স্মৃতিতে তোমার বন্দনা পর্ব ৬

#স্মৃতিতে_তোমার_বন্দনা
#পর্ব_৬
#Saji_Afroz
.
.
উঠোনে বসে লবণমরিচ মাখিয়ে আমলকি খাচ্ছে ছোঁয়া । চুলগুলো ভেজা থাকার কারণে টপটপ করে পানি পড়ছে ।
নয়নতারা স্কুল থেকে এসেই উঠোনে দেখা পেলো ছোঁয়ার ।
ধমকের সুরে বললো-
এই অবেলায় গোসল করেছিস কেনো?
-এতো কাজ একসাথে কখনো করেছি আমি! সময় পাইনি ।
-আজকে একদিন না করলেই হতো গোসল ।
-ইয়াক! এক সাথে এতো কাজ করার পর গোসল না করলে ভালো লাগেনা । আচ্ছা তুমি ভেতরে চলো । ভাত দিচ্ছি ।
-আজ বাইরে খেয়েছি আমি ।
-কার সাথে?
-বান্ধবী ।
.
হনহনিয়ে ভেতরে চলে গেলো নয়নতারা ।
সাথে সাথে আগমন ঘটলো রুপালির । ছোঁয়ার পাশে বসে বললো-
এই টকের গন্ধে চলে এসেছি আমি ।
-রান্নায় গন্ধ পাওয়া যায় বুঝলাম, টকেরও গন্ধ পাওয়া যায় নাকি?
-টক প্রেমীরা পায় ।
-হুম এবার ভাগ বসা ।
-নিষেধ করলেও বসাবো ।
.
হেসে ফেললো ছোঁয়া ।
খানিকক্ষণ বাদে রুপালি বললো-
একটা কথা বলতে ভুলেই গিয়েছিলাম ।
-কি?
-ওই ডাক্তারবাবুর সাথে আমার আবার দেখা হয়েছিলো হাসপাতালে ।
-কে?
-ওই যে হ্যান্ডসাম পাগলের ডাক্তার ।
.
নিজের ভ্রুগুলো কুচকে ছোঁয়া বললো-
সাইকিয়াট্রিস্ট?
-ওই এক আরকি । পাশের কেবিনে এসেছিলো, আমার সাথে কথা বলেছে নিজ থেকেই ।
-তাই নাকি?
-হ্যাঁ । আমি একা কিনা এটাও জানতে চেয়েছে ।
-ভালো ।
.
লজ্জামাখা মুখে রুপালি বললো-
উফফ…
-কি হলো?
-একটু স্মার্টভাবে সেদিন কথা বললে পটিয়ে ফেলতে পারতাম তাকে ।
.
ছোঁয়া এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো রুপালির দিকে । রুপালি বললো-
কেনো পারতাম না? কতো ছেলে এই রুপালি বলতেই পাগল! ওই পাগলের ডাক্তারকেও পাগল বানিয়ে ছাড়তাম ।
-রুপালি তুই বকবক করবি? আমি খেয়ে শেষ করে দিচ্ছি কিন্তু আমলকি ।
.
নিজের মুঠোতে কিছু আমলকি ঢুকিয়ে নিতে নিতে রুপালি বললো-
উনি তোর কথাও জানতে চেয়েছে ।
-কি?
-তুই কবে আসবি হাসপাতালে ।
-ওহ!
-ওহ! আমার কথা এভাবে কেউ জানতে চায়লে, আমি অনেক খুশিই হতাম ।
-উনি কি রানবীর কাপুর?
-নাতো ।
-কোনো ফেমাস লেখক?
-তাও না ।
-তবে আমি খুশি কেনো হবো?
-হ্যান্ডসাম তো!
-তুই একটু বয়, আমি আসছি ।
.
ভেতর থেকে কার্ডটা এনে রুপালির হাতে ধরিয়ে দিয়ে ছোঁয়া বললো-
এই নে তোর হ্যান্ডুর কার্ড । যা ফোন করে পটা দেখি ।
.
রুপালি খুশি হয়ে বললো-
আরেব্বাস, এটার কথা আমার মনেই ছিলোনা! এবার দেখবি, কেমন করে ডাক্তার পটিয়ে ফেলবে এই রুপালি।
.
.
সিরিয়াল অনুযায়ী চেম্বারে বসে পেশেন্ট দেখছে পরশ । জারিফা আক্তার নামের এক পেশেন্ট আসলো ।
পরশ তার সমস্যা কি জানতে চায়লে সে বললো-
আমি আপনাকে ভালোবাসি ।
.
