হারানোর বেদনা পর্ব -০৫

#হারানোর_বেদনা
#পর্ব_৫(রহস্যের সমাধান)
#লেখক_দিগন্ত

নিলয় রুদ্রকে অনবরত মা*রতে থাকে।রুদ্র আর সহ্য করতে না পেরে বলেই দেয়,
-“তোর বোনের কথাতেই আমি এমন করেছি।”

নিলয় কথাটা শুনে একবার দিশার দিকে তাকায়।তারপর দিশাকে বলে,
-“তোকে তোর অপরাধের শাস্তি পেতেই হবে।”

কথাটা বলেই একটা পিস্তল বের করে দিশার দিকে তাক করে নিলয়।দিশা বারবার তার কাছে বাঁচার জন্য আকুতি করে।কিন্তু নিলয় বলে,
-“আমার কাছে বিশ্বাসঘাতকদের কোন ক্ষমা নেই।আমাকে কষ্ট দিতে চেয়েছিলি তাইনা? এখন নিজের জীবন হারানোর বেদনা সহ্য কর।”

দিশার বুক বরাবর গু*লি করে নিলয়।মুহুর্তেই নিষ্প্রাণ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে দিশা।রুদ্র শুধু চেয়ে চেয়ে এসব দেখছিল।সে কি করবে বা বলবে বুঝতে পারছিল না।পুরো ঘটনাটা তাকে স্তব্ধ করে দেয়।
_________
সুমির কথাটা শুনে মেঘলা সামান্য অবাক হয়।তারপর বেশ স্বাভাবিকভাবেই বলে,
-“নিলয় যদি এমন কিছু করে তাহলে সেটাতে নিশ্চয়ই তার কোন উদ্দ্যেশ্য আছে।আমি এত বছরে ওকে যতটা চিনেছি ও নিজের স্বার্থ ছাড়া একটা মশাও মা*রেনা।”

সুমি দ্ব্যর্থ কন্ঠে বলে,
-“আমাকে বিয়ে করে ওনার কি স্বার্থ আছে?”

-“আমি ঠিক জানি না।”

তাদের কথার মাঝেই মেহেদী সেখানে চলে আসে আর বলে,
-“সুমি তুমি নিচে যাও আমার আপুর সাথে কিছু জরুরি কথা আছে।”

-“ও আমাদেরই লোক মেহেদী।যা বলার ওর সামনেই বলতে পারিস।”

মেঘলার কথাটা শুনে মেহেদী অবাক হলেও নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,
-“নিলয় যে এত খারাপ সেটা আমি বুঝতে পারিনি।”

-“বুঝবি কি করে সবাই যে ভালোমানুষের মুখোশ পড়ে থাকে।নিলয়ও এতদিন সবার সামনে ভালোমানুষের নাটক করে চলছিল।”

সুমি হঠাৎ বলে ওঠে,
-“নিলয়ের সাথে আপনাদের কি শত্রুতা? কেন আমাকে ওনার বিরুদ্ধে কাজে লাগানেন।প্লিজ আমায় বলুন।আমি যে এসব না জানা পর্যন্ত শান্তি পাচ্ছিনা।”

মেঘলা বলতে শুরু করে,
-“আমার বাবা একজন সাংবাদিক ছিল।তিনি ছিলেন খুবই সাহসী আর সৎ।একটি নারী এবং মাদক পাচারকারী চক্রের বিরুদ্ধে তিনি অনেকদিন থেকে প্রমাণ খুঁজছিলেন।একসময় তাদের সম্পর্কে জানতেও পারেন।এই চক্রের মূল হোতা ছিল নজরুল হক, নিলয়ের বাবা।এই কারণে নজরুল হক আমার বাবাকে খু*ন করেন।”

-“কিন্তু এতে নিলয়ের কি দোষ? আপনারা নিলয়ের বাবার জন্য নিলয়ের উপর কেন প্রতিশোধ নিচ্ছেন।”

