সে_আমারঃ (আপডেট) পর্বঃ-২৬

সে_আমারঃ (আপডেট)
পর্বঃ-২৬
মোর্শেদা হাবিবঃ
****************
শুক্রবার রাজের ওয়ালিমা।
শেষ পর্যায়ের প্রস্তুতি চলছে।বাড়ীটাকে নববধূর মতো করে সাজানো হয়েছে।কেনাকাটার পাট আগেই চুকেছে তবু শেষ মুহূর্তের কিছু বাকি রয়ে গেলো কিনা তার তদারকী রানী নিজেই করছেন।

রাজের উপর ১৪৪ ধারা জারী করা হয়েছে।ওয়ালিমার দিন পৌষী এ বাড়ীতে না আসা পর্যন্ত তার ‘নীড়ে’ যাওয়া সম্পূর্ণ রূপে বন্ধ।যদিও তাদের আকদ আগেই পড়ানো হয়ে গিয়েছে তবু রানীর পরামর্শে ওয়ালিমার দুদিন আগে বাড়ীর সবাই গিয়ে পৌষীকে নিয়ে আসবে।
আত্মীয় মহলে সেদিনের কথা বলেই আকদের ঘোষণা দেয়া হবে তাতে করে অনেক অপ্রীতিকর প্রশ্ন ওঠা বন্ধ হবে।আমজাদ চৌধুরীও বিষয়টা মেনে নিয়েছেন।কারন রাজ নতুন করে আকদ করতে রাজী হয়নি।সে বলে আমার বিয়ে ঐ দিনই হয়েছে।কোনো কারন ছাড়াই সেটাকে আমি বাতিল করবো কেন।পৌষীকে আমি সেদিন থেকেই স্ত্রী হিসেবে মেনে নিয়েছি।সেই স্মৃতি আমি ভুলতে পারবোনা।
রানী আর এ নিয়ে বাগাড়ম্বর করেন নি।ছেলের ইমোশনে আঘাত করে তিনি কিছু করতে চান না।

অবশেষে ঠিক হলো, বুধবারে বরপক্ষ কনের বাড়ীতে গিয়ে কনেকে নিয়ে আসবে।
বৃহস্পতিবারে গায়ে হলুদের কথা জানতে চেয়ে সব আত্মীয়াই নক করেছে।কিন্তু রানী তাদের জানিয়েছে যে,তার ছেলে এই অনুষ্ঠানটা করতে চাচ্ছেনা।
তার সোজা বক্তব্য যেহেতু এটা সুন্নত বিরোধী একটি প্রথা যেখানে নারী পুরুষ অবাধে মেলামেশার সুযোগ তৈরী করে দেয় সেহেতু এটা বাদ। রাজ তার নতুন জীবনের শুরু সুন্নত সম্মত ভাবেই করতে চায় এবং সে তার বাকী বিবাহিত জীবনও রাসুলুল্লাহ সাঃ ও মা খাদিজার মতো সুখী দাম্পত্যে কাটাতে চায়।
কারন সর্বজনগ্রাহ্য মতেই পৃথিবীর সেরা সুখী দম্পতি ছিলেন আমাদের রাসুল সাঃ এবং মা খাদিজাতুল ক্বুবরা।যার সাথে সুদীর্ঘ ২৫ বছরের দাম্পত্যে রাসুল সাঃ দ্বিতীয় স্ত্রী গ্রহন করেন নাই এবং তাঁর সকল সন্তান সন্ততি মা খাদীজার গর্ভপ্রসূত।এমনকি মা খাদীজার মৃত্যুর পরও রাসুল তাঁর বিয়োগ বেদনায় চোখের জল ফেলেছেন,তাঁর স্মৃতি স্মরণে আনমনা হয়েছেন।এমনকি মা আঈষা কখনো রাসুলের এমন আচরনে ঈর্ষাকাতর হলে তাকে মৃদুহাস্যে তিরস্কার করেছেন কিন্তু মা খাদিজাকে ভুলতে পারেন নাই!
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন



রাজ সেই বরকতময় দাম্পত্য নিজ জীবনে ধারন করতে চায়।তাই সে প্রথম থেকেই বিয়ের আয়োজনে যথাসম্ভব সুন্নতি তরীক্বা অবলম্বন করার চেষ্টা করছে।মা’কে তার বিয়েটা অনাড়ম্বর ভাবে করার জন্য বারবার তাগিদ দিয়ে আসছে।তবে ওয়ালিমা যেহেতু সামর্থ্যের ভিত্তিতে করা সুন্নাহ সেহেতু রাজ ওয়ালিমাতে কোনরকম কার্পন্য করে নাই।রাসুল সাঃ তাঁর কোনো কোনো ওয়ালিমা শুধু খেজুর বা মধু দিয়ে করেছেন আবার কোন ওয়ালিমা তাঁর স্বচ্ছলাবস্থার ভিত্তিতে বকরী জবেহ করেও করেছেন।

