সে_আমারঃ (আপডেট) ২য় পর্বঃ

সে_আমারঃ (আপডেট)
২য় পর্বঃ
মোর্শেদা হাবিব
*************
বারকয়েক হর্ণ বাজাতেই দারোয়ান দৌড়ে এসে গেটটা খুলে দিলো!
রাজ গাড়ী থেকে নামতেই ওর মোবাইল বেজে উঠলো! ফোনটা কানে ঠেকিয়ে কথা বলতে বলতেই রাজ গাড়ী থেকে নামলো!
ওর সমস্ত মনোযোগ ফোনের দিকে থাকায় সে তার চারপাশের পরিস্থিতি খুব ভালোভাবে অবজার্ভ করতে পারেনি!যার ফলে হঠাৎ কারো সাথে মুখোমুখি ধাক্কা লেগে রাজের হাত থেকে মোবাইলটা মাটিতে পড়ে গেলো!রাজ হতচকিত হয়ে দুহাত শূন্যে তুলে প্রথমে মাটিতে পড়ে থাকা মোবাইলের দিকে তারপর সামনের মানুষটির দিকে তাকালো।
ততক্ষণে সামনের মানুষটি দ্রুত তার মোবাইলটি মাটি থেকে তুলে তার হাতে দিয়ে সটকে পড়ার জন্য পা বাড়াতেই রাজ তাকে থামালো!
-“হে ইউ…..আর য়্যু ব্লাইন্ড?কান্ট সি???আমার এই মোবাইলের দাম জানিস?আমার সেট ডিষ্টার্ব দিলে বুঝিস….তোকে ঠিক করে দিতে হবে!”
মেয়েটি কোনো প্রতিউত্তর দিলোনা কেবল মৃদু স্বরে “স্যরি….মাফ করে দিন” বলে ঘুমটাটা টেনে আরো বড় করলো!
রাজ কেবল লাল আর হলুদ চুন্দরীর ওড়নায় ঢাকা একটা মেয়েলি অবয়ব এক ঝলকের জন্য দেখলো!
সে মেয়েটির চেহারা দেখেনি কেবল মোবাইল দেবার সময় হাতের অংশবিশেষ দেখেছে!
ঘটনার আকস্মিকতায় রাজ পুরোপুরি বিষয়টি বুঝে উঠার আগেই ঘটনাটি চোখের পলকে ঘটে গেলো।
রাজ বিরক্তি নিয়ে হাতের মোবাইলটার দিকে তাকালো!দেখলো লাইনটা এখনো কাটেনি!ওপাশ থেকে রাজের বন্ধু ফিন হ্যালো হ্যালো করছে!
রাজ পুনরায় মোবাইলটা কানে দিয়ে ঘুরে পেছন ফিরে তাকালো কিন্তু ততক্ষণে মেয়েটি হাওয়া।
পুরো বারান্দা জুড়ে কোনো মানুষকে দেখা গেলোনা!
রাজ কথা বলতে বলতে ঘরে ঢুকে গেলো!
মোবাইলে কথা শেষ করেই মোবাইলটা বিছানায় ছুঁড়ে মারলো।তারপর শীষ বাজাতে বাজাতে পরনের গেঞ্জিটা খুলে সেটা আরেকদিকে ছুঁড়ে মেরেই হঠাৎ শীষ বাজানো থামিয়ে পুরো ঘরটা অবাক হয়ে দেখতে লাগলো!দুহাত কোমড়ে রেখে চিৎকার করে রাহেলাকে ডাকলো!
সেকেন্ডের মধ্যে রাহেলা ছুটে এলো-“জ্বী..বাইজান?'”
-“ঘর কে গুছিয়েছে?তুই?”
-“না তো বাইজান!আমি গুসাইনাই…মুনি অয় পুষি আফায় গুসাইসে!”
-“পুষি কে?”(বলেই সাথে সাথে হাত নাড়লো মাছি তাড়ানোর মতো করে)আচ্ছা…যেই গুছাক..হু এভার…আমার ডাম্বল কই রেখেছিস…ওগুলো সবসময় এখানে পড়ে থাকে!”বলে আঙ্গুল দিয়ে সোফার নিচটা দেখালো!
