#হৃদয়ের দহন
#পর্বঃ৬
#সামিরা পপি
সারাদিন ভালোই ভালোই কেঁটে গেছে সামিরার।এর মধ্যে নাবিলের সাথেও বেশ ফ্রি হয়ে গেছে।নাবিলের মা’য়ের সাথে বসে গল্প করে সারাদিন কাঁটিয়ে দেয়।এই যেন এক নতুন সুখের ছোঁয়া পেল সামিরা।সেদিনই ছিল সামিরা আর নাবিলের প্রথম দেখা।যদিও নাবিল রাতে দেখেছিল।কিন্তু তখন সামিরা ঘুম থাকায় আর কথা হয়নি।সেই দিনটাকেই নাবিলের কাছে আজ অভিশাপ মনে হচ্ছে।হঠাৎ ফোনের আওয়াজে নাবিল অতীত থেকে ফিরে আসে।সে এতক্ষন সামিরার সাথে দেখা হওয়ার দিনের কথায় ভাবছিল।নাবিল মাথা ঝাঁকিয়ে ফোনের দিকে চোখ বুলালো স্ক্রিনে ভেসে উঠেছে “পপি” নাম।মূহুর্তে নাবিলের মধ্যে ভালো লাগা ছেঁয়ে গেল।মুচকি হেসে কল রিসিভ করল,
—-“হ্যালো কেমন আছো?”
অপর পাশ থেকে পপির জবাব,
—-“ভালো আছি।তুমি ভালো আছো?”
—-“হ্যাঁ।কোথায় ছিল এতক্ষন?কতবার কল দিয়েছি?”
—-“আরে আমি রাস্তায় আছি।এক্ষুনি কলেজে আসছি।আসলে মোবাইল সাইলেন্ট করা ছিল তাই দেখি নি।”
—-“ওহ আচ্ছা।ব্যাপার না।তুমি চলে আসো আমি অপেক্ষা করছি।”
—-“আচ্ছা পাঁচ মিনিটে আসছি।”
—-“ওকে।”
কল কেঁটে মোবাইল পকেটে রেখে মুচকি হাসল নাবিল।এতক্ষন সামিরার প্রতি যে রাগ ছিল তা এক নিমিষে উধাও হয়ে গেছে পপির সাথে কথা বলে।হাঁটতে হাঁটতে কলেজের মধ্যে যে শহীদ মিনার আছে তার পাশে গিয়ে বসল নাবিল।কিছুক্ষন পর পপি আসল।পপিকে দেখে নাবিল একটা হাসি দিল।পপি বলল,
—-“সরি সরি ওয়েট করানোর জন্য।আসলে ঘুম থেকে উঠতে লেট হয়ে গেছিল তাই তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে আর কিছুই মনে নেই।”
—-“ওকে এত্ত উত্তেজিত হচ্ছ কেন?চলো ক্লাসে যাই।”
—“ওকে চলো।”
নাবিল পপি দু’জনে ক্লাসে চলে যাই।পপি নাবিলের খালাতো বোন।দু’জন একি ডিপার্টমেন্টে পড়ে।আবার দু’জন ভালো বন্ধুও।কিন্তু নাবিল তাকে বন্ধু নয় এর থেকেও বেশি কিছু মনে করে।
এতক্ষন সামিরা দূর থেকে দাঁড়িয়ে নাবিলকে লক্ষ করছিল।নাবিল পপির সাথে কত সুন্দর করে কথা বলে।কি সুন্দর হাসি খুশি থাকে।শুধু পপির সাথে নয় সবার সাথেই।শুধু সামিরার সাথে ছাড়া।অবশ্য এক সময় সামিরার সাথেও বেশ ফ্রি ছিল।কিন্তু সামিরা সামিরার ভূলের জন্য সব হারিয়ে ফেলেছে।ভেবেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল সামিরা।তারপর ক্লাসের দিকে রওনা দিল।ক্লাসে মন বসতে চাচ্ছে না তার।কিন্তু কিছুই করার নেই ক্লাস করতেই হবে ভেবে ক্লাস করল।দীর্ঘ তিন ঘন্টা শেষে ক্লাস রুম থেকে বের হয়ে ছাত্রী মিলনায়তনে গিয়ে বসল।কিছুই ভালো লাগছে না তার।বারবার নাবিলের কাছে যেতে মন চাচ্ছে।কিন্তু তাও পারছে না।নাবিল তো তাকে সহ্যই করতে পারেনা।গিয়েও বা কি লাভ?তখনি তার সামনে কেউ একজন এসে দাঁড়াল।কারো উপ্সথিতি বুঝতে পেরে সামিরা মাথা উঠিয়ে দেখল।দেখল পপি দাঁড়িয়ে আছে তার সামনে।পপিকে দেখে হাসি দিয়ে উঠে দাঁড়াল সামিরা আর বলল,
—-“কেমন আছেন আপু?”
পপিও হেসে সামিরার পাশে বসতে বসতে বলল,
—“ভালো আছি।তুমি ভালো আছো?”
—“জ্বী আপু।”
—“আরে দাঁড়িয়ে কেন? বসো।”
—“সমস্যা নেই।”
—-“আরে বসো।সকালে নাস্তা করছ?”
—-“জ্বী করছি।”
—-“ওহ।সমস্যা নেই এখন আমার থেকে একটু খাও।”
—-“না না।”
—-“আরে খাও খাও।”
সামিরা আর পপি দুইজনে পরোটা আর হালওয়া খেতে লাগল।পপিকে দেখে সামিরার বারবার নাবিলের কথা মনে পড়ছে।পপি তো এইখানে তাহলে নাবিল কোথায়?আমি কি জিজ্ঞেস করব নাবিলের কথা?না আপু আবার কি মনে করবে?এমন অনেক কিছুই ভাবতে লাগল।অবশেষে আর না পেরে আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করেই ফেলল,
—-“আচ্ছা আপু নাবিল কোথায়?”
