সেই তুমি💐
পর্ব -২১+২২
Samira Afrin Samia
#Nipa
ইশিতা আর ইয়াশের বিয়ের তিন মাস। এই তিন মাসে অনেক কিছু পাল্টে গেছে। ইশিতা ইফান কে ভুলে নতুন করে ইয়াশ কে নিয়ে স্বপ্ন সাজিয়েছে।
এই তিন মাসে ইয়াশ ইশিতা কে নতুন একটি জীবন উপহার দিয়েছে। যে জীবনে দুখে আবছায়া ও নেই।
ইয়াশ এখন ইশিতা কে না দেখে এক মুহূর্ত ও থাকতে পারে না। অফিসে থেকে বার বার ফোন করে ইশিতার খোঁজ নেয়। ইশিতা কি করছে,খেয়েছে কিনা আরো কত কি। ইয়াশ
অনেক ভালোবেসে ফেলেছে ইশিতা কে। এখন তিন জন মানুষকে নিয়ে ইয়াশের পৃথিবী। একজন তার মা আর দুজন হলো ইশিতা ও তার বাচ্চা। বাচ্চা নিয়ে ইয়াশের কত ই না পাগলী। এখনই একটা রুম শুধু বাচ্চার খেলনা দিয়ে ভরে রেখেছে। ছেলে হবে না মেয়ে হবে তা না জানার কারনে ছেলে মেয়ের দু’ধরনের খেলনা জামা কাপড় নিয়ে এসেছে। ইশিতা মাঝে মাঝে ইয়াশের পাগলী দেখে অবাক না হয়ে পারে না।
একটা মানুষের ভালোবাসা এতোটা নিখাদ হতে পারে এটা ইয়াশ কে দেখে জানতে পারলো। ইয়াশ শুধু নিঃস্বার্থ ভাবে ইশিতা কে ভালোবাসা দিয়ে গেছে। ইয়াশের ভালোবাসার বদলে নেই কোন চাওয়া পাওয়া। যে দিন ইশিতা বিনা দ্বিধায় ইয়াশ কে মন থেকে ভালোবাসতে পারবে মন থেকে স্বামী হিসেবে মেনে নিতে পারবে সেদিনই ইয়াশ ইশিতার কাছে আসবে।
ইয়াশের মত একজন কে নিজের জীবন সঙ্গী হিসেবে পেয়ে ইশিতা নিজেকে অনেক ভাগ্যবতী মনে করে। ইশিতার ভাগ্য যে এতো টা সুখ লিখা ছিল তা ইশিতা স্বপ্নে ও ভাবেনি। মায়ের মত শাশুড়ি। হাজারো ভালোবাসায় গড়া ছোট একটা সংসার। এটাই তো সব সময় চেয়েছিল ইশিতা। জীবন চলার পথে এর থেকে বেশি আর কি ই বা প্রয়োজন পড়ে?
ইশিতা ওর নিজের প্রতি ইয়াশের নিখাদ ভালোবাসা দেখে কখন যে ইয়াশ কে ভালোবাসতে শুরু করেছে তা ইশিতা নিজেও জানে না। এমন একজন মানুষ কে না ভালোবেসে থাকা যায় নাকি?
ইশিতা এখন ইয়াশের প্রতি এতোটাই দূর্বল যে ইয়াশ কে ছাড়া জীবনের এক মুহূর্ত কল্পনা করলেও দম বন্ধ হয়ে আসে। পুরো পৃথিবী উলট পালট হয়ে যায়। ইয়াশের কথা ভেবেই এখন ইশিতার সময় কাটে। ইয়াশের ছবির দিকে তাকিয়ে এক একটা দিন পার হয়।
ইশিতার প্রেগন্যান্সির পাঁচ মাস। সন্তান গর্ভে আসলে মেয়েদের শরীরে স্বাভাবিক যেমন পরিবর্তন দেখা দেয়। ইশিতার মাঝে ও সেই পরিবর্তন গুলো দেখা দিয়েছে। খাওয়ায় প্রচন্ড অনিহা দেখা দিয়েছে। কিছুই খেতে পারে না। কিছু খেলে ই সাথে সাথে বমি হয়ে যায়। এখন তো ইশিতা নিজের ভেতর সেই ছোট প্রানটা কে অনুভব করতে পারে।
নাজমা চৌধুরী ইশিতা কে নিয়ে অনেক চিন্তায় থাকে। ইশিতার যাতে কোনো কিছুতে অবহেলা না হয় সেই দিকে অনেক খেয়াল রাখে। বংশের প্রথম সন্তান আসবে তার যাতে কোন অবহেলা না হয় তা নিয়ে নাজমা চৌধুরীর অনেক চিন্তা। ইশিতার সেবা যত্নে কোন কমতি রাখেন না তিনি। ইশিতা কে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে উনার নাতি বা নাতনি যেন খুব হেলদি হয়। রোগা পাতলা হলে একদম চলবে না।
ইশিতা রুমে শুয়ে ছিল। এই সময় অফিস থেকে ইয়াশ ফোন দেয়। ইশিতা ফোন তুলে কানে নেওয়ার সাথে সাথে ওপাশ থেকে ইয়াশ বলতে লাগলো
— সকালে খেয়েছো?