অনেক মানসিক রোগীই পরশ দেখেছে । কিন্তু এমন পরিস্থিতির শিকার সে কখনো হয়নি । কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পরশ বললো-
সরি?
-জ্বী সত্যিই শুনেছেন । আমার খালা আপনার পেশেন্ট । তার সাথেই হসপিটালে এসে আপনার দেখা পাই । বিশ্বাস করেন, সেদিন থেকেই শুধু আপনি আমার চারপাশে ঘুরেন ।
-আমি মোটেও আপনার চারপাশে ঘুরিনা । আমি ঘুরাঘুরি করতে পছন্দ করিনা ।
-ঘুরেন । আমার কল্পনায় । ভেবেছি মাথা থেকে আপনার ভুত নামাবো ।
-বেঁচে আছি এখনো । ভুত কিভাবে হবো!
-প্রেমের ভুত ।
-ওহ! তারপর?
-তারপর ভেবেছি পরশ নামের কাউকে দেখেছি এটাও ভুলে যাবো । কিন্তু পারলাম না । খালার সাথে এসে আমি নিজেই মানসিক রোগী হয়ে যাচ্ছি! প্লিজ এর সমাধান কি আপনি বলুন । নাহলে পাগল হওয়া থেকে আমাকে কেউ বাঁচাতে পারবেনা ।
.
নিশ্চুপ পরশকে দেখে জারিফা বললো-
আপনি হয়তো আমাকে বেহায়া ভাবছেন । কিন্তু ভালোবাসা…
-মানুষকে বেহায়া বানিয়ে ছাড়ে ।
-আপনি কিভাবে জানেন?
-কেননা আমিও কাউকে ভালোবাসি । দেখুন জারিফা আপনি যদি মজা করে থাকেন…
-আমি মোটেও মজা করছিনা ।
-তাহলে বলবো এসব মাথা থেকে ফেলে দিন ।
-কেনো?
-কারণ আমি বিবাহিত ।
-আপনি ম্যারিড নন । আমি জানি ।
-আপনি ভুল জানেন । আমাদের বিয়ে হয়েছে তবে ঘটা করে হয়নি । খুব তাড়াতাড়িই হবে ।
.
মুখটা চুপসে গেলো জারিফার ।
.
পরশ বললো-
আমি জানি, আপনি কোনো মানসিক রোগী নন । আমার সাথে কথা বলতেই রোগী সেজে এসেছেন । আপনার ফিলিংসকে আমি সম্মান করি । তাই সবটা জানালাম আপনাকে । এবার আপনি আসতে পারেন ।
.
জারিফা হেসে বললো-
বিবাহিত না হলেও আপনি আমাকে কোনোদিনও ভালোবাসবেন না, এটা আমি বুঝেছি ৷ কেননা আমিও কাউকে ভালোবাসি । আমিও আপনার ফিলিংস কে সম্মান করে চলে যাচ্ছি ।
.
জারিফা চলে গেলো । পরশ নিজেরমনে বললো-
আজ আমি জারিফাকে মিথ্যে বলে যেভাবে ফিরিয়ে দিয়েছি, ছোঁয়াও যদি আমাকে সেভাবে ফিরিয়ে দেয়! তাও ভালো । জারিফা অন্তত নিজের মনের কথা তো জানাতো পারলো! কোনো আফসোস থাকবেনা তার আর ।
.
.
ছোঁয়াকে টানতে টানতে উঠোনে নিয়ে আসলো রুপালি ।
ছোঁয়া বললো-
কি হলোরে?
-কিছু নাহলে রাতে এসে তোকে উঠোনে আনতাম?
-তাইতো বলছি হলোটা কি?
-ফোন দিবো ।
-কাকে?
-ডাক্তারবাবু কে । এখন আমি সিরিয়াস ।
-তো দে! আমি কি করবো?
-সাহস দিবি ।
-তোকে! তুই নাকি…
-হুম হুম আমি এসবে পটু । সেটা দেখাতেই এসেছি ।
-দেখা ।
.
কার্ড থেকে নাম্বারটি মোবাইলে তুলে, ডায়াল করলো রুপালি ।
বেশকয়েকবার ডায়াল করার পরেও রিসিভ করলোনা ।
রুপালি হতাশ হয়ে বললো-
রিসিভ করছেনা!
-আরেকবার দিয়ে দেখ ।
.
এবার সত্যিই রিসিভ করলো পরশ । রুপালি মিষ্টিস্বরে বললো-
ফোন কেনো রিসিভ করছিলে না?
.
অপরিচিত নাম্বার থেকে কোনো মেয়ের মুখে এমন প্রশ্ন শুনে পরশ বললো-
আমি কি আপনাকে চিনি?