পপি যেন এইটার অপেক্ষায় ছিল।সামিরার কথায় মুচকি হাসল।তারপর বলল,
—–“নাবিল?ও তো কোথায় গেছে।কেন বলোতো?”
সামিরা এদিক ওদিক তাকাচ্ছে।কি জবাব দিবে সে?তবুও ইনিয়ে বিনিয়ে বলল,
—–“উম্ম আসলে আপনার সাথেই তো থাকে দেখছি না তো তাই আরকি?”
পপি আবার নিঃশব্দে হাসল।বলল,
—-“ওহ্।আচ্ছা সামিরা তোমাকে একটা কথা বলি যদি কিছু মনে না করো তো?”
—-“জ্বী আপু বলেন না।এতে মনে করার কি আছে?”
—-“আচ্ছা তুমি যে নাবিলকে জ্বালাও এতে সে বিরক্ত। আর তোমাকেও অনেক অপমান করে।এতে তোমার খারাপ লাগে না?”
পপির কথায় সামিরার মন খারাপ হলো।মাথা নিচু করে বলল,
—-“হুম লাগে তো।কিন্তু সেটা কিছু সময়ের জন্য।পরে উনাকে দেখলে আবার সব খারাপ লাগা চলে যাই।”
পপি সামিরার কথা একটা নিশ্বাস নিজের ভেতর টেনে নিল।আর মনে মনে বলল,
—–“মেয়েটা ওকে কতটা ভালোবাসে।আর ও সেটাই বুঝেনা।শুধু অবহেলা করে।এর প্রতিদান নাবিলকে একদিন দিতেই হবে।সামিরা এখন যতটা কষ্ট পায় তার থেকেও কয়েকগুন বেশি কষ্ট একদিন নাবিল পাবে।”
মনে মনে এইসব ভেবে বলল,
—–“আচ্ছা সামিরা আমি যাই হ্যাঁ।আমার আবার ক্লাস আছে তো তাই।”
—–“আচ্ছা আপু।”
পপি চলে গেল।সামিরা আবার মন মরা হয়ে বসে রইল।কিছুই ভালো লাগছে না।তাই সিদ্ধান্ত নিল ক্লাস করবে না সোজা ঘরে চলে যাবে।যেই ভাবা সেই কাজ।ব্যাগ নিয়ে বেড়িয়ে পড়ল কলেজ থেকে।কলেজ গেট থেকে বেরিয়েই দেখল নাবিলকে।সাথে দেখল নাবিলের সাথে আরেকটা মেয়েকে।মূহুর্তেই সামিরার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল।রাগে তার মাথা ফেঁটে যাচ্ছে।কিছুই না ভেবে নাবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়াল।নাবিল সামিরাকে দেখে ভ্রু কুঁচকালো।আবার সামিরার রাগান্বিত চেহেরা দেখে অবাকও হলো।সামিরা নাবিলকে উদ্দেশ্য করে বলল,
—–“এইটা কে?এখন দেখছি রাস্তা ঘাটেও মেয়েদের সাথে আলাপ চলে।কই আমার সাথে তো কখনও এমন করে হেসে মেতে কথা বলেন না?তাহলে এদের সাথে কি?”
নাবিল সামিরার কথায় রাগ আর বিরক্ত দুইটাই হলো।আপাদত রাগটা দমিয়ে বিরক্তি নিয়ে বলল,
—–“সমস্যা কি তোমার?আমি যার সাথে ইচ্ছে কথা বলব।তুমি বলার কে?আর তুমি দেখছি আমার পিছু নিয়েছ।”
—–“দেখুন আপনার আজাইরা কথা আমি শুনতে চাই না।এক্ষুনি ক্লাসে যান নয়তো আমার সাথে বাড়ি আসেন।আর আমি যেন নেক্সট টাইম কোন মেয়ের সাথে না দেখি আপনাকে।”
—-“এই মেয়ে একদম চুপ করো।এখন কি আমাকে তোমার কথায় চলতে হবে?যাও তো এইখান থেকে যত্তসব।”
নাবিলের কথায় সামিরার মেজাজ বিগড়ে গেল।বলল,
——“আপনি কি যাবেন না’কি না?”
—–“বললাম না যাবো না।”
——“শেষ বার বলছি।”
—–“এই মেয়ে বললাম না যাবো না।একদম বিরক্ত করবে না।যাও এইখান থেকে।কি শুরু করেছ রাস্তায় দাঁড়িয়ে?”
নাবিলের ঝারিতে সামিরা যেন আরো রেগে মেঘে জ্বলে উঠল।তার ধৈর্যের বাধ ভেঙে গেল তাই সে নাবিলের শার্টের কলার ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগল।আশেপাশের সবাই তাদের দিকে তাকিয়ে আছে।নাবিল কখনও ভাবেনি যে সামিরা এমন কিছু করবে।সে অবাক হয়ে গেল।পরক্ষনে চারিদিকে খেয়াল করে তার মাথা গরম হয়ে গেল।জোর করে সামিরার হাত তার শার্ট থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ঝাড়ি মারল।সাথে জোরে এক থাপ্পড় মেরে দিল।নাবিল প্রচুর রেগে গেছে। কারন তাকে কম বেশি সবাই চিনে।এইটা তাদের এলাকা আফটার অল।আর সামিরাও এমন কিছু আসা করেনি।নাবিলের থাপ্পড়ের টাল সামলাতে না পেরে ছিটকে পড়ল রাস্তায়।চোখ মুখে,রাগ,জেদ,কান্না,অভিমান,অপমান সব একসাথে ভেসে উঠেছে।
চলবে…..