হয়তো তোরই জন্য পর্ব ২৪

#হয়তো_তোরই_জন্য
#পার্ট_২৪
#নিশাত_জাহান_নিশি

লিমা আর জয়া তমাকে ধরাধরি করে রুম থেকে বের করে সোজা স্ট্যাজে নিয়ে গেলো। জায়ান অবশ্য টেনশানের চাপে পড়ে তমার কথা ভুলেই গিয়েছিলো। হুট করে জায়ানের তমার কথা মনে পড়ল। জায়ান হম্বিতম্বি হয়ে স্ট্যাজ থেকে উঠে যেই না সামনে পা বাড়ালো অমনি জায়ান থমকে গেলো।

তমা ধীর গতিতে স্ট্যাজের দিকে পা বাড়াচ্ছে। মুচকি হেসে মাথাটা নিচু করে রেখেছে সে। তমার চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্য্য দেখে মুহূর্তেই জায়ানের চুপসে যাওয়া মুখটায় মৃদ্যু হাসি ফুটে উঠল। জায়ান বুকের বাঁ পাশে হাত দিয়ে পিছু হাঁটতে হাঁটতে সোজা স্ট্যাজের সেট করা সোফাটায় বসে গেলো। তমার এক পা এক পা করে এগিয়ে আসাটা জায়ান খুব মুগ্ধ নয়নে দেখছে আর মাতাল করা হাসি দিচ্ছে। স্ট্যাজে উঠে তমা জায়ানের পাশের সোফাটায় বসে গেলো। জায়ান এখনো তমার দিকে তাকিয়ে আছে। কিছুতেই চোখ সরাতে ইচ্ছে করছে না তার। তমা আড়চোখে জায়ানের দিকে তাকালো। জায়ানের এমন ঘোর লাগা দৃষ্টি দেখে তমার লজ্জাটা যেনো আরো দ্বিগুন বেড়ে গেলো। তমা জলদি করে জায়ানের থেকে চোখ সরিয়ে নিলো।

তমা স্ট্যাজে বসার সাথে সাথেই হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেলো। জায়ান বেশ কিছুক্ষন পর তমার থেকে চোখ সরিয়ে হলুদের কৌটাটা হাতে নিয়ে বাঁকা হেসে তমার পুরো মুখে হলুদ লেপ্টে দিলো। তমা ঠোঁট উল্টিয়ে জায়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। জায়ান এক গাল হেসে তমার কানে কানে ফিসফিসিয়ে বলল,,,,,,,

—“আমাকে ও লাগিয়ে দে। বিশ্বাস কর আমি এভাবে ছোট বাচ্চাদের মতো ঠৌঁট উল্টিয়ে রাখব না।”

জায়ানের কথা শেষ হতে না হতেই তমা এক বাটি হলুদ নিয়ে পুরোটা হলুদ জায়ানের মুখে লেপ্টে দিয়ে খিলখিল করে হেসে দিলো। জায়ান এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে তমার খিলখিল হাসি দেখছে। এর মধ্যেই জয়া এসে জায়ান আর তমার মুখে পুনরায় হলুদ মেখে দিলো। তমা ও কম যায় না। আরেক বাটি হলুদ নিয়ে তমা ও জয়ার মুখে হলুদ লেপ্টে দিলো। শুরু হয়ে হলুদ মাখামাখি। তমাল, আকাশ, জায়ানের আম্মু,আব্বু, তমার আব্বু্, আম্মু, ওদের পরিবারের আত্নীয় স্বজনরা সবাই হলুদ ছিটাছিটিতে মশগুল হয়ে গেলো। লিমা তো অলরেডি হলুদ ভূত হয়ে গেছে। এরপর ও সে ছবি তোলা অফ করছে না। প্রতিটা ইভেন্টের ছবি তুলে তুলে সে জাবেদের কাছে সেন্ড করছে। এভাবেই হাসি খুশি, খুনসুটিতে কেটে গেলো প্রায় দুই ঘন্টা। ঘড়িতে রাত ১১ টা বাজছে। জায়ান তমাকে অনেকক্ষন ধরে বকাবকি করছে নিজের রুমে যাওয়ার জন্য। কারণ বাইরে হালকা ঠান্ডা পড়ছে। ঠান্ডা থেকে জ্বর, সর্দি বেঁধে গেলে আরেক সমস্যা। তমা কিছুতেই জায়ানের কথা শুনছে না। সে হৈ, হুল্লোড় করছে আর লিমার সাথে খুনসুটি করছে। হুট করেই কোথা থেকে তাহাফ এসে তমার গালে হলুদ মাখিয়ে দিলো। তমা বেশ অবাক হয়ে তাহাফের দিকে তাকিয়ে আছে। জায়ান এখনো কিছু খেয়াল করে নি। সে তমাল আর আকাশের সাথে আলাপে ব্যস্ত। তাহাফ বাঁকা হেসে তমার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,

