অচেনা শহর পর্ব ৭+৮

#অচেনা_শহর 💖
#সিজন (২)
#লেখিকা:–তানজিনা আক্তার মিষ্টি
#পর্ব:–[৭]

অফিসের একটা জরুরি কাজ করছিলাম। তখন নিশাত দরজায় নক করলো,

“আসতে পারি।

মাথা উঁচু করে বললাম, “আসুন।

নিশাত ভেতরে এসে দাঁড়িয়ে বলল,

“এখনো কাজ করছো। কতো রাত হয়েছে জানো।
গভীর ভাবে তাকিয়ে বলল।

“হুম আসলে পরিক্ষা তো তাই কাজ গুলো করে রাখছি।

‘হুম তা ভালো কিন্তু এতো রাত রেগে করা টা ঠিক না। অসুস্থ হয়ে যাব রাত জাগলে।

‘আমার অভ্যাস আছে।আপনি জেগে আছেন যে।

“আমি তো রাত করেই ফিরি। আর আজ এসে তোমার রুমের আলো দেখলাম তাই দেখতে এলাম কেন?

“ওহ। যান ঘুমিয়ে পরুন।

“তুমি ঘুমাবে না।

‘হুম লেট হবে।

“কিন্তু থাক যা বলতে এসেছিলাম আদ্রর সাথে তোমার যোগাযোগ হয়? ”

আদ্রর নাম শুনতেই বুকটা মোচর দিয়ে উঠলো। আমি থমকে নিশাতের দিকে তাকালাম। উৎসুক হয়ে তাকিয়ে আছে নিশাত আমার দিকে।
আমি তারাতাড়ি মাথা নিচু করে ফেললাম,
কষ্ট হচ্ছে খুব নিজের ইমোশনাল অন্য কাউকে দেখাতে চাই না। চোখ জ্বলে উঠলো দীর্ঘ শ্বাস ফেলে মাথা উঁচু করে বললাম,,

“হয়।” জরানো কন্ঠে কান্না গলায় আটকে আছে।

নিশাত আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আমার ছটফট দেখে ভ্রু উঁচু করে তাকিয়ে আছে। আমি মাথা নিচু করে আছি নিশাত আবার কিছু বলতে যাবে আমি বললাম,,

“আমার ঘুম পাচ্ছে আপনি আসতে পারেন কথা থাকলে কাল বলবো।”
বলে চোখ ঢলতে লাগলাম। হাতের কাগজ সরাতে লাগলাম।

“স্নেহা তুমি কি কিছু লুকাচ্ছো?
সন্দেহ চোখে তাকিয়ে।

আমি পেপার নিয়ে উঠে টেবিলে রাখলাম।
“আপনি আসতে পারেন।”

নিশাত অসহায় মুখ করে তাকিয়ে বেরিয়ে গেল।
আমি দরজা আটকে দিলাম ঠাস করে। লাইট নিভিয়ে অন্ধকার করে চুপ করে বসে র‌ইলাম। ফোন বের করে আদ্রর একটা পিক বের করে দেখতে লাগলাম।
আদ্রর হাসামাখা মুখ ভেসে আছে ফোনে স্কিনে। আমি ছলছল চোখে আদ্রর দিকে তাকিয়ে আছি।
আই মিস ইউ আদ্র।
ফোনটা বুকে চেপে বসে আছি চোখ বন্ধ করে।

ইনকোর্স পরিক্ষার জন্য ছুটি নিতে হবে আজকে পরিক্ষা দিতে তিন দিন লাগবে কারণ একদিন দুটা করে। এর জন্য আমাকে যেতে হবে বড় স্যার এর কাছে।তাকে কখনো দেখি নি কি ভাবে তার কাছে ছুটি চাইবো আমি।
বুশরা আপুর কাছে গিয়ে কাচুমাচু করে দাঁড়িয়ে আছি।

আপু বিরক্ত হয়ে বলল,,
কি হয়েছে স্নেহা এভাবে ঘুরঘুর করছো কেন?

