হলুদ ক্ষণে স্তব্ধতা পর্ব -০২

#হলুদ_ক্ষণে_স্তব্ধতা💛
#২য়_পর্ব
লেখিকাঃ #ইয়ানাত_রোযী

গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শেষে নাজরানা গেলো নদীর তীরে। মাসিফ নেই এখানে। যে আসতে বলল, সেই গায়েব। নাজরানার মন ঢিপঢিপ করেই চলছে ক্রমাগত।
স্থির নদীর উপর পূর্ণিমার আলো জ্বলজ্বল করছে। মৃদু বাতাস বয়ে চলছে। চারিদিকে ঝিঁঝি পোকার শব্দ। নাজরানার হঠাৎ একটি জিনিসের উপর নজর পড়লো। কাগজের মতো জিনিসটার উপর ছোট ইটের টুকরা চাপানো, যাতে উড়ে না যায়।
জিনিসটি হাতে নিয়ে মোবাইলের টর্চ দিয়ে দেখলো একটি খাম। খামের ভেতর নীল অপরাজিতা ফুল, সাথে একটি চিরকুট।

❝ নাজ,
একটা জিনিস খুব জানতে ইচ্ছা করছে আমার। তোকে বিয়ে করলে আমার লাভটা কি হবে? বুঝছিস, গত পরশু আমরা কাজিনরা সবাই ঘুরতে গিয়ে আমি একটা মেয়ের উপর চরমভাবে ক্রাশ খেয়েছি! মেয়েটিকে আমি এখনো প্রপোজ করতেই পারলাম না। আমি মনে মনে তখন মেয়েটাকে হাঁটু গেড়ে প্রপোজও করে দিয়েছি। কিন্তু, একমাত্র তুই যখন বললি আমায় তুই ভালোবাসিস, ইশ আমার প্রেমটা হইয়াও হইলো না। আমার মনের কতশত প্রেমকে যে জ্বলজ্যান্ত মাটি চাপা দিলাম। আফসোস লাগছে, জীবনে একটা প্রেমও করতে পারিনি।
আমি অনেক দ্বিধায় আছি তোকে নিয়ে।

ইতি,
মাসিফ। ❞

নাজরানা দীর্ঘ এক শ্বাস ছাড়লো। মাসিফের ফাজলামো নিয়ে কাজিনমহলের সবাই অবগত। মাসিফ তাকে দ্বিধায় ফেলতে ও মজা নেওয়ার জন্যই এই চিরকুট লিখে দিয়েছে, তা ঢের বুঝতে পারলো নাজরানা। মাফিস সম্পর্কে নাজরানার ফুফাতো ভাই হয়।
নাজরানা মনকে শক্ত করলো। সে জানে না, কালকে কি হতে পারে! কার সাথে তার জীবন জুড়তে পারে, এ ভাবনাতেই আছে।

______

বিয়ে বাড়ি মানেই হুলুস্থুল একটি পরিবেশ। ভোর থেকেই সকলে কাজে ব্যস্ত, একমাত্র নাজরানা ছাড়া। সে গোসল করে তাঁতের এক লাল শাড়ি পরে পুরো বাড়ি ঘুরঘুর করে দেখছে। ভালো লাগছে না কিছু তার। বাইশটা বছর যে পরিবারের সাথে ছিল, তাদেরকেই আজ ছেড়ে চলে যেতে হবে।
মা নাহার বেগমের পাশে বসলো নাজরানা। মেয়েকে পাশে বসতে দেখে মায়ের মনটা আরও বিষিয়ে গেল। তাদের আদরের মেয়েটা আজ চলে যাবে। কাল সারা রাত কষ্টে, চিন্তায় এক ফোঁটা ঘুম চোখে ধরা দেয়নি নাহার বেগমের। নাজরানা শক্ত মনে, মাকে পর্যবেক্ষণ করে চলেছে সেই কখন থেকে। নাহার বেগম হাসি মুখে বললেন,

-” কি রে! তুই তৈরি হচ্ছিস না কেন? বরপক্ষ এই চলে এলো বলে। ”

নাজরানা বলল,

-” তুমি আমায় সাজিয়ে দিবে বলেই তো অপেক্ষা করছি। সুন্দর করে নিজ হাতে আমায় সাজিয়ে দিয়ো, মা। ”

আবেগ মাখা কথা শুনে নাহার বেগম মুখে শাড়ির আঁচল গুজে কেঁদে দিলেন। বুক ফেটে কষ্টগুলো যেন নিগড়ে দিতে চাইছেন তিনি। নাহার বেগম নিজেকে সামলে নাজরানার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,

-” ঠিক আছে। আজ আমিই তোকে নিজ হাতে পরিপাটি করে সাজিয়ে দিবো। আমার মেয়েকে আজ পরীর লাহান দেখতে লাগবে। ”

