হারানোর বেদনা পর্ব -০৬

#হারানোর_বেদনা
#পর্ব_৬
#লেখক_দিগন্ত
নিলয় মেঘলাকে আবার তার বাড়িতে ফিরিয়ে আনে।এতদিন পর মেঘলাকে ফিরতে দেখে লতিফা বেগম অনেক খুশি হন।নিলাও এতদিন পর তার পরিবারকে ফিরে পেয়ে খুব খুশি।

এসবের মধ্যে মেঘলা রয়েছে তার নিজের ভাবনার মধ্যে।নিলয়কে কিভাবে তার সকল কৃতকর্মের শাস্তি দেবে সেটাই এতক্ষণ ধরে ভাবছিল সে।তার ভাবনার মধ্যেই নিলয়ের ডাকে ঘোর কে*টে যায়।মেঘলা এক পলক নিলয়ের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে,
-“একসময় খুব ভালো বেসেছিলাম তোমায়।আজ সেই ভালোবাসার মানুষটাকেই সবথেকে বেশি ঘৃণা করতে হচ্ছে।আমি এখন ক্লান্ত খুবই ক্লান্ত।কিন্তু না আমায় কিছুতেই দূর্বল হলে চলবে না।নিজের বোনের মৃত্যুর প্রতিশোধ, তোমার সব অপরাধের শাস্তি তোমায় পেতেই হবে নিলয়।”
______________
নিলয় অফিসে এসে থেকে তার এসিট্যান্টকে খুঁজে যাচ্ছে।আজ বিদেশি কোম্পানির সাথে অনেক বড় একটা ডিল সাইন করার কথা ছিল।অথচ তার এসিট্যান্ট এখনো আসেনি।

নিলয় ব্যতিব্যস্ত হয়ে যায়।এই ডিল সম্পর্কে সব ডকুমেন্ট আছে তার এসিট্যান্টের কাছে।এখন যদি তাকে না পাওয়া যায় তাহলে এত ভালো একটা ডিল হাতছাড়া হয়ে যাবে।

হঠাৎ টেলিফোনের শব্দে নিলয় বিরক্ত হয়ে যায়।ফোন ধরতেই অপরপাশ থেকে কারো কথা ভেসে আসে,
-“একটা ডোবা থেকে আপনার এসিট্যান্টের লা*শ উদ্ধার করা হয়েছে।আপনি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চলে আসুন।”

কথাটা শুনে নিলয়ের প্রচণ্ড রকমের ভয় হয়।সে কি করবে বুঝে উঠতেই পারছিল না।সব প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট তো তার এসিট্যান্টের কাছে ছিল।এখন তাহলে কি হবে?

এসব চিন্তা বাদ দিয়ে নিলয় আপাতত বেরিয়ে পড়ে।রাস্তায় একটি গাড়ি এসে নিলয়ের সামনে দাঁড়ায়।নিলয় রেগে গিয়ে বলে,
-“এভাবে গাড়ি দাড় করালেন কেন? সরে যান সামনে থেকে।”

এরপর গাড়ি থেকে হঠাৎ একজন নেমে আসে।যাকে দেখে নিলয় প্রচণ্ড অবাক হয়ে বলে,
-“তুই!”

অপর পাশের ব্যক্তিটি বলে ওঠে,
-“খেলা জমাতে চলে এসেছি আমি।তুই তো আমাকে চিনিস আমি কত বড় খেলোয়াড়।”

নিলয় ব্যক্তিটির দিকে তাকিয়ে বাকা হেসে বলে,
-“সেটা তো জানি।আমার সব খারাপ কাজের অংশীদার তুই।বিদেশে মেয়ে আর মাদক বিক্রি আমরা তোর সাহায্যেই তো করি।”

-“তোকে যে বলেছিলাম নতুন ২৫ টা মেয়ে জোগাড় করে রাখতে।করেছিস জোগাড়?”