আমি মুখ ছোট করে বললাম,,
আপু সরি। কিন্তু আমার একটু হেল্প লাগতো।

আপু বলল, হুম বলো।

আমি বললাম, ” আমাকে সাহায্য করো না। আমি বসে কাছে যেতে পারবো না তুমি একটু।

বিরক্তিকর চোখ মুখ করে,,আমি পারবো না বলছি তো।এতে রাগ করবে স্যার।

আমি আপুর হাত ধরে আকুতি মিনতি করে বললাম,,
প্লিজ ছোট বোন ভেবে একটু দেখ না।

আপু ধমক দাঁতে গিয়ে ও দিলো না কারণ তার ইমোশনাল জায়গায় আঘাত করেছি এবার আর কিছু বললো না।রেগে তাকালো,
‘দিলি তো আমাকে ইমোশনাল করে অসভ্য মেয়ে।”

আপুর মনটা ভালো কিন্তু সব সময় শক্ত হয়ে থাকে কিন্তু আমার সাথে পারেনা।
আপুকে আমার খুব‌ই ভালো লাগে। অফিস শেষ করে বের হতেই মুহিত এসে দাঁড়াল পাশে আর বত্রিশ টা দাঁত বের করে হাসি দিল।
ছেলেটা বেশিই জ্বালাচ্ছে। আমি বিরক্ত হয়ে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলাম।

কেমন আছেন সুন্দরী?

আপনি আমাকে এসব বলবেন না।

কেন কি হয়েছে?

আমার বিরক্ত লাগে।
বিরক্ত নাক মুখ কুঁচকে বললাম।

মুহিতের মুখটা ছোট হলে ও কিছু বললো না, আবার বললাম,
‘স্নেহা ফুচকা খাবেন?

আমি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললাম,,

এই সন্ধায় ফুসকা আসলো কোথা থেকে?

অন্ধকার হয়ে আসছে এই সময় ফুচকার কথা শুনে চমকেছি।
মুহিত হাত উঁচু করে দেখালো আমি তাকিয়ে দেখলাম সত্যি ফুচকা ওয়ালা দাড়িয়ে আছে।
আমি দেখে খুশি হলাম কিন্তু বুঝতে দিলাম না।

কি হলো খাবেন? চলুন না খাই।

না আমি ফুচকা খাই না।

বলেন কি খান না এমন কোন মেয়ে আছে যে ফুচকা খান না?
বিস্মিত হয়ে বলল।

আমি আছি।

রাগ লাগছে গাড়ি আসছে না কেন? আজকেই এতো লেট করছে আর আজকেই ওই ছেলেটার জ্বালাতন বিরক্তিকর পরিস্থিতি।

আচমকা মুহিত আমার হাত ধরে নিল। আমি বিষ্ময়ে হতদম্ব হয়ে গেলাম চমকে উঠে ওর দিকে তাকালাম রাগে আমার গা কাপছে। কতো বড় সাহস আমার হাত ধরেছে।ছেলেটা হাত ধরেই হাঁটতে শুরু করেছে ফুচকা ওয়ালার দিকে আমার রেগে আরেক হাত দিয়ে হাত ছুটাতে চাইছি আর বলছি।

হাত ছারুন কি করছেন এসব? হাত কেন ধরেছে সব কিছুর একটা লিমিট আছে ছারুন।

ফুচকা ওয়ালার কাছে এসেই হাত ছেড়ে দিল। তারপর হেসে বললো,,
এতো রাগছেন কেন? ফুচকা খাওয়ার জন্য ই তো আনলাম।

আমি বললাম না আমি খাব না।

হুম কিন্তু আমার মনে হলো লজ্জা পেয়ে না করেছেন?

অসভ্য লোক লজ্জা পাওয়ার কি আছে কে আপনি? ফারদার এমন করলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।

বলেই গটগট করে চলে এলাম।ছেলেটার মন মতলব ভালো না খারাপ বাজে ছেলে একটা।
কিছুদূরে আসতেই গাড়ি পেলাম গাড়িতে উঠে চলে এলাম।
পরদিন কলেজে এসে ফিস জমা দিয়ে কলেজের চারপাশ তাকিয়ে দেখছি কতোদিন আসলাম।
এই কলেজেই তো আদ্রর সাথে সমস্ত মুহূর্ত এই মাঠে তো প্রথম দেখা হয়েছিল আদ্রর সাথে পুরোনো কথা ভাবছি আর আশেপাশে দেখছি।
তখন একটা পরিচিত কন্ঠ শুনে চমকে তাকালাম রাহাত ভাইয়া।

ভাইয়া কেমন আছেন?

