হাজার ফুলের মাঝে একটি গোলাপ পর্ব -১০

#হাজার_ফুলের_মাঝে_একটি_গোলাপ
#পর্বঃ১০
#লেখিকাঃদিশা মনি

সাকিব ললিতকে আবার মা’রতে যাবে তার আগেই ললিত তার বন্ধুদের সাহায্যে সেখান থেকে পালিয়ে যায়। সাকিব আর শাহাদাত তাদের পিছু নেয়।

শামিমা কিছুটা সুস্থ হয়ে বাইরে আসে। সাকিব আর শাহাদাতও ললিতকে না পেয়ে এতক্ষণে ফিরে এসেছে। শামিমাকে উঠতে দেখে সাকিব রাগ দেখায়। আচমকা আলতাফ উদ্দিন বলেন,
‘অনেক হয়েছে এখন আর না। সুমি ব্যাপারে আর কিছু জানতে চাইনা। তোমরা সবাই ফিরে চলো বাড়িতে। সুমির কথা সবাই ভুলে যাও।’

শামিমা তার আব্বুর কথাটা ঠিকভাবে মেনে নিতে পারে না।

শামিমাঃসুমির সাথে এত অন্যায় হলো আর এতকিছুর পরেও,,,

আলতাফ উদ্দিনঃসুমি নিজের ভালো নিজেই চায়না।আমরা কি করতে পারি? এখন আমি আর কিছু বলতে চাইনা।

১৯.
এক সপ্তাহ কে’টে গেছে। সুমি এখনো নিখোঁজ। এরকম এক সকালে শামিমা ভার্সিটির জন্য বের হতে যাচ্ছিল তখন সাকিব এসে বলে,
‘আমাদের একটা যায়গায় যেতে হবে। চল আমার সাথে।’

শামিমাঃকোথায় সাকিব ভাই?

সাকিবঃগেলেই জানতি পারি চল এখন।বাড়িতে কেউ নেই সবাই চলে গেছে এখন শুধু তুই আর আমি বাকি।

শামিমার মনে অজানা ভয় কাজ করে। বিপদের আভাসে তার অন্তরাত্মা কেপে ওঠে। শামিমা আল্লাহর নাম স্মরণ করে সাকিবের সাথে চলে যায়।

খাল থেকে কারো লা’শ উদ্ধার করা হয়েছে। সেই লা’শের গন্ধকে যেন ছাপিয়ে যাচ্ছে শাহানাজ বেগমের কান্না। কারণ এই লা’শের পরনে যে সুমির জামা-কাপড়। সবাই প্রায় নিশ্চিত এটা সুমির লা’শ তবুও নিশ্চিতকরণের জন্য হয়তো ডিএনএ টেস্ট করা হবে।

শামিমা আজ আর কোনকিছু ভাবতে পারছে না। নিজের বোনের এই মৃত্যুটা সে মেনে নিতে পারছে না। শামিমা আজ নিজেই নিজেকে প্রতিজ্ঞা করে,
‘সুমির এই পরিণতির জন্য যারা দায়ী আমি তাদের সবাইকে শা’স্তি দেব ইনশাআল্লাহ।’

২০.
পরিবারের মানুষদের সামলাতে গিয়ে শামিমা নিজেই খুব ক্লান্ত হয়না গেছে। কিন্তু না তার এভাবে যে ক্লান্ত হলে চলবে না। তার যে এখনো অনেক কাজ বাকি।

শামিমা বেরিয়ে পড়ে তার জরুরি কাজে।

মিরাজ আজ খুব ভয়হীন হয়ে আছে। তার মনে হচ্ছে তার জীবনে আর কোন বিপদ নেই। সে এসবই ভাবছিল তখন তার সামনে এসে উপস্থিত হয় কেউ একজন।

মিরাজ ভড়কে গিয়ে বলে,
‘কে রে তুই?’

সামনে থাকা মুখোশে আবৃত ব্যক্তিটি কোন কথা না বলে মিরাজকে অনবর’ত ছু’রি দিয়ে কো’পাতে থাকে।

মিরাজ সেখানেই মৃত্যুবরণ করে। মিরাজকে মে’রে ফেলার পর তার লা’শের পাশে একটি গোলাপ ফুল রেখে দিয়ে যায় খু’নি। আর পাশে মিরাজের রক্ত দিয়ে লিখে রেখে যায় হাজার ফুলের মাঝে একটি গোলাপ।

একইরাতে এইভাবে ললিতের আরো দুই বন্ধু খু’ন হয়। বেঁচে থাকে শুধু ললিত আর আমান।

২১.
রাতে শামিমাকে একা বাড়ি ফিরতে দেখে সাকিব বলে,
‘কোথায় গিয়েছিলি তুই এতরাতে?’

শামিমাঃএকটু বাইরে কাজ ছিল। আমি এখন আসছি।

শামিমা আর তেমন কথা না বলে নিজের রুমের দিকে চলে যায়। সাকিব ভালোভাবে শামিমাকে পর্যবেক্ষণ করে। তার কেন জানি মনে হচ্ছিল শামিমা কিছু লুকানোর চেষ্টা করছে।

সাকিব এবার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে সে আর শামিমাকে এভাবে থাকতে দেবে না। কাল সকালেই সে আলতাফ উদ্দিনের কাছে শামিমাকে বিয়ে করার প্রস্তাব রাখবে। হয়তোবা তিনি রাজি হতে পারেন। না হওয়ার সম্ভাবনাও আছে। তবে সাকিব এখন নেগেটিভ কিছু ভাবতেও চায়না। সে শুধু চায় শামিমাকে নিজের করে পেতে।