—-“এতো অবাক হওয়ার কি আছে তমু? ভাই হিসেবে আমি তোকে হলুদ লাগাতেই পারি।”

তমা কিছুটা জড়তা কাটিয়ে মলিন হেসে তাহাফকে ক্রস করে সোজা নিজের রুমে চলে গেলো। তাহাফ শয়তানী হাসি দিয়ে তমার যাওয়ার পথে তাকিয়ে বলল,,,,,,

—–“হলুদটা হয়তো আগে লাগাতে পারি নি। তবে কবুলটা আমিই আগে বলব।”

কথাটা বলেই তাহাফ হনহনিয়ে স্ট্যাজ ছেড়ে নিজের রুমে চলে গেলো। এই পর্যন্ত ঘটা কোনো ঘটনাই জায়ানের চোখে পড়ে নি। রাত বাড়ার সাথে সাথে সবাই স্ট্যাজ ছেড়ে যে যার রুমে চলে গেছে। জায়ান ও স্ট্যাজ ছেড়ে নিজের রুমে চলে গেলো। তারপর আবার কি মনে করে জায়ান তমার রুমে উঁকি দিয়ে তমার ঘুমন্ত মুখটার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে ফের নিজের রুমে চলে গেলো। রুমে ঢুকেই জায়ান বিছানায় গাঁ এলিয়ে দিলো।

পরের দিন,,,,,,,

সকাল আটটা,,,,,,

তাহাফ বেশ ফুরফুরা মন নিয়ে সক্কাল সক্কাল ঘুম থেকে উঠে নীল রং এর পান্জ্ঞাবী পড়ে সোজা ডাইনিং টেবিলে বসে সবার সাথে ব্রেকফাস্টে জয়েন করল। তমা আর জায়ান বেশ হতবাক হয়ে তাহাফের দিকে তাকিয়ে আছে। তাহাফ বেশ গা ছাড়া ভাব নিয়ে নিজের মতো করে কফির মগে চুমুক দিচ্ছে। খাওয়া দাওয়া শেষে জায়ান তাড়াহুড়ো করে ব্রেকফাস্ট টেবিল ছেড়ে উঠে জাবেদের নাম্বারে কল দিলো। সাথে সাথেই জাবেদ কলটা পিক করে বেশ ব্যস্ত সুরে বলল,,,,,,

—-“হুম বল কেনো কল করেছিস?”

