হবে কি আমার পর্ব -১০

#হবে-কি-আমার(2)
#writer_Ruhi-mondal
#পর্ব_10

সন্ধ্যা নেমেছে বেশ কিছুক্ষণ হলো! বাড়ি চারিপাশে আলোর রোশনাই ছড়িয়ে পড়েছে। বিয়ে বাড়ির সানাই এর শব্দ ভেসে যাচ্ছে চারি দিক,চারিদিকে মানুষের কোলাহল, বরযাত্রী কনে যাত্রী মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছে। বিয়ের লগ্ন রাত নয়টায়! ঘড়িতে এখন সন্ধ্যা সাতটা বরযাত্রী চলে এসেছে। তনুশ্রী কে লাল বেনারসি স্বর্ন জুয়েলারি আর ভারী মেকাপে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে,সে যেখানে বসে আছে সেখানে তার ফ্রেন্ডসরা তার সাথে সেলফি তুলতে ব্যস্ত! অলকা দেবী দু’দণ্ড স্থির হয়ে থাকতে পারছেনা একের পর এক কাজ করে যাচ্ছেন তিনি উনার চেয়ে বরং ব্যস্ত মহেশ বাবু সকাল থেকেই তিনি ও নানান কাজে ব্যস্ত হয়ে আছেন। তিনি এখন পুরোহিত মশাইয়ের সাথে মন্ত্র পড়ছেন। এদিকে তিশা আর অনুরাগ ঝগড়া করতে করতে বাড়ির উঠানে প্রবেশ করছে তিশার পরনে আজ নীল রংয়ের শাড়ি চুলগুলো তার হালকা কোঁকড়ানো সেগুলো ছেড়ে দিয়েছে সে, দু’হাত ভর্তি কাচের চুড়ি,আর অনুরাগ ম্যাচিং করে নীল পাঞ্জাবী পড়েছে। তিশা এগিয়ে যেতে যেতে দাড়িয়ে বলল, _____”আর একবার। জাস্ট একবার শাড়ীর কুচিটা ঠিক করে দে।”

অনুরাগ বিরক্ত হয়ে বললো,
__’এই নিয়ে পাঁচ বার হয়ে গেল তোর শাড়ির কুচি ঠিক করে দেওয়া! আমি জানি যতক্ষণ না অনুষ্ঠান শেষে বাড়ি ফিরছি ততক্ষণ আমাকে দিয়ে শাড়ীর কুচি ঠিক করাবি করাবি তুই, আ’ম হান্ডেট পার্সেন্ট সিওর।’
_____” যখন জানিস তখন সামনে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? তাড়াতাড়ি ঠিক কর!”
অনুরাগ বিরক্ত হয়ে নিচে হাঁটু গেড়ে বসে বলল,
_____”আমাকে এত কষ্ট দিস তোরা আমি তা বলেও শেষ করতে পারবো না। আর তুই জানিস আমার খুব ভয় করে এই বিয়ে বাড়ি আর সরস্বতী পুজোতে।কেন যে এদিন গুলো আসে আমি বুঝিনা। সরস্বতী পূজা সারা রাস্তা তোর আর পুতুলের শাড়ীর কুঁচি ঠিক করে করে যেতে হয় এই বেচার আমাকে আমার ভাল্লাগে না।
এসব সে বরবকর করে সে কুঁচি গুলো ঠিক করে দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে আবার বলল ____”এই লাস্ট বারের মত ঠিক করে দিলাম এরপর আমি আর পারব না। যদি ঠিক করতে বলিস তাহলে তোকে কাঁধের উপর তুলবো আর সোজা তোদের বাড়ির ছাদে গিয়ে ফেলবো মনে রাখিস।

তিশা মুচকি হেসে বলল,
__”জানুটা রাগ করে না! আজ একটা পাপ্পি দেবো! প্রমিস।”
___তোর প্রমিস তোর কাছে রাখ। চার বছর প্রেম করছে এখনো একটাও পাপ্পি দিলি-না আবার সে নাকি নিজে থেকে দেবো! বারবার মিছা কথা বলা! গরিব কে লোভ দেখানো!
তিশা চারিদিকে চোখ বুলালো তারা যেখানে দাঁড়িয়ে আছে সেখানটা লালচে বাতি জ্বলছে দুর থেকে সবাই কে ভূতের মতো লাগছে সে অনুরাগের সামনে এগিয়ে গিয়ে বলল,
____না সোনা সত্যি।বলে টুপ করে পা উঁচু করে অনুরাগের বাম গালে চুমু দিয়ে সরে এল।
অনুরাগ চোখ বড় বড় করে তিশার দিকে তাকিয়ে আছে তার কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না যে তিশা তাকে,,, তার হাত আপনাআপনি গালে চলে গেলে। অনুরাগ বিষ্ময় নিয়ে বলল,
__”হৃদ তুই….”
তিশা ওকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
___এত অবাক হওয়ার কিছু নেই আমি নিরামিষ না বুঝিয়ে দিলাম। ওকে ওসব ছাড় চল সেল্ফি তুলি।

