#অচেনা_শহর 💖
#সিজন (২)
#লেখিকা:–তানজিনা আক্তার মিষ্টি
#পর্ব:–[৬]
নিস্তব্ধতা চারদিকে অন্ধকার রুমে হাটুতে মাথা দিয়ে চুপটি করে বসে আছি। চোখ দিয়ে গলগল করে পানি পড়ছে।তিন দিন হয়ে গেছে আমি নিশাতের গেস্ট রুমে আছি। আর আমাকে নিজেদের রুমে রেখেছিল আমি ছোট গেস্ট রুমে চলে এসেছি। এখানে ভাড়া দিব বলেছি। এতে না মানলে থাকবো না তাই ওরা মেনে নিয়েছে।
কাকা সেদিন বিকেলে আমাকে ফোনটা দিয়ে যায়।ফোনটা পাওয়া মাত্রই আদ্রর নাম্বারে কল করি। কিন্তু নো রেস্পন্স আমার ফোনটা ভুল করেও ধরে না। পাগলের মতো সারারাত কল করি কিন্তু আদ্র ত রিসিভ করেনা উল্টো কেটে দেয়।
ভাবলাম হয়তো রেগে আছে এখন ধরবে না তাই ফোন রেখে ঘুমিয়ে পড়ি ছটফট করতে করতে।
পত্রিকায় দেখে একটা চাকরির নোটিশ দেখতে পায় সেটা দেখেই আমি সেখানে ইন্টারভিউ দেওয়ার জন্য চলে যায়।
আল্লার রহমতে চাকরিটা আমার হয়ে যায় কিন্তু আদ্র কিছু তেই আমার ফোন রিসিভ করছে না তিন দিন হয়ে গেল। এখন যতবারই ফোন দেই শুধু বিজি দেখায়।না একবার আমাকে কল করে। কাকার সাথে কথা হয় একবার জিজ্ঞেস করেছিলাম। কিন্তু বলিনি যে আদ্র আমার ফোন রিসিভ করে না লজ্জায় বলতে পারিনি।
আদ্র আপনি আমার সাথে এতটাই অভিমান করেছেন যে তিন দিন আমার সাথে কথা না বলে আছেন। কিভাবে থাকতে পারছেন। আপনি তো আমার সাথে এক মুহূতে ও কথা না বলে থাকতে পারেন না।
হাটুতে থেকে মাথা উঠিয়ে বারান্দায় চলে এলাম।বাইরে ঘুটঘুটে অন্ধকারে বেলকনি থেকে যতদূর চোখ যায় তাকিয়ে রইলাম। মাথা উঁচু করে আকাশের দিকে তাকালাম,
আজকের চাঁদটা একদম ভরা মাসের শেষে যে। কাল থেকে নতুন মাসের সূচনা। চাকরি তে ও কালকে জয়েন করতে বলেছে।
চাকরি হয়েছে সেই একটা আনন্দ হয়েছিল আমার মধ্যে। অনেকদিন পর খুশি লাগছিল কিন্তু সেই খুশিটা আমি উপভোগ করতে পারছিনা। আদ্রর সাথে কথা না বলতে পেরছ আমার বুকের ভেতরটা দুমড়ে-মুচড়ে যাচ্ছে।
চোখের জল চিকচিক করছে। ফোন বের করে আরেকবার কল করলাম। এবার নাম্বার বন্ধ।
আপনি ইচ্ছে করে আমাকে এগনোর করছেন। আমি জানি আপনি এখন জেগে আছেন কষ্ট পাচ্ছেন কিন্তু তবু জেদ করে আমার ফোন রিসিভ করছেন না। আর এখন ফোন বন্ধ করেছে যাতে ভুল করেও ফোন রিসিভ না করেন। কারণ আমার ফোন দেওয়া দেখে তো আপনি নিজেকে কন্ট্রোল রাখতে পারছেন না।
আপনি আমার ফোন নাই ধরুন তবু আমি আর আপনাকে ভুল বুঝবো না। একবার দেশে চলে আসুন আপনাকে আমি আর নিজে থেকে দূরে যেতে দেবো না। শক্ত করে ধরে রাখবো। আপনার বুকে মাথা রেখে একটা শান্তির নিশ্বাস ফেলবো।
পরদিন ঘুম থেকে উঠে রান্না ঘরে এলাম আমি কাকিমাকে বলেছি যে আমি যতদিন এখানে আছি রান্নার কাজটা আমি করব।কাকিমা বলেছিল কাজের লোক থাকতে আমি কেন আমি জোর করেছি কারণ খাবারটা তাদের সাথে খেতে বলেছে। বিনা পয়সায় তো আর খাওয়া যায় না তাই এই কাজটা করব।রান্নাঘরে এসে রান্নার কাজ করতে লাগাম আর সাথে সাথে ওই চাচিটাও করতে লাগল চাচির মানে এখানকার কাজের লোক। দুজন মিলে রান্না করলাম।রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে আবার অফিসে যেতে হবে।
খাবার টেবিলে সবার খাবার বেড়ে নিজে ও খেতে বসলাম সবাই আছে তখন নিশাত বলল,,
তুমি আজকে অফিসে যাবে?