রাজের প্রবল আপত্তির কারনেই গায়ে হলুদ সহ ভিডিও বা স্টিল ফটোগ্রাফীও বাদ দিতে হয়েছে।রানী এক পর্যায়ে বলে উঠেছেন-
“তুই আমার একমাত্র ছেলে রাজ।আর তোর বিয়েতেই কিনা কিছু করতে পারবো না,এটা কেমন কথা!এ কেমন গরিবী বিয়ে!”
রাজ সহাস্যে মাকে জড়িয়ে ধরে বোঝানোর চেষ্টা করেছে-“শোনো মা,যে বিয়েতে খরচ যত কম, সেই বিয়ে তত বরকতময় হয়।তাছাড়া ইরার বিয়েতে তুমি লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে কি পেয়েছো,বলো ? ”
ছেলের কথা শুনে রানী চুপসে গেছেন।
অবশেষে বলে কয়ে এতটুকু রাজী করিয়েছেন যে তার তিন বোন তার গায়ে হলুদ মাখাবে।এটুকুর অনুমতি যেন সে দেয়!
রাজ দুষ্টামী করে বলেছে-“তিন বোন যদি মাখাতে পারে ,তো আমার বউ কি দোষ করলো!ওকেও বলে দিও আমাকে হলুদ মাখাতে।একটা অভিনব গায়ে হলুদ হয়ে যাবে তাহলে!”
রানী হেসে ছেলের পিঠে আলতো চাপড় মেরে বলেছেন-“জাতে মাতাল হলে কি হবে তালে তো ঠিকই আছিস!”

নীরা কয়েকবার অনুরোধ করার পরেও সজীব ওরফে মারুফ নীরাদের বাড়ী আসতে রাজী হলো না।তার দাবী হলো,নীরাদের বাড়ীর কেউ তো তাকে অফিসিয়ালী দাওয়াত করেনি তাহলে শুধু নীরার ফোন পেয়েই সে চলে আসে কিভাবে।এভাবে আসাটা ভালো দেখায় না।
অবশেষে নীরা বললো,আপনি যদি বলেন তবে আমি কার্ড নিয়ে আপনার বাসায় এসে দাওয়াত করে যেতে পারি।বাসা থেকে আর কাকে আনবো বলুন।ভাইয়াকে বলতে তো আপনিই বারন করছেন, তাহলে?”
মারুফ উত্তেজনা চেপে বললো-
-“তুমি আসলেও চলবে,তাহলে বাসায় বলতে পারবো যে বিয়ের দাওয়াতটা ঠিকঠাক মতো পেয়েছি!”
-“ওকে,আপনার বাসার ঠিকানাটা দিন। আমি আজই কার্ড নিয়ে উপস্থিত হয়ে যাবো।কে কে আছে আপনার বাসায়?”
-“এই তো বড় বোন,তার দুই বাচ্চা,দুলাভাই দেশের বাইরে থাকেন বলে আমিই বড় বোনের সাথে থাকি!”
-“কিন্তু আপনি না বললেন আপনি দেশের বাইরে ছিলেন।তখন আপনার বড় বোনের সাথে কে থাকতো!”
-“ওপ্স….তুমি আমার কথাটা বোঝোনি।আরে বুদ্ধু বলেছি,আমি যখন দেশে আসি তখন বড়বোনের বাড়ীতে উঠি।”
-“ওহ্,তাই বলুন!এবার আপনার বড় বোনের ঠিকানাটা দিন, আমি আসবো।”
মারুফ ঠিকানাটা বললো।
তারপর আবেগপূর্ণ কন্ঠে বললো-“আর কারো জন্যে নয় কেবল তোমার খুশির জন্যেই আমি বিয়েতে আসবো।”
নীরা আবেগে উদ্বেলিত হয়ে বলে-
-“থ্যাংক্স।তবে আপনার বাড়ী যাচ্ছি কেন জানেন? যেন আপনি আপনার বোন সহ বিয়েতে আসেন।প্লিজ,অবশ্যই বড়আপুকে সাথে আনবেন।”
-“তুমি এসে আপুকে বলে যেও,তাহলে আপু নিশ্চয়ই যাবে!”
ফোন রেখে নীরা চঞ্চলা হরিনীর মতো দৌড়ে বেড়াতে লাগলো।ওর কাছে সবকিছু খুব ভালো লাগছে।বিয়েতে ভাইয়ার সাথে সজীবের পূনর্মিলন হওয়া একান্ত প্রয়োজন নতুবা নীরা সজীবের বিষয়টা এগোবে কি করে!

