হৃদয়ের দহন পর্ব ৩

#হৃদয়ের দহন
#পর্বঃ৩
#সামিরা পপি

সামিরা রাতে নিজের রুমে বসে বসে হাতে মলম লাগাচ্ছিল আর ফুঁফিয়ে কেঁদে উঠছিল।যতদিন তার মা বেঁচে ছিল ততদিন তার কোন কিছুতেই অযত্ন ছিল না।তাকে বিন্দুমাত্র কষ্ট পেতে দেয়নি।মামির বলা তার মাকে কটু কথা গুলো শুনত এবং বুঝতো ও তবুও কিছু বলতে পারতো না।কারন তারা মামা মামির কাছেই থাকতে হত।তার মায়ের অসুস্থতার কারনে অন্য কোথাও চাকরিও করতে পারতো না।তবুও ঘরের সমস্ত কাজ নিজ হাতে করত।যে সামিরার কারনে তার মা দিত্বীয় বিয়ে পর্যন্ত করেনি সে কষ্ট পাবে বলে আজ সে সামিরাকেই তার মা কষ্টে রেখে চলে গেছে।ভাবতেই আরো জোরে কান্না করতে লাগল আর বলতে লাগল,
—-“কেন আম্মু তুমি আমাকে একা রেখে চলে গেলে?প্লিজ আমাকেও নিয়ে যাও।এইখানে থাকতে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। মামির প্রতিদিন করা অত্যাচার সহ্য করতে পারছি না আমি।প্লিজ আমাকে নিয়ে যাও।”
বলেই কাঁদতে কাঁদতে সামিরা মাটিতে বসে পড়ে।তখনি দরজা ঠেলে সামিরার ঘরে প্রবেশ করে সামিরার মামাতো ভাই রিহান।সামিরার কান্না দেখে তার পাশে গিয়ে মাটিতে বসে পড়ে।রিহান সামিরার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,
—-“কি হয়েছে? তুই এইভাবে কাঁদছিস কেন?না’কি আম্মু আজকেও তোকে বকা দিয়েছে?আরে বল না?না বললে বুঝব কি করে কেন কাঁদছিস?”
রিহানকে সামনে দেখে সামিরা আস্তে আস্তে কান্না কমিয়ে ফেলে।নয়তো তার মামি বলবে তার নামে ছেলেকে বিচার দিচ্ছে।সামিরা ভাঙা গলায় বলল,
—-“কিছু হয়নি এমনি কাঁদছিলাম।”
—-“কিছু তো নিশ্চয় হয়েছে নয়তো এইভাবে কাঁদতি না।আচ্ছা দাঁড়া আমি আম্মুকে জিজ্ঞেস করি।”
বলেই রিহান যেই উঠতে যাবে ওমনি সামিরা রিহানের হাত ধরে ফেলে।হাতে পুড়ে দেওয়ার কারনে ফোসকা পড়ে গেছে তাই রিহানের হাত ধরার সাথে সাথেই হাত সরিয়ে নেই। রিহান সামিরার হাত ধরার দিকে তাকাতেই তার চোখে পড়ে হাতের ফোসকা গুলো।সামিরার হাত দু’টো নিজের হাতে নিয়ে বলে,
—-“এইসব কি করে হলো?বল কি করে হলো?”
সামিরা ভয় পেয়ে গিয়ে আমতাআমতা করে বলল,
—-“আ.আসলে রান্না করতে গিয়ে পুড়ে গেছে।”
রিহান চোখ মুখ লাল করে ফেলল।সে বুঝতে পারল সামিরা মিথ্যা বলছে।তাই বলল,
—-“একদম মিথ্যা বলবি না।নিশ্চয় আম্মু করেছে এইসব,তাই না?দাঁড়া এক্ষুনি আব্বুকে বলছি।”
—-“ভাইয়া ভাইয়া এমন কিছুই না।মামি কিছুই করেনি বিশ্বাস করো।আমি সত্যি বলছি।”
রিহান ধমক দিয়ে বলল,
—–“চুপ আর একটাও মিথ্যা কথা বলবি না।এইজন্যই তুই এতক্ষন কাঁদছিলি তাই না?আম্মু এতদিন যা যা করেছে সব সহ্য করেছি কিন্তু আজকে যা করেছে তা সহ্য করার মত না।দাঁড়া তুই।”
বলেই রিহান যেতে নিলে সামিরা রিহানের হাত টেনে বসিয়ে দেয়।আর রিহানকে ঝাপটে ধরে কেঁদে দেয়।কাঁদতে কাঁদতে বলে,
—–“প্লিজ ভাইয়া কিছু বলো না মামিকে।মামি যা করেছে তা’তো ঠিকি করেছে।আমি আর আমার মা সারাজীবন তোমাদের উপর বসে বসে খাচ্ছি আর আজকে তো আমি টাকার কিনা মাছ গুলো সম্পূর্ন পুড়ে ফেলেছি তাই মামি এমন করেছে।এতে খারাপ নয়।আর কত সহ্য করবে মামি।তার নিজের ও তো একটা সংসার আছে।প্লিজ ভাইয়া আমাকে নিয়ে আর কিছু বলো না।এমনিতে অশান্তির শেষ নেই আমাকে নিয়ে।তুমি এখন আর অশান্তি শুরু করো না।চুপ করে থাকায় শ্রেয়।প্লিজ ভাইয়া।নয়তো পরে এর ফল আরো খারাপ হতে পারে।আমি জানি তুমি আমায় ভালবাসো তাই কখনও চাওনা আমার খারাপ কিছু।তাই প্লিজ এই নিয়ে কথা বলো না আর।”
রিহান চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে জোরে শ্বাস নেয়।সামিরার কথাও ঠিক।যদি রিহান আজকে কিছু বলে ওর মাকে তাহলে পরবর্তিতে সামিরার সাথে আরো খারাপ আচরন করবে।চোখ খুলে সামিরার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।তার চোখ দু’টো রাগে দুঃখে লাল হয়ে আছে।রাগটা তার মায়ের প্রতি আর দুঃখটা সামিরার জন্য।কিছুই বলতে পারছে না কারন দু’দিকেই ঝামেলা।
রিহানের মা রান্না ঘরে যাই রিহানের বাবাকে রাতের খাবার দেওয়ার জন্য।তখন কি জানি মনে হলো তাই তিনি ধীর পায়ে সামিরার রুমের দিকে এগিয়ে গেল।গিয়ে দেখল রিহান সামিরা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে আছে।এ দেখে যেন তিনি আকাশ থেকে পড়ল।সাথে ক্রোধে ফেঁটে পড়ল।কিন্তু কিছুই বলিল না।চুপচাপ চলে গেল সেখান থেকে।

