#হলুদ_ক্ষণে_স্তব্ধতা💛
#৩য়_পর্ব
লেখনীতে – #ইয়ানাত_রোযী
❝ ডিয়ার আবির হোসেন,
বর, কনে দুজনেই এমন গম্ভীর ও চাপা স্বভাবের কেন আমায় বলতে পারবেন? একজন তো তাও বিয়ের দুদিন আগে বলল, ভালোবাসে একজনকে। আর আপনি আপনার প্রেমিকার রাগ ভাঙানোর উপায়ই খুঁজে না পেয়ে বাধ্য হয়ে বিয়েতে চলে গেলেন! ভাই, আপনি তার বাসার সামনে গিয়ে কান ধরে একশো টা, না না পাঁচশো টা উঠ-বস করতেন। প্রেমিকার কাছে লজ্জার কি আছে? আসলেই কাকেই বা দোষ দিবো? আপনি আর আপনার প্রেমিকা একই অবস্থার শিকার। মা-বাবা রাজি হচ্ছিল না বলে একটু পালিয়ে যাওয়ার ভয় লাগাতেন! মেয়েটিও আপনার মা-বাবার অপমানে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিল। তবুও আপনারা একে অপরকে তো অনেক ভালোবাসে। আর একটুর জন্য তিনটি জীবন নষ্ট হয়ে যেত।
সে যা হওয়ার হলো। এখন পালিয়ে যাওয়া ছাড়া অন্য উপায় নেই। আপনার বিয়ের কথা শুনে আপনার প্রেমিকা সেই কখন থেকে নাকের পানি চোখের পানি এক করে প্যাঁচপ্যাঁচ করে কেঁদেই চলেছে। আপনি জলদি বাসস্ট্যান্ড এসে আমাকে উদ্ধার করুন।
ইতি,
আপনার শুভাকাঙ্ক্ষী। ❞
শুভাকাঙ্ক্ষীর নামটি যে আবিরের ফোনে সেভ আছে, শুভাকাঙ্ক্ষী টেরই পেলো না।
রোহান, নাজরানার ছোট ফুফুর ছেলে। হ্যাঁ, তার নামেই আবিরের ফোন থেকে মেসেজটি এসেছে। মেসেজটি পেয়ে অধর কোণে হাসি ফুটে উঠলো আবিরের। তার মনে হলো, বুক থেকে ভারী পাথরটি নেমে গেল।
_____
বিয়ে বাড়িতে অঘটন বলতে সচারাচর কনের পালিয়ে যাওয়া বা বরপক্ষ ও কনেপক্ষের দ্বন্দ্বে বিয়ে ভেঙে যাওয়া। কিন্তু আত্মীয়, প্রতিবেশীদের এখন অবাক করার মতো মূল বিষয় হলো বিয়ের আসর ছেড়ে বর পালিয়েছে। তার চেয়েও অবাক করা বিষয় কনে কান্নাকাটি, আহাজারি না করে আরাম করে বসে ফলমূল খাচ্ছে। সকাল থেকে ভালো করে কিচ্ছু খেতে পারেনি সে। নাজরানার সমবয়সী মামাতো বোনকে ডেকে অতিষ্ট কন্ঠে বলল ,
-” ফিহা! আমার জন্য একটু জুস নিয়ে আয় তো, বোন। যা গরম পড়ছে! ”
ফিহা চোখ গোলগোল করে তাঁকিয়ে আছে। জবাব দিলো,
-” নাজু, নিজের বিয়ে ভেঙে যাওয়ায় কেউ আয়েশ করে? তুই ফেক কান্না হলেও কর। ফুফু কেঁদেকুটে একাকার অবস্থা। মানলাম তুই বিয়েটা করতে চাসনি, এতোদিন নাটক করে কাউকে কিছু বলতে পারিসনি আর এখন মিথ্যে কান্না দেখাতে পারছিস না সবার সামনে? ”
নাজরানা ভ্রু কুঁচকে বলল,
-” তোকে কে বলল আমি নাটক করেছি এতোদিন? আর কিসের নাটক? ”
ফিহা এবার ভেবাচেকা খেয়ে গেল। এই রে কি বলতে কি বলে ফেলল? কাজিনমহলে বিষয়টি গোপন ছিল। এখন সবকিছু সামাল দিতে হবে। ফিহা ক্যাবলা কান্ত হাসি দিয়ে বলল,
-” এই যে, এখন বিয়ে ভেঙে যাওয়ায় তোর মতো আনন্দিত মনে হয় আর কেউ না। খুব রিলেক্স মুডেই তো আছিস। মন থেকে বিয়ের ইচ্ছা না থাকলে কেউ এমন আয়েসে থাকে? তাই বললাম আরকি। ”
নাজরানা সরু দৃষ্টিতে চেয়ে রইল। তারপর বলল,
-” বিশ্বাস কর, আমি এতোক্ষণ অনেক চেষ্টা করেছি কান্না করার। আমার তো মন খারাপই হচ্ছে না। ”
এই বলেই দু’জনে হেসে গড়াগড়ি খেলো।
