হয়তো আবার শেষ পর্ব

🍁হয়তো আবার🍁

#Writer- ফারহানা আক্তার ( রুপকথা)

#দ্বিতীয়_পর্ব & শেষ
______________

এখনই বললেন খাবার গুলো খেতে আবার এখনই বাঁধা দিচ্ছেন। খেতেই যখন দিবেন না তো বললেন কেন!! হিয়া কথা গুলো বলছে ছেলেটা তখন বলল আমি খাবার গুলো আপনার জন্যই এনেছি,, তবে শুধু আপনি প্র্যাগনেন্ট বললেন তাই। আর বাধা দিচ্ছি না শুধু মনে করাতে চাইছি আপনি বলেছেন আমার প্রশ্নের জবাব দিবেন।

হুম বলুন কি জানতে চান গা ছাড়া ভাব নিয়ে বলল হিয়া কারণ তার শরীরটা এখন বড্ড ক্লান্ত লাগছে যা সে প্রকাশ করতে পারছে না।

আপনি অবিবাহিত ছেলেটা প্রশ্ন করলো। “হুম আমি অবিবাহিত। তাহলে আপনি প্র্যাগনেন্ট কি করে হলেন?? এবারের প্রশ্নটা হিয়াকে লজ্জা আর অস্বস্তি দুটোতেই ফেলল।তবুও একটু থেমে উত্তর দিতে নিলে ছেলেটা বলল ওয়েট এবার একটু খাবার খেয়ে নেন পরে শুনছি উত্তর কিন্তু হিয়ার গলা দিয়ে খাবার গুলো নামছে না। তবে এখন যে খেতেই হবে তার,, বাড়ি কখন ফিরতে পারবে তার ও ঠিক নেই। এক প্রকার জোর করেই খাবার মুখে পুরছে হিয়া। এক পর্যায়ে গলায় ঠেকলে ছেলেটি পানির বোতলটা এগিয়ে দেয় তাকে। খাবার টুকু শেষ করে চোখ বন্ধ করে ফেলে হিয়া খুব কান্না পাচ্ছে তার। অতি বিত্তশালী পরিবারের না হলে ও মধ্যবিত্ত পরিবারের খুব আদুরে একমাত্র সন্তান হিয়া। ভাই বোন কেউ না থাকায়,, প্রয়োজনের বেশিই ভোগ করেছে সে বাবা মায়ের আদর ভালোবাসা। এখন এই আগুন্তকের সামনে বসে সে চোখের জল ফেলছে চার বছরের সম্পর্ক শেষ করা ব্যক্তিটির জন্য। ধিক্কার,দিতে ইচ্ছে করছে তার নিজেকে।এই যে মিস, প্লিজ কান্না বন্ধ করো। থাক আমি আর প্রশ্ন করবো না তবে রাত অনেক হয়ে যাচ্ছে তোমার এবার বাড়ি ফিরে যাওয়া উচিত। ছেলেটির কথায় হুশ এলো হিয়ার সত্যিই তো যদি আত্মহত্যা না করে তাহলে বাড়ি ফিরে যাওয়া উচিত,, বাড়ি ছাড়া যে যাওয়ার আর কোন জায়গা নেই তার। কি ভাবছো কি ভাবে যাবে এই বিরান পথঘাট পেরিয়ে?? ছেলেটার কথা শুনে করুণ চোখে তাকালো হিয়া।। দেখো মিস. আমি নিজে ফিরে যাওয়ার জন্য আসিনি এখানে তবে আমি গাড়ি নিয়ে এসেছি তুমি চাইলে আমার গাড়িটা নিয়ে যেতে পারো,, টেনশন নেই আর ফিরিয়ে দিতে হবে না আমি কল করে আমার ম্যানেজারকে বলে দিচ্ছি গাড়ির লাইসেন্স, নেম প্লেট সব তোমার নামে ট্রান্সফার করে দিবে।।। একদমে গড়গড় করে বলল কথা গুলো,, শুনে মনে হচ্ছে সে কোন তাড়ায় আছে এই বুঝি তার ট্রেন মিস হয়ে যাবে এতো দ্রুত বলছে সব। কিন্তু হিয়ার ভাব এখনও খাপছাড়া। ছেলেটা আবার বলল তুমি যাচ্ছো আমার কিন্তু দেরি হয়ে যাবে সুইসাইড করতে।
আপনি কেন আত্মহত্যা করবেন!! আপনাকে দেখে তো কোন ধনী লোক মনে হচ্ছে। কোন কিছুর অভাব আছে বলে তো মনে হচ্ছে না। হিয়ার কথা শুনে ছেলেটা অবাক হলো,, কি মেয়েরে বাবাহ ধনী হলেই কি মানুষ খুশি থাকে নাকি,, এইটুকু বোঝার ক্ষমতা ও নেই তাই তো ধোকা পেয়েছে জীবনে।। মনে মনে ভাবছে ছেলেটা,,