ফোন রেখে আপনমনে হা হা করে হেসে গাল চুলকালো মারুফ।না চাইতেই মেঘ,না চাইতেই জল।বাহ্,এই পাখি তো দেখি সেধে এসেই ধরা দিতে চাইছে।যেন সে মারুফের প্ল্যান বাস্তবায়ন করার জন্যেই আজ কার্ড দিতে আসতে চাচ্ছে।
এখন মারুফকে এখানকার পরিস্থিতি গুছাতে হবে।সে ফোন তুলে একটা বিশেষ নম্বর চাপলো।
-“হুঁ,তর মারুফ ভাইই কইতাছি।বিকালে একটু আসতে হইবো তোরে….আরে হ হ তর যে কাজ সেই কাজের লেগাই তো তরে ডাকতেসি,তর চেহারা দেখতে তো ডাকতেসিনা।এক ঘন্টার মামলা…আরে না না,এইটা নতুন ঘুঘু….আরে,দুর…বাড়ী পুরা খালি…..শরবতে ঘুমের অষুধ দিয়া দিমু ব্যস্ কাম শ্যাষ।তুই খালি আমগো ভিডিও করবি!বুজছস,না বুজান লাগবো?….ওক্কে,ফাইন।তর পেমেন্ট নিয়া ভাবিস না।পেমেন্ট তো পাবিই….লগে বোনাসও পাবি….”!বলে খিকখিক করে হেসে উঠলো মারুফ।

পৌষীকে যদিও রাতে নিতে আসা হবে তবু কনেপক্ষ সেজে ইরা আগেভাগেই চলে এসেছে।সে পৌষীকে সাজানোর পূর্বপ্রস্তুতি নিতে বসেছে।পৌষী যদিও মৃদু আপত্তি তুলেছিলো,এ বাড়ী থেকে ও বাড়ী যাবো।তাতে এতো সাজগোজের কি দরকার!
ইরা কোমড়ে হাত দিয়ে শাসানোর ভঙ্গিতে বলেছে-“আম্মুকে ফোন দেবো? আম্মু এসে তোমাকে এরকম সাদামাটা দেখলে আমাকে বকা লাগাবে!”
অগত্যা পৌষীকে রানীর আনা কাঞ্জিভরম শাড়ীটা পড়তে হলো।ইরা সুন্দর করে খোঁপা বেঁধে দিলো।সাজতে বসার আগে অবশ্য পৌষী এক বড় জার ভর্তি শরবত তৈরী করে রেখেছে।ইরা সাথে করে রাহেলাকে নিয়ে আসায় সুবিধাই হয়েছে।সেই দৌড়াদৌড়ি করে সব কাজ করছে, সাহেদাকে সাহায্য করছে আর কিছুক্ষণ পরপর এসে বলছে,ও বড়আফাগো….ভাবীরে কি সোন্দর লাগতাসে,নায়িকাগো মথন!”
ইরা হেসে বলেছে-“কে সাজাচ্ছে,দেখতে হবেনা?”
এরই মধ্যে ইরার সেলফোন বেজে উঠলো!
ইরার চেহারা মুহূর্তের মধ্য রঙ বদলালো।
-“এক্সকিউজ মি….বলে সে হঠাত পেছন বারান্দায় চলে গেলো।পৌষী বুঝলো,ফিন ভাই হবে হয়তো।
কি মনে হতে সে রাজকে ফোন দিলো!
-“কি করছেন?”
-“তোমার ধ্যান করছি!”
-“আর আমি কি করছি জানেন?”
-“কি?”
-“সঙ সাজতে বসেছি!”
-“এভাবে বলছো কেন,সাজলে তো তোমাকে চেনাই যায়না!”
-“আমার সাজতে ভালো লাগেনা।তার উপর যে ভারী শাড়ী!”
-“ওহ্,কাঞ্জিভরমটা পড়েছো?ওটার কালারটা আমি চয়েস করেছি!”
-“জ্বী,পড়েছি!”
রাজ শুনে ফিসফিসিয়ে বললো-“তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে!”
-“সবর করুন,রাতে তো ও বাড়ী আসছি ইনশাআল্লাহ্!”
-“উঁহুঁ…সবার ভীড়ে না।একা তোমাকে দেখতে চাই!”
-“স্যরি,সে সুযোগ আপনি পাবেন না।আম্মু মানে মামীর কড়া নির্দেশ, ওয়ালিমা না হওয়া পর্যন্ত আমাকে নীরার সাথে থাকতে হবে!”
-“ভেরী ডিসগাষ্টিং তো…!আম্মুর এই সিদ্ধান্তের কোনো কারন আমি খুঁজে পাইনা।বিয়ে হয়ে যাবার পরেও বর বউকে দুই ঘরে রাখাটা একটা জুলুম।আমি এ নিয়ম মানিনা!”
-“আহা, কেউ আপনাকে জিজ্ঞেস করেছে?আমি অবশ্য আপনার অন্তর্জ্বালা কমাতে একটা ক্ষুদ্র কাজ করতে পারি!”
-“কি সেটা?”
-“উমমম….আমার একটা সেলফী আপনাকে পাঠাতে পারি,যদি আপনি চান।”
-“.এটাও মন্দ না।দুধের স্বাদ ঘোলে মিটবে। পাঠাও!”
-“ওয়েইট আ বিট!”
মিনিট দুয়েক পরেই রাজ গম্ভীর কন্ঠে বললো-“কাজটা ইচ্ছে করে করেছো, তাই না?”
-“একথা কেন বলছেন?”
-“তোমার ছবি দেখিয়ে আমাকে পাগল করার চেষ্টা করা হচ্ছে,তাই তো!যেন আমি তড়পাই?”
-“এজন্যেই লোকে বলে কারো ভালো করতে নেই!”পৌষী হেসে উঠলো।ওকে খুব সুখী দেখাচ্ছে।সুখের আমেজটা ওর চেহারায় একটা বাড়তি সৌন্দর্য্য দান করেছে।