আলহামদুলিল্লাহ তুমি?

আলহামদুলিল্লাহ।

অবশেষে তোমার দেখা পেলাম। তুমি তো হারিয়েই গেছিলে এতো দিন কোথায় ছিলে।

আমি কিছু বললাম না‌।
অন্য কথা বললাম,
” আপনি এখানে কি করছেন?

আমি এমনি এসেছিলাম তোমাকে দেখলাম তাই কথা বলতে চলে এলাম।

ওহ।

ঘন্টা পরায় আর কথা হলো না বিদায় নিয়ে চলে এলাম। অন্তরাও এলো দুজনে ক্লাসে চলে এলাম।
রাহাত ভাইয়ার সাথে কথা বলে ভালো লাগলো না ছেলেটা কেমন করে যেন তাকাই ছিলো।
আগে এতো এমন মনে হয়নি। পেছনে ফিরে যত বার তাকিয়েছি তাকে ভয়ংকর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা দেখেছি। এই দৃষ্টির মানে কি আমি তা ভাবছি কিন্তু… না থাক আমার ভুল হতে পারে সব বাদ দিয়ে পরিক্ষা দিলাম।

_________

হ্যালো ম্যাডাম মেয়েটা তো খুবই জেদি?

হ্যাঁ আমি জানি কিন্তু ওকে তোমায় বশ করতে হবে জোর করে পারো নরম কথায় হোক যেভাবেই হোক।

আচ্ছা ম্যাডাম আর আপনাকে ছবিগুলো পাঠিয়ে দিয়েছি দেখেন ভালো হয়েছে কিনা।

ওকে, কিছুদিন দেশে থাকবে না এর মাঝে স্নেহার একটা ব্যবস্থা করে ফেলো।

don’t ওরি মেডাম, আপনি চিন্তা করবেন না আমি আমার কাজ হাসিল করেই ছাড়বো।

ওকে টাকাটা ঠিকমত পেয়ে যাবে।
ফোন কেটে মাইশা শয়তানি হাসি দিতে লাগল।
তারপর মাইশা নিজের রুমে বসে নিজের ড্রেস প্যাক করছে। খুশিতে ওর নাচতে ইচ্ছে করছে।নাচবে না কেন একবার লন্ডন যেতে পারলেই হলো আদ্র শুধু ওর স্নেহাকে আজীবনের জন্য আদ্রর জীবন থেকে সরানোর জন্য সব করা শেষ। শুধু এইবার এই ছবিগুলো দেখানো বাকি আর আদ্র জীবন থেকে স্নেহা নাম মুছে যাবে। ও আর জীবনে ও স্নেহার মুখে দেখতে চাইবে না। এইখানে ছবিগুলো হলো সবকটা মুহিতের সাথে। আর মুহিত হলো মাইশার পাঠানো গুন্ডা।
#অচেনা_শহর 💖
#সিজন (২)
#লেখিকা:–তানজিনা আক্তার মিষ্টি
#পর্ব:–[ ৮]

পরীক্ষার হল থেকে আমি আর অন্তরা একসাথে বের হলাম। অন্তরা বের হয়ে আমাকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞেস করল,,

“দোস্ত চোখ মুখের কি অবস্থা হয়েছে? রাতে ঘুমাস না। চোখের পার ত কালা হয়ে গেছে। এত চিন্তা করছিস কেন? আর এতোই যেহেতু চিন্তা তাহলে আদ্রকে সব জানাই দে।”

অন্তরা মায়া ভরা কন্ঠে বলে আমার গালে হাত রাখল। আমি গালি থেকে হাত সরিয়ে দিয়ে বললাম,

“আমি চিন্তা করছি না আমি ঠিক আছি অন্তরা। অযথা টেনশন করিস না।”

“তার মুখে এখনও বিষন্নতা আদ্রর সাথে তো কথা হয়।‌ তাহলে তোর মুখে বিষণ্নতায় ভরপুর কেন বলতো?”

“ওই সব কিছুই না রাত জাগা হয় আসলে অফিসের কাজ নিয়ে। আর তারপর এখন আবার এক্সাম দুইটা করতে হবে বুঝেছি তো!”

“তাও আমার মনে হচ্ছে তুই আমাকে মিথ্যা বলছিস? কিছু একটা লুকাচ্ছিস?”

