#হৃদয়ের_অনুভূতি
#পর্বঃ০৬
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
* বিছানা থেকে উঠে বসে আয়ান। আচমকাই আয়ানের সামনে চলে আসে তার মা। আয়ানের মা এর চোখ বেয়ে পানি পরছে। আয়ান চমকে গিয়ে বলে…..
— মা তুমি এতো সকালে আমার রুমে…. কাঁদছো কেনো মা?…..
— আয়ান ছোট বেলা থেকে তোকে খুব আদর করে যত্ন দিয়ে বড় করেছি আমরা। তোর খুশির জন্য সব সময় আমরা তোর সব কথা শুনেছি। একটা অনুরোধ করতে এসেছিআজ যদি তুই আমাদের অনুরোধ টুকু…….
— উফফফফ, মা অনুরোধ না। আদেশ করো তুমি। তুমি যা বলবে তাই হবে।
— নেহা কে ভূলে নতুন ভাবে জীবন শুরু কর। আয়ান তোর কষ্ট আমরা কি করে সহ্য করবো? তুই আমাদের ছেলে। আমরা চাই তোর সব সময় মঙ্গল হোক……
বাঁকা হাসি দিয়ে আয়ান বলল……
— হ্যাঁ, মা নেহাকে ভূলে যাবো। কিন্তু কি করে ভূলবো? আমার হৃদয়ের সমস্ত অনুভূতিতে নেহা জড়িয়ে আছে। ওকে এই জন্মে ভূলে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
— নেহাতো চলে গেছে। ওতো নিজের জীবন ঠিক গুছিয়ে নিবে। তবে তুই কেনো ওকে ভেবে কষ্ট পাবি? নিজেকে শেষ করে ফেলবি?…
— মা আমি নিজের জীবন শেষ করে দিচ্ছি না। নিজের অপরাধ গুলো জন্য নিজেকে শাস্তি দিচ্ছি।
— আয়ান বাবা তুই এইভাবে কষ্ট পাবি তা আমরা কি করে সহ্য করবো?….
— সহ্য করতে পারছো না!?… জানো মা আমিও নেহার এই দূরে চলে যাওয়াটা সহ্য করতে পারছি না। আমার মুখে তখনই হাসি ফুটবে যখন নেহা আমার জীবনে আবার ফিরে আসবে…..
* আয়ান কথাটা বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। আয়ানের মা চুপ করে আছে। কি বলবে সে? আয়ানকে শান্তনা দেওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা উনি করেননি। আয়ান নিজের মাকে নিরব দেখে ঠোঁটের কোণে মিছক হাসি এঁকে বলল………
— হাহাহাহা মা তুমি মন খারাপ করে বসে আছো যে? আচ্ছা যাও সরি আমি আর কোনো পাগলামি করবো না। নিজের মন মতো আর কোনো কাজ করবো না। আজ থেকে অফিসে যাবো। তুমি একদম টেনশন ফ্রি থাকো।
* আয়ানের কথায় তা মা একটু শান্তি পেলো। আসলে এমন কোনো বাবা মা নেই যে নিজের সন্তানের অমঙ্গল চায়। সে সন্তান যত খারাপই হোক না কেনো। আয়ান ফ্রেশ হতে চলে যায়। আজ থেকেই অফিস জয়েন করবে সে।
— নেহা উঠে পর মা সকাল হয়ে গেছে তো….
— উমমমমম……
— আহা উঠ না।
নেহা চোখ কচলাতে কচলাতে তার মাকে বলল….
— কি হয়েছে মা? এই মাত্রই তো চোখ দুটো বন্ধ করলাম।
— এই মাত্র মানে? সারা রাত কি করেছিস তুই?…..
— জেগে ছিলাম মা। দুচোখে বিন্দুমাত্র ঘুম ছিলো না আমার…..
— এতোই যখন ভালোবাসিস আয়ানকে তা হলে দূরে চলে আসলি কেনো?
