#হয়তো_তোরই_জন্য (The crazy lover)
#পার্ট_২_৩
#নিশাত_জাহান_নিশি
তমা হেচকি তুলে কেঁদে মাথা নাঁড়িয়ে সম্মতি জানালো। জায়ান মুচকি হেসে তমার চোখের জল গুলো মুছে দিলো।
তমা নাক টানতে টানতে জায়ানকে ক্রস করে যেই না ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়াল অমনি জায়ান তমার হাত ধরে শান্ত কন্ঠে বলল,,,,,
—-“শাড়ি ছাড়াই কি ওয়াশরুমে চলে যাবি?”
তমা মাথা নাঁড়িয়ে না জানালো। জায়ান কিছুটা বিরক্তি নিয়ে তমাকে ওর দিকে ঘুড়িয়ে তমার গালে হাত রেখে বলল,,,,,
—-“আমাকে এতো ভয় পাওয়ার কি আছে তমা? প্লিজ আমার সাথে ঠিক ভাবে কথা বল।”
মুহূর্তেই তমা কড়া কন্ঠে জায়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,
—-“আমি পারব না তোমার সাথে ঠিক ভাবে কথা বলতে। তুমি খুবই ভয়ংকর এক্টা লোক। তোমাকে দেখলেই আমার ভয় লাগে। মন চায় তোমার থেকে পালিয়ে পালিয়ে বেড়াই। তোমাকে আমি চোখের সামনে সহ্য করতে পারি না।”
জায়ান তমার হাতটা ছেড়ে কিছুটা পিছিয়ে গিয়ে জোরে চিৎকার দিয়ে বলল,,,,,
—-“কেনো আমাকে ভয় পাস কেনো? এতোটা বছরে ও আমার প্রতি তোর ভয় কাটে নি? সাত সাতটা বছর আমি তোর থেকে দূরে থেকেছি! শুধুমাএ তোর ভয়কে জয় করার জন্য। ভয়ের বদলে তোর চোখে অসংখ্য ভালোবাসা দেখার জন্য। কিন্তু না, আমি পারলাম না। সাত বছর অপেক্ষার পরে ও ব্যর্থ আমি। ভেবেছিলাম দেশে ফিরেই তোর চোখে আমার জন্য ভালোবাসা দেখব। ভেবেছিলাম তুই হয়তো আমার জন্য অপেক্ষা করতে করতে ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে উঠবি। কিন্তু দেখ… হলো এর পুরো উল্টোটা। তুই এখানো আমাকে ভয় ই পাস। কবে তোর মন থেকে আমার ভয় দূর হবে বল? আর কতো অপেক্ষা করব আমি তোর জন্য? আর কতো? আনসার মি ডেম ইট?”
তমা ধপ করে মাটিতে বসে মাথায় হাত দিয়ে জোরে চিৎকার করে বলল,,,,,
—-“তুমি আমার চোখের সামনে ঐ ছেলেটাকে মেরেছ। চোখ বুঝলেই আমি ঐ ছেলের রক্তাক্ত দেহটা দেখি। আমার হাত, পা ভয়ে শিউরে উঠে। চোখ দিয়ে অঝড়ে পানি পড়ে। পুরো শরীর ঠান্ডা হয়ে আসে। নিজেকে তখন বড্ড ভীতু মনে হয়। কিছুটা সময়ের জন্য আমি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলি। সাত সাতটা বছরের মধ্যে এমন এক্টা রাত বাদ পড়ে নি যে আমি ঐ ছেলেটাকে স্বপ্নে দেখি নি। প্রতিরাতে ছেলেটা আমাকে তাড়া করে। মনে হয় ছেলেটা আমার চোখের সামনে চলাফেরা করছে, আমার নাম ধরে ডাকছে। ভিতরটা তখন ছটফট ছটফট করে। মরণ যন্ত্রনা তখন চোখের সামনে ভেসে উঠে। খুব ভয় করে আমার খুব।”
জায়ান উদ্বিগ্ন হয়ে তমার পাশে বসে তমাকে টাইট করে জড়িয়ে ধরে তমার মাথায় বিলি কেটে নরম স্বরে বলল,,,,,
—-“শান্ত হ তমা। প্লিজ শান্ত হ। আমি তো ঐদিন অকারণে ছেলেটাকে মারি নি। ছেলেটা আমার তমার উড়না ধরে টান দিয়েছিলো তাও আবার আমার এলাকায় এসে। তাই তো মাথাটা খুব খারাপ হয়ে গিয়েছিলো। তুই তো জানিস আমার প্রচন্ড রাগ উঠে গেলে আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারি না। তাই কন্ট্রোললেস হয়ে ঐদিন ছেলেটাকে খুব মেরেছি। ছেলেটা তো পুরোপুরি মরে নি তমা। সে এখনো বেঁচে আছে হয়তো পঙ্গু হয়ে। তাহলে তুই কেনো এতো ভয় পাস? কেনো বার বার ঐদিনের কথাটা মনে করিস? ভুলে যেতে পারিস না ঐ ভয়ংকর অতীতটা?”
