সেই তো এলে তুমি পর্ব -১৮+১৯

#সেই_তো_এলে_তুমি
#পর্ব_১৮
#Saji_Afroz

গতকাল থেকে এখনো অবধি নিহির তায়শা কে ফোন দেয়নি। তায়শাও দেয়নি তাকে। গতকাল ফোন রেখেছিল নিহির। আজ তার ফোন দেওয়া না অবধি তায়শা দিতে পারে না। এতে করে নিজেকে ছোট করা হবে। কাল নিহিরের কণ্ঠস্বর অন্যরকম মনে হয়েছে তায়শার কাছে। এতদিন যে নিহির কে চিনেছে, গতকাল মনে হয়েছে অন্য এক নিহির সে। কী চলছে নিহিরের মনে বোঝা বড় দায়। এদিকে আশিকও অপেক্ষা করছে। নিহিরের আশা করতে গিয়ে আবার আশিকও হাত ছাড়া হয়ে যাবে না তো?
সেই রিকশাওয়ালার প্রস্তাবের কথা মনে পড়তেই তায়শা ঢোক গিললো। চিন্তায় তার মাথাটা ফেটে যাচ্ছে। কী আছে তাত কপালে কে জানে!
.
.
মাঝপথে হঠাৎ গাড়ি থামায় নিহির। বুশরা বলল, কোনো সমস্যা?
-আমার মাথায় একটা বিষয় ঘুরছে। কাকে শেয়ার করব বুঝছি না। আসলে সেইরকম কেউ আমার জীবনে নেই যে কথাটি শেয়ার করে নিজে শান্তি পাব। এদিকে মনে হচ্ছে কাউকে শেয়ার করতে পারলে মনটা হালকা হত। কোনো পরামর্শ পেতাম।
.
বুশরা কিছুটা সংকোচ করেই বলল, যদি কিছু মনে না করেন আমাকে বলা যায়?
.
নিহিরও একটু ভেবে বলল, আমি একজন কে খুব পছন্দ করি। প্রথম দিকে মনে হয়েছে তাকেই আমার চাই। কিন্তু এখন তাকে নিয়ে আমি কনফিউজড।
-ঠিক কী বিষয়ে কনফিউজড?
-আসলে তার কিছু আচরণ আমার কেমন যেন লাগছে। যেমন ধরুন কথাবার্তা, চালচলন …
.
নিহির কে থামিয়ে বুশরা বলল, আপনি যেমন চেয়েছিলেন উনি ঠিক তেমন নয়। এইতো?
-হয়তো!
-সময় নিয়ে একে অপরকে বুঝুন।
-সময় তো নেই। তার বাসায় বিয়ের জন্য প্রেসার দিচ্ছে।
আমি তো সময় নিয়েই এগোতে চেয়েছিলাম।
-আমার মনেহয় তাড়াহুড়ো করে জীবনের এত বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না। যেহেতু আপনি তাকে ভালোবাসেন কী না এই বিষয়েই শিওর না।
-তবে কী আমি তাকে ছেড়ে দেব?
-যার আচরণ, কথাবার্তা আপনার পছন্দ নয় তাকে সারাজীবন নিজের করে রেখে সহ্য কীভাবে করবেন? তবে একটা কাজ করতে পারেন। খোলামেলাভাবে দু’জনে আলোচনা করতে পারেন। তার কী পছন্দ নয় আপনি বলবেন, আপনার কী পছন্দ নয় তা উনাকে বলতে বলবেন। এতে যদি সমাধানে আসা যায় সামনে এগুতে সমস্যা কী?
.
বুশরার এই কথাটি ভালো লেগেছে নিহিরের কাছে। সে বুশরা কে ধন্যবাদ জানিয়ে বাড়ি পৌঁছে দেয়। এরপর সোজা চলে যায় তাহরিমার এলাকায়। ঠিক সেখানে গিয়ে দাঁড়ায়, যেখানে তাকে প্রথম দেখেছিল!
