হারানোর বেদনা পর্ব -১২

#হারানোর_বেদনা
#পর্ব_১২
#লেখক_দিগন্ত
নিলাকে কেউ কিডন্যাপ করে নিয়ে এসেছিল।নিলা বুঝতে পারছিল না কে বা কারা এই কাজ করল।একজন লোক এসে নিলার মুখের কালো কাপড় সরিয়ে দেয়।

নিজের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটিকে দেখে নিলা অবাক হয়ে যায়।এই তো সেই সকালের লোকটি।যিনি ট্রাফিক রুল ব্রে*ক করে নিলার হাতে এক হাজার টাকা ধরিয়ে দিয়ে গেছিলেন।

নিলা রাগে ফুসতে ফুসতে বলে,
-“কে আপনি? আর আমাকে এখানে নিয়ে এসেছেন কেন? সকালের ঘটনার প্রতিশোধ নিচ্ছেন?”

নিহান চৌধুরী রেগে গিয়ে বলে,
-“আমি সিআইডি অফিসার নিহান চৌধুরী।এত সামান্য কারণে কাউকে ধরে আনার লোক আমি নই।তোমাকে প্রয়োজনেই নিয়ে এসেছি।”

-“আপনি আর মজা করার লোক পেলেন না? আমি নিজেও একজন আইনের ছাত্রী।আপনি এভাবে অকারণে আমায় তুলে আনতে পারেন না।”

-“আমি অকারণে তোমায় তুলে আনিনি।তুমি আমার প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।”

-“আমি আপনার কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য নই।আমায় ছেড়ে দিন বলছি।”

-“আপনি একটু চুপ করে আমার কথাটা শুনুন।আপনার বাবা তো নিলয় হক তাইনা?”

নিলা বলে,
-“হ্যাঁ তো কি হয়েছে?”

-“তিনি একজন নারী ও মা*দক পা*চারকারী ছিলেন।”

-“আপনি কি আমার বাবার করা পাপের জন্য আমায় শাস্তি দিতে চান?”

-“আগে আমার পুরো কথাটা শুনুন।ইদানীং আবার নতুন করে নারী পা*চারকারীদের কাজ শুরু হয়েছে।নিলয় হকের মৃত্যুর পর এত বেশি সংখ্যক নারী পাচারের কাজ আর হয়নি।আমার মনে হয় আবার কোন নতুন পা*চারকারী চক্র গড়ে উঠেছে।আপনার বাবা দাদা যেহেতু এসব কাজের সাথে যুক্ত ছিল তাই আমার আপনাকেও সন্দেহ হচ্ছে।আপনি তো নিজের বাবা দাদার কাজটা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন।”

নিলা এবার খুব রেগে যায়।আর বলতে থাকে,
-“আপনারা সিআইডির লোক? আপনাদের বুদ্ধির বাহার দেখে আমি শিহরিত।এই বুদ্ধি নিয়ে আপনারা সিআইডিতে কাজ করেন? এভাবে কোন এভিডেন্স ছাড়া শুধু মাত্র কিছু লেইম যুক্তি দিয়ে আমায় জেরা করছেন।আমায় ছেড়ে দিন বলছি।নাহলে আপনাদের কাউকে আমি ছাড়বো না।”

-“গলা নামিয়ে কথা বলুন।আমি আমার কাজই করছি।আজকের মতো আপনাকে ছেড়ে দিলাম।কিন্তু মনে রাখবেন আপনি আমাদের সন্দেহের তালিকায় আছেন তাই যখন তখন আপনাকে ডেকে পাঠাতে পারি।”

তারপর নিহান নিলার হাতের বাধন খুলে দেয়।নিলা যেতে যেতে বলে,
-“শুনুন মিস্টার নিহান চৌধুরী।আমি আপনার উপর রিভেঞ্জ নেবোই।মনে রাখবেন কথাটা।”

নিহানের একজন কলিগ ফিসফিস করে বলে,
-“মেয়েটার কি সাহস নিহান চৌধুরীকে হু*মকি দিচ্ছে।”

নিলা মুচকি হেসে বলে,
‘সাহসের কিছুই দেখেন নি।আমি সাহস দেখালে আপনারা বুঝতে পারবেন।’
________
বাড়িতে ফিরে সোজা এসে বিছানায় শুয়ে পড়ে নিলা।আজ সারাদিন এত ধকলের পর সে ক্লান্ত।এমন সময় আকাশ কল দিয়ে বলে,
-“তোমাকে না আজ আসতে বলেছিলাম।কোথায় তুমি?”

নিলা আমতা আমতা করে বলে,
-“আজ কিছু জরুরি কাজ ছিল।কাজ চলে যাব এখন।”

-“আচ্ছা ঠিক আছে।কাল একদম এরকম করবে না।কাল চলে আসবে।তোমায় পরীক্ষার ব্যাপারে গাইডলাইন দেব।”

নিলা আচ্ছা বলে কল কে’টে দেয়।অন্যদিকে নিহান চৌধুরীও শুয়ে শুয়ে নিলার কথা ভাবছিল।এই প্রথম কোন মেয়ে তার মুখের উপর এভাবে কথা বললো।নিলার কথা ভেবে নিহান চৌচির বলতে থাকে,
-“মেয়েটার মধ্যে কিছু তো একটা ব্যাপার আছে যা আমাকে বারবার ওর দিকে আকৃষ্ট করে।”
________
ক্লাসে বসে ছিল রুশা।আজ ডক্টর রোহান তাদের ক্লাস নেবে।তাকে দেখে তো সব মেয়ে স্টুডেন্টরাই হা করে তাকেই দেখছিল।পড়াশোনায় তাদের কোন মনযোগই ছিলনা।ব্যতিক্রম একমাত্র রুশা।যদিও সেও রোহানকে পছন্দ করে।কিন্তু অন্যদের মতো সে নয়।রুশার কাছে নিজের পড়াশোনাটাই সবার আগে।

