স্মৃতিতে তোমার বন্দনা পর্ব ১৬

#স্মৃতিতে_তোমার_বন্দনা
#পর্ব_১৬
#Saji_Afroz
.
.
গাড়ি থেকে ছোঁয়া নামতেই আফিয়া জান্নাতের দেখা পেলো । উঠোনে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি ।
ছোঁয়া তার দিকে এগিয়ে আসতেই তিনি বলে উঠলেন-
এতো সুন্দর গাড়িতে চড়িস তুই?
-হু ।
-হ্যাঁ রে ছোঁয়া? কেমন ওদের বাড়িটা?
-আপু বলেনি?
-তোর বোন কেমন তুই যেনো জানিস না!
-বাড়িটা সুন্দর । তার চেয়ে বেশি সুন্দর বাড়ির মানুষ গুলোর মন ।
-কি কি কাজ করালো তোকে দিয়ে?
-আজ আন্টির চুল আঁচড়িয়ে দিয়েছি, চা বানিয়েছি, গল্প করেছি ।
-এতোটুকুই?
-হ্যাঁ ।
-দুপুরে খেতে দিয়েছে তোকে?
-গরুর মাংস দিয়ে ভাত খেয়েছি । বিকালে নাস্তাও করে এসেছি ।
-এতো লটারি লাগলো মনেহচ্ছে আমার । খুশি লাগছে অনেক ।
-তুমি কিন্তু বলেছিলে মা, আমি অকর্ম । আজ আমার জন্য তুমি খুশি । শুধু খুশি না, অনেক খুশি ।
.
তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে ভেতরে চলে গেলো ছোঁয়া ।
.
.
নয়নতারা মোবাইলে রাফসানের ছবি দেখছে । ছোট থেকে ভালোবাসে সে রাফসানকে । সমবয়সী হওয়ায় দুজনের মাঝে বন্ধুত্বও গড়ে উঠে । কিন্তু ভালোবাসা? সেটা কেবল নয়নই বাসে । যখন থেকে প্রেম-ভালোবাসার মানে নয়নতারা বুঝতে শিখেছে, তখন থেকেই একটা আশা তার মনে । একটাবার যেনো রাফসান তাকে ভালোবাসি বলে! কিন্তু আশা আশায় রয়ে গেলো । রাফসানের কাছে সে শুধুই বন্ধু । ভালোবাসি কথাটি এখনো সে শুনতে পারেনি । কষ্ট হয় নয়নতারার, ভীষণ কষ্ট । চোখের সামনে ছোঁয়ার প্রতি রাফসানের ভালোবাসা দেখলে কষ্ট হয় । কেনো রাফসান তার কাছেই ছোঁয়ার খবরাখবর জানতে চায়? সে কি তার দীর্ঘশ্বাসের শব্দ শুনেও বুঝেনা, এতে তার কষ্ট বাড়ে?
এসব ভেবে ভেবে নয়নতারার দুচোখ পানিতে টলমল করে উঠলো ।
মোবাইলের স্ক্রিনে এক ফোটা পানির ফোটা পড়তেই, আঙুল দিয়ে মুছে দিলো সে ।
ছোঁয়া এসে বললো-
দুলাভাই এর ছবি দেখছিস নাকি?
.
বিছানার এক পাশে মোবাইলটা রেখে দিলো নয়নতারা ।
ছোঁয়া তার ছলছলে চোখ দেখে বললো-
দূরে আছে বলে মিস করছিস?
.
আধভাঙ্গা গলায় নয়নতারা জবাব দিলো-
হু ।
.
ছোঁয়া তাকে জড়িয়ে ধরে বললো-
ইশ! আমার বোন তো হবু শ্বশুরবাড়িতে যাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে আছে । এটা যদি হবু দুলাভাই জানেন, খুশিতে পাগল হয়ে যাবে । আর বলবে, হায়রে! বর পাগলা একটা বউ পেলাম ।
.