এরপর তাকে ফোন করে দ্রুত দেখা করতে বলল। তায়শা চটজলদি তৈরী হয়ে আসে। আশেপাশে তাকিয়ে গাড়িতে উঠে পড়ে। গাড়ি চলতে শুরু করলে তায়শা বলল, হঠাৎ এইভাবে ডাকলেন?
-ইচ্ছে হলো।
-আমি যদি না আসতাম?
-ইটস ওকে! সবসময় তুমি ফ্রি থাকবে কথা নেই।
-আপনার জন্য থাকব।
.
নিশ্চুপ হয়ে যায় দু’জনে। তায়শা নীরবতা ভেঙে বলল, যাচ্ছি কোথায় আমরা?
-রেস্টুরেন্টে।
.
তারা একটি রেস্টুরেন্টের সামনে এসে থামে। নিহির গাড়ি পার্ক করতে যায়। এসে দেখলো, তাহরিমা কিছু বাচ্চাকে কলা, চিপস, চকোলেট এসব কিনে দিচ্ছে।
.
নিহির এগিয়ে এসে বলল, পেমেন্ট আমি করি।
-করে দিয়েছি।
.
বাচ্চা গুলো তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে চলে যায়। তাহরিমা বলল, জানেন? আমার না এইসব বাচ্চাদের সাহায্য করার অনেক ইচ্ছে। কিন্তু আমার বাবার এত সামর্থ্য নেই যে অন্য কাউকে সাহায্য করতে পারব। আমি নিজেও স্টুডেন্ট। তাই ভাবতাম যদি বড় ঘরে আমার বিয়ে হয় তবে নিজের শখের সাথে সাথে এদের শখও পূরণ করব। কারণ আমি জানি, বড় ঘরে বিয়ে করা ছাড়া আমার এই উইশ পূরণ সম্ভব নয়। কারণ আজকাল একটা ভালো জবের জন্যেও প্রচুর টাকার প্রয়োজন। তাছাড়া আমাকে এতদিন বিয়ে না দিয়ে রাখবে না কি?
.
এই বলে শুকনো হাসি হাসলো তাহরিমা। তাহরিমার এই কথাগুলো শুনে নিহির বুঝতে পারলো, কেনো তার আচরণ এমন। যে যেই জিনিসটা পায় না, কিন্তু সেটির প্রতি প্রবলভাবে দূর্বল থাকে তার সেই জিনিসের প্রতি আকর্ষণ থাকাটাই স্বাভাবিক। তাছাড়া সে শুধু নিজেকে নিয়ে নয়, আশেপাশের অসহায়দের নিয়েও ভাবছে। তার চিন্তাধারা বেশ মহৎ।
নিহির ঠিক করলো তাহরিমা কে কোনো প্রশ্ন সে করবে না। তারা রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করে। খাবার অর্ডার দিয়ে নিহির হালকা একটু কেশে বলল, যদি কিছু মনে না করেন আপনার বাসার সদস্যদের সাথে আমার চাচী কথা বলতে পারবে?
-কী বিষয়ে?
-সেটা অবশ্য আপনার অনুমতি পেলেই আরকি। না মানে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার জন্যে।
-কার বিয়ে?
-আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাচ্ছিলাম।
.
কথাটি বলে লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো নিহির। জীবনের এত বড় একটা সিদ্ধান্ত তাড়াতাড়িই নিয়ে ফেলেছে সে? হোক না তাড়াতাড়ি। তাড়াতাড়িই না হয় প্রিয় মানুষটাকে নিজের করে পাক।
.
.
টেলিফোনের পাশে বেশ কয়েকবার ঘুরপাক দিয়ে গেছে বুশরা। যতবারই আসে কেউ না কেউ রুমে থাকে। হয়তো বা সেনোয়ারা বেগম বা অন্য কোনো কর্মচারী।
তাদের সামনে বাসায় ফোন দেওয়া সম্ভব না।
আজ নিহিরের মুখে তার ভালোবাসার কথা শুনে নওয়াজের সাথে কথা বলার জন্যে মনটা ছটফট করছে। কোনোভাবেই কী তার নাম্বার জোগাড় করা যায় না!