আমি খাব একটু মুখে দিয়ে নিশাতকে বললাম,,
হ্যাঁ এখন।
আমি এখনই যাচ্ছি তাহলে চলো তোমাকে ড্রপ করে দিয়ে যাব নি।
আর সাথে সাথে না করে উঠলাম,,
না না তার দরকার নাই আমি একাই চলে যেতে পারবো।
প্রথম দিন আজকে না হয় দিয়ে আসি এরপর থেকে একাই যেও।
আজকে ও একাই পারবো। আপনি আমাকে কিছু টাকা ধার দিন। আমার কাছে তো টাকা পয়সা কিছু নাই। বেতন পাইলে দিয়ে দিব।
দিতে হবে না নাও।
আমি নিশাতের মুখের দিকে তাকিয়ে বললাম,
দিতে হবে না কেন আপনার টাকা আমি কেন রাখব? বেতন পেয়ে দিয়ে দেবো।
কড়া গলায় বললাম।
আচ্ছা দিও। আমার সাথে যাবে না।
নাহ।
ওকে টেক কেয়ার। সাবধানে যেও।
বলে নিশাত আমার সামনে 1000 টাকার নোট রাখল অনেক গুলো।
আমি সাথে সাথে দাঁড়িয়ে একটা নোট রেখে আর গুলো দিয়ে দিলাম।
এত টাকা দিচ্ছেন কেন?
লাগবে এক মাস চলবে না।
এত টাকার দরকার নাই আমার মাস আসবে 5000 টাকা আপনি যদি আমাকে এক মাসে 10000 টাকা দিয়ে দেন তাহলে আমি আপনার টাকা শোধ করবো কয় মাস ধরে।
_______
প্রথম দিন অফিসে আসলাম ভয়ে আমার হাত পা কাপছে। গুটি গুটি পায়ে লিফটে উঠলাম চারতলা আমার কাজ। অফিসে ঢুকতেই বুশরা আপুকে পেয়ে গেলাম
যার কাছে যে কালকে হেলপ পেয়েছিলাম
উনি আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছিল ইন্টারভিউ কোথায় হয়।
আমাকে দেখে একটা মিষ্টি হাসি দিলাম,
তোমার নাম কি জানো ও স্নেহা রাইট?
আমি মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ বললাম।
কেমন আছো স্নেহা আগেই চলে এসেছে দেখছি।
আলহামদুলিল্লাহ ভালো, আপনি?
এইতো আলহামদুলিল্লাহ! ভয় পাচ্ছো নাকি আজকেও।
হ্যাঁ কিছুটা।
কোন উপায় নেই চলো তোমাকে কেবিন দেখিয়ে দেই।
আপু আমাকে নিয়ে আমার কেবিনে এলো। বসার জায়গা আছে টেবিল আছে আর একটা ল্যাপটপ ল্যাপটপ তাতে আমাকে কাজ করতে হবে।
তাহলে নিজের কাজ করতে থাকো আমি আসি।
আমি মাথা দুলালাম আপু চলে গেল আমার আশেপাশে অনেকেই আছে। আমি বসে আছি হঠাৎ কেউ এসে আমার সামনে দাঁড়ানো।
মাথা উঁচু করে দেখে একটা ছেলে আমি ব্রু কুঁচকে তার দিকে তাকালাম,,
হাই মিস আপনি কি নতুন?
