সে আমারঃ (আপডেট) ১ম পর্বঃ

সে আমারঃ (আপডেট)
১ম পর্বঃ
মোর্শেদা হাবিব
*************
সাহেদা পাথরের মত মুখ করে বসে আছেন।জীবনের সবচে বড় আঘাতটি আজ তাকে বিপর্যস্ত করে দিয়েছে!তিনি তার প্রিয়তম স্বামীকে হারিয়ে শোকে স্তব্ধ হয়ে গেছেন!
সকাল থেকেই সাহেদার বসত বাড়ী “নিরিবিলি হাউজে প্রচুর লোক আসছে!তার কারন আজ সকাল দশটার সময় সাহেদার স্বামী মাহমুদুল হক মারা গেছেন।ব্যবসায়িক মহলে তার যথেষ্ট নামডাক ছিলো সে সূত্রেই লোকজনের সমাগম।
গত কয়েকমাস ধরেই মাহমুদুল হক লিউকোমিয়া সহ নানান ধরনের অসুখে ভুগছিলেন।গত মাসেও তাকে নিয়ে ইন্ডিয়া গিয়েছিলেন সাহেদা!সেখানকার ডাক্তাররাও জানিয়ে দিয়েছেন তার বাঁচার কোনো আশা নেই!লিউকোমিয়ার লাষ্ট স্টেজ ছিলো এটা!চেন্নাইয়ে এক সপ্তাহ থাকার পর অবশেষে স্বামীকে নিয়ে ঢাকা চলে আসেন সাহেদা!
স্বামীর চিকিৎসার কোনো ত্রুটিই রাখেননি তিনি! কিন্তু সেখানে অহেতুক বিল বাড়ছিলো!তার চিকিৎসা করতে গিয়ে এমনিতেও টাকা খরচ হয়েছে পানির মতো!সাহেদা ভেতরে ভেতরে একেবারে ভেঙ্গে পড়েছেন!কেবল স্বামীর অসুখের দুশ্চিন্তাই নয় তার রেখে যাওয়া বিরাট ব্যবসাও দেখাশোনার অভাবে দেউলিয়া হতে বসেছে!উপরন্ত আঠারো লাখ টাকার মতো দেনা হয়ে গেছে!সাহেদার মাথা খারাপ হবার যোগাড় হয়েছে!একমাত্র সন্তান “পৌষী”কে নিয়ে যেন অথৈ সাগরে পড়লেন তিনি!
মাহমুদুল হকের দাফন শেষে অতিথিরা একে একে বিদায় নিলেন!সবাই সান্তনা দেবার চেয়ে বেশী সমালোচনাই করলেন!কি করা উচিত ছিলো,কি করলে আরো ভালো হতো!মেয়েকে এত নামীদামী কলেজে পড়িয়ে লাভ কি!বিয়ে দিয়ে দাও….এত বড় বাড়ীতে মেয়েকে নিয়ে একা থাকা ঠিক হবেনা বলেও মন্তব্য উঠলো!
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন


সাহেদার মাথা ভোঁ ভোঁ করছিলো!স্বামীকে শেষ বিদায় জানিয়ে অচেতনের মত জায়নামাজে পড়েছিলেন আধাঘন্টা! তিন কূলে আপন আত্মীয় বলতে এক বড়ভাই আছেন।কিন্তু সাহেদা কারো গলগ্রহ হতে চাননা!সাহস করে “নিরিবিলি হাউজে”ই রয়ে গেলেন!আত্মীয়দের সবাই থাকতে হবে বা দায়িত্ব নিতে হবে এই ভয়ে একে একে সটকে পড়লেন।
কিন্তু এক মাস না যেতেই সাহেদা হাড়ে মাংসে টের পেলেন যে এখানে পৌষীকে নিয়ে একা থাকা অসম্ভব হয়ে উঠছে।এতদিন যারা সম্মানের চোখে দেখতো তারাই আজ বাড়ীর জানালায় ঢিল ছুঁড়ে!অকারনে চাঁদা চাইতে বাড়ী আসে!নানান অযুহাতে আগ বাড়িয়ে সাহায্য করতে চায়!সেদিন রাতেও ছাদে হাঁটাহাঁটির শব্দ টের পেয়েছেন সাহেদা।আল্লাহর রহমত ছাদের চিলেকোঠার গেটটা লাগানো ছিলো!পৌষী আগে নিজের রুমে ঘুমাতো।বাবা মারা যাবার পর থেকে মায়ের সাথেই ঘুমায় ও!