একমাত্র তায়শা বা নাফিশার কাছেই পাওয়া যাবে। এই ভেবে আবারও সে এলো।
কিন্তু ফোন দিয়ে পেল আলিয়া খাতুন কে। সে আবারও ফোন কেটে দেয়। আলিয়া খাতুনের মনে এইবার সন্দেহ জাগলো৷ নিশ্চয় এইভাবে হুটহাট ফোন বুশরা করে। মেয়েটার কথা মনে পড়ছে হুট করে।
ভালো আছে তো?
.
হঠাৎ তার বাড়িতে এলাকার এক মেয়ে এসে হাজির হয়। যার নাম মিতু। তাকে দেখে আলিয়া খাতুন বসতে বললেন। মিতু বসতে বসতে বলল, একটা খবর দিতে এলাম
-কী?
-বুশরার সাথে দেখা হয়েছিল। আপনাদের সাথে তো তার যোগাযোগ নেই এখন?
-নাহ।
-অন্যায় ও করেছে না থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বাইরে আপনাদের নিয়ে এমনভাবে বলে বেড়ায় যেন আপনারাই ওর শত্রু।
-মানে?
-আরে ওকে দেখলাম বড়লোক এক ছেলের সাথে। পরে গিয়ে কথা বলি। বললাম বাড়ি ফিরে যাও। সে বলে ওই জাহান্নামে যাব না আর। ওই ছেলের সামনে আরো কত কী যে বলল! এসব আমি মুখে আনতেও লজ্জা পাচ্ছি। যে ফুফু তাকে পেলেছে তার নামেই এত কথা! ছি ছি!
.
মিতুর কথা শুনে আলিয়ার রাগে পুরো শরীর কাঁপতে থাকে।
মিতু আরও কিছু কথা বলে বেরিয়ে পড়ে। সে বুশরা কে নিহিরের সাথে দেখেছে কিন্তু কথা বলেনি। বুশরার উপরে তার ক্ষোভ ছিল। আর তাই এতসব কিছু বানিয়ে বলেছে আলিয়া কে। সে চায়না বুশরার এখানে জায়গা হোক। কারণ সে চায়না নওয়াজ বুশরার হোক। সে নওয়াজ কে ভালোবাসে। আর বুশরা কে তার ফুফু ঘরে না তুললে যে নওয়াজের মাও ঘর ছাড়া কোনো মেয়ে কে পুত্রবধূ বানাবে না এটা জানে সে।
.
.
টেলিফোনের দিকে ছলছল নয়নে তাকিয়ে আছে বুশরা। নিখিল তাকে দেখে বলল, বাড়িতে কথা বলতে চান? বলতে পারেন।
-তায়শা বা নাফিশা কে প্রয়োজন ছিল আমার। কিন্তু তাদের কারোরই ফোন নাম্বার আমার মনে নেই।
.
বুশরার মন খারাপ দেখে নিখিল হেসে বলল, বোকা মেয়ে! তায়শার নাম্বার আমার কাছেই তো আছে।
.
বুশরা যেন আশার আলো দেখতে পেল। সে বলল, তাই তো! আমার একদম মনে ছিল না। প্লিজ দিন না আমায়।
-দিচ্ছি। কিন্তু আপনি বলতে পারবেন না আপনি এখানে আছেন। আবার দেখব পরে এখানে চলে এসেছে।
-ওকে বলব না। প্লিজ এইবার দিন।
.
নিখিল নাম্বার দিতেই তায়শা কে ফোন দেয় বুশরা। নিখিল বাইরে চলে যায় একটা কাজে।
এদিকে মাত্রই বাসায় এসে ড্রয়িংরুমে বসেছে তায়শা। আজ তার খুশির সীমা নেই। নিহির তাকে প্রস্তাব দিয়েছে বিয়ের৷ সে ইচ্ছে করেই নিহির কে জবাব দেয়নি। বলেছে মা কে বলে জানাবে। এখন মা কে কীভাবে বলবে তা ভাবছে। তখনি তার ফোনের রিং বেজে উঠলো। ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বুশরার কান্নাজড়িত কণ্ঠস্বর শুনতে পেল সে। তায়শা প্রায় চেঁচিয়ে বলল, বুশরা আপি!