—“আমি পারি না জায়ান ভাইয়া। কিছুতেই পারি না। যতোই ভুলতে চেষ্টা করি ততোই আমার চোখের সামনে ভেসে উঠে। তখন নিজেকে পাগল প্রায় মনে হয়।”
—“আ’ম স্যরি তমু। আমি বুঝতে পারি নি তুই এতোটা ভয় পাবি। না হয় কখনো তোর সামনে ছেলেটাকে মারতাম না।”
তমা জায়ানের থেকে নিজেকে সরিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল। জায়ান এখনো নিচে বসে তমার দিকে তাকিয়ে আছে। তমা শাড়ির আঁচল দিয়ে নাকের জল মুছে বলল,,,,,
—-“শাড়ীটা দাও। রেডি হয়ে তাড়াতাড়ি নিচে যেতে হবে। সবাই হয়তো আমার জন্য ওয়েট করছে।”
জায়ান মুচকি হেসে বসা থেকে উঠে ল্যাকেজ থেকে এক্টা গোল্ডেন শাড়ি বের করে তমার হাতে ধরিয়ে দিলো। সাথে এক্টা প্যান্ডেন্ট। শাড়িটা ছোট ছোট গোল্ডেন কালার পাথরে ভর্তি। পাথরের ঝলকানিতে পুরো রুম আলোকিত হয়ে আছে। তমা শাড়িটার দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে। জায়ানের পছন্দ বরাবরই খুব ভালো। সে যেটাই পছন্দ করবে সেটাই তাক লাগার মতো। যেমন তমা! তমা ও ঠিক তাক লাগার মতো।
তমা খুশি খুশি মনে শাড়ীটা নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো। জায়ান তমার যাওয়ার পথে তাকিয়ে মুচকি হেসে আয়নার দিকে তাকিয়ে প্যান্ডেন্টটা ড্রেসিং টেবিলের উপরে রাখল। এলোমেলো হওয়া সিল্কি চুল গুলো জায়ান হাত দিয়ে সেট করছে। কুচকুচে কালো চোখের মনিতে তার আনন্দের ছাপ স্পষ্ট। গোলাপী ঠোঁট জোড়া তার বার বার কেঁপে উঠছে। পুরো মুখ জুড়ে তার রহস্যময়ী হাসি। জিম করা ধবধবে সাদা বডিটা কালো রঙ্গের শার্টে ফুটে আছে। জায়ান প্রাণোচ্ছ্বল হাসি দিয়ে আয়নার দিকে তাকিয়ে মিনমিন করে বলল,,,,,,
—-“বউ….তোমার সাইকো বর ফিরে এসেছে। এইবার আমি তোমাকে সত্যিটা জানিয়েই ছাড়ব। তবে এখন না। ধীরে ধীরে তোমার মনে আমার জন্য প্রেম জাগাতে হবে। এরপর সত্যিটা সামনে আনতে হবে। অনেক রহস্য লুকিয়ে আছে তোমার আর আমার মধ্যে। সব রহস্যের জট খুলে আমি নিজেকে তোমার কাছে প্রেজেন্ট করব। আপাতত না হয় আমাকে নিয়ে কনফিউশনে থাকো।”
এর মাঝেই জায়ানের হাতের সোনালী রঙ্গের ঘড়িটা টিকটিক করে বেজে উঠল। জায়ান আয়না থেকে চোখ সরিয়ে ঘড়িতে তাকিয়ে দেখল ০১:০৫ বাজছে ঘড়িতে। জায়ান নাক মুখ কুচকে ডান হাতের তর্জনি আঙ্গুল দিয়ে একনাগাড়ে কপাল ঘঁষছে আর বিড়বিড় করে বলছে,,,,,,
—“ওহ্ সিট। দুপুর ০১:০০ বাজেই তো আমার আকাশের বাড়িতে উপস্থিত থাকার কথা ছিলো। এখন তো আরো পাঁচ মিনিট লস্ট হয়ে গেলো। ধ্যাত… আমি এই জীবনে টাইম মেন্টেইন করতে পারলাম না।”
কথাগুলো বলেই জায়ান বিড়বিড় করে তমার স্টাডি টেবিল থেকে এক্টা খালি খাতা বের করে ঝুড়িতে থাকা কলমটা নিয়ে কিছু এক্টা খুব মনযোগ দিয়ে খাতায় লিখছে। লিখালিখির প্রায় পাঁচ মিনিট পর জায়ান কলমটা মুখের মাঝ বরাবর পুড়ে গভীর মনযোগ দিয়ে লিখা গুলো পড়ে খাতা থেকে কাগজটা ছিড়ে বেডের উপর রেখে দিলো। কলমটা মুখ বের করে জায়ান কাগজটার উপর খুঁটিস্বরূপ রেখে দিলো। যেনো কাগজটা বাতাসে উড়ে না যায়।
ফ্লোর থেকে ল্যাকেজটা নিয়ে জায়ান তমার ব্যালকনি টপকে ভেজা বিড়ালের মতো বাড়ি থেকে বের হয়ে গেইটের বাইরে পার্ক করা গাড়িটায় উঠে গাড়ি স্টার্ট করে ছুটল আকাশদের বাড়ির উদ্দেশ্যে।
তমা শাড়ি চেইন্জ্ঞ করে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে জায়ানকে চোখের সামনে দেখতে না পেয়ে কিছুটা অবাক হয়ে পুরো রুমটা তন্ন তন্ন করে জায়ানকে খুঁজতে লাগল। জায়ানের আবার লুকিয়ে থাকার স্বভাব। তাই তমা খাটের তল থেকে আলমারী পর্যন্ত সব ঘুটে ফেলল। বাট কোথাও জায়ান নেই।