আমি মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ বললাম।
ও তাই মনে হচ্ছিল তোমার নাম কি?
মনে একটা দাঁত বের করে হাসি দিল। ছেলেটার কথাবার্তা আমার ভাল লাগছে না প্রথমে আপনি এখন আবার তুমি বলছো।
তবুও অসম্মান করলাম না যদি বস হয় তাই বললাম, স্নেহা।
ও ভেরি নাইস নেম । মাই নেম ইজ মুহিত।
বলে একটা বিচ্ছিরি হাসি দিল। বিচ্ছিরি কিনা জানিনা আমার ছেলেটাকে বিচ্ছিরি লাগছে। ছেলেটার পরনে ভালোই পোশাক-আশাক প্যান্ট শার্ট ইন করার কোট গায়ের রং শ্যামলা। কথাবার্তা ভালো লাগছে না কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে।
ওকে বিউটিফুল লেডি কাজ করো আমি তোমার সিনিয়ার। আবার পরে কথা হবে বস এসে আবার গল্প করতে দেখলে ধমক দেবে।
বলে ছেলে টা চলে গেল খুব দুরে না আমার থেকে তুই সেট পরে ছেলেটার কেবিন বসে আমার দিকে তাকিয়ে হাঁসি দিলো। আমি ভাবলাকান্তর মত ছেলেটা হাসি দেখে বিরক্ত হয়ে কাজ করতে লাগলো।
কখন বস আসলো সেই সব কিছু দেখলাম না। আমার যে ইন্টারভিউ নিয়েছিল সে ম্যানেজার। তো ছুটির পর জানতে পারলাম বস সিলেট গেছে এক সপ্তার জন্য।
সো এক সপ্তাহ বস আসবেনা।
ছুটি হল 6 টায়। ছুটির পর দেখা হল নিশাত এর সাথে ও গাড়ি নিয়ে অফিস থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে ছিল আমি বেরোতে আমার সামনে এসে দাড়াল।
আপনি এখানে কি করছেন?
চলো আমার কাজ আজকে আগেই শেষ হয়েছে এ জন্য ভাবলাম তোমাকে নিয়ে যায়।
আমি বিরক্ত হয়ে বললাম,
আর কখন আমাকে নিতে আসবেন না আপনারা আগে কাজ শেষ হলেও না।
নিশাত মন ক্ষুন্ন হয় আমার দিকে তাকিয়ে রইল।
অফিস বেশ ভালই চলছিল দেখতে দেখতে এক সপ্তাহ কেটে গেল। অফিস নিয়ে আমার দিনটা ভালই যাচ্ছিল।মাঝে মাঝে ওই ছেলেটা মুহিত এসে গায়ে পড়া ভাবটা করে আর গল্প করার চেষ্টা করে। কিন্তু আমি একদমই পাত্তা দেই না। নতুন একটা ফ্রেন্ড হয়েছে। নাম সোনিয়া খুব ই ভাল মিশুক।সারাদিন কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও দিন শেষে রাতের অন্ধকারে চোখ দিয়ে শুধু নোনাজল পারে। দেখতে দেখতে এক সপ্তাহ কেটে গেল কিন্তু আদ্রর আমার খোঁজ নিলোনা।আমি চাতক পাখির মতো ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকি কিন্তু ফোনটা আর কোন কল আসে না।
রাতভর আমি ঘুমাতে পারি না আদ্রর জন্য ছটফট করি। এমন শাস্তি না দিলেও পারতে। এত কষ্ট আমার আর সহ্য হচ্ছে না।
এক সপ্তাহ পর থেকে বস আসা শুরু করেছে কিন্তু বস বসে সাত তালায়। এজন্য বসের সাথে আমার দেখা হয় না আমি চারতালা শুধু কাজ করি।
এক মাস পার হয়ে গেল চাকরির বেতন পেয়েছি। বেতন পেয়ে নিশাতের ১,০০০ টাকা ফেরত দিয়েছি। বাসা ভাড়া দিয়েছি ২,০০০ টাকার উপরে তারা নিবে না। শুক্রবার করে অন্তরা এসে হাজির। সাথে হৃদয় কেউ নিয়ে এসেছে।
হৃদয়ে এসে আমাকে বলল , এই ম্যাডাম কেমন আছেন? আপনার তো কোনো খোঁজ খবরই নাই।
আমি হেসে বললাম আলহামদুলিল্লাহ ভাল আপনারা কেমন আছেন?