-হু।
-কেমন আছ তুমি? এতদিন কোথায় ছিলে? আর এখন কোথায় আছ?
-আমি ভালো। তোরা সব?
-আমরাও ভালো। তুমি কই?
-সব বলব আমাকে আগে নওয়াজের ফোন নাম্বার টা দে না রে।
-নওয়াজ ভাইয়া দেশে এসেছে।
-কী বলছিস!
-হ্যাঁ সত্যি।
-ওর থেকে এখনের নাম্বার টা নিতে পারবি?
.
তায়শা কিছু বলার আগে তার থেকে ফোন কেড়ে নেয় আলিয়া খাতুন। এরমধ্যে নাফিশাও চলে এসেছে। সে মা কে বলল, তুমি কথা বলবে?
.
আলিয়া বলল, ওর সাথে কেউ কথা বললে আমার মরা মুখ দেখবি।
.
এই বলে ফোনের লাইন কেটে দেন তিনি। তায়শা ও নাফিশার সাথে তার ঝগড়া হয়৷ কিন্তু মা এর জেদের কাছে তারা হার মেনে নেয়। তাদের নিজের মাথায় হাত রেখে কসম করান, বুশরার সাথে কোনো ধরনের যোগাযোগ তারা করবে না।
.
এদিকে বুশরা নওয়াজের নাম্বার না পেলেও অনেক খুশি। সে দেশে এসেছে এটা তো জানা গেছে। নওয়াজের কাছে যাবে সে। ওই এলাকায় গিয়ে যদি অপমানিত হতে হয় তবে হতে রাজি সে তার ভালোবাসার জন্যে।
#সেই_তো_এলে_তুমি
#পর্ব_১৯
#Saji_Afroz

তানিশা কে নিয়ে শপিংমল এ এসেছে নওয়াজ ৷ তার মা বলেছে, তাড়াহুড়ো করে আকদ হলেও তানিশা কে বউ সাজতে হবে । তার যেন মন খারাপ না হয়৷ আর তাই তানিশা কে নিয়ে এখানে আসা।
তানিশা নিজের জন্যে অনেকক্ষণ যাবত খুঁজে একটি গোলাপি রঙের শাড়ি পছন্দ করেছে। সে নওয়াজ কে বলল, এই রঙে সমস্যা নেই তো? আসলে বিয়ের অনুষ্ঠানে ভাবছি লাল বা খয়েরী পরব।
-তোমার যা খুশি যাও।
-আচ্ছা ভাইয়া।
.
এই বলে জিভে কামড় বসায় তানিশা। আসলে ছোট থেকে নওয়াজ কে ভাইয়া ডাকাটা অভ্যেসে পরিণত হয়েছে। যদিও সে অনেক আগে থেকেই নওয়াজ কে পছন্দ করতো। কিন্তু কখনো বলা হয়নি ভয়ে। তার ছোট বেলার ভালোবাসার মানুষ কে নিজের করে পেতে চলেছে বলে মহাখুশি তানিশা। কিন্তু বিয়ের পরে তাকে কী ডাকবে? ভাইয়া বলে ডাকলে আশেপাশের সবাই হাসবে। এতদিনের অভ্যেস হুট করে বদলাবে কীভাবে। এই নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ে তানিশা।
এদিকে তানিশার মুখে ভাইয়া ডাক শুনে কেমন যেন লাগছে নওয়াজের কাছে। কোনোদিন ভাবেনি ছোট এই বোনটাকে তাকে বিয়ে করতে হবে। বুশরার উপরে রাগ করে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলছে না তো সে?
.
.