রাহেলা ভীত চোখে ঘরের চারদিক তাকিয়ে বলল-“আমি তো কইতাম ফারিনা বাইজান পুষি আফায় কই রাকছে..!”
-“ডাক্ তোর পুষি ক্যাটকে!”
রাহেলা যেভাবে দৌড়ে এসেছিলো সেভাবেই দৌড়ে বেরিয়ে গেলো!মিনিটখানেকের মধ্যেই দৌড়ে এসে ঘরের কোণা থেকে ডাম্বেল দুটো বের করে রাজের সামনে রেখে বলল-“এই যে বাইজান…পাইছি!আমি যাই বাইজান?”বলে অনুমতি চাইলো রাহেলা!
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন


-“,হুঁ…যা…এ্যাই শোন্…আমাকে জুস দিয়ে যা!”
-“অক্ষণি দিতাসি!”
-“জুসে লবণ দিবি তো থাপ্রামু ধইরা….ভালো করে বানিয়ে আনবি!”
-“আইচ্চা!”বলে ভীত ভঙ্গিতে রাহেলা চলে গেলো!
রাজ পুরো ঘরে হাঁটতে লাগলো আর চারদিক তাকিয়ে দেখতে লাগলো! ঘর গোছানোটা ইউনিক হয়েছে!দেখে মনে হচ্ছে কোনো ইন্টেরিয়র ডেকোরেটরের কাজ!ওর লাউড স্পীকারটা গেটের সামনে থেকে সরিয়ে ঘরের কোণে টবের পাশে রেখেছে।তার পাশেই সোফাটা।
রাজের বিছানাটা ফ্লোরে।সেটাতে টানটান করে বেডশীট বিছানো হয়েছে আর তার উপর মালটি কালারের কুশনগুলো এতো চমৎকারভাবে সাজানো হয়েছে যা কেবল একজন রুচিশীল মানুষের পক্ষেই সম্ভব!পুরো ঘরটা একদম নতুন লাগছে!যেমনটি সাধারণত ম্যাগাজিনে দেখতে পাওয়া যায়!পর্দাগুলোকেও বদলে ফেলা হয়েছে!কুশনের সাথে রং মিলিয়ে লাগানো হয়েছে!রাহেলা এতো নিখুঁতভাবে করেছে বিশ্বাস হয়না!তাছাড়া সে তো বললোই সে এগুলো করেনি!মা কি তাহলে কোনো নতুন কাজের
লোক রেখেছে নাকি?যাক্…যাকেই রাখা হোক্।তার কাজ রাজের পছন্দ হয়েছে!
রাজ ধপ করে ফোমের বিছানায় গড়িয়ে পড়লো!
রাহেলা গেটে টোকা দিয়ে বলল-“বাইজান…আমুউ?”
-“হমম…আয়!”(রাজ এক হাঁটু ভাঁজ করে উঠে বসলো!)রাহেলা শরবতের গ্লাস সহ ট্রে টা এগিয়ে দিলো!রাজ শরবতটা তুলে নিতেই সে চলে যেতে ধরলে রাজ ডাকলো!-“এ্যাই..
.দাঁড়া…শরবত ভালো না হলে তোর মাথায় ঢালবো!দাঁড়া ওখানে!’
রাহেলা ভীতভাবে ট্রে হাতে গুটিশুটি মেরে এককোণে দাঁড়ালো!রাজ বিরক্তি নিয়ে শরবতে ছোট্ট চুমুক দিলো!কারন প্রতিদিনই শরবতটাতে লবনাক্ত একটা ভাব থাকবেই!
তাছাড়া কোনদিন কড়া মিষ্টি তো কোনোদিন পানসে মিষ্টি হবেই!মেজাজ গরম হয়ে যায় রাজের!ও এমনিতেই রাগলে টেম্পার ধরে রাখতে পারেনা!কতদিন যে আছড়ে গ্লাস ভেঙ্গেছে তার হিসেব নাই!রাহেলা ভীত চোখে রাজের শরবত খাবার পরবর্তী অবস্থার কথা ভেবে ভীত চোখে তাকিয়ে আছে!রাজ এক চুমুক পান করতেই ওর কপালের কুচকানো ভাঁজগুলো মসৃণ হয়ে গেলো!এক নিঃশ্বাসে পুরো শরবত শেষ করে ‘আআহ্!”বলে ঢেকুর তুলে বলল-“যা আরেক গ্লাস নিয়ে আয়! তুই বানিয়েছিস?”