— হুম।
— খাওয়ার পর ডক্টর যে মেডিসিন গুলো দিছে ওগুলো ও খেয়েছো তো?
— হুম।
— হুম হুম করছো মানে খাও নি।
— আরে না খেয়েছি। সত্যি।
— আচ্ছা এখন কি করছো?
— শুয়ে আছি?
— শুয়ে আছো কেন?
শরীর খারাপ লাগছে নাকি?
মা কোথায় মাকে ডাকো। বেশি খারাপ লাগলে আমি আসছি।
— আপনি এতো ব্যস্ত হচ্ছেন কেন?
শরীর খারাপ লাগলেই কি শুয়ে থাকতে হয়। এমনিতে কি শুয়ে থাকা যায় না?
— তা যায়। কিন্তু তুমি তো এমনিতে শুয়ে থাকো না। তাই ভাবলাম হয়ত শরীর খারাপ লাগছে।
— হুম আপনি তো সব সময় একটু বেশিই ভাবেন।
— কি করবো বলো। একটা মাত্র বউ তাকে নিয়ে একটু বেশি না ভাবলে চলে নাকি?
— আপনার একটা মাত্র বউ। আর সবার তো মনে হয় দুইটা মাত্র বউ।
— সবার কথা আমার জানা নেই। তবে আমি আমার একটা মাত্র বউ আর একটা মাত্র বাবু কে নিয়ে অনেক ভাববো।
ইয়াশের কথা শুনে ইশিতা হেসে দিলো
— শুনুন না। আপনার বাবু টা কিন্তু দিন দিন অনেক পঁচা হয়ে যাচ্ছে।
— খবরদার আমার বাবু কে একদম পঁচা বলবে না।
কি করেছে ও তুমি তাকে পঁচা বলছো কেন?
— কি করেছে ও?
সারাক্ষণ আম্মু কে জ্বালায়। আম্মুর একটা কথা ও শুনে না বাবার মত শুধু ব্যাড বয় হচ্ছে। ইয়াশ কিছু বলতে যাবে তখনই ক্যাবিনের বাইরে থেকে কেউ দরজায় নক করলো।
— আচ্ছা ইশিতা পরে কথা বলছি একটু কাজ আছে।
— হুম।
আর হ্যা রাতে কখন বাসায় ফিরবেন?
— এই তো প্রতি দিন যেই টাইমে আসি।
— আজ একটু তাড়াতাড়ি আসা যায় না?
— তুমি বললে তো এখুনি আসতে পারি।
— আরে না। সন্ধ্যার দিকে আসলেই হবে।
— আচ্ছা বাবা ঠিক আছে।
এখন রাখি।
— হুম
ইয়াশ ফোন রেখে। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটা কে ভেতরে আসতে বললো। বাইরে থেকে একজন ভেতরে এসে। ইয়াশের সামনে দাঁড়ালো।
— হ্যা তার পর কি খবর নিয়ে আসলেন আজ?
— স্যার ইফান স্যার তো আগের থেকে অনেক চেইঞ্জ হয়ে গেছে।
ইফান এক গাল হেসে
— আর কিছু?
— হুম স্যার রিহার বাবা ইফানের সাথে রিহার বিয়ের কথা বলছে।
— ওহ আচ্ছা।
— হ্যা স্যার।
— আচ্ছা তাহলে এবার আপনি আসতে পারেন।
ইয়াশ এ দুই মাসে প্রতিটা মুহূর্ত ইফানের উপর নজর রেখেছে। ইফান কি করে, কোথায় থাকে, কার সাথে চলাফেরা করে ইত্যাদি। ইয়াশ ইফান কে টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে অনেক আগেই।আগে তো বাসা থেকে বের হওয়ার জন্য ও গাড়ির দরকার লাগতো এখন ইফান ভার্সিটিতে হেঁটে যায়। রিহার বাবার গাড়ি নিয়ে যেতে ইফানের সম্মানে লাগে। রিহার বাসা থেকেও নাকি কয়েক বার বের হয়ে গেছে। কিছু দিন রাফির সাথে থাকার পর রিহা আবার জোর করে ইফান কে ওর বাসায় নিয়ে গেছে।
ইফান যা যা করেছে তার কাছে ইয়াশ ইফানের সাথে কিছুই করেনি। শুধু ইফানের বিলাসিতা একটু কমিয়ে দিয়েছে। এতেই ইফান অনেক টা শিক্ষা পেয়ে গেছে।
ইফান রাফির সাথে ভার্সিটির বাইরে বসে আছে। রাফি অনেকক্ষণ ধরে বিরক্তি নিয়ে ইফানের দিকে তাকিয়ে আছে। ইফান মাত্র একটা সিগারেট শেষ করে আরেকটা ধরলো। ইফান সিগারেট টা জ্বালিয়ে সিগারেটে লম্বা এক টান দিয়ে সামনের দিকে ধোঁয়া ছাড়ছে। রাফি ইফানের হাত থেকে সিগারেট টা নিয়ে মাটিতে ফেলে দিলো।
— কি চাইছিস তুই?