তায়শার এখন খুশির দিন। কিন্তু বুশরার ফোন আসার পর থেকে তার মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেছে৷ মেয়েটা এতদিন পরে তাকে ফোন দিয়েছে, আর তার মা এমন আচরণ করলো। আসলেই নিজের মা বাবা ছাড়া কেউ আপন হয় না। বুশরার বাবা তার সাথে কথা না বললেও প্রতি মাসে মেয়ের খরচ দিতে ভুলে না। কিন্তু সেখান থেকে একটা টাকাও কী বুশরা কখনো পেয়েছে? পায়নি। উলটা নিজের বাড়িতে থেকে শত অপমান সে সহ্য করেছে। একটু আগেও বুশরার বাবার টাকা এসে পৌঁছেছে আলিয়া খাতুনের কাছে। এই বাড়িতে বুশরার ঠাঁই নেই। অথচ তার নামে পাঠানো টাকার ঠাঁই ঠিকই আছে। এসব ভেবে দীর্ঘ একটা শ্বাস ফেললো তায়শা।
তার পাশে বসে নাফিশা বুশরার জন্য কাঁদছে। তায়শা তাকে শান্তনা দিলে সে বলল, এতদিন পর বোনটা ফোন দিলো। একটু কথাও বলতে পারলাম না। আমার খুব খারাপ লাগছে।
-খারাপ তো আমারও লাগছে রে। মা এর কী সমস্যা বুঝি না।
.
.
আজ বুশরার আনন্দের সীমা নেই। নওয়াজ দেশে আছে এর থেকে বড়ো আনন্দের খবর আর কী হতে পারে! তার জীবনের সকল দুঃখ মুছে যাবে। সে নওয়াজের কাছে ফিরে যাবে। কিন্তু নওয়াজ যদি তাকে ভুল বুঝে? এতদিনে নিশ্চয় তার মা কান ভারী করেছে। কিন্তু তায়শা তো আছে। সে সবটা তাকে খুলে বলবে, এই বিষয়ে নিশ্চিত বুশরা। একটাবার দেখা হোক নওয়াজের সাথে। সেও তাকে সবটা জানাবে। নিশ্চয় নওয়াজ তাকে অবিশ্বাস করবে না।
ইচ্ছে করছে এখুনি ছুটে যেতে। কিন্তু নিহির বাসায় নেই। তাকে না বলে বের হওয়াটা ঠিক হবে না৷ বলেই যেতে হবে। যদি নওয়াজ তাকে আর আসতে না দেয়? তাই নিহির কে বলেই সে যেতে চায়।
.
.
সন্ধ্যে হয়ে গেছে। নিহিরের অপেক্ষায় সারাঘর পায়চারি করছে বুশরা। তাকে এভাবে অস্থিরভাবে পায়চারি করতে দেখে নিখিল বলল, অস্থির দেখাচ্ছে আপনাকে।
-আসলেই তাইনা? অস্থির হয়ে আছি আমি।
-কেনো?
-আমার একটু বাইরে বেরুনো প্রয়োজন। কিন্তু নিহির স্যার বাসায় আসছেন না।
-বাইরে যাওয়ার সাথে ভাইয়ার কী সম্পর্ক?
-অনুমতির জন্য।
-আমি অনুমতি দিলাম।
.
বুশরা ভ্রু কুচকে বলল, জব তো আপনি দেননি আমায়। যিনি দিয়েছেন তার থেকেই নেব।
.
নিখিল হেসে তার ভাইকে ফোন দেয়। কিন্তু রিসিভ করে না। নিখিল বলল, ভাইয়া মনেহয় ব্যস্ত। ফোন রিসিভ করছে না। নাহলে ফোনেই নিয়ে নিতে পারতেন।
.
বুশরা চিন্তিত স্বরে বলল, রাত হবে না তো আসতে!
-অনেক সময় ভাইয়া অফিসেই থেকে যায়।
.
এই বলে মুচকি হেসে নিখিল নিজের রুমে চলে যায়। আর এদিকে বুশরা পড়ে যায় ভাবনায়। কী করবে সে এখন!
.
.
