হৃদয়ের অনুভূতি পর্ব -০৯ ও শেষ পর্ব

#হৃদয়ের_অনুভূতি
#পর্বঃ০৯/অন্তিম_পর্ব
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ

* আমি দেখতে পেলাম কেবিনে শুয়ে আছে মুশফিয়া। আমি একটু অবাক হলাম। কেবিনে ঢুকে মুশফিয়ার কাছে যেতেই মুশফিয়া আমায় দেখতে পেলো। সঙ্গে সঙ্গে কাঁন্না করে ফেলল মেয়েটা……..

— এই পাগলি কাঁদছিস কেনো? আরে বোকা মেয়ে কাচ্ছু হবে না। ভয় পাচ্ছিস কেনো? আয়ান তোর পাশে আছে সো ভয় পাওয়ার কোনো কারন নেই। ওকে!……

— আয়ান সরি আসলে আমার তো কেউ আপন বলতে নেই। তাই তোকে বিরক্ত করলাম……

— মুশফিয়া!…. এটা কেমন কথা বলছিস তুই? আচ্ছা আমি তোর বন্ধু কি না বলতো!?… তোর এই সময় পাশে আমি ছাড়া কে দাঁড়াবে হুমমমম?…….

— হুম……..

— একদম ভয় পাবি না। মনে সাহস রাখ। সব ঠিক হয়ে যাবে।

* আমার কথা গুলো আমি বলে যাচ্ছি কিন্তু মুশফিয়া আমার দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে। ওর চোখে স্পষ্ট ভয় দেখা যাচ্ছে। ভয়ের কারনে আমার হাত জোড়া চেপে ধরে আছে সে। সত্যিই একজন নারী কতটা মহান হতে পারে!…. তাই না। নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে আমাদের এই পৃথিবীতে নিয়ে আসে। একজন নারী জানে যে ডেলিভারি হওয়ার সময় তার মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তবুও সে মা হতে চায়। কতটা যন্ত্রণা সহ্য করার ক্ষমতা একজন নারী রাখে। তারপরও দিন শেষে একজন নারীকে হতে হয় অবহেলিত। বয়স হলে সন্তান সেই মাকে রেখে আসে বৃদ্ধাশ্রমে। যেই সন্তানের জন্য তার এতো ত্যাগ। একজন নারী দিন শেষে অবহেলিত হয় তার স্বামীর কাছে। একজন নারী দিন শেষে অবহেলিত হয় তার সন্তানের কাছে। সত্যি লজ্জা পাওয়া উচিৎ ঐ সকল মানুষদের যারা নারীকে সম্মান করতে জানেনা। যেখানে আল্লাহ বলেছেন মা এর পায়ের নিচে সন্তানের বেহেস্ত। তবুও কিছু সন্তান সেই বেহেস্তকে অবহেলা করে। লজ্জা পাওয়া উচিৎ তাদের……

* কিছু সময় যেতেই ডক্টর এসে আয়ানকে বাহিরে যেতে বলে। আয়ান মুশফিয়াকে যত সাহস দিক না কেনো মুশফিয়া এখনও ভয় পাচ্ছে। আয়ান মুশফিয়ার কপালে হাত রেখে বলল……

— মুশফিয়া শোন ভয়ের কিছু নেই। আমি বাহিরে অপেক্ষা করছি। একটু পরেই তুই মা হয়ে যাবি। আমি এখানেই আছি ভয় পাবার কিছু নেই। তুই ডাকলেই আমি চলে আসবো। ঠিক আছে?…..

