স্মৃতিতে তোমার বন্দনা পর্ব ২৪

#স্মৃতিতে_তোমার_বন্দনা
#পর্ব_২৪
#Saji_Afroz
.
.
নয়নতারার সাথে কথা বলার জন্য অস্থির হয়ে আছে পরশ । কিন্তু সুযোগই পাচ্ছেনা সে । কিছুতেই হিসেব মেলাতে পারছেনা পরশ । বিয়ে ঠিক হয়ে আছে বড় বোনের সাথে কিন্তু ভালোবাসার আশা করে ছোট বোনের কাছে! এটা কেমন কথা? রাফসানের কি কোনো খারাপ উদ্দেশ্য আছে? হয়তোবা সে নয়নতারাকে ভালোবাসেনা, ছোঁয়াকে বাসে ৷ এমন হলে নয়নতারাকে বিয়ে করতে চাওয়ার প্রয়োজনটা কি?
উফফ..
নানারকমের প্রশ্নে অস্থির হয়ে আছে পরশের মনটা । যেসবের উত্তর না পাওয়া অবদি শান্তি পাবেনা সে । কিন্তু এসব প্রশ্ন নয়নতারাকেই বা কিভাবে করবে! তার হবু বর সম্পর্কে সে কি এসব শুনে বিশ্বাস করবে?
.
-কিরে পরশ? আজ যাচ্ছিস না হাসপাতালে?
.
মায়ের করা প্রশ্নে শোয়া থেকে উঠে পরশ বললো-
একদমি ভুলে গিয়েছিলাম মা ।
-এই অসময়ে শুয়ে আছিস কেনো? ছোঁয়া মনে করিয়ে না দিলেতো আমারো মনে পড়তোনা তুই এখনো বাসায় ।
-ছোঁয়া কবে আসলো?
-অনেকক্ষণ হলো ।
-ওহ! আচ্ছা আমি রেডি হয়ে নিচ্ছি ।
.
.
তৈরী হয়ে ড্রয়িংরুমে আসতেই ছোঁয়ার দেখা পেলো পরশ । কেমন হাসিখুশি প্রানবন্ত একটা মেয়ে । তাকে হবু দুলাভাই সম্পর্কে জানানোটা ঠিক হবেনা । বরং রাফসানের যার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে তাকে জানানোই শ্রেয় ।
.
.
মনের ভেতরে কেমন যেনো করছে তোহার । বারবার চোখের সামনে মুশফিকের চেহারাটা ভেসে উঠছে । এমন কেনো লাগছে তার? কেনো ইচ্ছে করছে মুশফিকের সাথে কথা বলতে? তাকে কষ্ট দিয়েছে বলে কি?
এসব ভাবতে ভাবতেই তোহার মোবাইলে নীলার ফোন এলো ।
রিসিভ করতেই নীলা রেগেমেগে বললো-
মানুষের ভালো চাইতে নেই ।
-কি হয়েছে?
-কি হয়েছে! তোমার কারণে কতোটা কষ্ট পেয়েছে ভাইয়া আইডিয়া আছে তোমার?
-আমি উনাকে কষ্ট পাওয়ার মতো এমন কিছু বলিনি । যা যা সত্যি তা বলেছি ।
-কি দরকার ছিলো এসব বলার? তার চেয়ে বলতে পারতে তোমার উনাকে জানতে কিছুদিন সময় দরকার ।
-মিথ্যে দিয়ে কিছু শুরু হোক আমি চাইনা ।
.
শান্তগলায় নীলা বললো-
তার মানে তুমি চাও ভাইয়ার সাথে কিছু শুরু হোক?
.
তোহা বড় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো-
নীলা আমি কি করবো বুঝতে পারছিনা ।
-মন যেটা বলে সেটাই করো । শুধুমাত্র বন্ধুর কথা ভাবলে চলবেনা । সবসময় নিজেকে আগে প্রায়োরিটি দিবে । মন কি চায়ছে তা করবে । জীবনটা তোমার তোহা । অন্যের জন্য নিজেকে কষ্ট পেতে দিওনা । তুমিই ভাবো এখন ।
.
ফোন রেখে নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করলো তোহা-
কাকে আমার জীবনে চাই আমি? কাকে না পেলে কষ্ট পাবো আমি? পরশ নাকি মুশফিক?
.
.
রাতের খাবার খেয়ে নিজের রুমে আসলো ছোঁয়া । টেবিলের উপরে রাখা রাফসানের দেয়া নুপুরজোড়ার দিকে নজর পড়লো তার । কিন্তু সে একবারের জন্যও ছুঁয়ে দেখলোনা । ড্রয়ার টেনে অন্য এক জোড়া নুপুর বের করে নিলো । নুপুর জোড়ার রঙ উঠে গিয়েছে, কালো হয়ে গিয়েছে । তবুও তার কাছে প্রিয়, শ্রেষ্ঠ উপহার! আজীবন নিজের কাছে রাখবে সে এই জোড়া ।
বিছানায় বসে নিজের পায়ে পরছিলো সে নুপুর একটি । এমন সময় নয়নতারা এসে বললো-
পুরাতন জিনিস কেনো পরছিস বোন?