নতুন একটি দিন শুরু হয়। শামিমা সকালে বসার ঘরে যেতেই সাকিবের দৃষ্টিতে আটকে যায় তার চোখ। সাকিব কিরকম অন্যভাবে তাকিয়ে আছে। শামিমার কিছুটা অস্বস্তিও হয়। তার কেন জানি মনে হচ্ছিল আজ অন্যরকম কিছু একটা হবে। তার ভাবনাকে ঠিক প্রমাণ করে আলতাফ উদ্দিন বলেন,
‘সাকিব তোমাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিয়েছে। আমি সব সিদ্ধান্ত তোমার উপর ছেড়ে দিলাম। তুমি বলো কি করতে চাও।’

শামিমার চক্ষু চড়কগাছ হয়ে যায়।এরকম কিছু সে আশা করেনি।

শামিমাঃকালই সুমির সাথে এরকম একটা ঘটনা ঘটল আর আজ তোমরা এ কিরকম কথা বলছ। তোমরা কিভাবে এসব ভুলে আমায় এরকম ভাবে বিয়ের কথা বলতে পারো?

আলতাফ উদ্দিনঃএই ঘটনার জন্যই আমরা তোমাকে নিয়ে ভয়ে আছি। পুলিশ প্রমাণ ছাড়া কিছু করবে না। আর এদিকে ললিত তোমার কোন ক্ষ’তির চেষ্টাও করতে পারে। তাই আমি মনে করি তোমার এখনই কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন।

শামিমাঃআমি পারবো না। আমি এখন এরকম কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারবো না। আমার কিছু সময় লাগবে।

শাহানাজ পারভীনঃযা সিদ্ধান্ত নিবি একটু ভালোভাবে ভেবেশুনে নিস।

শামিমাঃজ্বি আম্মু।

শামিমা আর কোন কথা না বলে নিজের রুমে চলে যায়। তখন আলতাফ উদ্দিন টিভি চালু করতেই খবরে দেখতে পান,
‘রাতে খুব ভয়ানকভাবে ৩ টি খু’ন করা হয়েছে। যাদের প্রত্যেকেরই লা’শের পাশে একটি গোলাপ ফুল পাওয়া গেছে আর তার পাশে লেখা হাজার ফুলের মাঝে একটি গোলাপ।’

নিউজটি দেখে শাহাদাত বলে,
‘যাদের ছবি দেখালো তারা তো সবাই ললিতের বন্ধু তাইনা সাকিব? কালই তো ওদের সাথে আমাদের দেখা হলো।’

সাকিবঃঠিকই তো।কিন্তু ওদের এভাবে কে মা’রল?

মুহুর্তেই সবাই নিশ্চুপ হয়ে যায়।

২২.
আমান উৎকণ্ঠায় দিন পার করছিল। তার তিনজন বন্ধুকে মে’রে ফেলা হয়েছে। সে নিজেও অজানা বিপদের ভয়ে আছে। ললিত যদিওবা এসব ব্যাপার নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না। তবে আমান নিশ্চিত হতে পারছে না। তার অবচেতন মন তাকে সতর্কবার্তা দিচ্ছে।

আমান ভয়ে ভয়ে রাতে নিজের বাড়ির দিকে ফিরছিল। তখনই কেউ আচমকা পিছন এসে আমানকে ধা’ক্কা দেয়। আমান তাল সামলাতে না পেরে পড়ে যায়।

পিছনে ফিরে তাকাতেই যাকে ভয়ে আমানের গলা শুকিয়ে যায়। সে অনুরোধ করে বলে,
‘আমি বেঁচে থাকতে চাই। আমাকে যেতে দাও। আমার পরিবারের একমাত্র সন্তান আমি। আমার কিছু হয়ে গেলে আমার মা-বাবার কি হবে?’

‘এখন তোর মা-বাবার কথা মনে পড়ছে খুব আগে পড়েনি? অন্যদের খারাপ করে কখনো নিজের ভালো হয়না। তুই যা অন্যায় করেছিস তার জন্য শা’স্তি পেতেই হবে।’

আমানের মাথায় পাথর দিয়ে আ’ঘা’ত করে তার মাথা থে’তলে দেওয়া হয়। আবার একইভাবে আমানের লা’শের পাশে একটি গোলাপ ফুল রাখা হয় সাথে রক্ত দিয়ে লিখে দেওয়া হয় “হাজার ফুলের মাঝে একটি গোলাপ।”

২৩.
‘আমি বিয়েতে রাজি আছি।’

শামিমার কথাটা শুনে সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। বিশেষ করে সাকিবের আনন্দটা ছিল দেখার মতো। সাকিবের খুব ভালো লাগছিল কথাটা শুনে। সাথে খুব ভয়ও কাজ করছিল তার মধ্যে।

সাকিবঃআমি চাই আজই যেন আমাদের বিয়েটা হয়ে যায়।

আলতাফ উদ্দিনঃএত তাড়াতাড়ি। কোন আয়জনই তো করা হয়নি।

সাকিবঃবেশি কিছু করতে হবে না। কাজী ডেকে বিয়ে করালেই হবে। আমি শামিমাকে নিয়ে কোন টেনশনে থাকতে চাইনা।তাই,,,

আলতাফ উদ্দিনঃআচ্ছা।

রাতে বিয়ের জন্য কাজি আছে। শামিমা কোন আপত্তি ছাড়াই বিয়ে করতে রাজি হয়েছে।

কাজি এসে বিয়ে পড়ানো শুরু হয়েছে তখনই পুলিশ সেখানে চলে আসে। পুলিশ এসেই বলে,
‘আমরা মিস শামিমাকে গ্রেফতার করতে এসেছি।’
চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here