবিলে। একটা চেয়ার টেনে বসিয়ে দিলো হিয়াকে এরপর রান্না ঘরে যেয়ে ওর মাকে বললো,
-মা, ফুল আর আমি এসেছি ডাইনিংয়ে খাবার দাও তো।
-তোর বন্ধুদের ডাক দিস নি?
-আন্টি ওর কি আর আমাদের মতো নাদানের দিকে খেয়াল থাকবে সে তো তার ফুলকে নিয়ে ব্যস্ত। একটিবার বললো না, দোস্ত খাবার খেয়ে নে। দেখিস হারামি তোকে আমার বিয়েতে নিয়ে না খাইয়ে রাখবো।
অভিকের কাঁধ চেপে বললো আবির। অভিকের মা হেসে ফেললেন ওদের কথা শুনে।
-তোমরা বসো বাবা আমি খাবার পাঠিয়ে দিচ্ছি।
রান্না ঘরে থেকে একে একে সব খাবার টেবিলে এনে সাজিয়ে রাখছে জরি খালা। অভিক আর হিয়া মিলে ওদের সব বন্ধুদের খাবার বেড়ে দিলো। অভিক সবাইকে খাবার দেয়ার পর হিয়াকে বলছে,
-ফুল তুমি বসে পড়ো। নয়তো দেখা যাবে তুমি মার্কেটে যেয়ে হাটতে পারবে না।
-কেন রে ভাই তোর বৌ কি বেশি খেয়ে ফেলবে আর যদি খেয়েও ফেলে কোলে নিয়ে হাটবি।
বলে বিদ্রুপের হাসি দিলো তিয়ানা।
অভিকের বেশ রেগে গেলো। তারপরও কিছু বললো না, কারণ তিয়ানা ওদের বাড়িতে গেস্ট হিসেবে এসেছে। জাস্ট একটু করে বললো,
-আসলে হিয়া বেশি খাবার একসাথে খেতে পারে না। ওর অস্বস্তি হয় তাই বলছিলাম আগে খেয়ে একটু রেস্ট নিতে।
তিয়ানার কথা শুনে বেশ লজ্জা পেয়েছে হিয়া। ও আর কারো দিকে মুখ তুলে তাকায় নি। হয়তো এই বিষয়টা অভিক খেয়াল করেছে।
সুপ্ত দীর্ঘশ্বাস ফেলে একটি প্লেটে ভাত আর ঝাল গরুর মাংস নিয়ে মেখে হিয়ার মুখের সামনে ধরলো।
মুখের সামনে ভাতের লোকমা দেখে চোখ তুলে তাকালো হিয়া ওমনি ওর চোখ দিয়ে গড়িয়ে পানি পড়লো। অভিক বেশ কষ্ট পেলো হিয়াকে কাঁদতে দেখে। একহাতে ওর চোখের পানি মুছে দিলো। এরপর হিয়াকে উদ্দেশ্য করে বললো,
-কারো কথায় কি আসে যায় বলো তো ফুল।তোমার জন্য যেটা সবচেয়ে বেস্ট তাই তুমি বাছাই করে নিবে। কারো কথায় মনে কষ্ট নিয়ে শুধু শুধু নিজেকে কষ্ট দেয়ার কোনো মানে হয় না বুঝলে এখন হা করো তো আমার হাত ব্যাথা হয়ে যাচ্ছে।
হিয়া হা করতেই অভিক খাইয়ে দিলো। আর তিয়ানা সে বেশ লজ্জা পেয়েছে নিজের বলা কথায়।
আবির, মিরা আর সাঈদ ওরাও মনে মনে বেশ খুশি হয়েছে অভিক উত্তর দেয়াতে।
হিয়াকে খাইয়ে অভিক খেতে শুরু করলো। এরইমাঝে অভিকের নানু আসলেন। এসে আরেকটি চেয়ার টেনে বসে পড়লেন। হিয়াকে আর অভিককে একসাথে বসতে দেখে হালকা হেসে হিয়াকে জিজ্ঞেস করলো, খেয়েছে কি না?
হিয়া মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললো। অভিকের নানু
অভিকের খাওয়া শেষ হওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন। অভিক বেসিন থেকে হাত ধুয়ে আসতেই ওর নানু ওকে বললেন,
-শুন অভিক তোর সাথে কিছু কথা আছে বস এখানে।
অভিক এসে বসে পড়লো। এবার ওর নানু অভিকের মা এবং হিয়ার মা’কে ডাকলেন। ওনারা ডাক শুনতে পেয়ে চলে এলেন।
এরপর সবার উদ্দেশ্য অভিকের নানু বললো,
-রেহনুমা, বিয়ের সময় কি বর কনে এক বাড়িতে
থাকে কোথাও দেখেছো?
– না আম্মা, কেন কি হয়েছে?
-কি হয়নি তাই বলো? অভিক আর হিয়ার বিয়ে হতে আর মাত্র তিনদিন বাকি ওরা এখনো একবাড়িতে থাকছে কেন?
-আসলে কি আম্মা?
– মা, তুমি কোনো কথা বলো না আমি বলছি নানুকে। নানু তুমি বলতে চাইছো আমরা এখন একবাড়িতে থাকছি এইটা বিশাল সমস্যা?
-বেশি বুঝবি না অভিক বিয়ের বর কনে এক বাড়িতে দেখতে খারাপ লাগে। যতই তোরা এক পরিবারের লোক তবুও। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি বিয়ে হবার আগ পর্যন্ত তুই বাড়ির বাইরের গেস্ট হাউজে থাকবি আর তোর হলুদের অনুষ্ঠান এবং বিয়ের চলন কমিউনিটি সেন্টারে এই গেস্ট হাউজ থেকেই যাবে।
আর তুই এই বিষয়ে একটাও কথা বলবি না। বিয়ের পর বৌকে সারাজীবন দেখিস তখন কেউ না করবে না।
-কিন্তু, নানু?