_____
মাসিফ এতোক্ষণ বড়দের মাঝেই ছিল। পরিবারের বড় সন্তান হওয়ায়, বড়দের মাঝে না থাকাটা খারাপ দেখায়। যদিও কেউ এসব নিয়ে ভ্রুক্ষেপ করার অবস্থায় নেই। নাহার বেগম সেই কখন থেকে বিলাপ করে কেঁদে চলেছেন। তাকে আত্মীয়রা সামলাচ্ছেন এবং নাজরানাকে নিয়ে কটু কথা শোনাচ্ছে। একজন তো বলেই দিলো,
-” আহারে, মেয়েটার ভাগ্য শেষমেষ খারাপ হলো? কি সুন্দর দেখতে মেয়েটার কপাল পুড়লো? ”
নাহার বেগম অগ্নিদৃষ্টিতে চেয়ে ঝাঁঝালো কন্ঠে বললেন,
-” খবরদার ভাবী। এসব কথা মুখেও আনবেন না। আমার মেয়ের কপাল মোটেও খারাপ না। সব দোষ ঐ ছেলের। ছেলেটা যদি এমন না করতো আমার মেয়েটার খারাপ দিন আসতো না। বিয়ে করবে না যখন আগে বললেই পারতো! ”
নাহারের বেগমের কথায় মহিলারা চুপ হয়ে গেলেন। নাজরানার বাবা স্বভাবসুলভ গম্ভীর মুখেই বসে আছেন। কোনো কথা বলছেন না। তার মুখের গাম্ভীর্য দেখে আবিরের বাবা, মা কিছুই বলার সাহস পাচ্ছেন না। ছেলের জন্যই তাদের সম্মানহানি হলো। অবশ্য দোষ যে কিছুটা নিজেদের, সেটা এখন হারে হারে টের পাচ্ছেন তারা।
আবিরের পরিবার তাদের ও নাজরানার পরিবারের সম্মান রক্ষার্থে তারা একটি প্রস্তাব দিল। প্রস্তাবটি এই যে, তাদের ছেলের জন্য যেহেতু নাজরানার পরিবারেরও সম্মান গেল, তাই তাদের ছোট ছেলের সাথে নাজরানার বিয়ে হোক।
নাজরানার বাবা এ বিষয়ে আপত্তি থাকলেও তিনি আবিরের বাবা,মাকে অপেক্ষা করতে বলে প্রস্থান করলেন।
নাজরানার বাবা মেয়ের ঘরে গেলেন নাহার বেগমকে নিয়ে। মেয়ের জীবন বাঁচাতে বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষও কোনো উপায় পেলেন না।
নাজরানা ভারী লেহেঙ্গা নিয়ে খাটের উপর গোল করে বসে আছে কাজিনদের নিয়ে। নাজরানার দু’পাশে তার মা, বাবা বসলো। নাজরানার বাবা মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে নিরুপায় কন্ঠে বললেন,
-” বাবা-মারা কখনো তাদের সন্তানদের খারাপ চায় না। তেমনি আমরাও তোর খারাপ চাইবো না। একটা আবদার নিয়ে এসেছি রে তোর কাছে। রাখবি তুই? ”
নাজরানার এই কথা শুনে হৃদস্পন্দন চক্রবৃদ্ধি হারে বেড়ে গেল। কোনো জবাব না দিয়ে বাবার দিকে তাকিয়ে আছে।
নাজরানার বাবা আবার বলল,
-” ঐ বাড়ির মানুষ ও আমরা সিধান্ত নিয়েছি, তোর বিয়েটা আবিরের ছোট ভাইয়ের সাথে হোক। আমি চাই না তুই সমাজে কলঙ্কিত হয়ে থাকিস। তুই মানা করিস না, মা। ”
নাজরানা ছলছল নয়নে বলল,
-” আমি এতোই বোঝা হয়ে গেছি তোমাদের কাছে? ”
নাজরানার মা নাহার বেগম মেয়ের বেদনাদায়ক কথা শুনে ঝরঝর করে কেঁদে দিলেন। নাজরানার বাবা মুখে গাম্ভীর্য ভাব এনে বললেন,
-” যা হবে তোমার ভালোর জন্যই হবে। তৈরি হও বিয়ের জন্য। ”
নাজরানা মুখে হাত দিয়ে কেঁদে দিল। তার জীবনে একদিনে কত উত্থান-পতন হচ্ছে। কেন হচ্ছে এসব? ভালোবাসার মানুষটি মনে হয় আসলেই তার কপালে নেই।
নাজরানার বাবার কথা শুনে উপস্থিত কাজিন সকলেই থ বনে গেল। কী থেকে কী হয়ে যাচ্ছে! ঘরের ছেলে রেখে বাইরের ছেলের কাছে কেন তাদের নাজু কে দিতে হবে?
মাসিফও নাজরানার বাবা কথা শুনে আশাহত হলো। বুকে পাথর চাপা পড়লো মনে হচ্ছে তার। মনে মনে বলল,
-” এতো কিছু কার জন্য করা হয়েছে তো? এভাবে হাত ফসকানো যাবে না কোনো মতেই। ”
#চলবে
[ ভুল-ত্রুটি ধরিয়ে দেবেন। আর আপনাদের নেক্সটের বন্যায় আমি ভেসে যাচ্ছি পাঠকগণ। একটু গঠনমূলক মন্তব্য করুন। ধন্যবাদ ]