তমা কিছুটা পেরেশান হয়ে যেই না খাটের উপর নজর দিলো অমনি সে কলম সহ কাগজটাকে দেখতে পেলো। তমা দৌঁড়ে গিয়ে কলমটা সরিয়ে কাগজটা হাতে নিয়ে কৌতুহলী দৃষ্টিতে কাগজটা পড়তে লাগল। কাগজটায় লেখা আছে,,,,,,
—“মাই সুইট তমু। আমি জানি এখন তুই ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আমাক তন্ন তন্ন করে খুঁজবি। আশা করছি এতক্ষনে খাটের তল ও চেইক করে নিয়েছিস। যাই হোক এবার মূল কথায় আসি। আমি ইতালী থেকে ফিরেই সবার আগে তোকে দেখতে ছুটে এসেছি। এখনো বাড়ি যাওয়া হয় নি আমার। আগে আকাশদের বাড়ি যাবো, ঐখানের রিসিপশান সেরে তারপর বাড়ি যাবো। মামা, মামানি, তমাল ওরা ও কেউ জানে না আমি যে ওদের বাড়িতে এসেছি। ব্যালকনি টপকে লুকিয়ে লুকিয়ে তোরর রুমে ঢুকেছি। প্লিজ ব্যাপারটা গোপন রাখিস। মামা, মামানী, তমাল কেউ যেনো ব্যাপারটা না জানে। এমনকি তাহাফ ও না। এবার আসি তোর সাজ গোজের প্রসঙ্গে। নিশ্চয়ই এখন তুই শাড়িটা পড়ে ওয়াশ রুম থেকে বের হয়েছিস? শুন এবার কি করবি। শাড়ির সাথে ম্যাচ করা প্যান্ডেন্টটা পড়বি। যেটা আমি তোর জন্য এনেছি। প্যান্ডেন্টটা ড্রেসিং টেবিলের উপরেই আছে। চোখে হালকা করে কাজল দিবি। ঠোঁটে লিপস্টিক দিতে হবে না। তোর ঠোঁট এমনিতেই সুন্দর। ভ্যাসলিন থাকলে ভ্যাসলিন দিবি। আর না থাকলে দিতে হবে না। চুলে খোঁপা করতে হবে না মাঝ সিঁথি করে চুলটা ছেড়ে রাখবি। ব্যাস এটুকুই। এর চেয়ে বেশি সাজ আমার পছন্দ না। আর এই সাজেই তোকে ভয়ংকর সুন্দুরী লাগে। সেজে গুজে মামানীর সাথে সোজা আকাশদের বাড়ি চলে আসবি। আমি তোর জন্য অপেক্ষা করব।”
তমা চিঠিটা পড়ার সাথে সাথেই নাক মুখ কুচকে চিঠিটা টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে ফেলল। খুব রাগ হচ্ছে ওর। ইচ্ছে করছে রুমের সব কিছু ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিতে। তমা উওেজিত কন্ঠে মৃদ্যু চিৎকার দিয়ে বলল,,,
—“শুরু হয়ে গেছে আবার টর্চার। এই সাইকো ছেলেটা আবার আমার লাইফে ফিরে এসেছে। কয়েকটা বছর দিব্যিই তো ছিলাম। কোনো কিছুর জন্য কেউ বারণ করে নি। যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে চলেছি। আমার বি.এফ হিসেবে আকাশ ও তো আমার লাইফে এতোটা ইন্টারফেয়ার করে নি। মাঝখান থেকে এই জায়ান এসে আমার লাইফটা এলোমেলো করে দিচ্ছে। উফফ…অসহ্য লাগছে আমার সবকিছু। আমার লাইফটা বিষপাতা হয়ে গেলো। এমনিতেই আকাশকে নিয়ে বুকটা ব্যাথায় ফেঁটে যাচ্ছে তার উপর আবার পুরোনো পাগল এসে জুটল কপালে। ফুটা লাক আমার। এক্টু যে একা সময় কাটাবো তার ও জো পাচ্ছি না।”
তমা কথা গুলো বলছে আর কপাল চাপড়াচ্ছে। হুট করে তমা আবার কিছুটা উদ্বিগ্ন হয়ে মনে মনে বিড়বিড় করে বলল,,,,
—“জায়ান ভাইয়া যদি সবাইকে লুকিয়ে ব্যালকনি দিয়ে আমার রুমে ঢুকে তবে এক্টু আগে কে এভাবে দরজা ধাক্কাচ্ছিলো? জায়ান ভাইয়া নিশ্চয়ই বাড়ির ভিতরে ঢুকে দরজা ধাক্কাবে না। তাহলে কে ছিলো ওটা?”
হুট করেই আবার দরজা ধাক্কানো শুরু হলো। তমা নিজেকে কিছুটা সংযত করে চোখের পানি গুলো মুখে দ্রুত পায়ে হেঁটে দরজাটা খুলে দিলো। দরজা খোলার সাথে সাথেই তমার আম্মু মিসেস আন্জু্ুমান কড়া চোখে তমার দিকে তাকাল। তমা মাথাটা নিচু করে মিনিমিন করে বলল,,,,,
—-“কি হলো আম্মু? এভাবে শকুনের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছো কেনো? কি করেছি আমি?”
—“না না তুমি তো কিছু করো নি। তুমি দুধের ধোঁয়া তুলসি পাতা। এক্টু আগে এসে অনেকক্ষন ধরে দরজা ধাক্কিয়ে গেছি বাট তোমার কোনো রেসপন্স ই ছিলো না। তখন ভেবেছিলাম তুমি হয়তো রেডি হচ্ছ কিন্তু এখন যা চোখের সামনে দেখছি তা তো নিতান্ত অবিশ্বাস্য। ফকিন্নির মতো শাড়ি এক্টা পড়ে বসে আছো।”
তমা কিছুটা অবাক হয়ে বলল,,,,
—-“তাহলে তুমিই এক্টু আগে এভাবে দরজা ধাক্কাচ্ছিলে?”