জায়ান মাথায় হাত দিয়ে কপাল কুঁচকে বলল,,,,,,,

—-“ভাইয়া আমার বেশ টেনশান হচ্ছে। তাহাফের শান্ত রূপটা আমাকে বেশ ভাবাচ্ছে।”

—-“তুই খামোখা টেনশান করছিস জায়ান। সবকিছু ভালোয় ভালোয় হবে। আমার মন বলছে তাহাফ ওর ভুলটা বুঝতে পেরেছে। তাই এমন শান্ত হয়ে গেছে। আচ্ছা রাখছি এখন। রেডি হচ্ছি, আর কিছুক্ষন বাদেই কুমিল্লায় পৌঁছে যাবো।”

—-“সাবধানে আসিস ভাইয়া। কোনো কিছু অস্বাভাবিক লাগলে অবশ্যই আমাকে এক্টা কল করে জানাবি।”

—-“ওকে ডিয়ার ছোট ভাই। বেশি চাপ নিস না। আমি আসছি। তাহাফ কিচ্ছু করতে পারবে না।”

—-“ওকে ভাইয়া। তোর ভরসাতেই রইলাম। রাখছি তাহলে।”

—-“ওকে বায়।”

জাবেদ কলটা কেটে যেই না জুতোর ফিতা বাঁধতে যাবে অমনি বাহির থেকে চিৎকার চেচাঁমেচির আওয়াজ শুনা গেলো। জাবেদ ভ্রু কুঁচকে তাড়াহুড়ো করে যেই না দরজা খুলে রুমের বাইরে পা রাখল অমনি এক দল লোক এসে জাবেদের মুখে কালো কাপড় বেঁধে জাবেদকে আধকোলে করে সোজা বাড়ির বাইরে পার্ক করে রাখা গাড়িটায় ঢুকিয়ে ফেলল। জাবেদ হাজার চেষ্টা করে ও নিজেকে ওদের থেকে ছাড়াতে পারছে না। জাবেদ বেশ বুঝতে পারছে জায়ানের অনুমানটাই সঠিক ছিলো। তাহাফের লোকজনই জাবেদকে পাকরাও করে ফেলেছে। জাবেদের ছুটাছুটি দেখে এক্টা মাস্ক পড়া ছেলে জাবেদের মুখে কিছু এক্টা স্প্রে করে জাবেদকে অজ্ঞান করে ফেলল। ড্রাইভ করা কালো মাস্ক পড়া ছেলেটা পকেট থেকে ফোন বের করে তাহাফের নম্বরে ম্যাসেজ করে বলে দিলো জাবেদকে কিডন্যাপ করার কথাটা। জাবেদের ফ্রেন্ড ইরফান ও তার আম্মু, আব্বু বাঁধা অবস্থায় সেন্সলেস হয়ে নিজেদের রুমে বন্দি অবস্থায় পড়ে আছে।

জায়ান কলটা কেটে বেশ নিশ্চিন্ত মনে কাজে লেগে পড়ল। তমা গোসল করে সাজ গোজে বসে পড়ল। পার্লারের মেয়েরা তমাকে সাজাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। লাল বেনারসীতে তমাকে লাল টুকটুকে বউ সাজানো হবে। তমা বেশ খুশি খুশি মন নিয়ে সাজতে বসে গেছে।

তাহাফের ফোনে টুংটাং ম্যাসেজ আসার শব্দে তাহাফ স্ট্যাজ ছেড়ে দৌঁড়ে নিজের রুমে ঢুকে গেলো। ফোনের লকটা খুলে নোটিফিকেশন চেইক করে সে ম্যাসেজটা দেখার সাথে সাথেই শয়তানী হাসি দিয়ে বিড়বিড় করে বলল,,,,,,

—-“জায়ান আজ তোর খেলা শেষ। কবুল বলার আগে যখন শুনবি তোর ভাই জাবেদ কিডন্যাপ হয়ে গেছে তখন, নিশ্চয়ই তুই আর বর সেজে বসে থাকতে পারবি না। দৌঁড়ে যাবি জাবেদকে খুঁজতে। তখনই সুযোগ বুঝে তোকে আমি গাড়ি চাঁপা দিয়ে তোর জায়গায় নিজে বর সেজে বসব। তমাকে আমিই জয় করব। পরিবারের লোকজন আমার হাতে তমাকে তুলে দিতে বাধ্য হবে।”