একমাস পরে কলেজে যাবার পথেও কারা নাকি ওকে চিঠি দিয়েছে,ঢিল ছুঁড়েছে!এমনিতে পৌষী আবায়া পড়ে চলাফেরা করতো আগে! এখন মায়ের কালো বোরকাটা দিয়ে আপাদমস্তক ঢেকে কলেজে যেতে শুরু করলো।তারপরেও পৌষীর রূপ আর গুণের খবর পাঁচকান হতে দেরী হলোনা!ওদিকে পাওনাদারদের তাগাদা বাড়লো!এক পাওনাদার বিশেষ দয়া করে তার পাওনা দুই লক্ষ টাকা মাফ করে দেবার আশ্বাস দিলেন কেবল শর্ত একটাই পৌষীকে তার ছেলের সাথে বিয়ে দিতে হবে!সাহেদা বেশ বিপদেই পড়লেন।তার যত চিন্তা পৌষীকে নিয়ে!এই রূপের ডালিকে নিয়ে কোথায় যাবেন তিনি!মেয়েটা তার খুবই নরম মনের!তাকে এখনো দুনিয়ার কাঠিন্য স্পর্শ করেনি!মাত্র একুশ বছর বয়সে মেয়েটা তার জীবনের কঠিনতম সময়ে উপনীত হয়েছে!সাহেদা মনকে শক্ত করলেন,নাহ্…..তাকেই একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে!
অবশেষে মানসম্মান এক পাশে সরিয়ে রেখে বড়ভাই আমজাদ চৌধুরীকে ফোন করলেন!বড় ভাই অনেক আগেই সাহেদাকে তাঁর বাড়ীতে এসে থাকার প্রস্তাব করেছিলেন কিন্তু সাহেদা মানা করে দিয়েছিলো কারন তার ভাইবৌ এবং ভাতিজা ভাতিজীরা বড্ড বেশী আধুনিক মনের।তার পৌষী সেখানে টিকতে পারবেনা! কিন্তু এখন তার অবস্থা জলে কুমির ডাঙায় বাঘের মতো! তাই তিনি বড়ভাইয়ের প্রস্তাবটাই মেনে নিলেন।তাছাড়া বাড়ী বিক্রি না করলে লোন শোধ করবেন কি করে!
তাই স্থির হলো বাড়ী বিক্রি করে সাহেদা যাবতীয় লোন শোধ করবেন এবং বাকী টাকা ব্যাংকে রেখে দেবেন পৌষীর ভবিষ্যতের জন্য!
তারপর সব কাজ শেষে এক বিকেলে সাহেদা তার একমাত্র বড়ভাই আমজাদ চৌধুরীর বাড়ী এসে উঠলেন!
সেখানে ওদের মা মেয়েকে থাকার জন্য একটা রুম দেয়া হলো!সাহেদা নিজের বড় বড় সব ফার্নিচার বিক্রি করে কেবল প্রয়োজনীয় দু চারটে আসবাব নিয়ে আসলেন সাথে করে!