— আয়ান প্লিজ তুই যাসনা প্লিজ। আমার মনে হয় আমি বাঁচবো না। তুই প্লিজ……

— ধূর পাগলি কি সব আজেবাজে কথা বলেছিস তুই?….. আমি বাহিরে অপেক্ষা করছি তোদের জন্য। তোকে ফিরতেই হবে মুশফিয়া। একদম ভয় পাবি না তুই। আমি আয়ান তোর পাশে আছি……

✒️ মুশফিয়ার চোখ মুছিয়ে দিয়ে আমি বাহিরে অপেক্ষা করতে থাকি। আর প্রার্থনা করছি মুশফিয়ার যেনো কোনো বিপদ না হয়।”আল্লাহ জীবনে অনেক পাপ করেছি আমি। যদি কখনও কোনো ভালো কাজ করে থাকি তো….. মুশফিয়ার কোনো খারাপ তুমি করো না আল্লাহ। মেয়েটা সব হারিয়েছে। এখন তো একটু সুখ ওর পাবার কথা……….

— ঘন্টা খানেক যেতেই ডক্টার এসে আমায় জানালো মুশফিয়ার মেয়ে বাবু হয়েছে। আর মুশফিয়া একদম সুস্থ আছে। একটা প্রশান্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। দৌড়ে চলে গেলাম মুশফিয়ার কাছে। মুশফিয়া চোখ বন্ধ করে আছে। হয়তো ঘুমাচ্ছে। আমি ওর মেয়েকে কোলে তুলে নিলাম। দেখতে একদম ওর মতোই হয়েছে। আমার উপস্থিতিতে মুশফিয়া চোখ মেলে তাকালো। আমি মুশফিয়াকে উদ্দেশ্য করে বললাম…………

— কিরে তোর মেয়েকে দেখেছিস? একদম তোর মতো ফাজিল হয়েছে…..

— হুম…….

— এখন কেমন আছিস তুই? সব কিছু ঠিক তো!?……

— হুম, কিন্তু দূর্বল লাগছে খুব।

— তাতো লাগবেই। শোন এখন একদম রেস্ট করবি তুই। আমি গিয়ে মেডিসিন নিয়ে আসি আর শোন এখান‌ থেকে বেরিয়ে সোজা আমার বাসায় যাবো। ওখানেই থাকবি তুই। আমি মা বাবাকে সব বলেছি। ওকে!……

— আয়ান এদিকে আয়…..

— হুম বল…..

— ভয় পেয়েছিলি তুই? সত্যি করে বলবি…..

— না, আমি কেনো ভয় পেতে যাবো? আল্লাহ আছে ওকে!…. উনি সব ঠিক করে দিবে

— হুমম…….

✒️ মুশফিয়াকে রেখে আমি মেডিসিন আনতে চলে যাই। মেডিসিন ও হসপিটালের ফর্মালেটিস গুলো শেষ করে আমরা বাড়িতে চলে আসি……

প্রতিদিন অফিস আর বাড়ি এই দুই এর মধ্যে কাটছিলো আমায় জীবন। মাঝখানে এসে আরও একটা মানুষ এড হলো আমার জীবনে। সে হলো আমার কিউট আম্মুটা মুন। মুন হলো মুশফিয়ার মেয়ে বাট এখন আমার মেয়ে। মুনকে ছাড়া আমি যেমন থাকতে পারিনা ঠিক তেমনি মুন ও আমায় ছাড়া থাকতে পারে না। পাপ্পা বলে ডাকে আমায়। কিন্তু এতো সবের ভিতর ও আমি নেহাকে ভূলতে পারিনি। অনেক সুযোগ আসার পরেও নিজের জীবনকে আরও একটা সুযোগ আমি দেইনি। নেহার শূন্যতা আমায় ভিশন রকম কষ্ট দেয় আজও। দেখতে দেখতে কেটে যায় দুইটি বছর। এই দুবছরের মধ্যে একটা মিনিটের জন্য ও নেহা আমার কোনো খোঁজ নেয়নি। দু’বছর একটা মানুষের সাথে কথা না হবার পরেও হৃদয়টা জুরে তার বসবাস। অনেকে বলে দূরত্বের জন্য নাকি সম্পর্ক শেষ হয়ে যায়। তাদের কাছে আমার প্রশ্ন সত্যিই কারের ভালোবাসা কি দূরত্বে সিমাবদ্ধ?…..