বর কনের কাপড় কেনা শেষ। এই কেনাকাটা ছাড়া আপাতত আর কোনো কেনাকাটা হচ্ছে না। একেবারে বিয়ের অনুষ্ঠানের সময় হবে। আগামীকাল নওয়াজের আকদ হবে। একদিকে হতাশায় ডুবে রয়েছে নওয়াজ। অন্যদিকে তানিশার খুশির সীমা নেই! এখনই সে তার আকদের শাড়ি পরে বাড়ির সবাই কে দেখাচ্ছে। কখন যে রাত পার হয়ে সকাল আসবে! সুন্দর একটি সকাল। তার জীবনের সবচেয়ে মধুর সকাল হবে এটি। যে সকালে ঘুম থেকে উঠেই সে অপেক্ষা করবে প্রিয় মানুষটির জন্যে। যোহরের নামাজের পর পরই কবুল বলবে সে। ভাবতেই আনন্দে লাফিয়ে উঠতে ইচ্ছে করছে তানিশার।
.
.
রাতে বাড়ি ফিরে নিহির। এসেই নিখিল কে খুঁজে সে। মিটিং এ ছিল বলে তার ফোন রিসিভ করতে পারেনি।
নিখিল কে এই কথা বলতেই সে বলল, বুশরা মেয়েটা খুঁজছিল তোমায়। সে না কি কোথায় যেতে চায়। পারমিশন এর জন্য।
-ও আচ্ছা।
.
নিহির বুশরার রুমের দিকে পা বাড়ালে তাকে থামিয়ে নিখিল বলল, মেয়েটাকে এত চাপে রেখেছে কেনো?
-আমি রাখিনি। সে নিজের কাজের প্রতি দায়িত্বশীল।
.
এই বলে নিহির বুশরার রুমে আসে। কিন্তু তাকে পায় না। সে মা এর রুমে আসে। দেখলো, বুশরা তার মা এর কপালে জলপট্টি দিচ্ছে। নিহির ব্যস্ত হয়ে বলল, কী হয়েছে মা এর?
-জ্বর এসেছে।
-আমায় জানাবেন না?
-মাত্রই এসেছে। সেনোয়ারা ম্যাডাম কে জানালাম। উনি ডাক্তার ডেকেছেন।
.
একটু বাদে ডাক্তার এসে তাকে মেডিসিন দিয়ে বলল, চিন্তার কিছু নেই। সময় মতো মেডিসিন গুলো খাওয়ান। সেরে যাবে।
.
ডাক্তার চলে গেলে নিহির বুশরা কে বলল, আপনি যেন কোথায় যেতে চেয়েছিলেন?
-হুম। কাল যদি আন্টির ভালো লাগে আমি কী একটু বেরুতে পারব?
-নিশ্চয়। দরকার হলে যাবেন। আমায় সবসময় বলতে হবে না।
-আসলে কাল গেলে আমি আর ফিরে নাও আসতে পারি।
.
অনেকটা অবাক হয়ে নিহির বলল, বাড়ি যাবেন?
-নাহ। যার জন্যে অপেক্ষা করছিলাম সে দেশে এসেছে। তার সঙ্গে দেখা করতে।
-ভালোবাসার মানুষ?
-জি।
-কীভাবে জানলেন দেশে এসেছে?
-নিখিল থেকে নাম্বার নিয়ে তায়শা কে ফোন দিয়েছিলাম তার ফোন নাম্বারের জন্যে। আসলে আমার কাছে ফোন না থাকাই নাম্বারও ছিল না। তায়শার ফোন থেকে কথা বলতাম। তায়শা বলল সে এসেছে।
-এটা তো ভালো খবর।
-হ্যাঁ। যদি যাই আমি নিশ্চিত সে আমায় আসতে দেবে না। আর যদি সময় চায় তবে আমি আবার আসব কিছুদিনের জন্যে।
-আপনার জন্য আমার ঘরের দরজা সবসময় খোলা। আপনি আমার মা এর জীবন বাঁচিয়েছিলেন, এই কথা আমি চাইলেও ভুলতে পারব না।
তবে আপনি চাইলে এখনো যেতে পারেন। নিশ্চয় তার সাথে দেখা করার জন্যে মন ছটফট করছে?