-কোনো কিন্তু না। আজ বিকেলে যেয়ে সব ধরণের কেনাকাটা শেষ করবি। আজকেই হিয়াকে দেখতে পারবি এরপর একেবারে বিয়ের পর। হিয়ার মা?
-জি খালাম্মা।
-আমি কি বলেছি সবাই বুঝেছো?
-জি খালাম্মা।
অভিক বেচারার অবস্থা তখন দেখার মতো ছিলো ওর বন্ধুরা মুখ টিপে হাসছিল আর হিয়া বেশ মজা পেলো অভিকের নানু সিদ্ধান্ত শুনে।
রাগে দুঃখে অভিক হিয়াকে টেনে নিয়ে চললো। হিয়াকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে দেখে অভিকের নানু বলে উঠলো,
-কি রে ওকে আবার হাত ধরে কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস?
-ওর রক্ত খাবো তাই নিয়ে যাচ্ছি খুশি?
বলেই চলে গেলো। আর ওরা দুজন চলে যেতেই পুরো টেবিলে যেন হাসির ফোয়ারা ছুটলো।
——————–
হিয়া বসে আছে অভিকের রুমে অভিক কি যেন বের করছে আলমারি থেকে। হয়তো পেয়ে গেছে একটি প্যাকেট হাতে নিয়ে হিয়াকে দিলো আর বললো,
-এটাতে যা আছে তা পরে নাও। একটু পর বের হবো।
হিয়া অভিকের হাত থেকে প্যাকেটটি নিয়ে ওর রুমে চলে এলো। প্যাকেট খুলে দেখলো একটি কলাপাতা রঙের শাড়ি আর একটি চিরকুট। আগে চিরকুটটি খুললো হিয়া। চিরকুটে লেখা,
“আজ থেকে না হয় তোমার জীবনের শুভ্র রঙকে চিরজীবনের জন্য বিদায় দিয়ে আর আমার রঙে নিজেকে রাঙিয়ে নিও। বড্ড বেমানান এই রঙ তোমার সাথে ”
প্রত্যেকটি শব্দ যেন আজ হিয়ার হৃদয়ে গিয়ে কম্পিত করলো। সত্যি কি তবে এই শুভ্র রঙকে বিদায় জানানোর সময় হয়েছে?
হিয়ার এবার শাড়িটিকে উল্টে পাল্টে দেখলো। বেশ বেশ চেনা চেনা লাগছে এই শাড়িটি। কিছুক্ষণ ভাববার পর মনে এলো। এটা সেই শাড়ি যেটা একবার মার্কেটে গিয়ে কিনেছিলো অভিক। শাড়ি কার জন্য নিয়েছে জিজ্ঞেস করাতে অভিক বলেছিলো,
-কিনলাম আমার প্রিয়তার জন্য। ওর গায়ে ভীষণ রকমের মানাবে এই শাড়িটি।
হিয়া বললো,
-ও তলে তলে আমাদের অভিক প্রিয়তার জন্য শাড়িও কেনে। তবে কে এই প্রিয়তা.?
-আছে, তাকে খুব গোপনে আমার বুকের বা পাশের কুটিরে রেখেছি। গোপন মূল্যবান সে আমার কাছে। তাই ও কে জিজ্ঞেস করো না কারণ তুমি আমার কাছে থেকে উত্তর পাবে না ফুল।
পুরোনো স্মৃতিচারণে হিয়া হারিয়ে গেলো। আর ভাবতে লাগলো, অভিকের প্রিয়তা তবে আমিই ছিলাম, ওর গোপন কুটিরে তবে আমাকে রেখেছিলো। একটি বার বুঝতেও দেয়নি পাগলটা। ভ্যাগিস, নিঝুম ভাইয়া বলেছিলো সে আমাকে পছন্দ করে বিয়ে করতে চায় নয়তো অভিক কখনোই ওর সুপ্ত ভালোবাসা কারো কাছে প্রকাশ করতো না।
হিয়া শাড়িটা পড়ে তৈরি হয়ে নিলো। মাথায় সাদা রঙের হিজাব বেঁধে নিলো। এরপর,বের হয়ে চলে গেলো ওর বাবার রুমে। গিয়ে দেখে ওর বাবা ঘুমাচ্ছে তাই আর না জাগিয়ে চলে গেলো অভিকের কাছে। অভিক তখন মোবাইলে কার সঙ্গে কথা বলছিলো।
দরজায় নক হতেই বললো,
-দরজা খোলা আছে। আসতে পারো।
না দেখেই বললো।
হিয়া এবার গলা খাঁকারি দিলো। অভিক ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো। ব্যস, ওমনি যেন ও বড় ধরনের ধাক্কা খেলো প্রায়। কারণ, সে ভেবেছিলো হিয়া হয়তো শাড়িটা পড়বে না কিন্তু ওকে অবাক করে দিয়ে শাড়িটি পড়েছে। কল কেটে দিয়ে এবার ভালো করে তাকালো হিয়ার দিকে।
ফর্সা গায়ে কলাপাতা রঙটি বেশ মানিয়েছে। মাথায় হিজাবটি পরাতেই যেন ওর চেহারাতে আলাদা জৌলুশ এনেছে। অভিক যেন মোহিত হয়ে গেছে হিয়ার আজকের রুপ দেখে।
হালকা হেসে হিয়ার সামনে গিয়ে দাড়ালো। এরপর, হিয়াকে বললো,
-অবশেষে আজ অনেক বছরের অপেক্ষার পর এই শাড়িটা তার আসল মালিককে খুজে পেলো।
#চলবে
#চলবে