-“আমাদেরও এতবছর তোমার মতো ভুল ধারণা ছিল।আসলে কিছু মানুষ এমন মুখোশ পড়ে থাকে যে সহজে তাদের চেনাই যায়না।আমার বাবার মৃত্যুর পর অনেকবছর চলে যায়।আমরা কেউ এসব বিষয় নিয়ে মুখ খুলতে পারি নি সাহস আর প্রমাণের অভাবে।কিন্তু আমাদের সবার ছোট বোন লামিহা যখন বড় হয়ে এসব ব্যাপারে জানতে পারে তখন সে বাবার দোষীদের শাস্তি দেওয়ার প্রতিজ্ঞা করে ফেলে।একদিন যখন লামিহা বাড়িতে ফিরছিল তখন কয়েকজন লোক তাকে তুলে নিয়ে যায়।তারপর থেকে তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না।আমরা সবাই মনে করি নজরুল হক এসবের পেছনে আছে।তাই আমি সিদ্ধান্ত নেই যে করেই হোক নজরুল হকের কাছাকাছি যেতে হবে।আর ভাগ্য আমাকে সুযোগ দিয়েও দেয়।নজরুল হকের ছেলে নিলয় আমার ভার্সিটির সিনিয়র ছিল।তার সাথে মিথ্যা প্রেমের অভিনয় করে আমি বিয়ে করে তার বাড়িতে বউ হয়ে যাই।নজরুল হকের বিরুদ্ধে লড়াই আমার তখন থেকে শুরু হয়।দীর্ঘ ৫ বছর তার বিরুদ্ধে প্রমাণ খোঁজার অনেক চেষ্টা করেও আমি ব্যর্থ হই।এরপর একদিন ধৈর্য হারিয়ে আমি নিজের বাবা আর বোনের হয়ে প্রতিশোধ নিয়ে ফেলি।আমি নিজের হাতে ওনাকে খু*ন করি।কিন্তু সবাই ভাবে তার মৃত্যু একটা দূর্ঘটনা ছিল।”

এসব ঘটনা সম্পর্কে জেনে সুমি ভয়ে কাপতে থাকে।মেঘলা বলে,
-“এবার আসা যাক নিলয়ের ব্যাপারে।নজরুল হকের মৃত্যুর পর আমি ভেবেছিলাম আমার সব শত্রু শেষ।তাই সব ভুলে স্বামী-সন্তান নিয়ে সুখে সংসার করতে থাকি।কিন্তু গতবছর এমন কিছু জানতে পারি যা আমার এতবছরের বিশ্বাস ভালোবাসা সম্পূর্ণ ভেঙে দেয়।আমি জানতে পারি আমার বোন লামিহার সাথে যা হয়েছে তার পিছনে নিলয়ের হাত রয়েছে।এমনকি তার বাবার অবর্তমানে নিলয় এখন নারী ও মাদক পাচারকারী চক্রের প্রধান হয়ে উঠেছে।”

সুমি তখন বলে,
-“এই কারণেই আপনি নিলয়ের বিরুদ্ধে এত কাজ করছেন?”

-“হ্যাঁ।আমি চাই নিলয়কে তার অপরাধের যোগ্য শাস্তি দিতে।নিলয় যেমনই হোক আমাকে আর নিলাকে খুব ভালোবাসে।তাই আমি প্রথমে নিজেদেরকে ওর থেকে আলাদা করে ওর উপর প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করি।এরপর আমার উদ্দ্যেশ্য যে করেই হোক হক পরিবারের পাপের সাম্রাজ্য ধ্বং*স করা।”

-“আপনার উদ্দ্যেশ্য একেবারে সৎ।তবে আমি এতদিন ধরে আপনাকে ভুল বুঝেছিলাম।কিন্তু আমার টাকার খুব দরকার ছিল।তাই আপনার কথা অনুযায়ী সব কাজ করেছি।তবে এখন থেকে আমি স্বেচ্ছায় আপনাকে সাহায্য করতে চাই।”