—-“এক্টু আগে না অনেক আগেই।”
—-“তাহলে এক্টু আগে বললে যে!”
—-“উফফফ তমা…. কথার কথা বলেছি। তুই যখন ফ্রেশ হওয়ার জন্য ওয়াশরুমে ঢুকেছিলি তখন। আরো এক্টা ঘন্টা আগে। শাড়ীর সাথে ম্যাচ করা মেরুন কালার দুল দেওয়ার জন্য তোকে ডেকেছিলাম।”
তমা তব্দা লেগে দাঁড়িয়ে আছে। সে হিসেব মিলাতে পারছে না। তমা কৌতুহল নিয়ে মিনমিনিয়ে বলল,,,,,
—-“হাতে গোনা পঁচিশ থেকে এিশ মিনিট আগে জায়ান ভাইয়া আমার রুমে ঢুকেছিলো। জায়ান ভাইয়া রুমে ঢুকার দুই মিনিট আগে থেকে কেউ আমার রুমের দরজা ধাকাচ্ছিলো। আম্মুর হিসেব অনুযায়ী আম্মু দরজা ধাক্কিয়েছে এক ঘন্টা আগে। আমার হিসেব অনুযায়ী কেউ দরজা ধাক্কিয়ে ২২ থেকে পঁচিশ মিনিট আগে। তাহলে হিসেবটা এই দাঁড়ালো যে, আম্মু ও দরজা ধাক্কায় নি আবার জায়ান ভাইয়া ও না। তবে দরজাটা ধাক্কালো কে? ওদের মাঝখানে তৃতীয় কোনো ব্যক্তি আর কে হতে পারে????”
তমার মৌনতা দেখে মিসেস আন্জুমান তমার শাড়িটার দিকে ভালো করে লক্ষ্য করে চোখ বড় বড় করে শাড়িটায় হাত বুলিয়ে বলল,,,,,
—“ওয়াও এওো সুন্দর শাড়ি! পুরো শাড়িটাতে পাথরের কাজ। খুব স্মুথ শাড়িটা।”
উনি আবার তমার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,
—-“শাড়িটা তোকে কে দিয়েছে তমা? এমন শাড়ি তো আমরা তোকে কিনে দেই নি! তবে কি দিলো?”
তমা ওর চিন্তার জগত থেকে বের হয়ে কয়েকটা শুকনো ঢোক গিলে কাঠ কাঠ গলায় মিসেস আন্জুমানের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,
—-“এএএইইইই শাড়িটা তো তো আমাকে লিমা গিফট করেছে। আমার বার্থডে তে লিমা গিফট করেছিলো এই শাড়িটা! শাড়িটা খুব কিউট তাই না আম্মু!”
—-“হুম হুম খুব কিউট। ঠিক আমার মেয়ের মতো। জানিস তমা, শাড়িটা আমার বেশ পছন্দ হয়েছে।”
হুট করেই তমা বএিশ পাঁটি বের করে মনে মনে বিড়বিড় করে বলল,,,,,
—-“ইসসস…. শাড়িটা আম্মুর পছন্দ হয়েছে। এক কাজ করি শাড়িটা আম্মুকে দিয়ে দেই। ঐ সাইকো ছেলেটার কিছুই পড়তে আমার ভালো লাগে না। কেমন জেদ জেদ লাগে। এর চেয়ে বরং আম্মুকে পটিয়ে আমি শাড়িটা আম্মুর হাতে ধরিয়ে দেই। তখন ঐ পেঁচা মুখো বাঁদড় টা আমাকে বকতে ও পারব না। বাঁদড়টাকে বলে দিবো শাড়িটা আম্মুর বেশ পছন্দ হয়েছে তাই আম্মু শাড়িটা আমার থেকে নিয়ে গেছে। তখন নিশ্চয়ই ঐ বাঁদড়টা মামানিকে কিছু বলতে পারবে না। হাজার হলে ও আমার আম্মু উনার মামানী।”
তমা অনেক জল্পনা কল্পনা করে গলাটা খানিক ঝাঁকিয়ে মিসেস আন্জুমানকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,
—-“শাড়িটা পছন্দ হলে তুমি নিয়ে নাও আম্মু। আমি না হয় এমন আর এক্টা শাড়ী কিনে নিবো।”
—-“না বেবি তোমার পছন্দের শাড়ি আমি নিবো কেনো? তাছাড়া এটা তোমার ফ্রেন্ডের গিফট। শাড়ীটা বরং তুমিই পড়ো।”
মিসেস আন্জুমান মুচকি হেসে তমার কপালে চুমো খেয়ে বলল,,,,,
—-“তমু…তুমি তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিচে চলে এসো। তোমার আব্বু আর তমাল খুব রেগে যাচ্ছে। সো কাম ফার্স্ট।”
তমা মুচকি হেসে মাথা নাঁড়িয়ে সম্মতি জানালো। মিসেস আন্জুমান সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে গেলো। তমা মুখটা ভাড় করে জায়ানের বলে যাওয়া ফর্মুলা ফলো করে আয়নার দিকে তাকিয়ে সাজতে শুরু করল। তমা সাজছে আর রাগে ফুসফুস করে বলছে,,,,,,
—“সাইকো টা কবে আবার দেশ ছাড়বে আল্লাহ্ মালুম। সাইকো টাকে দেখলেই ইচ্ছে করে জুতোর তলায় রেখে পিষে মারতে। কতো ইচ্ছে ছিলো ভয়ংকর রূপে সেজে ঐ প্রতারক আকাশটাকে আজ তাক লাগিয়ে দিবো। দেখাবো যে আমি ও ওকে ছাড়া ভালো আছি। দিব্যি সেজে গুজে বেড়াচ্ছি। বাট মাঝখান থেকে ঐ তুফানটা এসে আমার সব প্ল্যানিং ভেস্তে দিলো। উল্টো আমার উপর শাসন কায়েম করে গেলো। সাইকোটা এক্টু ও পরিবর্তন হলো না। আগের মতোই সাইকো রয়ে গেছে। যখন তখন ঠোঁট আঁকড়ে ধরে। ফাজিল ছেলে কোথাকার।”
তমা এভাবেই বিড়বিড় করছে আর রেডি হচ্ছে। তবে ওর মনে অনেক অজানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।
#চলবে……..