-“পুষি আফায় বানাইসে!”
-“তোর পুষি আফারে ডাক্…একটা থ্যাংক্স দেই!এতদিনে জুসের মতো জুস পেলাম!”
রাহেলা মাথা নেড়ে গ্লাস নিয়ে চলে গেলো!মিনিট খানেকের মধ্যেই আরেক গ্লাস জুস নিয়ে হাজির হয়ে ট্রে টা এগিয়ে দিয়ে বলল-“পুষি আফা আইতো না..হ্যায়..ফরফুরুষের সামনে যায়না!”
রাজ কোনো কথা না বলে এক ঢোকে পুরো জুসটা গিলে গ্লাস ফিরিয়ে দিয়ে বললো-“এরপর থেকে পুষি ক্যাটরে বলবি শরবত বানাতে…তুই আর বানাবিনা! শালা খ্যাত কোথাকার…জুসের মধ্যেও এক চিমটি লবন মারে!এতোদিনেও জুস বানাতে শিখলোনা! যা এখন ভাগ্ এখান থেকে..!”
রাহেলা যেন প্রাণে বাঁচলো। গ্লাস নিয়ে দৌড় দিলো!
……
…..

রাতে বালিশে মাথা রাখতেই ঘুমে তলিয়ে গেলো পৌষী!সাহেদা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আলতো করে চোখ মুছলেন! মেয়েটা তার আজকে অনেক কাজ করেছে! রাহেলার সাথে সাথে পুরো বাড়ী গুছিয়েছে।নিজে ইচ্ছে করেই সাহেদার হাত থেকে নিয়ে সব্জি ভাজি করেছে,মাছের তরকারী রান্না করেছে!পৌষী এমনিতে খুব ভালো কাজ জানে!ছেলেবেলা থেকেই ও ঘরকন্নার কাজ আগ্রহ করেই করতো!পত্রিকায় বা টিভিকে কোনো রেসিপি দেখলে ট্রাই করতো!বাবাকে এটা সেটা বানিয়ে খাওয়াতো!আজ সেই শখে শেখা বিদ্যা পরের বাড়ীতে প্রয়োজনে কাজে আসছে!
ওর বাবা বড় শখ করে ওর নাম রেখেছিলেন পৌষী!ওর জন্ম পৌষের কনকনে শীতে হয়েছিলো বলে ওর বাবা এই নামটা আদর করে ডাকতেন।ওর আসল নাম অবশ্য আকীকা করে “সিদরাতুল মুনতাহা” রাখা হয়েছিল কিন্তু ওর কলেজের বান্ধবীরা ছাড়া কেউ ওকে ঐ নামে ডাকেনা!পৌষী নামটাই চালু হয়ে গেছে!
আজ রাতে খাবার টেবিলেও ওর বড়মামা পৌষীর রান্নার প্রশংসা করেছেন! মামী সাথে সাথেই বলেছেন-“ভালোই হলো…এখন থেকে মাঝেমধ্যে ওর মামাকে মজার মজার রান্না করে খাওয়াবে আমাদের পৌষী….!
সাহেদা কোনো প্রতিউত্তর দেননি!
…..
…..
……
আজ এ বাড়ীতে আসার একমাস সম্পূর্ণ হয়ে গেলো! যদিও সাহেদা নিজের বড়ভাইয়ের বাড়ীতে আছে।তবু সাহেদা তাদের খাবার বাবদ একটা খরচ বড়ভাইয়ের হাতে তুলে দিতে চেয়েছিলো!কিন্তু বড়ভাই আমজাদ চৌধুরী তা নিতে রাজী হননি!ভাইবৌ রানী সুলতানাও সায় দিয়ে বলেছেন-“কি যে বলোনা সাহেদা..তুমি তোমার নিজের ভাইয়ের বাসায় থাকবে….খরচ দিয়ে থাকবে কেন? তাছাড়া তুমি যে আমাদের জন্য এতো কষ্ট করে রান্না করছো,পৌষী এত সাহায্য করছে…এগুলোরও তো একটা মূল্য আছে!”