———————- দু’বছর পর ———————

— পাপ্পা আমরা কোথায় যাচ্ছি?…..

— আমরা আমেরিকায় যাচ্ছি আম্মু।

— পাপ্পা ওখানে কি আমরা সব সময়ের জন্য থাকবো?…..

— হাহাহাহা হুম, কেনো আম্মু এখানে থাকলে তোমার কোনো প্রবলেম আছে?……

— না, কিন্তু ওখানে আমি একা থাকবো কি করে? আফিফকে সাথে আনলে থাকতে পারতাম…..

— কিহহহ?…. দেখ মুশফিয়া তোর মেয়ে এই বয়সেই পেকে গেছে।

— এই সব তোর আদরের জন্য হয়েছে। ওকে শাসন করলে এতো ফাজিল হতো না……

— হুমম,,, আচ্ছা আম্মু তুমি ভিডিও গেম খেলো। আমি একটু কাজ করি কেমন…..

— ঠিক আছে পাপ্পা…….

* আয়ান অফিস মিটিং এর সকল ডকুমেন্ট চেক করছে। আয়ানের লাইফের সব থেকে বেশি ইম্পটেন্ট মিটিং। কোনো মূল্যেই ভূল করা যাবে না। আয়ান ফাইল গুলো দেখছে এমন সময় মুশফিয়া বলল…….

— আয়ান আমি অনেকবার চেক করেছি…..

— হ্যাঁ, তো!……..

— আমি যখন চেক করেছি তখন আবারও চেক করতে হবে কেনো?….

— কারন আমি চাইনা একটা ছোট্ট ভূলে আমি হেরে যাই।

— আচ্ছা আয়ান মানুষ কি সব সময় জিততে পারে? কখনও কি হারতে পারে না?

— হুম হারে তো। আমি ভালোবাসায় হেরে গেছি। আর কখনও চাই না হারতে। লাইফের সব স্টেজে আমি জিতে এসেছি। আর যেখানে হেরে যাওয়ার ভয় থাকে, ওখান থেকে দূরে থাকি আমি‌…….

— হুম…….

* নির্দিষ্ট সময় শেষে আমরা আমেরিকায় পৌঁছে যাই। এয়ার পোর্ট থেকে চলে আসি হোটেলে। কাল সকালে মিটিং। অনেক বড় বড় কম্পানির বসরা আসবে। ওদের মধ্যে আমি থাকবো। একটু নার্ভাস লাগছে আমার……….

✒️ সকাল হতেই ফ্রেশ হয়ে নিলাম। রাতে একটুও ঘুমাতে পারিনি। আসলে এই হলো আমার সমস্যা। বিছানা পরিবর্তন হলে ঘুম আসে না আমার। উফফফফ আল্লাহ জানে মুশফিয়া কি করছে?……. আয়ান নিজের রুম থেকে বেরিয়ে মুশফিয়ার রুমের সামনে গিয়ে নক করে। অনেক সময় অপেক্ষা করার পরেও দরজা খুলছে না কেউ। আয়ান মুশফিয়ার নাম্বারে কল করতেই……..

— হ্যালো…….

— ঘুমাচ্ছিস তুই?

— আরে না। কাল রাতে……

— চুপ। দুমিনিট পর আমি বেরিয়ে যাবো। যদি যাওয়ার হয়!…. তা হলে তোর হাতে দুমিনিট আছে……

— আয়ান……..

