হারানোর বেদনা পর্ব -১১

#হারানোর_বেদনা
#পর্ব_১১
#লেখক_দিগন্ত
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সুন্দরভাবে মেকআপ করছে নিলা।পাশ থেকে রুশা বলছে,
-“আমি বুঝিনা তুই আইনের ছাত্রী না মডেল।সবসময় এত সাজগোজ করিস কেন?”

নিলা মুখ বাকিয়ে বলে,
-“যারা আইন নিয়ে পড়াশোনা করে তাদের যে সাজা যাবেনা এটা কত নম্বর আইনে উল্লেখ আছে ডক্টর ম্যাডাম?”

রুশা মুচকি হেসে বলে,
-“সেই ব্যাপারে তো তুই ভালো জানবি।আমি তো মেডিকেল স্টুডেন্ট।আইন ব্যাপারে কি জানব আমি? যাইহোক আজকে কি তুই মেঘলা আন্টির সাথে দেখা করতে যাচ্ছিস?”

মায়ের নামটা শুনে নিলার বুক কেপে ওঠে।গত ১২ বছর থেকে সে নিজের মাকে দেখেনি।এই ১২ বছরে কতবার সে কারাগারে গিয়ে বসে ছিল।কিন্তু মেঘলা কোনভাবেই তার সাথে দেখা করেনি।আজও হয়তো দেখা করবেনা।কিন্তু নিলা হাল ছাড়েনা।

দেখা না করুক অন্তত নিলার হাতে তৈরি খাবারগুলো তো খাবে।নিলা প্রতিদিন কত যত্ন করে খাবার তৈরি করে তার মায়ের জন্য।নিজের মায়ের সব কথা সে শোনে।মেঘলা তাকে বলেছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে।তাইতো সে এখন আইন নিয়েই পড়াশোনা করছে যাতে একজন ভালো উকিল হতে পারে।

নিলা এসবই ভাবছিল তখনই তার ফোন বেজে ওঠে।তার ফোনটা টেবিলের উপর ছিল তাই সে রুশাকে বলে,
-“রুশা আমার ফোনটা দে তো।”

রুশা ফোনটা হাতে নিয়ে নিলার দিকে তাকিয়ে বলে,
-“এই আকাশ ভাইয়াটা কে? তোর বফ নাকি?”

নিলা রুশার হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিয়ে বলে,
-“কি যে বলিস না।উনি একজন নামকরা উকিল।উনি তো আমার টিচারের মতো।ওনার কাছ থেকে আমি কত সাহায্য নেই।জানিস তো উনি অনেক ট্যালেন্টেড একজন উকিল।২ বছর ধরে ওকালতি করছেন কিন্তু কোন কেস হারেন নি।আমি তো
ওনাকেই নিজের আইডল ভাবি।”

-“বাবা এত প্রশংসা! নিশ্চয়ই তোর ওনার উপর ক্রাশ আছে।তাইনা বল?”

-“কি যে বলিস না তুই। Whatever আমি যাচ্ছি আমার লেট হয়ে যাচ্ছে।”

-“আরে হ্যাঁ তাড়াতাড়ি যা।তোর আকাশ ভাইয়া অপেক্ষা করছে হিহি।”

-“এবার কিন্তু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে।”

কথাটা বলেই নিলা রাগ দেখিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।তারপর চলে যায় তার দাদী লতিফার রুমে।লতিফা বসে বসে কোরআন শরিফ পড়ছিল।নিলা আসতেই বলেন,
-“আজ কি আবার মেঘলার সাথে দেখা করতে যাচ্ছিস?”

-“জ্বি, দাদি।”

লতিফা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
-“কোন মা কিভাবে এত পাষাণ হতে পারে আমি বুঝিনা।এতদিন ধরে তুই যাচ্ছিস কিন্তু মেঘলা তোর সাথে দেখাই করছে না।”

-“তুমি কোন চিন্তা করোনা দাদী।আর তো মাত্র দুই বছর।তারপর আম্মু আবার আমাদের মাঝে ফিরে আসবে।আমি এখন যাই কেমন।”

-“আচ্ছা যা।সাবধানে যাবি।”
_________
বাইক চালিয়ে কারাগারের দিকে যাচ্ছিল নিলা।রাস্তায় ট্রাফিক লাইটের সামনে দাড়িয়ে পড়ে সে।তখন দেখতে পায় একটি গাড়ি ট্রাফিক ভঙ্গ করে চলে যাচ্ছে।এটা দেখে নিলার খুব রাগ হয়।সবুজ সিগনাল দিতেই সে এগিয়ে যায় গাড়িটির দিকে।

গাড়ির সামনে গিয়ে বলে,
-“হ্যালো মিস্টার আপনি কি দেখতে পাননি তখন রেড সিগনাল ছিল।কোন সাহসে আপনি গাড়ি নিয়ে চলে গেলেন।”

গাড়ি থেকে কাচ নামিয়ে নিলার দিকে অদ্ভুতভাবে তাকিয়ে থাকে নিহান।কোন উত্তর না পেয়ে নিলা আরো জোরে চেচিয়ে বলতে থাকে,
-“আপনি জানেন আপনি যা করেছেন তা একটা অন্যায় এরজন্য আপনার শাস্তি পর্যন্ত হতে পারে।”

নিহান তার মানিব্যগ থেকে এক হাজার টাকার একটা নোট বের করে নিলার দিকে ছু*ড়ে মে*রে বলে,
-“এই নিন আর চলে যান সামনে থেকে আমার একটা জরুরি মিটিং আছে।ড্রাইভার গাড়ি চালাও।”

নিহানের কথাটা শুনে ড্রাইভার আবার গাড়ি চালাতে শুরু করে।

এদিকে রাগে ফুসতে থাকে নিলা।এই প্রথম কেউ তাকে এভাবে অপমান করল।আজ যদি কারাগারে যেতে না হতো তাহলে লোকটাকে সে এত সহজে ছাড়ত না।টাকা আছে বলে যা খুশি করবে?