কথাটার মধ্যে একটা প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত আছে!সাহেদার মনে হলো খরচটা নিলেই বরং ভালো হতো। তার ভাইবৌ এর কথায় এখন মনে হচ্ছে ওদের ইচ্ছে করেই কাজ করেই খেতে হবে!নইলে বসে বসে কারো অন্ন ধ্বংস করার ইচ্ছে এমনিতেও সাহেদার নেই!সে এই বাড়ীতে কেবল নামেই আমজাদ চৌধুরীর ছোট বোন হয়ে আছে!আদতে সম্পর্কটা সেই ফুড ফর ওয়ার্কের মতোই হয়ে গেছে! রানী মুখে না বললেও বিষয়টা ভালোভাবেই বুঝিয়ে দিয়েছে!
…..
……
বড় মামার বাড়ীতে আসার পর থেকে আর কলেজ যাওয়া হয়নি পৌষীর! আজ অনেক দিন পর কলেজের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো!আজো পৌষী মায়ের কালো বোরকাটা পড়ে নিয়েছে।হাত মোজা পা মোজা সহ নেকাব দিয়ে মুখ ঢেকে নিয়েছে পৌষী!সেটা দেখে ইরা. আর .মিরা তো হেসেই খুন!
মিরা বলে উঠল-“পৌষী তোকে তো পুরাই নিনজা লাগছে…হিহিহিহি….!”
কেবল নিরা ওদের ধমক দিয়ে বলেছে
-“এতে এতো হাসির কি আছে…আশ্চর্য্য!”
ইরা আর মীরা পৌষীর দুতিন বছরের বড়ো কেবল নীরাই পৌষীর সমবয়সী এবং সে বোনদের থেকে একটু আলাদা মানসিকতার!তাই নীরার সাথে একটু বন্ধুত্বের মতো গড়ে উঠলো পৌষীর।মাঝে মাঝে ওকে রুমে ডেকে গল্প করে নীরা!
….
……
আজ সকাল সকালই বড়মামী এসে জানিয়ে দিয়ে গেলেন,বাড়ীতে আজ পার্টি হবে।তার বড় মেয়ে ইরাকে দেখতে পাত্রপক্ষ আসবে!আরো রিকোয়েষ্ট করলেন,আজকের রান্নাটা যেন সাহেদাই করে আর নাস্তার আইটেম গুলো হোমমেড হলেই ভালো! পৌষিতো এসব ভালো পারে।ও যেন কয়েকটা নাস্তার আইটেম আজ মেহমানদের জন্য তৈরী করে।
ফলে পৌষীকে আজ কলেজ ড্রপ দিতে হলো!
সকাল থেকেই সে কোমড় বেঁধে কাজে নেমে পড়লো! সাহেদা মেহমানদের জন্য পোলাও,কোর্মা,শাহী রেজালা, রোস্ট রান্না করলেন আর পৌষী কয়েকপদের নাস্তা বানলো!

সবকাজ শেষ করে পৌষী নিজেদের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ বসে থাকলো!এটাও মামীরই নির্দেশ ছিলো পৌষী যেন পাত্রপক্ষের সামনে না যায়।এমনিতে না বললেও পৌষী যেতো না কারন সে নিজে থেকেই এই ব্যপারটা খুব মেইনটেন করে।পারতপক্ষে সে বাইরের লোকের সামনে যায়না!পুরুষদের সামনে তো একদমই যায়না!রাণী সাহেদাকে রিকোয়েষ্ট করেছেন-“সাহেদা…তুমি হলে আপন ফুপু।তুমি দেখেশুনে সব করো!তোমার ভাতিজীর বিয়ে, তুমি আগে না থাকলে কি চলে?”অগত্যা সাহেদাকে সবকাজেই অগ্রগামী ভূমিকা পালন করতে হলো!মেহমানদারী থেকে শুরু করে রাধাবাড়া সবই করতে হলো সাহেদাকে।
কেবল রাতের খাবারের আগ দিয়ে বড়মামী পৌষীদের রুমে এসে বলে গেলেন-“পৌষী মা…তুই একটু সালাদটা সাজিয়ে ডেকোরেট করে দিয়ে যাস্ তো সুন্দর করে!তুই তো আবার এসব ভালো পারিস!”