-তুমি জানো এসব আমার কাছে সবসময় নতুন থাকবে ।
.
টেবিলের উপর থেকে রাফসানের দেয়া নুপুরগুলো নিয়ে নয়নতারা বললো-
দেখি এগুলা পর । ভালো মানাবে ।
-না আপু । তুমি রেখে দাও ।
-যার জিনিস তার কাছে থাকা দরকার । দেখি পরে দেখাতো, কেমন লাগে!
.
ছোঁয়ার মেজাজটা খারাপ হয়ে গেলো । দাঁড়িয়ে বললো-
যখন তখন ভালো লাগেনা এসব ।
-আমি কি করলাম?
-কি করোনি তোমরা! কি করোনি? যখন যেটা বলবে সেটা কেনো করতে হবে? পরবোনা আমি এই নুপুর, পরবোনা ।
.
হনহনিয়ে বেরিয়ে গেলো ছোঁয়া । নয়নতারার চোখে পানি । সে চায় তার বোনটা সুখে থাকুক, তাই নিজের ভালোবাসার বলি দিয়েছে সে । কিন্তু ছোঁয়া খুশি নয় । তার এই ত্যাগের মূল্য কি রইলো!
.
.
হাসপাতাল থেকে এসেছে পরশ । বাসায় প্রবেশ করার সময় বাগানে চোখ আটকালো তার ।
বাগানের একপাশে রাখা বেতের সোফার উপরে উড়না শরীরে প্যাঁচিয়ে শুয়ে আছে ছোঁয়া ।
পরশ তার পাশে আসলো । বোঝার চেষ্টা করলো সে ঘুম কিনা?
ছোঁয়া গভীরঘুমে আচ্ছন্ন । এই যেনো এক সুযোগ, ছোঁয়াকে খুব কাছ থেকে দেখার ।
পরশ হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো ছোঁয়ার সামনে । এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো তার দিকে । ঝিরিঝিরি বাতাসে ছোঁয়ার চুলগুলো মুখে এসে পড়েছে । পরশ হাত দিয়ে তার চুলগুলো সরিয়ে দিলো । ইচ্ছে করছে তার কপালে নিজের ঠোঁটটা ছুঁয়ে দিতে । কিন্তু এমন কিছু পরশ করলোনা । কথায় আছেনা? সবুরে মেওয়া ফলে ।
পরশ উপলব্ধি করতে পারলো, কেউ আসছে । তাই সে দ্রুত উঠে দাঁড়ালো ।
নয়নতারা এসে বললো-
এখানে ঘুমিয়ে গিয়েছে মেয়ে! হায়রে…
-মনেহচ্ছে গভীর ঘুমের দেশে চলে গিয়েছে আপনার বোন ।
-হ্যাঁ । একবার ঘুমোলে সহজে ঘুম ভাঙেনা ৷ এই অবস্থায় তাকে কিডন্যাপ করলেও টের পাবেনা ।
.
পরশের রাফসানের কথাটি মনে পড়লো । নয়নতারাকেও পেয়েছে সে । এটাই যে সুযোগ!
পরশ বললো-
রাফসানের সাথে আপনার বিয়ে কখন?
-সরি?
-আপনাদের বিয়ে কবে?
-রাফসানের সাথেতো আমার বিয়ে হবেনা ।
-মানে? উনার সাথেই তো আপনার বিয়ে ঠিক হয়েছে, তাইনা?
-না ।
.
পরশ অবাক হয়ে বললো-
তবে?
-রাফসানের বড় ভাই এর সাথে ।
.
কথাটি শুনে পরশ বুঝতে পারলো সে ভুল বুঝেছে । তার মানে রাফসান ছোঁয়াকে পছন্দ করে!
নয়নতারা বললো-
কেনো জানতে চায়ছেন?
-আমি ভেবেছি একটা বিয়ে খেতে পারবো ।
-অবশ্যই পারবেন । রাফসানের বড় ভাই রাদিব দেশের বাইরে থাকেন । উনি আসলে একটা নয় বরং দুটো বিয়ে খেতে পারবেন ।
-দুটো বিয়ে মানে?
-আমার আর ছোঁয়ার বিয়ে ।
-ছোঁয়ার?
-হ্যাঁ । রাফসানের সাথে ছোঁয়ার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে । রাফসান অনেক আগে থেকেই ওকে পছন্দ করে । বাবার বন্ধুর ছেলে হিসেবে আমাদের বাসার সকলেরও তাকে পছন্দ । এই আরকি । ছোঁয়া কিছু বলেনি? অবশ্য ও এসব বিষয়ে কথা বলতে পছন্দ করেনা । না বলাটাই স্বাভাবিক ।
.
নয়নতারার মুখে সবটা শুনে পরশের মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পড়লো । এসব কি শুনছে সে! ছোঁয়ার বিয়ে হবে রাফসানের সাথে!
.
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here