হয়তো আবার পর্ব ১

🍁হয়তো আবার 🍁

#writer-ফারহানা আক্তার (রুপকথা)

#সূচনা_পর্ব
___________

চার বছরের সম্পর্কের ইতি টানলো রুপম,, কারণ, হিয়া প্রেগন্যান্ট।। কোন এক বৃষ্টির রাতে ভালোবাসায় মগ্ন হয়েছিলো হিয়া রুপমের সাথে যার ফলস্বরূপ আজ তার গর্ভে এই ছোট্ট প্রাণ। হিয়া অনেকবার হাতে পায়ে ধরেছে রুপমের কিন্তু কিছুতেই মন গলেনি তার। দীর্ঘ ৫ ঘন্টা রুপমের বাড়ির সামনে দাড়িয়ে থেকে ভাঙা মনে ফিরতে হচ্ছে তাকে। কিন্তু কিভাবে ফিরবে সে বাড়ি কোন মুখে। যখন বাবা মা জানবে তার কুকীর্তি,, জঘন্য ভালোবাসার ফল কি করে মেনে নিবে সব। না আর ভাবতে পারছে না । দিকবিদিক হয়ে মেইন রোডে হেটে চলছে হিয়া । দু এক বার গাড়ির সামনে পরতে পরতে বেচেছে। কিন্তু না আত্মহননের পথ সে বেছে নিবে না আর না বাড়ি ফিরে যাবে। এখান থেকে সামনে পাহারি রাস্তা তার সামনে বিশাল সবুজ অরন্য।শহরের পথ ছেড়ে সে ওই পাহাড়ি রাস্তায় হাটা দিলো। হাটতে হাটতে উঁচু টিলার সামনে দাড়ালো। পা দুটো খুব ব্যাথা করছে একটু বসা দরকার। পায়ের স্লিপার দুটো খুলে সেগুলোর ওপর বসে পড়লো। এই জনমানবহীন পাহাড়টায় কেমন গা ছমছমে ভাব। ভয় হচ্ছে হিয়ার তবুও এখানেই বসতে হবে তার। এই সবুজে ঘেরা পাহাড়ের চূড়ায় এক প্রশান্তি আছে যা ওই কোলাহলপূর্ণ শহরটায় নেই। ঠান্ডা মস্তিষ্কে কিছু চিন্তা এখানেই সে করতে পারবে। সন্ধ্যা নামতে এখনও অনেকটা সময় আছে। হিয়া হাটুতে মুখ গুজে কান্না করছে আর ভাবছে কি করবে সে। নিজের জন্য না হলে ও এই অনাগত সন্তান এর জন্য হলে ও তাকে সুস্থভাবে বাঁচার চেষ্টা করতে হবে। কিছুক্ষণ ধরেই হিয়া কারো চেঁচামিচি শুনতে পাচ্ছে,, মনে হচ্ছে পাশেই কেউ কাউকে বকা দিচ্ছে। তবে সামনে নয় অতিসম্ভব মোবাইলে। কিন্তু মাথা উঠিয়ে দেখার ইচ্ছা জাগলো না তার। সে আবার ও নিজ ভাবনায় মগ্ন হতে চেষ্টা করে চলছে অবিরত কিন্তু না সেই চেঁচামেচি দ্রুত বেগে তার কাছেই আসছে মনে হচ্ছে। এবার আর তার পক্ষে মুখ গুজে রাখা একেবারেই সম্ভব না। হালকা করে মাথাটা উঁচু করলো। তবুও কিছু চোখে পড়লো না তাই আবারও কচ্ছপের ন্যায় মাথা নিচু করতে যাচ্ছিলো তখন সেই চেচামেচি শোনা গেল।