ফলে পৌষীকে রুম ছেড়ে বেরিয়ে রান্নাঘরে আসতে হলো! সালাদ তো আগে থেকে করে রাখা যাবেনা তাতে সালাদে পানি ছেড়ে দেবে।তাই খাবারের ঠিক আগ দিয়ে পৌষী সালাদ সাজাতে বসলো! গাজর আর শসা দিয়ে চমৎকার করে ফুল বানালো।টমেটো দিয়ে গোলাপ ফুল বানালো।তারপর শসাকুচিগুলোকে টক দই দিয়ে মেখে তা ডিশে ঢেলে তার চারপাশে গাজর আর টমেটোর ফুলগুলো বসিয়ে দিলে সেটা দেখার মতো হলো!
আজকের আয়োজণ উপলক্ষে রাজও তার কয়েকজন বন্ধুবান্ধবদের ডেকেছে বাসায়!ওরা ওদের মতো রাজের রুমে বসে আড্ডা মারছে!
এদিকে রাজের এক বন্ধু মারুফ সিগারেট ধরাবার জন্য বারান্দায় বেরুলো!
দুর্ভাগ্যবশতঃ ঠিক সেই সময়ই পৌষী নিজের কাপড়গুলো নেবার জন্য পেছনের বারান্দায় আসলো! তখনি সে মারুফের নজরে পড়ে গেলো !
পৌষী বরাবরের মতোই ওড়না দিয়ে মাথা ঢাকাই ছিলো তবে ওর ফর্সা পেলব কোমল হাত দুটো দেখেই মারুফের লম্পট হ্রদয়ে অন্যরকম ইচ্ছে জাগ্রত হয়ে উঠল।সে ধরেই নিয়েছে মেয়েটি রাজদের নতুন কাজের বুয়া হবে!ততক্ষণে পৌষী চলে গেছে!
মারুফের মনে সন্দেহ হলো এটা কাজের মেয়ে কিনা তবু নিশ্চিত হবার জন্য রাজকে জিজ্ঞেস করলো-“দোস্ত….ঐ হট মালটা কে রে?”
রাজ মিউজিক সেন্টারে সিডি ঢুকাচ্ছিলো।অবাক হয়ে বলল-“কোনটা….কার কথা বলছিস?”
-“আরে…ঐ যে দড়ি থেকে কাপড় তুলতে দেখলাম যাকে..!”
-“কি জানি…রাহেলা হবে হয়তো! নতুবা নতুন কাজের মেয়েটা হতে পারে ! পৌষী না কি যেন নাম! তা তোর ওদিকে নজর পড়লো কেন?”রাজ বিরক্ত হলো!
মারুফ হে হে করে দাঁত বের করে হাসলো!
রাজের এক বন্ধু ওর দিকে কুশন ছুড়ে মারল তারপর গালি দিয়ে বলল-“শালা…রুচিটা একটু উন্নত কর্..সব রেখে কাজের মেয়েদের দিকে নজর!”
-“বডি ল্যাঙ্গুয়েজ তো কাজের মেয়েদের মতো লাগলোনা!তাই জিজ্ঞেস করলাম।”
উসমে …কুচ্…..খাস তো হ্যায়..!”
বন্ধুরা বাকিরা হা হা করে হেসে উঠলো!মারুফ পানি খাবার অযুহাতে কাজের মেয়েটাকে ডাকালো।দুবারই রাহেলা আসলো! মারুফ বুঝতে পারলো মেয়েটা অন্য কেউ হবে! মারুফ তাকে তাকে থাকলো কোনোভাবে যদি মেয়েটাকে একনজর দেখতে পায়!
যার হাত পা দেখেই মাথা ঘোলা হয়ে গেছে…তার পুরো মানুষটা না জানি দেখতে কেমন।”
এরপর থেকে কারনে অকারনে সময়ে অসময়ে রাজের বাড়ী আসা ধরলো মারুফ! আশা একনজর পৌষীকে দেখা ! এমনকি যখন রাজ বাড়ী না থাকে তখনো সে আসতে লাগলো!