ইফান রাফির কথায় কান না দিয়ে নিচে থেকে সিগারেট টা তুলে হাতে নিয়ে
— দেখ ভাই এমনিতেই আমি এখন ভিখারী। নিজের থাকার জায়গা নেই। অন্যের ঘাড়ে বসে খাচ্ছি। কিছু দিন পর দেখা গেল। এই সিগারেট কেনার জন্য ও তোদের কাছে হাত পাততে হবে।
তখন তোরা ও আমার থেকে আস্তে আস্তে দূরে সরে যাবি। ভিখারীর সাথে তো আর বন্ধুত্ব রাখা যায় না।
ইফান নিচে থেকে তুলে নেওয়া সিগারেট টায় আবার ফুক টানতে গেলে রাফি ঠাস করে ইফানের গালে একটা চড় মেরে।
— পাগল হয়ে গেছিস তুই?
দেখ তো এরকম করে নিজের কি অবস্থা করেছিস?
তোর কাছে এখনও সব কিছু আছে। কিছুই হারায় নি। তুই চাইলেই সব আবার আগের মত ঠিক হয়ে যাবে।
কেন শুধু শুধু নিজের লাইফ টা কে এভাবে নষ্ট করছিস?
ইফান গালে হাত দিয়ে
— কি জোরে মারলি রে ভাই। মনে হয় দাঁত কয়েকটা নড়ে গেছে।
— ইফান আমি কি বলছি তা কি তোর কানে যাচ্ছে?
— হুম।
রাফি রেগে গিয়ে
— কিসের হুম?
— তুই যা বলছিস তা আমার কানে যাচ্ছে।
— এমন কেন করছিস তুই?
আমি কি তোর খারাপ চাই?
তুই যাতে ভালো থাকিস সেজন্য আমি সব করতে পারি।তুই চাইলে আমি ইয়াশ ভাইয়ার সাথে কথা বলবো।
— একদম না।
— না কি?
তুই নাহয় রাগ করে বাড়ি ছেড়ে এসেছিস। তাই বলে কি একেবারে বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছিস। ওটা তোর বাড়ি। ওই বাড়িতে তোর মা তোর ভাই আছে। তুই কেন নিজের বাড়ি থাকতে অন্য কারো বাড়িতে থাকবি?
— ওরা যদি আমার মা,ভাই হত তাহলে আমি রাগ করে বাড়ি ছেড়ে চলে আসার পর আমাকে আবার ফিরিয়ে নিতে আসতো।
কই একবার ও কি কেউ এসেছে?
আসেনি কেউ আসেনি।
— ওরা আসেনি তো কি হয়ছে?
তোর বাড়ি থেকে তুই রাগ করে চলে এসেছিলি। এখন রাগ কমে গেছে এখন আবার ফিরে যাবি।
— আমার কি সেল্ফরেস্পেক্ট নেই?
আমি কেন নিজে থেকে ফিরে যাবো?
— দেখ তো এখানে সেল্ফরেস্পেক্ট এর কথা আসছে কেন?
তোর বাড়ি তুই যাবি। তুই আজ বাসায় যা দেখবি আন্টি ইয়াশ ভাইয়া অনেক খুশি হবে। তোকে ছাড়া উনারা ও ভালো নেই ইফান।
— আমাকে ছাড়া ও’রা অনেক ভালো আছে। তুই আমাকে বুঝাতে আসিস না রাফি।
রাফি আর কিছু বলার সুযোগ পেল না। রিহা চলে আসলো। রিহা এসে ইফানের হাত ধরে
— ইফান বেবী কখন থেকে ভার্সিটির ভেতর তোমাকে খুঁজে যাচ্ছি। আর তুমি এখানে রাফির সাথে দাঁড়িয়ে রোদে পুড়ে আড্ডা দিচ্ছো।
— কেন খুঁজছিলে?
— তোমার জন্য বাবা একটা সারপ্রাইজ প্লেন করেছে। আজ থেকে ঠিক দুই দিন পর তুমি সারপ্রাইজ টা পাবে।
রাফি রিহার দিকে তাকিয়ে
— তোর বাবা সারপ্রাইজ প্লেন করেছে ইফানের জন্য?
কেমনে সম্ভব বইন?তোর কিপ্টা বাপ….
রিহা রাফির কথায় রেখে গিয়ে
— রাফির বাচ্চা কি বললি তুই?
— না মানে তোর বাবা আমার আঙ্কেল এতো বড় মনের মানুষ তা ই বলছিলাম আর কি।
— তোমার বাবা আমাকে কিসের সারপ্রাইজ দিবে?
— তুমি ও না ইফান। বলে দিলে কি আর সারপ্রাইজ থাকবে?