* আয়ান লাইনটা কেটে দিলো। এই মুশফিয়ার বিন্দুমাত্র রিসপন্সেবেলিটি নেই। মানে এতো বড় একটা ইভেন্ট সেখানে লেট!…. আমি বাবা কারো জন্য সিডিউল লস করবো না। চলে যাবো আমি……

দশ মিনিট পর মুশফিয়া নিচে এলো। আয়ান রাগ করলেও কিছু বলল না। আয়ান মুনকে নিজের পাশের সিটে বসিয়ে গাড়ি স্টার্ট করলো। মিনিট খানেক পর আয়ান পৌঁছে যায় অফিসে। আজ এই অফিসেই মিটিং। আয়ান মুশফিয়া ও মুনকে নামিয়ে দিলো অফিসের সামনে। পার্কিং এরিয়ায় গাড়ি পার্ক করে আয়ান অফিসে ঢুকলো। মুশফিয়া ও মুন আয়ানের পাশে। আয়ান সোজা বোর্ড মিটিং হলে চলে আসে। এখনও মিটিং স্টার্ট হয় নাই। মুশফিয়া আয়ানের দিকে রাগি লুক নিয়ে তাকিয়ে আছে। আয়ান হলের পাশে একটা টুলে মুনকে কোলে নিয়ে বসে পরলো। মুশফিয়া চিৎকার করে বলল…..

— ঐ এখন বসে আছিস কেনো? শুরু কর মিটিং…. জত্তসব …..

— আরে রেগে যাচ্ছিস কেনো? আমি সত্যিই লেট করা পছন্দ করি না। তাই আর কি……..

— তোর এই পছন্দ/অপছন্দের জন্য আমি সকালের নাস্তা করতে পারলাম না…….

— থাক কাঁদিস না। মিটিং শেষ করে তোকে…….

আয়ানের কথা শেষ করার আগেই একটা পিচ্চি ছেলে তার সামনে দিয়ে দৌড়ে চলে গেলো। আয়ানের থেকে একটু এগোতেই হোঁচট খেয়ে পড়ে যায় ছেলেটা। আয়ান বসা থেকে আচমকাই উঠে দাঁড়ালো। দৌড়ে ছেলেটাকে ফ্লোর থেকে কোলে তুলে নিলো সে। পিচ্চি ছেলেটা কাঁন্না করছে। আয়ান তাকে কিস করে বলতে লাগলো…….

— কাঁদে না বাবা। এই নাও তোমার জন্য চকলেট কিনে এনেছি। প্লিজ কাঁন্না করিও না……

আয়ানের কোলে ছেলেটা আসতেই চুপ হয়ে গেলো। আয়ানের মনের মধ্যে এক অদ্ভুত আনন্দ হতে লাগলো। যেমনটা হয় নিজের মানুষ গুলোকে বুকে নিলে। আয়ান বাচ্চাটাকে কোলে তুলে আদর করছে। ঠিক এমন সময় আয়ানের পিছন থেকে একজন মেয়ে বলল……..

— নিয়ান বাবা…….

আয়ান মেয়েটার কন্ঠ শুনে অবাক হয়ে গেলো। পিছন ফিরতেই আয়ান চমকে গেলো। পাথরের মতো থ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আয়ান। এ কাকে দেখছে সে? নেহা এখানে!……. আয়ানের কোলে নেহা তার সন্তানকে দেখে অবাক হয়ে যায়। তার থেকেও বেশি অবাক হয় আয়ানকে দেখে। দুজন দুজনের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। নিজের অজান্তেই নেহার চোখ বেয়ে নোনা জল গড়িয়ে পড়ছে। এতো বছর পর প্রিয় মানুষের দেখা পাওয়া অসম্ভব ছিলো। ভালোবাসার মানুষকে দেখে নেহা নিজেকে সামলাতে পারেনি। আয়ানের চোখ জোড়া লাল হয়ে গেছে। একটু পরেই হয়তো বৃষ্টি ঝরবে। আয়ান নিয়ান কে কোল থেকে নামিয়ে বলল……

— তততুমি!……….