হিয়া এবার চোখ ঘষতে ঘষতে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। যে করেই হোক চিৎকারের রহস্য উদঘাটন করবে।পেয়ে ও গেল তার বাম পাশে কোন এক বড় গাছের গুড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাড়ানো একটা ছেলে। ছেলে বললে ভুল হবে বলতে হবে তাগড়া যুবক। হিয়া এবার আরেকটু কাছে গিয়ে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করছে যুবকটিকে। দেখতে লম্বা, গায়ের রং হলদে ফর্সা, চোখের মনি দুটো ডার্ক ব্রাউন, চুল গুলো মোটামুটি লম্বা আর সিল্কি দেখেই বোঝা যাচ্ছে। পরণে কফি কালারের টি শার্ট হাতে রিস্ট ওয়াচ।দেখতে সব দিক দিয়েই পারফেক্ট লাগছে শুধু মুখের ভাষা শ্রবণীয় লাগছে না হিয়ার। কারণ ছেলেটা বার বার অকথ্য গালিগালাজ করছে কাউকে কলে। হিয়া একাধারে তাকিয়ে আছে ছেলে। এবার ছেলেটার ও খেয়াল হল হিয়াকে তাই সে কল কেটে হিয়ার দিকে এগিয়ে আসে আর হিয়া পিছাতে থাকে।হিয়া পিছাতে পিছাতে পাহাড়ের শেষ মাথায় যে কখন পা রাখে তা খেয়ালই করে না।কিন্তু ছেলেটা খেয়াল করে আর তাই সে আচমকা হিয়ার হাত ধরে টান দেয় যার,দরুন হিয়া খিচে সামনে এসে পড়ে সোজা ছেলেটার বুকে। কয়েক সেকেন্ডের জন্য হিয়া একেবারে থ হয়ে যায়। ঘটনার আকস্মিকতায় দুজনই বাক রুদ্ধ থাকে কিছু সময়। ততক্ষণে হিয়া ছেলেটার বুক থেকে মাথা উঁচু করে ছেলেটাকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে। দেখে মনে হচ্ছে বাইক বা গাড়ির। টোটাল লুক দেখে হিয়া বিড়বিড় করে বলল নিঃসন্দেহে সুদর্শন ছেলেটা। হিয়ার ঠোটের কাপা কাপা অবস্থা দেখে ছেলেটা বুঝতে পারলো হিয়া কিছু বিড় বিড় করছে তাই জিজ্ঞেস করলো ,, হে ইউ কি বলছো এভাবে ঠোঁট নাড়িয়ে?? হিয়ার এবার হুশ হয় তারপর নিজেকে ছেলেটার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়। ছেলেটা আবার ও প্রশ্ন করে কি দেখছো আর কি বিড়বিড় করছো!!