কথাগুলো বলেই তাহাফ রুম থেকে বের হয়ে সোজা স্ট্যাজে চলে গেলো। তাহাফ ও জায়ানের সাথে অতিথীদের আপ্যায়নে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। বিভিন্ন টেনশানে জায়ানের মাথা থেকে জাবেদের কথাটা আপাতত বের হয়ে গেছে।

দুপুর এক্টা,,,,,,

জায়ান বেশ প্রফুল্ল মন নিয়ে লাল শেরোয়ানীটা গায়ে জড়াচ্ছে। জায়ানের মুখে টেনশানরের ছাপটা আর নেই। ভীষন উৎফুল্ল মনে হচ্ছে। জায়ান আয়নার দিকে তাকিয়ে পান্জ্ঞাবীর বোতম গুলো লাগাচ্ছে আর বাঁকা হেসে মিনমিন করে বলছে,,,,,,,

—–“তাহাফ আজ তোর খেল খতম। কথায় আছে না, ওস্তাদের মার শেষ রাতে। আমি হলাম তোর প্ল্যানের সেই ওস্তাদ। এক্টু পরেই তুই চোখের সামনে আমার আর তমুর বিয়ে দেখবি। একচুয়েলি, তুই চলিস ঢালে ঢালে আর আমি চলি পাতায় পাতায়। তুই আমার বিয়েটা কিছুতেই আটকাতে পারবি না। বড্ড আপসোস হচ্ছে, কজ তোর প্ল্যানটা মাঠেই মারা গেলো।”

জায়ান কথাগুলো বলেই মাথায় গোল্ডেন আর লাল রঙ এর কম্বিনেশনে এক্টা পাগড়ী পড়ে বাঁকা হেসে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ঐদিকে তমার সাজ গোজ অলরেডি শেষ। লাল বেনারসীতে তমাকে লাল পরী লাগছে। মাথায় এক্টা বড় ঘোমটা টেনে রেখেছে সে। ঠোঁটে ঝুলে আছে লাজুক হাসি। তমা অধিক আগ্রহে বেডের উপর গোল হয়ে বসে আছে কখন তার নিচে যাওয়ার ডাক পড়বে। জায়ানকে সে লাল পান্জ্ঞাবীতে বিভিন্ন জল্পনা কল্পনায় সাজিয়ে নিচ্ছে। এর মাঝেই নিচ থেকে ডাক পড়ল, কাজী সাহেব এসে গেছে বলে। লিমা আর জয়া ও লাল শাড়ী পড়েছে। দুজনই নিচ তলা থেকে দৌঁড়ে এসে তমাকে রুম থেকে বের করে স্ট্যাজে নিয়ে গেলো। জায়ান আগে থেকেই স্ট্যাজে বসে আছে। তমাল আর আকাশ মিলে জায়ানকে স্ট্যাজে নিয়ে এসেছে। তাহাফ লাল পান্জ্ঞাবী পড়ে বেশ বর সাজে জায়ানের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। ঠোঁটে তার বাঁকা হাসি। জায়ান ঘাঁড়টা এক্টু ঘুড়িয়ে রহস্যময়ী হাসি দিয়ে তাহাফের দিকে তাকালো। এর মাঝেই তমা চলে এলো। জয়া আর লিমা তমাকে হাতে ধরে জায়ানের পাশে বসিয়ে দিলো। জায়ান বেশ উঁকিচুকি দিয়ে তমার মুখটা ঘোমটার নিচ থেকে দেখার চেষ্টা করছে বাট কিছুতেই পেরে উঠছে না। তাহাফ মুহূর্তেই জায়ান আর তমার পাশ থেকে সরে এক্টু দূরে দাঁড়িয়ে বেশ হম্বিতম্বি হয়ে কাউকে কল করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।

