হৃদয়ের অনুভূতি পর্ব -০৫

#হৃদয়ের_অনুভূতি
#পর্বঃ০৫
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ

আয়ান দেখতে পায় নেহার বাসার গেটে তালা ঝুলছে। আয়ান ভিশন কৌতুহল নিয়ে দারোয়ান চাচাকে জ্বিগাসা করলো…….

— চাচা এখানে তালা দেওয়া কেনো?….

— ওহহ, ওনারা চলে গেছে এখান থেকে।

দারোয়ান চাচার কথাটা সোজা আয়ানের বুকে গিয়ে বিধলো। আয়ান দারোয়ান চাচাকে আবারও জ্বিগাসা করলো……

— চাচা কোথায় গিয়েছে?… বা কবে ফিরবে নেহারা?… কিছু কি জানেন?

— না বাবা ঐ সব জানি না। খালি হুনছি অনেক দূরে চইলা গেছে। আর ফিরবো না….

কথাটা শোনামাত্র আয়ান চিৎকার করে উঠলো। দারোয়ানের কলার ধরে চেঁচিয়ে বলল…..

— ফিরবে না মানে!…. কে বলছে ফিরবে না? এই রাজ দেখ এই চাচা কি সব উল্টা পাল্টা বলছে। নেহা আমায় ছেড়ে কোথাও যেতে পারে না। আমি ওকে কোথাও যেতে দিবো না……

— কলার ছাড়ো মিয়া। আমি উল্টা পাল্টা কিছু কই নাই। সিয়াম স্যার আমারে যা কইছে আমি তোমারে তাই কইছি……

রাজ আয়ানের পরিস্থিতি ভালোই আচ করতে পারছে। রাজ জানে আয়ান এখন নিজের কন্ট্রলে নেই। রাজ দৌড়ে এসে আয়ানকে সরিয়ে নেয় দারোয়ান চাচার কাছ থেকে। রাজ আয়ানকে চেঁচিয়ে বলে……

— কি করছিস আয়ান? আর ইউ ম্যাড?…. ওনার কলার চেপে ধরেছিস কেনো? উনি তোর বাবার বয়সি।

— ওহহহহ, সরি। আসলে এই সব কথা শোনার পরে…. চাচা আমাকে মাফ করবেন। আসলে আমার মাথাটা ঠিক নেই। প্লিজ চাচা ক্ষমা করবেন আমায়…..

— আয়ান চল বাসায় চল।

— আমি কেনো বাসায় যাবো? নেহার সাথে দেখা করার জন্য এসেছি। আমি ওর সাথে দেখা না করে যাবো না। তুই জানিস না। ভিশন অভিমানী মেয়ে হলো নেহা। ও আসবে দেখিস একটু পরেই চলে আসবে….

— হ্যাঁ, চলে আসবে তো। আগে তুই বাসায় চল তারপর ও চলে আসবে…..

— আমাকে পাগল মনে হয় তোর? ও আমার বাসায় কখনও আসবে না। এখানেই অপেক্ষা করি আমি। ও ফিরে আসলে কথা বলে যাবো।

— আয়ান পাগলামি করিস না। নেহা তোকে ছেড়ে চলে গেছে। আর কখনও ফিরবে না। বুঝতে পেরেছিস তুই!… আয়ান, নেহা তোর জীবন থেকে চলে গেছে। বোঝার চেষ্টা কর প্লিজ…..

— চলে গেছে?…..

* আয়ান নিশ্চুপ হয়ে তাকিয়ে আছে নেহার বাড়ির দিকে। কোনো কথা বলছে না সে। নেহা চলে গেছে তা জানার পরেও আয়ান চুপ। আয়ানের অস্বাভাবিক ব্যবহার দেখে রাজ একটু বিচলিত হয়ে পরে। ” আমরা প্রায় অনেকেই হয়তো কোনো না কোনো সময় আমাদের প্রিয়জনকে হারিয়েছি। সো প্রিয়জনে হারানো কতটা কষ্ট কর তা কি প্রকাশ করার অপেক্ষা রাখে”?…… . কিছু কষ্ট এমন হয় যে তা প্রকাশ করা যায় না। আর না যায় সহ্য করা। রাজ আয়ানের বাহু ধরতেই আয়ান এক ঝটকায় রাজের থেকে দূরে সরে আসে……