অনুরাগ ব্যাপারটা কিছুক্ষণ ধরে হজম করে ফোনটা পকেট থেকে বার করল, অতঃপর ক্যামেরা অন করতে কোথা থেকে অনু দৌড়ে এসে দুজনের মাঝখানে গোতাগুতি করে গিয়ে বলল,
____তোরা দুই স্বামী স্ত্রী আমাকে ছাড়া সেলফি কিভাবে তুলতে পারিস। আমাকে এছাড়া একটাও যদি তোদের ফটো থাকে তাহলে আমি তোদের ফোন ভেঙে দেবো।

তিশা বলল,
____”আরে না আমরা তো জাস্ট কাপেল পিক তুলছিলাম!”
অনুরাগ বলল…’কাপেল পিক বুঝিস তো সেখানে তুই কি করবি গাঁধী?’

অনু মুখ ফুলিয়ে বলল,
__আগে আমার সাথে তোল। তার পর তোরা দুজনে তুলবি কেমন।

এর মধ্যে তিশার ফোন বেজে উঠল সে সাইডে গিয়ে কথা বলতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর তিশা কথা শেষ করে আসতে তিনজনের সেলফি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পরলো‌।তিশার পিপাসা পেতে সে চলে যেতে অনু অনুরাগ দুজন মিলে সেলফি নিতে লাগলো, অনুরাগ বলল,
___”গাধী’রে তোকে তো নীল শাড়ি পড়ে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে।”

অনু ভাব দেখিয়ে বলল,
__”দেখতে হবে তো আমি কার বউ হব!”
অনুরাগ মেকি হেসে বলল,
__’জানি ওই আলুর দমের বউ হবি!’

অনু তেতে উঠে অনুরাগের কোকড়ানো চুল গুলো দুহাতে মুঠো নিয়ে বলল,
__”আমার উনাকে তুই একদম আলুরদম বলবি না। বুঝেছিস? গাব্বার সিং। ”

অরিন্দম এক কোনে দাঁড়িয়ে অনুদের এতক্ষন দেখছিল, মেয়েটা তার কাছে সে আসার পর থেকে তার সাথে একবার ও কথা বলতে আসেনি। সেই সকালে যা দেখা হয়েছিল তাদের! তখন অরিন্দম ওমন একটা কাজ করে নিজেই নিজের কাছে লজ্জায় পড়ে গিয়েছিল তাই সে দ্রুত তখন প্রস্থান করেছিল সকালে। কিন্তু এখন অনুকে দেখে অরিন্দম ভিতরে ভিতরে প্রবল রেগে আছে‌। একবার অনু তার কাছে আসলে আচ্ছা মত বকা দেবে কেন সে তার কাছে এতক্ষণ আসেনি। এসব ভাবতে সে নিজের পাশে কারোর অস্তিত্ব পায় তাকিয়ে দেখে অনু তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। অনু এতোক্ষন অরিন্দমের কাছে আসতে পারেনি তার সকালের ঘটনার পর অরিন্দমের সামনে আসতে লজ্জা পাচ্ছিল কিন্তু অনেকক্ষণ হয়ে যাওয়ায় সে আর থাকতে না পেরে অরিন্দম এর সামনে এসে দাঁড়ায় তারপর লাজুক হেঁসে বলল,
___”আমাকে কেমন লাগছে?”

অরিন্দমের ক্রোধ যেন আরো বেড়ে গেল। এতক্ষণ পর তার পাশে এসে দাঁড়িয়ে কেমন লাগছে জিজ্ঞাসা করছে? তাকে না কিছু বলেই তো এতক্ষণ ফটো তুলে এলো। যখন সে জানত অরিন্দম তাদের বাড়ি উপস্থিত তাহলে কেন এতক্ষন দূরে ছিল সে? আগে তো সব সময় তার কাছে থাকার বাহানা করত। এখন কেন এমন করে? অরিন্দম রাগী গলায় বলল,
___”আমাকে কেন জিজ্ঞাসা করতে এসেছো? তোমার আরো কেউ আছে তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করো!”

অনু বোকার মত কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকল অতঃপর সে মিষ্টি হেসে বলল,
____”আমার যে আপনি ছাড়া মনের মানুষ নেই! আপনার কাছ থেকেই পাওয়া মন্তব্য শ্রেষ্ঠ মন্তব্য বুঝেছেন? বলুন কেমন লাগছে আমাকে? আর থ্যাঙ্কু আমার কথা রেখে, নীল পাঞ্জাবী পড়ে আসার জন্য। আপনাকে নীল পাঞ্জাবী তে ঝাকানাকা লাগছে! ”

অরিন্দম কন্ঠে ক্রোধ ঢেলে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
___”অনেক অনেক ধন্যবাদ। কিন্তু ওই অনুরাগও কেন নীল পড়ে এসেছে তা জানতে পারি কি? তুমি নিশ্চয়ই বলেছ ওকে তোমার সাথে ম্যাচিং করে পড়ে আসতে! তাই না?”

