হাজার ফুলের মাঝে একটি গোলাপ পর্ব -১২ ও শেষ

#হাজার_ফুলের_মাঝে_একটি_গোলাপ
#পর্বঃ১২(সমাপ্তি পর্ব)
#লেখিকাঃদিশা মনি

শাহাদাত ছুটে এসে বাড়ির সবাইকে বলে,
‘ললিতকে খু’ন করা হয়েছে।’

শাহানাজ পারভীনঃকি বলছিস কি তুই কখন কিভাবে?

শাহাদাতঃআমি তেমন কিছু জানিনা। ললিতকেও ঠিক তার বন্ধুদের মতো করেই খু’ন করা কতা হয়েছে। আর শুনলাম তার মৃ’তদে’হের পাশে একটি মেয়েকে গুরুতর অবস্থায় পাওয়া গেছে।

আলতাফ উদ্দিনঃতুই টিভি টা অন কর সব জানা যাবে।

আলতাফ উদ্দিনের কথা শুনে শাহাদাত টিভি টা অন করে। নিউজে বলা হচ্ছিল,
‘ব্রেকিং নিউজ। অবশেষে সন্ধান পাওয়া গেল আসল সি’রি’য়াল কিলা’রের। এর আগে পুলিশ শামিমা নামের একটি মেয়েকে অপরাধী হিসেবে সন্দেহ করে তাকে গ্রেফতার করেছিল। এখন জানা যাচ্ছে শামিমা আসল অপরাধী নয়। এসব খু’নের সাথে সে জড়িত নয়। এসবের পেছনে রয়েছে তারই আপন বোন সুমি। যিনি ললিতের স্ত্রী। যতদূর জানা যাচ্ছে তিনিই প্রতি’শো’ধ নেওয়ার জন্য নিজের স্বামী এবং তার বন্ধুদের খু’ন করেছেন। তার অবস্থাও আশংকাজনক। ডাক্তার বলছে তার বাঁচার আশংকাও নেই বললেই চলে। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানব,,,,,’

নিউজটা দেখে বাড়ির সবাই প্রচণ্ড হতবাক হয়।সবাই তো ভেবেছিল সুমি মারা গেছে।তাহলে সে কিভাবে ফিরে এলো?

শাহানাজ পারভীনঃতাহলে ঐ লা’শটা কার ছিল যেটা আমরা সেদিন দেখলাম।

আলতাফ উদ্দিনঃআমার কাছে একটু আগেই ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট এসেছে। এতক্ষণ দেখতে পারিনি এখুনি দেখছি।

তিনি ডিএনএ রিপোর্ট চেক করে বলেন,
‘লা’শটা সুমির ছিলনা। ওটা হয়তো অন্য কারো লা’শ ছিল যে সুমির মতো পোশাক পড়েছিল জন্য আমরা ভুল ভেবেছিলাম।’

শাহাদাতঃআমাদের এখনই হাসপাতালে যেতে হবে। সেখানেই সবকিছুর উত্তর পাওয়া যাবে।

২৬.
সাকিব শামিমাকে পুলিশ স্টেশন থেকে নিয়ে আসে। এখন যেহেতু শামিমা নিরপরাধ সাব্যস্ত হয়েছে তাই তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

সাকিব আর শামিমাও হাসপাতালে চলে যায়।

সুমির অবস্থার আরো অবনতি হয়েছে। শেষ সময়ে সে তার পরিবারের লোকেদের সাথে কথা বলতে চায়। তাই শামিমা সবার সাথে সুমির কেবিনে যায়। পরিবারের সবাইকে দেখে সুমি মলিন হাসে।

সুমির পুরো শরীরে আঘাতের চিহ্ন। তার এরকম অবস্থা দেখে শামিমা কেদে দেয়। শাহনাজ পারভীন ডুকরে কেদে ওঠেন।