খাবার খেতে বসেছে সবাই।সবাই খাচ্ছে কিন্তু সামিরা খাচ্ছে না।সে চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে আছে।আর খাবেই বা কি করে?তার হাত যে পুড়ে গেছে।রিহান সামিরার দিকে তাকিয়ে বলল,
—–“কিরে খাচ্ছিস না কেন?জলদি খা।”
রিহানের কথায় সামিরা রিহানের দিকে তাকাল অসহায় ভাবে।তা দেখে রিহান ভ্রু কুঁচকাল পড়ে মনে পড়ল সামিরার হাত পোড়া।তাই বলল,
—-“এইদিকে আরেকটু কাছে এসে বস।”
—-“কেন ভাইয়া?”
—-“প্রশ্ন করতে বলিনি চুপচাপ আয়।”
সামিরাও একটু এসে বসল আর রিহান ভাত নিয়ে সামিরার মুখে ধরল।বলল,
—-“নে হা কর।”
সামিরা সবার দিকে তাকাল।তার মামার কোন ভাবান্তর নেই।কিন্তু মামির তীক্ষ্ম নজর তার দিকে।তা দেখে সামিরা ঢোক গিলল আর বলল,
—-“না না ভাইয়া আমি খেতে পারব।”
রিহান ধমক দিয়ে বলল,
—–“আমি কি কোন কথা শুনতে চেয়েছি?চুপচাপ খাবি।খা বলছি।”
বলেই সামিরার মুখ চিপে ধরে খাওয়াচ্ছে।এইদিকে মামি রাগে যেন আগুন হয়ে গেছে।পারছে না সামিরাকে গালে গালে থাপড়াতে।