আমি মুখে শুকনা হাসি এনে বললাম,,এত চিন্তা করিস না তো তোদের কি খবর তাই বল তাদের বিয়ে কবে?

আমার কথা শুনে অন্তনা লজ্জায় লাল হয়ে গেল,
“বিয়ে সেটা তো হৃদয়ের এক্সাম শেষে।”

“ওরে বাবা মেয়ের কি লজ্জা?

“হুম তা তো থাকবেই তাইনা।”

“আচ্ছা চল। তাহলে বেশি লেট করতে পারবে না। আবার কালকেও তো এক্সাম আছে।”

“হুম আর এত রাত জাগিস না।নিজের কেয়ার করিস আবার আদ্র তোর এই অবস্থা দেখে না জানি কি করে তোকে?

আমি অন্তরার দিকে তাকিয়ে বিনিময়ে শুধু হাসি দিলাম কিছু বললাম না।

গেটের কাছে আসতে অন্তরার কল আসলো আর তাড়াহুড়া করে চলে গেল আমাকে একাই চলে যেতে বলে। যাওয়ার আগে শুধু বলল হৃদয়ের কল হৃদয়ের কথা শুনে আর কিছু বললাম না একাই গাড়ির জন্য ওয়েট করতে লাগলাম।
খুব রোদের তাপ সূর্য যেন আমার মাথার উপরে আছে। সূর্যের তাপে চোখ ভালো করে খুলে রাখতে পারছিনা তাই বাম হাত উঠিয়ে কপালে রাখলাম। একটা অটো দেখছে না শুধু বড় গাড়ি যাচ্ছে। বিরক্তিতে আমার নাক মুখ কুঁচকে আসছে।পা দুটো টান টান হয়ে আছে হাত বাড়িয়ে মুখের ঘাম মুছে সামনে তাকাতেই চমকালাম দূরের চায়ের দোকানে কেউ দাড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি তাকাতেই পেছনে ঘুরে গেল। মুখটা দেখতে পেলাম না। আমি উৎসুক হয়ে সেদিকে তাকিয়ে আছি লোকটার এই দিকে ফেরার জন্য কিন্তু লোকটা ভুল করেও তাকাচ্ছে না। পেছনদিকে থেকে লোকটাকে আমার খুব পরিচিত লাগছে। কিন্তু বুঝতে পারছি না কে? এমন সময় আমার সামনে একটা অটো এসে থামল,
আর ভেতর থেকে অটো ওয়ালা বলল,

আপা যাবেন?

আমি লোকটার দিকে থেকে চোখ সরিয়ে অটো ড্রাইভার এর দিকে তাকালাম। উনি আমার দিকে তাকিয়ে আছে উত্তর আশায়,আমি একবার ভাবছি এই অটোতে উঠে চলে যাব নাকি ওই চায়ের দোকানে গিয়ে দেখবো লোকটাকে।না দেখবো লোকটা কে আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে ছিল কেন? মনে হলো আমার দিকে নজর রাখছিল।
আমি ওই দিকে যাওয়ার জন্য পা বাড়াবো অমনি দেখলাম লোকটা নাই। আমি নিচের দিকে তাকিয়ে ভাবছিলাম। লোকটা গেল কোথায়? অটো ওয়ালা এদিকে আমাকে জিজ্ঞেস করছে যাচ্ছে যাব কিনা?
আমি সেদিকে কান না দিয়ে চারপাশে লোকটিকে খুঁজতে লাগলাম। নাই সেকেন্ড এর মাঝে কোথায় চলে গেল? অটোওয়ালা আবার জিজ্ঞেস করল,,

এই আপা এমন করছেন কেন? গেলে বলেন না দিলে না করেন আমাদের তো এখানে বসে থাকার সময় নাই? পেটের দায়ে কাজ করি যে সে জিজ্ঞেস করছে আপনার দাম বেড়ে গেল নাকি?