— ওর সুখের জন্য চলে এসেছি আর আমি ওকে ভালোবাসলেও আর কখনও ওকে নিজের লাইফে ফিরে পেতে চাই না…
— হুম…….
* নেহার মা চলে গেলো। কাল রাতে নেহা আয়ানের কিছু ছবি দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পরেছিলো। সেই ছবি গুলো খুঁজতে লাগলো বিছানায়। সম্পূর্ণ বিছানা ভালো করে খুঁজেও পেলোনা ছবি গুলো। নেহার মন খারাপ হয়ে গেলো। একি করে সম্ভব?… আয়ানের ছবি গুলো হঠাৎ করে উধাও হয়ে গেলো কোথায়?…. এই রুমে তো আমি ছাড়া অন্য কেউ আসে না। ছবি গুলো কোথায় যেতে পারে? এই ছবি গুলো কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা শুধু মাত্র আমি জানি। উফফফফ আল্লাহ কি কোথায় গেলো?…..
নেহার অনেক খোঁজাখুঁজির পর ও কোনো লাভ হলো না। নেহা ছবি গুলো খুঁজে না পেয়ে মন খারাপ করে বসে রইল।
— মানুষটাকে তো হারিয়েছি এখন তার ছবি গুলো। কি করে তাকে না দেখে থাকবো আমি?…
* একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নেহা ফ্রেশ হয়ে নেয়। কি করবে সে?.. হয়তো আয়ানের মতো আয়ানের ছবি গুলো তাকে ফাঁকি দিয়ে চলে গেছে। নেহা নিজের রুম থেকে চলে যায় নাস্তা করার জন্য। আজ নতুন অফিসে যাবে নেহা। নেহা খাবার টেবিলে বসতেই দেখতে পেলো আসিফকে। আসিফ নেহার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। নেহা ঐ দিকে কোনো পাত্তা দিলো না। নেহা নিজের খাবার খেতে লাগলো। হঠাৎ করেই আসিফ নেহাকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগল……
— কারো মন হারায় আর কারো ছবি!…
নেহা আসিফের কথার কোনো মানে বুঝতে পারলো না। আসিফ নেহাকে নিরব দেখে আবারও বলতে লাগলো…….
— আহহহহ কারো মনে কত আনন্দ আর কারো মনে ছবি হারানোর বেদনা…
নেহা এইবার বুঝতে পারলো আসিফের হাসির কারন। আসিফ তা হলে আয়ানের ছবি লুকিয়েছে। মনে মনে বলল নেহা। নেহা রাগি লুক নিয়ে তাকিয়ে আছে আসিফের দিকে। আসিফ একটু হেসে নেহাকে বলল……
— কিরে পাগলি এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো?..
— তো কি করবো? নাচবো আমি?…..
— হাহাহাহা হ্যাঁ, তাই কর। মনোরঞ্জন হবে একটু….
— যাস্ট শাট আপ আসিফ। আমি তোর সাথে মজা করছি না। আমি সিরিয়াস। ভালো চাইলে ছবি গুলো এখন দিয়ে দে অন্যথায়…..
— কি করবি তুই!?……
— যা তুই কখনও কল্পনাও করতে পারিস নাই তাই করবো।
নেহার কথা ও অগ্নি দৃষ্টি দেখে আসিফ ঘাবড়ে গেল। পকেট থেকে পট করে ছবি গুলো বের করে টেবিলের উপর রাখলো সে। নেহা ছু মেরে ছবি গুলো নিজের দখলে নিয়ে নিলো। সত্যিই ছবি গুলো পাবার পরে নেহার মলিন মুখে একটু শান্তির দেখা এলো। নেহাকে এমন বদলে যেতে দেখে আসিফ বলল…..
— এতোই যখন ভালোবাসিস তবে চলে এলি কেনো?
— দূরত্ব তৈরি করেছি বাধ্য হয়ে। যাতে করে আমার গুরুত্ব সে উপলব্ধি করে….