— হুম।
ইয়াশ অফিসের কাজ তাড়াতাড়ি শেষ করে সন্ধ্যার আগে বাসায় চলে আসে।ইয়াশ রুমে এসে দেখে ইশিতা রুমে নেই। ইয়াশ শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে ইশিতা কে যেই ডাকতে যাবে ঠিক তখনই ইশিতা দরজার সামনে থেকে বলে উঠলো
— এই যে আমি এসে গেছি। আর ডেকে গলা ফাটাতে হবে না।
ইয়াশ শার্ট খুলে বেডের উপর রাখলো
— আজ তাড়াতাড়ি আসতে বলার কারণ কি?
ইশিতা ওয়ারড্রব থেকে একটা টিশার্ট বের করে ইয়াশের হাতে দিয়ে
— কারণ পরে জানা যাবে আগে ফ্রেশ হয়ে আসেন।
— আচ্ছা।
ইয়াশ ওয়াশরুমে চলে গেলে। ইশিতা বেডের উপর থেকে শার্ট টা হাতে নিয়ে ভাঁজ করে রেখে।
— আমি মায়ের রুমে যাচ্ছি। আপনি ফ্রেশ হয়ে মায়ের রুমে আসুন।
ইয়াশ ওয়াশরুম থেকে জবাব দিল।
— হুম।
ইয়াশ ফ্রেশ হয়ে নিচে নাজমা চৌধুরীর রুমে গেল। ইশিতা ইয়াশ কে দেখে নাজমা চৌধুরী কে বলতে লাগলো।
— আপনার ছেলে ও এসে গেছে।
ইয়াশ নাজমা চৌধুরীর পাশে বসতে বসতে ইশিতা কে জিঙ্গেস করলো
— আজ তোমার মাথায় কি চলছে?
অফিস থেকে ও তাড়াতাড়ি চলে আসতে বললে।
ব্যাপার টা কি?
— আজ আমি মা আপনি সবাই মিলে আইসক্রিম খেতে যাবো।
— এটা খুব ভালো কথা। আগে বললে আমি কোনো আইসক্রিম শপ বুক করে রাখতাম।
— আরে না। আমরা আইসক্রিম শপে না। রাস্তার পাশে দাঁড়ানো আইসক্রিমের ছোট দোকান গুলো থেকে আছে না। ওখান থেকে খাবো।
— ওয়াট?
— কিসের ওয়াট?
— আমি রাস্তায় দাঁড়িয়ে আইসক্রিম খেতে পারবো না। লোকে কি বলবে। আর ওই দোকানের আইসক্রিম গুলো ভালো না।
— কে বলেছে আপনাকে ওই দোকানের আইসক্রিম গুলো ভালো না?
আমরা ফ্রেন্ডস রা মিলে আগে অনেক খেয়েছি। কিন্তু রাতের বেলা না। রাতে মামা মামী বের হতে দিত না।
— যাই হোক আমি তোমাদের নিয়ে ভালো কোনো আইসক্রিম শপে যাবো।
ইশিতা একটু বাচ্চাদের মত করে
— মা দেখুন না। আপনার ছেলে কেমন করছে।
নাজমা চৌধুরী ইয়াশ আর ইশিতার দু’জনকে এমন করে ঝগড়া করতে দেখে একাই মনে মনে হাসছেন।
নাজমা চৌধুরী কড়া গলায় ইয়াশ কে বললো
— ইয়াশ বৌমা যা বলছে তা কর। তুই ওকে রাস্তার পাশের আইসক্রিমের দোকান থেকেই আইসক্রিম খাওয়াবি। এখন দু’জনে বাচ্চাদের মত ঝগড়া না করে বের হবার জন্য রেডি হ।
— আপনি ও আমাদের সাথে যাবেন মা।
— না রে মা। আমি এই রাতের বেলা আইসক্রিম খাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হতে পারবো না। এমনিতে ও বুড়ো হয়ে যাচ্ছি। শরীর টা ও আর আগের মত চলে না।
— রাতে না গেলে কাল দিনে যাবো।
— আরে আমি বলছি তোরা দুজন যা। আমি বাড়িতেই থাকি।
ইয়াশ নাজমা চৌধুরী কে উদেশ্য করে
— তুমি না গেলে আমরা ও একা যাবো না।
নাজমা চৌধুরীর মনে মনে রাগ হচ্ছে। তিনি দুজন কে একা পাঠাতে চান। দুজন কে আলাদা করে এক সাথে সময় কাটাতে দিতে চান। আর তার ছেলে বলছে মা’কে ছাড়া বউ কে নিয়ে একা যাবে না। নাজমা চৌধুরী মনে মনে
— এদের নিয়ে কোথায় যাবো আমি?