তুমি কি নিবে গাড়ির চাবি?? কারণ আমি মরার পরে কিন্তু আর কোন কিছুই পাবে না না গাড়ি না গাড়ির লাইসেন্স। আমার গাড়ি লাগবে না একটু পৌঁছে দিলেই হবে।। হিয়ার কথা শুনে ছেলেটা ভ্রু কুচকে বলল আমি তোমার সাথে গেলে সুইসাইড কিভাবে করবো?? কেন আমাকে রেখে এসে পরে করে নিবেন।

ছেলেটার এবার একটু হাসি পেল,, ভাবছে এ কি মানুষ নাকি এলিয়েন,, আমি ওকে দিয়ে এসে তারপর মরবো কি সুন্দর সলোশন বের করলো।
” তুমি গাড়ির চাবি নিয়ে যাও”,, উহুম আমি গাড়ি চালাতে পারি না তাই যদি আপনি একটু দিয়ে আসতেন।।
ছেলেটা এবার মুচকি হাসি দিয়ে বলল চলো যাওয়া যাক,, আসলে হিয়া কে দিয়ে আসার উদ্দেশ্য তাকে পথে যেতে যেতে জিজ্ঞেস করবে তার জীবনের কাহিনী। এমন বোকা মেয়ের জীবন কাহিনী ও নিশ্চয়ই বোকা বোকা টাইপই হবে। তারপর দুজন পাহাড় থেকে নেমে রাস্তার পাশে ছেলেটার গাড়িতে উঠলো।হিয়া বাড়ির ঠিকানা না দিয়ে বাড়ির থেকে একটা মোড় আগের ঠিকানা দিলো। ছেলেটা তারপর গাড়ি স্টার্ট দিয়ে হিয়া কে জিজ্ঞেস করলো নাম কি তার!! হিয়া একটু অবাক হয়ে বলল “কার”। ছেলেটা এবার বাকা হাসি দিয়ে বলল আপনার সন্তানের বাবার?? কথাটা শোনামাত্র চোখ মুখ শক্ত হয়ে এলো হিয়ার তবুও নামটা বলল ” রুপম”। কোথায় থাকে সে?? হিয়া এবার বলল তা জেনে আপনি কি করবেন বলেই মুখটা বাইরের দিকে করে তাকালো। ছেলেটা আড়চোখে তাকালো হিয়ার দিকে তারপর বলল কিছুই করবো না শুধু ইচ্ছে করছে জানতে তোমার সাথে কি হয়েছিলো!! হিয়া ভাবলেশহীন ভাবে তাকালো ছেলেটার দিকে তারপর সিটে পিঠ হেলে দিয়ে চোখ বন্ধ করলো। কিছু সময় এভাবেই কাটিয়ে বলতে শুরু করলো চার বছরের অতীত। কলেজ থেকে ভালোবাসা রুপমের সাথে প্রথম তিন বছর ভালোই ছিলো সব গত এক বছর ধরে ভালোবাসার গভীরতা খুজতে থাকে রুপম আর সেই গভীরতা সে পায় তিন মাস আগে শারিরীক পিপাসা মিটিয়ে। দু দিন ধরে হিয়া জানতে পারে তার অনাগত, উহুম অনাকাঙ্ক্ষিত সন্তানের কথা। রুমকে জানালে সে বিভিন্ন ভাবে এড়িয়ে যাচ্ছে । আজ যখন তার বাড়ির সামনে গিয়ে দাড়িয়ে ছিলো কয়েক ঘন্টা তার বিনিময়ে পেয়েছে সম্পর্কের ভাঙন। তাই তো সে চলে গিয়েছে ওই পাহাড়ের চূড়ায়,, দাঁড়িয়েছিলো গাড়ির সামনে ও কিন্তু সাহস হয়নি আত্মহত্যা কে বেছে নিতে। ছেলেটা হঠাৎ করেই ব্রেক করলো,, হিয়া বাইরের দিকটায় তাকিয়ে দেখলো এখনো তার দেয়া ঠিকানায় আসেনি।। ছেলেটা হিয়ার দিকে ফিরে বলল কি ভাবছো এখনো বাড়ি পৌছাওনি।। ভাবো তো তোমার জীবনের কাহিনী কত ছোট ,, এতোটাই ছোট যে তোমার বাড়ির পথটা ও এতো ছোট না। কেউ ভালোবাসলে গভীরতা মাপতে যায় না,, ভালোবাসা বিন্দু পরিমাণ থাকলেই চলে। সমুদ্র অসীম তাতে কি,, তার গভীরতা ও ভয়ংকর হয়। আচ্ছা কোথায় যেন থাকে বললে রুপম!! হিয়া রুপমের এড্রেসটা বলে দিলো পরে আবার অবাক হয়ে বলল আপনি এড্রেস কেন চাইছেন। ছেলেটা আবার গাড়ি চালানো শুরু করলো আর বলল এমনিতেই ,, ভাবছি আজ আর সুইসাইড করবো না এখন বাসায় যাবো তারপর জম্পেশ খাবার খাবো। তুমি কি করবে বাড়ি গিয়ে??
আমি জানি না বাড়ি গিয়ে বাবা মা জিজ্ঞেস করবে কোথায় ছিলাম, বাড়ির বাইরে মোবাইলটা ও কোথায় জানি না।। হিয়ার চোখ টলমল করছে,, তারপর আবার বলল বাড়ি গিয়েই আগে বাবা মায়ের পা ধরবো সব কিছু বলে দিবো ভাবছি কিন্তু বাবা হার্ট পেশেন্ট। যদি আমার কারণে কিছু হয়ে….. না আর ভাবতে পারছি না বলেই হিয়া নিজের চুল টানতে লাগলো। ছেলেটা আবার গাড়ি ব্রেক করলো তবে এবার হিয়ার দেওয়া এড্রেসে এসে গেছে। তারপর ছেলেটা বলল বাড়ি গিয়ে মাফ চাইবে বাবা মায়ের কাছে বলবে বান্ধবীদের বাড়ি ছিলে,, তাই আড্ডায় সময়ের খেয়াল ছিলো না। মোবাইলটা কোথায় খেয়াল নেই ।তারপর বাবা মা বেশিক্ষণ রাগ করবে না। আর যখন দেখবে সব স্বাভাবিক হয়েছে তখন গিয়ে ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে ঘুমাবে। সকালে… বলতে নিয়ে কিছু একটা ভেবে চুপ হয়ে গেল তারপর বলল তোমার নামটা কি যেন?? “” হিয়া””