হিয়া এবার জবাব দেয় “কিছু না কি বিড়বিড় করবো “”

আর ইউ সিওর তুমি কিছু বিড়বিড় করছিলে না।

হুম আম সিওর!! তবে আপনি আমাকে তুমি করে বলছেন কেন?? অচেনা একটা মেয়ের সাথে আপনি করে বলতে হয় জানেন না???
ওহ, প্লিজ আমাকে শেখাতে এসো না।। মেয়েগুলো আর যাই হোক রেসপেক্ট পাওয়ার যোগ্য নয়,, তাচ্ছিল্যের সুরেই বলল ছেলেটা।হিয়া এবার চরম পর্যায়ে রেগে গেল কথাটায়।। হয়তো রাগটা শুধু ছেলেটার কথায় না রুপমের সাথে তার ঘটে যাওয়া সম্পর্কের ইতি আর বিশ্বাস ভঙের কারণে। হিয়া রাগের চোটে ছেলেটার দিকে বড় বড় চোখ করে তাকায় আর ছেলেটা তাকে দেখে কিছুটা বিষ্ময় নিয়ে তাকার আর বলে কি এমন ভুল বললাম!! হিয়া এবার বলে ওহ তাই মেয়েরা রেসপেক্ট এর যোগ্য না তাই তোরা ছেলেরা মেয়েদের কে ভালোবাসার কথা বলিস,, তারপর মিথ্যে অভিনয় করে মন ভুলিয়ে কাছে টানিস আর যখন দেখিস বোকা মেয়ে গুলো তোদের ডাকে সাড়া দিচ্ছে তখন নিজেদের শারীরিক চাহিদা মিটিয়ে নিস ভালোবাসার নামে। মেয়ে গুলো ও ছ্যচড়া তোদের ভালোবাসাকে সত্যি আর পবিত্র ভেবে সপে দেয় নিজেকে। আর তোরা ও চাহিূা পূরণ হয়ে গেলে নোংরা ন্যাকড়ার মত ফেলে দিস নাক সিটকে। এতে যদি মেয়ে গুলো মরে যাবার ডিসিশন ও নেয় তোদের কি তোরা তো আর ও নতুন পেয়ে যাবে খালি হলে কোন বাবা মায়ের বুক খালি হবে তোদের বাবা মায়ের তো আর কিছু হবে না। হিয়া এক দমে কথা গুলো বলল।যেন হাজারো কষ্ট অভিযোগ সব এই ছেলেটার ওপরই। ভুলে গেছে সে এটা রুপম নয় অন্য কোন ছেলে। সে যেন চোখের সামনে রুপমকেই দেখছে। তাইতো মনের কষ্ট গুলো কে কান্না আর রাগের মাধ্যমে ঝাড়ছে। হিয়া তারপর আবার দম নিয়ে কিছু বলা শুরু করছিলো তখনি ছেলেটা ডান হাত দিয়ে হিয়ার ডান হাত আর বাম হাত দিয়ে হিয়ার মুখ চেপে ধরলো। হিয়া নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছিলো কিন্তু ছেলেটা ছাড়লো না শুধু বলল এতক্ষণ তুমি যা বলছিলে তা সত্যি নয়। হিয়ার রাগ দেখে ছেলেটা ভুলেই গেছে সে কিছুক্ষণ আগে ও খুব রেগে ছিলো। তবে হিয়ার কথা গুলো তার কাছে মোটে ও পছন্দসই হয় নি বোঝাই যাচ্ছে চেহারায় বিরক্তির ছাপ দেখে। হিয়া নড়াচড়া বন্ধ করে নি এখন ও তাই বলল লিসেন আমি তোমাকে ছেড়ে দিচ্ছি তুমি প্লিজ চিৎকার করো না। বলেই হিয়ার মুখটা ছেড়ে হিয়ার দেখে এক হাত দূরে সরে দারালো। ছাড়া পেয়ে হিয়া আবার ও চেচামেচি করতে নিলে ছেলেটা আবার আঙ্গুল নাড়িয়ে ইশারা করলো যার অর্থ চুপ থাকো। হিয়া চুপ রইলো কিন্তু ছেলেটা বলা শুরু করলো,, দেখ আমি এখানে আত্মহত্যা করতে এসেছিলাম। কথাটা শুনে হিয়া পিলে চমকে উঠলো। এতক্ষণ হিয়া রাগে জেদে এই পাহাড়ের চূড়ায় বসে থাকার কারণে চার পাশটা ও খেয়াল করেনি যে সন্ধ্যা নামছে তবে এখন খেয়াল হচ্ছে। বড়সড় একটা ঢোক গিলে আবার ও এদিক ওদিক তাকিয়ে নিলো হিয়া,কিন্তু না আশে পাশে কেউ নেই শুধু বড় বড় কিছু গাছ মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে আছে। গাছ গুলোর জন্য আকাশটা পর্যন্ত ঠিকমত চোখে পড়ছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুটঘুটে অন্ধকার নেমে আসবে ধরণীতে। ছেলেটা ভালোভাবে হিয়া কে দেখে নিলো এবার হয়তো সে হিয়ার চোখে রাগের জায়গায় ভয়টা দেখতে পাচ্ছে তাই বলল ভয় পাওয়ার দরকার নেই আমি তোমার কোন ক্ষতি করবো না। আমি মরতে এসেছিলাম কিন্তু আজ আর মরতে পারবো না তোমার জন্য। হিয়া উৎসুক দৃষ্টি নিয়ে তাকায় ছেলেটার দিকে,, যার অর্থ আমি আবার কি করলাম।ছেলেটা বুঝতে পেরে বলল আপনি কিছু করেন নি তবে আপনার এখানে উপস্থিতির জন্য আর মরা হলো না আজ। কারো সামনে সুসাইড করলে কাজটা খারাপ হতো,, কেন হত সেই প্রশ্নটা আবার করবেন না যেন। আপনি এখানে একটা মেয়ে একা এই সময় কি করছেন!! ভ্রু কুচকে ছেলেটা প্রশ্ন করলো।

কিছু না প্রথমে মরার চিন্তা ছিলো আমার ও পরে ভাবলাম নিজের জন্য না হলে ও নিজের সন্তা…… চুপ হয়ে গেল হিয়া। ছেলেটা বলল নিজের সন্তা.. কি থামলেন কেন?? হিয়া বলল কিছু না।