ভালো আছি। এখন আরেক জনকে
অন্তরা হৃদয়ের হাতের চিমটি দিল। হৃদয় লাফিয়ে উঠলো,
কি হয়েছে? আমি ভ্রু কুচকে বললাম,
অন্তরা হৃদয়ের কানে ফিস ফিস করে কি যেন বললো,
কিরে অন্তরা তুই ওর কানে কি বললি ফিসফিস করে।
কই কিছু নাতো। শুন আমরা যে জন্য আসছিলাম।
কি জন্য এসেছিস?
স্নেহা পরীক্ষা দিবি না।
কিসের পরীক্ষা?
ইনকোর্স?
দেব না কেন দেবো কবে থেকে পরীক্ষা?
সামনে সপ্তাহ।
ওহ ফিস কত আমাকে জানাস এমনিতে ক্লাস করতে পারবোনা এক্সাম এর সময় ঠিক পৌঁছে যাব।
কি ভাই আগে সব জানালে ভালো হতো।এভাবে কষ্ট করে চাকরি করে একা চলা টা খুব কষ্ট স্নেহা।
হ্যাঁ জানি। কিন্তু আমাকে একাই চলতে হবে। আরে একা কোথায় তোরা আসিস না। আদ্র এসব জানানো যাবে না বিদেশ থেকে ওকে টেনশনে রাখতে চাইনা। ও পাগলামি করবে কতটা পাগল জানিস তো তোরা।
এক ঘন্টার মতো থেকে ওরা চলে গেল।
বাইরে এসে অন্তরা হৃদয়ের পিঠে ধামধোম কয়টা থাপ্পড় লাগাতে লাগলো।
ওরে আল্লাহ কেউ আমায় বাঁচাও প্লিজ মেরে ফেললো।
কে বাঁচাবে তোমাকে কেউ না। তুমি আর একটু হলেই সব বলে দিতাছিলা।
সরি সোনা মুখ ফসকে যাচ্ছিল।
যাবেই তো তোমাকে দিয়ে একটা কাজ হলে হয়। আহাম্মক একটা সবসময় আকাম করতেই থাকো।
একদম বকবে না আমি কিন্তু বলে দেয়নি মুখ ফসকে ছিল কিন্তু পুরোটা বের হয়নি।
সেটা আমার জন্য আমি যদি তোমাকে চিমটি না দিতাম সবটুকুই বলে দিতে।
রাক্ষসীর মত আমাকে চিমটি দিয়েছো। দেখ লাল হয়ে গেছে।
বের হলে তোমার মাংস ওঠিয়ে আমি রান বানিয়ে খেতাম।
কি রাক্ষসী রে বাবা?
আবার রাক্ষসী বললে আরেকবার রাক্ষসী বললে তোমাকে আমি মেরে তক্তা বানিয়ে ফেলবো। ডেকে বলল অন্তরা।
আচ্ছা ভয় পাইছি আর মেরো না। খালি ঝগড়া করো কেন? আমরা এখন উঠবি হাসবেন্ড ওয়াইফ। ঝগড়া কি মানায় বলো।
বলে হৃদয় অন্তরাকে এক হাতে জড়িয়ে ধরল।
অন্তরা সাথে সাথে ঝামটা মেরে হাত সরিয়ে দিল।
ডোন্ট টাচ মি? এটা রাস্তা দেখতে পাচ্ছ না। রাস্তায় অসভ্যতামি করা হচ্ছে।
~~চলবে~~