আপনার নাম???

থাক আমার নামটা , #হয়তো_আবার কখনও দেখা হবে তখন না হয় আমার পর্ব চলবে। আজ তোমার টুকুই থাক। বলেই ছেলেটা হিয়াকে বাইরে ইশারা করলো যার অর্থ পৌঁছে গেছি তোমার গন্তব্যে। হিয়া গাড়ি থেকে নেমে নিজের বাড়ির রাস্তায় হাটা দিলো ততক্ষণে ছেলেটা ও গাড়ি নিয়ে মিলিয়ে গেল রাতের আধারের সাথে। হিয়া বাড়ি গিয়ে মা বাবার সাথে কথা বলে মাফ চেয়ে নিয়েছে ছেলেটার কথা মত কিন্তু মন মানছে না তার ভুলটা লুকাতে। আবার সাহস ও হচ্ছে বাবার দিকে তাকিয়ে সত্যি টা বলতে,, তাই নিজের ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়লো। সকালে মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙে হিয়ার। কিন্তু ঘুম ভেঙে ড্রয়িং রুমে আসতেই চোক্ষু চড়ক গাছ হিয়ার কারণ সোফায় বসা রুপম ও তার পরিবার। কেন যেন হিয়ার খুশি লাগলো না রুপমকে এখানে দেখে শুধু বারবার মনে হচ্ছে এই লোকটা তার অনাগত সন্তানের অপরাধী। কিন্তু মুখে কিছু বলতে পারছে না। রুমপ হিয়া কে দেখে একটা হাসি দিয়ে বলল “কেমন আছো হিয়া”

কথাটা হিয়ার কান পর্যন্ত পৌছুলো কিনা কে জানে শুধু তার মন বলছে #হয়তো_আবার দেখা হবে ওই লোকটার সাথে আর তখন আমি ও জেনে নিবো তার জীবন কাহিনী। আমার সব সমাধান করে দিয়ে আমাকেই একটা প্রশ্নবোধক চিহ্ন ধরিয়ে দিয়ে চলে গেল!!

_______________সমাপ্তি ______________

(সিজন-২ এ ছেলেটার জীবনী লেখা হবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here