হলুদ ক্ষণে স্তব্ধতা পর্ব -০৬

#হলুদ_ক্ষণে_স্তব্ধতা 💛
#পর্বঃ৬
লেখনীতে–#ইয়ানাত_রোযী

ভোরের আগে মাসিফের ঘুম ভেঙে গেল। চোখ খুলে দেখলো, তার আর নাজরানার মাঝে লম্বা একটি কোলবালিশ। কোলবালিশকে ঘেরাও করে আবার তিনটি কুশন বালিশ দেওয়া। মাসিফ তা দেখে মুখ কুচকে ফেলল। বিড়বিড় করে বলল,

-” গর্দভ মেয়ে একটা! এতোগুলো বালিশকে জায়গা দিয়ে নিজে পড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা তার। ”

এরপর কুশন বালিশগুলো সরিয়ে শুধু কোলবালিশটিকে রাখলো।
কালরাতে মাসিফ ইচ্ছে করেই নাজরানাকে দিয়ে মাথা মালিশ করে দিতে বলেছিল। মাথা ব্যথা ছিল, তবে এক ঘুমেই ব্যথা উবে যেত। মাসিফ চায়নি বিছানায় ঘুমানো নিয়ে নাজরানা যেন অস্বস্তি অনুভব করুক। তাই মাথা টিপে দেওয়ার ছুতোয় বিছানায় ডাকলো। এরপর মাসিফ ঘুমিয়ে গেলে, নাজরানা যেন শান্তিতে ঘুমাতে পারে।

হঠাৎ মাসিফের একটি কথা মনে হলো। গতকাল সন্ধ্যায় তার মা মুনিয়া খাতুন মাসিফকে এক জোড়া স্বর্ণের বালা দিয়ে বললেন, এটা যেন সে নাজরানাকে দেয়। সরাসরি উপহার দিতে মাসিফের কেমন যেন লাগছিল। তাই আর দেওয়া হয়নি।

কী মনে করে মাসিফ ড্রয়ার থেকে একটি বক্স বের করল। বক্সটি নিয়ে ঘুমন্ত নাজরানার পাশে গেল। কোলবালিশকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে বাচ্চাদের মতো ঘুমাচ্ছে। গাল দু’টো ঘুমে ফুলে যাওয়াতে ভীষণ গুলুমুলু লাগছে নাজরানাকে। মাসিফ বেশিক্ষণ তাকালো না। চোখ সরিয়ে নিল। মেয়েটিকে এভাবে দেখার কী আছে? মেয়েটিকে সে ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছে। নাকি সম্পর্কের পরিবর্তনে দৃষ্টিকোণ বদলাতে শুরু করেছে? ভেবে পায় না মাসিফ।

নাজরানার হাত দুটি নিয়ে খুব আদরে সন্তর্পণে বালা জোড়া পরিয়ে দিল মাসিফ। মায়ের পছন্দ আছে বলতে হচ্ছে তার। হাত দুটোতে বেশ মানিয়েছে।

______

বিদায় বেলা প্রতিটি মেয়ের জন্য খুবই কষ্টদায়ক একটি বিষয়। তেমনই ব্যতিক্রম ঘটেনি নাজরানার ক্ষেত্রেও।
নাজরানা, মাসিফ, মুনিয়া খাতুন ও মাসিফের বাবা আহসানুল হক বেরিয়ে পড়েলন তাদের নিজ বাড়ি ফেনীর উদ্দেশ্যে। সারাটি পথ নাজরানা কান্না করেছে। মাসিফ বেশ কয়েকটি ধমক দিলেও লাভ হয়নি। চোখের পানি অনবরত পড়ছে। কান্না করতে করতে এক সময় নাজরানা সিটে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো। নাজরানার ঘুমাতে কষ্ট হবে ভেবে সে ঘুমানোর পর, মাসিফ নিজ হাতে নাজরানার মাথা তার কাঁধে রাখলো এবং টিস্যু দিয়ে চোখের পানিগুলো সন্তর্পণে মুছে দিল। নাজরানা কুম্ভকর্ণের মতো ঘুমায়, তাই মাসিফ তার সজাগ হয়ে যাওয়া নিয়ে চিন্তা করেনি। উষ্ণতা পেয়ে নাজরানা অজান্তেই মাসিফের এক হাত জড়িয়ে কাঁধে গুটিসুটি মেরে ঘুমিয়ে পড়লো।