(গল্পটা সম্পূর্ণ না পড়ে কেউ উল্টা পাল্টা কমেন্ট করবেন না। জায়ানের চরিএ ভালো না খারাপ সেটা আস্তে আস্তে বুঝতে পারবেন। গল্পটা অনেক রহস্যময়ী। আশা করি ধীরে ধীরে বুঝতে পারবেন।)
#হয়তো_তোরই_জন্য (The crazy lover)
#পার্ট_৩
#নিশাত_জাহান_নিশি
তমা এভাবেই বিড়বিড় করছে আর রেডি হচ্ছে। তবে ওর মনে অনেক অজানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।
প্রায় দশ মিনিট পর তমা জায়ানের রেস্ট্রিকশন অনুযায়ী রেডি হয়ে নিলো। সাজ গোজ শেষে তমা কপালের মাঝখানে এক্টা কালো টিপ পড়ে নিলো। আরেক দফা আয়নাতে নিজেকে দেখে নিয়ে তমা কাবার্ডের ড্রয়ার থেকে ছোট পার্সটা হাতে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
দরজায় পা রাখার সাথে সাথেই তমা সিঁড়ির কাছে এক্টা ব্ল্যাক স্যাডো দেখতে পেলো। তিনতলা থেকে দুতলায় করিডর দিয়ে আসা দুপুরের রোদের ঝলকে স্যাডো টা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। কেমন ভয়ংকর স্যাডো টা। মনে হচ্ছে টুপি পড়ে আছে। কোনো পুরুষের স্যাডো এটা। স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে স্যাডো টা, কোনো রকম নড়া চড়া করছে না। তবে স্যাডোটার হাতে বোতল জাতীয় কিছু এক্টা দেখা যাচ্ছে। তমা ভয় পেয়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে চেঁচিয়ে বলে উঠল,,,,
—“কেকেকেকে ওখানে? ঐভাবে দাঁড়িয়ে আছেন কেনো? প্লিজ সামনে এসে দাঁড়ান? কেনো আমাকে এইভাবে ভয় দেখাচ্ছেন? প্লিজ আমার মুখোমুখি হয়ে দাঁড়ান।”
সাথে সাথেই স্যাডোটা সরে গেলো। ভয়ে তমার চোখ দিয়ে অঝড়ে পানি পড়ছে। বুকে হাত দিয়ে ঠিকভাবে শ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করছে সে। নিজেকে কিছুটা শান্ত করে তমা তিন তলার সিঁড়ির দিকে পা বাঁড়াল। তমাদের বাড়িটা তিনতলা। দুই তলায় তমারা থাকে আর তিন তলায় তমার বড় চাচা। এক তলাটা সবাই নিজেদের মতো করে ইউজ করে। কোনো ভাগ বাটোয়ারা নেই। তমার আব্বুরা দুই ভাই। তাই তারা দুই ভাই ই তিন তলা বাড়িটাতে মিলেমিশে থাকে।
তমা বুকে হাত দিয়ে ধীর পায়ে হেঁটে তিন তলায় উঠে গেলো। তমার চোখে মুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট। কারণ এই স্যাডোটাকেই তমা প্রতিরাতে দেখে। স্যাডোটা কিছুটা ঐ ছেলেটার মতো। যে ছেলেটাকে জায়ান সাত বছর আগে মেরেছিলো। প্রতি রাতে এই স্যাডোটা তমার চোখের সামনে ঘুরে বেড়ায় তবে এই প্রথম স্যাডোটা দিনের বেলায় দেখা দিলো।
তিন তলায় উঠেই তমা এক নাগাড়ে শুকনো ঢোক গিলে শাড়ির আঁচলটা এক হাতে ধরে অন্য হাত দিয়ে বুকে হাত চেপে ভালো করে চোখ বুলিয়ে তিন তলাটা চেইক করে দেখল। কিন্তু কেউ নেই এখানে। পুরো তিন তলা ফাঁকা। তিন তলার প্রতিটা রুমে তালা ঝুলছে। তমার বড় চাচা, চাচী আর চাচাতো ভাই তাহাফ একদিন আগে ঢাকায় বেড়াতে গেছে। ফিরবে কাল। তাই পুরো তিন তলাটা ফাঁকা আর নিস্তব্ধ।
তমা বুকে কিছুটা সাহস সঞ্চয় করে মনের মধ্যে হাজারো কৌতুহল নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে ছাঁদের দিকে হাঁটা ধরল। আচমকাই তমা ওর কাঁধে কারোর হাতের স্পর্শ পেয়ে আহ্ করে এক চিৎকার দিলো। চিৎকারের সাথে সাথেই তমা সেন্সলেস হয়ে ঐ ব্যক্তিটির বুকে লুটিয়ে পড়ল।
