#হাজার_ফুলের_মাঝে_একটি_গোলাপ
#পর্বঃ৭
#লেখিকাঃদিশা মনি
ললিত শামিমাকে ধা’ক্কা দিলে কেউ এসে তার শক্ত বাহুতে আগলে ধরে শামিমাকে। শামিমা অপরিচিত লোকটির দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। শামিমা সাকিবকে চিনতে না পারলেও সাকিব ঠিকই চিনতে পারে শামিমাকে। সাকিব শামিমার এই অবস্থা দেখে বলে,
‘ঠিক আছিস তো তুই? কার এত বড় দুঃসাহস? কে আমার শামিমাকে এভাবে ধা’ক্কা দিয়েছে।’
ললিত এগিয়ে এসে বলে,
‘আমি ধাক্কা দিয়েছি।কি করবেন আর কে আপনি? আমার বাড়িতে এসে আমার বিরুদ্ধে কথা বলছেন?’
সাকিব হেসে বলে,
‘আপনার বাড়ি? এটা আপনার বাড়ি হয় কি করে এটা তো আমার বাড়ি। আমার আব্বু সৈকত উদ্দিনের নামে ছিল এই বাড়ি। তার মৃত্যুর পর এখন এই বাড়ি আমার নামে।’
সাকিবের কথা শুনে শামিমা বুঝতে পারে এটা তার সাকিব ভাই।
আলতাফ উদ্দিন বলে ওঠেন,
‘সাকিব তুই ফিরে এসেছিস। এতদিন কোথায় ছিলি? তোদের কত খুঁজেছি আমরা।আর এক্ষুনি কি বললি তুই? মৃত মানে টা কি? কি হয়েছে ভাইয়ার?’
সাকিব আলতাফ উদ্দিনকে সালাম দিয়ে বলে,
‘আমরা এখান থেকে যাওয়ার কিছু বছর পরেই একটি দূর্ঘটনায় আব্বু আর আম্মু মা’রা যায়। আমিও কোমায় চলে যাই। যখন জ্ঞান ফেরে তখন একজন শেখ আমার দায়িত্ব নেয়। তোমাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করি কিন্তু কিছু কারণে বাধাগ্রস্ত হই।’
সাকিবের কথা শুনে আয়েশা বেগম ছুটে আসে। সাকিবের মধ্যে নিজের বড় ছেলের প্রতিবিম্ব দেখতে পান তিনি। সাকিবকে জড়িয়ে ধরে বলেন,
‘তুই এসেছিস সাকিব? জানিস শামিমা সবসময় বলতো তুই একদিন ফিরবিই। আমরা সবাই তো আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম কিন্তু শামিমা আশা ছাড়েনি। আল্লাহর কাছে সবসময় চেয়েছে যাতে তুই ফিরে আছিস। আজ দেখ শামিমার ইচ্ছা পূরণ করল আল্লাহ। শামিমা দেখ তোর সাকিব ভাই ফিরে এসেছে।’
শামিমা একপলকে তাকিয়ে থাকে সাকিবের দিকে। সেই কতবছর আগে তাকে দেখেছিল। এতদিন পর সাকিবকে দেখে তার খুশির কোন সীমা থাকেনা।
১৩.
ললিতঃএসব ড্রামা বন্ধ হোক। এটা আমার বাড়ি এসব ড্রামা দেখাতে হলে বাইরে গিয়ে দেখান।
সাকিবঃআপনার বাড়ি মানে কি? এটা কিভাবে আপনার বাড়ি হয়?
ললিতঃআমার কাছে এই বাড়ির পেপার আছে। যেখানে স্পষ্ট লেখা আলতাফ উদ্দিন তার সব সম্পত্তি আমার নামে লিখে দিয়েছে।
সাকিবঃআমার চাচার নামে তো কোন সম্পত্তি নেই। সব আমার আব্বুর নামে ছিল। আমার চাচার নামে যেই সম্পত্তি সেগুলো আমাদের গ্রামে সব। আর এখন এখানে যা আছে সব আমার।
ললিত আর কিছু বলতে পারে না। এখন নিজের উপরই রাগ হচ্ছে তার। সাকিব ললিতকেই ধা’ক্কা দিয়ে বের করে দেয়। সুমিও বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়।
শামিমা সুমিকে আটকানোর চেষ্টা করে। কিন্তু সুমি শামিমার হাত ছাড়িয়ে নিয়ে চলে যায়।
এতদিন পর সাকিব বাড়িতে ফিরে আসায় সবাই তাকে নিয়ে আনন্দে মেতে ওঠে। শাহাদাত সাকিবের সাথে গল্পে মেতে ওঠে। শাহানাজ পারভীনও ভালো ভালো রান্না বসিয়ে দেন। আলতাফ উদ্দিন আর আয়েশা বেগম সাকিবের মা-বাবার কথা শুনে খুব ভেঙে পড়েছেন। আয়েশা বেগম এতদিন ধরে ছেলের উপর মিথ্যা অভিমান করার জন্য আফসোস করতে থাকেন। তিনি এতদিন ভেবেছিলেন তার বড় ছেলে বিদেশে গিয়ে তাদের ভুলে গেছে। তাই এই নিয়েই সবসময় হা হুতাশ করতেন। আর এখন যখন জানতে পেরেছেন তার ছেলে আর বেঁচে নেই তখন একজন মায়ের কি অবস্থা হতে পারে সেটা বলে বোঝানো সম্ভব নয়।আলতাফ উদ্দিনের অবস্থাও একই। তিনিও এতবছর পর নিজের ভাইয়ের মৃত্যুর খবরটা ঠিক মেনে নিতে পারছেন না।
শাহাদাত কথায় কথায় সাকিবকে জিজ্ঞেস করে ফেলে,
‘এতদিন পর হঠাৎ আমাদের কথা মনে পড়লো কেন? আগে ফিরতে পারোনি ভাইয়া?’