অবশেষে একদিন পৌষীকে হাতের নাগালের মধ্যেই পেয়ে গেলো!
…..
সেদিন রাজ বাড়ীতে নেই বাইরে গেছে!
পৌষী কলেজ থেকে ফিরে গোসল সেরে ভেজা কাপড়গুলো বাতাসে মেলে দেবার জন্য পেছনের বারান্দা দিয়ে বাগান মতো জায়গাটায় এসে দাঁড়ালো! এখানে একটা নারিকেল গাছের সাথে দশবারো ফুট দুরের আমগাছের সাথে দুটো দড়ি বাঁধা হয়েছে কাপড় শুকানোর জন্য!পৌষী নিজের কাপড়গুলো ঝেড়ে ঝেড়ে তারের উপর মেলে দিচ্ছিলো! চুলগুলো ভেজা হলেও ওড়না দিয়ে নিজেকে পেঁচিয়েই রেখেছিলো পৌষী।দরকার হলে ঘরে গিয়ে ভেজা চুল শুকাবে!
ওদিকে রাজ বাড়ীতে নেই জানার পরেও ওর রুমে বসে অপেক্ষা করার বাহানা দিয়ে মারুফ রাজের ঘরের সামনে চলে এলো!
চারিদিকে চোরের মত তাকাতে গিয়েই হঠাৎ পৌষীর দিকে চোখ পড়লো! পৌষীর মুখ দেখা যাচ্ছেনা বটে কিন্তু ওর ছিপছিপে ফিগার মারুফের কামুক মনে লোভ জাগিয়ে তুললো!
পেছন থেকে এসে হালকা কাশি দিতেই পৌষী দৃশ্যত চমকে উঠে ওড়নাটা টেনে পুরো মুখ ঢেকে সেখান থেকে চলে যেতে নিলে মারুফ ওর পথরোধ করে দাঁড়ালো-“আরে..আরে..পালাচ্ছো কেন? তোমার সাথে একটু কথা বলি..!কি নাম তোমার?তুমি কি এ বাসায় কাজ করো না এদের আত্মীয়? কথা বলছো না কেন?”
পৌষী দাঁড়িয়ে কাঁপতে লাগলো!তারপর পাশ কাটিয়ে স্বভাবসুলভ চপলতা থেকে দৌড় দিতে নিলে মারুফ হঠাৎ খপ করে ওর কব্জি চেপে ধরলো!পৌষী মুচড়ে হাত ছাড়ানোর বৃথা চেস্টা করলো।মারুফ চারপাশ তাকিয়ে দেখলো কেউ নেই।সে আরো সাহস পেয়ে বলল-“কাজের ছেমরির এতো দেমাগ কিসের?কথাও বলতে চাস না…আরে ভালো পয়সা পাবি…ফাও ফাও তো তোরে ধরিনি….রাজ এখন আসবেনা জেনেই আমি এসেছি!বল্ না কবে কখন….এ পর্যন্ত বলে কথা শেষ করার আগেই হঠাৎ মারুফের হাত ধরে জোরে টান দিলো কেউ! তারপর মারুফের বুকে ধাক্কা মারলো।মারুফ তাল সামলাতে না পেরে পড়ে গেলো!তাকিয়ে দেখলো রাজ দাঁড়িয়ে আছে নারিকেল গাছের গোড়ায়!
পৌষীর ওড়নাটা মুখ থেকে কিছুটা খসে গিয়েছিলো বলে রাজ একঝলক ওর মুখের একপাশটা দেখলো!বিস্মিত হলেও নিজেকে সামলে নিলো!
তারপর ওকে চলে যেতে ইশারা করতেই পৌষী দৌড় দিলো!
রাজ কটমট করে মারুফের দিকে তাকিয়ে বলল-“হোয়াট ইজ অল দিজ নন্সেন্স?হ্যাভ ইউ গন ম্যাড?তুই কি মনে করে আমারই বাসার ভেতরে আমার মেড সার্ভেন্টের সাথে এমন আচরণ করছিস? মেজাজ খারাপ হবার আগে পালা এখান থেকে নইলে মেরে টেরে বসবো…জাস্ট গেট লস্ট….শালা শুয়োর !”