তমাল পিছন থেকে তমার কাঁধে হাত রেখেছিলো। তমাকে রুমে খুঁজে না পেয়ে তমাল তিন তলার সিঁড়ি বেয়ে যেই না ছাঁদের দিকে উঠল অমনি সে তমাকে দেখতে পেয়ে তমার কাঁধে হাত রেখেছিলো। তমার রিয়েকশান দেখে তমাল বেকুব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সে ভাবতে পারে নি তমা এতোটা ভয় পাবে।
তমাল ওর পাথর ভাব ছেড়ে তমাকে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে ধরে চোখে মুখে সহস্র আতঙ্ক নিয়ে তমার গালে চাপড় মারছে আর বলছে,,,,,,
—-“এই তমা। কি হলো তোর? চোখ খোল। আমি তোর ভাইয়া তমাল। চোখ খোল তমা। প্লিজ চোখ খুল।”
তমা নিথর হয়ে তমালের বুকে মিশে আছে। তমাল প্রচন্ড ভয় পেয়ে তমাকে কোলে তুলে দুতলায় গিয়ে তমার রুমে শুইয়ে দিলো। রুম থেকে বের হয়ে তমাল নিচ তলায় নেমে জোরে চিৎকার দিয়ে সোফায় বসে থাকা ওর আব্বু, আম্মুকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,
—-“প্লিজ তোমরা সবাই আমার সাথে উপরে চলো। তমা হঠাৎ সেন্সলেস হয়ে গেছে।”
কথাটা শোনার সাথে সাথেই তমার আম্মু আব্বু জোরে চিৎকার দিয়ে বলল,,,,
—-“কি হয়েছে তমার? তমা সেন্সলেস হয়ে গেছে মানে?”
—“একচুয়েলি দোষটা আমারই। আমার জন্যই তমা ভয় পেয়ে সেন্সলেস হয়ে গেছে। প্লিজ তোমরা আর কথা না বাড়িয়ে উপরে চলো।”
তমার আম্মু, আব্বু তমালকে ক্রস করে দুইতলায় হাঁটা ধরল। তমাল ও পিছু পিছু ছুটল। তমার রুমে ঢুকেই মিসেস আন্জুমান ডেস্কের উপর থেকে পানির পট টা নিয়ে তমার চোখে মুখে পানি ছিটাতে লাগল। বেশ অনেকক্ষন পানি ছিটানোর পর তমার সেন্স ফিরল। সবাই ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তমার দিকে তাকালো। তমা পিটপিট করে চোখ খুলে ওর আম্মু, আব্বু আর তমালের দিকে তাকালো। তমাকে দেখে বেশ স্বাভাবিক লাগছে। সে মুচকি হেসে শোয়া থেকে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,
—-“ভয় পেয়েছ তোমরা? আমি কিন্তু এক্টু ও ভয় পাই নি। কারণ এসব ঘটনা আমার সাথে রোজ ই ঘটে। তবে এই প্রথম ঘটনাটা দিনে ঘটেছে। হোস্টেলে সবসময় লিমা আমাকে সামলায়। আমাকে হুশে ফিরিয়ে আনে!”
তমার আম্মু কিছুটা হকচকিয়ে বলল,,,,,
—-“এই…তুই পাগল হয়ে গেলি নাকি? কি বলছিস এসব আবল তাবল? এসব ঘটনা রোজ ঘটে মানে?”
তমা মলিন হেসে বলল,,,,,
—-“ঐ যে স্যাডো! ঐ স্যাডোটা আমাকে প্রতিদিন রাতে তাড়া করে। ঘুমাতে দেয় না আমাকে। সারা রাত আমার আশে পাশে ঘুড়ে। বললে তো তোমরা বিশ্বাস করবে না তাই বলি না।”
হুট করেই তমাল হু হা করে হেসে বলল,,,,,
—-“বিশ্বাস করব কিভাবে শুনি? তুই তো এখনই প্রমান করে দিলি তুই কতোটা ভুল দেখিস। আরে বোকা ঐ স্যাডোটা তো আমি ছিলাম। আমিই তোর কাঁধে হাত রেখেছিলাম। সাথে সাথেই তুই সেন্সলেস হয়ে গেলি।”
তমা মলিন হেসে সবার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,
—“বলেছিলাম না? তোমরা কেউ বিশ্বাস করবে না। দেখো আমার কথাটা কেমন মিলে গেলো।”
মিসেস আন্জুমান প্রসঙ্গ ঘুড়িয়ে তমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,,,,,
—-“এখন শরীর কেমন লাগছে? যেতে পারবি তো বউ ভাতে?”
তমা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,,,,,
—-“হুম। হোয়াই নট?”