সাহেদার ভাইবৌ রানী সুলতানা নামেই রানী না,তার হাবভাব আর চালচলনেও এ বাড়ীর রানীই বটে।আর তার তিন মেয়ে ইরা,মীরা আর নীরা তিন রাজকন্যা বললে কমই বলা হবে!আগে তারা সাহেদাকে দেখলে ফুপি ফুপি করে মোটামুটি লোক দেখানো সম্মানটুকু করতো কিন্তু সাহেদা এ বাড়ীতে আসার পর তাদের আচরণে টের পেতে দেরী হলোনা যে সাহেদা এখানে আশ্রিতা!বাকি রইলো আমজাদ চৌধুরীর একমাত্র ছেলে সাহেদার ভাইপো ‘হাসান আবরার চৌধুরী রাজ’! সে এসব সাতে পাঁচে নেই।বাবা মায়ের অতি আদরের দুলাল রাজ যথেষ্ট উড়নচন্ডী স্বভাবের!গার্লফ্রেন্ড আর পার্টি রাজের নিত্যদিনের সঙ্গী।ছয়ফিট লম্বা সুস্বাস্থ্যের অধিকারী রাজ নিজের মত স্বাধীন জীবনযাপন করতে পছন্দ করে।তাদের বাড়ীতে কে এলো আর কে গেল এসব নিয়ে তার কোনো মাথাব্যথা নেই।তাই সাহেদা এবাড়ীতে ওঠার দুসপ্তাহ হয়ে যাবার পরেও রাজের সাথে তাদের মা মেয়ের একবারো দেখা হলোনা!
অবশ্য সাহেদা পৌষীকে বারবার সাবধান করে দিয়ে বলেছেন-“ওপাশের বারান্দায় একদম যাবিনা রে মা…!”
বোকা পৌষী প্রশ্ন করেছিলো-“কেন মা…ওপাশের বারান্দায় কি আছে ?”
সাহেদা মেয়ের মাথায় হাত রেখে বলেছিলেন-“ওপাশে রাজের রুম!সারাদিন কতো ছেলে বন্ধুরা আসে যায়!তুই পারতপক্ষে ওদের সামনে যাবিনা!কখনো যদি কোনো কাজে মামী পাঠায়ও তাহলে বড় করে ঘোমটা দিয়ে যাবি!”
পৌষী মায়ের কথা মেনে ঘরের বাইরে যতক্ষণ থাকে ততক্ষণই বড় ওড়না দিয়ে মাথা সহ শরীরের উর্ধাংশ আবৃত করে রাখে!যার ফলে বহিরাগত অনেকেই ওকে বুঝতে পারেনা!
এই তো সেদিনই তো, বাড়ীর দুটো কাজের মেয়ের একটা আসেনি বলে মামী অনুরোধের সুরে একরকম আদেশই করে বসলেন পৌষীকে!
-“যা তো আম্মু…একটু রাহেলাকে সাহায্য করতো!বেচারী একা একা পেরে উঠছেনা!
অগত্যা পৌষীকে রাহেলার সাথে হাত লাগাতে হলো!রাহেলা দুই বালতি কাপড় ধুয়ে দিলে সেগুলো পৌষীকেই মেলে দিতে হলো!রাহেলা কেটে দিলে পৌষী মায়ের সাথে সাথে রান্নার কাজে সাহায্য করলো!এভাবে বাড়ীর যাবতীয় কাজ পৌষী আর তার মা দুজনে মিলে শেষ করলো!
মামীর অনুরোধে রাজের ঘরটাও পৌষীকেই গুছাতে হলো! আর গুছাতে গিয়ে পৌষীর মনে হলো রাজের জীবনটা যথেষ্টই রাজকীয় এবং ছেলেটার বাবা মায়ের অতি আদরে বাদর বনতে দেরী হয়নি!
পুরো ঘর ভর্তি মেয়েদের ছবি।ওর ব্যায়ামের ভারী ভারী সরঞ্জামগুলো সরাতে গিয়ে ঘেমে নেয়ে উঠেছে পৌষী!
কাজ প্রায় শেষ করে এনেছে পৌষী। হঠাৎ বাইরে কারো পায়ের শব্দ শুনে দ্রুত বড় করে ঘোমটা দিয়ে দৌড় লাগালো পৌষী।কিন্তু নিয়তির পরিহাস!পড়বি পর মালির ঘাড়ে!
একেবারে রাজের মুখোমুখি!
……
চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here