রানী বিরক্ত হয়ে গেলেন নীরার উপর।
-“এই অসময়ে তুই আবার কোথায় যাবি,বলতো?ইরা গেছে পৌষীর ওখানে।মীরা ওর বরকে নিয়ে একেবারে রাতে আসবে।এদিকটায় আমি একা পড়ে গেছি।তোর খালামনিরা এলে এদের কে সামলাবে,বল তো? তোর কোথাও যাবার দরকার নেই!”
-“মা,আমার একজনকে দাওয়াত দেয়া বাকী।আমি যাবো আর আসবো!”
-“ওয়ালিমার একদিন আগে তোর এমন কোন দরদীবন্ধু বের হলো যাকে তোর গিয়ে দাওয়াত দিতে হবে।যত্তসব ঢং।ফোনে বলে দে…আশ্চর্য্য!এদিকে তুই যাবি আর পরে দেখা যাবে এটা নেয়া হয়নি,ওটা নেয়া হয়নি।সব গুবলেট হয়ে যাবে।না,না তোর কোথাও যাওয়া চলবে না এখন।”
বলে রানী বাথরুমে ঢুকে দরোজা আটকে দিলেন।

নীরা ফাঁপরে পড়লো।সজীবকে ফোন দিতে গিয়েও কেটে দিলো।কি বলবে ওকে!বলবে আমার মা আসতে দিচ্ছে না? এটা শুনলে তো আরো মাইন্ড করবে।শুনে বলবে,থাক্,দাওয়াত লাগবেনা।উফ্,কি করা যায়!নিজেই বড় মুখ করে বললো,আমি আসছি! আপনার বোনকে সহ দাওয়াত দেবো অথচ……!”