শেষ কথাটা চাপা স্বরে চিৎকার করে বলল রাজ।
মারুফ মাটি থেকে উঠে প্যান্ট ঝাড়তে ঝাড়তে বেহায়ার মতো হাসি দিয়ে বলল-“আরে..আমি তো জাষ্ট ওর সাথে কথা বলছিলাম।কার্টেসী বলেও তো একটা কথা আছে।”
-“গেট আউট!”(হাতের মুঠি পাকিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল রাজ)!
মারুফ চারদিক একবার তাকিয়ে তারপর চলে গেলো!রাজ চিন্তিত মুখে নিজের ঘরের দিকে গেলো!কিছুক্ষণ আগে দেখা মেয়েটির কথা মনে পড়লো! রাজ মেয়েটিকে ভালো করে দেখতে পায়নি…কিন্তু হলফ করে বলতে পারে,ওটা কাজের মেয়ে হতেই পারেনা!ইমপসিবল!”
রাজ তখন চিৎকার করে রাহেলাকে ডাকলো!রাহেলা ওদিকে দুপুরের ভাত খেয়ে সুখনিদ্রা যাচ্ছিলো! তাই রাজের ডাক তার কানে পৌঁছুলো না।
কি মনে হতে রাজ রান্নাঘরে উঁকি দিতেই দেখলো সেই মেয়েটিই সিঙ্কের কল ছেড়ে তার নিচে নিজের ডান হাতটা ধরে রেখে ফুঁপাচ্ছে।ওড়নাটা মাফলারের মতো গলায় পেঁচানো!
ও রাজকে দেখেনি।আশাও করেনি রাজ রান্নাঘরে চলে আসতে পারে!
রাজ ওর কব্জির কাছটা লালচে দেখে এগিয়ে এসে বলল-“কি নাম তোর?খুব বেশী লেগেছে নাকি?”
পৌষী ঝট করে তাকালো রাজের দিকে। তারপর দ্রুত ভেজা হাতেই ওড়না টানিটানি করতে গিয়ে উল্টো গলায় ফাঁস লাগিয়ে ফেলার যোগাড় করলো!
রাজ বিস্ময়ের সাথে এমনভাবে ওর তাকিয়ে আছে যেন মিশরের পিরামিড দেখছে!
পৌষীকে ওড়না টানাটানি করতে দেখে বলল-“থাক্ থাক্…আমি চলে যাচ্ছি!তুই কিছুক্ষণ পানি দিয়ে হাতটা ভিজিয়ে রাখ,লালচে ভাব কমে যাবে!কি নাম তোর?”
পৌষী চুপ করে রইলো!
রাজ ধমকালো-“নাম বলিস না কেন?”
-“পো…..পৌষী..!
-“এটা আবার কেমন নাম?মনে হয় পুষি ক্যাট..পুষি ক্যাট..হোয়্যার হ্যাভ ইউ বিন…?
তোর ভালো নাম বল্..!’
-“ভালো নাম সিদরতুল মুনতাহা !”
-“বাব্বাহ্…তোর নামের দেখি বেশ বাহার!এতো কাব্যিক নাম কে রাখলো?লেখাপড়া করিস? এ বাড়ীতে কবে থেকে কাজ করিস?তোর দেশের বাড়ী কই?”
-“এটা কোনো কাব্যিক নাম না!” এতটুকু বলেই
রাজের কথা শেষ হবার আগেই ওকে পাশ কাটিয়ে দৌড় দিলো পৌষী।
রাজ কেবল পেছন থেকে ডাকল-“,আরে…শো
ন্!”বলে দুকাঁধ ঝাকিয়ে বলল,যেটা বলতে এলাম সেটাই তো বলা হলোনা! মেয়েটা যেন এসব কথা কাউকে না বলে সেটাই বলতে এলাম!কিন্তু মেয়েটাকে দেখে সেকথা বলতে ভুলেই গেলাম ! ”
রাজ নিজের মনেই একবার বলে উঠল-“এটা কাজের মেয়ে? মনে তো হয়না! এ কাজের মেয়ে হতেই পারেনা “!
….
চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here