#হৃদয়ের দহন
#পর্বঃ২
#সামিরা পপি
সকালে সামিরা ঘুম থেকে উঠে মুখ হাত ধুয়ে কিচেনের দিকে যাই।গিয়ে দেখে তার মামনি মানে নাবিলের মা পরোটা বানাচ্ছে।তিনি সামিরাকে দেখে বললেন,
—-“সামু তুই আসলি যে?কিছু লাগবে?”
—-“না মামনি আমার কিছু লাগবে না।আমি তোমাকে সাহায্য করতে এসেছি।দাও আমি পরোটা গুলো বেলে দেই।”
—-“না না লাগবে না।তুই যা কলেজের পড়া শিখে নে।আমি করে নিব।”
—-“উফফ বডড কথা বলো।আচ্ছা আমি পরোটা ভেজে দিচ্ছি।”
বলেই সামিরা পরোটা গুলো ভাজতে লাগল।পরোটা ভাজা হলে সামিরা চুলোই চা বসায়।আর নাবিলের মা কয়েক প্রকার সবজি থেকে অল্প অল্প করে নিয়ে তা কুঁচি কুঁচি করে কাঁটে।এইগুলো ভাজি করবে।সকালে রুটি পরোটার সাথে ভাজিটা সবাই পছন্দ করে তাই।সামিরা ও তার মামনি একসাথে সকালের নাস্তা তৈরি করে টেবিলে নিয়ে রাখে।কিছুক্ষন পর নাবিল রেডি হয়ে নাস্তা করতে আসে।সামিরাকে দেখে নাবিল চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে তা সামিরা খেয়াল করে।তাই আর এক মূহুর্তও না দাঁড়িয়ে রুমে চলে যাই।পেছন থেকে নাবিলের মা বলে,
—-“কিরে সামু কই যাচ্ছিস?নাস্তা করে যা।”
সামিরা যেতে যেতে বলল,
—-“মামনি আমি পরে খাবো আগে কলেজের জন্য রেডি হয়ে আসি।”
বলেই সামিরা চলে যাই।সামিরার চলে যাওয়াটা নাবিলের মা বাবা স্বাভাবিক ভাবে নিলেও নাবিল বুঝতে পারল কেন সামিরা চলে গেছে।সে ওতটা গুরুত্ব না দিয়ে নিজে নিজের মত খেয়ে উঠে গেল।তখনি তার মা বলল,
—–“নাবিল তোরা দুইজন তো একি কলেজেই যাস তাহলে সাথে করে সামিরাকে নিয়ে গেলে কি হয়?ওকেও নিয়ে যা।”
নাবিল তার মা’য়ের কথায় বিরক্তবোধ করে।
—–“আম্মু আমি পারব না।আমার লেট হচ্ছে।”
বলেই নাবিল তার মাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে গেল।নাবিল চলে যাওয়ার পর সামিরা রেডি হয়ে আসল।তখনি মামনি বলল,
—-“তুই বস আমি নাস্তা দিচ্ছি।”
—-“হুম।”
বলেই সামিরা বসল।নাবিলের মা তাকে নাস্তা দিলে খেয়ে মামনিকে বিদায় দিয়ে চলে গেল সামিরা।
সামিরা কলেজে এসে দেখল নাবিল কাকে যেন বার বার ফোন করছে কিন্তু অপর পাশে ব্যক্তি ফোন তুলছে না।এতে নাবিল বিরক্ত হচ্ছে।সামিরা নাবিলকে দেখে মনে মনে বলল,
—-“কাল তো আমায় সেই জোরে ধাক্কা দিয়েছিলেন।অথচ আমি কোন দোষ-ই করিনি।ধাক্কা দিয়ে পুরো মাথায় সুপারি তুলে দিয়েছেন।শুধু ঘরে ছিলাম বলেই কিছু বলিনি।কিন্তু এখন কোন ছাড় নেই।”
বলেই সামিরা নাবিলের দিকে এগিয়ে গেল।নাবিলের পেছনে দাঁড়িয়ে গলা খাকারি দিল।তখন নাবিল পেছনে তাকিয়ে দেখে সামিরা।আর মূহুর্তেই নাবিল বিরক্ত হয়ে উঠল সাথে রাগ তো ফ্রি আছেই।সামিরাকে দেখে নাবিল আবার সামনে ফিরে চলে যেতে লাগে।তখনি সামিরা নাবিল হাত টেনে ধরে বলে,
—–“কি পালাচ্ছেন কেন?যতই পালান না কেন ঘুরে ফিরে কিন্তু আমার কাছেই আসতে হবে।আমি কিন্তু আপনার পিছু ছাড়ছি না।”