হঠাৎ পৌষীর কথা মনে পড়লো নীরার।দ্রুত ওকে ফোন দিলো।বারকয়েক এনগেজ আসার পর একসময় ফোনটা লাইন পেলো!পৌষীই ধরেছে!
-“ভাবী আমি নীরা।একটা হেল্প লাগবে তোমার।প্লিজ ভাবী।”
-“,কি,বলো!আগে শুনি!”
-“আমাকে মাত্র একটা ঘন্টার জন্য বাসা থেকে বেরুতে হবে।প্লিজ,তোমার এমন কিছুর নাম বলো যেটা তোমার আর্জেন্ট দরকার কিন্তু কেনা হয়নি!”
-“আমার এমন কিছু দরকার নেই নীরা!”
-“উফ্,ভাবী প্লিজ!পারফিউম?ইয়েস….আম্মু তোমার পারফিউম কিনতে ভুলে গেছে!”
-“জ্বী,না।আম্মু ভুলে যায়নি,আমিই আম্মুকে নিষেধ করেছি। কারন মেয়েদের জন্য সুগন্ধী হারাম করা হয়েছে!”
-“কি বলো,বিয়ের দিনও দিতে পারবেনা?”
-“জ্বী না,নেভার এভার।কোনো মেয়ে সুগন্ধী মেখে বাইরে গেলে সে ব্যাভিচারিনীদের অন্তর্ভূক্ত হবে।এবং যতক্ষণ পর্যন্ত না সে গোসল করে গায়ের ঘ্রান দুর করবে ততক্ষণ পর্যন্ত তার নামাজ কবুল হবে না।বুঝেছো?”
-“ওঁওঁ…..!ধ্যাৎ,এখন কি করি?”
-“তোমার সমস্যাটা তুমি আমাকে বলোতো ,আমি দেখি একটা পথ খুঁজে বের করার চেষ্টা করি!”
-“তোমাকে বলবো? ভাইয়া জানলে একটু সমস্যা তো তাই….!”
-“তুমি না চাইলে তোমার ভাইয়া জানবেনা! তুমি ভালো করেই জানো আমি ওয়াদার বরখেলাফ করিনা!”
-“ইয়ে….মানে হয়েছে কি….বলে নীরা সংক্ষেপে সজীবের বিষয়টা পৌষীকে জানালো।তারপর কাতর স্বরে বললো-
-“প্লিজ ভাবী,আমাকে জাষ্ট আধাঘন্টার জন্যে হলেও সজীবের বাড়ী যাবার একটা ব্যবস্থা করে দাও।এদিকে আম্মু রেড এলার্ট জারী করেছে,আমাকে কোথাও যেতে দেবে না।ইরা আর মীরাপু রে তো কিছু বলে না যত শাসন সব আমাকে!”

-“কারন তুমি এখনো অবুঝ।বয়সও তোমার কম।তাছাড়া যা শুনলাম তাতে আমি মনে করি, তোমার ওখানে একা যাওয়া উচিত হবেনা।কারন একজন মহিলার পক্ষে একজন গায়ের মাহরামের সাথে নির্জনে দেখা করা অন্যায়!”
-“নির্জন কোথায়,ওর বড় বোন আছে না?”
-“কে জানে, বলো? তুমি কি নিশ্চিত,সেই বাড়ীতে তার বড় বোন আছে? যদি না থেকে থাকে তাহলে ব্যপারটা তোমার জন্য কতটা ঝুঁকিপূর্ণ তুমি কি বুঝতে পারছো ?দ্যাখো নীরা,দিনকাল ভালো না।কত রকমের দুর্ঘটনা ঘটছে প্রতিদিন।এসব জেনেও আমরা সাবধান হচ্ছি না,তাহলে দোষ কাদের বলো?তাছাড়া সেই ছেলে যদি সত্যিই ভালো ছেলে হয় তাহলে সে তোমাকে একা দেখা করতে উৎসাহিত করবেনা বরং বাধা দেবে।আর ভালোবাসা? সেটা তো বিয়ের আগে হারাম।তারপরেও সেই ছেলে তোমাকে বিয়ে করতে চাইলে বাড়ীতে সরাসরি প্রস্তাব দিতে পারে,এতো ঢাক ঢাক গুড়ু গুড়ুর তো দরকার দেখিনা।না, নীরা,পুরো ব্যপারটা আমার কাছে কেন যেন সহজ মনে হচ্ছে না।তুমি তাকে ফোন করে আসতে বলেছো, এটাই তো ইনাফ।এর বেশী যেটা করতে পারো রাজকে দিয়ে ফোন দেয়াতে পারো।তুমি যদি চাও আমি তোমার ভাইয়াকে বলতে পারি তবে আমার মনে হয় তুমি বললেই কাজ হবে!”