কথাটা বলেই তমা বিছানা ছেড়ে উঠছে আর মনে মনে বিড়বিড় করে বলছে,,,,
—-“আমি জানি আম্মু….প্রসঙ্গটা ঘুড়ানোর জন্যই তুমি বউভাতে যাওয়ার কথা তুলে দিলে। তোমরা কেউ বিশ্বাস ই করো না যে কেউ আমার আশে পাশে ঘুড়ে। ছায়ার মতো আমার পিছু তাড়া করে। বিশেষ করে রাতের বেলায়। আমি তার ভয়ংকর স্যাডোটা দেখতে পাই। ঠিক ঐ ছেলেটার মতো যে ছেলেটাকে জায়ান ভাইয়া মেরেছিলো। ছেলেটা এখন কোথায় গাঁ ঢাকা দিয়ে আছে আমি সঠিক জানি না বাট ছেলেটা আমার আশেপাশেই আছে। হয়তো আমার থেকে প্রতিশোধ নিতে চায়। এখন তো মনে হচ্ছে ঐ স্যাডোটাই ঐ সময় দরজা ধাকাচ্ছিলো।”
তমার মৌনতা দেখে তমার আব্বু মিঃ আফনান কড়া কন্ঠে তমাকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,
—-“কি ভাবছ তমা? তমাল তো স্বীকার ই করেছে যে ঐ সময় তমাল ই তোমাকে ভয় দেখিয়েছে। কেনো আবার এইসব নিয়ে ভাবছ? তোমার এসব ফালতু ভাবা ভাবির জন্য জয়ার বউ ভাতটা আজ মিস করে যাবো। আপু সেই কখন থেকে আমাকে ফোন করে যাচ্ছে। বার বারই এটা সেটা বলে আপুকে থামিয়ে রাখছি। মনে হয় না এইবার আর থামাতে পারব। সো প্লিজ কাম ফার্স্ট।”
তমা রাগ দেখিয়ে রুম থেকে বের হতে নিলেই দরজার হ্যান্ডেলে এক্টা ছেঁড়া শার্টের অংশ দেখতে পেলো। শার্টের কালারটা নীল কালার। তমা পিছনে ওর আম্মু, আব্বুর দিকে তাকিয়ে জলদি করে শার্টের ছেঁড়া অংশটা টান দিয়ে হাতে তুলে নিলো। সিঁড়ি থেকে হম্বি তম্বি করে নিচ তলায় নেমে তমা শার্টের ছেঁড়া অংশটা পার্সের ভিতর ঢুকিয়ে নিলো। তমার মন বলছে এটাই সেই স্যাডোটার শার্টের ছেঁড়া অংশ। হয়তো বা দৌঁড়ে পালাতে গিয়ে দরজার হ্যান্ডেলে শার্ট টা আটকে গিয়েছিলো। তমা গভীর ভাবে টেনশানে ডুবে গেলো। তমার পিছু পিছু ওর আম্মু, আব্বু আর তমাল ও হাঁটছে। বাড়ি থেকে বের হয়ে তমা সোজা গাড়িতে বসে পড়ল। মিসেস আন্জুমান তমার সাথে ব্যাক সিটে বসে পড়ল। মিঃ আফনান ড্রাইভিং সিটের পাশের সিটে বসে পড়ল। তমাল ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট করে দিলো।
অন্যদিকে,,,,,
জায়ান আকাশদের বাড়ির প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছে। আর এক্টা গলি পাড় হলেই জায়ান গাড়ি নিয়ে আকাশদের গলিতে ঢুকে যাবে। জায়ান ড্রাইভ করছে আর মনে মনে বিড়বিড় করে বলছে,,,,,,
—-“তমার কিছু কিছু কথা আমার বেশ ঘটকা লাগছে। তমার কথা অনুযায়ী রোজ রাতে তমা কাউকে দেখে বা ফিল করে। সে কেউ টাই হলো শাফিন। তমা শাফিনের কথা নিজের মুখে বলেছে।তমার বিবরণ অনুযায়ী মনে হচ্ছে তমা সত্যি সত্যিই শাফিনকে দেখে। না হয় কেউ তার ভয়ের বিবরণ এতো ভালোভাবে এক্সপ্লেইন করতে পারে না। শাফিন মানে আমি যাকে সাত বছর আগে মেরেছিলাম সে। আমার হিসেব অনুযায়ী ছেলেটা এখন পঙ্গু অবস্থায় আছে। ওর পক্ষে কিছুতেই এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় মুভ করা সম্ভব না। তাহলে কে হতে পারে সেই লোক? শাফিন নাকি অন্য কেউ? তবে কি কেউ একজন আছে যে আমার তমুকে তাড়া করছে? আমাকে খুঁজে বের করতে হবে সেই মানুষটাকে। প্রথমত শাফিনকে আমার খুঁজে বের করতে হবে। এরপর যদি ফলাফল মিলাতে না পারি তাহলে অন্য রাস্তা খুঁজতে হবে। তবে কিছুতেই আমাকে পথভ্রষ্ট হলে চলবে না। আমার আর তমার মাঝখানে অদৃশ্য শএুর অভাব নেই।”
জায়ান মনে মনে এসব কথা ভাবছে আর ড্রাইভিং করছে। হুট করেই কোথা থেকে এক্টা বড় লরী জায়ানের গাড়ির সামনে ধেঁয়ে আসতে লাগল। দুপুর টাইম তাই রাস্তাটা বেশ ফাঁকা। বড় কোনো গাড়ির আনাগোনা নেই। রাস্তায় কয়েকটা রিকশা চলছে আর জায়ানের গাড়িটা এর মাঝেই এক্টা বড় লরী সাংঘাতিক স্পিডে জায়ানের গাড়ির দিকে ক্রমশ এগিয়ে আসছে। গাড়িটার উদ্দেশ্যই যেনো জায়ানের গাড়িসহ জায়ানকে পিষিয়ে দেওয়া।