— শোন রাজ আমি ভালোবাসায় হেরেছি। জীবন যুদ্ধে নয়। আমি নিজেকে সামলে নিতে পারবো।

* আয়ান রাজকে রেখে নিজে একাই বাইক নিয়ে বেরিয়ে যায় নেহার বাড়ির সামনে থেকে। রাজ জোর করেছিলো তার সঙ্গে যাওয়ার জন্য কিন্তু আয়ান রাজি হয়নি। মিনিট দশেক পর আয়ান নিজের বাসার সামনে চলে আসে। ফর্সা উজ্জ্বল চেহারাটা লাল হয়ে আছে আয়ানের। সচরাচর এমন হয় না তার। তবে খুব বেশি রেগে গেলে এমন হয়। আয়ান নিজের রুমে এসে ফ্রিজ থেকে কয়েকটা এ্যালকাহলের বোতল বের করে নিলো। ব্যল্কনির দিকে গিয়ে বসলো সে। আকাশটা মেঘলা হলেও বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। আয়ান আনমনে নেহার কথা গুলো কল্পনা করতে লাগলো আর ড্রিংক করতে থাকলো।

✒️ বাসা থেকে বেরিয়ে এয়ার পোর্টে চলে আসি আমি। নিজের অজান্তেই চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে আমার। ভিশন রকম কষ্ট হচ্ছে আয়ানের কথা ভেবে। ওকে ভূলে কি করে থাকবো আমি?…. বার বার ওর বলা প্রতিটি কথা মনে পরছে আমার। ওকে একটা বার দেখতে খুব ইচ্ছে করছে আমার। ওর সাথে একটু কথা বলার তৃষ্ণায় কাতর আমি। হায়রে ভালোবাসা। না দেয় ভালো থাকতে আর না দেয় ভূলে থাকতে….
এয়ার পোর্টের ফরমালেটিস গুলো পূরন করে আমি বিমানে বসলাম। এই দেশ ছেড়ে যাওয়ার কষ্টের থেকে হাজার গুণ বেশি কষ্ট হচ্ছে এই ভেবে যে আর কখনও আয়ানকে দেখতে পাবো না আমি। আর কখনও ওর চোখে ভালোবাসা খুঁজতে পারবো না। আয়ান হয়তো নিজের জীবন সাজিয়ে নিবে নতুন করে। হ্যাঁ, ও পারবে কিন্তু আমি পারবো না। আমি না হয় ওর ভালোবাসার অনুভূতি গুলো আগলে রেখে বাকিটা জীবন কাটিয়ে দিব। শুধু বিধাতার কাছে এই টুকুই চাওয়া ” সে যেনো আয়ানকে ভালো রাখে “….. আজ চিৎকার করে বলে দিতে ইচ্ছে করছে, জানিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে এই পৃথিবীকে। আয়ান তোমাকে আমি ভালোবাসি। হ্যাঁ, তোমার থেকেও বেশি ভালোবাসি। ওকে না বলা কথা গুলো সহ্য রকম কষ্ট দিচ্ছে আমার হৃদয়কে। তাকে ঘিরে আমার হৃদয়ের অনুভূতি সারা জীবন এমনই থাকবে…….

* বিমানে বসার পনের মিনিট পর আমাদের প্লেন টেক অফ করলো। আমি জানার পাশের একটা সিটে বসে আছি। বাবা মা আমার বাম পাশে। জানালার ওপারে তাকিয়ে নিজের চোখের জল ফেলা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। আয়ান যদি সত্যিই আমায় ভালোবাসতো তবে আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে যেতো না। অন্য কোনো মেয়ের সাথে শারীরিক সম্পর্ক জড়াতো না। আমাদের সম্পর্কের মাঝে কখনও দূরত্ব তৈরি হতো না। আজ আমাকে এভাবে কাঁদতে হতো না….