নাহার বেগম খুব সুন্দর করে মেয়েকে সাজিয়ে দিলেন। নাজরানার গায়ে মেরুন রঙের লেহেঙ্গা জড়ানো। ভয়ঙ্কর সুন্দর দেখতে লাগছে নাজরানাকে। নিজের মেয়ের থেকে চোখ ফেরাতে পারছেন না নাহার বেগম। তিনি কিছুটা কাজল নিয়ে মেয়ের কানের পিছনে ছুঁয়ে দিলেন। মেয়েকে তিনি দু’চোখ ভরে দেখছেন। হঠাৎ নাহার বেগমের কাজের ডাক পড়লে, তিনি চোখ ভর্তি পানি নিয়ে প্রস্থান করলেন।

মাকে দেখে নাজরানার নিজেরও কষ্ট লাগছে। নাজরানা জানালার দিকে তাকালো। হঠাৎ মাসিফ ভাইকে দেখলো সে। কি হাসি খুশিভাবেই কথা বলছে সবার সাথে।
নাজরানা অনুভব করলো তার মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে যাচ্ছে। একপানে চেয়েই রইল মাসিফের দিকে। আচ্ছা, মাসিফ ভাইকে তার নিজের করে পাওয়া কি খুব কঠিন? মাসিফ ভাই যদি নিজেই কিছু না যায়, নাজরানা আর কী করতে পারবে? দুই ফোঁটা তপ্ত অশ্রু গড়িয়ে পড়লো নাজরানার চোখ থেকে। কী এমন সৌন্দর্য আছে যে, নাজরানা মাসিফের প্রতি এতোটাই মনের টান অনুভূত হয়? আহামরি সুন্দর তো মাসিফ নয়। আর কয়েক ঘণ্টা পর থেকে এ মানুষটিকে আগের মতো সেই চোখে দেখা যাবে না। এসব ভাবাও যে মহাপাপ!

______

দুপুর আড়াই টায় বরযাত্রী এলো। হইহই করে সকলে বরকে আপ্যায়নের জন্য ছুটে গেল। কাজিনদল গেলো গেট ধরে টাকা পাওয়ার ধান্ধায়।
নাজরানাদের বিশাল সুন্দর বাড়ি আর উঠোন থাকায় কোনো ক্লাবে বিয়ে হচ্ছে না। বরপক্ষের লোকজন এতো সুন্দর সাজানো বাড়ি দেখে মুগ্ধ হলেন।

খাওয়া-দাওয়ার পর্ব শেষে এখন বিয়ে পড়ানোর পালা।
নাজরানাকে তার বাবা আর ভাই মিলে বিয়ে পড়ানোর জন্য স্টেজে নিজে গেলেন। নাজরানার মনে হলো, তার বুকে কে যেন হাতুড়ি দিয়ে বারবার আঘাত করছে। ইচ্ছা করছে ছুটে কোথাও পালিয়ে যাক সে। খুব ভয় লাগছে তার।
একপা, দু’পা করে স্টেজে গেলো। পাতলা সুন্দর দেখতে একটা সাদা কাপড়ের বড় করে পর্দা দেওয়া বর ও কনের মাঝে। আশে পাশে ফুল দিয়ে সাজানো। নাজরানা আশেপাশে তাকিয়ে মা নাহার বেগমকে খুঁজলো। দৃষ্টি মিল হতেই ছুটে এসে মেয়ের একহাত শক্ত করে ধরলেন। অন্যহাত নাজরানার বাবা ধরে আছেন।

নাজরানা আসার আগে বর আবির হোসেন স্টেজেই ছিলো। একটি জরুরি কল আসায় ভীড় থেকে সরে গেলো আবির।
বিয়ে পড়ানো শুরু হবে বলে হুজুর বর ও কনেকে তাড়া দিলেন উপস্থিত থাকার জন্য। কিন্তু বেশ কিছুক্ষণ হয়ে যাওয়ায় আবির আসছে না। তাই তাকে ডেকে আনার জন্য নাজরানার চাচাতো বোন মাইফা গেলো।

এরই মাঝে সকলের কানাঘুষো শুরু হয়ে গেল। অনেকক্ষণ পরে মাইফা ছুটে এসে বোমা ফাটানো খবর নিয়ে এসে বলল,

-” বরকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, চাচি। ”

#চলবে

[ ভুল-ত্রুটি গুলো ধরিয়ে দিবেন। আর হ্যাঁ, সকলে নেক্সট, নাইস, স্টিকার কমেন্ট না করে গঠনমূলক মন্তব্য করুন। এতে আমার ভুল গুলো শোধরানো যাবে ও অনুপ্রেরণা পাবো। ধন্যবাদ ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here