ছেলে ছেলের দুটোই এক রকম।
ইশিতা উঠে দাঁড়িয়ে তাহলে আমি রাতের জন্য রান্না বসাতে যাই।
নাজমা চৌধুরী রাগী কন্ঠে
— আমি বলেছি না। তোরা দুজন যা। আমার কথার কি কোনো মূল্য নেই। ছেলে তো বেশি বুঝেই ছেলের বউ তার থেকেও বেশি বুঝে। কোনো রান্না বসাতে হবে না। রান্না করার জন্য আমার বাড়িতে অনেক মানুষ আছে।
চলবে….
সেই তুমি💐
পর্ব -২২
Samira Afrin Samia
#Nipa
সন্ধ্যা বেলায় ইয়াশ আর ইশিতা বাইরে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে।
ইশিতা সুতির মাঝে বেগুনী রঙের একটা শাড়ি পড়লো। চুল হালকা ফুলিয়ে খোঁপা করেছে। চোখের নিচে খুব হালকা করে একটু কাজল। ব্যাস এইটুকু ই ইশিতার সাজ।
ইশিতা শাড়ির কুঁচি ঠিক করতে করতে ইয়াশের কাছে এসে।
— আপনি এখনও রেডি হন নি?
দেখেন আমি মেয়ে হয়ে আপনার আগে রেডি হয়ে গেছি। আর আপনি ছেলে হয়ে এখনও রেডি হন নাই।
কেমন লাগে এখন বলুন তো?
ইয়াশ হাতে বড় কালো ঘড়ি টা পড়তে পড়তে ইশিতার দিকে তাকিয়ে থমকে যায়। ইশিতা কে বরাবরই সুন্দর লাগে তবে আজ হালকা সাজে যেন, ইশিতা কে কোনো মায়াবী পরির মত লাগছে। চুল গুলো খোলা থাকলে হয়ত আরো সুন্দর লাগতো। তবে খোঁপা করাতেও কম সুন্দর লাগছে না। এই শাড়ির সাথে খোঁপা ই যায়।
ইশিতা ইয়াশের সামনে হাতের আঙ্গুলে তুড়ি বাজিয়ে
— কোথায় হারিয়ে গেলেন?
ইশিতার কথায় ইয়াশের ঘোর কাটলে। ইয়াশ ঘড়ি পড়তে নিলে। ইয়াশের হাত ফসকে ঘড়ি টা পড়ে যেতে নিলে ইশিতা ধরে ফেলে।
— কি করছেন?
এখুনি তো ঘড়ি টা নিচে পড়ে যেত।
ইয়াশ এবার কিছু টা স্বাভাবিক হয়ে নিজেকে সামলে নিয়ে
— এই ঘড়ি টা তিন তলার উপর থেকে পড়ে গেলেও কিছু হবে না।
ইশিতা মুখ মুচড় দিয়ে চলে যেতে লাগলে ইয়াশ পেছন থেকে ডেকে
— ইশিতা তোমাকে আজ বেশ সুন্দর লাগছে। মনে হচ্ছে আমারই নজর লেগে যাবে।
কপালে ছোট একটা টিপ লাগালে তোমাকে আরও সুন্দর লাগবে। আর কারো নজর ও লাগবে না।
ইশিতা ইয়াশের দিকে ফিরে না তাকিয়ে উল্টো দিকে দাঁড়িয়ে থেকেই একটু মুচকি হাসলো।
ইয়াশ হঠাৎ ইশিতা কে এমন ভাবে বলে উঠে নিজেই লজ্জা পেয়ে গেল। ইয়াশ ঘড়ি টা বা হাতে পড়ে মাথাটা হালকা ঝাঁকিয়ে আয়নার সামনে গিয়ে চুল ঠিক করতে লাগলো। ইশিতা কিছু না বলে রুম থেকে বের হয়ে গেল। ইশিতা রুম থেকে চলে গেলে ইয়াশ আনমনে হেসে দিলো।
সন্ধ্যা সাতটা বেজে প্রায় ত্রিশ মিনিট।
ইয়াশ হলরুমে দাঁড়িয়ে ইশিতা কে ডাকছে। ইশিতা নাজমা চৌধুরীর রুমে।
— মা নিজের খেয়াল রাখবে। আর রাতে খেয়ে মেডিসিন নিয়ে নিবে। আমাদের জন্য অপেক্ষা না করে তুমি শুয়ে পড়বে। আমরা বেশি লেট করবো না। তার পর ও এটুকু সময় তুমি একদম হাঁটাহাঁটি করবে না। তোমার কোমরে ব্যথা মনে আছে তো।
— হয়েছে বাবা হয়েছে।
এইটুকু সময়ের জন্য বাইরে যাচ্ছিস তার পর ও কত হুকুম চালিয়ে যাচ্ছিস। আমাকে কি তোর ছোট বাচ্চা মনে হয়?
আমি নিজের খেয়াল খুব করে রাখতে পারবো। তুই আমার জন্য টেনশন নিস না। বাইরে যা আর ইয়াশের সাথে একটু সময় কাটা।
বলতে বলতে ইয়াশ আবার ইশিতা কে ডাক দিল।
— ইশিতা আজ কি বের হবে?