সাকিবঃআমি তো ফিরতেই চেয়েছিলাম। একটু আগে ফিরতে পারিনি তো কি হয়েছে এখন তো ফিরেছি। একজনকে দেওয়া কথা যে আমায় রাখতেই হতো। তাই ম’রতে ম’রতেও বেচে ফিরে আসলাম।
কথাটা সাকিব শামিমার দিকে তাকিয়ে বলে। শামিমা সাকিবের দিকেই তাকিয়ে ছিল। সাকিবের চোখে চোখ পড়তেই লজ্জায় চোখ সরিয়ে নেয় শামিমা। সাকিব শামিমাকে এভাবে লজ্জা পেতে দেখে হেসে দেয়। মনে মনে বলে,
‘তুই আজও লজ্জাবতীই রয়ে গেলি শামিমা।’
সাকিবঃআচ্ছা শাহাদাত তখন যে ছেলেটা ঝামেলা করছিল সে কে?
শাহাদাতঃতোকে আর কি বলব কত কি ঘটে গেছে। কিছু ভুল বোঝাবুঝির কারণে ললিতের সাথে শামিমার বিয়ে হয়। ললিতের সাথে সুমির আগে থেকেই একটা সম্পর্ক ছিল। বিয়ের মাত্র কিছুদিনের মধ্যেই ললিত শামিমার উপর অত্য’চার করে। এমনকি সুমিকে বিয়ে করে শামিমাকে রক্তাক্ত করে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।
শাহাদাতের মুখে এসব কথা শুনে সাকিব হাতের মুঠো শক্ত করে বলে,
‘শামিমার উপর এতকিছু করল। আর তোরা চুপ করে সহ্য করলি। আমার তো ইচ্ছা করছে ঐ ললিতকে মে’রে মাটিতে পু’তে ফেলতে।’
শাহাদাতঃআমাদেরও একই অবস্থা। কিন্তু কি করবো বল সুমি এমন একটা ভুল করে বসল যে,,,, সুমিও তো আমারই বোন। আর ললিত এখন সুমির স্বামী। সুমি তো ললিতকে ছাড়তেই চায়না।
শাহানাজ পারভীন সবাইকে খেতে ডাকে। খাবারের টেবিলে সাকিব আর শামিমার আবার চোখাচোখি হয়। সাকিব শামিমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে। সাকিব এবার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে শামিমাকে বিয়ে করে তবেই এদেশ থেকে বউ নিয়ে ফিরে যাবে।
১৪.
ললিত রাগে ফুসতে থাকে। কত পরিকল্পনা করে কতকিছু করল অথচ তার সব পরিকল্পনা ব্যর্থ হলো। কি লাভ হলো তার সুমিকে বিয়ে করে?
সুমিও এখন তার পিছে ঘোরাঘুরি করছে। ললিত সুমিকে শাসিয়ে বলে,
‘একদম আমার পিছুপিছু ঘুরবি না। তোকে দেখেই আমার মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে।’
সুমিঃকেন আমি কি করলাম আবার? আমি তো তোমায় ভালোবাসি ললিত। তোমাকে ভালোবেসে আমি সব ছেড়েছি আর তুমি,,,
ললিত সুমির চুলের মু’ঠি শক্ত করে ধরে। সুমি চিৎকার করতে থাকে। ললিত সুমিকে লা’থি মে’রে নিচে ফেলে দেয়। সুমি কেদে দেয়।
ললিত এতেও শান্তি পায়না নিজের রাগ মেটানোর জন্য সে প্যান্টের বে’ল্ট খুলে সুমিকে মা’রতে থাকে। সুমি বারবার ললিতকে অনুরোধ করে তাকে যেন সে ছেড়ে দেয়। কিন্তু ললিত তাকে ছাড়েনা। সুমি এই প্রথমবার অনুভব করে সে কতবড় একটা ভুল করে ফেলেছে। জেদের বসে একটা হারাম কাজ করে ফেলেছে সুমি। তার শাস্তি তো সুমিকে পেতেই হতো। সুমি যখন অনুরোধ করেও ললিতকে সারাতে ব্যর্থ হয় তখন ফুলদানি তুলে নিয়ে ললিতের মাথায় আ’ঘাত করে। ললিতের মাথা দিয়ে রক্ত বের হয়ে যায়। যার ফলে ললিত আরো বেশি ক্ষে’পে যায়।
সুমির গলা টি’পে ধরে সে। সুমির নিঃশ্বাস প্রায় বন্ধ হয়ে আসছিল। ললিত তখন সুমিকে ছেড়ে দেয়। ললিত বলে,
‘তোকে এত সহজে ছাড়ব না। কিছুই যখন হলোনা তখন তোকে নিয়ে মজা করা যাক।’
ললিত তার সব বন্ধুদের ফোন করে। তাদেরকে নিজের বাড়িতে আসতে বলে। ললিতের মা-বাবাও বাইরে ছিল। এটাই সে সুবর্ণ সুযোগ হিসেবে পেয়ে যায়।
সুমি কাপা গলায় বলে,
‘কি করতে চাইছেন আপনি?’
ললিত বিকট হেসে বলে,
‘আমরা সব বন্ধুরা মিলে আজ তোকে ভো’গ করব।’
চলবে….
>>>আসসালামু আলাইকুম। গল্পটা কেমন লাগছে কমেন্ট করে জানাবেন। আপনাদের কমেন্ট দেখে খুব ভালো লাগে।