কাজী সাহেব লাল মলাটের এক্টা খাতায় কিছু এক্টা লিখে তমা আর জায়ানের সিগনেচার নিয়ে নিলো। লিমা অধীর আগ্রহ নিয়ে গেইটের বাইরে তাকিয়ে আছে। জাবেদের আসার পথে চোখ বুলিয়ে রেখেছে সে। এর মাঝেই লাল পান্জ্ঞাবী পড়ে জাবেদ এসে হাজির। জাবেদ বাঁকা হেসে বাড়ির গেইটের ভিতর ঢুকছে। জাবেদকে দেখা মাএই লিমা যেই না দৌঁড়ে জাবেদকে ঝাপটে ধরতে যাবে এর আগেই মিসেস আন্জ্ঞুমান দৌঁড়ে গিয়ে জাবেদকে জড়িয়ে ধরে জোরে চেঁচিয়ে বলল,,,,,,,,

—-“জাবেদ বাবা চলে এসেছিস, তোর জন্যই পথ চেয়ে বসেছিলাম।”

জাবেদ নামটা শোনার সাথে সাথেই তাহাফ ঘুরে দাঁঁড়াল। জাবেদকে জলজ্যান্ত অবস্থায় দেখে তাহাফের হাত থেকে ফোনটা ঠাস করে নিচে পড়ে গেলো। তাহাফ অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে জাবেদের দিকে তাকিয়ে আছে। হুট করে জায়ান হু হা করে হেসে বসা থেকে উঠে তাহাফের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে জোরে চেঁচিয়ে বলল,,,,,,,

—-“খুব অবাবাবাক হয়ে গেছো তুমি তাই না তাহাফ ভাইয়া? জাবেদ ভাইয়াকে চোখের সামনে অক্ষত অবস্থায় দেখে খুব চমকে গেছো? তুমি আবার ভেবে বসো না চোখের সামনে তুমি ভূত দেখছ। যা দেখছ একদম সত্যি দেখছ। স্বয়ং জাবেদ ভাইয়া তোমার চোখের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আমার ফ্রেন্ড সুইটু তোমার পুরনো ড্যারা থেকে জাবেদ ভাইয়াকে উদ্ধার করে এনেছে। আমি জানতাম তুমি কোনো না কোনো চাল চালবে। তাই তো ইরফান ভাইয়ার বাড়ির সামনে একজন সিভিল পুলিশকে ২৪ ঘন্টার জন্য গার্ডে লাগিয়ে রেখেছিলাম।”

তাহাফ চোখ মুখ লাল করে চোয়াল শক্ত করে হুট করে পান্জ্ঞাবীর পেছন থেকে এক্টা রিভলবার বের করে সোজা জায়ানের কপাল বরাবর গুজে বলল,,,,

—-“তাহাফ এতো সহজে হারতে শিখে নি জায়ান। এই যুদ্ধে তাহাফ ই জিতবে। তমাকে তাহাফ ই জয় করে নিবে। তুই যেহেতু আমার প্ল্যানটা ধরেই ফেলেছিস তাহলে এবার আমার হাতেই মর।”

প্যান্ডেলে উপস্থিত সবাই ভয়ে চুপসে গেছে। জায়ানের আম্মু তো সেন্সলেস ই হয়ে গেছে। তাহাফের আব্বু, আম্মু পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বাড়ির সব মেহমানরা ভয়ে এতক্ষনে লেজ গুটিয়ে পালিয়েছে। জয়া আর তমা চিৎকার করে কাঁদছে। জাবেদ দৌঁড়ে গিয়ে দুজনের পাশে দাঁড়িয়ে বেশ শান্ত কন্ঠে তাহাফকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,

—-“তাহাফ প্লিজ ছেলে মানুষী করিস না। বন্দুক টা সরা। আমরা আপোসে ব্যাপারটা মিটিয়ে নেই। এভাবে নিজেদের মধ্যে রেশারেশি করে কোনো লাভ নেই। তুই যা বলবি আমরা তাই মেনে নিবো। তোর কথাই শেষ কথা হবে।”