সুমিঃতোমরা এভাবে কেদোনা। আমি মৃত্যুর আগে তোমাদের সবাইকে সুখী দেখে যেতে চাই। আম্মু তুমি বলেছিলে না আমার জন্য যেন সমাজের কারো কাছে তোমাদের ছোট হতে না হয় দেখ আমি আজ ম’রে যাব তারপর কেউ তোমাদের ছোট করবে না। আমি অপ’রাধীদের নিজের হাতেই শাস্তি দিয়েছি। সবথেকে বেশি কষ্ট দিয়েছি ঐ ললিতকে। তোমরা শুনতে চাওনা ললিতকে কিভাবে মে’রেছি শোন তাহলে।

২৭.
ললিত নিজের বন্ধুদের এভাবে এক এক করে ম’রতে দেখে তার মনেও ভয় বাসা বাধে। ললিত তাই লুকিয়ে লুকিয়ে শহর ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু নিজের ভাগ্য থেকে পালানো যায়না। সুমি ঠিকই ললিতকে ধরে ফেলে।

সুমিকে দেখে ললিত হতবাক হয়ে বলে,
‘তুমি বেঁচে আছ?’

সুমিঃআমাকে যে বেঁচে থাকতেই হতো তোমার মতো শ’য়’তানকে শাস্তি দেওয়ার জন্য। অনেক পাপ করেছ তুমি। আমার আর আমার শামিমা আপুর সাথে অনেক অন্যায়, অত্যা’চা’র করেছ। এবার সেসবের শাস্তি পাওয়ার পালা।

সুমি একটা ছু’রি হাতে নিয়ে ললিতের হাত, পা কে’টে দেয়। তারপর নুন ছিটিয়ে দেয়। ললিতের য’ন্ত্র’ণায় কা’ত’ড়াতে থাকে। সুমির কাছে নিজের প্রাণভিক্ষা চায়। সুমি একটা লাঠি তুলে নিয়ে ললিতকে মে’রে রক্তাক্ত করে দেয়। ললিত অজ্ঞান হয়ে যায়। সুমি ললিতকে নিয়ে যায় নিজের আস্তানায়।

সুমিঃতোকে এত সহজে ম’র’তে দি’লে তো চলবে নাহ! তোকে শা’স্তি পেতে হবে ভয়ানক শাস্তি।

সুমি ললিতের পায়ে কেরো’সিন ঢেলে আগু’ন লাগিয়ে দেয়। ছু’রি দিয়ে তার এক চোখ অন্ধ করে দেয়। ললিত সুমির হাত থেকে ছু’রিটা কেড়ে নেয়। সুমির শরীরে একের পর এক ছুরিকাঘাত করতে থাকে। সুমিও ললিতের থেকে ছু’রিটা এবার কেড়ে নিয়ে সোজা তার বুকে বসিয়ে দেয়। সাথে সাথেই ললিত মারা যায়।

সুমি এসব কথাই এতক্ষণ ধরে সবাইকে বলছিল। সুমির কথা শুনে সবাই কেদে ফেলেছে। সুমি সবাইকে থামতে বলে,
‘তোমরা হাসিমুখে আমায় বিদায় নাও। আমি জীবনে অনেক ভুল করেছি। আজ সেসবের জন্যই এমন পরিণতি হলো আমার।’

সুমির অবস্থা ধীরে ধীরে আরো খারাপ হয়। তার নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল। শেষে আর সহ্য করতে না পেরে সুমি তার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে।

সুমির মৃত্যুর পরই সবাই কান্নায় ভেঙে পড়ে।

২৭.
সুমির মৃত্যুর পর কয়েকমাস পেরিয়ে গেছে। সবার জীবন এখন অনেকটাই স্বাভাবিক। সাকিব জরুরি কাজে আবার দুবাইতে চলে গিয়েছিল। আজ আবার তার ফিরে আসার কথা। এবার ফিরে এসে সে শামিমাকে বিয়ে করে নিজের সাথে নিয়ে যাবে।