নিলয় বিচলিত হয়ে বলে,
-“আমার এসিট্যান্টের ওপর এই দায়িত্ব ছিল।সে ঐ ২৫ জন মেয়েকে কোথায় রেখেছে সেটা আমি জানি না।আমার এসিট্যান্টও আর বেঁচে নেই।”

-“আমি কোন কথা শুনতে চাইনা।এক সপ্তাহ সময় দিলাম তোকে।তার মধ্যে ২৫ টা মেয়েকে লন্ডনে পাঠিয়ে দিবি।নাহলে কিন্তু আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না।কথাটা মাথায় রাখিস।”

কথাটা বলে সেই ব্যক্তিটি চলে যায়।এদিকে নিলয় ভয়ে ঘামতে থাকে।কোথায় পাবে এখন সে এতগুলো মেয়ে?
____________
মেঘলা মেহেদীকে ফোন করে বলে,
-“তুই কি কিছু জানতে পারলি?”

মেহেদী হতাশ হয়ে বলে,
-“না কিছু জানতে পারি নি।নিলয়ের এসিট্যান্টকে কে বা কারা মে*রে ফেলেছে।আমাদের পরিকল্পনা ছিল যে করেই হোক তাকে ধরে তার মুখ থেকেই সব স্বীকার করানো।কিন্তু…”

-“হ্যাঁ আমি শুনলাম ব্যাপারটা।যাইহোক এখন আমাদের নতুন প্ল্যান করতে হবে।নিলয়ের বিরুদ্ধে যত দ্রুত সম্ভব সব প্রমাণ আমাদের জোগাড় করতে হবে।নাহলে….”

-“জি আপু আমি জানি।আমাদের হাতে আর বেশি সময় নেই।আমি দেখছি কি করা যায়।তুই সাবধানে থাকিস।”

কলটা কে*টে দিয়ে পিছনে ফিরে তাকাতেই মেঘলা ভয় পেয়ে যায়।নিলয় তার পেছনে দাঁড়িয়ে।তাহলে কি সে মেঘলা আর মেহেদীর সব কথা শুনে ফেলল।কথাটা ভাবতেই মেঘলা ঘামতে শুরু করে।

নিলয় মেঘলার দিকে তাকিয়ে গম্ভীরভাবে বলে,
-“কার সাথে কথা বলছিলে?”

মেঘলা থতমত হয়ে বলে,
-“মেহেদী।”

নিলয় আর কোন কথা না বলে বেশ স্বাভাবিকভাবেই সেখান থেকে চলে যায়।

নিলয়ের এইরকম ব্যবহার মেঘলার ভয় আরো বাড়িয়ে দেয়।নিলয় কি তাহলে সবকিছু শুনে ফেলল? যদি তাই হয় তাহলে তার আর মেহেদীর উপর অনেক বিপদ আসতে পারে।
__________
নিলাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা।কথাটা কানে আসতেই মেঘলার যেন ঘুম উবে যায়।রাতে নিলাকে সাথে নিয়েই ঘুমিয়েছিল সে।সকালে উঠে দেখে নিলা তার পাশে নেই।এখন নিলয় এসে বলছে নিলাকে নাকি কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা।

মেঘলা আর সহ্য করতে না পেরে কেঁদেই দেয়।নিলয় মেঘলাকে সামলিয়ে বলে,
-“তুমি কোন চিন্তা করোনা মেঘলা।আমি আমাদের মেয়ের কোন ক্ষতি হতে দেব না।আমি দেখছি নিলাকে কোথায় পাওয়া যায়।”

অন্যদিকে নিলা অনবরত কেঁদে চলছে আর বলছে,
-“প্লিজ আমাকে যেতে দাও।কেন তোমরা আমায় এখানে নিয়ে এসেছ।”