* নেহা চুপ করে কাঁন্না করছে। কথায় আছে না যখন মুখের ভাষা হারিয়ে যায়, তখন চোখের জল কথা বলে। ঠিক তেমনটাই হয়েছে নেহার সাথে। আয়ান নেহার দিকে দু পা এগোতেই নেহা দৌড়ে এসে জরিয়ে ধরে তাকে। প্রচুর পরিমাণে কান্না করছে নেহা। আজ তার চোখের জল বাঁধ মানছে না। আয়ানের চোখ বেয়ে জল পরছে। অফিসের সকলে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে। কেউই বুঝতে পারছে না আসল ঘটনা কি?….. কিছু সময় পরে আয়ান নেহার বাহু চেপে ধরে চিৎকার করে বলতে লাগলো……….

— কাঁদছো কেনো?……. এটাই তো চেয়েছিলে তুমি। আমায় কষ্ট দিতে। নেহা একটা বার আমায় বিশ্বাস করতে পারতে তুমি। সব কথা আমায় বলতে পারতে। কিন্তু না তুমি রোজার কথা বিশ্বাস করে আমায় অবহেলা করতে শুরু করো। তোমার অবহেলা আমাকে কতটা কষ্ট দিয়েছে তা কখনোই প্রকাশ করা যাবে না। তুমি রিয়ানকে বিয়ে করতে চেয়েছো। সহ্য করতে পারিনি। ওর থেকে তোমাকে আলাদা করার জন্য তোমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে যাই। কি লাভ হলো?….. সেই তো নিষ্ঠুরের মতো চলে গেলে আমায় ছেড়ে। নতুন করে জীবন সাজিয়ে নিয়েছো তুমি। কিন্তু আমি পারিনি নতুন করে বাঁচতে………

— নতুন করে জীবন সাজিয়ে নিয়েছি মানে?….. আয়ান আমি নতুন করে নিজেকে কোনো সুযোগ দেইনি। নিয়ান আমাদের সন্তান। নিয়ানকে পৃথিবীর আলো দেখতে কতটা কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে জানো তুমি? আমি সবার বিরুদ্ধে গিয়েছি। এই বছর গুলোর এমন কোনো দিন ছিলো না যে দিন আমি তোমার কথা মনে করিনি। আর ২য় বার কাউকে সুযোগ দিতে আমি রাজি নই।

— কেনো দিতে রাজি না তুমি? আমি ভূল করেছি। তাই বলে কি তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যাবে? একটা সুযোগ কি আমায় দেওয়া উচিৎ নয়?….. একটা বার ক্ষমা করে দিতে কি পারো না তুমি?…….

— আমার একটা সম্মান আছে আয়ান। তুমি আমার সম্মান নিয়ে খেলেছো। ছোট করেছো আমায় এই সমাজের কাছে……..

— আমি তো চাইনি তোমায় ছোট করতে। বরং তুমি আমায় বাধ্য করেছো। কি করতাম আমি? তোমার এই ভূল বোঝাবুঝির জন্য অন্যের হয়ে যেতে দিতাম?……. পারতে তুমি রিয়ানের সাথে সুখে থাকতে? এটা তুমিও জানো আর আমিও জানি……..

নেহা চুপ করে আছে। আয়ান নিয়ানকে কোলে তুলে নিয়ে নেহাকে বলতে লাগলো………

— চলো সব ভূলে নতুন করে শুরু করি। আমার কথা বাদ দাও নিয়ানের কথা চিন্তা করো। প্লিজ একটু ক্ষমা করে দাও আমায়। একটা সুযোগ দাও

— যদি না দেই!……

— যদি না দাও তো!…… আমি ঐ কাজটাই আবার করবো যা সব সময় আমি করি।

— মমানে?….. কি করবে?……..

— বেশি কিছু না এইবার জোর করে বিয়ে করবো তোমায় আর শিকল দিয়ে বেঁধে রাখবো নিজের সাথে। আর হারিয়ে যেতে দিবো না তোমায়। এই বছর গুলো কতটা কষ্ট পেয়েছি আমি প্রতিটা মূহুর্তের কষ্ট গুলো আমার করা অপরাধ গুলো শাস্তি আমায় দিয়ে দিয়েছে। আর কষ্ট পেতে চাই না আমি।

নেহা আর আয়ানের কথার মাঝে মুশফিয়া চলে আসে। মুশফিয়া নেহাকে বলল…..