পরেরদিন সকালে মামা চলে গেলেন দোকানের উদ্দেশ্য।সামিরার মামার মুদির দোকান আছে।ব্যবস্থা মোটামুটি ভালোই হয়।আর রিহান চলে গেছে ভার্সিটিতে।রিহান ভার্সিটিতে পড়ে।যাওয়ার আগে সামিরাকে দেখে গেছে আর সাবধানে চলতে বলে গেছে।সকালের নাস্তাও তার সাথে করতে হয়েছে সামিরাকে।সবাই চলে যাওয়ার পর সামিরা নিজের রুমে এসে বিছানা গোছাতে থাকে।হাতে ব্যাথা করে কিন্তু কাজ তো করতেই হবে তাই করতে থাকে।তখনি তার রুমের দরজায় এসে দাঁড়ায় মামি।মামিকে তার রুমে দেখে সামিরা ঘাবড়ে যাই।মামি কিছুই না বলে সোজা এসে সামিরার চুলের মুটি ধরে টেনে হিচড়ে রুম থেকে বের করে।আর সামিরা ব্যাথায় কেঁকিয়ে উঠে আর বারবার ছাড়তে বলে,
—–“মামি ছাড়ো আমি ব্যাথা পাচ্ছি।আমি কি আবার কোন ভুল করেছি?আহ্ মামি….”
মামি কোন কথায় না বলে সামিরাকে ঘরের বাহিরে ছুড়ে মারে এতে সামিরা ছিটকে পড়ে।মামি বলে,
—–“বিয়াদপ মেয়ে আমার ছেলেকে বস করে নিয়েছিস?তোর সাহস কি করে হলো আমার ছেলের দিকে নজর দেওয়ার?”
সামিরা কিছুই বুঝল না।আস্তে করে উঠে বসে বলল,
—–“মামি তুমি কি বলছ?আমি তো কিছুই বুঝতেছি না।”
একবার মামি আরো ক্ষেপে যাই।গিয়ে সামিরাকে কয়েকটা থাপ্পড় মেরে দেয়।এতে যেন সামিরার চারদিক অন্ধকার লাগা শুরু করে দেয়।মামি চুলের মুঠি ধরে বলল,
—-“ছেলে লাগলে যা রাস্তায়।তবুও আমার ছেলের থেকে দূরে যা।কি করে আমার ছেলেকে বস করেছি?নয়তো আমার ছেলে তোর এত কদর কেন করছিল?রাতে দেখলাম জড়িয়েও ধরেছিস?লজ্জা করে না একটা অবিবাহিত ছেলেকে জড়িয়ে ধরতে?না’কি প্রেমের ঝালে ফেলতে চাচ্ছিস?কিন্তু আমি থাকতে তো তা হতে দিচ্ছি না।”
বলে সামিরাকে এইবার আরো জোড়ে ধাক্কা মারে।এতে সামিরা গিয়ে ইটের সাথে বারি খায়।হাত ও ছিলে যাই।মামি ফিরেও তাকাই না ঘরের দরজা বন্ধ করে দিয়ে চলে যাই।আর সামিরা বুঝতে পারে এই ঘরে সামিরার আর ঠাই হবে না।এও বুঝতে পারে যে মামি তাকে ভূল বুঝেছে।সেদিন সামিরা কান্না করতে করতে হাটে রাস্তা দিয়ে।আর হাঁটতে হাঁটতে অনেক দূর পর্যন্ত চলে আসে। কিন্তু কোথাও যাই না।কোথায় যাবে তার জানাও নেই।

চলবে….

আসলে “মিস্টার ভিলেন” শেষ হওয়ার পর থেকে গল্পের রিচ কমে গেছে।তাই লিখার মন মানষিকতাও নষ্ট হয়ে গেছে এজন্য দিতে ইচ্ছে করে না।আর এইদিকে আম্মুও প্রচুর অসুস্থ তাই একদমই পারিনা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here