একজন লোক নিলাকে ধমক দিয়ে বলে,
-“একদম চুপ থাক।”
.
নিলয় রুদ্রকে টেনে এনে থা’প্পড় মা’রতে মা’রতে বলে,
-“আমার মেয়ের কি হয়েছে বল।তোকে কিন্তু আমি ছাড়ব না।”

-“বিশ্বাস কর নিলয় আমি কিছু করিনি।”

-“বিশ্বাস তাও আবার তোকে! কোনদিনও না।ভালোয় ভালোয় বল আমার মেয়ে কোথায়।এর আগেও তুই আমার মেয়েকে তুলে নিয়ে গিয়েছিলি।এবারও ঠিক একই কাজ করলি।শয়’তান কোথাকার।তোকে সুযোগ দেওয়াই আমার ভুল হয়েছে।”

-“আমি সত্যি এবার কিছু করিনি।”

-“তুই যদি সত্যিটা না বলিস তাহলে তোর মেয়ে রুশাকে কিন্তু আমি…”

রুশার নামটা শুনতেই রুদ্র আর নিজেকে সামলাতে না পেরে বলে,
-“আমি কসম করে বলছি আমি কিছু জানি না।”

নিলয়ের এবার রুদ্রের কথায় বিশ্বাস হয়।কিন্তু তার মন থেকে খটকা দূর হয়না।কে করল এই কাজ?
_____________
মেঘলার ফোনে একটি ম্যাসেজ আছে।সেখানে লেখা,
-“যদি নিজের মেয়েকে ফেরত চাস তাহলে নিলয়ের পুরাতন গোডাউনের কাছে চলে আয়।আর যদি কাউকে কিছু বলিস তাহলে কিন্তু ভালো হবে না।”

মেঘলা ম্যাসেজটি দেখে আর বিন্দুমাত্র অপেক্ষা না করে ছুটে যায় সেই ঠিকানায়।মেঘলা সেখানে পৌঁছাতেই কয়েকজন লোক তাকে একটি ঘরে নিয়ে যায়।সেখানে গিয়ে সে যা দেখে তাতে পুরোপুরি অবাক হয়ে যায়।
তার সামনে দাড়িয়ে আছে তার বোন লামিহা।লামিহাকে সুস্থ দেখে মেঘলাও খুশি হয়।নিজের বোনকে জড়িয়ে ধরে বলে,
-“কোথায় ছিলি তুই এতোদিন।”

লামিহাও আবেগপ্রবণ হয়ে যায়।কিন্তু নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,
-“অনেক কথা, অনেক রহস্য আছে রে আপু।নিলয় শুধু আমাদের একমাত্র শত্রু নয়, আমাদের আরো অনেক শত্রু চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।তাদের সবার থেকে আমাদের বাঁচতে হবে।সেই কারণেই আমি তোর মেয়েকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য তাকে নিয়ে এসেছি।তোকে শুধু একটা কথাই বলব।কাউকে বিশ্বাস করিস না।কাউকে না।”

লামিহা এরপর মেঘলাকে বলে,
-“তুই এখন যা।এখানে কেউ চলে আসার আগেই চলে যা।”

মেঘলা তড়িঘড়ি করে সেখান থেকে চলে আসে।
________
রুদ্র খুব খুশিমনে নিলয়কে এসে বলে,
-“আমি এবার জানতে পেরে গেছি নিলয় কে তোর বিরুদ্ধে পরিকল্পনা করছে?”

-“কে সে?”

-“আমাকে কিছুটা সময় দে।আমি তাকে তোর সামনে এনে হাজির করব।”

কথাটা বলেই রুদ্র বেরিয়ে যায়।মেঘলা তখন লামিহার সাথে দেখা করে ফিরছিল।মেঘলাকে আসতে দেখে রুদ্র এগিয়ে যায়।মেঘলার মাথায় ব*ন্দুক তাক করে বলে,
-“তোমার খেলা শেষ মেঘলা।আমি তোমার ব্যাপারে সব জেনে গেছি।”
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here