অনু অরিন্দমের রাগ বুঝল কি না সেই জানে,সে আগের ন্যায় হেসে বলল,
__”আমরা তো সব সময় ম্যাচিং পড়ি তিনজন! আচ্ছা ঐসব ছাড়ুন, চলুন না দুজন সেল্ফি তুলি!”

অরিন্দম যেন আরও রেগে গেল, তার যেন এখন এই মেয়েটার ওপর প্রচণ্ড রাগ হচ্ছে মনে হচ্ছে ঠাঠিয়ে দু চড় মেরে বলি.. আমার রাগ হচ্ছে তোমার ওপর, তুমি কেন ওই ছেলের এত কাছে যাও?বোঝো না তোমাকে অন্য কারোর সাথে দেখলে আমার হিংসে হয়, আমি সহ্য করতে পারি না। কিন্তু বেচারা তা প্রকাশ করতে পাচ্ছে না। এদিকে তনুশ্রী বলেছে সে অনু আর তার কথা কিছুদিন পর বাড়িতে জানাবে ততদিন অরিন্দম কে আরও একটু ভাবতে বলেছে সে পারবে তো তার তারকাটা বোন’কে সামলাতে। কিন্তু এদিকে অরিন্দমের বুকের ভিতর তোলপাড় হচ্ছে কাল তার কলকাতায় ফিরে যাওয়ার কথা কিন্তু সে মেয়েটাকে এখনও মনের কথা বলতে পারলো না,এর মধ্যেই মেয়েটার ওপর সে রেগে যাচ্ছে, কিন্তু তাকে ছাড়া তার চলবে না সে ভালো করেই বুঝতে পারছে। অরিন্দম অনু’র দিকে তাকিয়ে বলল,
___”তুমি সিরিয়াস আমাকে নিয়ে?”

অনু চট করেই বলল,
__আপনাকে নিয়েই তো আমি সিরিয়াস। বিশ্বাস করুন আপনার থেকে ইম্পর্টেন্ট তো আমার কাছে ফুচকার সাথে টক জলের ও না। টক জল ছাড়া আমি ফুচকা খেয়ে নিতে পারব কিন্তু আপনাকে ছাড়া আমি কাপেল পিক তুলতে পারব না। বুঝেছেন কত ইম্পর্টেন্ট আপনি আমার কাছে। ”

অরিন্দম ব্যর্থ নয়নে অনু’র মুখপানে চেয়ে রইল, মেয়েটা তাকে ফুচকা টক জলের সাথে তুলনা করল? সত্যিই মেয়েটা কি তাকে নিয়ে সিরিয়াস?আর এখন সে সিরিয়াস না হলেও অরিন্দম তাকে নিয়ে সিরিয়াস, সে এই মেয়েকেই নিয়ে বাকি জীবন কাটাতে রাজি। অরিন্দম অনু’র দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে বলল,
___কাপেল পিক তুলবে তো চলো,আলো’র দিকে যাই। এখানে ভালো আসবে না।

অনু তো মহা খুশি সে দ্রুত হেঁটে যেতে যেতে বলল,
__চলুন আমার রুমের সামনে অনেক ফুল দিয়ে সাজানো আর অন্নেক লাইট জ্বলছে ওখানে ভালো হবে। বলে সে এগিয়ে যেতে লাগল..
____

এদিকে এই নিয়ে এখানে এসে তিনবার তিশা’র কুঁচি এলোমেলো হয়ে গিয়েছে আর অনুরাগ বারংবার তা ঠিক করে দিচ্ছে,সে এবার ও কুঁচি ঠিক করে দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে নিজের কোমড়ের পিছনে হাত দিয়ে বলল,
___আমায় রক্ষে কর এবার। আমি আর নিচু হয়ে ঠিক করতে পারব না।
___আর ঠিক করতে হবে না সেফটিপিন দিয়ে দিলি আর কিছু হবে না। কিন্তু একটা সমস্যা আছে এখনো।

অনুরাগ কাঁদো কাঁদো ফেস করে তাকাল। তিশা মাথা চুলকে বলল,
___ অনু’র দিকে তাকা ওর শাড়ীর কুঁচি ঠিক করে দিয়ে আয়। না ঠিক করে দিলে ও আমাকে নালিশ করবে।
অনুরাগ তাকিয়ে দেখল অনু গটগট পায়ে নিজের রুমের দিকে যাচ্ছে তার সব কুঁচি এলোমেলো হয়ে গিয়েছে অনুরাগ হতাশার নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। অতঃপর সে চিৎকার করে বলল,
____”পুতুল দাড়া তোর শাড়ির কুচি ঠিক করে দিয়ে আমি বাড়ি চলে যাব।ব্যাস। ”

অরিন্দম তা শুনেই অনুর কুচির দিকে তাকাল সে বেশ দূরেই ছিল অনু’র থেকে! অরিন্দম এবার আবার অনুরাগের দিকে তাকিয়ে দেখল সে অনু’র দিকে এগিয়ে আসছে তা দেখে অরিন্দম দু’পা দৌড়ে গিয়ে খপ করে অনু’র হাত ধরে তাকে টেনে রুমে ডুকে ভিতর থেকে লক করে দিল!

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here