বেশ লম্বাভ্রমণের পর সবাই ফেনীতে তাদের নিজ বাড়ি পৌঁছালো। খুব ক্লান্ত তারা।
বাড়িতে মাসিফের চাচা,চাচি ও বিধবা ফুফু রয়েছেন। গতকাল তারা মাসিফের বিয়ের খবর শুনেছিল। আজ বাড়িতে নতুন বউ আসবে বিধায় বাড়িটি উৎসবমুখর পরিবেশে পরিণত হয়েছে।
খাওয়া-দাওয়া শেষে সকলে বসার ঘরে বসে গল্প করছে। গল্পের এক পর্যায়ে আলোচনা হলো মাসিফের বিয়ে যেহেতু কোনো অনুষ্ঠান ছাড়াই হলো, তাই একটি রিসিপশনের ব্যবস্থা করা হোক। সকলে সায় জানালো মাসিফের বাবা আহসানুল হকের মতামতে।

নাজরানা বসার ঘরে নেই। সে রান্নাঘরে গিয়েছে। নতুন বউয়ের তো হাত গুটিয়ে বসে থাকতে নেই। ফুফু বলেছিল, নতুন বউয়ের কোনো কাজ করার দরকার নেই এখন। তবুও অস্বাভাবিক লাগছিল ব্যপারটি নাজরানার কাছে।
নাজরানার চাচাতো ননদ জুঁইয়ের সাহায্যে আজ সন্ধ্যার নাস্তা তৈরি করছে। বিভিন্ন ধরণের মিষ্টান্ন, ঝাল নাস্তা বানিয়েছে নাজরানা। এক হাতে এতো সব খাবার বানানো দেখে জুঁই বলল,

-” ভাবী, তুমি তো একদম পাঁকা গৃহিনী। ভাইয়া কত লাকি! সারাদিন শুধু মজার মজার খাবার খাবে। ”

নাজরানা শুধু মুচকি হাসলো। সন্ধ্যায় সকলে নাজরানার খাবার খেয়ে প্রশংসা করল। সে সাথে তাকে জানাল, কাল রিসিপশন হবে।

_____

রাত ১১ টা। গ্রামে এ সময় সকলে ঘুমে আচ্ছন্ন থাকে। কিন্তু নাজরানার চোখে ঘুম নেই। সে ভেবে পায় না, একবার ঘুমিয়ে গেলে দুনিয়ার কোনো খবর কেন সে বুঝতে পারে না? কুম্ভকর্ণের মতো ঘুমের জন্য কত সুন্দর দুটো মুহূর্ত আজ মিস করলো! ভেবেই মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে নাজরানার।

আজ সকালে ঘুমে থেকে উঠে দেখলো, হাত দুটি কেমন ভারী ভারী লাগছিল। চুড়ি পড়লে তো এমন ভারী লাগার কথা না। হাতে বালা দুটো দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। পরে বুঝতে পারলো, মাসিফই তাকে পরিয়েছে। ভালোবাসার মানুষটি যত্ন করে না হোক, হাতগুলো ছুয়েই তো পরিয়েছিল। আফসোস হচ্ছে, ঘুমটা যদি তখন ভেঙে যেত।

আবার, আজকে বাড়িতে আসার সময় সারা রাস্তা মাসিফের কাঁধেই যে কেটেছিল, ঘুমের জন্য তাও টের পায়নি নাজরানা। যখন চোখ খুললো, তখন মাসিফের বাহুডোরে নিজেকে আবিষ্কার করলো।

_____

মাঝরাতে বিকট শব্দে মাসিফের ঘুমটা ভেঙে গেল। ধরফর করে উঠে গেল মাসিফ। পাশে তাকিয়ে দেখলো নাজরানা নেই।

#চলবে

[ ভুল-ত্রুটি ধরিয়ে দিবেন। আমি গত দু’পর্বে কিছু আঞ্চলিক শব্দ ব্যবহার করেছি। মাঝে মাঝে হয় না, আপন মানুষের সাথে কথা বলার মাঝে মজার ছলে আঞ্চলিক ভাষায় এক-দুই লাইন বলা! আমি সেটাই করতে গিয়ে অনেকের কাছে মনে হয়ছে, আমার লেখায় গুরুচন্ডালী আছে। ব্যাপারটির জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত। নেক্সট টাইম বক্তব্যে আঞ্চলিক কোনো রেশ আনবো না। ধন্যবাদ ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here