বড় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নীরা কাঁধ ঝাঁকালো!
-“ওকে…!ভাইয়াকেই রিকোয়েষ্ট করে দেখি!”
-“দ্যাটস লাইক আ গুড গার্ল।”
পৌষীর সাথে কথা শেষ করে নীরা রাজের রুমে এলো।রাজ ওকে দেখে হাসলো-“কি রে বুড়ি,খবর কি!”
-“একটা রিকোয়েষ্ট করবো ভাইয়া, রাখবে?”
রাজ তাকালো!
-“কি রিকোয়েষ্ট শুনি?”
-“না,আগে বলো রাখবে?”
-“আচ্ছা,ইনশাআল্লাহ রাখবো!”
-“সজীব ভাইয়াকে ফোন করে তোমার বিয়ের দাওয়াতটা তো আর দিলে না।আমি কতটা লজ্জিত হলাম বলো?আমিই তো সেধে সেদিন তাকে আসতে বললাম,এখন….!”
রাজ ওকে থামিয়ে দিয়ে একটু চিন্তা করলো!কি বুঝলো কে জানে, তবে রাজ সামান্য হেসে বললো-“ফোন তো করতে পারি বাট সজীবের নাম্বার তো নেই,আমার কাছে!”
-“আমার কাছে আছে!”প্রায় রুদ্ধশ্বাসে বলে উঠলো নীরা।
রাজ একটু অবাক হয়ে তাকাতেই নীরা চোখ নামালো!রাজ কিছু বলতে গিয়েও সামলে নিয়ে বললো-“দে…নাম্বারটা দে!”
বলে নিজের মোবাইলে পৌষীর ছবিটার দিকে একবার তাকিয়ে বললো-“তোর মোবাইলে ফোন দে! আমারটা বিজি…!”

নীরা সংকোচে মুখ নামিয়ে নিলো তারপর আস্তে করে নাম্বারটা এনে নিজের মোবাইলটা বাড়িয়ে ধরলো রাজের দিকে-
রাজ হাত বাড়িয়ে মোবাইলটা নিলো।তিনটে রিঙ হবার পর ওপাশ থেকে কেউ রিসিভ করলো।রাজ ভেবে রেখেছিলো সালাম দিয়ে কথা শুরু করবে কিন্তু ওপাশ থেকে প্রেমপূর্ণ গদগদ কন্ঠ শুনে থমকে গেলো রাজ।

-“……শুধু ফোনই চলবে, না দর্শনও দেবে ময়ুরী?তোমার বিরহে আমার অন্তর্জ্বালা যে দাবানলে রূপ নিতে চাচ্ছে।প্লিজ, তাড়াতাড়ি এসো।আপুকে তোমার কথা বলেছি,তিনি তোমার জন্য অপেক্ষা করছেন!”রাজের নিঃশ্বাস দ্রুততর হলো।
‘কট’ করে ফোন কেটে নীরার দিকে তাকালো।ওর চোয়াল শক্ত হয়ে উঠেছে।নীরা ভাইয়ের চেহারা দেখে ভয় পেয়ে গেলো!
-“কি হয়েছে ভাইয়া?”
-“তুই নিশ্চিত ওর নাম সজীব?”ঠান্ডা একরোখা স্বরে বললো রাজ!তারপর বললো-“তুই আমার সাথে চল্!”
-“কোথায়?”নীরা ভীত কন্ঠে বললো!
-“সজীবকে দাওয়াত দিতে হবেনা?”
-“কিন্তু তুমি না বললে,কথা বলবে..!”
-“না,ওকে সামনাসামনি ধরবো নইলে ওকে যথাযোগ্য সম্মান দেয়া হবেনা।”

বলে রাজ ঝড়ের বেগে বেরিয়ে গেলে নীরা বোকার মতো দাঁড়িয়ে রইলো।এমন সময় রাজের চড়া গলায় ডাক শুনতে পেলো-
-“কই,নীরা?এলিনা?”
নীরা দুরুদুরু বুকে অনিশ্চিত অবস্থায় রাজের পিছু নিলো।সে কিছুই বুঝতে পারছেনা।রাজ সজীবের বাড়ী যাবে ভালো কথা।কিন্তু এভাবে বলা নেই কওয়া নেই,নীরাকে তৈরী হবার সময়টুকু না দিয়ে…!”নীরা দ্রুত বেরিয়ে এলো।

গাড়ীর দরোজা খুলে নীরাকে ইশারা করলে নীরা বাধ্য মেয়ের মতো বসে গেলো।রাজ গোঁয়ারের মতো অপর পাশে বসে বিকট শব্দে ‘ধুম’ করে গেট আটকালো তারপর গাড়ীটা প্রথমে সামান্য বাঁয়ে মোচড় নিয়ে আচমকা তীব্র বেগে সামনে টান দেয়ায় নীরার বুকের ধুকপুকি আরো বাড়লো।কারন রাজের ড্রাইভ করার ভঙ্গিই বলে দিচ্ছে সে প্রচন্ড রেগে আছে।
চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here