হেসে ফেললো নয়নতারা ।
তা দেখে ছোঁয়াও হেসে বললো-
আমার আপুর মুখে এমন হাসিই মানায় । আচ্ছা আমি ফ্রেশ হয়ে আসি ।
.
ছোঁয়া বেরিয়ে যেতেই নয়নতারা বললো-
তুই কিছুই জানিস নারে ছোঁয়া । জানলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হবে ৷ আমি চাইনা, আগের মতো আরেকটা ঝড় আসুক আমাদের জীবনে ।
.
.
ভার্সিটি থেকে বাসায় এসে মাত্র ফ্রেশ হলো তোহা । তার মা এসে বললেন-
আসবো?
-আমার রুমে আসার জন্য পারমিশন নিচ্ছো, কই বিয়ে ঠিক করতে একবারো তো নিলেনা?
.
তিনি ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বললেন-
কি বলছিস এসব তুই? তোর কি পরশকে পছন্দ নয়?
-এই প্রশ্নটি আগে করা উচিত ছিলো বলে কি তোমার মনেহয়না, মা?
-না মনেহয়নি । কেননা তোরা দুজন দুজনকে অনেক বছর ধরেই চিনিস । কতো মিল তোদের দুটিতে ৷ আমি ভেবেছি তুই ওকে ভালোবাসিস ।
-কেনো ভেবেছো?
-কারণ ও ছাড়া আর কোনো ছেলেই তোর ক্লোজ নয় ।
-ও আমার ভালো বন্ধু মা ।
-সেইজন্যই তো..
-কি?
-আমি ভেবেছি তোরা দুজন দুজনকে ভালোবাসিস ।
বাসিস না?
-হ্যাঁ বাসি ।
-তাহলে?
-ভালোবাসি কিন্তু বন্ধু হিসেবে । একটা বন্ধু আরেকটা বন্ধুকে ভালোবাসতে পারেনা? ঠিক তেমনি ।
.
চোখ জোড়া বড়বড় করে তাকিয়ে রইলেন তিনি । তোহা তার হাত ধরে বললো-
আমি তোমাকে ভালোবাসি, তুমি আমাকে ভালোবাসো । ঠিক তো?
-হু ।
-আমার আর পরশের ভালোবাসাও তেমনি ।
-একটা ছেলে আর মেয়ের মাঝে এমন ভালোবাসা হয় নাকি?
-কেনো হবেনা মা? ছেলের মেয়ের বুঝি বন্ধুত্ব হয়না?
-আমার মনেহয়েছে পরশই তোর জন্য প্রপোজালটা পাঠিয়েছে । পাঠায়নি?
-না ।
-তাহলে কি আমি ভুল করে ফেললাম?
-নিজেকেই নিজে প্রশ্ননা করো ।
.
কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থেকে তিনি বললেন-
তোকে জিজ্ঞাসা না করে ভুল করেছি, কিন্তু আমার সিদ্ধান্ত টা ভুল নয় । পরশ তোর উপযুক্ত, তুই পরশের জন্য উপযুক্ত, দুজনে ভালো বন্ধু । তবে জীবনসঙ্গী হতে সমস্যা কি?
তুই কি অন্য কাউকে ভালোবাসিস?
-না ।
-তাহলে কি বলতে চাচ্ছিস?
-তুমি যখন জিজ্ঞাসা না করেই নিজের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছো এখন আর কিছু বলার নেই আমার ।
.
শুয়ে পড়লো তোহা । তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার মা । আর মনেমনে ভাবছে-
কি বোঝাতে চায়ছে তোহা?
কি চলছে এই মেয়ের মনে? পরশের ফ্যামিলির দিক থেকেতো সবই ঠিক আছে । এই মেয়ে বেঁকে না বসলে হয় এখন ।
.
.
সোফায় পায়ের উপরে পা তুলে বসে টিভি দেখছিলো ছোঁয়া । এমন সময় হাতে আচারের প্যাকেট নিয়ে হাজির হলো রুপালি । ছোঁয়ার পাশে বসে তার দিকে দুটো প্যাকেট এগিয়ে দিয়ে বললো-
এই নে ঘুষ ।
-ঘুষ?