রোহান যখন প্রশ্ন করে তখন কেউই উত্তর দিতে পারে না।সবাই চুপ থাকে।শুধুমাত্র রুশাই সব ঠিক উত্তর দিচ্ছিল।এটা দেখে ডক্টর রোহান খুব ইমপ্রেস হয়।

রোহান খুশি হয়েছে ভেবে রুশারও ভালো লাগে।যদিও সে এটা প্রকাশ করে না।ভালোবাসার মতো এই অনুভূতি গুলোও সে অপ্রকাশিত রেখেছে।

হসপিটাল থেকে আসার সময় রুশা শুনতে পায় কয়েকজন মানুষ বলছিল,
-“শুনলাম আজকাল নাকি বাজারে অনেক দুই নাম্বার ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে।এগুলোর কারণে কত মানুষ অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে।কি দিনকাল পড়লো এখন মানুষ অসুস্থ মানুষদের জীবন নিয়েও ব্যবসা করে।”

রুশা এগিয়ে গিয়ে একজনকে জিজ্ঞাসা করে,
-“কি বলছিলেন আপনারা? দুই নাম্বার ওষুধ মানে?”

-“কেন আপনি জানেন না? এখন তো বাজারে দুই নম্বর ওষুধ বেরিয়েছে।দেখে বোঝারই উপায় নেই কোনটা আসল আর কোনটা নকল।এসব ওষুধের বিরুদ্ধে তো ভ্রাম্যমান আদালতও বসানো হয়েছে।কিন্তু কিছুতেই এসব ওষুধের বিক্রি বন্ধ করা যাচ্ছে না।আমার তো মনে হয় এসবের পেছনে বড় কোন চক্র আছে।”

-“মানুষ যে এমন কাজ কেন করে ভেবে পাইনা।কত অসুস্থ লোকের জীবন ঝুঁকিতে পড়ে যাচ্ছে।”

-“কি আর বলবো এখন সময়টাই এরকম।”

রুশা এসব নিয়ে ভাবতে ভাবতেই বাড়িতে চলে যায়।

বাড়িতে গিয়ে দেখে নিলা ম*রার মতো ঘুমাচ্ছে।রুশা তাকে ডেকে তুলে বলে,
-“তুই তো এইসময় ঘুমোস না।আজ হঠাৎ?”

নিলা বলে,
-“আমি যা বলব তা বিশ্বাস করবি কি? আজ আমার সাথে কি কি হয়েছে জানিস?”

রুশা আগ্রহী হয়ে জিজ্ঞাসা করে,
-“হ্যাঁ বল।আমি শুনতে চাই।আন্টি কি তোর সাথে দেখা করেছে?”

নিলা তখন রুশাকে সব ঘটনা খুলে বলে।সব শোনার পর রুশা হেসে ফেলে।

নিলা বলে,
-“আমার এরকম অবস্থা হয়েছিল আর তুই হাসছিস?”

রুশা অনেক কষ্টে নিজের হাসি থামিয়ে বলে,
-“সরি রে।আমি আসলে ভাবছিলাম সবকিছু কেমন ফিল্মি ফিল্মি লাগছে এখন ভাব শুধু নিহান চৌধুরীর সাথে তোর প্রেম-টেম কিছু হলো।”

-“মজা করারও একটা লিমিট থাকে।ওরকম খা*টাশ অফিসারের প্রেমে আমি জীবনেও পরব না।এরপর আর একবার শুধু দেখা হোক।আমি রিভেঞ্জ নিয়েই ছাড়ব দেখে নিস।”

-“দেখিস আবার রিভেঞ্জ নিতে গিয়ে না আবার মন দেওয়া নেওয়া হয়ে যায়।”
___________
নিহানকে তার বাবা-মা ডেকে পাঠিয়েছে।নিহান এর কারণটা খুব ভালোভাবে জানে।বিগত অনেকদিন থেকেই তারা বিয়ে নিয়ে অনেক জোরাজুরি করছে।নিহানের নাকি বয়স হয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে বুড়ো হচ্ছে।অথচ এখনো বিয়ে করেনি।এই নিয়েই তার মা-বাবার যত অভিযোগ।নিহানের মা আঁখি বেগম বলেন,
-“আমি একটা মেয়ে দেখে রেখেছি তোকে বিয়ে করতেই হবে।মেয়েটা কিন্তু অনেক ভালো।বয়স একটু কম ঐ ১৮+১৯ হবে কিন্তু তোর পাশে অনেক মানাবে।”

নিহান রাগান্বিত হয়ে বলে,
-“আমার বয়স ৩০ ছুইছুই আর আমি কিনা এরকম বাচ্চা একটা মেয়েকে বিয়ে করবো।কখনো না।”

নিহানের বাবা ডক্টর নবাব চৌধুরী তখন বলেন,
-“তাহলে নিজেদের পছন্দমতো একটা মেয়েকে নিয়ে আসো আমাদের সামনে।”

নিহান মুচকি হেসে বলে,
-“খুব শীঘ্রই তোমরা তাকে দেখতে পাবে।”
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here