মেঘলা মুচকি হাসে।মেহেদীর দিকে তাকিয়ে বলে,
-“আমার ভাইটা কি খুব জেদি।ওকে সামলে রেখ তাহলেই হবে।বড় কোন বিপদে জড়ানোর দরকার নেই।”
_______
রুদ্র নিলয়ের পা ধরে ক্ষমা চেয়ে বলে,
-“আমার ভুল হয়ে গেছে দোস্ত।ঐ দিশার কথায় আমার তোর বিরুদ্ধে কাজ করা উচিৎ হয়নি।দয়া করে আমায় শুধু আর একবার সুযোগ দে।আমি কথা দিচ্ছি আমি আজীবন তোর গোলাম হয়ে কা*টিয়ে দেব।”

নিলয় গগণবিহারী হাসি হেসে বলে,
-“তোকে বিশ্বাস করার মতো ভুল আমি নাহয় দ্বিতীয়বারের মতো করলাম।কিন্তু মনে রাখিস এটাই তোর শেষ সুযোগ।এরপর আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করলে তোকেও কিন্তু দিশার পরিণতি ভোগ করতে হবে।”

রুদ্র অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে রাখে।রুদ্রর এখন চিন্তা তার মেয়ে রুশাকে নিয়ে।দিশা তো আর নেই এখন তার যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে রুশা একেবারে একা হয়ে যাবে।

তাই রুদ্র বলে,
-“আমি এখন থেকে তোর হয়ে কাজ করব।তুই শুধু আমাকে আর আমার মেয়েকে বাঁচিয়ে রাখ।”

রুদ্রের মুখে তার মেয়ের কথা শুনে নিলয়েরও নিলার কথা মনে পড়ে যায়।তাই সে রুদ্রকে দিশার লাশের ব্যবস্থা করতে বলে দ্রুত সেখান থেকে চলে আসে।
___________
নিলয় সোজা মেঘলার বাড়িতে চলে আসে।নিলয়কে আসতে দেখে সুমি লুকিয়ে পড়ে।নিলয় এসেই মেঘলাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
-“আজ আমি সব সত্য প্রমাণসহ তোমার কাছে উপস্থাপন করব মেঘলা।রুদ্র আর দিশা আমাদের বিরুদ্ধে সব ষড়*যন্ত্র করেছে।তুমি বিশ্বাস করো।”

-“আমি জানি।রুদ্র আমাকে একটু আগে ফোন করে সব বলল।”

-“এখন তাহলে তুমি আমার সাথে ফেরত চলো।”

-“তুমি সুমিকে কেন বিয়ে করেছ? সত্য করে বলো।”

নিলয় আমতা আমতা করে বলে,
-“আমি সুমির ব্যাপারে সব জানতে চাইছিলাম তাই ওকে বিয়ে করি।এখন আর আমার কোন কিছু জানার ইচ্ছে নেই তাই ওকে তালাক দিয়ে দেব।আর আমাদের ডিভোর্স পেপার কিন্তু এখনো কোর্টে যায়নি তাই আমাদের ডিভোর্স কার্যকর হয়নি।আমরা এখন আবার নতুন করে জীবন শুরু করব।চলো আমার সাথে।”

মেঘলা নিলয়ের বিরুদ্ধে আরো প্রমাণ সংগ্রহ করার জন্য তার সাথে যেতে রাজি হয়।মেঘলাকেও তারা সাথে নেয়।

অন্যদিকে, একজন ব্যক্তি মুখ ঢেকে নিলয়ের এসিস্ট্যান্টকে ছু*রিকা*ঘাত করে মে*রে ফেলে।তারপর মুখোশ পরিহিত ব্যক্তিটি বলে,
-“খেলা সবেমাত্র শুরু হলো।এই খেলার শুরুও আমি করেছি আর শেষও আমি করব।নিলয় হক তোমার দিন শেষ হয়ে আসছে।”
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here