-হু ।
-কিসের জন্য?
-পাগলের ডাক্তারের থেকে দূরে থাকার জন্য ।
-উনার কাছে থাকতে বয়েই গেছে আমার ।
-তুই এই এলাকায় আসার পর থেকে আমার প্রপোজ কমে গেছে । যতো ছেলেকে এই পর্যন্ত পছন্দ করেছি সবই তোর পেছনে ঘুরেছে । আমি এই বিষয়ে রিস্ক নিতে চাচ্ছিনা । তুই এক কাজ করবি ।
-কি?
-উনাকে বলবি তোর বিয়ে ঠিক হয়ে আছে ।
.
রুপালির মুখে কথাটি শুনে ছোঁয়ার মুখটা গম্ভীর হয়ে গেলো । তার গম্ভীরমুখ দেখে রুপালি বললো-
এমন বললে তোর প্রতি কোনো ফিলিংস উনার আসবেনা ।
-রুপালি তুই সত্যি আমার মাথাটা খারাপ করছিস এখন ।
-তুই রাগ করছিস কেনো? আমিতো মজা নিচ্ছিলাম । আসলে কোথায় কি ভাবছি! কোথায় উনারা আর কোথায় আমরা । আমাদের মতো মধ্যবিত্ত ফ্যামিলির মেয়েকে ওমন একটা ফ্যামিলির ছেলে পছন্দ করতেই পারেনা ।
.
রুপালির দীর্ঘশ্বাসের শব্দ যেনো শুনতে পেলো ছোঁয়া ।
শান্তস্বরে বললো সে-
তুই এভাবে কেনো বলছিস রে? তুই কোনদিকে কম আছিস?
.
নিশ্চুপ রুপালি । ছোঁয়া বললো-
আমি ডাক্তার সাহেবের সাথে তোর ব্যাপারে কথা বলবো ।
-পাগল নাকি! আমি জাস্ট মজা করছি । আমি একেবারেই পাগল হয়ে যাইনি উনার জন্য ।
-একটু তো হয়েছিস । মিথ্যে?
-সিরিয়াস না । ওই একটুই…
-বুঝলাম ।
তবে বলতে তো অসুবিধে নেই ।
-তা নেই । তবে ওভাবে নয় । আগে জানতে হবে ডাক্তার বাবুর কোনো প্রেমিকা আছে কিনা । যদি না থাকে তাহলে একটু চেষ্টা করে দেখতে পারিস, যাতে উনার জন্য আমার আর পরবর্তীতে আফসোস নাহয় ।
.
মৃদু হেসে ছোঁয়া বললো-
যেহেতু উনাদের বাসায় যাচ্ছি বের করতে বোধহয় কষ্ট হবেনা । তোর জন্য এতোটুকু করতেই পারি আমি ।
.
.
উঠোনে এসে সেই চেয়ার টেনে বসলো পরশ, যেখানে আজ বিকেলে ছোঁয়া বসেছিলো ।
আজকের দিনটা কিভাবে যেনো পার হয়ে গেলো । মনেহচ্ছে দুইমিনিটে দিন শেষ হয়েছে । হ্যাঁ দুই মিনিট! ছোঁয়ার আশেপাশে ঘুরেই তার এই অবস্থা । না জানে ছোঁয়া তার কাছে, খুব কাছে থাকলে কি অবস্থা হবে? তখন কি ২৪ঘন্টা ২৪সেকেন্ড মনে হবে তার কাছে?
এসব ভেবে আনমনে হেসে চলেছে পরশ, আর আকাশের দিকে তাকিয়ে বলছে-
সিনেমায় কতো প্রেমিকের প্রেমের সাক্ষী হতে দেখেছি তোকে ৷ আমার ভালোবাসারও সাক্ষী হবি তুই? কথা দিচ্ছি, প্রেম স্বার্থক হলে ছোঁয়াকে নিয়ে এমন রাতে তোকে দেখবো ।
.
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here