আমি ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম, ক্ষমা করবেন আপনাকে এভাবে ওয়েট করার জন্য।আসলে আমি একজনকে খুজছিলাম কিন্তু পাচ্ছিনা চলুন আপনার গাড়িতেই যাব।

সারা রাস্তা চায়ের দোকানের লোকটা কে হতে পারে আকাশ-পাতাল বাড়ির সামনে আসলাম। পুরো গাড়িতে ও মনে হয়েছে কেউ আমাকে পেছনে বাইকে ফলো করছে। এজন্য আমি দুই তিনবার পেছনে তাকিয়েওছি একটা বাইক ছিল কিন্তু লোকটার মুখ দেখা যায়নি পুরো মুখ ঢাকা।আমি পেছনে তাকাতেই সে শো করে গাড়ি নিয়ে আগে চলে গেল।
অটো থেকে নেমে পার্স থেকে ‌টাকা বের করার আগেই অটোআলা চলে গেল। আমি হতবুদ্ধি হয়ে অটোর জাওয়ার দিকে তাকিয়ে আসি উনি টাকা না নিয়ে চলে গেলেন কেন?
এসব হচ্ছে কি? চিন্তিত ভঙ্গিতেই বাসায় আসলাম। ভেতরে আসতেই কাকিমা আমাকে শরবতের গ্লাস দিল। আমি অবাক হয়ে কাকিমা দিয়ে তাকিয়ে আছি।

কি হয়েছে মা এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? ওইটার জন্য পরীক্ষা দিয়ে এলি এটুকু দিতে হতো। আচ্ছা বল তোর পরীক্ষা কেমন হলো?

কাকিমার সাথে আমার সম্পর্ক খুবই ভালো হয়ে গেছে এখন আমাকে কাকিমা তুই করেই বলে। আর নিজের মেয়ের মতো আগলে রাখার চেষ্টা করে সত্যি ওনার মনটা খুবই ভালো। আমার চোখে জল চলে এলো আমার পরীক্ষার সময় মা ওই ভাবে বাসায় আসতেই শরবত দিত।তারপরে বলতো তাড়াতাড়ি গোসল করে আয় তোর জন্য আজকে তোর পছন্দের খাবার রান্না করছি খেয়ে আবার পড়তে বসবি আজকে তোর কোন কাজ করতে হবে না। খাবার টেবিলে তখন মা আমাকে নিজের হাতে খাইয়ে দিত। কাকিমা নিজের অজান্তে আমার মায়ের কাজটা করে দিয়েছে।
কাকিমা আমার চোখের জল দেখে উত্তেজিত হয়ে জিজ্ঞেস করল,

কিরে কাঁদছিস কেন তোর কি পরীক্ষা খারাপ হয়েছে?
আমি মাথা নেড়ে না জানালাম।

তাহলে কাঁদছিস কেন কেউ কি কিছু বলেছে?

না কাকিমা কেউ কিছু বলেনি। কিন্তু মাকে খুব মিস করছি।

কাকিমা আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল পাগলি মেয়ে মাকে সবার চিরকাল থাকে।তার যখন সময় হয়েছে সে চলে গেছে তার জন্য কষ্ট পাস না।

জানো কাকিমা মাও আমাকে এইভাবে স্কুল থেকে আসলি শরবত করে দিত।

কাকিমা ডাকছিস আবার কাঁদছিস আমিওতো তোর মায়ের মতনই। কাদিসনা।

রাতে বসে পড়া রিভাইজ করছি তখন হঠাৎ আমার ফোনে কল আসলো কিন্তু আননন নাম্বার
আমি নাম্বারটা দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। আগে থেকে আমি রং নাম্বার রিসিভ করি না।কিন্তু আজকে করতে হবে কারণ নতুন অফিসে জয়েন করছি কেউ আমাকে কল করতেই পারে। আর সবার নাম্বার আমার কাছে নাই।
সাইকো রিসিভ করে হ্যালো বললাম।একি ওপাশ থেকে কোনও আওয়াজ আসছে না।পরপর দুই তিনবার হ্যালো বললাম তাও কোন আওয়াজ পেলাম না। শুধু নিঃশ্বাসের শব্দ শোনা যাচ্ছে। নিঃশ্বাসের শব্দ টা শুনে আমার বুকের ভেতর কম্পন তৈরি হয়ে গেল।আমি তাড়াতাড়ি ফোন সামনে আনলাম এটাতো বাংলাদেশের নাম্বার। ধুর কি সব ভাবছিলাম?

কে আছেন কথা বলছেন না কেন ? আর কথা না বলে ফোন কেন দিয়েছেন?