শামিমার বিয়ে উপলক্ষে বাড়িতে অনেক মানুষের ভিড় জমেছে। সুমির মৃত্যুতে যে শোকের আমেজ লেগেছিল তা অনেকটাই দ্রবীভূত হয়েছে।

শাহানাজ পারভীন এখনো অবশ্য মেয়ের কথা মনে করে হা হুতাশ করেন। তবে শামিমার বিয়ের জন্য তিনি আপাতত স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টায় আছেন।

শামিমাও এখন মানসিকভাবে অনেক শক্ত হয়েছে। তাই তো সব ভুলে নতুন জীবনের আশায় আছে।

অপেক্ষার অবসান ঘটে। সাকিব দেশে ফিরে আসে। ফিরে এসেই সে সবার আগে শামিমার সাথে দেখা করে। শামিমা খুব খুশি হয় সাকিবকে দেখে।

সাকিবঃফিরে এসেছি এবার তোকে নিজের বউ করে নিজের করে নিয়ে যাব।

সাকিব, শামিমার অসম্পূর্ণ বিয়েটা এবার সম্পন্ন হয়। দুজনের মনেই আনন্দের হাওয়া বয়ে যায় এই বিয়েটা নিয়ে।

সাকিব শামিমার বাসর রাতে দুজনেই খুব নার্ভাস ছিল। সাকিব এতদিন পর নিজের কাঙখিত বস্তুটি পেয়ে গিয়ে তার আনন্দের কোন সীমা নেই।

তাদের জীবনের এই গুরুত্বপূর্ণ রাতটি তারা খুব ভালো ভাবে কা’টায়।

শামিমা সাকিবের কোলে মাথা রেখে বলে,
‘আমার একটা ইচ্ছা পূরণ করবে?’

সাকিবঃকি ইচ্ছা বল। আমি চেষ্টা করব।

শামিমাঃআমি আপনার সাথে হজ্ব করতে যেতে চাই। জীবিত অবস্থায় আমার এই ইচ্ছাটা পূরণ করবেন প্লিজ।

সাকিবঃঅবশ্যই। এই বছরই আমরা হজ্বে যাবো।

শামিমার মুখে হাসির দেখা মেলে। সাকিব আর শামিমা খুব সুন্দরভাবে তাদের জীবনের প্রথম রাতটি অতিবাহিত হয়।

২৮.
শামিমা, সাকিব এখন দুবাইয়ে অবস্থান করছে। কালকেই দুজনে হজ্ব করার জন্য সৌদি আরবে যাবে। শামিমা সাকিবের বুকে মাথা রেখে বলে,
‘ধন্যবাদ আমার ইচ্ছাটা পূরণ করার জন্য।’

সাকিবঃতুমি আমার স্ত্রী। তোমার কোন ইচ্ছা পূরণ করা দায়িত্ব। তাছাড়া তুমি আমার কাছে যেটা চেয়েছ সেটা খুব মহান একটি কাজ।

শামিমাঃআমার আজও আফসোস হয় কেন ললিত এলো আমাদের জীবনে। আমাদের সবার জীবনে অভি’শা’প হয়ে এসেছিল সে।

সাকিবঃপুরাতন কথা বলে আর কোন লাভ নেই। এখন আমাদের ভাবতে হবে সামনের কথা। সুন্দর একটি ভবিষ্যতের কথা।

শামিমাঃআমিও সেটাই চাই। আল্লাহর কাছে লাখো শুকরিয়া তিনি আমার জীবনসঙ্গী হিসেবে আপনার মতো একজন ভালো মানুষকে পাঠিয়েছে।

সাকিবঃআমিও পূর্ণ হয়েছি তোমাকে পেয়ে। তুমি যে অনন্য শামিমা। তুমি হাজার ফুলের মাঝে একটি গোলাপ
[The End]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here