-তা করছে। কিন্তু আন্টিকে এভাবে রেখে গেলে আরও বেশি করবে। এটা আমার কাজ বলে নয়, আন্টির প্রতি গভীর মমতা অনুভব করি আমি। নিজের মা কে দেখিনি, আন্টির মাঝে মা কে খুঁজে পেয়েছি আমি। ভালোই হলো উনি এমন শিশুসুলভ আচরণ করেন। শুনেছি সন্তানের ছেলে বেলায় মা রাও না কি এমন আচরণ করেন সন্তানদের সাথে। আমিও সেই সময়টা ভেবে অনুভব করি।
.
নিহিরের মা কে দেখতে এসেছিল নিখিল। আড়াল থেকে তাদের কথোপকথন শুনে বুশরার প্রতি অন্যরকম একটা টান অনুভব করলো সে। মেয়েটা কত দুঃখী। অথচ সে কোনো দোষ না থাকার পরেও তার সাথে খারাপ আচরণ করতো। আর কাল সে চলে যাবে শুনে মনটাও খারাপ হয়ে গেছে। সত্যিই কী সে আর আসবে না এখানে?
.
.
সকাল হয়ে যায়। কিন্তু ফাহমিদা বেগমের জ্বর কমেনি। নিহির অফিসের উদ্দেশ্যে বেরুনোর আগে মা এর রুমে আসে। দেখলো বুশরা তার পাশে বসে আছে। নিহির বলল, জ্বর কমেনি?
-নাহ।
-দিপ্তীকে সব বুঝিয়ে দিয়ে আপনি যেতে পারেন।
-কিন্তু…
-আরেহ আমি বলছি তো! তাছাড়া দিনের বেলা আরও অনেকেই থাকবে। কোনো সমস্যা নেই।
-এখনো সকাল। ভাবছি দুপুর করে বেরুবো।
-আমি ড্রাইভার কে বলে রাখছি। গাড়ি নিয়ে যাবেন।
-ধন্যবাদ।
.
নিহির একটু থেমে বলল, ভালো থাকবেন। আর কোনো সমস্যা হলে আমাকে অবশ্যই জানাবেন।
.
কিছুটা সংকোচ নিয়ে বুশরা বলল, আমি কী মাঝেমধ্যে আন্টিকে দেখতে আসতে পারব?
-কালই বলেছিলাম, যখন খুশি আসবেন।
-ধন্যবাদ।
.
বুশরা কে বিদায় জানিয়ে নিহির বেরুলো। আজ নিজেকে অনেকটা হালকা মনেহচ্ছে তার। বুশরা তার সঠিক গন্তব্যে ফিরে যাবে। ভালো থাকুক মেয়েটা।
.
.
এদিকে ফাহমিদা বেগমেরও জ্বর অনেকটা কমে এসেছে। ঘড়িতে তাকিয়ে সময় দেখে নিলো বুশরা। সকাল এগারোটা। তার বেরুনো উচিত। সারারাত জেগে থাকায় তার চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ পড়েছে। তাই সে গোসল সেরে ভালো একটা পোশাক পরে নেয়। এরপর দিপ্তি কে সব বুঝিয়ে দিয়ে বেরুই সে। যাওয়ার সময় নিখিলের মুখোমুখি হয়ে যায়। নিখিল বলল, বেস্ট অফ লাক।
-কিসের জন্যে?
-প্রিয় মানুষের কাছে যাচ্ছেন তাই।
-ও আচ্ছা! কিন্তু আপনি কীভাবে জানলেন?
-আসলে কাল আপনাদের কথা ভুলবশত শুনেছিলাম।
-আচ্ছা! ভালো থাকবেন।
.
এই বলে বুশরা সিঁড়ি বেয়ে নামতে থাকে। তার পথের দিকে তাকিয়ে আছে নিখিল। মেয়েটা চলে যাচ্ছে বলে তার এতটা খারাপ লাগছে কেনো!
.
চলবে
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here