জায়ান প্রানপনে চেষ্টা করে গাড়িটা ডান পাশে ঘুড়িয়ে নিতে নিলেই লরীর ড্রাইভারটা ও লরীটা ডান পাশে ঘুরিয়ে আবার জায়ানের মুখোমুখি হয়ে গেলো। জায়ান চোখে মুখে আতঙ্ক নিয়ে ভালো করে লরীটার দিকে তাকালো। ড্রাইভারটার মুখে মাস্ক বাঁধা। চোখে ক্ষোভের অগ্নি জ্বলছে। ড্রাইভারটা যেই না লরী দিয়ে জায়ানের গাড়িটাকে চাপা মারতে যাবে অমনি জায়ান ওর গাড়িটা সামান্য পিছনে হটিয়ে লরীটাকে ক্রস করে বাম পাশ দিয়ে গাড়ি ঘুড়িয়ে ছুটে চলল সামনের দিকে। এক্টু সামনে যেতেই জায়ান নিজেকে সেইফ করে বুকে হাত দিয়ে এক সাথে কয়েকটা দম ফেলে হাত দিয়ে কপালে লেগে থাকা ঘাম গুলো মুছে গাড়িটা থামিয়ে দিলো। গাড়ি থেকে নেমেই জায়ান সামনের দিকে তাকিয়ে দেখল পুরো রাস্তা ফাঁকা। লরীটার ছায়া অব্দি নেই।
জায়ান উওেজিত হয়ে জোরে চিৎকার দিয়ে বলল,,,,,
—-“মাদার** সাহস থাকলে আমার সামনে এসে মোকাবিলা কর। এভাবে ভীরুদের মতো হাতিয়ার নিয়ে আমার সাথে লাগতে আসিস না। তুই যেই না হোস না কেনো আমি তোকে ঠিক টেনে বের করব। তুই যেই গর্তেই লুকিয়ে থাকিস না কেনো আমি তোর লেজ টেনে বের করব। তোর চোখ আমি চিনে রেখেছি। দ্বিতীয়বার দেখা হলে আমি তোকে ছাড় দেবো না। তোর জান আমি নিয়ে ছাড়ব।”
জায়ান কথাগুলো বলেই রাগে ফুসতে ফুসতে শার্টের হাতা জোড়া ফোল্ড করতে করতে গাড়ির ভিতর ঢুকে জানালা দিয়ে থুথু ফেলে নিজেকে কিছুটা কন্ট্রোল করে গাড়ি ছেড়ে দিলো।
লরীর ড্রাইভারটা এলোমেলো ভাবে ড্রাইভিং করছে আর মৃদ্যু চিৎকার দিয়ে বলছে,,,,,
—-“আজ দুজনেই আমার হাত থেকে বেঁচে গেলি। খুব পাকাপোক্ত প্ল্যান করে আজ তমার বাড়ি গিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম এডিস দিয়ে তমার অহংকারী রূপটা জ্বালিয়ে খাঁক করে দেবো। বাট হলো না এর আগেই তুই চলে এলি। নেক্সট টাইম যা ও আবার তিন তলায় উঠে তমার গায়ে এডিস ছুড়তে যাবো তার আগেই তমাল চলে এলো। বারংবার তমা আমার হাত থেকে বেঁচে গেলো। তুই একদম ঠিক করিস নি জায়ান…. তমার লাইফে আবার ব্যাক করে। তমা না তোর হবে না আমার হবে। শুধুমাএ তোর জন্য আমাকে তমার ক্ষতি করতে হবে। সাত বছর আগে থেকে তুই আমার পিছে লেগে আছিস। ইতালি যাওয়ার আগে তুই ঠিক তমাকে তোর করে নিলি। আমার হতে দিলি না তমাকে। তাই আমি ও ভেবে নিয়েছি প্রতিরাতে ভয় দেখিয়ে তমাকে তিলেতিলে মারব। কিছুটা সফল ও হয়েছি। বিভিন্ন ভাবে আমি তমার থেকে প্রতিশোধ নিয়েছি। আর পড়ে রইলি তুই। তোর কথা না হয় বাদই দিলাম। কারণ, তোকে তো আমি রাস্তায় পিষে মারব। আজ তুই আমার হাত থেকে বেঁচে গেলি বাট নেক্সট টাইম বাঁচবি না।”
লোকটা কথাগুলো বলছে আর রাগে জিদে চোখ দিয়ে পানি ফেলছে।
ঐদিকে, প্রায় পাঁচ মিনিট পর জায়ান আকাশদের বাড়ির সামনে পৌঁছে গেলো। আকাশদের বাড়ির গেইটটা সাদা অর্কিড ফুলে মোড়ানো। বেশ দারুনভাবে সাজানো গেইটটা। আকাশদের বাড়ির বিশাল বাগানে বউভাতের স্টেইজ করা হয়েছে। চারিদিকে ফুল আর বেলুনের সমারোহ। পুরো বাড়ি জুড়ে মেহমান গিজগিজ করছে।
জায়ান আর দেরি না করে হম্বিতম্বি হয়ে গাড়ি থেকে নেমে সোজা বাড়ির ভিতর ঢুকে গেলো। বাড়িতে ঢুকার সাথে সাথেই কোথা থেকে জায়ানের আম্মু, আব্বু এসে জায়ানকে ঝাপটে ধরল। নীল শাড়ি পড়ে জয়া দারুনভাবে সাজগোজ করে স্টেইজে বসে ছিলো। জায়ানকে দেখা মাএই জয়া স্টেইজ থেকে উঠে এসে জায়ানকে জড়িয়ে ধরে জায়ানের পিছনের চুলগুলো টানতে লাগল। জায়ান মলিন হেসে এদিক সেদিক তাকিয়ে জয়াকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,
—-“আকাশকে দেখছি না আকাশ কোথায়?”
জয়া মুখটা কালো করে বলল,,,,
—-“প্রায় এক ঘন্টা হলো আকাশ বাড়ি থেকে বের হয়েছে। বাট এখনো ফিরে নি।”
#চলবে,,,,,,,,,