— ওই যে দেখ ইয়াশ চেচাঁমেচি শুরু করে দিছে। এখন তুই না গেলে রেগে গিয়ে আজ আর কোথাও বের ই হবে না।
— আচ্ছা আমি যাচ্ছি। তোমাকে যা যা বলেছি মনে থাকে যেন।
ইশিতা সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে
— কি হয়েছে এভাবে ষাঁড়ের মত না চেঁচালে হয় না?
আমি তো আসছিলাম ই। কখন রেডি হয়ে বসে ছিলাম আপনার ই তো লেট হচ্ছিল। তাই তো আমি মায়ের রুমে গেছি।
ইশিতা বকবক করে সিড়ি দিয়ে নামছে। ইয়াশ এক নয়নে ইশিতার দিকে তাকিয়ে আছে।
ইশিতার কোনো কথা ইয়াশের কান পর্যন্ত পৌঁচাচ্ছে না। ইয়াশ তো ইশিতার মাঝে হারিয়ে গেছে সেই অনেক আগে।
— মনে হচ্ছে কানে শুনে না। আমি এতো কথা বলছি তা না শুনে আমার দিকে ভ্যাবলার মত তাকিয়ে হাবলার মত করে হাসছেন।
ইশিতা শাড়ির মাঝে পা প্যাচ লেগে পড়ে যেতে নিলে। ইয়াশ “” সাবধানে”” বলে চিৎকার দিয়ে উঠলো।
ইশিতা কোনো ভাবে সিড়ির রেলিং এ ধরে নিয়ে নিজেকে সামলে নিলো।
ইয়াশ ইশিতার কাছে গিয়ে ইশিতার হাত শক্ত করে ধরে।
— সাবধানে চলবে তো। এখুনি পড়ে যেতে নিচ্ছিলে। এখন পড়ে গেলে কি অবস্থা হতো তোমার?
ইশিতা ও ভয় পেয়ে গেছে। ইশিতা ভয়মিশ্রিত কন্ঠে
— বুঝতে পারিনি। হঠাৎ শাড়ির কুঁচিতে পা বেজে গেলে নিজের তাল সামলাতে পারিনি।
— ঠিক আছে। সমস্যা নেই। পরের বার থেকে সিড়ি দিয়ে নামার সময় একটু দেখে সাবধানে নেমো কেমন?
— হুম।
ইয়াশ কারে হেলান দিয়ে ডান হাত পকেটে রেখে এক পা উপুড় করে রেখে দাঁড়িয়ে অপলক দৃষ্টিতে ইশিতা কে দেখে যাচ্ছে। ইশিতা সেই কতক্ষণ সময় নিয়ে দু’হাতে দুটো আইসক্রিম নিয়ে খেয়ে যাচ্ছে। পুরো বাচ্চাদের মত করে ইশিতা আইসক্রিম খাচ্ছে। মুখের চার পাশে আইসক্রিম লাগিয়ে একাকার করে ফেলে। ইশিতা কে এভাবে আইসক্রিম খেতে দেখে চারপাশের সবাই ইশিতার দিকে কেমন ভাবে তাকিয়ে দেখছে।
ইয়াশ ইশিতা কে দেখছে আর নিজে নিজেই হেসে উঠছে। পাগল মেয়ে একটা এভাবে কেউ আইসক্রিম খায় নাকি?
মনে হয় ও এখনও তিন চার বছরের ছোট বাচ্চা।
ইশিতা হাতে থাকা আইসক্রিম দুটো শেষ করে আবার নতুন করে আইসক্রিম দিতে গেলে ইয়াশ গিয়ে বাঁধা দেয়।
— আর না আজকের জন্য অনেক হয়েছে। পুরো চারটা আইসক্রিম খেয়েছো। এখন আবার নিতে যাচ্ছিলে।
— হুম। তো কি হয়েছে?
— কি হয়েছে মানে? আজ আর একটা তো দূর আর অর্ধেক টা ও খেতে পারবে না।
— মাত্র তো চারটা খেলাম।
— চার টা ই অনেক। আর লাগবে না।
— এমন করছেন কেন?
আচ্ছা আপনার কাছে কি টাকা নেই? তাই বলে এমন করছেন। আমাকে আইসক্রিম খেতে না করছেন?
এখনই আপনার টাকা শেষ হয়ে গেল।
আচ্ছা আপনার কাছে টাকা না থাকলেও সমস্যা নেই এই আঙ্কেল আমাকে চিনে। সব সময় তো উনার কাছ থেকেই আইসক্রিম খেতাম। অনেক বার বাকিতে ও খেয়েছি।
ইয়াশ ইশিতার কথা শুনে হাসবে নাকি কাঁদবে তা বুঝে উঠতে পারছে না।
কি বলছে মেয়েটা এই শহরের সবথেকে বড় বড় আইসক্রিম শপ গুলো এক মিনিটে কিনে ফেলার সামর্থ্য রাখে ইয়াশ। আর ইশিতা বলছে ও নাকি চার আইসক্রিমের টাকা দিতে পারবে না। মেয়েটা কি বাচ্চা নাকি মাথায় বুদ্ধি বলতে কিছুই নেই।
— রিয়েলি?