—-“সমস্যাটা কোথায় তোমার?একটু বলবে প্লিজ?কতবার বলবো যে আমার পিছু ঘুরবে না।আমার বিরক্ত লাগে।”
—-“এখন বিরক্ত লাগছে ঠিকি।যখন আপনিও আমায় ভালোবেসে ফেলবেন তখন দেখবেন আর বিরক্ত লাগছে না।”
সামিরার কথা শুনে নাবিলের সারা শরীর রাগে রি রি করতে লাগল।দাঁতে দাঁত চেপে হাত ঝাড়া দিয়ে সামিরার হাত সরিয়ে দিল।তারপর সামিরার দিকে কঠিন দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চলে গেল।সামিরা নাবিলের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,
—–“কখন আপনি বুঝবেন যে আমি আপনাকে কতটা ভালবাসি?আজ একটা বছর হয়ে গেছে।আমি আপনার এই রুড বিহেভ সহ্য করতে পারছি না।আপনি তো আগে এমন ছিলেন না।আগের দিন গুলো কতই না সুন্দর ছিল।আই উইস আবার সেই দিন গুলি ফিরে পেতাম।”
বলেই সামিরা একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।আর নাবিল এইদিকে গিয়ে তার ক্লাসে বসল মাথা নিচু করে চেপে ধরে বলল,
—-“ওই দিন যদি তুমি আমাদের বাসায় না আসতে।আমিও যদি প্রথম থেকে তোমার সাথে ভাল ব্যবহার না করতাম তবে আজ এই দিন দেখতে হতো না।প্রতিটা দিন কানের সামনে এসে “ভালবাসি” ভালবাসি” শুনতে শুনতে অতিষ্ঠ হয়ে গেছ।তোমার সাথে দেখা হওয়ার প্রথম দিনটা মনে হচ্ছে আমার জন্য অভিশাপ।”
বলেই নাবিল ফিরে গেল দেড় বছর আগে।
দেড় বছর আগে সামিরার মা মারা যাই।আর তার বাবা তার জন্মের আগেই তাদের ছেড়ে চলে গেছে।সামিরা কখনও বাবাকে দেখেনি।সামিরার মা মেয়ের চিন্তায় চিন্তায় একসময় হার্ট এ্যাটাক করে ফেলে।যখন হাসপাতালে নেওয়া হয় তখন ডাক্তার বলে তার মা মারা গেছে।সেদিন সামিরার আহাজারি দেখার মত কেউই ছিল না।এতদিন তারা মা মেয়ে তার মামার বাসায় ছিল।মামি প্রতিদিন কটু কথা শুনাতো তবুও তারা সহ্য করত।সামিরার মা মারা যাওয়ার পর সামিরার মামির অত্যাচার দিন দিন বাড়তে থাকে।একদিন দুপুরে সামিরা মাছ ভাজতে ছিল।সামিরা মা’য়ের কথা মনে পড়ায় একটু বেখেয়ালি হয়ে পড়ে আর তখনি মাছ পুড়ে যাই।তা মামি এসে দেখে।রেগে গিয়ে সামিরার চুল ধরে বলে,
—–“শয়তান মেয়ে কি করেছিস এইটা?এত অন্যমনস্ক হয়ে কার কথা ভাবছিলি হ্যাঁ?দেখেছিস তুই আমার মাছ পুড়ে ফেলেছিস?দাঁড়া তুই।”
বলেই সামিরার মামি হাতে গরম চামচ লাগিয়ে দেয়।আর এতে সামিরা চিৎকার করে উঠে,
—–“আহহ্ মামি লাগছে।প্লিজ মামি ছাড়ো হাত পুড়ে যাচ্ছে।আমি সহ্য করতে পারছি না।মামি…”
সামিরা কান্না করছে আর ছাড়তে বলছে কিন্তু মামি শুনছেই না।তিনি আরো জোরে চামচ চেপে ধরে বললেন,
——“লাগুক লাগার জন্যই দিচ্ছি।এর পর থেকে মনে থাকবে।আমার সংসারে এসে খাচ্ছিস আবার জিনিস নষ্ট করছিস।”
সামিরার হাতে তালু অনেকাংশ পুড়ে যাই।পুরো হাতে ফোঁসকা পড়ে যাই।হাতের জ্বলাতে সেদিন সামিরা প্রচুর কান্না করে কিন্তু কেউ ছিল না একটু মলম লাগিয়ে দেওয়ার মত।
চলবে……