-ফোন কেনো ধরছিলে না সেটা বলো ।
-আপনি কে এটাতো বলেন!
-তোমার অপরিচিতা । এবার বলো কেনো ধরছিলে না । ব্যস্ত?
-পেশেন্ট দেখছিলাম ।
-ডিস্টার্ব করলাম বোধহয় ।
-তা অবশ্যই করেছেন ।
.
লাউড স্পিকারে কথা বলাতে ছোঁয়া সবটা শুনতে পাচ্ছিলো । পরশের এই কথাটি শুনে হাসি পেলো তার । উড়না দিয়ে মুখ টিপে হাসতে লাগলো সে ।
রুপালি তা দেখেও না দেখার ভান করে বললো-
একটা মেয়ের সাথে এভাবে কড়াভাবে কথা বলছো তুমি?
-পরিচয় না দিলে আরো কড়াভাবে বলতে পারি । অপরিচিত মেয়েদের প্রতি কোনো ইন্টারেস্ট আমার নেই ।
.
এবার উচ্চশব্দে হেসে উঠলো ছোঁয়া ।
তাড়াহুড়ো করে ফোনের লাইনটা কেটে দিলো রুপালি ।
গম্ভীর গলায় বললো-
হাসির আর সময় পেলিনা?
-ঠিক সময়ে ফোন কেটেছিস । নাহলে আরো অপমানিত হতে হতো ।
-আসলেই । এক্কেবারে বজ্জাত ডাক্তার । পাগল একটা । নাহলে আমার মতো মেয়ের কণ্ঠস্বর শুনে লুতুপুতু করার কথা ।
.
ছোঁয়ার হাসি যেনো থামছেই না । রুপালি রেগেমেগে বললো-
ছোঁয়া থামবি?
.
ছোঁয়ার হাসির সাথে অন্য কারো হাসির শব্দ কানে ভেসে এলো ।
তারা সামনে তাকাতেই, এই এলাকার কবির কে দেখতে পেলো ।
রুপালি বললো-
আপনি হাসছেন কেনো?
-ছোঁয়ার হাসি দেখে ।
.
পেছন থেকে রাফসান বলে উঠলো-
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মেয়ে দেখা হচ্ছে?
.
কবির কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে বললো-
নাহ! আমি আসলে এদিক দিয়েই যাচ্ছিলাম…
-মেয়ে দেখে দাঁড়িয়ে পড়লেন । এইতো? এই জায়গায় এসব চলবেনা ।
-আমি এখানে স্থানীয় । আপনি আমাকে ধমকাচ্ছেন?
-স্থানীয়রা বুঝি যা ইচ্ছে করতে পারে?
.
ছোঁয়া এসে বললো-
আমি কবির ভাইয়াকে চিনি । উনাকে কিছু বলবেন না প্লিজ । আর কবির ভাইয়া দুঃখিত । উনি আপনাকে চিনেনা । তাই…
-ইটস ওকে ।
.
কবির চলে গেলে রাফসান বললো-
এমন ছেলেদের তুমি চেনোনা ছোঁয়া ।
-চেনার প্রয়োজন মনে করছিনা ।
-সকালে একটা সাইজ করেছি, আবার এখন আরেকটা । এসব ছেলেদের আমি ভালোভাবেই চিনি ।
-সকালে মানে?
.
সকালের ফোনের কথাটি রাফসান চেপে গিয়ে বললো-
ও কিছুনা । আমি আন্টির সাথে দেখা করতে এসেছি ।
-ভেতরেই আছে মা ।
.
রাফসান ভেতরে প্রবেশ করলে রুপালি বললো-
কার্ড টা কি তুই নিবি?
-আমার কি দরকার!
-আমারো দরকার নেই । এমন বোকা ডাক্তারকে আমার দ্বারা পটানো সম্ভব না ।
-বোকা?
-হ্যাঁ । নাহলে রুপালির সাথে এভাবে কথা বলে!
.
কথাটি বলে কার্ডটি ছিড়ে ফেললো রুপালি ।
.
.
এই হাসির শব্দটা এতো পরিচিত কেনো মনে হয়েছে পরশের? মনেহচ্ছে ছোঁয়ার হাসির শব্দ এটি! তাহলে কি ফোনের ওপাশের মেয়েটির পাশে ছোঁয়া ছিলো? হ্যাঁ, তার মন বলছে ছোঁয়াই ছিলো । তারা হয়তো মজা করেছে পরশের সাথে ।
পরশ আর দেরী না করে নাম্বারটিতে ডায়াল করলো ।
.
চলবে
.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here