নো রিপ্লে। ফালতু কল কয়টা বকা দিয়ে ফোন রেখে দিলাম। ফাইজলামি করার জন্য ফোন দিছে।

তিনদিন পরীক্ষার পাঠ শেষ করলাম। খুবই আতঙ্কের মাঝে আমার দিনগুলো কাটছে। এত আতঙ্ক নেওয়া আর সহ্য হচ্ছে না মাথা টা ছিড়ে যাচ্ছে। কি থেকে কি ভাববো? আমার সব সময় প্রতিটা সেকেন্ডেই মনে হচ্ছে কেউ আমাকে ফলো করছে? কিন্তু কে করছে? কয়েকবার আমি এর প্রমাণও পেয়েছি। আমি যেখানে যাই সেখানে কেউ আমাকে ছায়ার মতো ফলো করে।
আর এটাও জানতে পেরেছি মাইশা বিদেশে গিয়েছে এক সপ্তা হলো। পরীক্ষা দিয়ে এখন আবার অফিসে জয়েন করেছি ঠিকমতো। সবকিছু ভালই চলছে শুধু এই ফলো করাটা বেড়ে যাচ্ছে।এদিকে মুহাত ছেলেটা আমাকে জ্বালিয়ে মারছে
এত বিরক্ত করছিল আমি জিবনে দেখিনাই শেষে কিনা প্রপোজ করে বসলো। সে নাকি আমাকে না পেলে মরে যাবে। আমি তাকে সাব সাব না করে জানিয়ে দিলাম যে আমি বিবাহিত। সে আমাকে বলল আরো 100 কথা,
অদ্ভুত বিষয় সে আদ্রর সম্পর্কে সবই জানে। আমাকে বাসা থেকে তাড়িয়ে দেয়া। আদ্রর বিদেশ যাওয়া সব কিছু সে আমাকে বলল তারপর আমাকে বলল আদ্র ভালোবাসে না জাস্ট ইউজ করেছে আমাকে। আমি যেন আদ্রকে ছেড়ে তার সাথে সংসার বাধি। রাগে আমার হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে যায়। ভালোভাবে তার সাথে সবকিছু মিটমাট করতে চাইছিলাম কিন্তু সেই লিমিট ক্রস করে ফেলে। আমি তাকে সর্বসমক্ষে থাপ্পড় মেরে বসি। বিগড়ে যায় সে রাগে চোখ শক্ত করে আমার সামনে থেকে চলে যায়।থাপ্পর মেরে ভয়ে থাকি চাকরির না আবার চলে যায়।
ভয় আতঙ্কে দুইহাতে মুখ ঢেকে কেবিনে বসে আছি। এত যন্ত্রণা সহ্য হচ্ছে না এর থেকে মরে যাওয়া ভালো।
তার উপর আবার আননন নাম্বার থেকে কল সে কল টা আমাকে প্রতিনিয়ত চালিয়ে যাচ্ছে। মন চাইছে ফোনটা আছাড় মেরে ভেঙ্গে ফেলি। সবকিছু ছেড়ে সরে কোন একটা জায়গায় চলে যেতে পারতাম অচেনা একটা জায়গা ‌যেখানে আমাকে জ্বালাতন করার মত কেউ থাকত না সেখানে শুধু আমার আদ্রর থাকতো আর আমাদের একটা ছোট্ট সংসার থাকতো
যেখানে থাকত অফুরন্ত ভালোবাসা।
দুজনে ভালোবাসা একটা ঘর বাঁধতাম দুজনেই পরিশ্রম করে সংসার সাজাতাম আদ্র ক্লান্ত হয়ে আমার কোলে মাথা রেখে চোখ বুঝতো আমি ওর চুলে পরম যত্নে হাত বুলিয়ে দিতাম।
সেই ভালোবাসার দিন গুলো কি কখন আসবে না? নাকি হারিয়ে যাবে সবকিছু। কবে আসবে তুমি আসো আমার কাছে।ভালো লাগছে না তাই বুশরা আপুকে বলে দু’ঘণ্টা আগে চলে এলাম বাসায়।
পরদিন অফিসে গিয়ে আমার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল বড় বড় চোখ করে আমি তাকিয়ে আছি শুধু আমি না অফিসের সবাই তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে।
সবার চোখে-মুখে কৌতুহল।

~~চলবে~~

Tanjina Akter Misti
~~চলবে~~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here