* নেহা কথা গুলো ভাবতেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চোখ মুছে ফেলল। নতুন শহরে নতুন করে বাঁচতে হবে তাকে। আর কাউকে প্রয়োজন নেই তার। ঐ দিকে আয়ান মরণ নেশায় মেতে উঠেছে। একের পর এক ড্রিংক্স নিচ্ছে সে। ড্রিংক করা শেষ। আয়ানের চোখ থেকে এমনি এমনি পানি পরছে। আয়ান ব্যক্লনি থেকে সোজা ছাদে চলে আসে। পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করলো সে। একটা সিগারেট ধরিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে সে। আজ সারাদিন মেঘলা আকাশ ছিলো কিন্তু এখন সব মেঘ সরে গেছে। আকাশ ভরা তারা গুলো টিপটিপ করে জ্বলচ্ছে। আয়ান ও তারা গুলোর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো খানেকক্ষন। পরিবেশটা নিরব। সকল নিরবতা ভেঙ্গে আয়ান চিৎকার করে বলতে লাগলো……….

— নেহা তুই একটা বেইমান মেয়ে। একা ফেলে ছেড়ে চলে গেলি তো তুই। আজ আমি হেরে গেছি তোর কাছে। দিব্বি জিতে গেছিস তুই। তোকে আর কখনও পাবো না আমি। আরে তুই তো আমায় ভালোবাসিস জানি আমি। কি করে পারলি আমাকে একা করে চলে যেতে?…. এতো অভিমান তোর!… আমি ভূল করেছি। হ্যাঁ, তোর ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে আমি ভূল করেছি। আচ্ছা বল কি করতাম আমি? রিহানের হতে দিতাম তোকে? তুই জানিস না আমি তোর পাশে কাউকে সহ্য করতে পারি না। তাই তো তোকে কষ্ট দিতে, রিহানের থেকে আলাদা করতেই আমি এমনটা করেছি। নেহা প্রিয়জন পাবি তুই কিন্তু আমায় মতো একটা মানুষ পাবি না….. আমি অপরাধ করেছি হ্যাঁ তাই বলে ছেড়ে চলে যাবি? একটা সুযোগ তো দিতে পারতি আমায়!… বিশ্বাস কর তোর সব অভিযোগ, অভিমান আমি ভূলিয়ে দিতাম……

* আয়ান কথা গুলো বলতে গিয়ে বার বার নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছে। “কিছু মানুষ আমাদের জীবনে শুধু প্রিয় হয়ে থাকে না। তারা ধিরে ধিরে অভ্যাস পরিনত হয়। আর কখনও যদি সেই মানুষটি আমাদের ছেড়ে চলে যায় তবে তার শূন্যতা খুব মারাত্মক ভাবে অনুভব হয়। এটাই সত্যি”……….

✒️ নেহা তার স্বপ্ন পূরণের পথে আরো এক ধাপ এগিয়ে গেলো। নেহা চলে আসে আমেরিকায়। প্লেন থেকে নেমে নতুন শহর নেহাকে ভাবিয়ে তুলেছে। এই শহরের মতোই এখানকার মানুষজন। নেহা এয়ার পোর্ট থেকে নিজের নতুন বাসায় চলে আসে। বাসায় আসতেই নেহা দেখতে পেলো তার চাচাতো ভাই আসিফকে। আসিফের সাথে তার দেখা হয়েছিল সেই ছোট্টবেলায়। আসিফের সাথে বলতে গেলে নেহা একদম ফ্রি। আসিফ ও নেহাকে অনেক বছর পরে দেখতে পেলো। আসিফ নেহাকে দেখতে পেয়ে খুব খুশি হয়েছে। আসিফ নেহাকে রাগানোর জন্য বলে……….

— বাংলাদেশ থেকে কি সব ছোট লোক গুলারে বের করে দিচ্ছে নাকি?…. না মানে তুই হঠাৎ বলা নেই কওয়া নেই এখানে চলে এলি তাই জ্বিগাসা করলাম……

আসিফ ভেবেছে নেহা তার কথাতে সব সময়ের মতো রেগে যাবে। অনেক কথা শোনাবে তাকে। কিন্তু আসিফকে অবাক করে দিলো নেহা। নেহা আসিফকে সরাসরি বলে দিলো…….

— দেখ ভাই আমার মন ভালো নেই। দয়া করে ফাজলামি করিস না প্লিজ!….

— এই নেহা কি হয়েছে তোর?…. এতো বছর পরে আমাদের দেখা হলো আর তুই কিনা মুড অফ করে আছিস!….

— এতো বছর পরে দেখা হলে বুঝি আনন্দে আত্মহারা হয়ে যেতে হয়!?…..