তোমার এটা মনে হচ্ছে আমার কাছে টাকা নেই বলে তোমাকে আইসক্রিম খেতে দিচ্ছি না?
— তা নয়তো কি?
— তুমি চাইলে আমি এই শহরের সব গুলো আইসক্রিম শপ তোমার নামে করে দিতে পারি।
— তাহলে প্লিজ প্লিজ আর একটা আইসক্রিম খেতে দেন।
— না আর একটা ও না।
তোমার মনে নেই তুমি এখন একা না। তোমার ভেতর যে আর একজন আছে তার কথা একবার ও ভেবেছো। তুমি তো অনেক অনেক আইসক্রিম খেতে পারো কিন্তু সে কি পারে?
সত্যি ই তো ইশিতা তো এতক্ষণ শুধু নিজের কথাই ভেবেছে।
— আর খাবো না।
ইয়াশ এক গাল হেসে
— হুম।
— তাহলে চলুন এবার বাড়ি ফেরা যাক।
— বাড়ি তো যাবো ই তার আগে তুমি একবার নিজের মুখের অবস্থা টা দেখে নেও।
— আমার মুখের আবার কি হয়েছে?
— কি হয়নি তা বলো। আইসক্রিম দিয়ে পুরো মুখ একাকার করে ফেলছো। মুখের চারপাশে এখনও আইসক্রিম লেগে আছে।
— কই দেখি?
এটা বলে ইশিতা গাড়ির গ্লাসে নিজেকে দেখে নিলো। সত্যি ই মুখে আইসক্রিম লেগে কি হয়েছে। লোকে দেখে বলবে মেয়েটা মনে হয় কোনো দিন আইসক্রিম খায়নি। আজ ই প্রথম খেলো। ইশিতা শাড়ির আঁচল দিয়ে মুখ মুছতে গেলে ইয়াশ বাঁধা দিয়ে
— কি করছো?
— কি করছি মানে?
দেখতেই তো পারছেন মুখ মুছছি।
— শাড়ির আঁচল দিয়ে?
— না আপনার শার্ট দিয়ে। আজব তো দেখে দেখে এমন অদ্ভুত প্রশ্ন করেন কেন?
— অদ্ভুত প্রশ্ন এই জন্য করি। এখন শাড়ির আঁচল দিয়ে মুখ মুছে শাড়ি টা নোংরা করতে যাচ্ছো যে তাই।
— তাহলে কি দিয়ে মুছবো?
— এক মিনিট দাঁড়াও।
— দাঁড়িয়েই তো আছি।
ইয়াশ রাগী লুক নিয়ে ইশিতার দিকে তাকালে এবার ইশিতা একটু চুপ হয়ে দাঁড়ায়।
ইয়াশ পকেট থেকে রুমাল বের করে ইশিতার দিকে দু’পা এগিয়ে এসে নিজের হাতে ইশিতার মুখে লেগে থাকা আইসক্রিম গুলো মুছে দিতে লাগলো। ইশিতা ও লহ্মী মেয়ের মত কিছু না বলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো।
ইফান পাশে দাঁড়িয়ে সব কিছু দেখছিল। ইয়াশ আর ইশিতা কে এমন ভাবে দেখে ইফান হাতে থাকা আইসক্রিম গুলো মাটিতে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে চলে গেল।
ইফান সেই অনেকক্ষণ ধরেই এখানে দাঁড়িয়ে ইয়াশ আর ইশিতা কি করছে তা দেখছিল। ইফান রিহার সাথে এই রোডে ই কার নিয়ে যাচ্ছিল। রিহা আইসক্রিম দেখে বায়না করায় ইফান রিহার জন্য আইসক্রিম নিতে এসে ইয়াশ আর ইশিতা কে দেখে গেল। ওদের দুজন কে এক সাথে দেখে ইফানের মোটেও ভালো লাগেনি।
তাই রাগ সামলাতে না পেরে হাতে থাকা আইসক্রিম গুলো ই ফেলে দিলো। ইফান চলে গেলে ইয়াশ ইশিতার থেকে একটু দূরে সরে এসে রুমাল টা পেকেট ভরে নিয়ে
— হয়ে গেছে এবার চলো যাওয়া যাক।
— হুম।
ইয়াশ ইফান কে আগেই দেখে দিয়েছিল। যখন দেখলো ইফান ওদের কে দেখছে তখনই ইয়াশ ইফানের সাথে কথা বলতে যেত। কিন্তু ইফান ইয়াশের সাথে কথা বলবে না এটা ভেবেই ইয়াশ আর গেল না। ইশিতা যখন নিজের শাড়ির আঁচল দিয়ে মুখ মুছতে নিচ্ছিল তখন ইয়াশ ইফান কে দেখে ইচ্ছে করেই নিজের রুমাল বের করে নিজে ইশিতার মুখ মুছে দেয়। ইয়াশ যা ভেবেছিল তাই হয়েছে ইফান ওদের দুজন কে এক সাথে দেখে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠেছে।
রিহা করে বসে আছে। ইফান গিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে রাগে কটমট করতে লাগলো।
— কি হলো ইফান আইসক্রিম কোথায়?