তাহাফ বাঁকা হেসে জাবেদের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,

—-“এবার কোনো ছাড়াছাড়ি নেই। সোজা কবরে পাঠাবো। রাস্তা ক্লিয়ার করতে হবে। আপোসে কোনো কিছুই সলভ হবে না। উল্টো আমাকে সেক্রিফাইজ করতে হবে। সেক্রিফাইজ জিনিসটা আমার দ্বারা হয় না। তমাকে আজ এই মুহূর্তে আমি বিয়ে করব।”

জায়ান বাঁকা হেসে তাহাফের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,,

—-“তোর এই মিছে আশা কখনো পূরণ হবে না তাহাফ। তমা শুধু আমার। সাত বছর আগে থেকেই তমা আমার। আজ ও তমা আমারই হবে। দ্বিতীয়বার বিয়েটা আমিই তমাকে করব। আর তুই হবি উচ্ছেদ।”

কথাগুলো বলেই জায়ান যেই না তাহাফের বুকে কিক মারতে যাবে এর আগেই তাহাফ রিভলবারের টিগারটা চেপে ধরল। জায়ান বেশ ভয় পেয়ে গেলো। জাবেদ,তমাল আর আকাশ মুখে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কিছু করতে পারছে না ওরা। তাহাফকে ক্ষেপাতে গেলেই বড় সড় এক্টা কান্ড ঘটে যাবে। যে ভুলের মাসুল দিতে হবে জায়ানকে। দুই পরিবারের সবাই নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চোখের সামনে যা যা হচ্ছে সবটাই ওদের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে।

হুট করেই তমা কাঁদতে কাঁদতে তাহাফের পায়ে লুটিয়ে পড়ল। তমা তাহাফের পা ধরে কাঁদছে আর বলছে,,,,,,,,

—-“প্লিজ তাহাফ ভাইয়া আমার বরকে ছেড়ে দাও। প্লিজ আমাকে বিধবা করো না। আমি জায়ানকে ছাড়া বাঁচব না। জায়ানের যদি কিছু হয়ে যায় আমি নিজেকে শেষ করে দিবো। তখন কিন্তু তুমি আমাকে ও পাবে না। আমার মরা মুখটা তখন চোখের সামনে সহ্য করতে পারবে তো? কাফনের কাপড়ে আমাকে দেখতে পারবে তো?”

মুহূর্তেই তাহাফ চোখের জল ছেড়ে জায়ানের কপাল থেকে বন্দুকটা সরিয়ে নিজের কপালে তাক করে মায়া ভরা দৃষ্টিতে তমার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,

—-“তোকে কাফনের কাপড়ে দেখতে পারব না তমু। তাই নিজেকেই শেষ করে দেবো। আমি বেঁচে থাকলে তোরা কখনো সুখি হতে পারবি না।”

কথাগুলো বলেই তাহাফ চোখ বন্ধ করে নিজের কপাল বরাবর বন্দুকের টিগার চেঁপে দিলো। সাথে সাথেই তাহাফ জায়ানের বুকে লুটিয়ে পড়ল। গুলির আওয়াজে পুরো বিয়ে বাড়ি কেঁপে উঠল। তাহাফের আম্মু আব্বু সাথে সেন্সলেস হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। জায়ান ছলছল চোখে তাহাফকে আঁকড়ে ধরে আছে। তমা তাহাফের রক্তভরা মুখটার দিকে তাকিয়ে আছে। জাবেদ, তমাল, আকাশ, জায়ানের আব্বু দৌঁড়ে এসে তাহাফকে ধরল। তমার আম্মু চিৎকার দিয়ে জয়াকে ঝাপটে ধরল।

জায়ান নিজেকে কিছুটা সামলিয়ে তাহাফকে আধকোলে করে গেইটের দিকে দৌঁড়ে গেলো।

#চলবে,,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here