— ওহহহহ,,
✒️ নেহা নাস্তা শেষ করে অফিসে চলে আসে। নতুন অফিস। নতুন মানুষ। সব মিলিয়ে নেহা বেশ দ্বিধা দ্বন্দ্বে পরে গেলো। নিজের অজান্তেই এতো অপরিচিত মুখের মাঝে নেহা আয়ানকে খুঁজতে লাগলো। হঠাৎ করে নেহার অফিসে একজন স্টাফ এসে নেহাকে এক তোরা ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানায়। নেহা আনমনে থাকায় হঠাৎ চমকে যায় সে। নেহা তার কল্পনার জগৎ থেকে বেরিয়ে আসে। অফিসের সকলে নেহার দিকে তাকিয়ে আছে। নেহা এবার পুরো পুরি লজ্জায় পরে গেলো। নেহা মুচকি হেসে নিজের চেম্বারে চলে আসে। অসম্ভব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে তার চেম্বার। চেম্বারে আসতেই নেহার মনে আনন্দের জোয়ার বইতে লাগলো। এখান থেকে নেহাকে নিজেকে তৈরি করতে হবে। ঘুরে দাঁড়াতে হবে তাকে। নিজের দূর্বলতাকে সফলতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে…….
* আয়ান নাস্তার টেবিলে বসে তো আছে ঠিক কিন্তু তার গলা দিয়ে কোনো খাবার নামছে না। বার বার মনটা অস্থির করে উঠছে তার। অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে তার বুকের বাম পাশে। এই যন্ত্রনা বার বার মনে করিয়ে দিচ্ছে তাকে নেহার কথা। নেহার শূন্যতা তার বুকে ভিশন আঘাত করে চলেছে আজ। এই যন্ত্রনা প্রিয়জনকে হারিয়ে ফেলার জন্য তৈরি হয়েছে। খাবার টেবিলে নেহার কথা মনে পরতেই আয়ানের চোখের পাতা ভারী হয়ে গেলো। আয়ান চেয়ারের পিছনে রাখা ব্লেজারটা তুলে দ্রুত বেরিয়ে যায় খাবার রুম থেকে। আয়ান চোখের জল মুছে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে গাড়ি স্টার্ট করলো। নিজের মনকে মানাতে পারছে না সে, নেহা আর তার নেই……. আয়ান গাড়ি ড্রাইভ করতে করতে নেহাকে নিয়ে চিন্তা করতে থাকলো। নেহা চলে গেছে। কোথায় যেতে পারে ও? আচ্ছা কেমন আছে সে? হয়তো খুব ভালোই আছে। কেনো থাকবে না বলুন!… পাগলিটা আমাকে হারিয়ে নিজে জিতে গেছে। হয়তো দূর থেকে আমার অবস্থা দেখে হাসছে। আচ্ছা ও যদি আমায় ভালোবাসে তবে কি আমার কষ্টটা একটু হলেও বুঝতো না। ও জানেনা আমি ওকে ছাড়া ভালো থাকতে পারবো না। হয়তো এই জন্যই আমাকে শাস্তি দিচ্ছে সে…….
✒️ আয়ান অফিসে আসতেই সবাই নিজের চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো। আফটার অল বস বলে কথা। আয়ান মাথাটা নিচু করে ডান হাত দিয়ে ইশারা করে সবাইকে বসতে বলল। আয়ানের কাছে এই অফিস নতুন না। আয়ান নিজের চেম্বারে গিয়ে বসলো। মন খারাপ দূর করে কাজে মন দিতে হবে। আয়ান একটু ড্রিংক্স করে নিলো। দিন দিন ড্রিংক্স করাটা তার অভ্যেসে পরিনত হচ্ছে। আয়ান ড্রিংক্স করার সময় হঠাৎ করেই কেউ একজন না করলো দরজায়। আয়ান দরজার দিকে তাকিয়ে একটু অবাক হয়ে যায়। নিজের চোখকে বিশ্বাস হচ্ছে না তার। একি দেখছে সে?…………….
#চলবে…………..