এসব ভাবতে ভাবতে মেঘলার সাথে দেখা করতে চলে যায় নিলা।গিয়ে সে জেলারের সাথে কথা বলে।অনুরোধ করে বলে,
-“অনেক বছর থেকে আম্মুকে দেখিনা।আমার খুব দেখতে ইচ্ছে হয় তাকে।জানিনা কেমন আছে নিজের যত্ন নেয় কিনা।আম্মুকে একবার বলুন না যেন সে আমার সাথে দেখা করে।”

জেলার বরাবরের মতো রাগ দেখিয়ে বলে,
-“বিগত ১২ বছর ধরে তোমাদের মা-মেয়ের এসব কাহিনি দেখে আমি ক্লান্ত।তুমি যাওতো যাও।আর আমার সামনে আসিও না।আমি তোমাদের এসবের মধ্যে আর নেই।তোমার মা যখন দেখা করতেই চায়না তাহলে আসো কেন?”

নিলা মাথা চুলকে বলে,
-“দেখুন না।অনেকদিন তো হলো এখন রাজি হতেও তো পারে।”

-“রাজি হলে আমি নিজে তোমায় নিয়ে যাব।এখন যাওতো আমার অনেক কাজ আছে।”

নিলা হতাশ হয়ে ফিরে আসে।এই হতাশা নতুন নয়।বরাবরই তাকে এভাবে হতাশ হতে হয় কিন্তু কখনো হাল ছাড়েনা।নিলা বিশ্বাস করে, একদিন না একদিন সে মেঘলার সাথে দেখা করতে পারবেই।
___________
রুশা দৌড়ে দৌড়ে মেডিকেল কলেজের দিকে আসছিল।আজ খুব দেরি হয়ে গেছে।বেখেয়ালি ভাবে আসার কারণে একজনের সাথে ধাক্কা লেগে মাটিতে পড়ে যায়।রুশা তাড়াতাড়ি উঠে কোনরকমে ‘সরি’ বলে দৌড়ে দৌড়ে ক্লাসের দিকে যেতে থাকে।

এদিকে ডাক্তার রোহান একদৃষ্টিতে রুশার‍ যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলতে থাকে,
-“পাগল নাকি মেয়েটা? পাগলের মতো ছুটছে কেন আজতো ক্লাস পোস্ট পন্ড হয়ে গেছে।”

রুশা হাফাতে হাফাতে ক্লাসে গিয়ে জানতে পারে আজ সকাল ১০ টার পরিবর্তে ১১ টায় ক্লাস শুরু হবে।কথাটা শুনে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে রুশা।এত খাটুনি সব ব্যর্থ হলো।

তাকে এভাবে দেখে তানিশা(রুশার বেস্ট ফ্রেন্ড) বলে,
-“কি হয়েছে রুশা? তুই এরকম হাপাচ্ছিস কেন?”

-“ধুর কি আর বলব! ক্লাস যে দেরিতে হবে কেউ আমায় বললই না।আর আমি এদিকে ছুটে ছুটে চলে আসলাম।সব বৃথা হয়ে গেল।”

-“না গো কিছু বৃথা হয়নি।আজ ম্যাডাম আমাদের ক্লাস নিতে পারবে না কারণ তার কিছু অসুবিধা হয়েছে।তার বদলে কে ক্লাস নেবে জানিস?”

রুশা ভাবলেশহীন ভাবে বলে,
-“না।”

-“ডক্টর রোহান।”

রোহানের নাম শুনে রুশা মনে মনে খুশি হলেও সেটা প্রকাশ করে না।ডক্টর রোহান লেডি ডক্টর থেকে নার্স,মেডিকেল স্টুডেন্ট সবার ক্রাশ।আর হবে নাই বা কেন? যেমন সুন্দর দেখতে তেমনই তার উত্তম ব্যক্তিত্ব।যে কোন মেয়ে খুব সহজেই তার প্রেমে পড়ে যাবে।তাছাড়া ডাক্তার হিসেবেও তিনি খুব ভালো।আজ অব্দি তার চিকিৎসা নিয়ে কোন রোগীই মারা যায়নি।পেশায় তিনি একজন হার্ট সার্জন।

রুশাও তাকে পছন্দ করে।কিন্তু রুশা অনেকটা চাপা স্বভাবের মেয়ে।নিজের অনুভুতিগুলো কাউকে বুঝতে দেয়না।তাই তার সব বান্ধবীরা মনে করে রুশাই একমাত্র মেয়ে ডাক্তার রোহানের উপর যার ক্রাশ নেই।

রুশা কিছুটা বিব্রত হয়ে বলে,
-“উনি তো হার্ট সার্জন।ওনার কাছে প্রতিদিন কত রোগী আসে।আমাদের ক্লাস উনি কিভাবে নেবেন?”

-“সেই কারণেই তো ক্লাস একঘন্টা দেরিতে হবে।”

রুশা মনে মনে খুব খুশি হলেও নিজের খুশি প্রকাশ করে না।
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here