তুমি তো আইসক্রিম আনতে গেছিলে। খালি হাতে চলে আসছো কেন?
আইসক্রিম কোথায়?
— আমি তোমার বাবার চাকর না। তোমার ইচ্ছে হলে তুমি নিজে আইসক্রিম এনে খাও। আমাকে বলছো কেন?
আমি কি তোমাদের বাড়ির কাজের লোক তুমি যা বলবে আমাকে তাই করতে হবে?
ইফানের কথা শুনে রিহা মুখ কালো করে
— এভাবে কথা বলছো কেন ইফান?
— তোমার সাথে যেভাবে কথা বলা উচিত আমি সেভাবেই বলছি।
— তুমি নিজেই তো ইচ্ছে করে আইসক্রিম আনতে গেলে। আমি তো তোমাকে বারণ করেছিলাম। বলেছিলাম আমি গিয়ে নিয়ে আসি। তুমি জোর করলে তাই তো আমি যাই নি।
ওখানে কি এমন হলো যার জন্য তুমি আমার সাথে এমন করতেছো।
— আমি এখন তোমার সাথে এই বিষয় নিয়ে কোনো কথা বলতে চাই না। যদি তোমার যেতে ইচ্ছে থাকে তাহলে আমি কার ড্রাইভ করছি। আর যদি তোমার এখানে থাকার ইচ্ছে থাকে তাহলে তুমি থাকো। আমি কার থেকে নেমে যাচ্ছি। তোমার বাবার গাড়ি নিয়ে তো তোমাকে রেখে চলে যেতে পারি না।
— আমি এখানে থাকতে যাবো কেন?
আমি ও তোমার সাথে যাবো।
ইফান কিছু না বলে কার স্টার্ট দিয়ে চলে গেল।
ইয়াশ ইফানের কারের দিকে তাকিয়ে আছে। ইয়াশ অবশ্য আগেই ইফান কে দেখেছিল তবে ইশিতা এখনও দেখে নি। না দেখে ভালোই হয়েছে ইফান কে দেখে শুধু শুধু এখন মোড অফ হয়ে যেত।
ইয়াশ আর ইশিতা ও আর কিছুক্ষন এখানে থেকে তার পর বাসায় চলে গেল।
দুই দিন পর রাতে রিহার বাসায় রিহার বাবা মনির চৌধুরী বেশ বড়সড় করে একটা পার্টি রাখলো। শহরে নামিদামি অনেক লোককেই পার্টিতে ইনভাইট করেছে। পার্টি টা মূলত ইফান কে ঘিরে রাখা হয়েছে। আজ এই পার্টিতে মনির চৌধুরী রিহা আর ইফানের বিয়ের এনাউন্সমেন্ট করবে।
মনির চৌধুরী পারলে ফন্দি করে আজ ই এনগেজমেন্ট করিয়ে ফেলতে পারে। সব কিছু তেমন ভাবেই ঠিক করা হয়েছে।
ইফান কে এসব বিষয়ে আগে থেকে কিছুই জানায়নি রিহা ও তার বাবা। ইফান যদি আগে থেকে জেনে রিহার সাথে বিয়ের জন্য না করে দেয়। তাই ইফানের থেকে লুকিয়ে রেখেছে পুরো টা বিষয় টা। মনির চৌধুরী ধারনা সবার সামনে বিয়ের এনাউন্সমেন্ট করে দিলে তখন আর ইফান কোনমতে না করতে পারবে না। আর যদিও না করে দেয় তখন সমাজে নিজের সন্মান বাঁচানোর দোহাই দিয়ে রাজি করিয়ে নিবে।
সে অনুযায়ী পার্টির জন্য খুব জাঁকজমক করে রিহাদের পুরো বাড়ি সাজানো হলো। বিকেল থেকেই এক এক করে গেস্টরা আসতে লাগলো। রিহা বিকেল থেকেই ইফান কে নিয়ে রুমে আছে। ইফান কে রুম থেকে বের হতে দিচ্ছে না। নিচে নামলে সারপ্রাইজ নষ্ট হয়ে যাবে তাই এক প্রকার জোর করেই ইফান কে রুমে আটকে রেখেছে। ইফান ও বাধ্য হয়ে রুমে বসে আছে।
— কি হচ্ছে রিহা? বিকেল থেকে রুমে বসে আছি আর কতক্ষণ?
— আরে বাবা একটু শান্তিতে বসে থাকো না। এতো তাড়া কিসের তোমার?
— তাড়া না পরেও নিচে কি হচ্ছে তা তো বলবে নাকি?
— বললাম না সারপ্রাইজ। নিচে গেলেই দেখতে পারবে।
চলবে….