— না আমি সেটা বলতে……..

— আমার রুমটা কোন দিকে?…

— এইতো সিরি দিয়ে সোজা উঠে যা। বা দিকে তোর রুম

— ধন্যবাদ…..

* নেহা ব্যাগ নিয়ে তার রুমের দিকে চলে যায়। নেহার আচরন অনেক বদলে গেছে। সব সময় হাসি খুশিতে মেতে থাকা মেয়েটার মুখে বিন্দুমাত্র হাসি নেই। নেহাকে দেখে মনে হচ্ছে অনেক চিন্তা ভর করে আছে তার উপর। আসিফ নেহার বাবা মিস্টার সিয়াম সাহেবকে বলতে লাগলো…….

— আংকেল নেহার কি হয়েছে? ও তো কখনও এমন করে নাই। অনেকটা বদলে গেছে নেহা। কি হয়েছে?……

আসিফকে প্রথমে না করে দেয় নেহার বাবা। কিন্তু আসিফের জোরে উনি সবটা বলে দিতে বাধ্য হয়। আসিফ সবটা শোনার পর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে……

— এই সময় নেহার পাশে আমাদের থাকা উচিৎ। ওকে একদম ওর ইচ্ছে মতো থাকতে দেওয়া উচিৎ। সময়ের সাথে সাথে নেহাও মানিয়ে নিতে পারবে। তাছাড়া যদি ওকে ব্যস্ত রাখা যায় তবে আয়ানের কথা ওর আর মনে পরবে না….

— হুম, সেই জন্য ভাবছি এখানে একটা বিজনেস শুরু করবো। নেহা যদি ধিরে ধিরে বিজনেসে সাহায্য করতে থাকে তবে ও ওর অতিত গুলো ভূলে পারবে।

— ঠিক বলেছেন আংকেল। আমি সব ব্যবস্থা করছি…….

✒️ আয়ান ছাদের উপর পরে আছে। প্রচুর নেশা করেছে আজ। আয়ানকে রুমে না দেখতে পেয়ে পুরো বাড়িটা তন্ন তন্ন করে খুঁজে চলেছে তার বাবা। অবশেষে ছাদে এসে তারা খুঁজে পেলো আয়ানকে। ছাদের এক কোনায় পরে আছে সে। আয়ানের বাবা মা দৌড়ে চলে আসে তার কাছে। নিজের ছেলেকে এমন অবস্থায় দেখবে তারা কখনও কল্পনাও করেনি। আয়ানের বাবা আয়ানকে ডেকে তুললো………

— আয়ান বাবা উঠ। কি হয়েছে তোর? এই সব কি করেছিস তুই?

— নেহা, বাবা নেহাকে আমি কষ্ট দিয়েছি। ও সেই জন্য আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। আমি নিজেকে শাস্তি দিচ্ছি। নিজের ভূলের জন্য নিজেকে আঘাত করছি…..

* আয়ান কথা বলার মাঝে বার বার ইমোশনাল হয়ে পরছে। একটু পর আয়ানকে ধরে নিয়ে যাওয়া হলো তার রুমে। আয়ানকে বিছানায় শুয়িয়ে দিয়ে তার বাবা মা নিজেদের রুমে চলে গেলো। তারা নিজেদের ছেলেকে এতোটা কষ্টের মধ্যে দেখতে চায় না। তাই নেহাকে এনে তার ছেলের মুখে হাসি দেখতে চায় তারা। যেমন করে ছোট্ট বেলায় আয়ানের সব আবদার তারা পূরণ করে এসেছে। ঠিক তেমন করেই। কিন্তু কি করে নেহাকে আনবে তারা? নেহা যে আর তাদের নাগালে নেই। আয়ান বরাবরই তার বাবা মা এর আদরের ছেলে ছিলো। সব সময় আয়ানের আবদার গুলো পূরণ করেছে তারা। কিন্তু আজ কোনো ভাবেই তারা তাদের সন্তানের আবদার পূরণ করতে পারবে না। তাদের সন্তানের ভালো থাকাটা হয়তো আর কখনও তাদের দেখা হবে না।

* সকাল হতেই আয়ানের ঘুম ভেঙ্গে যায়। বিছানা থেকে উঠে বসে আয়ান। আচমকাই আয়ানের…………..

#চলবে…………….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here