কিছু একটা তো অবশ্যই সন্তা নাকি সন্তান??ছেলেটা জিজ্ঞেস করলো।

এবার হিয়া বলল হ্যা অনাগত সন্তানের জন্য যার কোন ভবিষ্যৎ নেই এই দুনিয়ায়। ছেলেটা এবার বিষ্ময়ের শেষ পর্যায়ে ভবিষ্যৎ নেই মানে কি।
মানে হলো আমার সন্তান দুনিয়ায় জন্মানোর সাহস করলে তাকে দুনিয়ার মানুষ গুলো শাস্তি দিবে পদে পদে কারণ সে কোন বিবাহিত মায়ের গর্ভে জন্ম নিতে যাচ্ছে না। ছেলেটা হিয়ার কথা শুনে বুঝতে পারলো মেয়েটার সাথে অন্যায় কিছু হয়েছে তবে কি অন্যায়টা হয়েছে সে কি বুঝলো কে জানে।হিয়াকে অস্থির দেখে ছেলেটা পাশেই থাকা একটা গাছের গুড়ি দেখিয়ে বসতে বলল।তারপর হুট করে ছেলেটা নিচে যাওয়া রাস্তার দিকে দ্রুত গতিতে পা বাড়ালো। প্রায় দশ মিনিট ধরে ছেলেটা গেছে এখন ও ফিরলো না,, হিয়ার এখন ভয় বাড়তে থাকে অন্ধকারে কিছু দেখতে ও পারছে না। সে এখন ও আগের জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। আর ও দশ মিনিট অতিক্রম হবার পর দূর থেকে ক্ষীণ আলোকরশ্মি চোখে পড়লো যেটা মনে হচ্ছে এদিকেই আসছে। বুঝতে পারলো হয়তো ছেলেটাই আসছে। ভয়টা কাটলো এবার হিয়ার কারণ ছেলেটাই এসেছে। হাতে এক বোতল পানি আর কিছু আছে একটা ছোট্ট পলিথিনে। ছেলেটা হিয়ার দিকে এগুলো বাড়িয়ে দিয়ে বলল খেয়ে নিন। হিয়া অবাক হয়ে বলল খাবো মানে!! খাবেন মানে খাবেন এগুলো খাবার।
হিয়া আবার বলল আপনি কি এই পাহাড়ের চূড়া থেকে নেমে আমার জন্য খাবার আনতে গেছিলেন!! আপনি এমন কিছু বলবেন আর আমি ও খেয়ে নিবো। এমন কিছুই ভেবে রেখেছেন। এই আপনি ছেলেধরা নন তো আবার হিয়া ভ্রু নাচিয়ে বলল কথা গুলো। অন্ধকারে হিয়াকে টিকমত দেখা যাচ্ছে না তবুও ছেলেটা বুঝতে পারলো কথা গুলো হিয়া রাগী চোখ মুখ করে বলছে। তাই ছেলেটা শান্ত গলায় বলল ভয় নেই বিষ মিশাই নি খাবারে, কি করে মেশাবো আপনাকে তো চিনিই না তবে হ্যা একটু করুনা হচ্ছিলো যখন সন্তান এর কথা বলছিলেন তা আবার অবিবাহিত মায়ের। মানুষেমানুষের জীবন কত অদ্ভুত কত বিবাহিত দম্পত্তির সন্তানের আশায় কেদে বুক ভাষায় তবুও হয় না। আর কত মানুষ বিয়ের আগেই পায় তবুও বেচে থাকতে পারে না বলেই ছেলটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। হিয়া কিছুই বুঝতে পারছে না ছেলেটা এভাবে কেন বলল। চেলেটা এবার মোবাইলের টর্চটা খাবারের দিকে ধরে একটু খাবার বের করে নিজের মুখে পুরলো তার পর বলল এই যে আমি খেয়েছি খাবারে ভেজাল নেই আপনি ও খেতে পারেন। হিয়া বলল আমি আপনার খাবার খাবো কেন। ছেলেটা বলল আপনার অনাগত সন্তানের জন্য। কথাটা শুনে হিয়ার মনে পড়লো আজ সকাল থেকেই তো সে না খাওয়া শরীরটা ও দূর্বল। খেতে তো হবেই বাচতে চাইলে। হিয়া খাবারটায় হাত লাগাতে গেলে ছেলেটা বাঁধা দেয়। হিয়া তাকায় ছেলেটার দিকে আর ছেলেটা বলে খেতে কেতে আমাকে কিছু কথার উত্তর দিতে হবে। প্রথমে হিয়ার খাবারের কথা মনে না থাকলেও এখন খাবার গুলো দেখে যেন খিদে টা মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে তাই সে জবাব দিলো হ্যা দিবো উত্তর।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here