— দেখো নেহা আর কোনো কষ্ট আয়ানকে দিও না। একটা বার ক্ষমা করে দাও। প্রত্যেকটা মানুষের একটা সুযোগ পাওয়া উচিৎ। আয়ান তা করেছে তার ক্ষমা হয় না। তবে তুমি ওকে ভালোবাসো। ভালো যখন বাসো তবে একটা সুযোগ দাও ওকে। ভালোবাসার অপর নাম ক্ষমা করে দেয়া……

— হুম……..

✒️ আয়ান নেহার দিকে তাকিয়ে আছে। নেহা মাথা নিচু করে আছে। হয়তোবা আয়ানের দিকে তাকাতে একটু লজ্জা পাচ্ছে। আয়ানের ঠোঁটের কোণে এই কয়েক বছরে প্রথম হাসি উঁকি দিলো। আয়ান নেহাকে বলল……

— তো মিসেস নেহা চৌধুরী। আপনি কি আমায় ক্ষমা করে দিয়েছেন?…..

— জ্বি না। আগে মিস্টার আমায় ক্ষমা করুন তারপর……

— ধূর পাগলি তুমি তো কোনো ভূল করতেই পারো না। ক্ষমা করবো কি করে?……

— জ্বি, সব ভূল আপনি করেছেন।

— হুম…..

— তো যাওয়া যাক!……

— অবশ্যই বেপ্পি………

* অবশেষে ভূল বোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে আয়ান আর নেহা তাদের জীবনকে একটা সুযোগ দিলো। বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হলো দুজন। বিশ্বাস, সম্মান, অভিমান এই সবের মধ্যে ভালোবাসা সিমাবদ্ধ নয়। ভালোবাসা ভালো থাকতে শিখায়। ভালোবাসা ক্ষমা করে দিতে শেখায়। আমি কখনও সমর্থন করি না যে প্রিয়জন ফিরিয়ে দিলে তার ক্ষতি করতে হবে। তাকে ধর্ষণ করতে হবে। কিন্তু আয়ান যা করেছে তার ক্ষমার অযোগ্য হলেও ভালোবাসা অন্ধ। নেহা আয়ানকে ভালোবাসে আর আয়ান নেহাকে কোনো স্বপ্ন দেখায়নি। বরং সত্যি সত্যি তাকে নিজের করে পেতে চেয়েছে। নেহা আয়ানের থেকে দূরে চলে আসে। প্রিয়জনকে হারিয়ে ফেলার কষ্ট কতটা কাঁদায় তা সবাই বুঝতে পারে না। আয়ান তার কাজের শাস্তি অবশ্যই পেয়েছে। প্রিয়জনকে হারিয়ে। অবশেষে একটা কথা সব সময় আমরা চোখে যা দেখি তা সত্যি নাও হতে পারে। একটা বার সত্যিইটা যাচাই করা উচিৎ। বিশ্বাস করা উচিৎ প্রিয়জনদের। তবে অতিরিক্ত বিশ্বাস না করাই উত্তম।

* অবশেষে একটা কথা মানুষকে আঘাত করা সহজ। তবে আঘাত না করে ক্ষমা করে দেয়া সহজ নয়। নিজের জায়গায় থেকে অন্যের পরিস্থিতি যাচাই করা মূর্খতার পরিচয়। নেহা আগেও আয়ানকে ভালোবাসতো আর এখনো ভালোবাসে। তাই ওদের পূর্নতা আবশ্যক ছিলো। ভূল বুঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে প্রত্যেকটা সম্পর্ক এগিয়ে চলেতে দেয়া উচিৎ। ভালো থাকুন আয়ান ও নেহা। ভালোবাসায় পূর্ণ থাকুক তাদের জীবন।

সমাপ্ত

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here